ইমামু আহলি বাইত আলাইহিমুস সালাম

 

ইমামু আহলি বাইত আলাইহিমুস সালাম

 উনাদের প্রতি সালাম অনন্ত অসীম

পাঠ করছেন স্বয়ং রব্বুল আলামীন,

স্বয়ং রসূল পাক কহিছেন ঘোষণা

আহলে বাইত উনাদের খিদমতে হও ফানা।

‘ তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না’

খোদ ইলাহী তায়ালা উনার কালাম,

আহলে বাইত উনাদের খিদমত-মুহব্বতই

আল্লাহ পাক ও নবীজি উনাদের মুহব্বত তামাম।


তাই সবে পড়ি সকাল সাঁঝে মুবারক নাম

আহলে বাইত উনাদের বারোজন ইমাম;

উনাদের উসীলায় যেন পাই রেযা

হতে চাই মক্ববুল মাহবুব গোলাম।


আসাদুল্লাহ, বাবুল ইলম, সাইয়্যিদুনা খলীফাতুল মুসলিমীন

হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম

তিনি প্রথম ইমামে আহলে বাইত, আমিরুল মু’মিনীন।

দ্বিতীয় ইমাম, উলা ইমামুল হুমাম,

হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম

সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ তিনি

পঞ্চম খলীফায়ে ইসলাম।


তৃতীয় ইমাম, ছানী ইমামুল হুমাম,

হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম

জান্নাতের সাইয়্যিদ তিনি কারবালায় শহীদ

সুউঁচ্চে রাখেন ইসলাম।

চতুর্থ ইমাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম

যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম

আবিদগণের সৌন্দর্য ইমাম আলী ইবনু

হুসাইন সাজ্জাদ উনার মুবারক নাম।


পঞ্চম ইমাম, শাকির, হাদী, হযরত ইমাম

মুহম্মদ বাকির আলাইহিস সালাম

শরীয়ত, তরীক্বত, ইলমের খনি উনাদের

ক্বদমে জানাই সালাম।

ষষ্ঠ ইমাম, ইমামুস সাদিস হযরত ইমাম

জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম

আবু আব্দিল্লাহ আ’লামুন নাস, কায়িনাতে বিলালেন ইলম তামাম।

সপ্তম ইমাম, ইমামুস সাবি’,

হযরত ইমাম মুসা কাজিম আলাইহিস সালাম

সামি, সাব্বির, ছলিহ, আমীন, আবুল হাসান, আবু ইবরাহীম উপনাম।

অষ্টম ইমাম, ইমামুছ ছামিন, হযরত ইমাম আলি রিযা আলাইহিস সালাম

যিনি ছিলেন আতক্বান নাস, সাইয়্যিদুনা বাবুল ইলম ওয়াল হিকাম।


নবম ইমাম, ইমামুত তাসি’ হযরত ইমাম মুহম্মদ তকী আলাইহিস সালাম

ইমাম আল জাওয়াদ তিনি সব থেকে অল্প বয়সে ত্যাগ করেন ইহধাম।

দশম ইমাম, ইমামুল আশির হযরত ইমাম আলী নক্বী আলাইহিস সালাম

যিনি ছিলেন আবুল হাসান, ইমামুল হাদি, সবাই ছিল উনার গোলাম।


একাদশ ইমামে আহলে বাইত হযরত ইমাম মুহম্মদ হাসান আসকারী আলাইহিস সালাম

কখনো গ্রহণ করেননি দুনিয়া যদিও হাতের মুঠোয় সব নাজ-নিয়াম।

এই এগারো জন সকলেই করেছেন পর্দা হয়েছেন সবাই শহীদ

বাতিলের সাথে কখনো করেননি আপোস উনারা আহলে নবী সাইয়্যিদ।


হায়! ইতিহাস কেঁদে ফিরে আজ কেমনে হলেন শহীদ

যাঁহাদের তরে সৃষ্টি জগৎ উনারা কায়িনাতের সাইয়্যিদ।

রাজা-বাদশাহ আমীর উমরা ক্ষমতাসীনের প্রলোভন

কখনো করেননি গ্রহণ তাই বেদ্বীন মুনাফিক হয়েছে দুশমন।


দ্বাদশ ইমাম ইমামুল হাদী ওয়াল মাহদী হযরত ইমাম মুহম্মদ খলীফাতুল্লাহ আলাইহিস সালাম

যামানার শেষে বিলাদত শরীফ লাভ করে ইনছাফ করিবেন কায়িম।

হাল যামানার শ্রেষ্ঠ হাদী মোদের মামদূহ মুজাদ্দিদ আ’যম

যিনি সাইয়্যিদুল আসইয়াদ আহলে বাইত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম।


উম্মুল উমাম আম্মাজী ক্বিবলা; সাথে মুবারক আহালী ছামান

উনাদের তরে হই সবে ফানা করি মাল-জান কুরবান।

উনাদের রেযাতেই রেযায়ে নবী, রেযায়ে রব্বুল আলামীন

কামিয়াব হবে জিন-ইনছান যদি উনাদের তরে হয় বিলীন।

 শানে ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম

শানে ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম

জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ

 আহলে বাইত- জিন্দাবাদ

আওলাদে রসূল- জিন্দাবাদ

আলে রসূল- জিন্দাবাদ

মক্ববুল ইমাম- জিন্দাবাদ

ছিদ্দীক্ব, ছাদিক্ব- জিন্দাবাদ।


বেমেছাল শানে শানদার ইমামুস সাদিস

খোদার রাহে জীবন চালনায় হলেন নির্ভিক।

১২ ইমাম উনাদের অন্যতম স্মৃতির সোনালি খাতায়

হলেন তিনি আহলে বাইত রসূলী আওলাদ।


জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ

 আহলে বাইত- জিন্দাবাদ

আওলাদে রসূল- জিন্দাবাদ

আলে রসূল- জিন্দাবাদ

মক্ববুল ইমাম- জিন্দাবাদ

ছিদ্দীক্ব, ছাদিক্ব- জিন্দাবাদ।


ইলিম আমল ইখলাছে হলেন তিনি বেমেছাল

অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন এ ধরায় চিরকাল।

ছদিক্ব লক্ববে তিনি ভূষিত হন জাহানে

আউলিয়াদের গগনে হলেন জ্যোৎস্নার চাঁদ।


জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ

 আহলে বাইত- জিন্দাবাদ

আওলাদে রসূল- জিন্দাবাদ

আলে রসূল- জিন্দাবাদ

মক্ববুল ইমাম- জিন্দাবাদ

ছিদ্দীক্ব, ছাদিক্ব- জিন্দাবাদ।


ওলীয়ে কামিল হন, হন ইমাম উনাদের ইমাম

নূরে হলো মুখরিত এই ধরার তামাম।

যাহির আর বাতিনে হন সবার সেরা

সুনাম খ্যাতিতে তিনি হলেন আসাদ।



জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ

 আহলে বাইত- জিন্দাবাদ

আওলাদে রসূল- জিন্দাবাদ

আলে রসূল- জিন্দাবাদ

মক্ববুল ইমাম- জিন্দাবাদ

ছিদ্দীক্ব, ছাদিক্ব- জিন্দাবাদ।


ইমামে আ’যম উনার হন যে মুর্শিদ

সুলত্বানুল আরিফীনও হন না তা থেকে বায়ীদ।

ইমাম মালিক হলেন উনার একান্ত শিষ্য

সমকালীন আলিমদের হন হৃদী ফুয়াদ।


জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ

 আহলে বাইত- জিন্দাবাদ

আওলাদে রসূল- জিন্দাবাদ

আলে রসূল- জিন্দাবাদ

মক্ববুল ইমাম- জিন্দাবাদ

ছিদ্দীক্ব, ছাদিক্ব- জিন্দাবাদ।


উনার মুহব্বত হলো রসূল উনার মুহব্বত 

উনার বিরোধিতায় ফাটল রসূল উনার নিসবত।

আলে রসূল হলেন জাহানের সেরা নিয়ামত

ক্বদর না করিলে হবে ঈমান আমল বরবাদ।


জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ

 আহলে বাইত- জিন্দাবাদ

আওলাদে রসূল- জিন্দাবাদ

আলে রসূল- জিন্দাবাদ

মক্ববুল ইমাম- জিন্দাবাদ

ছিদ্দীক্ব, ছাদিক্ব- জিন্দাবাদ।

 সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ফখরুল আশিকীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু ওয়া সালাম উনার মুবারক  উসীলায় নিয়ামতে পরিপূর্ণ হয়েছে মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, মুহিউদ্দিন, আওলাদে রসূল,  সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি  উনার মক্ববূল মাশহূর ক্বাদিরিয়া তরীক্বা

 সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ফখরুল আশিকীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু ওয়া সালাম উনার মুবারক  উসীলায় নিয়ামতে পরিপূর্ণ হয়েছে মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, মুহিউদ্দিন, আওলাদে রসূল,  সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি  উনার মক্ববূল মাশহূর ক্বাদিরিয়া তরীক্বা 

 একথা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিকট ইলমসহ সমস্ত নিয়ামতরাজি পুঞ্জীভূত। যা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে সুস্পষ্ট হয়েছে। হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উসীলা ব্যতিত কোনো কিছুই পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে না। যার বাস্তব নমুনা ইলমে তাছাউফ উনার তরীক্বাসমূহ।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার অসীম রহমত বরকত সাকীনা মুবারক উনার বদৌলতে এবং সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ইহসান উনার উসীলায় আজো বিশ্বব্যাপী জারি রয়েছে মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গউছুল আ’যম, দস্তগীর, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মক্ববূল মাশহূর পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বা। সুবহানাল্লাহ! ইনশাআল্লাহ ক্বিয়ামত পর্যন্ত তা ছহীহ তরতীবে জারি থাকবে সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তবে এ তরীক্বা নিয়ামতে পরিপূর্ণ হয়েছে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক উসীলায়। যা এ মহান ত্বরীক্বা উনার পবিত্র শাজরা শরীফ পর্যালোচনা করলেই দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হবে। বিশ্বব্যাপী সুমহান শান মুবারক-এ জারি থাকা মুবারক ক্বাদিরিয়া তরীক্বা উনার সুমহান শাজরা শরীফ এখানে উল্লেখ করা হলো:-

১। ইলাহী বহুরমতে কুল-মাখলূক্বাতের নবী ও রসূল, হায়াতুন নবী, ছাহিবে ইলমে গইব, ছাহিবে মুত্তালা’ ‘আলাল গইব, জামিউল ইলম, ছাহিবে মাফাতীহুল ইলম, আল্হাদ্বির, আন্নাযির, ছাহিবে লাওলাক, ছাহিবে ক্বাবা ক্বওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, ছাহিবে মাক্বামে মাহমূদ, ছাহিবে লিওয়ায়িল হামদ্, ছাহিবে শাফা‘আতে কুবরা, ছাহিবে লাসতু কাআহাদিকুম, ছাহিবে মি’রাজ, ছাহিবে কুন ফাইয়াকুন, ছাহিবে ওয়াহ্য়ি, ছাহিবে শারীআহ, আলগনিইয়্যূ, রঊফুর রহীম, আত্ত্বাহির, আত্তইয়িব, শাফিউল উম্মাহ, খতীবুল আম্বিয়া ওয়াল উমাম, সাইয়্যিদুল মাখদূম, ছাহিবে জামিউল আসমা ওয়াছ ছিফাত, ফাদ্বলুল্লাহ, আকরামুল আওওয়ালীন ওয়াল আখিরীন, ফখরুল আম্বিয়া, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

২। ইলাহী বহুরমতে সাইয়্যিদুল আরব, বাবুল ইলমি ওয়াল হিকমাহ, আমীনু আহলি আরদ্ব, কুদওয়াতুল মুত্তাক্বীনা, যীনাতুল আরিফীন, নূরুল মুত্বীয়ীন, ইমামুল আদিলীন, আহলু বাইতিন নাবিইয়ি, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আসাদুল্লাহিল গালিব, আল ইমামুল আউওয়াল মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম।

৩। ইলাহী বহুরমতে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সিবতু রসূলিল্লাহ, আলু রসূলিল্লাহ, আল ইমামুস সাইয়্যিদ, আল ইমামুল হুমাম, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আল ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৪। ইলাহী বহুরমতে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সিবতু রসূলিল্লাহ, আলু রসূলিল্লাহ, আল ইমামুস সাইয়্যিদ, আল ইমামুল হুমাম, কাবীরুশ শা’ন, শহীদে কারবালা, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, আল ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৫। ইলাহী বহুরমতে ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, আওলাদু রসূলিল্লাহ, ইয়াদগারে নুবুওওয়াহ, পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, আল ইমামুর রাবি’ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৬। ইলাহী বহুরমতে ইমামুল হুদা, ইমামু আহলিল ইয়াক্বীন, সুলালাতুন নুবুওওয়াহ, সিরাজুল মিল্লাহ, আল ইমামুল খামিস মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৭। ইলাহী বহুরমতে ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, আওলাদু রসূলিল্লাহ, ইয়াদগারে নুবুওওয়াহ, ইমামুস সাদিস মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৮। ইলাহী বহুরমতে ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, আওলাদু রসূলিল্লাহ, ইয়াদগারে নুবুওওয়াহ, ইমামুস সাবি’ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৯। ইলাহী বহুরমতে ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, আওলাদু রসূলিল্লাহ, ইয়াদগারে নুবুওওয়াহ, ইমামুছ ছামিন মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

১০। ইলাহী বহুরমতে ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত শায়েখ মা’রূফ কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১১। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আবূল হাসান সাররী সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১২। ইলাহী বহুরমতে হযরত খাজা সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা জুনায়িদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৩। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৪। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আব্দুল আযীয বিন হারিছ তামিমী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৫। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আব্দুল ওয়াহিদ বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৬। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আবূল ফাররাহ মুহম্মদ তারতুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৭। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আবূল হাসান হাককারী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৮। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আবূ সাঈদ মুবারক মখদুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৯। ইলাহী বহুরমতে ইমামে রব্বানী, মাহবূবে সুবহানী, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, ইমামুর রাসিখীন, সুলত্বানুল আরিফীন, গাউছে সামদানী, মাশায়েখে আকবর মাশরিক ওয়াল মাগরিব, কুতুবুল আলম, ফরদুল আহবাব, গউছুল আ’যম, শায়খে শুইয়খিল আলম, গাউসে সাক্বালাইন, শাইখুল ইসলাম, ইমামুল আইম্মা, সাইয়্যিদুনা হযরত মুহিউদ্দীন বড়পীর ছাহিব আল হাম্বলী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

* তিনিই পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বা উনার সম্মানিত ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি। সকলের নিকট তিনি বড়পীর ছাহিব গাউছুল আ’যম, দস্তগীর লক্বব মুবারক-এ মশহূর।

২০। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ আব্দুর রাযযাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২১। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ শরফুদ্দীন কাত্তাল রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২২। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আব্দুল ওয়াহহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৩। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ বাহাউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৪। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আক্বীল রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৫। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ শামসুদ্দীন সাহরায়ি রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৬। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ গাদায়ে রহমান আউয়াল রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৭। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ শামসুদ্দীন আরিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৮। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ গাদায়ে রহমান ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৯। ইলাহী বহুরমতে হযরত শাহ ফাযিল রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩০। ইলাহী বহুরমতে হযরত শাহ কামাল কায়থালী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩১। ইলাহী বহুরমতে হযরত শাহ সিকান্দার কায়থালী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩২। ইলাহী বহুরমতে আফযালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, কাইয়্যুমে আউওয়াল, আজিমুল বারাকাত, গউছুছ ছাক্বালাইন, খাযীনাতুর রহমাহ, মাখদূমে যামান, আল মুনাওওয়ার, খাজায়ে খাঁজেগা, আবূল বারাকাত বদরুদ্দীন হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী সিরহিন্দী আল হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। 

* তিনি একাদশ হিজরী শতকের মহান মুজাদ্দিদ।

* তিনি মহান মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বা উনার ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনিই হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খেরকা মুবারক হযরত শাহ সিকান্দার কায়থালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক মারফত প্রাপ্ত হয়েছেন।

৩৩। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আদম বিন নূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩৪। ইলাহী বহুরমতে হযরত সাইয়্যিদ আব্দুল্লাহ আকবরাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩৫। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আব্দুর রহীম মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩৬। ইলাহী বহুরমতে রঈসুল মুহাদ্দিছীন, মুজাদ্দিদে যামান ও মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

* তিনি দ্বাদশ হিজরী শতকের মহান মুজাদ্দিদ।

৩৭। ইলাহী বহুরমতে হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩৮। ইলাহী বহুরমতে আমীরুল মু’মিনীন, মুজাদ্দিদে যামান, হযরত শাহ সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী আলাইহিস সালাম।

* তিনিই ত্রয়োদশ হিজরী শতাব্দীর মহান মুজাদ্দিদ এবং সুপ্রসিদ্ধ ‘মুহম্মদিয়া তরীক্বা’ উনার সম্মানিত ইমাম।

৩৯। ইলাহী বহুরমতে কুতুবুল আকতাব হযরত মাওলানা শাহ ছূফী নূর মুহম্মদ নিজামপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৪০। ইলাহী বহুরমতে ওয়াসিল বিল্লাহ, আশিক্বে রসূলিল্লাহ, কুতুবুল ইরশাদ হযরত মাওলানা শাহ ছূফী ফতেহ আলী বর্ধমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

* উনাকে রসূলে নোমা বলা হয়। কারণ তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত করিয়ে দিতে পারতেন।

৪১। ইলাহী বহুরমতে আমীরুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, মুজাদ্দিদে যামান, কুতুবুল আলম শাহ ছূফী আলহাজ্জ হযরত মাওলানা আব্দুল্লাহিল মা’রূফ মুহম্মদ আবূ বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী আল হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

* তিনি চতুর্দশ হিজরী শতকের মহান মুজাদ্দিদ।

৪২। (ক) ইলাহী বহুরমতে ওলীয়ে মাদারযাদ, কুতুবুল আলম, সুলত্বানুল আরিফীন, হযরত মাওলানা শাহ ছূফী আবূ নজম মুহম্মদ নাজমুস সায়াদাত ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

(খ) ইলাহী বহুরমতে, কুতুবুল আলম, কাইয়্যুমে যামান, শায়েখুল মাশায়িখ, হযরত মাওলানা শাহ ছূফী আবূ নছর মুহম্মদ আব্দুল হাই ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৪৩। ইলাহী বহুরমতে কুতুবুল আলম, আমীরুশ শরীয়ত, মাহতাবে তরীক্বত, সুলত্বানুল আরিফীন, মাহিয়ে বিদয়াত, মুহইয়ে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে যামান, হুজ্জাতুল ইসলাম, তাজুল মুফাসসিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, ফখরুল ফুক্বাহা আলহাজ্জ হযরত মাওলানা শাহ ছূফী আবূল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি।

তিনি উপরোক্ত উনাদের দু’জন থেকেই খিলাফত প্রাপ্ত হন। তবে উনার প্রধান শায়েখ হচ্ছেন হযরত নাজমুস সায়াদাত ছিদ্দীক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৪৪। ইলাহী বহুরমতে, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইউস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, ক্বইয়ূমুয যামান, হুজ্জাতুল ইসলাম, সুলত্বানুল আরিফীন, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যূল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম।

* তিনিই সারা বিশ্বে সমাদৃত, প্রশংসিত, গ্রহণযোগ্য ও হক্ব সিলসিলা “রাজারবাগ শরীফ”-উনার মহা সম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। তিনিই হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর ‘মহান মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম।’

 এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, উনার সুমহান তরীক্বা শরীফ উনার সুযোগ্য আকাবির খলীফা আজমাঈন উনাদের মাধ্যমে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে সম্প্রসারিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! তবে বর্তমানে খুব কম খানকায়, কম সিলসিলায়, কম দরবারে গদ্দীনশীন ব্যক্তিবর্গ মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গউছুল আ’যম, দস্তগীর, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তর্জ-তরীক্বা মুতাবিক আমল-আক্বীদা ইত্যাদি হুবহু নকশায় জারি রেখেছেন। বরং প্রায় সকলেই বিভিন্নভাবে উনার তরীক্বা মুবারক উনার সবক, আমল-আখলাক আদর্শ ইত্যাদিকে বিকৃত করেছে, অনেক কিছু ছেড়ে দিয়েছে কেউবা কমবেশি করেছে। নাউযুবিল্লাহ!

কিন্তু বর্তমান যামানায় একমাত্র ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ কিবলা কা’বা মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমেই বর্তমান যামানা পর্যন্ত জারি রয়েছে মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গউছুল আ’যম, দস্তগীর, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মক্ববূল মাশহূর পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বা। সুবহানাল্লাহ! 

আয় বারে ইলাহী! উনাদের উসীলায় আমাদের উপর আপনার খাছ রহমত, মুহব্বত ও মা’রিফাত এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ তাওয়াজ্জুহ, ফায়িয, যিয়ারত, মুহব্বত ও মা’রিফাত দান করুন। সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করার তাওফীক দিন। যাহিরী ও বাতিনী দৃঢ়তা আর ইহকাল ও পরকালের সুস্থতা দান করুন। এই সকল বুযুর্গানে দ্বীন উনাদের ফুয়ূজাত, বারাকাত ও কামালাতের পূর্ণ হিসসা নছীব করুন। আমীন!

 সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার একটি মুবারক কারামত

 

সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার একটি মুবারক কারামত

 হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ৬ষ্ঠ ইমাম হচ্ছেন, সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুস ছিদ্দীক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম। উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল, ফযীলত ও বুযুর্গী মুবরক রয়েছে। যা আমরা নিম্ন বর্ণিত উনার মুবারক কারামত উনার দ্বারা উপলব্ধি করতে পারবো। 

একবার খলীফা মানছূর সে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার পরিকল্পনা করেছিলো। নাউযুবিল্লাহ! কারণ খলীফা মনছুর ছিলো দুষ্ট প্রকৃতির। সে দেখলো সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার প্রভাব প্রতিপত্তি অনেক বেশি। কারণ সে সময়কার মাশহুর তথা প্রসিদ্ধ ব্যক্তিবর্গ সবাই উনার মুরীদ। যেমন- হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি, সুলত্বানুল আরিফীন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, রসায়নবিদ হযরত জাবির বিন হাইয়্যান রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আম-খাছ, আলিম-উলামা, ছূফী-দরবেশ সবাই উনার মুরীদের অন্তর্ভুক্ত। তাই একদিন আব্বাসীয় খলীফা মানছুর তার সভাসদসহ খাদিম-খুদ্দামদেরকে নিয়ে পরামর্শ করলো কিভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করা যায়। না‘ঊযুবিল্লাহ! 

সকলে বললো এ কাজটা করা তার ঠিক হবে না। তারপরও হিংসাবশতঃ সে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার পরিকল্পনা করলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! 

সে বললো- সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে দাওয়াত করা হবে। উনি যখন দাওয়াতে আসবেন তখন মনছুর তার মাথার পাগড়িটি খুলে ফেললে বুঝতে হবে উনাকে শহীদ করতে হবে। নাউযুবিল্লাহ!

কথা অনুযায়ী সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে দাওয়াত করা হলো- উনিও দাওয়াতে আসলেন। উজীর, নাজির, খাদীম, খুদ্দাম, সকলেইতো গভীর চিন্তিত, পেরেশান। ব্যাপারটা কি থেকে কি হয়ে যায়। দেখা গেলো উনি যখন তাশরীফ নিলেন তখন খলীফা মনছুর কাচুমাচু হয়ে, অত্যন্ত বিনীতভাবে, ভক্তিভরে উনাকে তার আসনে বসিয়ে বলতে লাগলো, ‘হুযূর! বেয়াদবী মাফ করবেন আমি আপনার কি খিদমত করতে পারি? আপনি কি চান?’ তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহি সালাম তিনি বললেন, ‘আমাকে সংবাদ দিবে না, তুমি আমার ইবাদত-বন্দেগীতে ব্যাঘাত ঘটাবে না। এটাই আমি চাই।’ 

এরপর অত্যন্ত তা’যীম, তাকরীম উনার সাথে খলীফা মনছুর সে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে উনার বাড়িতে পৌঁছে দিলো। পৌঁছে দিয়ে রাজপ্রাসাদে এসে সে বেহুঁশ হয়ে পড়লো। 

 বেহুঁশ হওয়ার কারণে তার তিন ওয়াক্ত নামায কাযাও হলো। অতঃপর তার যখন হুঁশ ফিরে আসলো তখন তাকে উজীর, নাজির, খাদিম, খুদ্দামরা বললো ব্যাপারটা কি? তখন খলীফা মনছুর বললো- সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি যখন তাশরীফ নিয়েছিলেন তখন সে উনার সাথে একটা বড় অজগর সাপও দেখতে পেয়েছিলো। সাপটি বলতেছিলো, হে মনছুর! তুমি যদি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার সাথে বেয়াদবী করো, তাহলে তোমার কোনো রক্ষা নেই। তোমাকে আমি ধ্বংস করে ফেলবো। 

এটা দেখে সে উনাকে তা’যীম, তাকরীম করেছে, খিদমতের আঞ্জাম দিয়েছে এবং পরে ভয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়েছে। 

 ‘মা’দের প্রতি সাইয়্যিদুনা ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার উপদেশ-  ‘শিশুদের যেন মায়ের বামপাশে শোয়ানো হয়’

 ‘মা’দের প্রতি সাইয়্যিদুনা ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার উপদেশ-  ‘শিশুদের যেন মায়ের বামপাশে শোয়ানো হয়’

 পবিত্র ইলমে লাদুন্নীর মাধ্যমে প্রাপ্ত উনার এই উপদেশ মুবারক উনার অন্তর্নিহিত কারণ যথাযথভাবে কেউ সে সময় উপলব্ধি করতে পারেনি। এমনকি ইউরোপের তথাকথিত রেনেসাঁর সময়কালীন সময়েও উনার এই উপদেশ মুবারক উনার মর্মার্থ উপলব্ধির অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু উনার এই বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব মুবারক উনার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করতে তারা ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে আবার নিউইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নবজাতকের উপর গবেষণা পরিচালিত হয়। তারা পৃথিবীর বিভিন্নস্থানে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পায় যে, যে সকল শিশু মায়ের বাম পার্শ্বে ঘুমায় সে সব শিশু সন্তানরা শান্তিপূর্ণভাবে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে। কিন্তু যে সব শিশু সন্তানরা তাদের মায়ের ডান পার্শ্বে ঘুমায় সে সব শিশু সন্তানরা যখন তখন ঘুম থেকে জেগে যায় এবং কান্নাকাটি করে।

হোলোগ্রাফী আবিষ্কারের পর জানা যায় যে, মাতৃগর্ভস্থ শিশুরা তাদের মায়ের হৃদস্পন্দন শুনতে পায়। মায়ের হৃদস্পন্দন শিশুর অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য। মাতৃগর্ভস্থ শিশুদের কাছে মায়ের হৃদস্পন্দন মানে হলো তার জন্য অবিরত খাদ্যের যোগান আর হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার অর্থ হলো মৃত্যু। একজন নবজাতক যখন তার মায়ের বাম পার্শ্বে ঘুমায় যেখান থেকে সে তার মায়ের হৃদস্পন্দন স্পষ্টভাবে শুনতে পায়। ফলে সে শান্তিপূর্ণভাবে আরামদায়ক ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে।

এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি অবলীলায় বলে দিলেন। অথচ মুসলমানদের তথ্য-উপাত্ত চোর, জালিয়াত, মিথ্যা বিজ্ঞানী দাবিদাররা উনার বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব মুবারক উনার মর্মার্থ উপলব্ধি করতে সময় লেগেছে প্রায় ১১০০ বছর। তাহলে এটি সুস্পষ্ট যে ওই সকল বিজ্ঞানী দাবিদারদের আসলে বিজ্ঞানের কোনো বিষয়েই দখল নেই। বরং এই জালিয়াতগুলো মুসলমানদের তথ্য-উপাত্ত চুরি করে কিছু সরাসরি নিজেদের নামে চালিয়ে দিয়েছে নতুবা মুসলমান বিজ্ঞানীদের আসল নাম বিকৃত করে প্রচার করেছে।

 সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার মুবারক একটি স্বপ্ন

 সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার মুবারক একটি স্বপ্ন

 আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি বলেন- ১৪৮ হিজরী সনের পবিত্র ১১ই রজবুল হারাম শরীফ পবিত্র জুমুয়াহ শরীফ উনার রাত্রে আমি যথারীতি পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ও যিকির আযকার করে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখতে পাই, আমি আলমে নাসুত থেকে (পৃথিবী হতে) ঊর্ধ্বারোহন করে আলমে মালাকুত এবং আলমে মালাকুত থেকে জাবারুতে গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে এক বিশাল ময়দান দেখতে পেলাম। সেই ময়দানের এক পাশে মারওয়ারিদ পাথরের একটা তাবু টানানো। সেখান থেকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালেক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার কাছে এসে বললেন, “হে হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম! আপনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ডাকছেন। আমি সাথে সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গেলাম। দেখলাম সমস্ত হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের পবিত্র রূহ মুবারক সেখানে উপস্থিত আছেন। সুবহানাল্লাহ! এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা কাতারবন্দী হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। একটা খুব সুন্দর আসনের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বসা অবস্থায় আছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে দেখামাত্র বসার জন্য ইশারা করলেন। আমি বসলাম।

কিছুক্ষণের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাশে এসে বসলেন। ইত্যবসরে দেখা গেল দুটি পবিত্র রূহ মুবারক এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ডান জানু মুবারক ও বাম জানু মুবারকে বসলেন। বসার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম! আপনি আজ থেকে তিনদিন পর আমার কাছে চলে আসবেন। আমি চাই আপনি জাবারুতের অবস্থা দর্শন করে তা আলমে নাসূতের মধ্যে লিপিবদ্ধ করেন।’ 

একথা বলার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আপনি কি জানেন এ মুবারক রূহ দুটি কার? আমার ডান জানু মুবারকে যার রূহ মুবারক দেখতে পেলেন তিনি আমার থেকে পাঁচশত বৎসর পর পৃথিবীতে আগমন করবেন। তিনি হলেন গাউসুল আ’যম হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আমার বাম জানু মুবারকে যে রূহটি আছেন তিনি হলেন, হযরত আলী আহমদ ছাবের কালিয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার এ দুই খাছ মকবুল বান্দা দ্বারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অনেক খিদমত নিবেন। 

তারপর পাশে বসে থাকা অবস্থায় সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি এবং হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি উনাদের বললেন, “আপনাদের পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ হওয়ার পর আমি আমার উম্মতের কথা ভাবি। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার এই দুই মাহ্বুব বান্দা দ্বারা আমাকে সুসংবাদ দান করেন। 

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি উক্ত স্বপ¦ দেখার পর ঘুম থেকে জেগে উঠলাম এবং সকালে উঠে ‘কাশফুল গুয়ুব’ কিতাবে তা লিপিবদ্ধ করলাম। এই ‘কাশফুল গুয়ুব’ কিতাব তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পূর্বেই লিখেছিলেন এবং সত্যিই তিনি তিনদিন পরে পবিত্র ১৪ই রজবুল হারাম শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। 

 সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন,  আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক-

 সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন,  আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক- 

সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ৬ষ্ঠ ইমাম। উনার মুবারক নাম জা’ফর। জা’ফর অর্থ সাগর। সত্যিকার অর্থে তিনি ছিলেন ইলম, আক্বল-সমঝে, মা’রিফাত-মুহব্বত প্রাপ্তিতে সাগরতুল্য। কুনিয়াত- আবু আবদিল্লাহ ও আবু ইসমাঈল। ‘ছাদিক্ব¡’ হচ্ছে উনার বিশেষ লক্বব মুবারক। এই লক্বব মুবারক ছাড়াও উনার আরো অনেক লক্বব মুবারক রয়েছে যেগুলো উনার মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মানের বহিঃপ্রকাশ। তিনি ৯৬ হিজরী সনে ১৭ই রবীউল আউওয়াল শরীফ পবিত্র মদীনা শরীফ-এ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর ১৪৮ হিজরী সনের পবিত্র ১৪ই রজবুল হারাম শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার সম্মানিত পিতা উনার নাম মুবারক হচ্ছেন ইমামুল খামীস সাইয়্যিদুনা ইমাম আবু জা’ফর মুহম্মদ বাকির আলাইহিস সালাম। যিনি ইমামুর রবি’ সাইয়্যিদুনা ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ অর্থাৎ ছেলে। উনার সম্মানিতা মাতা উনার মুবারক নাম হযরত উম্মে ফারওয়া বিনতে ইমাম কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি হযরত আসমা বিনতে আব্দুর রহমান ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে¡ আকবর আলাইহিস সালাম উনার মেয়ে। 

তরীক্বত উনার নিসবত:

সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি তরীক্বত উনার দু’দিক থেকে নিসবত পেয়েছিলেন। দু’দিক থেকেই তিনি খাছ ফয়েজ হাছিল করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

প্রথমতঃ স্বীয় সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামুল মুত্তাক্বীন, সুলত্বানুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল খামীস আলাইহিস সালাম উনার নিকট থেকে খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক হাছিল করেছিলেন। তিনি উনাকে স্বীয় ইমাম পদে সমাসীন করেন। তিনিই হচ্ছেন উনার গদ্দিনশীন। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে প্রাপ্ত খাছ নিয়ামত সীনা-ব-সীনা উনার মাধ্যমেই পেয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

 দ্বিতীয়তঃ পেশওয়ায়ে দ্বীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বিন, ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম কাশিম ইবনে মুহম্মদ ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে¡ আকবার আলাইহিস সালাম উনার থেকেও খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক হাছিল করেন। যিনি ছিলেন উনার সম্মানিত নানাজান।

 পেশওয়ায়ে দ্বীন, ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম কাসিম ইবনে মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছহিবে রসূলিল্লাহ, ছহিবুল আসরার হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পবিত্র হাত মুবারকে বাইয়াত গ্রহণ করেন। উনার থেকে খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক হাছিল করেন। মূলত, তিনিই ছিলেন উনার প্রধান খলীফা। সুবহানাল্লাহ!

আর ছহিবে রসূলিল্লাহ, ছাহিবুল আসরার হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছোহবতে থেকে খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক হাছিল করেন। উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ উনার পর খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আমিরুল মু’মিনীন, আফজালুন্ নাছ বাদাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে¡ আকবর আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে বাইয়াত গ্রহণ করতঃ খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (ইকতিবাসূল আনওয়ার/১৩৭)

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার মুবারক নছীহত মুবারক

 (১) নিজেকে হারাম বস্তু থেকে বাঁচাও, যা কিসমতে আছে তার উপর সন্তুষ্ট থাক; তবে ছুফী হতে পারবে।

(২) মনে রেখ মিথ্যাবাদী ভদ্র হয় না, হিংসুক আরাম পায় না, চরিত্রহীন নেতৃত্ব করতে পারে না।

(৩) দুশ্চরিত্রের সাথে চলাফেরা করিও না। তাহলে তোমার চরিত্র নষ্ট হতে সময় লাগবে না।

(৪) কারো গুণ দেখলে প্রশংসা করিও। দোষ দেখলে গোপন রাখিও এবং কেউ অন্যায় করিলে ক্ষমা করিও; তবেই তুমি নেককার মানুষ।

(৫) ক্রোধ-এর উৎপত্তি আগুন থেকে আর আগুন দ্বারাই দোযখ তৈরি করা হয়েছে। অতএব, সর্বদা ক্রোধ বর্জন কর।

(৬) পাঁচ প্রকার লোকের সাথে সংশ্রব রাখিও না। এক. মিথ্যাবাদী, কারণ মিথ্যাবাদীর কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দুই. কৃপণ, কারণ কৃপণ নিজ লাভের জন্য তোমার ক্ষতি করে বসবে। তিন. নির্দয়, কারণ নির্দয় বিপদের সময় তোমার প্রতি দয়া দেখাবে না। চার. কাপুরুষ, কারণ কাপুরুষ বিপদের সময় নিজ নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। পাঁচ. ফাসিক, কারণ ফাসিকের নির্দিষ্ট কোনো চরিত্র নেই। সে নিজ স্বার্থে যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে সবসময় সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুল্যবান নছীহত মুবারক পালনের তাওফীক দান করুন। আমীন

 সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত-বুযূর্গী-সম্মান মুবারক

 সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত-বুযূর্গী-সম্মান মুবারক

 সম্মানিত ও পবিত্র নাম মুবারক: সাইয়্যিদুনা  হযরত জা’ফর আলাইহিস সালাম; এর অর্থ- নদী, খাল, সাগর ইত্যাদি। মূল অর্থ হলো- জামিউন নিয়ামত তথা সমস্ত নিয়ামত মুবারক উনাদের অধিকারী এবং জামিউন নিসবত অর্থাৎ সমস্ত নিসবত মুবারক উনার অধিকারী। যেহেতু সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম হিসেবে বিশেষ নিয়ামত ও নিসবত মুবারক উনার অধিকারী, উম্মত হিসেবে মূল নিয়ামত ও নিসবত মুবারক উনার অধিকারী এবং যাহিরী, বাতিনী সমস্ত নিয়ামত ও নিসবত মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন, তাই তিনি হচ্ছে জামিউন নিয়ামত বা সমস্ত নিয়ামত রাজির অধিকারী এবং জামিউন নিসবত অর্থাৎ সমস্ত নিসবতের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত লক্বব মুবারক: ‘ছাদিক্ব’ হচ্ছেন, উনার একটি বিশেষ লক্বব মুবারক। তিনি হচ্ছেন সমস্ত ছাদিক্বীন উনাদের ইমাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা ছাদিক্বীন উনাদের সঙ্গী হয়ে যাও।”

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন- এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক। এছাড়াও ফাদ্বিল, ত্বাহির উনার বিশেষ লক্বব মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। মূলত, তিনি সমস্ত উত্তম ছিফত মুবারক উনারই অধিকারী ছিলেন। তাই সেই দিক থেকে তিনি হচ্ছেন, জামিউল আলক্বাব বা সমস্ত লক্বব মুবারক উনাদের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত ও পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ষষ্ঠ ইমাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি ৯৬ হিজরী সনের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১৭ই সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ) ইছনানিল আযীম শরীফ (সোমবার) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ-এ সম্মানিত ও পবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর উনার সম্মানিত ও পবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ হচ্ছেন- ১৪৮ হিজরী শরীফ উনার পবিত্র ১৪ই রজবুল হারাম শরীফ ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) বাদ-ইশা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ-এ। সুবহানাল্লাহ! তিনি দুনিয়ার যমীনে ৫২ বছর ৩ মাস ২৭ দিন অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!

মুবারক পরিচিত: তিনি হচ্ছেন সম্মানিত পিতা উনার দিক থেকে- সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম ইবনে মুহম্মদ বাকির আলাইহিস সালাম ইবনে যাইনুল আবেদীন আলী আওসাত আলাইহিস সালাম ইবনে সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! আর নসবনামা হিসেবে তিনি হচ্ছেন যিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার বংশধর তথা আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। উনার ধমনী মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুন নাজাত মুবারক প্রবাহিত। সুবহানাল্লাহ!

তিনি সম্মানিত মাতা উনার দিক থেকে আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। সুবহানাল্লাহ! 

উনার সম্মানিত মাতা উনার নাম মুবারক হচ্ছেন- হযরত উম্মে ফারওয়া আলাইহাস সালাম। উনার সম্মানিতা মাতা উনার নসবনামা মুবারক হচ্ছেন হযরত উম্মে ফারওয়া বিনতে হযরত ক্বাসিম ইবনে হযরত মুহম্মদ ইবনে সাইয়্যদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিমুস সালাম। সম্মানিত মাতা উনার দিক থেকে হযরত উম্মে ফারওয়া বিনতে হযরত আসমা বিনতে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে সাইয়্যদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে¡ আকবর আলাইহিমুস সালাম। তিনি হচ্ছেন ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বারো (১২) ইমাম আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে সাদিস বা ষষ্ঠ ইমাম। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত বারো ইমাম আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম মুবারক উনাদের তালিকা মুবারক নিম্নরূপ:

১. ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম।

২. ইমামুছ ছানী সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম। 

৩. ইমামুছ ছালিছ সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম।

৪. ইমামুর রাবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আলী আওসাত্ব জয়নুল আবেদীন আলাইহিস সালাম।

৫. ইমামুল খামিস সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুহম্মদ বাকির আলাইহিস সালাম। 

৬. ইমামুস সাদিস সাইয়্যিদুনা হযরত জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম।

৭. ইমামুস সাবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মূসা কাযিম আলাইহিস সালাম।

৮. ইমামুছ ছামিন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আলী রেযা আলাইহিস সালাম।

৯. ইমামুত তাসি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুহম্মদ ত্বক্বী আলাইহিস সালাম,

১০. ইমামুল আ’শির সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আলী নক্বী আলাইহিস সালাম।

১১. ইমামুল হাদি আ’শার সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আসাকারী আলাইহিস সালাম, এবং

১২. ইমামুছ ছানি আ’শার সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুহম্মদ মাহদী আলাইহিস সালাম। (যিনি শেষ যামানায় আসবেন এবং হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাদের সঙ্গী হয়ে দাজ্জালারের বিরুদ্ধে জিহাদ করবেন।) সুবহানাল্লাহ!

হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যেমন আলাদা মাক্বাম তেমনি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বারো (১২) ইমাম আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাক্বামও আলাদা। সুবহানাল্লাহ!

সেই হিসেবে ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি কতটুকু বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনার অধিকারী সেটা বলার অপেক্ষাই রাখে না। সুবহানাল্লাহ!

জামিউন নিয়ামত: ক্বাদেরীয়া তরীক্বার সিলসিলা অনুযায়ী ইমামুস সাদিস সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক সাত নম্বরে। আর নকশবন্দিয়া মুজাদ্দিদীয়া তরীক্বার সিলসিলা অনুযায়ী উনার নাম মুবারক পঞ্চম নম্বরে। তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম হিসেবে মূল নিয়ামত মুবারকপ্রাপ্ত হয়েছিলেনই, তথাপি তিনি উম্মত হিসেবে মূল নিয়ামত হাছিল করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, একজন উম্মত হিসেবে যতটুকু নিয়ামত ধারণ করা সম্ভব আমি আমার সমস্ত নিয়ামতটুকুই সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে¡ আকবর আলাইহিস সালাম উনার বক্ষ মুবারক-এ ঢেলে দিয়েছি।” সুবহানাল্লাহ!

আর সেই নিয়ামতটুকুই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি উনার নানা হযরত ক্বাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাধ্যম দিয়ে হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে¡ আকবর আলাইহিস সালাম উনার থেকে হাছিল করেন। সুবহানাল্লাহ!

সেই দিক থেকে তিনি হচ্ছেন জামিউন নিয়ামত ও নিসবত তথা হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম হিসেবে মূল নিয়ামত ও নিসবত এবং উম্মত হিসেবে যে বিশেষ নিয়ামত ও নিসবত রয়েছে, সেই দুই নিয়ামত ও নিসবতকে একত্রকারী। সুবহানাল্লাহ!

এছাড়াও তিনি যাহিরী-বাতিনী সমস্ত নিয়ামত ও নিসবত মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন। মূলত, তিনি হচ্ছেন, সেই সম্মানিত ও  পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মিছদাক। যেই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, “আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে কাউছার তথা সমস্ত নিয়ামত মুবারক হাদিয়া করেছি।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১)

এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক্ব। এক কথায় তিনি শুধু নবী-রসূল নন; এছাড়া সমস্ত মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান ও নিয়ামতের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!

আ’লামুন নাস: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন সমস্ত মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত ও পবিত্র ইলিম মুবারক উনার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!

একবার উনার যামানায় এক ব্যক্তি দাবি করলো যে, সে সমস্ত কিছু জানে, সে সমস্ত জ্ঞানের অধিকারী। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো। তাকে উনার কাছে নিয়ে আসা হলো। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি নাকি সমস্ত কিছু জানো, বলে দাবি করো? সে বললো, হ্যাঁ। না‘ঊযুবিল্লাহ!

তখন তিনি যমীন থেকে একটা দুর্বাঘাস তুলে তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে তুমি বলো তো দেখি, পৃথিবীতে এই দুর্বাঘাসের সংখ্যা জোড় না বেজোড়? সে বললো, আমি জানি না। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমার তো জানা রয়েছে, পৃথিবীতে যতো দুর্বাঘাস রয়েছে, তার সংখ্যা জোড়। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি।”

তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি সমস্ত কিছুই জোড় সংখ্যক সৃষ্টি করেছি।” তখন উক্ত ব্যক্তি লা-জাওয়াব হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ!

মুরীদ এবং খলীফা: সেই যামানার প্রায় সমস্ত লোকই উনার মুরীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। হানাফী মাযহাবের ইমাম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং সুলত্বানুল আরেফীন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার খলীফা ছিলেন। এছাড়া হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম দাঊদ তায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা উনার মুরীদ ছিলেন। অন্যদিকে রসায়ন বিজ্ঞানের জনক হযরত জা’বির ইবনে হাইয়্যান তিনিও উনার মুরীদ ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! 

এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি কিরূপ বেমেছাল ইলিম ও মর্যাদা-মর্তবা মুবারক উনাদের অধিকারী ছিলেন। যেটা সমস্ত মাখলুকাতের চিন্তা, কল্পনা ও ইলিমের বাইরে। সুবহানাল্লাহ!

মূলত, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে মুহব্বত করা হচ্ছে ঈমান এবং উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা হচ্ছে কুফরী। তাই উনাকে মুহব্বত করা এবং উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক সম্পর্কে জানা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা উনাদের জন্য ফরয।

আর উনাকে হাক্বীক্বীভাবে মুহব্বত করতে হলে, উনার হাক্বীক্বী শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান সম্পর্কে জানতে হলে, মুত্বহহার, মুত্বহহির, আছ ছমাদ, আস সাফফাহ্, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বদম মুবারক-এ) জমায়েত হওয়া এবং উনার মুবারক হাতে বাইয়াত গ্রহণ করা, উনার ইতায়াত তথা অনুসরণ-অনুকরণ মুবারক করা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জ্বিন-ইনসান সকলের জন্য ফরয। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন!

  সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ফখরুল আশিকীন,  ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু ওয়া সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক-


  সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ফখরুল আশিকীন,  ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু ওয়া সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক-

পবিত্র নাম মুবারক ও কুনিয়াত মুবারক:

সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ষষ্ঠ ইমাম উনার মুবারক নাম হচ্ছেন- জা’ফর। যার অর্থ- ‘সাগর’ বা ‘জামিউন নিসবত’। সত্যিকার অর্থে তিনি ছিলেন, ইলম, আক্বল, সমঝে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফাত-মুহব্বত প্রাপ্তিতে সাগরতুল্য তথা ‘জামিউন নিসবত’। মুবারক কুনিয়াত- আবু আবদিল্লাহ ও আবু ইসমাঈল। ‘ছাদিক্ব¡’ হচ্ছেন উনার খাছ লক্বব মুবারক।

পবিত্র নসব মুবারক বা বংশ মুবারক পরিচিতি:

সম্মানিত পিতা উনার দিক থেকে উনার মুবারক নসব হচ্ছেন- হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত ইমাম মুহম্মদ আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম ইবনে ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম ইবনে ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী মুরতাদ্বা আলাইহিস সালাম। উনার সম্মানিত পিতা উনার নাম মুবারক- সাইয়্যিদুনা হযরত আবু জা’ফর মুহম্মদ বাকির আলাইহিস সালাম। উনার সম্মানিতা মাতা উনার নাম মুবারক- সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে ফারওয়া বিনতে হযরত ইমাম ক্বসিম বিন হযরত মুহম্মদ বিন হযরত ছিদ্দীক্বে¡ আকবর আলাইহাস সালাম। 

পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:

ইমামুল মুহসিনীন, সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, ফখরুল আশিক্বীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি ৯৬ হিজরী সনে পবিত্র ১৭ই রবিউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ অর্থাৎ সোমবার পবিত্র মদীনা শরীফ-এ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। এ মতটিই অধিক ছহীহ এবং নির্ভরযোগ্য।

মুবারক গুণাবলী উনার বর্ণনা-

তিনি মুস্তাজাবুদ দাওয়াত:

সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন মুস্তাজাবুদ দাওয়াত। উনার প্রতিটি দোয়া বা আরজু কবুল করা হতো তাই উনাকে মুস্তাজাবুদ দাওয়াত বলা হয়। তিনি যখন যা দোয়া মুবারক করতেন তখন তাই কবুল হতো। সুবহানাল্লাহ!

বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি একদিন ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে এই মর্মে দোয়া করতে অনুরোধ করলেন: মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি তাকে এত অর্থ সম্পদ দান করুন, যাতে সে অনেকবার হজ্জ করতে পারে। তিনি দোয়া করলেন: আয় আল্লাহ পাক! এই ব্যক্তিকে এত অর্থ দিন, সে যেন পঞ্চাশবার হজ্জ করতে পারে। সে মতে লোকটি পূর্ণ পঞ্চাশবার হজ্জ করে। সুবহানাল্লাহ! (শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াত-২৫৫)

একজন রাবী বর্ণনা করেন, একদা আমরা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার সাথে পবিত্র হজ্জ উনার উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা শরীফ গিয়েছিলাম। পথিমধ্যে আমাদেরকে এক জায়গায় শুষ্ক খেজুর গাছের কাছে অবস্থান করতে হলো। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি চুপিচুপি কিছু পড়লেন, যা আমি বুঝতে পারিনি। হঠাৎ তিনি শুষ্ক খেজুর গাছগুলোর দিকে মুখ করে বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের মধ্যে আমাদের জন্যে যে রিযিক গচ্ছিত রেখেছেন, তা দিয়ে আমাদের মেহমানদারী করো। অতঃপর আমি দেখলাম গাছগুলো উনার দিকে ন্যুয়ে পড়লো। টাটকা খেজুরগুচ্ছ ঝুলন্ত অবস্থায়। তিনি আমাকে বললেন, আমার কাছে আসো এবং ‘বিস্মিল্লাহ’ বলে খাও। আমি উনার আদেশ পালন করতঃ খেজুর খেলাম। এমন মিষ্টি খেজুর আমরা পূর্বে কখনো খাইনি। সেখানে জনৈক বেদুঈনও উপস্থিত ছিল। সে বললো, আজকের মতো যাদু আমি কখনো দেখিনি। না‘ঊযুবিল্লাহ!

ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমরা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের ওয়ারিছ। আমরা যাদুকর নই। আমরা কেবল দোয়া মুবারক করি। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি তা কবুল করে নেন। তুমি চাইলে আমার মুবারক দোয়ায় তোমার আকৃতি বদলে যেতে পারে এবং তুমি একটা কুকুরের আকৃতি ধারণ করতে পার। বেদুঈন ছিল নিরেট মূর্খ। তাই বললো, হ্যাঁ, এখনি দোয়া মুবারক করুন। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি দোয়া মুবারক করলেন, সাথে সাথে সে কুকুর হয়ে গেল এবং নিজ গৃহের দিকে পালিয়ে গেল। তিনি বর্ণনাকারীকে বললেন, এই কুকুরের পিছনে পিছনে যাও। বর্ণনাকারী বলেন- আমি তার পিছনে পিছনে চললাম। সে গৃহে গিয়ে আপন সন্তান ও পরিবারবর্গের সামনে লেজ নাড়তে লাগলো। তারা তাকে লাঠি মেরে তাড়িয়ে দিলো। আমি ফিরে এসে ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে ঘটনা শুনালাম। ইতোমধ্যে সেও (কুকুর) এসে গেল এবং ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার সামনে মাটিতে গড়াগড়ি করতে লাগলো। তার চোখ থেকে পানি পড়ছিল। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি তার প্রতি দয়ালু হয়ে দোয়া মুবারক করলেন। সে আবার মানবাকৃতি ধারণ করলো। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর তিনি বললেন, হে বেদুঈন! আমি যা বলেছিলাম তা বিশ্বাস করো কি-না? সে বললো, হ্যাঁ। একবার নয়, হাজারবার বিশ্বাস করি। সুবহানাল্লাহ! (শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াত-২৫৪)

অন্য একজন রাবী বর্ণনা করেন, আমার এক বন্ধুকে খলীফা মনসুর আটক করেছিলো। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার সাথে পবিত্র হজ্জ উনার মৌসুমে আরাফাতের ময়দানে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি আমার বন্ধুর কথা জিজ্ঞাসা করলেন। আমি বললাম- হুযূর! সে এখনো আটকাবস্থায় আছে। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি মুবারক দোয়ার জন্য হাত উঠালেন। এক ঘণ্টা পরে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তোমার বন্ধুকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। বর্ণনাকারী তিনি বললেন, পবিত্র হজ্জ সমাপনান্তে ফিরে এসে আমি আমার মুক্ত বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কখন মুক্তি পেলে? সে বললো- আমাকে আরাফার দিন, আছরের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াত-২৫২) 

তিনি ছহিবে কুন ফাইয়াকুন অর্থাৎ কুনফাইয়াকুন উনার অধিকারী:

ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন ছহিবে কুন ফাইয়াকুন উনার অধিকারী। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অতীব নৈকট্য ও তায়াল্লুকপ্রাপ্ত এমন অনেক ওলীআল্লাহ রয়েছেন উনারা যা হতে বলেন- সেটাই হয়।

সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাকীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি সেই ‘কুন ফাইয়াকুন’ গুণের অধিকারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে কুতুবুল মাশায়িখ, আশিকে রসূল, আল্লামা মুল্লা আব্দুর রহমান জামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় বিখ্যাত সীরাতগ্রন্থ “শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াত”-এ উল্লেখ করেন- একজন রাবী তিনি বলেন, একদিন পবিত্র মক্কা মোয়াযযমা শরীফ-এ আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার সাথে গমন করছিলাম। আমরা ঘটনাচক্রে এক মহিলার পাশ দিয়ে গেলাম। তার সামনে একটি মৃত গাভী ছিল। সে তার বাচ্চাদেরসহ সেই গাভীটির জন্য কান্নাকাটি করছিল। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে মহিলা! তুমি কি চাও যে, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি গাভীটিকে জীবিত করে দিন? মহিলা বললো, আপনি এমনভাবে পরিহাস করছেন কেন? তিনি বললেন, আমি উপহাস করছি না। আর আমরা কখনো কারো সাথে উপহাস করি না।

অতঃপর তিনি দোয়া মুবারক করলেন। গাভীর মাথা ও পা স্পর্শ করলেন। তারপর গাভীকে ডাক দিলেন। সে গাভীটি তখন তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালো। সাথে সাথে হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি মানুষের মধ্যে মিশে গেলেন। মহিলা উনাকে চিনতে পারলো না। সুবহানাল্লাহ!

আরো বর্ণিত আছে যে, জনৈক রাবী তিনি বলেন, একদিন আমি অনেক মানুষের সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার খিদমতে উপস্থিত ছিলাম। নছীহত মুবারক করার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম উনাকে আদেশ মুবারক করলেন চারটি পাখি ধরুন। অতঃপর এগুলোকে নিজের দিকে ডাকুন। তখন এসব পাখি কি একই প্রজাতির ছিল, না বিভিন্ন প্রজাতির? তোমরা চাইলে আমি তোমাদেরকে তেমনি করে দেখাবো। আমরা বললাম, হ্যাঁ দেখান। তিনি বলেন, হে ময়ূর এদিকে এসো। তৎক্ষণাত ময়ূর এসে হাযির হলো। অতঃপর বলেন, হে কাক, এদিকে এসো। অমনি একটি কাক এসে গেল। তিনি বলেন, হে বাজ, এদিকে এসো। অমনি বাজ এসে গেল। তিনি বলেন, হে কবুতর, এদিকে এসো। তৎক্ষণাত কবুতর এসে গেল। পাখি চতুষ্টয় এসে গেলে তিনি বলেন, এদেরকে যবেহ করে খ-বিখ- করো এবং একটির গোশত অন্যটির মধ্যে মিশ্রিত করে দাও। কিন্তু প্রত্যেকটির শির সযত্নে রাখবে।

এরপর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি ময়ূরের শির ধরে বললেন, হে ময়ূর! এ কথা বলার সাথে সাথে আমরা দেখলাম যে, তার অস্থি, পাখা এবং গোশত এসে শিরের সাথে সংযুক্ত হয়ে গেছে এবং সে একটি আস্ত ময়ূরে পরিণত হয়েছে। অনুরূপভাবে অপর তিন পাখির বেলায়ও তিনি তাই করলেন এবং তারাও জীবিত হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ!

