কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত ও তার সংশ্লিষ্ট
বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার
কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফর, শিরক ও বিদয়াতের মুলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল
জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায়
এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার
প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল
বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়
যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।
উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে সমাজে
বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। উলামায়ে ‘ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীরা বলে ও প্রচার করে থাকে যে, শবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর
কোথাও নেই, শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয ও হারাম। নাঊযুবিল্লাহ!
তাদের এ বক্তব্যের কারণে
তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে,
তদ্রুপ
তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীন হচ্ছে। কেননা হাদীছ শরীফে
শবে বরাতের অশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
ان
الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر
المباركة وليلتا العيدين
অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের
প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের
রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।”
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ
হয়েছে-
عن
على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف
من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى
السماء الدنيا فيقول الامن مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه
الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.
অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের পনের তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত
রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক
উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত)
এ ধরনের আরো অসংখ্য হাদীছ
শরীফ রয়েছে, যাতে শবে বরাত-এর ফযীলতের
কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ যারা শবে বরাত পালন করবে তারা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের উভয়েরই খাছ রেযামন্দি বা
সন্তুষ্টি লাভ করবে।
অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ"দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ‘শবে বরাত’ পালন থেকে বিরত
থেকে অশেষ ফযীলত থেকে মাহরূম হবে। যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
কাজেই যারা এ ধরনের কুফরী
আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী, তারা ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন
হিফাযত করতে পারে। অর্থাৎ শবে বরাতসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের
আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-উনার রেজামন্দী
হাছিল করতে পারে। সে জন্যই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত’-এর আহকাম ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি প্রকাশ করা হলো।
অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ
দ্বারাও
শবে বরাত প্রমাণিত
পূর্ব প্রকাশিতের পর
আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ
হয়েছে-
(১৭৩-১৭৬)
عن
ام المؤمنين حضرت عائشة عليها السلام قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة
فاذا هو بالبقيع فقال اكنت تخافين ان يحيف الله عليك ورسوله قلت يا رسول الله صلى
الله عليه وسلم انى ظننت انك اتيت بعض نسائك فقال ان الله تعالى ينزل ليلة النصف
من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر من اكثر من عدد شعر غنم كلب.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কোনো এক রাত্রিতে রাত্রি যাপন
করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়তো অন্য কোনো হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ
করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা
প্রার্থনা করছেন।
এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয়
হুজরা শরীফ-এ ফিরে আসলে তিনিও ফিরে এসে আমাকে বললেন, আপনি কি মনে করেছেন,
আল্লাহ
পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত
করেছেন! আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো অপর কোনো হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ
নিয়েছেন।
অতঃপর হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,
নিশ্চয়ই
আল্লাহ পাক তিনি শা’বানের পনের তারিখ
রাত্রিতে (শবে বরাতে) পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন, অর্থাৎ খাছ রহমত নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বনী কালবের
মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, রযীন)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, কুরআন শরীফ-এ তো অবশ্যই অসংখ্য হাদীছ শরীফ-এও
শবে বরাতের কথা উল্লেখ আছে। তবে কুরআন শরীফ-এ বরাতের রাত্রকে “লাইলাতুম মুবারকাহ”
আর
হাদীছ শরীফ-এ “লাইলাতুন নিছফি
মিন শা’বান” বলা হয়েছে।
কাজেই যারা বলে থাকে কুরআন
শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান অর্থাৎ অর্ধ
শা’বানের রাত তথা শবে বরাত
বলতে কোনো কিছুই নেই তাদের এ বক্তব্য বানোয়াট, ভিত্তিহীন মনগড়া,
বিভ্রান্তিকর, গোমরাহীমূলক ও কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফ
বিরোধী হওয়ার কারণে কুফরীমূলক হয়েছে।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার মুবারক যামানা থেকেই শবে বরাত পালিত হয়ে আসছে
কোনো কোনো জাহিল বলে থাকে, খাইরুল কুরুনে ‘শবে বরাত’ ছিল না, তাই এটা বিদয়াত। মূলত তাদের এ বক্তব্য
সম্পূর্ণই মিথ্যা বরং সঠিক কথা হলো,
শবে
বরাত আল্লাহ পাক উনার হাবীব, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানা থেকেই শুরু হয়ে অদ্যাবধি তা পালিত হয়ে
আসছে। এ মুবারক রাতটি হচ্ছে উম্মতে হাবীবী উনাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক রব্বুল
আলামীন উনার পক্ষ হতে খাছ নিয়ামত তথা খাছ রহম, করম ও ইহসানের কারণ। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
(১৭৭)
ان
الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر
المباركة وليلتا العيدين.
অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের
প্রথম রাতে, (২) বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।”
এ হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায়
বর্ণিত রয়েছে যে, “হাশরের দিনে
বান্দার হিসাব-নিকাশ গ্রহণের পর দেখা যাবে,
কতক
আখিরী উম্মতের উপর জাহান্নামের ফায়ছালা হয়ে গেছে। তখন ফেরেশ্তা আলাইহিমুস
সালাম উনারা তাদেরকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যেতে থাকবেন এবং পথিমধ্যে জিজ্ঞাসা
করবেন, ‘হে ব্যক্তিরা! তোমাদেরকে
দেখে মনে হচ্ছে, তোমরা উম্মতে
হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তোমরা কেন জাহান্নামে যাচ্ছ? তোমাদের তো জাহান্নামে যাওয়ার কথা নয়। কারণ, তোমাদেরকে তোমাদের নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার উসীলায় এমন পাঁচটি রাত্রি দেয়া হয়েছিলো যেই রাত্রিগুলো রহমত, বরকত,
সাকীনা, মাগফিরাতের খাছ রাত্রি।
তোমরা কি সেই পাঁচ রাত্রির
সুসংবাদ পাওনি? তারা বলবে, হ্যাঁ,
আমরা
সেই রাত্রিগুলোর সুসংবাদ পেয়েছিলাম সত্যিই। কিন্তু তাতে ইবাদত-বন্দিগী করিনি, ক্ষমা প্রার্থনা করিনি, রাত্রিগুলোর কোনো গুরুত্বই আমরা দেইনি। তখন হযরত ফেরেশ্তা
আলাইহিমুস সালাম উনারা বলবেন, তোমাদের জন্য
আফসুস! তোমরা যদি সেই পাঁচ রাত্রিতে জেগে ইবাদত-বন্দিগী করতে তাহলে আজকে
জাহান্নামে না গিয়ে জান্নাতে চলে যেতে।”
সুবহানাল্লাহ!
শবে বরাত পালনকারী
সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক
শবে বরাত পালন করা
সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বহু নির্দেশ মুবারক রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
(১৭৮-১৭৯)
عن
حضرت على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة
النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس
الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفر له الا مسترزق فارزقه الا مبتلى
فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.
অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার
রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
যখন
শা’বানের পনের তারিখ রাত্রি
উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই
আল্লাহ পাক উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ
নাযিল করেন, অতঃপর ঘোষণা করেন, কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী
আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব। কোন মুছিবতগ্রস্ত
ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত
দূর করে দিব। এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।”
(ইবনে
মাযাহ্, মিশকাত)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ
হয়েছে-
(১৮০)
من
يصلى على النبى صلى الله عليه وسلم ثلاث مرات عند افطاره غفر الله له ما تقدم من
ذنبه وبارك له فى رزقه.
অর্থ: “যে ব্যক্তি (শবে বরাতের রোযা রেখে) ইফতার করার সময় আল্লাহ
পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি তিনবার দুরূদ
শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ পাক তিনি তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তার
রিযিকে বরকত দান করবেন।” হাদীছ শরীফ-এ আরো
ইরশাদ হয়েছে-
(১৮১-১৮৪)
عن
ام المؤمنين حضرت عائشة عليها السلام قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة
فاذا هو بالبقيع فقال اكنت تخافين ان يحيف الله عليك ورسوله قلت يا رسول الله صلى
الله عليه وسلم انى ظننت انك اتيت بعض نسائك فقال ان الله تعالى ينزل ليلة النصف
من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر من اكثر من عدد شعر غنم كلب.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কোন এক রাত্রিতে রাত্রিযাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে
বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যে,
তিনি
হয়তো অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস
সালাম উনার হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে
পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি
স্বীয় হুজরা শরীফে ফিরে আসলে তিনিও ফিরে এসে আমাকে বললেন, আপনি কি মনে করেছেন, আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনারা আপনার সাথে আমানতের খিলাফ করেছেন!
আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো অপর
কোনো হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি শা’বানের পনের তারিখ রাত্রিতে (শবে বরাতে) পৃথিবীর আকাশে অবতরণ
করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন,
অতঃপর
তিনি বনী কালবের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে
থাকেন।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, রযীন, মিশকাত) হাদীছ শরীফ-এ
আরো ইরশাদ হয়েছে-
(১৮৫-১৯৩)
عن
ابى موسى الاشعر رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله
تعالى ليطلع فى ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن وفى
روايته الا اثنين مشاحن وقاتل النفس.
