৪৯৪ নং- সুওয়াল -লোনের সুদের পাপ বা শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় আছে কিনা?কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর আলোকে জানালে খুশী হবো।


সুওয়াল : আমার ছোট ভগ্নিপতি বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন থেকে ১০ লক্ষ টাকা লোন নিয়ে উনার পূর্বে আয়কৃত বিদেশি হালাল টাকা দ্বারা সম্পন্ন করা দ্বিতীয় বাড়িটাকে তৃতীয় এবং চতুর্থ তলায় সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে নিয়ম মাফিক করপোরেশনের সুদসহ কিস্তি চালিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত অক্টোবর ৯৫তম সংখ্যায় সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগে জমি বন্ধক বা কোট সম্বন্ধে একজন সুওয়ালকারীর জাওয়াব দিতে গিয়ে আপনারা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর আলোকে সুদ খাওয়ার পাপ/শাস্তি সম্বন্ধে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটা পড়ে উনি অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়েছেন। 
এখন প্রশ্ন হলো- এই পাপ/শাস্তি কি ‘সুদ প্রদান’ করার বেলায়ও প্রযোজ্য হবে? উনি চাচ্ছেন লোনের টাকা দিয়ে বানানো ৩য় এবং ৪র্থ তলার ভাড়ার টাকা থেকে একটি পয়সাও নিজের কিংবা পরিবারের জন্য খরচ না করতে। এখন লোনের সুদের পাপ/শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় আছে কিনা? কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর আলোকে জানালে খুশী হবো।

জাওয়াব :- সুদ প্রদান করাও কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত এবং লা’নতের কারণ। হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ রয়েছে,
*
অর্থ:- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি লা’নত (অভিশাপ) করেছে, যে সুদ খায়, যে সুদ দেয়, যে সুদের দলীল লিখে, যে দু’জন সুদের সাক্ষী হয়, তাদের সকলের প্রতি এবং তিনি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন যে, তারা সবাই গুনাহগার হিসেবে সমান।” (মুসলিম শরীফ)
কাজেই যে সুদ নেয় এবং যে সুদ দেয় তাদের উভয়ের প্রতি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত শাস্তি বর্তাবে।
যেহেতু আপনার বর্ণিত ব্যক্তি পূর্বে সুদ দেয়া-নেয়ার গুনাহ সম্পর্কে অবগত ছিলো না, তাই হয়তো সে সুদের লোন নিয়েছিলো। কিন্তু মুসলমান হিসেবে তার এটা জানা উচিত ছিলো, যেহেতু এটা ফরয ইলমের অন্তর্ভুক্ত।
বর্ণিত ব্যক্তি যখন সুদ দেয়া-নেয়ার গুনাহ সম্পর্কে জানতে পেরেছে তাই তাকে শুধু ভীত হলেই চলবে না বরং তাকে খালিছ তওবা করতে হবে এ বলে যে, আমি ভবিষ্যতে আর কখনও সুদ দেয়া-নেয়া ইত্যাদি সুদ সংশ্লিষ্ট কোনো কাজে জড়িত থাকবো না এবং পিছনে যা করেছি তা থেকে খালিছ তওবা করছি। আর সুদে লোন নেয়া টাকা যত শীঘ্রই সম্ভব পরিশোধ করে দিতে হবে, তা যেভাবেই হোক। অর্থাৎ জমা টাকা থেকেই হোক বা কারো নিকট থেকে বিনা সুদে কর্জ নিয়েই হোক কিংবা অন্য কোনো শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতেই হোক।
সুদী লোন পরিশোধ করার পর উক্ত বাড়ি ভাড়ার টাকা নিজের কিংবা পরিবারের জন্য খরচ করা জায়িয রয়েছে। সুদের লোন নেয়া-দেয়ার পাপ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে, সুদী লোন পরিশোধ করা এবং খালিছ তওবা করা। খালিছ তওবা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ উল্লেখ করেন,
*
অর্থ”- “তোরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল এবং দয়ালু।” (সূরা মুজাম্মিল, আয়াত শরীফ- ২০)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন, 
*
অর্থ:- “যারা তওবা করে ও ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ বা নেক কাজ করে, অতঃপর মহান আল্লাহ পাক ঐ সমস্ত লোকদের গুনাহগুলি নেকিতে পরিবর্তন করে দেন। মহান আল্লাহ পাক অতিশয় ক্ষমাশীল ও দয়ালু। আর যে তওবা করে এবং আমলে সলেহ করে, তবে নিশ্চয়ই সে মহান আল্লাহ পাক উনার দিতে প্রত্যাব্যর্তন করে প্রত্যাবর্তন করার মত।” (সূরা ফুরকান, আয়াত শরীফ- ৭০, ৭১)
আর হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে,
*
অর্থ:- “গুণাহ থেকে তওবাকারী ঐ ব্যক্তির মত, যার কোনো গুণাহ নেই।”
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ মরীফ দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার যে কোনো বান্দা, যে কোনো বা যত প্রকার গুণাহই যেমন, কবীরা, ছগীরা, জাহিরী, বাতিনী, জানা, অজানা, ইচ্ছা, অনিচ্ছা ইত্যাদি করুক না কেন, যখন সে এ সমস্ত গুণাহ থেকে খালিছ তওবা করবে, তখন মহান আল্লাহ পাক তার জিন্দিগীর সমস্ত গুনাহখতা ক্ষমা করে দিবেন।
আবা-২৯

0 Comments: