খলীফায়ে ছালিছ, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক-
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আখাচ্ছুল খাছ নৈকট্য-নিসবত প্রাপ্ত ব্যক্তিত্বগণ উনাদের মধ্যে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতম। নি¤েœ উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হলো:
পবিত্রতম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ পবিত্র ৩রা রবিউল আউওয়াল শরীফ। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক গ্রহণের ছয় বৎসর পর বা আমুল ফিলের ৬ বৎসর পর তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র নসব মুবারক:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত পিতা-মাতা উনাদের দু’জনের দিক হতেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নসব মুবারক উনার সাথে সম্পৃক্ত। উনার সম্মানিত পিতা আফফান ইবনে আবুল আস ইবনে উমাইয়া ইবনে আবদু শামস ইবনে আবদে মান্নাফ আলাইহিমুস সালাম তিনি। এ অনুযায়ী উনার পবিত্র নসব মুবারক পঞ্চম স্তরে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নসব মুবারক উনার সাথে মিলিত হয়েছে। উনার সম্মানিতা মাতা উরওয়া বিনতে কুরাইয ইবনে রবীয়া ইবনে হাবীব ইবনে আবদে শামস ইবনে আবদে মান্নাফ। এ অনুযায়ী উনার সম্মানিতা মাতা উনার পবিত্র নসব মুবারকও ৬ষ্ঠ স্তরে মুবারক নসবে মিলিত হয়েছে। তাছাড়া উনার নানী হযরত উম্মে হাকীম আল বাইদা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার যমজ বোন। সে অনুযায়ী তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা ফুফু। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র নাম মুবারক:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার মূল নাম মুবারক হলো হযরত ‘উছমান’ আলাইহিস সালাম। বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশকারী আওলাদ হলেন হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম। উনার নাম মুবারক অনুযায়ী তিনি আবু আব্দিল্লাহ কুনিয়াতে সম্বোধিত হতেন। তাছাড়া আবু আমর, আবু লাইলা কুনিয়াত মুবারকও ব্যবহৃত হয়। সর্বোপরি তিনি ‘যুন নূরাইন’ ও ‘গনী’ লক্বব মুবারকে সর্বাধিক মশহুর।
শিশু ও কিশোর বয়স মুবারক:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি মাদারযাদগতভাবেই অত্যধিক শান্ত প্রকৃতির ছিলেন। বাল্য বয়সের অন্যান্য ছেলেদের ন্যায় তিনি হৈ হুল্লোড়ে লিপ্ত না হয়ে স্বকীয় ভাবগাম্ভীর্য মুবারক জাহির করতেন। কৈশোর বয়স মুবারকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আক্ষরিক জ্ঞান রপ্ত করেন। সঙ্গতকারণেই তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অত্যধিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। আর এটাই তো স্বাভাবিক। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ইলমের শহরের ছাদ হিসেবে মুবারক ঘোষণা দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, আইয়্যামে জাহিলিয়াতের সেই কঠিন সময়ে যে সমস্ত ব্যক্তিত্ব পূত-পবিত্র চরিত্র মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন, উনাদের মধ্যে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতম। তিনি কোনোদিন শরাব পান করেননি। আর কৈশোর থেকেই তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত হন।
যুবক বয়স মুবারক:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সম্ভ্রান্ত আরবীগণ উনাদের রীতি অনুযায়ী যৌবনে পদার্পণ করে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। উনার সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, ন্যায়পরায়ণতা প্রভৃতির দরুন উনার ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। জাহিলিয়াতের সেই সময়ে তিনি বড় ব্যবসায়ীদের অন্যতম ও উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। সঙ্গতকারণেই উনার ব্যাপক দানশীলতার দরুন উনাকে সকলেই ‘গনী’ লক্বব মুবারকে আখ্যায়িত করেন। সুবহানাল্লাহ!
আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রকাশ:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মুবারক মধ্যস্থতায় যে সমস্ত ব্যক্তিত্ব পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রকাশ করেছেন, উনাদের মধ্যে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতম। দারুল আরকামে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রচারের পূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রকাশকারী পুরুষগণ উনাদের মধ্যে তিনি চতুর্থতম। সুবহানাল্লাহ!
মুবারক ত্যাগ তিতিক্ষা:
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার জন্য যে সমস্ত ব্যক্তিত্ব সীমাহীন যুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছেন, উনাদের মধ্যে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতম। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলে উনার চাচা আল হাকাম ইবনে আবুল আস উনাকে অসহনীয় নির্যাতন করে। হাত-পা মুবারক বেঁধে রাখে। নির্মমভাবে প্রহার করে। অনাহারে থাকতে বাধ্য করে। এমনিভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার থেকে বিমুখ করতে শত অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু শত নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি তাদের যাবতীয় অপচেষ্টা ধূলিস্যাৎ করে দিয়ে পবিত্র অহদানিয়াত বারবার ঘোষণা করেন। সুবহানাল্লাহ!
প্রথম নূর মুবারক উনার খিদমত:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বিতীয়া আওলাদ সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি নিসবাতুল আযীম মুবারক করেন, অর্থাৎ উনার খিদমত মুবারক করার জন্য উনাকে গ্রহণ করেন। তবে নিসবাত মুবারক পবিত্র দ্বীন ইসলাম জাহির হওয়ার পরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত প্রকাশের ৪র্থ বছর নিসবাতুল আযীম মুবারক সম্পন্ন হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত।
মুবারক প্রথম হিজরত:
মুসলমানদের প্রতি কুরাঈশদের নির্যাতন যখন সমস্ত হদ অতিক্রম করেছে, তখন আনুষ্ঠানিকভাবে নবুওওয়াত ঘোষণার পঞ্চম বর্ষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ইযাজতক্রমে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে সাথে নিয়ে ১৬ জনের কাফিলাসহ আবিসিনিয়ায় মুবারক হিজরত করেন।
আবিসিনিয়ায় আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার মুবারক হিজরতের ফলাফল সুদূরপ্রসারী। উনাদের হিজরতের দরুন আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশী উনাদের মুবারক ছোহবত লাভে ধন্য হন। এ সুবাদেই তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। উনাদের মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক প্রচার-প্রসার ঘটে।
আবিসিনিয়ার ভূমিতেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দৌহিত্র হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্রতম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। যিনি চতুর্থ হিজরীতে পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হযরত লূত আলাইহিস সালাম উনার পরে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সপরিবারে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য সর্বপ্রথম হিজরত মুবারককারী।” সুবহানাল্লাহ!
মুবারক দ্বিতীয় হিজরত:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক হিজরতের কিছুদিন পূর্বে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি আবিসিনিয়া হতে সম্মানিত মক্কা শরীফ ফিরে আসেন। অতঃপর মুবারক নির্দেশক্রমে তিনি সম্মানিত পবিত্র মদীনা শরীফ মুবারক হিজরত করেন। এ কারণে উনাকে দু’বার হিজরতকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য যে, সম্মানিত মদীনা শরীফে তিনি হযরত আউস ইবনে সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে মুবারক অবস্থান গ্রহণ করেন।
পবিত্র বদর জিহাদ:
দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ই রমাদ্বান শরীফ-এ সম্মানিত বদর জিহাদ সংঘটিত হয়। ওই জিহাদে রওনা দেয়ার পূর্বে বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক গ্রহণ করেন। আর এ কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে মুবারক খিদমতে সম্মানিত মদীনা শরীফ রেখে যান। পবিত্র ১৮ই রমাদ্বান শরীফ-এ বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সঙ্গতকারণেই আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে আসহাবে বদর উনাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি গনীমত প্রাপ্ত হন। সুবহানাল্লাহ!