‘ছাদিক্ব’ লক্বব মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ:

সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাকীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার একখানা বিশেষ লক্বব মুবারক ছিল ‘ছাদিক্ব’। ‘ছাদিক্ব’ অর্থ- ‘সত্যবাদী’। উনার সত্যবাদিতার গভীরতা এতদূর ব্যাপকতা লাভ করেছিল যে, সমস্ত মানুষের কাছে তিনি ‘ছাদিক্ব’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সবাই উনাকে ‘ছাদিক্ব’ বলে ডাকতেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি এরূপ সত্যবাদী লোকের ছোহবত (সাহচর্য) লাভ করতে বলেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। আর ছাদিক্ব বা সত্যবাদীগণ উনাদের সাথী হও।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৯)

সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কতটুকু ছাদিক্ব বা সত্যবাদী হিসেবে পরিগণিত হয়েছিলেন তা নিচের ঘটনাটি দ্বারাই কিছুটা আঁচ করা যায়।

সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি একদিন বাদ-মাগরিব রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। সে সময় খুব অন্ধকার ছিলো। রাস্তা দেখা যাচ্ছিলো না। রাস্তার মধ্যে একটা কূপের মতো ছিলো। হয়তো কোনোকালে সেটা কূপ ছিলো। সেটা এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু তার গভীরতা রয়েছে। তবে তাতে পানি নেই। সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি হঠাৎ করে কুদরতীভাবে সে কূপের ভিতরে পৌঁছে গেলেন। কূপের পাশে একটা পাথর ছিল সেই কূপের মুখ বন্ধ করে দেয়ার জন্য। কিন্তু কেউ হয়তো খুলে রেখেছিল। সেই কূপের মধ্যে কোনো পানি ছিল না। নরম মাটি ছিল। দুর্বা ঘাস ছিল, যার কারণে তিনি কোনো ব্যাথা পেলেন না। ভিতরে বসে তিনি ফিকির করতে লাগলেন যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার কোনো হিকমত রয়েছে। কারণ, মহান আল্লাহ পাক উনার কোনো কাজই হিকমত থেকে খালি নয়।

তিনি আরো ফিকির করতে লাগলেন, মানুষ আমাকে ছাদিক্ব (সত্যবাদী) বলে। ঠিক আছে, আমি যদি ছাদিক্ব হয়েই থাকি, তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে কুদরতীভাবে হিফাযত করবেন। তিনি সেখানে বসে যিকির-ফিকিরে মশগুল হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি টের পেলেন যে, মনে হচ্ছে সে রাস্তা দিয়ে কোনো লোকজন যাচ্ছে। তারা এসে সে গর্তটা দেখতে পেয়ে মনে করলো, এই গর্তে যদি কোনো মানুষ পড়ে যায় তাহলে ব্যাথা পাবে। কাজেই সেই পাথরটা এনে তারা গর্তের মুখ বন্ধ করে দিলো।

সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরেই মশগুল রইলেন। তিনি মনে মনে ফিকিরও করলেন, ঠিক আছে- আমি ছাদিক্ব, নাকি কাজিব; সত্যবাদী, নাকি মিথ্যাবাদী- সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে। তিনি যিকির-ফিকিরে মশগুল রইলেন।

এমন সময় হঠাৎ বিকট একটা আওয়াজ শুনতে পেলেন। মনে হলো কেউ এসে জোরে ধাক্কা দিয়ে পাথরটা সরিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর তিনি গরম বাতাস অনুভব করলেন। মনে হচ্ছে কেউ গরম বাতাস দিচ্ছে। অতঃপর তিনি আরো অনুভব করলেন যে, কোনো কিছু উনাকে সম্মানের সাথে প্যাঁচিয়ে ধরলো। প্যাঁচিয়ে ধরে সম্মানের সাথে আস্তে করে উনাকে গর্ত থেকে তুলে যমীনের উপর রেখে দিলো। যখন রেখে দেয়া হলো তিনি দেখতে পেলেন যে, বিরাট আকারের একটি অজগর সাপ। সেটা এসে উনাকে সম্মানের সাথে প্যাঁচ দিয়ে ধরে যমীনে তুলে দিয়ে সাপটা অদৃশ্য হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ!

তিনি মনে মনে ফিকির করতে লাগলেন- এটা কি হলো? তখন গায়িব (অদৃশ্য) থেকে নেদা (বলা) হলো- হে ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম! আজকে প্রমাণিত হলো যে, সত্যি আপনি ‘ছাদিক্ব’। মানুষ আপনাকে যে ‘ছাদিক্ব’ বলে থাকে তার সত্যতার প্রমাণ হলো। আপনি সত্যি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! (তাযকিরাতুল আউলিয়া-১/৫)

তিনি ‘ইমামুল মুহসিনীন’:

সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন- ‘ইমামুল মুহসিনীন’। অর্থাৎ তদানীন্তন সময়ের সকল মুহসিন ব্যক্তিগণ উনাদের ইমাম। মুহসিন হচ্ছেন- মু’মিন মুসলমানগণ উনাদের মধ্যে বিশেষ এক শ্রেণীর ব্যক্তিত্ব। উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা স্বয়ং আহকামুল হাকিমীন মহান আল্লাহ পাক তিনিই বর্ণনা করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিনগণ উনাদের নিকটবর্তী।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি মুহসিনগণ উনাদেরকে বিশেষভাবে মুহব্বত করেন।” সুবহানাল্লাহ!

‘মুহসিন’ শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে- পরোপকারী, ন্যায়পরায়ণ, নেক্কার। তবে এখানে ‘মুহসিন’ বলতে যাঁরা ইহসানের সর্বোচ্চ দরজা মুবারক হাছিল করেছেন উনাদেরকে বুঝানো হয়েছে। কারণ ইহসানের দরজা হাছিলকারী আর পরোপকারী, ন্যায়পরায়ণ এক নয়। 

উল্লেখ্য যে, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মুতাবিক ইহসান উনার দরজা দুটি। একটি হচ্ছেন- মহান আল্লাহ পাক উনাকে মিছালী ছূরতে দেখে ইবাদত করা। আর অপরটি হচ্ছেন- ইবাদতকারীকে মহান আল্লাহ পাক তিনি দেখছেন এ ধারণা অন্তরে বদ্ধমুল হওয়া। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন- “মহান আল্লাহ পাক উনার এমনভাবে ইবাদত করবে, যেন তুমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও তাহলে ধারণা করবে যে, তিনি তোমাকে দেখতেছেন।” (মিশকাত শরীফ)

এই দুটি দরজার যেকোনো একটি দরজা যিনি হাছিল করেছেন উনাকে ‘মুহসিন’ বলে। আর যিনি প্রথম দরজাটি হাছিল করতে পেরেছেন তিনি হচ্ছেন আ’লা দরজার মহুসিন।

এই আ’লা দরজার মুহসিনগণ উনাদের ইমাম হচ্ছেন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম। যার কারণে উনাকে ইমামুল মুহসিনীন বলা হয়। সুবহানাল্লাহ!

স্মর্তব্য যে, ইহসান উনার দরজা, হাছিল করার পূর্ব শর্ত হচ্ছে, হক্কানী-রব্বানী আলিম তথা কামিল মুর্শিদ উনার নিকট বাইয়াত হওয়া। উনার নির্দেশ মতো যিকির-ফিকির করা। ছোহবত ইখতিয়ার করা। রিয়াজত-মাশাককাত করা। সর্বোপরি শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সন্তুষ্টি হাছিল করা। এটা ব্যতীত ইহসান উনার দরজা মুবারক লাভ করা যায় না।

উল্লেখ্য যে, আমরা “মহান আল্লাহ পাক উনাকে মিছালী ছূরতে দেখার বিষয়টি এজন্য বলেছি, কারণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদা (বিশ্বাস) হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনাকে কেউই দুনিয়াতে হাক্বীক্বীভাবে দেখতে পাবে না। যারা হাক্বাক্বীভাবে দেখার দাবি করবে তারা কাফির হবে। যারা দেখেছেন বা দেখবেন তারা মিছালী ছূরতে দেখেছেন বা দেখবেন। সুবহানাল্লাহ!

‘ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন’ উনার বিশেষ লক্বব মুবারক:

সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার একখানা বিশেষ লক্বব মুবারক হচ্ছে ‘ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন’। তদানীন্তন সময়ের সকল ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উনাকে ‘ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন’ লক্বব মুবারক দ্বারা সম্বোধন করতেন। সুবহানাল্লাহ!

“ইমামুস্ ছিদ্দীক্বীন” অর্থ- ছিদ্দীক্বীনগণ উনাদের ইমাম। তদানীন্তন সময়ের সকল ছিদ্দীক্বগণ উনাদেরই ইমাম ছিলেন তিনি। 

ছিদ্দীক্বীয়াতের মাক্বাম হচ্ছে বিশেষ একটি মাক্বাম। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের পরেই এই মাক্বামে উপনীত ব্যক্তিত্বগণ উনাদের মর্যাদা-মর্তবা। ছিদ্দীকী¡য়াতের মাক্বাম প্রাপ্তি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ ফযল-করম মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। তবে বান্দা যখন সত্য কথা বলতে থাকে এবং সত্য পথে চলতে থাকে তখনো মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বান্দাকে ছিদ্দীক্ব হিসেবে গ্রহণ করেন এবং ছিদ্দীক্বীয়াতের মাক্বাম দান করেন। 

তবে একথা অনস্বীকার্য যে, ইলমে তাছাউফ হাছিল করা তথা কামিল মুর্শিদ উনার নিকট বাইয়াত, যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাক্কাত ব্যতীত সত্য কথা বলা, সত্য পথে চলা এবং তাতে ইস্তিক্বামাত (অবিচল) থাকা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ছিদ্দীক্বগণ উনাদের শান মুবারক-এ বলেন- “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি নবী, ছিদ্দীক্ব, শহীদ এবং ছলিহীনগণ উনাদেরকে বিশেষ নিয়ামত দান করেছেন। আর উনারাই হচ্ছেন উত্তম সঙ্গী।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আন নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৯)

স্মর্তব্য যে, ছিদ্দীক্বীনগণ মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এমনই নৈকট্য প্রাপ্ত যে, উনারা যা বলেন মহান আল্লাহ পাক তিনি তা সত্যে রূপান্তরিত করেন। সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারকে এরূপ অনেক ঘটনা রয়েছে।

সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন ইমামুছ্ ছিদ্দীক্বীন তথা ছিদ্দীক্বগণ উনাদের ইমাম। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এমনই নৈকট্যপ্রাপ্ত ছিলেন যে, তিনি যা চাইতেন বা যা হতে বলতেন তাই হতো এবং তাই পেতেন। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে আশিকে রসূল আল্লামা আব্দুর রহমান জামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “একবার জনৈক ব্যক্তি সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার কাছে দশ হাজার দীনার নিয়ে এসে বললো, “আমি হজ্জে যাচ্ছি। আপনি দয়া করে আমার জন্য এই দীনার দিয়ে কোন একটি সরাইখানা খরিদ করে দিলে আমি বড়ই উপকৃত হবো। কারণ আমি ফিরে এসে সপরিবারে তাতে বসবাস করবো।”

হজ্জ থেকে ফিরে এসে সেই ব্যক্তি সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার খিদমতে হাজির হলেন। তাকে দেখে তিনি বললেন, “আমি তোমার জন্য জান্নাতে সরাইখানা কিনেছি। যার এক সীমা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বদম মুবারক উনার নিচে এক সীমা আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম মুবারক উনার নিচে, এক সীমা সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বদম মুবারক উনার নিচে এবং এক সীমা সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বদম মুবারক উনার নিচে খতম (শেষ) হয়েছে।

আর এই নাও, আমি তা লিখে দিচ্ছি। লোকটি একথা শুনে বললো, আমি এতে অনেক খুশি। সে মতে সে লিখিত পরওয়ানা নিয়ে নিজ ঘরে ফিরে গেলো। সে বাড়িতে পৌঁছার সাথে সাথে অসুস্থ হয়ে পড়লো। সে তার আত্মীয়-স্বজনদেরকে ওছীয়ত করলো যে, আমার মৃত্যুর পর কাফন-দাফন শেষে এই লিখিত পরওয়ানাটি আমার সাথে কাফনের ভিতর কবরে রেখে দিবে।

আত্মীয়-স্বজনরা তার লাশ দাফন করার সময় ওছীয়ত মুতাবিক সেই লিখিত পরওয়ানাটি উনার সাথে কবরে রেখে দিলো। কিন্তু পরের দিন দেখতে পেল যে, সেই পরওয়ানাটি কবরের উপরে পড়ে আছে। আর তার অপর পৃষ্ঠায় লিখিত রয়েছে যে, সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি যা বলেছিলেন তা পূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ সত্যে রূপান্তরিত হয়েছে। কাজেই এই পরওয়ানাটির আর প্রয়োজন নেই। (শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াত/২৫৫)

তিনি সুলত্বানুল মাশায়িখ বা শাইখুল মাশায়িখ:

‘সুলত্বানুল মাশায়িখ’ অর্থ- সমস্ত শায়েখ বা মুর্শিদগণ উনাদের বাদশাহ। ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি তদানীন্তন সময়ের সকল ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের সুলতান বা বাদশাহ ছিলেন। উনার ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ ছাড়া কেউই তাকমীলে বা পূর্ণতায় পৌঁছতে পারতেন না। 

 সে কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান হতে অসংখ্য আল্লাহ প্রেমিক উনার মুবারক ছোহবতে থেকে সেই খাছ ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ হাছিলের জন্য পবিত্র মদীনা শরীফ-এ চলে যেতেন। স্বয়ং ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল হুদা, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ্ দ্বীন, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আহলে বাইত শরীফ উনাদের সেই খাছ নিয়ামত হাছিলের জন্য সুদূর কুফা থেকে মদীনা শরীফ-এ চলে যেতেন এবং উনার ছোহবত ইখতিয়ার করতেন।

 ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল হুদা, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ্ দ্বীন, ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা ইমাম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ছোহবতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে বলেন যে, “আমি আবু নো’মান (ইমামে আ’যম) যদি দুটি বছর না পেতাম তাহলে ধ্বংস হয়ে যেতাম”। (তোহফায়ে ইসনা আশারীয়া)

 অথচ সেই ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল হুদা, ইমামে আ’যম, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মর্যাদা-মর্তবা মুবারক প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “দ্বীন যদি সুরাইয়া তারকার দিকে চলে যায় তবুও সেখান থেকে পারস্যের এক ব্যক্তি তাকে ফিরিয়ে আনবেন।” সুবহানাল্লাহ!

