কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ,
ইজমা
ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফর, শিরক ও বিদয়াতের মুলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল
জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায়
এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার
প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই
পত্রস্থ হয় যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।
উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে সমাজে
বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। উলামায়ে ‘ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীরা বলে ও প্রচার করে থাকে যে, শবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর
কোথাও নেই, শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয ও হারাম। নাঊযুবিল্লাহ!
তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত
কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীন হচ্ছে। কেননা হাদীছ
শরীফে শবে বরাতের অশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত
রয়েছে-
ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر المباركة وليلتا العيدين
অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ
রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।”
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الامن مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.
অর্থ: “হযরত আলী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের পনের তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত
রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত
রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর
ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা
প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা
করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী
আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত)
এ ধরনের আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে, যাতে শবে বরাত-এর ফযীলতের কথা বলা হয়েছে
অর্থাৎ যারা শবে বরাত পালন করবে তারা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের উভয়েরই খাছ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি লাভ
করবে।
অতএব,
নিঃসন্দেহে
বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ"দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ
মুসলমানগণ ‘শবে বরাত’ পালন থেকে বিরত থেকে অশেষ ফযীলত থেকে মাহরূম
হবে। যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
কাজেই যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও
কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী, তারা ও হক্ব
তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে। অর্থাৎ শবে বরাতসহ
সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ
পাক-উনার রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত’-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত
ফতওয়াটি প্রকাশ করা হলো।
অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাও শবে বরাত
প্রমাণিত
পূর্ব প্রকাশিতের পর
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
(৩০২-৩০৪)
عن حضرت عبد الله بن سلام رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يايها الناس افشوا السلام واطعموا الطعام وصلوا الارحام وصلوا باليال والناس نيام تدخلوا الجنة بسلام.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ
বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, হে লোক সকল! তোমরা
সালামের প্রচলন কর, মানুষকে খাদ্য
খাওয়াও, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা
কর এবং রাতের বেলায় মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড় তাহলে শান্তির সাথে
জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, দারিমী)
তবে সতর্ক থাকতে হবে যে, এই কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে যাতে এমন পরিশ্রম
তথা এমন সময় ব্যয় না হয় যাতে করে কারো শবে বরাতের ইবাদতে ঘাটতি হয়। আরো উল্লেখ্য
যে, খাদ্য বিতরণ যেন
আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে
হবে যেন অভাবগ্রস্তদের প্রাধান্য দেয়া হয়। অতএব প্রমাণিত হলো যে, শবে বরাতে লোকদের ইবাদত-বন্দেগী ও রোযা পালনের
সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি ও রকমারি খাদ্যের ব্যবস্থা করা সম্পূর্ণরূপে কুরআন ও
সুন্নাহ সম্মত। আর কুরআন-সুন্নাহ সম্মত বিষয়কে বিদয়াত তথা নাজায়িয বলা শক্ত কুফরী।
আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
(৩০৫)
يايها الذين امنوا لا تحرموا طيبت ما احل الله لكم
অর্থ: “হে মুমিনগণ!
আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের জন্য যা হালাল (জায়িয) করেছেন তোমরা তা হারাম (নাজায়িয বা
বিদ্য়াত) সাব্যস্ত করনা।” (সূরা মায়িদাহ:
আয়াত শরীফ ৮৭)
কাজেই,
মুসলমানগণকে
কথা বলতে হলে যবান সামলিয়ে কথা বলতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে, কোনভাবেই যেন তার দ্বারা কুফরীমূলক আমল বা
বক্তব্য সংঘটিত না হয়। যদি হয় তাহলে সে মু’মিন -মুসলমান থেকে
খারিজ হয়ে মুরতাদ ও কাফিরে পরিণত হবে এবং পরিণামে সে আযাব-গযবে গ্রেফতার হযে যাবে।
সুতরাং তাদের উক্ত গুমরাহীমূলক ও বিভ্রান্তিপূর্ণ বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, তারা প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের শত্রু এবং ইহুদী ও
মুশরিকদের দোসর।
১০. অর্ধ শা’বান বা শবে বরাত উপলক্ষে আয়োজিত মাহফিল বিদয়াত কি-না?