বলাবাহুল্য যে, সাইয়্যিদাতুন নিসা বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম এবং আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাদের পারস্পরিক সম্পর্ক মুবারক ছিল বেমেছাল। যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টরূপে ইরশাদ মুবারক হয়েছে।
হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গোশত ভর্তি একখানা পাত্র দিয়ে আমাকে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার হুজরা শরীফ-এ পাঠালেন। (পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পূর্বে হওয়ায়) আমি উনার হুজরা শরীফ-এ প্রবেশ করলাম। সেখানে সাইয়্যিদাতুন নিসা বিনতুু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে বসা দেখলাম। উনাদের উভয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক দেখে আমি অভিভূত হয়ে একবার সাইয়্যিদাতুন নিসা বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার দিকে, একবার আমীরুল মু’মিনীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার দিকে তাকাতে লাগলাম। অতঃপর, আমি ফিরে আসলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আপনি কি উনাদের নিকট গিয়েছিলেন? আমি বললাম, জ্বি। তিনি পুনরায় বললেন, আপনি কি উনাদের চেয়েও সুন্দর পরিবার আর দেখেছেন? আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনাদের চেয়ে সুন্দর পরিবার আমি দ্বিতীয়টি আর দেখিনি। সুবহানাল্লাহ! (ইবনে আসাকির)
দ্বিতীয় নূর মুবারক গ্রহণ:
সাইয়্যিদাতুন নিসা বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর তৃতীয় হিজরী সনের শুরুতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত বানাত সাইয়্যিদাতুন নিসা আছ ছালিছা আলাইহাস সালাম উনাকে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট নিসবাতুল আযীম মুবারক দেন।
উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আছ ছালিছা আলাইহাস সালাম উনাকে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট নিসবাতুল আযীম মুবারক প্রদানকালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আছ ছালিছা আলাইহাস সালাম উনাকে সম্বোধন করে ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই আপনার আহাল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার এবং আপনার পিতা উনার সাথে অধিক তাশবীহ বা সদৃশ্য মুবারক রাখেন।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে আদী)
নবম হিজরী সনে সাইয়্যিদাতুনা বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আছ ছালিছা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তিনি পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যদি আমার চল্লিশজন সম্মানিতা বানাত আলাইহিন্নাস সালাম থাকতেন, তাহলে আমি পর্যায়ক্রমে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে নিসবাতুল আযীম মুবারক সম্পন্ন করতাম।” যা আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন। সুবহানাল্লাহ! (তিবরানী শরীফ)
হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে দু’বার জান্নাত ক্রয় করেন। প্রথমত, রুমা কূপ ক্রয় করে। দ্বিতীয়ত, উসরার জিহাদের সময় খিদমত করে। সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে হাকীম)
বলাবাহুল্য যে, সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মাঝে পানির উৎস ছিল তৎকালে রুমা কূপ। এক ইহুদী ছিল এর মালিক। সে বিনামূল্যে কাউকে পানি দিত না। ফলশ্রুতিতে সম্মানিত মদীনা শরীফবাসী পানি সঙ্কটে পড়েন। আর এই জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি রুমা কূপ ক্রয় করবেন, উনার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।” তখন আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি প্রথম দফায় ১২ হাজার দিরহাম দিয়ে এবং পরবর্তীতে আরো ১৮ হাজার দিরহাম মোট ৩০ হাজার দিরহাম দিয়ে সেই কূপ ক্রয় করে মুবারক খিদমতে ওয়াকফ করেন। আর এভাবেই তিনি দুনিয়ায় থাকতেই জান্নাত উনার মালিক হয়ে যান। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)
নায়িবে রসূল:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যাতুর রিকা ও গাযওয়ায়ে গাতফানের সময় আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে আপন স্থলাভিষিক্ত করে তথা নায়িবে রসূল ঘোষণা করে সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার দায়িত্ব প্রদান করেন। (তারীখুল খুলাফা)
হাবীবী দূত:
ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে প্রতিনিধি হিসেবে কুরাঈশদের নিকট প্রেরণ করেন। আর উনাকে আবদ্ধ করা হলে উনার রক্ত মুবারক উনার প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপারে বাইয়াতে রিদওয়ান সংঘটিত হয়। যা পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।
জিহাদে অংশ গ্রহণ:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বদর, যাতুর রিকা, গাযওয়ায়ে গাতফান ব্যতীত সকল জিহাদেই শরীক ছিলেন। আর প্রতিটি জিহাদেই তিনি সর্বাধিক অর্থ মুবারক খরচ করেন। সর্বাপেক্ষা অধিক ব্যয়ের দরুন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, “আজকের পর আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না। কোনো কিছুই উনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ উনার খুশি:
মুসলিম উম্মাহর নিকট “আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ” অত্যধিক পরিচিত উপলক্ষ। সম্মানিত বিদায় হজ্জ হতে সম্মানিত মদীনা শরীফ এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পার ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক জাহির করেন। এভাবে কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর ছফর মাসের শেষ ইয়াওমুল আরবিয়া অর্থাৎ বুধবার তিনি ছিহহাতী শান মুবারক জাহির করেন। এতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুম উনারা সীমাহীন খুশি প্রকাশ করেন। উনারা বাতাসের চেয়েও দ্রুত গতিতে হাদিয়া ও দান করেন। আর সেই সময়ে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি দশ হাজার দিরহাম মুবারক হাদিয়া করে খুশি প্রকাশের বেমেছাল নজির মুবারক স্থাপন করেন। সুবহানাল্লাহ!
প্রথম খলীফাদ্বয় আলাইহিমাস সালাম উনাদের সময়কালে:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি এমনি একজন সুমহান ব্যক্তিত্ব যে, উনার মাঝে যাবতীয় সুমহান গুণাবলীর সম্মিলন ঘটেছে। সঙ্গতকারণেই খলীফাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার এবং আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাদের মুবারক খিলাফতকালে তিনি মজলিসে শূরায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। উনার প্রখর মেধা, হিকমতপূর্ণ পরামর্শ, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা সকলকে অভিভূত করেছে। যার বহিঃপ্রকাশস্বরূপ আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মনোনীত ছয়জনের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
এছাড়া পুরো হায়াত মুবারকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার প্রসারের জন্য প্রতিটি জিহাদে অভিযানে তিনি সীমাহীন অর্থ ব্যয় করতেন। এমনকি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দুর্ভিক্ষ দূরীভূত করতে হাজার উটের বিশাল কাফেলা হাদিয়া করতে দ্বিধাবোধ করেননি। ইতিহাসে যা সোনালী অক্ষরে প্রসিদ্ধ রয়েছে।
বাইয়াতে আম গ্রহণ:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খলীফা হিসেবে সমাসীন হওয়ার বিষয়টি দীর্ঘ আলোচনার দাবি রাখে। তবে সংক্ষেপে মূলকথা হলো- আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা মুতাবেক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের ইজমায়ে আজিমত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে চব্বিশ হিজরী সনের পহেলা মুহররমুল হারাম শরীফ আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে খলীফা হিসেবে খিলাফতের মহান দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
সম্মানিত ইসলামী পতাকা প্রসারণ:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নিশানা আরব সাগর পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়। অপরদিকে আফ্রিকার শেষ সীমানা পর্যন্ত এবং ইউরোপের সাইপ্রাসেও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আলো ছড়ায়। এছাড়া আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার অসমাপ্ত অভিযানগুলো তিনি সম্পূর্ণ করেন। উনার মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় আমুরিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, ফিবরাস, জুরজান, খোরাসান, হিরাত, কাবুল, সিজিস্তান, নিশাপুর, হিসনুর রুয়াত, ত্রিপলী (লিবিয়া) এবং অধিকাংশ আফ্রিকাসহ এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চল পবিত্র ইসলামী খিলাফত উনার অন্তর্ভুক্ত হয়।
নৌবাহিনী গঠন:
ঐতিহাসিক সত্য অনুযায়ী আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ২৭ হিজরী সনে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে কাইস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের দায়িত্বে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে সর্বপ্রথম নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। যার সুসংবাদ পূর্বেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রদান করেছিলেন।
মুবারক শাহাদাত:
৩৫ হিজরী সনের পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস। অধিকাংশ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র হজ্জ আদায়ের জন্য পবিত্র মক্কা শরীফ গমন করেছেন। পবিত্র মদীনা শরীফ জনসমাগম কিছুটা কম। মুনাফিক গোষ্ঠী ইবনে সাবার নেতৃত্বে সেই সময়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মোক্ষম সুযোগ ভেবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে পুরো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আর এক্ষেত্রে মুনাফিক মারওয়ান কলকাঠি নাড়তে থাকে। এমনকি তারা আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যেই অবরুদ্ধ করে রাখে।
বলাবাহুল্য যে, মুনাফিক বিদ্রোহীরা হযরত মুহম্মদ ইবনে আবী বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ বিশিষ্ট ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বিদ্রোহের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অপচেষ্টা চালায়। উনারা বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে সরে যান। অনেক ঐতিহাসিক উনাদের সরে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ না করায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনিসহ বিশিষ্ট ছাহাবীগণ উনারা বিদ্রোহ থামানোর চেষ্টা করেন। মুনাফিকরা উনাদের আদেশ মুবারক অমান্য করে। অতঃপর উনারা মুনাফিকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযানের অনুমতি প্রার্থনা করলে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে রক্ত প্রবাহিত করাকে অপছন্দ করেন। এমতাবস্থায় মুনাফিকরা আরো শক্তি সঞ্চয় করে।
অবশেষে পবিত্র ১৮ই যিলহজ্জ শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ মুনাফিকরা উনার পবিত্র হুজরা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করে উনাকে শহীদ করে। সেই সময়ে তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ তিলাওয়াত করছিলেন। আর সেই পবিত্র কুরআন শরীফখানা অদ্যাবধি মিসরের জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারকের পর মুনাফিকরা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে সীমাহীন গোলযোগ সৃষ্টি করে। তার কারণে তিন দিন পর্যন্ত মদীনাবাসীগণ উনারা ঘর থেকে বের হতে পারেননি। এমনকি মুনাফিকরা আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার জিসম মুবারক দাফন মুবারক করতেও বাধা সৃষ্টি করে। এতদ্বসত্ত্বেও হযরত যুবাইর ইবনে মুতইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার জানাযা নামায পড়ান। অল্প সংখ্যক লোকের খোশ নছীব হয়েছে উনার জানাযা নামায পড়ার। জান্নাতুল বাক্বী শরীফ উনার হাসসে কাওকাবে উনার রওযা শরীফ অবস্থিত।
যুন নূরাইন লক্বব মুবারক:
বিভিন্ন কারণে তিনি যুন নূরাইন তথা দুই নূরের অধিকারী। প্রথমত, তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুইজন বানাত আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে পর্যায়ক্রমে গ্রহণ করেছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের উভয়ই সংকলন করেছেন। তৃতীয়ত, কামালতে রিসালাত এবং কামালতে বিলায়েত উভয়ই উনার মাঝে একত্রিত হয়েছে। চতুর্থত, তিনি দুইবার হিজরত মুবারক করেছেন।
বিশেষ বিষয়:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কাছ থেকে মুহাদ্দিসগণ ১৪৬খানা পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। তিনি জুমুয়ার ছানী আযানের প্রচলন করেন। ২৬ হিজরী সনে মসজিদে হারাম শরীফ উনার জন্য নতুন জায়গা ক্রয় করে উনার বিস্তৃতি ঘটান। এছাড়া উনার সময়ে মসজিদে নববী শরীফ উনার ব্যাপক সংস্কার করা হয়। তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে রুকু হিসেবে বিন্যস্ত করেন। উনার মুবারক তত্ত্বাবধানেই খতমে তারাবীহ উনার প্রচলন ঘটে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক উসীলায় মুসলিম উম্মাহকে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে হুসনে যন রাখার তাওফীক দান করুন। উনার সম্মানিত শাহাদাতের বদলা গ্রহণের শক্তি ও সুযোগ দান করুন। (আমীন)
আমীরুল মু’মিনীর যুল হিজরাতাইন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে ব্যবসা করেন-
বর্ণিত রয়েছেন যে, খলীফাতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে একবার পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। বাইতুল মালেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাদ্য ছিলো না। ঠিক সেই মুহূর্তে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার একটি বাণিজ্য কাফিলা এক হাজার উটদ বোঝাই করা খাদ্য নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে উপস্থিত হলো। ব্যবসায়ী লোকজন আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট আসতে লাগলো খাদ্য কিনে নেয়ার জন্য। কেউ স্বাভাবিক দামে, কেউ দ্বিগুণ দামে, কেউ তিনগুণ, চারগুণ দামেও খাদ্য কেনার জন্য প্রস্তুত। তবুও তিনি উনাদের নিকট খাদ্য দিতে রাজি হলেন না। তিনি বললেন, আমার এ খাদ্য নিতে হলে কমপক্ষে দশগুণ মূল্য দিতে হবে। কারণ আপনাদের আগে একজন আমাকে দশগুণ মূল্য দেয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। তখন উনারা বললেন, আমাদের আগে কে এত অধিক মূল্যে খাদ্যদ্রব্য খরিদ করার কথা বললেন? পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তো আমরাই বড় ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা আরো আলোচনা করলেন যে, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি তো পূর্বে কখনো বেশি মূল্যের জন্য দর কষাকষি করেননি। তবে আজকে কেন করছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপর ব্যবসায়ীগণ উনারা বললেন, ঠিক আছে, যিনি আপনাকে বেশি মূল্য দেন উনাকেই আপনি মাল দিয়ে দিন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি খলীফাতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে খবর পাঠালেন যে, তিনি যেন একজন প্রতিনিধি পাঠান, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার সমস্ত খাদ্যদ্রব্য অর্থাৎ এক হাজার উট বোঝাই খাদ্য, যা সিরিয়া থেকে আনা হয়েছে, সেগুলো মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারকের জন্য হাদিয়া করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ! তখন খলীফাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার তরফ থেকে প্রতিনিধি পাঠানো হলে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার সমস্ত খাদ্যগুলো খলীফা উনার প্রতিনিধিকে বুঝিয়ে দেন, তখন খলীফা উনার তরফ থেকে সমস্ত খাদ্যগুলো পবিত্র মদীনা শরীফ-এ বণ্টন করে দেয়া হয় এবং তাতে দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি যেদিন এই দান করলেন সেই রাতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বপ্নে দেখতে পেলেন যে, “মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবুজ রং বিশিষ্ট খুব দামি পোশাক পরিধান করতঃ বোরাকে আরোহণ করে খুব দ্রুত কোথাও যাচ্ছেন। এটা দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কোথায় যাচ্ছেন? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনি কি জানেন না, আজ আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফবাসীকে এক হাজার উট বোঝাই খাদ্য যে হাদিয়া করেছেন; যার কারণে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে গেছে? তাই উনার হাদিয়ায় সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি আজকে বেহেশ্তে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেছেন। আমি সেই মেহমানদারীতে শরীক হওয়ার জন্য যাচ্ছি।” সুবহানাল্লাহ!