অর্থ: “হযরত আবু মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মহান
আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ
পাক তিনি শা’বানের পনের তারিখ রাত্রিতে
(শবে বরাতে) ঘোষণা করেন যে, উনার সমস্ত
মাখলুক্বাতকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। শুধু মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষকারী ব্যতীত। অপর এক রিওয়ায়েতে
বর্ণিত রয়েছে, হিংসা-বিদ্বেষকারী
ও হত্যাকারী ব্যতীত।” (ইবনে মাজাহ, আহমদ,
মিশকাত, মিরকাত,
আশয়াতুল
লুময়াত, লুময়াত, তালিকুছ্ ছবীহ, শরহুত্ ত্বীবী,
মুযাহিরে
হক্ব ইত্যাদি)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা
অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, শবে বরাত অবশ্যই
খাইরুল কুরুনে ছিল। আর ছিল বলেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
শবে বরাতের ব্যাপারে এত উৎসাহ ও নির্দেশ প্রদান করেছেন।
শা’বানের ১৫ তারিখ রাতকে শবে বরাত বা ভাগ্য রজনী নামে নামকরণ
করা বিদয়াত নয় বরং তা শরীয়তসম্মত:
অর্ধ শা’বানের রাতটিকে অর্থাৎ শবে বরাতকে ‘ভাগ্য রজনী’
নামে
নামকরণ করা বিদয়াত নয়। বরং তা সম্পূর্ণরূপে কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ তথা শরীয়ত
সম্মত। আর শরীয়ত সম্মত কোনো বিষয়কে বিদয়াত বলা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। মুসলমান হয়ে যে
ব্যক্তি কুফরী করে সে মুরতাদ ও কাট্টা কাফিরে পরিণত হয়। প্রকাশ থাকে যে,
শা’বানের অর্ধ রাত্রি তথা শবে বরাতের বর্ণনায় মহান আল্লাহ পাক
তিনি “সূরা দুখান”-এর ৪নং আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেছেন-
(১৯৪)
فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থাৎ- “এটি এমন এক রাত যে রাতে সমস্ত প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয়ের
ফায়সালা করা হয়।” উক্ত আয়াত শরীফ-এর
ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
(১৯৫-১৯৬)
فيها
ان يكتب كل مولود من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ان يكتب كل هالك من بنى ادم فى
هذه السنة وفيها ترفع اعمالهم وفيها تنزل ارزاقهم.
অর্থাৎ, “বরাতের রাতে ফায়সালা করা হয় কতজন সন্তান এক
বৎসরে জন্মগ্রহণ করবে এবং কতজন সন্তান মৃত্যু বরণ করবে। এ রাত্রিতে বান্দাদের আমল
(আল্লাহ পাক উনার নিকট) পেশ করা হয় এবং এ রাত্রিতে বান্দাদের রিযিকের ফায়সালা করা
হয়।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)
কাজেই আল্লাহ পাক তিনি
যেহেতু বলেছেন, বরকতময় রজনীতে সকল
কাজের ফায়সালা করা হয়। আর আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনিও যেহেতু বলেছেন যে, বরাতের রাতেই সকল
বিষয় যেমন, হায়াত, মউত,
রিযিক
ইত্যাদি যা কিছু মানুষের প্রয়োজন হয়ে থাকে তার ফায়সালা করা হয় এবং আমলনামারও
ফয়সালা করা হয়। সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখেনা যে,
নিঃসন্দেহে
শা’বানের অর্ধ রাতটি
الليلة القسمة
তথা ‘ভাগ্য রজনী।’ যে প্রসঙ্গে
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
(১৯৭)
ومن
اسمائها ليلة القسمة للارزاق والتقدير ما يقضى الله تعالى فيها من امره الخطير.
لما روى عن عطاء بن يسار قال اذا كان ليلة النصف من شعبان نسخ لملك الموت اسم كل
من يموت من شعبان الى شعبان وان الرجل ليظلم ويفجر وينكح النسوان ويغرس الاشجار
وقد نسخ اسمه من الاحياء الى الاموات وما من ليلة بعد ليلة القدر افضل منها.
وفى
رواية عنه اذا كان ليلة النصف من شعبان دفع الى ملك الموت عليه السلام صحيفة فيقال
له اقبض من فى هذه الصحيفة فان العبد ليغرس الاغراس وينكح الازواج ويبنى البنيان
وان اسمه قد نسخ فى الموت وما ينتظر به ملك الموت الا ان يؤمر به يقبضه.
وفى
رواية تقطع الاجال من شعبان الى شعبان حتى ان الرجل لينكح ويولد له وقد خرج اسمه فى الموت وعن ابن عباس رضى الله
تعالى عنه انه قال: ان الله يقضى الاقضية كلها ليلة النصف من شعبان ويسلمها الى
اربابها ليلة القدر.