লা-মাযহাবীদের গোমরাহীমূলক বক্তব্যের সঠিক
জবাব হলো- অর্ধ শা’বান উপলক্ষে
আয়োজিত মাহফিল বিদয়াত নয় বরং সুন্নত। কারণ অর্ধ শা’বান রাতের বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত,
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের কথা খোদ কুরআন শরীফ ও
হাদীছ শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে এবং তা হাছিলের জন্য উক্ত মুবারক রাতটিতে সারা রাতে
জেগে ইবাদতদ্ধবন্দিগী করা এবং দিনের বেলায় রোযা রাখার জন্য আদেশ-নির্দেশ করা
হয়েছে।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
(৩০৬-৩০৭)
عن حضرت على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.
অর্থ: “হযরত আলী
কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহূ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন অর্ধ শা’বানের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায
আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে
সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন। অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা
করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী
আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফজর বা ছুবহে ছাদীক পর্যন্ত ঘোষণা করতে
থাকেন।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত)
অর্ধ শা’বান বা শবে বরাতের
রাতটির কি মাহাত্ম্য, কি হক্ব তা বান্দা
ও উম্মত জানবে কিভাবে? তা জানার জন্য
আয়োজিত মাহফিল বা মজলিসই হচ্ছে শ্রেষ্ঠতর মাধ্যম।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
(৩০৮)
العلم امام العمل
অর্থ: “ইল্ম হচ্ছে আমলের
ইমাম।” অর্থাৎ কোন আমল করতে হলে
ইল্মের প্রয়োজন। ইল্ম না থাকলে আমল বা ইবাদত সঠিকভাবে করা কস্মিকালেও সম্ভব নয়।
বান্দা যখন কোন ইবাদত বা আমল করতে যাবে, তখন প্রথমে তাকে সে ইবাদত বা আমলের ইল্ম অর্জন
করে নিতে হবে। অন্যথায় তার পক্ষে সে ইবাদত বা আমল করা সম্ভব হবে না।
সে উপলক্ষে মাহফিল বা মজলিসের আয়োজন করা হয়।
সুতরাং তা বিদয়াত হবে কেন? মূলতঃ এটা বিদয়াত
বলার অর্থই হচ্ছে মুসলমানদেরকে ইলম ও আমল থেকে সরিয়ে দেয়া, আল্লাহ পাক জাল্লা শানুহু ও উনার হাবীব নূরে
মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি-রিযামন্দি থেকে
মাহরূম করা। যা সুস্পষ্ট কুফরী।
কারণ ইল্ম অর্জন করার জন্য, আমল করার জন্য এবং আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি-রেযামন্দি হাছিল করার
জন্য আল্লাহ পাক উনার কালামে পাক-এ এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফ-এ আদেশ নির্দেশ করেছেন। যেমন ইল্মের ব্যাপারে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ
হয়েছে-
(৩০৯)
قل رب زدنى علما
অর্থ: “বলুন, হে আমার রব পরওয়ারদিগার আল্লাহ পাক, আমার ইলম বৃদ্ধি করে দিন।” (সূরা ত্বা-হা: আয়াত শরীফ ১১৪)
এখানে ইলম বৃদ্ধির জন্য আল্লাহ পাক উনার নিকট
বান্দাকে দোয়া করতে বলা হয়েছে।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে আল্লাহ পাক উনার
হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
(৩১০)
طلب العلم فريضة على كل مسلم
অর্থ: “ইল্ম অর্জন করা
প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয।”
(ইবনে
মাজাহ) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
(৩১১-৩১২)
من يريد به الله خيرا يفقهه فى الدين
অর্থ: “আল্লাহ পাক যার
কল্যাণ-ভালাই চান তিনি উনাকে দ্বীনের ছহীহ ইল্ম-সমঝ দান করেন।” (বুখরী,
মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
(৩১৩)
تعلموا العلم فان تعلمه قربة الى الله عز وجل
অর্থ: “তোমরা ইল্ম শিক্ষা
কর। নিশ্চয়ই ইল্ম শিক্ষার দ্বারা আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য হাছিল হয়।” (রবী’)
হাদীছ
শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
(৩১৪)
لكل شىء طريق وطريق الجنة العلم
অর্থ: “প্রতিটা জিনিস
অর্জনের জন্য একটা রাস্তা রয়েছে। আর জান্নাত লাভের রাস্তা হচ্ছে ইল্ম।” (দায়লামী শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
(৩১৫)
اذا مررتم برياض الجنة فارتعوا قالو يا رسول الله صلى الله عليه وسلم وما رياض الجنة قال مجالس العلم.