খলীফায়ে ছালিছ, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার বিরোধীতাকারী কাট্টা কাফির ও মুনাফিক-
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কুল-কায়িনাতের মধ্যে সর্বাধিক শান, মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী, সম্মান, মর্যাদা ও মর্তবা হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে। আর উনার উসীলায় ও মুবারক ছোহবতে ধন্য হওয়ার কারণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবা ও শান, মান লাভ করেছেন। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার তৃতীয় খলীফা আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সেই সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবা লাভকারীগণের অন্যতম। সুবহানাল্লাহ!
* তিনি ছাহাবিয়াত মাক্বামের শীর্ষস্থানীয় একজন।
* তিনি আশারায়ে মুবাশশারা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্যতম।
* উনার শান মুবারকে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রত্যেক নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের একজন বন্ধু থাকবেন। বেহেশতে আমার বন্ধু হবেন আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম।”
* উনার সুমহান শান মুবারক হচ্ছে- তিনি হচ্ছেন ‘যুন নূরাইন’। অর্থাৎ তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি দুই নূর মুবারক উনাদের অধিকারী অর্থাৎ তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দু’জন বানাত আলাইহিমাস সালাম উনাদের গ্রহণ করে উনাদের খিদমত করে উক্ত লক্বব মুবারক লাভ করেছেন।
* এমনকি স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে ইরশাদ মুবারক করেছেন, “আমার যদি একশ জনও বানাত সন্তান থাকতেন আর উনাদেরকে যদি আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে নিসবতুল আযীম মুবারক দেয়ার সুযোগ আসতো তবে আমি সেই একশ জনকেই উনার কাছে দিয়ে দিতাম।” সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং উনার যারা বিরোধিতা করবে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় তারা কাট্টা কাফির ও কাট্টা মুনাফিকের অন্তর্ভুক্ত।
“যদি কোন পুরস্কার আমার প্রাপ্য হয় তাহলে আমাকে পুরস্কৃত করার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা তিনিই যথেষ্ট”-
খলীফায়ে ছালিছ আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাসনকালে নীল ভূমধ্যসাগর তীরের ‘তারাবেলাস’ নগরী মুসলমানদের করতলগত হয়। পরাক্রমশালী কাফির রাজা জার্জিসের প্রধান নগরী ছিল এ এলাকা। খলীফায়ে ছালিছ আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সেনাপতি করে রাজা জার্জিসের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে পাঠান। এই পরাক্রমশালী রাজা ১ লক্ষ ২০ হাজার সৈন্য নিয়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবন সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনীর অগ্রাভিযানের পথ রোধ করে দাঁড়ালো। স্বয়ং রাজা জার্জিস তার বাহিনীর পরিচালনা করছিল। পাশে রয়েছে তার মেয়ে। অত্যান্ত খুব ছুরত ছিলো তার সে মেয়ে।
জিহাদ শুরু হলো। জার্জিস মনে করেছিল তার দুর্ধর্ষ বাহিনী এবার মুসলিম বাহিনীকে উচিত শিক্ষা দেবে। কিন্তু তা হলো না। মুসলিম বাহিনীর পাল্টা আঘাতে জার্জিস বাহিনীর ব্যুহ ভেঙ্গে পড়ল। উপায়ান্তর না দেখে সে সেনা সদস্যদের উৎসাহিত করার জন্য ঘোষণা করলো, “যে বীর পুরুষ মুসলিম সেনাপতি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছিন্ন শির মুবারক এনে দিতে পারবে, আমার কুমারী কন্যাকে তার হাতে সমর্পণ করবো।”
জার্জিসের এই ঘোষণা তার সেনাবাহিনীর মধ্যে উৎসাহের এক তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করল তাদের আক্রমণ ও সমাবেশে নতুন উদ্যোগ ও নতুন প্রাণাবেগ পরিলক্ষিত হলো। জার্জিসের সুন্দরী কন্যা প্রাপ্তির কামনায় তারা যেন মরিয়া হয়ে উঠল। তাদের উন্মাদ আক্রমণে মুসলিম রক্ষা ব্যুহে ফাটল দেখা দিল। নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন ছাহাবী হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও সে যুদ্ধে শরীক ছিলেন। তিনি সেনাপতি হযরত আব্দুল্লাহ বিন সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পরামর্শ দিলেন, “আপনিও ঘোষণা করুন, যে তারাবেলাসের শাসনকর্তা জার্জিসের ছিন্ন মাথা এনে দিতে পারবে, তাকে জার্জিস দুহিতাসহ এক হাজার দিনার বখশিশ দেয়া হবে।” হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পরামর্শ অনুসারে সেনাপতি হযরত ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই কথাই ঘোষণা করে দিলেন।
তারাবেলাসের প্রান্তরে ঘোরতর জিহাদ সংঘটিত হলো। যুদ্ধে জার্জিস পরাজিত হলো। তার কাটা শিরসহ জার্জিস কন্যাকে বন্দী করে মুসলিম শিবিরে নিয়ে আসা হলো। কিন্তু এই অসীম সাহসিকতার কাজ কে করলেন? এই বীরত্বের কাজ কার দ্বারা সাধিত হলো? জিহাদের পর মুসলিম শিবিরে সভা আহূত হলো। হাজির করা হলো জার্জিস-দুহিতাকে। সেনাপতি হযরত ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “আপনাদের মধ্যে যিনি জার্জিসকে নিহত করেছেন, তিনি আসুন। আমার প্রতিশ্রুত উপহার উনার হাতে তুলে দিচ্ছি।”
কিন্তু গোটা মুসলিম বাহিনী নীরব নিস্তব্ধ। কেউ কথা বললেন না, কেউ দাবি নিয়ে এগুলেন না। সেনাপতি হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বারবার আহ্বান জানিয়েও ব্যর্থ হলেন। এই অভূতপূর্ব ব্যাপার দেখে বিস্ময়ে হতবাক হলেন জার্জিস দুহিতা। তিনি দেখতে পাচ্ছেন তার পিতৃহন্তাকে। কিন্তু তিনি দাবি নিয়ে আসছেন না কেন? টাকার লোভ, সুন্দরী কুমারীর মোহ তিনি উপেক্ষা করছেন? এত বড় স্বার্থকে উপেক্ষা করতে পারে জগতের ইতিহাসে এমন জিতেন্দ্রীয় যোদ্ধা-জাতির নাম তো কখনও শুনেননি তিনি। পিতৃহত্যার প্রতি তার যে ক্রোধ ও ঘৃণা ছিল, তা যেন মুহূর্তে কোথায় অন্তর্হিত হয়ে গেল। অপরিচিত এক অনুরাগ এসে সেখানে স্থান করে নিল।
অবশেষে সেনাপতির আদেশে জার্জিস দুহিতাই হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখিয়ে দিলেন। বললেন, “ইনিই আমার পিতাকে হত্যা করেছেন, ইনিই আপনার জিজ্ঞাসিত মহান বীর পুরুষ।” সেনাপতি হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে অনুরোধ করলেন ঘোষিত উপহার গ্রহণ করার জন্য।
হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “জাগতিক কোনো লাভের আশায় আমি জিহাদ করিনি। যদি কোন পুরস্কার আমার প্রাপ্য হয় তাহলে আমাকে পুরস্কৃত করার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা তিনিই যথেষ্ট ।” সুবহানাল্লাহ! (সূত্র: আমরা সেই জাতি)
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মুমিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে বিজিত এলাকার কিঞ্চিত বর্ণনা