অর্থ: “অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে
বরাতের নামসমূহের মধ্যে একটি নাম হচ্ছে ‘লাইলাতুল
ক্বিসমাতি বা ভাগ্য রজনী।’ এ কারণে যে, এ রাত্রিতে রিযিকসমূহ ও তাক্বদীর বা ভাগ্য
নির্ধারণ, বণ্টন ও ফায়সালা করা হয়। যেমন আল্লাহ পাক
তিনি উনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ এ মুবারক রাত্রিতে ফায়সালা করেন।
হযরত আতা ইবনে ইয়াসার
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন, অর্ধ শা’বানের রাত্রিতে
(শবে বরাতে) মালাকুল মউত হযরত আযরাইল আলাইহিস সালাম উনাকে ওই সকল ব্যক্তির নামের
একটা অনুলিপি বা তালিকা প্রদান করা হয় যারা এক শা’বান থেকে আরেক শা’বানের মধ্যে
ইন্তিকাল করবে। এরপরও সে ব্যক্তিরা যুলুম করে,
পাপ
করে, মেয়েদের বিবাহ করে, গাছ রোপণ করে অথচ তাদের হায়াত থেকে মউতের
তালিকা প্রদান করা হয়েছে। আর লাইলাতুল ক্বদরের পর এমন কোনো রাত নেই যে রাতটি শবে
বরাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
হযরত আতা ইবনে ইয়াসার
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে অপর এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে, মধ্য শা’বানের রাত্রিতে
(শবে বরাতে) মালাকুল মউত হযরত আযরাইল আলাইহিস সালাম উনাকে একখানা ছহীফা প্রদান করা
হয়। অতঃপর উনাকে বলা
হয় ওই সকল লোকের রূহ কবজ করুন যাদের নাম এ ছহীফার মধ্যে রয়েছে। আর নিশ্চিতভাবে সে
বান্দারা গাছ রোপণ করে, বিবাহ-শাদী করে, অট্টালিকা নির্মাণ করে অথচ তাদের নাম মউতের
জন্য তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে। আর মালাকুল মউত আদেশের অপেক্ষা করছেন, আদেশ হওয়া মাত্রই তিনি তাদের রূহ কবজ করবেন।
অপর বর্ণনায় রয়েছে, ইন্তিকালের মেয়াদ কর্তন করে দেয়া হয় এক শা’বান থেকে পরবর্তী শা’বান পর্যন্ত। তারপরও সে ব্যক্তি
বিবাহ-শাদী করে এবং তার থেকে সন্তানাদি জন্মগ্রহণ করে অথচ তার নাম ইন্তিকালের
খাতায় চলে গেছে।
হযরত ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সমস্ত ফায়সালাকৃত বিষয়সমূহ
শা’বানের মধ্য রাতে ফায়সালা
করেন এবং তা বাস্তবায়নকারী ফেরেশ্তাদের
প্রতি অর্পণ করেন কদরের রাত্রিতে।
স্মরণীয়, শা’বানের মধ্য রাতটির
বহু ফাযায়িল-ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবার
কথা বর্ণিত রয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত রাতকে কেবল যে ‘ভাগ্য রজনী’
হিসেবেই
নামকরণ করা হয়েছে তা নয়। বরং বেশ কিছু নামে রাতটির নামকরণ করা হয়েছে। যা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফসহ বিভিন্ন কিতাবাদিতে উল্লেখ রয়েছে। নিম্নে কতিপয় নাম
পেশ করা হলো-
(১)الليلة المباركة (আল্লাইলাতুল মুবারকাতু)
বরকতময় রজনী।
(২) ليلة النصف من شعبان (লাইলাতুন্ নিছফি মিন শা’বানা) অর্ধ শা’বানের রজনী।
(৩) ليلة القسمة (লাইলাতুল ক্বিস্মাতি) ভাগ্য রজনী।
(৪) ليلة التكفير (লাইলাতুত্ তাকফীরি) গুনাহখতা ক্ষমা বা কাফফারার রাত্রি।
(৫) ليلة الاجابة (লাইলাতুল ইজাবাতি) দোয়া কবুলের রাত্রি।
(৬) ليلة الحياة (লাইলাতুল হায়াতি) হায়াত বা আয়ু বৃদ্ধির রাত্রি।
(৭) ليلة العيد الملائكة (লাইলাতু ঈদিল মালায়িকাতি) ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ঈদের
রাত্রি।
(৮) ليلة البراءة (লাইলাতুল বারাআতি) মুক্তির রাত্রি।
(৯) ليلة التجويز (লাইলাতুত্ তাজবীযি) বিধান সাব্যস্ত করার রাত্রি।
(১০) ليلة الفيصلة (লাইলাতুল ফায়সালাতি) সিদ্ধান্ত নেয়ার রাত্রি।
(অসমাপ্ত)
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায়
থাকুন । আবা-২০৬
0 Comments:
Post a Comment