 সুলত্বানুল আরিফীন, মুজাদ্দিদে যামান, হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন যে, মূলত পারস্যের সেই ব্যক্তিই হচ্ছেন ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল হুদা, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ্ দ্বীন, ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি। সুবহানাল্লাহ! (তাবয়ীদুছু ছহীফাহ) 

তিনি ছহিবে ইলমে গইব:

মহান আল্লাহ পাক তিনি আলিমুল গাইব। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘মুত্তালা আলাল গাইব’। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে ইলমে গাইব হাদিয়া মুবারক করেছেন। এটাই সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদা-বিশ্বাস। সুবহানাল্লাহ!

আহলে বাইত, আওলাদে রসূল এবং আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনারা ওয়ারিছ সূত্রে সেই ইলমে গাইব উনার অধিকারী। সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ফখরুল আরিফীন, ইমামুছ্ ছিদ্দীক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি ওয়ারিছ সূত্রে সেই ইলমে গাইব উনার অধিকারী ছিলেন। এ প্রসঙ্গে আশিকে রসূল, ইমামুল হুদা, আল্লামা আব্দুর রহমান জামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘শাওয়াহিদুন্ নুবুওয়াত’ কিতাবের ২৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন- হযরত বশীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, “আমি পবিত্র মদীনা শরীফ-এ পৌঁছার পর যখন গোসলের উদ্দেশ্যে হাম্মামখানায় যাওয়ার জন্য বাইরে বের হলাম। তখন দেখলাম সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র যিয়ারতের জন্য অনেক লোক উনার দরবার শরীফ-এ গমন করছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে উনার ছোহবত হাছিলের জন্য অধীর আগ্রহের সাথে ইন্তিজার ছিলাম। এটাকে বিরাট সুযোগ ভেবে গোসল না করেই সেই লোকদের সাথে চললাম।

সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার দওলতখানায় হাজির হলাম। তিনি আমার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললেন, হে বশীর! তুমি মনে হয় জানো না যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের এবং উনাদের আল-আওলাদগণ উনাদের দরবার শরীফ-এ নাপাক শরীরে আসা যায় না। আমি বললাম, হে আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বেয়াদবী ক্ষমা চাই। আমি বন্ধু-বান্ধবদেরকে আপনার দরবার শরীফ উনার দিকে আসতে দেখে আশঙ্কা করলাম যে, সম্ভবতঃ এরপর আপনার যিয়ারতের সৌভাগ্য আর হবে না। এ কারণেই আমি গোসল না করেই চলে এসেছি। হে আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তওবা করতেছি যে, ভবিষ্যতে আর কখনো এরূপ করবো না। অতঃপর বাইরে চলে এলাম। সুবহানাল্লাহ!

অপর একজন রাবী বা বর্ণনাকারী তিনি বর্ণনা করেন, আমি পবিত্র মক্কা মুয়াযযামায় একটি চাদর কিনে প্রতিজ্ঞা করলাম যে, এটি কাউকেও দিবো না, যাতে মৃত্যুর পর আমার কাফনের কাজে লাগে। কিন্তু আরাফাত থেকে মুযদালিফায় ফিরে আসতেই আমার চাদর হারিয়ে গেল। আমি মনে মনে খুব ব্যথা পেলাম। আমি সকালে মুযদালিফা থেকে মিনায় এসে মসজিদে খায়ফে বসে গেলাম। হঠাৎ সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ফখরুল আরিফীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার কাছ থেকে এক ব্যক্তি এসে আমাকে বললো, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি আপনাকে ডাকছেন। আমি যথাশীঘ্রই উনার কাছে গেলাম এবং ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে সামনে বসে গেলাম। তিনি আমার দিকে উনার মুবারক দৃষ্টি দিয়ে বললেন, তুমি কি তোমার চাদরটি ফিরে পেতে চাও, যা তোমার মৃত্যুর পর তোমার কাফনের কাজে আসবে? আমি আরজ করলাম, হ্যাঁ, (হুযূর দিয়ে দিন) কিন্তু সেটি তো হারিয়ে গেছে। তিনি উনার গোলামকে ডাক দিলেন। সে একটি চাদর নিয়ে উপস্থিত হলো। আমি দেখলাম, সেটি আমারই হারানো চাদর। তিনি বললেন, এটি নিয়ে যাও এবং মহান আল্লাহ পাক উনার শোকর আদায় করো। সুবহানাল্লাহ! 

তিনি ‘আছবারুছ ছবিরীন’:

‘আছবারুছ ছবিরীন’ অর্থ- ধৈর্যশীলগণ উনাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ধৈর্যশীল। সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন ধৈর্যশীলগণ উনাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ধৈর্যশীল। মাশরিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত সকল লোকের মুখে মুখে উনার ধৈর্যশীলতার কথা প্রচারিত হতো। ছবর উনার মাক্বাম হাছিল কারীগণ মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বন্ধু। উনাদের প্রশংসা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ধৈর্যধারণকারীগণ উনাদের সাথে রয়েছেন।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ-৪৬)

তিনি আরো বলেন, “নিশ্চয়ই ছবরকারীগণ উনাদের প্রতিদান বেহিসাবে প্রদান করা হবে।” (পবিত্র সূরা জুমার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০)

ছবর ও শোকর-এর মাক্বাম হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ মাক্বাম। সেই শ্রেষ্ঠ মাক্বাম হাছিল করতে সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে রিয়াজত-মাশাককাত করতে হয়নি। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে খাছভাবে তা হাদিয়া করেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী সেদিকেই দালালত করেছে- “মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে ইচ্ছা উনাকে স্বীয় রহমত (নিয়ামত) খাছভাবে দান করেন।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ-১০৫)

সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি কত বড় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন সেটা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত রয়েছে। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরম মর্যাদা মুবারক উনার অধিকারী দুই ব্যক্তি উনাদের সাথে ছিল উনার রক্তের সম্পর্ক। এক. সম্মানিত পিতা উনার দিক থেকে শেরে খোদা, সম্মানিত ইসলাম উনার বিশিষ্ট ও নির্ভীক বুযূর্গ, বাবুল ইলম, ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সাথে। দুই. সম্মানিত মাতা উনার দিক থেকে খলীফাতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে¡ আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে। সুবহানাল্লাহ!

তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ‘সখী’ বা দানশীল:

ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন আজওয়াদুন্ নাস তথা সকলের চেয়ে সর্বাধিক দানশীল। এই দানশীলতার গুণ পূর্বপুরুষগণ থেকে তিনিই পেয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক শানে নাযিল করেন- “উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত-সন্তুষ্টি মুবারক উনার জন্য মিসকীন, ইয়াতিম ও বন্দীদেরকে খাদ্য দান করেন। উনারা বলেন, কেবল মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক উনার জন্য আমরা তোমাদেরকে খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা দাহর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮-৯)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন সর্বাপেক্ষা অধিক ‘সখী’ বা দানশীলগণ উনাদের মধ্যে একজন। 

অতঃপর উনার আল-আওলাদগণ সকলেই এই গুণের অধিকারী ছিলেন। তাই আমরা দেখতে পাই সুলত্বানুল আউলিয়া, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ইমামুর রবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম তিনি অন্ধকার রাতে নিজের হাতে খাদ্যদ্রব্য নিয়ে অনাহার ক্লিষ্ট লোকদের মধ্যে বণ্টন করে দিতেন।

ইমামুস সাদিস, সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনিও অত্যন্ত সখী বা দানশীল ছিলেন। অভাবগ্রস্ত কাউকে দেখলেই বিনা দ্বিধায় দান-খয়রাত করতেন। এটা উনার পক্ষে বিস্ময়কর কিছুই না। কারণ, তিনি যে পরিবার ও পরিবেশে প্রতিপালিত হয়েছেন তাতে উনার এরূপ হাল বা অবস্থা হওয়াই ছিল স্বাভাবিক। 

তিনি অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে দান খয়রাত করতেন। এ ব্যাপারে তিনি উনার দাদা সুলত্বানুল আউলিয়া, ইমামুল মুত্তাক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। টুকরী ভর্তি গোশ্ত রুটি এবং টাকা-পয়সা নিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে মদীনা শরীফ উনার মহল্লার বাইরে বেরিয়ে পড়তেন। অভাবগ্রস্তদের মধ্যে তা বণ্টন করে ফিরে আসতেন। কিন্তু লোকে জানতে পারতো না- কে এই দাতা? অবশ্য উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর এই রহস্য প্রকাশ হয়েছিল।

‘হিলইয়াতুল আউলিয়া’ এবং ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ গ্রন্থে লিখিত আছে, ‘তিনি দানশীলতায় এমন মুক্তহস্ত ছিলেন যে, দান করার পর দেখা যেত উনার পরিবারের একবেলার খাওয়ার মতো কিছুই থাকতো না। সুবহানাল্লাহ!

উনার এই দানশীলতা এটাই প্রমাণ করে যে, জনসাধারণের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি তিনি কত বেশি খেয়াল রাখতেন। দান করে তা গোপন রাখাতে প্রমাণিত হয় যে, তিনি কত বেশি ইখলাছের অধিকারী ছিলেন। তিনি উনার নানাজান মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সেই পবিত্র হাদীছ শরীফ খানার উপর পুরোপুরি আমল করতেন। যেখানে তিনি বলেছেন- “ঐ দান উত্তম যা ডান হাত দ্বারা করলে বাম হাত জানেনা।” অর্থাৎ অত্যন্ত গোপনীয় দান।

সহনশীলতার অনুপম দৃষ্টান্ত:

ইমামুস সাদিস, সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি অত্যন্ত সহনশীল ছিলেন। তিনি কখনো মন্দের প্রতিদান মন্দ দ্বারা দিতেন না। বরং অন্যায়কারীর সাথে সর্বদা সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করতেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সদ্ব্যবহার দ্বারা অন্যায়কে সরিয়ে দিন। ফলে আপনার ও যে ব্যক্তির মধ্যে শত্রুতা ছিল (উভয়ের মধ্যে) হঠাৎ প্রগাঢ় বন্ধুত্বের সৃষ্টি হবে।” 

সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি উনার খাদিমদের সাথে অত্যন্ত বিনম্র ব্যবহার করতেন। বর্ণিত আছে যে, একবার তিনি উনার কোনো খাদিমকে একটি কাজের জন্য পাঠান। খাদিমের আসতে বিলম্ব দেখে তিনি তার খোঁজে বের হলেন। দেখতে পেলেন, উনার সেই খাদিম ঘুমাচ্ছে। তিনি খাদিমের শিয়রে বসে পাখা দ্বারা বাতাস করতে লাগলেন। সুবহানাল্লাহ!