সময় কি আছে বর্তমান মুসলিম দেশের শাসকদের জন্য, তারা চিন্তা করবে কি তাদের অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্য কেমন ছিল, তারা শিক্ষা নেবে কী কেমন বীরত্বপূর্ণ ছিল মুসলমানদের অতীত শৌর্য-বীরত্ব, কী ন্যায়নিষ্ঠ ছিলো মুসলিম জাতির পূর্বপুরুষ উনারা? আমরা যদি একবার চোখ বুলাই তাহলে দেখতে পাবো অপরাজেয় সামরিক শক্তি, ইনসাফপূর্ণ হুকুমতব্যবস্থা, সর্বোচ্চ ইসলামী আদর্শ, ৬টি মৌলিক অধিকারের অপরিমেয় একচ্ছত্র ভিত্তিস্থাপন ইত্যাদি। তেমনি একজন মহান শাসক ছিলেন খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি।
খলীফায়ে ছালিছ আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ২৪ হিজরী সনের ১লা মুহররম তিনি খিলাফতের মহান দায়িত্ব গ্রহণ করেন। উনার শাসনামলের একটি অসামান্য অবদান নৌবাহিনী গঠন। নিম্নে সামান্য কিছু নমুনা দেয়া হলো:
খলীফায়ে ছালিছ আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সমুদ্রপথে বিজয় সূচনার এক বেমেছাল কৃতিত্ব রয়েছে। এই সময় মুসলমানগণ প্রায় ৫০টির মতো জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। গ্রীসের সাইপ্রাস আক্রমণের পূর্বে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নৌবাহিনী গঠনের মুবারক নির্দেশ পান। সাইয়্যিদুনা খলীফায়ে ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক নির্দেশ পেয়ে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সারা দেশে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইসলামী আদর্শিক নৌসৈনিক আহ্বান করেছিলেন। তারপর সমুদ্রযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু করেন। রাজধানীতে দলে দলে সৈনিকের খাতায় নাম লেখানোর জন্য মানুষের তোড়জোড় পড়ে গিয়েছিল। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই বিরাট শক্তিশালী নিয়মিত নৌবাহিনী গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যা বিভিন্ন ইউনিটে ইউনিটে বিভক্ত করেছিলেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নৌবাহিনীকে। এমনকি উনারা বরফের মধ্যেও যুদ্ধ জাহাজ চালাতে সক্ষম হয়েছিলেন।
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মুমিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার প্রায় ১২ বৎসরের খিলাফতকালে এই নৌবাহিনীর মাধ্যমে বিরাট বিরাট অভিযানসমূহ পরিচালনা ও সাফল্যজনক বিজয় এত দ্রুত সম্ভব হয়েছিল যে, এর মেছাল ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর। এসব বিজয়ের অবদানে ছিলেন তৎকালীন মুসলিম সেনাপতি হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুছান্না বিন হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত ওয়ালিদ ইবনে উকবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সাঈদ ইবনে আ’ছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত অবদুল্লাহ ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত কাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা। ফলে তখন ইসলামী খিলাফতের পরিধি বহুদূর সম্প্রসারিত হয় মুসলমান নৌবাহিনী তখন বড় বড় জিহাদে অংশ গ্রহণ করা ছাড়াও আরব সাগর, কৃষ্ণ-সাগর ও ভূমধ্যসাগর অভিযানে অত্যন্ত সফলতার পরিচয় দেন এবং ২৮ হিজরী সনে সাইপ্রাস ও রোড’স দ্বীপদ্বয় বিজয় করেন।
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি নৌবাহিনীকে এত উন্নতি করেছিলেন যে ৩১ হিজরী সনে রোমক সম্রাট যখন বিরাট বাহিনীর সহায়তায় সিরিয়ার উপকূল আক্রমণ করে, তখন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা তাদেরকে এমন শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন যে, রোমকরা আর কখনো মাথা উঁচূ করে দাঁড়াবার সাহস পায়নি। এক রকম বলতে গেলে তাদের বাহিনী সম্পূর্ণরূপে পর্যুদস্ত ও বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। এমনকি হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সমুদ্রপথে এতদূর অগ্রসর হয়েছিলেন যে, ৩২ হিজরী সনে তিনি কনস্টান্টিনোপল পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেন।
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাসনামলে মূলত দু’ধরনের বিজয় অনুষ্ঠিত হয়। এক. যে সমস্ত এলাকা আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফতকালে জয় হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে রোমক ও ইরানীদের উস্কানীতে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল- খলীফায়ে ছালিছ, আমীরুল মুমিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পুনরায় সেগুলি উদ্ধার করে শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপন করেছিলেন। যেমন- আর্মানিয়া, আলেকজান্দ্রিয়া, মিশর ইত্যাদি। দুই. যে সমস্ত এলাকায় যালিম শাসকরা নির্যাতন চালাতো, শান্তি ছিল না সেসব এলাকা খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে বিজয় করেন এবং বেমেছাল শান্তি স্থাপন করেছিলেন; যেমন- লিবিয়া, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, জুরজান, খুরাসান, তাবারিস্তান, সোয়াত, কাবুল, সিজিস্তান, নিশাপুর, পাকিস্তান (তখনকার ভারতবর্ষ) ও ভারতের কিছু সমৃদ্ধ অঞ্চল ইত্যাদি।
এসব বিজয় মাত্র ছয় (৬) বৎসরেরও কম সময়ে অর্জিত হয়। আর এখন গণতন্ত্রের রক্তচোষা শাসনব্যবস্থা মুসলমানগণ উনাদেরকে বিজয় শব্দ থেকে গহীন অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। এই সে¦চ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা মুসলমানদেরকে গোলামিত্বের শিকল পরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন নিজেদের নাজাতের জন্যই মুসলমানদেরকে এই রক্তচোষা শাসনব্যবস্থাকে ধিক্কার দিয়ে খিলাফতী শাসনব্যবস্থা জারি করার জন্য তৈরি হতে হবে। তবে মুসলমানরা শিঘ্রই আবার পৃথিবী শাসন করতে পরবে, যদি মুসলমানরা মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম তলে জমায়েত হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে সে-ই তাওফীক দান করুন।
আল হাদী, আলুল্লাহ, আকরামুল উম্মাহ, ছালিছুল ক্বওম, খলীফায়ে ছালিছ, আমীরুল মু’মিনীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সুমহান শান মান মুবারক
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ইজ্জত ও সম্মান হচ্ছে কেবলমাত্র মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্য এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য আর যারা ঈমানদার উনাদের জন্য। কিন্তু যারা মুনাফিক তারা উনার ইজ্জত ও সম্মান সম্পর্কে অবগত নয়।”
মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কুল-কায়িনাতের মধ্যে সর্বাধিক শান, মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী, সম্মান, মর্যাদা ও মর্তবা দান করেছেন। আর উনার উসীলায় ও মুবারক ছোহবতে ধন্য হওয়ার কারণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবা ও শান, মান লাভ করেছেন। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার তৃতীয় খলীফা আমীরুল মু’মিনীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সেই সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবা লাভকারীগণের অন্যতম। সুবহানাল্লাহ!