অর্থ: “যখন তোমরা (যমীনের
বুকে কোথাও) বেহেশ্তের বাগান দেখতে পাবে তখন তোমরা সেখানে প্রবেশ করে সেখান থেকে
ফল খেয়ে নিবে। ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম, বেহেশ্তের বাগান কোনটি? তিনি বললেন, ইল্মের মজলিস বা মাহফিল।” (তবারানী)
ইল্মী বা দ্বীনি মাহফিল বা মজলিসের ফযীলত
সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
(৩১৬)
مااجتمع قوم فى بيت من بيوت الله يتلون كتب الله ويتدارسونه بينهم الا نزلت عليهم السكينة وغشيتهم الرحمة وحفتهم الملئكة وذكرهم الله فى من عنده.
অর্থ: “যখন কোন এলাকার
লোক আল্লাহ পাক উনার ঘরে অথবা কোন স্থানে একত্রিত হয়ে আল্লাহ্ পাক উনার কিতাব
তিলাওয়াত করে অথবা পরস্পর দ্বীনী আলোচনা বা দরস্-তাদরীস করে তখন আল্লাহ পাক উনার
তরফ থেকে তাদের উপর সাকিনা বা শান্তি বর্ষিত হয়। আল্লাহ পাক উনার রহমত তাদের উপর
ছেয়ে যায় বা তাদেরকে আবৃত করে নেয়। আল্লাহ পাক উনার রহ্মতের ফেরেশতা আলাইহিমুস
সালাম উনারা তাদেরকে বেষ্টন করে নেন এবং স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার
নিকটবর্তী ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে সেই মাহফিলের লোকদের ছানা-ছিফত ও
তাদের সম্পর্কে আলোচনা করেন।” সুবহানাল্লাহ!
(মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “মাহ্ফিল যখন শেষ হয়ে যায়, তখন সকল মানুষ চলে যায়, ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও চলে যান
আল্লাহ পাক উনার দরবারে। আল্লাহ পাক উনার জানা থাকা সত্ত্বেও ফেরেশতা আলাইহিমুস
সালাম উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, “হে ফেরেশতা
আলাইহিমুস সালাম! আপনারা কোথা হতে আসলেন?”