দুই দিক থেকে তরীক্বতের নিসবত হাছিল:

সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি তরীক্বতের ক্ষেত্রে দু’দিক থেকে নিসবত পেয়েছিলেন। দু’দিক থেকেই তিনি খাছ ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ মুবারক হাছিল করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

প্রথমতঃ তিনি স্বীয় সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামুল মুত্তাক্বীন, সুলত্বানুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, ইমামুল খামীস, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম বাকির আলাইহিস সালাম উনার নিকট থেকে খাছ ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেছিলেন। তিনি উনাকে স্বীয় ‘ইমাম’ পদে সমাসীন করেন। তিনিই হচ্ছেন উনার খাছ গদ্দিনসীন। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে প্রাপ্ত খাছ নিয়ামত সীনা-ব-সীনা তিনি উনার মাধ্যমেই পেয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

 দ্বিতীয়তঃ পেশওয়ায়ে দ্বীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম কাসিম ইবনে হযরত মুহম্মদ ইবনে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনার থেকেও তিনি খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক হাছিল করেন। যিনি ছিলেন উনার সম্মানিত নানাজান। সুবহানাল্লাহ!

 পেশওয়ায়ে দ্বীন, ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম কাসিম ইবনে মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ছহিবে রসূলিল্লাহ, ছহিবুল আসরার হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পবিত্র হাত মুবারকে বাইয়াত গ্রহণ করেন। উনার থেকে খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক হাছিল করেন। মূলত, তিনিই ছিলেন উনার প্রধান খলীফা। সুবহানাল্লাহ!

আর ছহিবে রসূলিল্লাহ, ছাহিবুল আসরার হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছোহবত মুবারক থেকে খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক হাছিল করেন। উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ উনার পর খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আমিরুল মু’মিনীন, ছিদ্দিক্বে আকবর, আফযালুন্ নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে বাইয়াত গ্রহণ করতঃ খাছ ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ মুবারক হাছিল করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (ইকতিবাসূল আনওয়ার/১৩৭)

পবিত্র বিছালী শান মুবারক:

সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি ১৪৮ হিজরী সনে পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ১৪ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) বাদ-ইশা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে ¬পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

 হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সরাসরি মুবারক নির্দেশনা ব্যতীত হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি কিছুই বলেন না ও করেন না

হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সরাসরি মুবারক নির্দেশনা ব্যতীত হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি কিছুই বলেন না ও করেন না 

হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ রয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন: “উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে কতজন খলীফা খিলাফত পরিচালনা করবেন, এ বিষয়ে আমরা নূরে মুজাসসাম, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি ইরশাদ করেন: “বনী ইসরাইলের বারোজন নক্বীব উনাদের মতো আমার উম্মতের মাঝেও বারোজন খলীফা উনারা খিলাফত পরিচালনা করবেন।” (আহম্মদ, বাযযার, তারীখুল খলীফা) 

সম্মানিত এই উম্মত তথা উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মাঝে আলোকবর্তিকা হলেন মহান খলীফাগণ। উনারা উম্মতের রাহবার। হিদায়েতের কেন্দ্রবিন্দু খলীফাগণ মহান বারে ইলাহী এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ লক্ষ্যস্থল এবং নায়িব। উনাদের ফযীলতের আধিক্য এতটায় যে, স্বয়ং সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত খলীফাগণ সম্পর্কে দোয়া করেছেন, “হে পরওয়ারদিগার আল্লাহ পাক! আমার খলীফা উনাদের উপর রহম করুন, যাঁরা আমার পরে আসবেন। উনারা আমার হাদীছ শরীফ ও সুন্নতসমূহ মানুষের কাছে বর্ণনা করবেন এবং মানুষদেরকে তা শিক্ষা দিবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তবারানী, কানজুল উম্মাল) 

প্রিয় পাঠক! সারা বিশ্ববাসী এখন কে নিয়ন্ত্রণ করছেন বা কার উসীলায় নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে? কার উসীলায় মুসলমানগণ রহমত বরকত সাকীনা হিদায়েত ইত্যাদি লাভ করছেন? কার উসীলায় মুসলমানদের চরম শত্রু ইহুদী-নাছারা-কাফির-মুশরিক অস্পৃশ্য যবন ম্লেচ্ছরা মুসলমানদের প্রতি যুলুম নির্যাতনের শাস্তিস্বরূপ ধ্বংস হচ্ছে? কার উসীলায় মুসলমান দেশসমূহে খাদ্যশস্য ও ফলমূল প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হচ্ছে? এ সকল প্রশ্নের উত্তর একটিই অর্থাৎ এ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছেন বা যাঁর উসীলায় নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে তিনি হলেন- সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, নূরে মুকাররম, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। 

বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এ উল্লিখিত খলীফাগণের মাঝে তিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ খলীফা। উনাকে মহান বারে ইলাহী আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব নূরে মুজাসসাম, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা অত্যধিক মুহব্বত করে সমস্ত ইলম, অতুলনীয় মাক্বামাত ও সর্বশীর্ষ পর্যায়ের খিলাফত হাদিয়া করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, নূরে মুকাররম, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পরিপূর্ণভাবে নূরে মুজাসসাম, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিকৃতি। সিরত মুবারক, ছূরত মুবারক, আদত মুবারক, আখলাক মুবারক সব ক্ষেত্রেই উনারা হুবহু একইরূপ। শুধু তাই নয় নূরে মুজাসসাম, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সরাসরি মুবারক নির্দেশনা ব্যতীত সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, নূরে মুকাররম, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি একটি শ্বাস-প্রশ্বাসও গ্রহণ-নির্গমন করেন না। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, নূরে মুকাররম, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার লক্ষ-কোটি কারামতের মাঝে উপরোল্লিখিত ফযীলতটি একটি খাছ মুবারক কারামত। যা মুহব্বত-মারিফাত প্রত্যাশী মুরীদ-মুহিব্বিনগণকে মাঝে মাঝে প্রত্যক্ষ করানো হয়। এমনই একটি বরকতপূর্ণ কারামত প্রকাশ করা হবে, যাতে উনার প্রতি বিশ্ববাসী জিন-ইনসানের আক্বীদা আরো বিশুদ্ধ হয়, সুধারণা বলিষ্ঠ হয়, মুহব্বত প্রতিষ্ঠিত হয় অনন্তকালের জন্য। 

  আমাদের একজন পীরভাই মুহম্মদ হারুনুর রশীদ। তিনি বাউনিয়া আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত-এর বিশিষ্ট আমিল। মুহম্মদ হারুনুর রশীদ তিনি একবার একটি মুবারক স্বপ্ন অবলোকন করেন। তিনি দেখেন একটি স্থানে চমৎকার একটি মসজিদ। মসজিদের অভ্যন্তরে একটি নূরানী মুবারক মিম্বর শরীফ। মিম্বর শরীফ-এ সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, নূরে মুকাররম, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বসে রয়েছেন। তিনি মুবারক মিম্বর শরীফ-এ বসে পবিত্র নছীহত দান করছেন। পাশে একটি পর্দা ঝুলছে। হঠাৎ মৃদু বাতাস আসলো, পর্দাটি সরে গেলো। মুহম্মদ হারুনুর রশীদ তিনি লক্ষ্য করলেন, পর্দার ওই পাশে আরেকটি মুবারক মিম্বর শরীফ, সে মুবারক মিম্বর শরীফ-এ সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, নূরে মুকাররম, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার হুবহু অনুরূপ সুমহান একজন ব্যক্তিত্ব বসে নছীহত করছেন। আশ্চর্য বিষয়, ওই পাশের সুমহান ব্যক্তিত্ব যা যা বলেন, যেভাবে বলেন, যেমনটি আওয়াজে বলেন তার ঠিক পর মুহূর্তেই সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, নূরে মুকাররম, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি তা তা বলেন, তেমনভাবে বলেন এবং তেমন আওয়াজেই বলেন। সুবহানাল্লাহ!

 সার্বিক অবস্থাদর্শনে অতিশয় তাওয়াজ্জুব হওয়া মুহম্মদ হারুনকে লক্ষ্য করে সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, নূরে মুকাররম, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, “উনি আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি যা বলেন আমি তাই বলি, তিনি যেভাবে বলেন আমিও সেভাবেই বলি। তিনি যা বলেননা আমি তা কস্মিনকালেও বলিনা।” 

সুবহানাল্লাহ! কত শান মান ইজ্জত সম্মান প্রাপ্ত আমাদের প্রাণপ্রিয় শায়খ ও মুর্শিদ, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, নূরে মুকাররম, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আওলাদে রসূল হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার হাক্বীক্বী মুহব্বত মারিফাত ও সন্তুষ্টি হাছিল করার তাওফীক দান করুন।


 রাজারবাগ শরীফ উনার মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সাথে তারাই মুহব্বত, নিছবত ও সম্পর্ক রাখেন যারা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি রেযামন্দী তালাশি


 
রাজারবাগ শরীফ উনার মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সাথে তারাই মুহব্বত, নিছবত ও সম্পর্ক রাখেন যারা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি রেযামন্দী তালাশি

 মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবং ছদিক্বীন বা সত্যবাদীগণের ছোহবত ইখতিয়ার করো।” (পবিত্র সূরা তাওবা : আয়াত শরীফ ১১৯)

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আরো ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অনুসরণ করবে, সে বিরাট সফলতা লাভ করবে।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭১)

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ মুজাদ্দিদে আ’যম, গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি নায়িবে নবী ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনার মাধ্যমেই আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুবারক সন্তুষ্টি ও রেযামন্দি হাছিল হয়। আর উনার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ পাক ও উনারা হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা অসন্তুষ্টি হন।

কাজেই, সমস্ত জিন ইনসানের জন্য ফরয-ওয়াজিব মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সন্তুষ্টি তালাশ করা, উনার ছোহবত অর্জন করা, উনার হাত মুবারক বাইয়াত হওয়া।


 যামানার সকল বিদয়াত দূরীভূত করার জন্যই রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আগমন

 

যামানার সকল বিদয়াত দূরীভূত করার জন্যই রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আগমন 

আজ বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্ব গণতন্ত্র করা, ছবি আঁকা ও ছবি তোলা, টেলিভিশন দেখা, পর্দা করা, খেলাধুলা করা নানা রকম ফিতনা-ফাসাদ ও বিদয়াতী কাজে নিমজ্জিত। এ অবস্থায় পবিত্র ঈমান নিয়ে মুসলমানদের বসবাস করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে আশার কথা হলো আমাদের মাঝে যামানার খাছ লক্ষ্যস্থল, ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম আছেন। তিনি লক্ষ লক্ষ মুসলমানদের ছোহবতে এনে অথবা রূহানী শক্তির মাধ্যমে হিদায়েত লাভের পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন। হযরত মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা দৈনিক আল ইহসান শরীফ ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর মাধ্যমে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের আলোকে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমল সম্পর্কে বিশ্বের সব মুসলমানদের অবহিত করছেন এবং পাশাপাশি পৃথিবী থেকে সব বিদয়াত, শিরক ও কুফরী দূরীভূত করার দায়িত্ব পালন করছেন।