* তিনি ছাহাবিয়াত মাক্বামের শীর্ষস্থানীয় একজন। সুবহানাল্লাহ!
* তিনি আশারায়ে মুবাশশারা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্যতম। সুবহানাল্লাহ!
* উনার শান মুবারকে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রত্যেক নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের বেহেশতে একজন বন্ধু থাকবেন। আর বেহেশতে আমার বন্ধু হবেন আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম।” সুবহানাল্লাহ!
* উনার সুমহান শান মুবারক হচ্ছে- তিনি হচ্ছেন ‘যুন নূরাইন’। অর্থাৎ তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি দুই নূর মুবারক উনাদের অধিকারী অর্থাৎ তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দু’জন বানাত আলাইহিমাস সালাম উনাদের গ্রহণ করে উনাদের খিদমত করে উক্ত লক্বব মুবারক লাভ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
* এমনকি স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে ইরশাদ মুবারক করেছেন, “আমার যদি একশ জনও বানাত থাকতেন আর উনাদেরকে যদি আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে নিসবাতুল আযীম মুবারক দেয়ার সুযোগ আসতো তবে আমি সেই একশ জনকেই উনার কাছে দিয়ে দিতাম।” সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং উনার যারা বিরোধিতা করবে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় তারা কাট্টা কাফির ও কাট্টা মুনাফিকের অন্তর্ভুক্ত।
আশ শাহীদ, আল জাওওয়াদ, যুল হিজরাতাইন, মাহবুবুল্লাহ হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার দানের কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি বেহেশতে মেহমানদারীর আয়োজন করেন-
বর্ণিত রয়েছে যে, খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে একবার পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। বাইতুল মালেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাদ্য ছিলো না। ঠিক সেই মুহূর্তে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার একটি বাণিজ্য কাফেলা এক হাজার উট বোঝাই করা খাদ্য নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ উপস্থিত হলো। ব্যবসায়ী লোকজন আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট আসতে লাগলো খাদ্য কিনে নেয়ার জন্য। কেউ স্বাভাবিক দামে, কেউ দ্বিগুণ দামে, কেউ তিনগুণ, চারগুণ দামেও খাদ্য কেনার জন্য প্রস্তুত। তবুও তিনি উনাদের নিকট খাদ্য দিতে রাজি হলেন না। তিনি বললেন, আমার এ খাদ্য নিতে হলে কমপক্ষে দশগুণ মূল্য দিতে হবে। কারণ আপনাদের আগে একজন আমাকে দশগুণ মূল্য দেয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। তখন উনারা বললেন, আমাদের আগে কে এত অধিক মূল্যে খাদ্যদ্রব্য খরিদ করার কথা বললেন? পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তো আমরাই বড় ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা আরো আলোচনা করলেন যে, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি তো পূর্বে কখনো বেশি মূল্যের জন্য দর কষাকষি করেননি। তবে আজকে কেন করছেন ইত্যাদি। এরপর ব্যবসায়ীগণ উনারা বললেন, ঠিক আছে, যিনি আপনাকে বেশি মূল্য দেন উনাকেই আপনি মাল দিয়ে দিন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে খবর পাঠালেন যে, তিনি যেন একজন প্রতিনিধি পাঠান, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সমস্ত খাদ্যদ্রব্য অর্থাৎ এক হাজার উট বোঝাই খাদ্য, যা সিরিয়া থেকে আনা হয়েছে, সেগুলো মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারকের জন্য হাদিয়া করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ! তখন খলীফাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে প্রতিনিধি পাঠানো হলে সাইয়্যিদুনা হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার সমস্ত খাদ্যগুলো খলীফা উনার প্রতিনিধিকে বুঝিয়ে দেন, তখন খলীফা উনার তরফ থেকে সমস্ত খাদ্যগুলো পবিত্র মদীনা শরীফ-এ বণ্টন করে দেয়া হয় এবং তাতে দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি যেদিন এই দান করলেন সেই রাতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বপ্নে দেখতে পেলেন যে, “মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবুজ রং বিশিষ্ট খুব দামি পোশাক পরিধান করতঃ বোরাকে আরোহণ করে খুব দ্রুত কোথাও যাচ্ছেন। এটা দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কোথায় যাচ্ছেন? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনি কি জানেন না, আজ আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফবাসীকে এক হাজার উট বোঝাই খাদ্য যে হাদিয়া করেছেন; যার কারণে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে গেছে? তাই উনার হাদিয়ায় সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি আজকে বেহেশ্তে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেছেন। আমি সেই মেহমানদারীতে শরীক হওয়ার জন্য যাচ্ছি।” সুবহানাল্লাহ!
আছ ছালিহ, নাশিরুল কুরআন, খলীফায়ে ছালিছ, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমিরুল মু’মিনীন হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কিছু নছীহত মুবারক-
(১) চাকচিক্য পোশাকের লোভ যাদের অন্তরে, তাদের কাফনের কথা স্মরণ করা উচিত। জাঁকজমক বাড়ির আকাঙ্খা যাদের অন্তরে, তাদের উচিত কবরের ছোট্ট গর্তটির কথা স্মরণ করা। যারা সবসময় সুস্বাদু খাবারের লোভ করে তাদের কর্তব্য হচ্ছে- নিজের লাশটি যে শেষ পর্যন্ত কীটের খোরাক হবে তা স্মরণ করা।
(২) যার হাতে অন্যের নিন্দাবাদ করার মতো পর্যাপ্ত সময় থাকে, তার চাইতে হতভাগা আর কেউই হতে পারে না।
(৩) বছরান্তেও যে ব্যক্তি দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হয় না, তার চিন্তা করা উচিত যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার উপর সন্তুষ্ট কিনা।
(৪) যে ব্যক্তি চোখের ভাষা বুঝে না, তার সামনে মুখ খোলা নিজেকে লাঞ্ছিত করার নামান্তর।
৫) তরবারির আঘাত মানুষের শরীর আহত করে, কিন্তু কটু কথা দ্বারা মানুষের অন্তর রক্তাক্ত হয়।
(৬) মু’মিন বান্দার নিজের ঘর যদি, তার যবান, বদনজর ও লজ্জাস্থান নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যম হয়, তবে সেটাই তার জন্য সর্বোত্তম ইবাদতগাহে পরিণত হয়ে যায়।
(৭) দারিদ্র্য কোনো মুসলমানকে বেইজ্জত করতে পারে না। মুসলমান যখন দ্বীন থেকে দূরে সরতে থাকে, তখনই পদে পদে বেইজ্জতির সম্মুখীন হয়।