ফেরেশতা
আলাইহিমুস সালাম উনারা বলেন, “আল্লাহ পাক! অমুক
মাহফিল হতে।” তখন আল্লাহ পাক
জিজ্ঞাসা করেন, “তারা কি চেয়েছে
এবং কি থেকে পানাহ চেয়েছে?” ফেরেশতা আলাইহিমুস
সালাম উনারা বলেন, “আল্লাহ পাক! তারা
আপনার সন্তুষ্টি চেয়েছে। জান্নাত চেয়েছে এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ চেয়েছে।” আল্লাহ পাক পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, “হে ফেরেশ্তা আলাইহিমু সালাম! তারা কি আমাকে
দেখেছে?” ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম
উনারা বলেন, “না, তারা আপনাকে দেখেনি।” আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “তারা কি জান্নাত-জাহান্নাম দেখেছে?” ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা বলেন, “না,
তারা
জান্নাত জাহান্নামও দেখেনি। যদি আপনাকে দেখতো তাহলে আপনার রেযামন্দি বা সন্তুষ্টির
জন্য আরো বেশি বেশি কোশেশ করতো। আর জান্নাত ও জাহান্নাম দেখলে, জান্নাত বেশি বেশি তলব করতো এবং জাহান্নাম
থেকে বেশি বেশি পানাহ তলব করতো।” ইত্যাদি অনেক
কথোপকথনের পর আল্লাহ পাক বলেন-
(৩১৭)
فاشهدكم انى قد غفرت لهم
“(হে ফেরেশতা
আলাইহিমুস সালাম!) তোমরা সাক্ষী থাকুন,
এই
মাহফিলে যারা এসেছে, আমি তাদের
প্রত্যেককে ক্ষমা করে দিলাম।” সুবহানাল্লাহ!
(৩১৮)
قال ملك من الملائكة فيهم فلان ليس منهم انما جاء لحاجة
“তখন একজন ফেরেশ্তা
বলেন, “আল্লাহ পাক! এ মাহফিলে এমন
একজন লোক ছিল, যে মূলতঃ
ওয়াজ-নছীহত শুনার উদ্দেশ্যে আসেনি। সে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তার কাজে। তখন দেখলো যে, এখানে মাহফিল হচ্ছে, সে দেখার জন্য এখানে বসেছিল প্রকৃতপক্ষে লোকটা
খুব বদকার, গুনাহগার। আপনি কি তাকেও
ক্ষমা করে দিয়েছেন?”
(৩১৯)
قال هم الجلساء لا يشقى جليسهم
“তখন আল্লাহ্ পাক
বলেন, এই মাহ্ফিলে যে সমস্ত
নেককার লোক এসেছিল, আমি সেই
নেক্কারদের উছীলায় ঐ বদ্কারের গুনাহ্-খতাও ক্ষমা করে দিয়েছি।” (সুবহানাল্লাহ্)
প্রকৃতপক্ষে দ্বীনি মাহফিল হচ্ছে সাকীনা
হাছিলের মাহ্ফিল। রহ্মত, বরকত হাছিলের
মাহফিল। সর্বোপরি ওয়াজ মাহ্ফিল হচ্ছে নিজের গুনাহ্-খতা মাফ করার মাহ্ফিল। আমলের ব্যাপারে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
(৩২০)
واعبد ربك حتى يأتيك اليقين
অর্থ: “আপনার রবের ইবাদত
করুন ইন্তিকাল পর্যন্ত।” (সূরা হির্জ-৯৯)
আরো ইরশাদ হয়েছে-
(৩২১)
ان الذين امنوا وعملوا الصلحت كانت لهم جنت الفردوس نزلا
অর্থ: “নিশ্চয়ই যারা ঈমান
এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাঁদের জন্য জান্নাতুল ফিরদাউসে মেহমানদারীর ব্যবস্থা রয়েছে।” (সূরা কাহফ: আয়াত শরীফ ১০৭)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
(৩২২)
ان الله تعالى اذا اراد بعبد خيرا استعمله فقيل وكيف يستعمله قال يوفقه لعمل صالح قبل الموت.
অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ
তায়ালা যখন কোন বান্দার কল্যাণ-ভালাই কামনা করেন তখন তাকে আমল করার ব্যাপারে সাহায্য
করেন। বলা হলো, কিভাবে আমলে
সাহায্য করা হয়? আল্লাহ পাক উনার
হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাকে ইন্তিকালের পূর্বেই নেক আমল করার তাওফীক
দান করা হয়।” (মাছাবীহুস্
সুন্নাহ) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
(৩২৩)
طوبى لمن عمل بعلم
অর্থ: “সুসংবাদ ওই
ব্যক্তির জন্য যে ইল্ম অনুযায়ী আমল করে থাকে।” (শিহাব) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
(৩২৪-৩২৫)
قال رجل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم اى الناس خير قال من طال عمره وحسن عمله
অর্থ: “এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম, কোন ব্যক্তি উত্তম? তিনি বললেন, যিনি দীর্ঘ হায়াত পেয়েছেন এবং নেক আমল করেছেন।” (তবারানী,
আবূ
নঈম) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
(৩২৬)
اكلفوا من الاعمال ما تطيقون فان الله لا يمل حتى تملوا.
অর্থ: “তোমরা যথাসাধ্য
আমলের মধ্যে নিয়োজিত থাক বা লেগে থাক। কেননা তোমরা ক্লান্ত বা বিরাগ হলেও আল্লাহ
পাক তা হন না।” (বুখারী শরীফ)
আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সন্তুষ্টি-রিযামন্দি অর্জনই হচ্ছে বান্দা ও উম্মতের মূল মাকছুদ। আল্লাহ পাক উনার
কালাম পাকে ইরশাদ করেন-
(৩২৭)
والله ورسوله احق ان يرضوه ان كانوا مؤمنين.
অর্থ: “তারা যদি মু’মিন হয়ে থাকে তাহলে তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হলো তারা যেন
আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সন্তুষ্ট করে। কারণ
আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই সন্তুষ্টি পাওয়ার
সমধিক হক্বদার।” (সূরা তওবা: আয়াত
শরীফ ৬২)
স্মরণীয় যে, ইলম অর্জন করতে হয় আমল করার জন্য। আর আমল করতে হয় ইখলাছ তথা
আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের
সন্তুষ্টি-রিযামন্দি হাছিলের জন্য। এক কথায় ইল্ম আমল ও ইখলাছ এ সবের সমষ্টিই হচ্ছে
দ্বীন বা শরীয়ত। যা জানার বা বুঝার মাধ্যম হচ্ছে দ্বীনি মাহফিল বা মজলিস। সুতরাং এ
মাহফিল বা মজলিসকে বিদ্য়াত বলে অভিহিত করা সম্পূর্ণ কুফরী। আর এটি মূলত: ইবলিস
শয়তানের কাজ যে, মানুষকে কিভাবে
ইল্ম থেকে, আমল থেকে দূরে সরানো যায়।
অতএব,
বলার
অপেক্ষা রাখেনা, যারা অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাত উপলক্ষে মানুষকে ইবাদত-বন্দিগী থেকে
সরানোর কূটকৌশলে নিয়োজিত, তারা নিঃসন্দেহে
কুরআন শরীফে বর্ণিত-
(৩২৮)
شياطين الانس والجن
অর্থাৎ “মানুষ শয়তান ও জিন
শয়তানের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা আনয়াম: আয়াত
শরীফ-১১২)
এরাই হচ্ছে প্রকৃত ইবলিসের চেলা। এদের
কার্যক্রম সম্পর্কে হাদীছ শরীফে একটা ওয়াক্বিয়া বর্ণিত হয়েছে যে, ইবলিসের আসর বসে পানির উপর। সে আসরে ইবলিস তার
চেলাদের নিকট থেকে দৈনন্দিন কাজের হিসাব-নিকাশ গ্রহণ করে। একবার সে হিসাব নিচ্ছিল
চেলাদের মধ্য থেকে কে কি কাজ করেছে?
জবাবে
এক চেলা বলে, আমি ওমুক স্থানে
খুন খারাবি করিয়েছি। আরেক চেলা বলে,
আমি
ওমুক খানে মারা-মারি করিয়েছি। আরেক চেলা বলে,
আমি
ওমুক স্থানে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়ে তালাকের ব্যবস্থা পর্যন্ত
করিয়েছি। এমনিভাবে একেক চেলা একেক অপকর্ম বা নাফরমানীর বিবরণ দিতে থাকে। ইবলিসের
অপর এক চেলা সে নিশ্চুপ অবস্থায় পিছনে বসে থাকে। তা দেখে ইবলিস তাকে জিজ্ঞাসাবাদ
করে, ওহে, তুমি কি কিছুই করনি? সে উত্তর করে, আমি সামান্য একটু করেছি। তা আপনার মন:পুত হয় কি-না, জানিনা। ইবলিস বলে, কি করেছিস? চেলা বলে, আমি মাদরাসার এক
ছাত্রকে এমনভাবে ওয়াসওয়াসা দিয়েছি,
সে
আর কোনদিন মাদরাসায় যাবে না। এটা শোনার সাথে সাথে ইবলিস তার আসন থেকে উঠে সেই
চেলাকে কোলে তুলে নিয়ে খুশিতে নাচতে থাকে এবং বলে, তুই সবচেয়ে বড় কাজ করেছিস। কারণ সেই মাদরাসার ছাত্র যদি
মাদরাসায় গিয়ে ইলম অর্জন করতো তাহলে সে আলিম হয়ে আমার কাজের বিরূদ্ধে মানুষকে
বুঝাতো, আমার শত্রু করে তুলতো।
কাজেই ইলমের মজলিস, মাহফিল থেকে
ফেরানোই হচ্ছে ইবলিসের সবচেয়ে বড় কাজ।
বুঝা গেল, শবে বরাত উপলক্ষে আয়োজিত ইল্মী মাহফিলকে বিদয়াত সাব্যস্ত
করা ইবলিস ও তার চেলাদের কাজ। ইবলিস ও তার চেলাদের অনুসরণ থেকে আল্লাহ পাক সকলকে
হিফাযত করুন। (আমীন) ১১. শবে বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালত
ছুটি ঘোষণা করা নাকি বিদয়াত চর্চার সুযোগ দেয়া? নাঊযুবিল্লাহ!
গোমরাহ ও বাতিলপন্থীদের উক্ত বক্তব্য মনগড়া, বানোয়াট,
বিভ্রান্তিকর
যা মুসলমানদের চরম শত্রুতাপূর্ণ বক্তব্য। মূলতঃ এর সঠিক জবাব হলো- শবে বরাত
উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালত ছুটি ঘোষণা করা বিদয়াত চর্চার
সুযোগ দেয়া নয় বরং নেক কাজের সুযোগ করে দেয়া বা সাহায্য করা। কেননা এ রাতেই
বান্দার বিগত এক বছরের আমলনামা আল্লাহ পাক উনার নিকট পেশ করা হয়, পরবর্তী এক বছরের রিযিকের ফায়ছালা করা হয়।
আগামী এক বছরে কত জন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং কতজন লোক ইন্তিকাল করবে তাও
ফায়ছালা করা হয় এ রাতেই। অর্থাৎ এ রাতেই প্রজ্ঞাসম্পন্ন যাবতীয় বিষয়ের ফায়ছালা করা
হয়। যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
(৩২৯)
انا انزلنه فى ليلة مبركة. انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم.
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি কুরআন
শরীফ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এক বরকতপূর্ণ রাত্রিতে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী
বা ভীতি প্রদর্শনকারী। উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয়ের ফায়ছালা করা
হয়।” (সূরা দুখান: আয়াত শরীফ ৩, ৪)
প্রজ্ঞাসম্পন্ন কি কি বিষয়ের ফায়সালা করা হয়
সে সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
(৩৩০)
فيها ان يكتب كل مولود من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ان يكتب كل هالك من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ترفع اعمالهم وفيها تنزل ارزاقهم
অর্থ: “এ বরাতের রাতে
আগামী এক বছরে কতজন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং কতজন লোক মৃত্যুবরণ করবে তা
লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাতে বান্দার আমলসমূহ আল্লাহ পাক উনার নিকট পেশ করা হয় এবং
এ রাতে বান্দার রিযিকের ফায়সালা করা হয়।” (মিশকাত)
তাই এ রাতে ইবাদত-বন্দিগী করা, দুয়া করা, আরজু পেশ করা,
ক্ষমা
প্রার্থনা করা এবং দিনের বেলা রোযা রাখার জন্য আদেশ-নির্দেশ করা হয়েছে।
শবে বরাত বা বরাতের রাতটি রহমত, বরকত,
মাগফিরাত
ও নাজাতের খাছ রাত এবং দুয়া কবুলের খাছ রাত। বছরের যে পাঁচটি খাছ রাতে দুয়া কবুলের
কথা হাদীছ শরীফে ঘোষণা করা হয়েছে তারমধ্যে একটি হচ্ছে বরাতের রাত। যেমন এ প্রসঙ্গে
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
(৩৩১)
ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلتا العيدين وليلة القدر المباركة.
অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাতে
(বিশেষভাবে) দোয়া কবুল হয়। রজব মাসের পহেলা রাত, শা’বানের মধ্য রাত
অর্থাৎ শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত,
ঈদুল
ফিত্রের রাত, ঈদুল আযহার রাত
এবং বরকতপূর্ণ ক্বদরের রাত।”
সুতরাং বান্দারা এ মুবারক রাতে ইবাদত-বন্দিগী
করে এবং দিনের বেলায় রোযা রেখে যাতে পুরোপুরি রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাত
হাছিল করতে পারে সে উপলক্ষে উক্ত রাতে ও দিনে ইবাদতের প্রস্তুতির জন্য শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ইত্যাদি ছুটি
ঘোষণা করা হয়। কেননা, শবে বরাতে সারা
রাত জেগে ইবাদত বন্দিগী করার কারণে এবং দিনের বেলায় রোযা রাখার কারণে অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সঠিকভাবে কাজ করা বা
দায়িত্ব পালন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আর শবে বরাতে উক্ত ইবাদত-বন্দিগী করার জন্য
প্রস্তুতিরও প্রয়োজন রয়েছে। এ উদ্দেশ্যেই মূলতঃ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান অফিস-আদালত
ইত্যাদি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এটা নেক কাজে সূযোগ বা সাহায্য করারই শামিল।
আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
(৩৩২)
تعاونوا على البر والتقوى
অর্থ:
“তোমরা নেকী ও পরহেযগারীর
মধ্যে সাহায্য কর।” (সূরা মায়িদা: আয়াত
শরীফ ২) আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
(৩৩৩)
الدال على الخير كفاعله
অর্থ: “নেক কাজে পথ
প্রদর্শনকারী ব্যক্তি নেক কাজ সম্পদনকারীর অনুরূপ ছওয়াব লাভ করবে।”
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে যে, রহমত,
মাগফিরাত
ও নাজাতের খাছ মাস হচ্ছে রমাদ্বান শরীফ। এ মাসে দিনের বেলায় রোযা রাখা আল্লাহ পাক
তিনি ফরয করে দিয়েছেন। আর রাতের বেলায় তারাবীহর নামায আদায় করা আল্লাহ পাক উনার
হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সুন্নত করে দিয়েছেন। এই
রোযা-নামায পালনসহ রমাদ্বান মাসের হক্ব উম্মত যাতে যথাযথভাবে আদায় করতে পারে এবং
তার রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের
পরিপূর্ণ হিসসা লাভ করতে পারে সে উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তি যদি তার অধীনস্ত কর্মচারীর
ডিউটি কমিয়ে দেয় তার ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
(৩৩৪)
من خفف عن مملوكه فيه غفر الله له واعتقه من النار.
অর্থ: “যে ব্যক্তি এ মাসে
আপন গোলাম বা কর্মচারীর দায়িত্বের বোঝা হালকা করে দিবেন আল্লাহ পাক তিনি তাকে
ক্ষমা করে দিবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন।” (মিশকাত)
(অসমাপ্ত)
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন
আবা-২০৮
0 Comments:
Post a Comment