(৮) গুনাহ কোনো না কোনোভাবে মনের শান্তি বিনষ্ট করে।
সত্যিকারের মুসলমানদের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মুবারক নিয়ামতই যথেষ্ট-
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ১৮ তারিখ শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার শাসনকালে নীল ভূমধ্যসাগর তীরের ‘তারাবেলাস’ নগরী মুসলমানদের করতলগত হয়। পরাক্রমশালী কাফির রাজা জার্জিসের প্রধান নগরী ছিল এ এলাকা। আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সেনাপতি করে রাজা জার্জিসের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে পাঠান। এই পরাক্রমশালী রাজা ১ লক্ষ ২০ হাজার সৈন্য নিয়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবন সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনীর অগ্রাভিযানের পথ রোধ করে দাঁড়ালো। স্বয়ং রাজা জার্জিস তার বাহিনী পরিচালনা করছিল। পাশে রয়েছে তার মেয়ে। অত্যন্ত খুবছুরত ছিলো তার সে মেয়ে।
জিহাদ শুরু হলো। জার্জিস মনে করেছিল তার দুর্ধর্ষ বাহিনী এবার মুসলিম বাহিনীকে উচিত শিক্ষা দেবে। কিন্তু তা হলো না। মুসলিম বাহিনীর পাল্টা আঘাতে জার্জিস বাহিনীর ব্যুহ ভেঙ্গে পড়লো। উপায়ান্তর না দেখে সে সেনা সদস্যদের উৎসাহিত করার জন্য ঘোষণা করলো, “যে বীর পুরুষ মুসলিম সেনাপতি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছিন্ন শির এনে দিতে পারবে, আমার কুমারী কন্যাকে তার হাতে সমর্পণ করবো।”
জার্জিসের এই ঘোষণা তার সেনাবাহিনীর মধ্যে উৎসাহের এক তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করলো তাদের আক্রমণ ও সমাবেশে নতুন উদ্যোগ ও নতুন প্রাণাবেগ পরিলক্ষিত হলো। জার্জিসের সুন্দরী কন্যা প্রাপ্তির কামনায় তারা যেন মরিয়া হয়ে উঠলো। তাদের উন্মাদ আক্রমণে মুসলিম রক্ষা ব্যুহে ফাটল দেখা দিলো। নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন ছাহাবী হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও সে যুদ্ধে শরীক ছিলেন।
তিনি সেনাপতি হযরত আব্দুল্লাহ বিন সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পরামর্শ দিলেন, “আপনিও ঘোষণা করুন, যে তারাবেলাসের শাসনকর্তা জার্জিসের ছিন্ন মাথা এনে দিতে পারবে, তাকে জার্জিস দুহিতাসহ এক হাজার দিনার বখশিশ দেয়া হবে।” হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পরামর্শ অনুসারে সেনাপতি হযরত ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই কথাই ঘোষণা করে দিলেন।
তারাবেলাসের প্রান্তরে ঘোরতর জিহাদ সংঘটিত হলো। যুদ্ধে জার্জিস পরাজিত হলো। তার কাটা শিরসহ জার্জিস কন্যাকে বন্দি করে মুসলিম শিবিরে নিয়ে আসা হলো। কিন্তু এই অসীম সাহসিকতার কাজ কে করলেন? এই বীরত্বের কাজ কার দ্বারা সাধিত হলো? জিহাদের পর মুসলিম শিবিরে সভা আহূত হলো। হাজির করা হলো জার্জিস-দুহিতাকে। সেনাপতি হযরত ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জিজ্ঞেস করলেন, “আপনাদের মধ্যে যিনি জার্জিসকে নিহত করেছেন, তিনি আসুন । আমার প্রতিশ্রুত উপহার উনার হাতে তুলে দিচ্ছি।”
কিন্তু গোটা মুসলিম বাহিনী নীরব নিস্তব্ধ। কেউ কথা বললেন না, কেউ দাবি নিয়ে এগুলেন না। সেনাপতি হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বারবার আহ্বান জানিয়েও ব্যর্থ হলেন। এই অভূতপূর্ব ব্যাপার দেখে বিস্ময়ে হতবাক হলেন জার্জিস দুহিতা। তিনি দেখতে পাচ্ছেন তার পিতৃহন্তাকে। কিন্তু তিনি দাবি নিয়ে আসছেন না কেন? টাকার লোভ, সুন্দরী কুমারীর মোহ তিনি উপেক্ষা করছেন? এত বড় স্বার্থকে উপেক্ষা করতে পারে জগতের ইতিহাসে এমন মহান যোদ্ধা-জাতির নাম তো কখনো শুনেননি তিনি । পিতৃহত্যার প্রতি তার যে ক্রোধ ও ঘৃণা ছিল, তা যেন মুহূর্তে কোথায় অন্তর্হিত হয়ে গেল। অপরিচিত এক অনুরাগ এসে সেখানে স্থান করে নিলো।
অবশেষে সেনাপতির আদেশে জার্জিস দুহিতাই হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখিয়ে দিলেন। বললেন, “ইনিই আমার পিতাকে হত্যা করেছেন, ইনিই আপনার জিজ্ঞাসিত মহান বীর পুরুষ।” সেনাপতি হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে অনুরোধ করলেন ঘোষিত উপহার গ্রহণ করার জন্য।
হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “জাগতিক কোনো লাভের আশায় আমি জিহাদ করিনি। যদি কোনো পুরস্কার আমার প্রাপ্য হয় তাহলে আমাকে পুরস্কৃত করার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা তিনিই যথেষ্ট ।” সুবহানাল্লাহ! (সূত্র: আমরা সেই জাতি)
‘দান করলে সম্পদ কমে না’ এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক হলেন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি-
একবার আখিরী রসূল, নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে উনার সম্মানিত দামাদ আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি এসে আরজি করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম; আমাকে আমার সম্পদ কমে যাওয়ার ব্যবস্থা দান করুন।’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একথা শুনে আশ্চর্য প্রকাশ করলেন। এবং বললেন, কী ব্যাপার হে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম, লোকজন ধন-সম্পদ বাড়াতে চায়। আর আপনি সম্পদ কমে যাওয়ার জন্য দোয়া মুবারক চাইছেন। এতে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অনেক নফল ইবাদত করেন। বেশি বেশি পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করেন। কিন্তু আমার মনে হয় আমি বেশি সম্পদের হিসাবের কারণে ততটুকু করতে পারি না।
তখনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এসে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্পদ কমানোর ব্যবস্থা মহান আল্লাহ পাক তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন- ‘আপনি যদি আপনার সম্পদ কমাতে চান, তাহলে আপনি যেন মহান আল্লাহ পাক উনার পথে দান কমিয়ে দেন।’
একথা মুবারক শুনে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এটা কিভাবে সম্ভব যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে সম্পদ দান করবেন, আর আমি উনার পথে খরচ করবো না? তখন আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন- ‘এটাও কি করে সম্ভব যে, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পথে দান করবেন অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্পদ বাড়িয়ে দিবেন না। সুবহানাল্লাহ!
“আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি যে কাজই করেন না কেনো, কোনো কিছুই উনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না”
উনার নাম মুবারক উছমান। কুনিয়াত আবূ আমর। লক্বব মুবারক যুন্ নূরাইন। তিনি আমুল ফিলের ৬ বৎসর পর বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ৬ বছরের ছোট ছিলেন। তিনি অত্যন্ত লজ্জাশীল ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সম্পদশালী ব্যবসায়ী। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অল্প কিছু জ্ঞানী মানুষের মাঝে তিনি ছিলেন একজন। তখন কুরাইশ বংশে যতজন জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন উনাদের মধ্যে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনিও একজন ছিলেন। তিনি অত্যন্ত দানশীল ছিলেন। তিনি জাহিলিয়াতের যুগেও অন্যায় অবিচারকে প্রশ্রয় দিতেন না। তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন আমীরুল মু’মিনীন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার দাওয়াতে। পূর্ব থেকে উনার সাথে আমীরুল মু’মিনীন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার উত্তম সম্পর্ক ছিল।
‘উসুদুল গাবা’ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “আমি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে চতুর্থ।” তিনি প্রথম দিকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে আজীবন পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার খিদমত করেছেন। তিনি সমস্ত অর্থ-সম্পদ ব্যয় করেছেন মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পথে এবং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক উনার উদ্দেশ্যে।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার প্রতি এতো সন্তুষ্ট ছিলেন যে, তিনি উনার সাথে নিজ দুই সম্মানিতা বানাত আলাইহিমাস সালাম উনাদের বিবাহ মুবারক দেন। যার কারণে তিনি যুন্ নূরাইন তথা দুই মহান নূরের অধিকারী হিসেবে প্রসিদ্ধ হন। সুবহানাল্লাহ।
তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে প্রায় সবগুলো জিহাদে অংশগ্রহণ করেন। তিনি তাবুকের যুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখেন। তিনি মোট ব্যয়ের এক তৃতীয়াংশ এ জিহাদে খরচ করেন। এতে তিনি ১০০০ উট এবং ৭০টি ঘোড়া হাদিয়া করেন। তিনি এক হাজার দিনার আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে এনে হাজির করেন। এতে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এতো খুশি হন যে, তিনি উনার জন্য বিশেষভাবে দোয়া করেন, “এখন থেকে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি যে কাজই করেন না কেনো, কোনো কিছুই উনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”
তিনি ইসলামী জগতের তৃতীয় খলীফা ছিলেন এবং ‘আশারাতুম্ মুবাশ্শারাহ’ তথা জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ১০ জন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।
ষষ্ঠ হিজরীতে হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাওয়াত নিয়ে হাজির হন। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফিররা উনাকে প্রস্তাব দেয় যে, ইচ্ছা করলে তিনি নিজে তাওয়াফ করতে পারেন। কিন্তু দৃঢ়চেতা আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ঘোষণা করেন যে তিনি কিছুতেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগে তাওয়াফ করতে পারেন না। এতে মুশরিকরা ক্ষেপে যায়। তারা উনাকে তিনদিন আটকে রাখে। তখন কাফিররা মুসলমানদের কাছে সংবাদ পৌঁছায় যে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি শহীদ হয়েছেন। এই সংবাদে আছহাবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা বাইয়াতে রিদ্বওয়ান গ্রহণ করেন। উনারা শপথ নেন যে, উনারা ওই পর্যন্ত জিহাদ করবেন যতক্ষণ উনারা জীবিত থাকেন। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি হুদাইবিয়ার ঘটনাকে ফাতহুম মুবীন তথা প্রকাশ্য বিজয় বলে ঘোষণা করেন। এই বাইয়াতে রিদওয়ানে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার জীবনের সবচেয়ে বড় তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ছিল- স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিজের হাত মুবারককে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার হাত হিসেবে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার পক্ষে বাইয়াত গ্রহণ করেন।
তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার তৃতীয় খলীফা ছিলেন। যখন হযরত ফারূকে আযম আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক গ্রহণ করেন, তখন তিনি খলীফা মনোনীত হন এবং শেষ পর্যন্ত খিলাফত পরিচালনা করেন। তিনি পবিত্র যুল্হিজ্জাহ মাস উনার ১৮ তারিখ কাবলাল জুমুয়াহ শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। (দলীল: তারিখ গ্রন্থ সমূহ)
খলীফায়ে ছালিছ আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার দানশীলতা-
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে: একদা আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ এসে অনুরোধ করে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার কাছে যদি কোনো গরিব ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আসেন সাহায্যের জন্য তাহলে আপনি উনাদেরকে দয়া করে আমার কাছে প্রেরণ করলে আমি উনাদের খিদমত করবো।
কিছুদিন পরে একজন দরিদ্র ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মেয়ের বিয়েতে সাহায্যের জন্য আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে হাজির হয়ে সাহায্য চাইলেন।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট প্রেরণ করলেন।
সেই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার দরবার শরীফ গিয়ে দেখতে পেলেন যে, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাত্র এক পয়সার হিসাব না মিলানোর কারণে বারবার শুরু থেকে হিসাব করাচ্ছেন। এটা দেখে তিনি ভাবলেন, যিনি মাত্র এক পয়সার হিসাব ছাড়তে পারেন না, উনি আর আমাকে কি সাহায্য করবেন!
তারপরেও যেহেতু স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রেরণ করেছেন তাই তিনি একবারের জন্য বিষয়টি জানাতে উনার সামনে গেলেন। হযরত যুন নূরাইন আলাইহি সালাম তিনি সেই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বারবার আসা-যাওয়া করতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি কিছু বলতে চাচ্ছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনার কাছে আমাকে প্রেরণ করেছেন। আমার মেয়ের বিয়েতে কিছু সাহায্য প্রয়োজন।
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি অমুক স্থানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন। কিছুক্ষণের মধ্যে ওই রাস্তা দিয়ে অমুক দেশ থেকে আমার একটি বাণিজ্যিক কাফিলা আসবে এক হাজার উট পরিপূর্ণ সম্পদ তাতে রয়েছে। সেখান থেকে যেটা আপনার পছন্দ হয় সেই উটটি তার সম্পদসহ আপনি নিয়ে যান।
সত্যিই তিনি সেখানে গিয়ে দেখতে পেলেন বিশাল এক বাণিজ্যিক কাফিলা এসেছে। প্রতিটি উটের পিঠেই অনেক সম্পদ রয়েছে। তিনি সমস্ত উট দেখে একবারে সামনের উটটিই পছন্দ করলেন। উটের নিয়ম অনুযায়ী সামনের উট যেদিকে যায়, পিছনেরগুলিও সেদিকে চলে যায়। সামনেরটি দিয়ে দিলে সম্পূর্ণ কাফিলার সমস্ত উট ও সম্পদসহ উনার কাছে চলে যাবে। তাই কাফিলার সর্দার উনাকে সামনেরটি বাদ দিয়ে অন্য যে কোনো একটি পছন্দ করার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু গরিব ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অন্য কোনোটিই নিতে নারাজ। শেষপর্যন্ত উভয়ে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সামনে গিয়ে হাজির হয়ে বিষয়টি জানালেন। হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে কাফিলার সর্দার! আপনি কি জানেন, উনাকে আমার কাছে কে প্রেরণ করেছেন? স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে আমার কাছে সাহায্যের জন্য প্রেরণ করেছেন। কাজেই তিনি যেটা চান, যেভাবে চান সেটাই সেভাবে উনাকে দিয়ে দিন। সবগুলি উট সম্পদসহ উনার সাথে চলে গেলেও উনাকে সেভাবেই দিয়ে দিন। মনে রাখবেন, উনি যদি স্বয়ং আমাকেসহ চান তবে খোদ আমাকেও উনার সাথে চলে যেতে হবে। কারণ, উনাকে স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে আমার কাছে সাহায্যের জন্য প্রেরণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এ মুবারক ঘটনা থেকে আমাদের মুবারক সুন্নত পালন ও দান করার সর্বোত্তম আদব শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকেও অনুরূপভাবে গোলামী করার ও দান করার তাওফীক দান করুন। আমীন!
আমীরুল মু’মিনীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ প্রসঙ্গে-
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খালা সা’দাহ নাম্মী এক মহিলা তিনি হঠাৎ একদিন উনার বাড়িতে এসে উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম! আপনি জেনে রাখুন, আমাদের মাঝে যে নবী উনার আবির্ভাব ঘটেছে তিনি হলেন সব নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাইয়্যিদ। মহান প্রতিপালক আল্লাহ পাক তিনিই উনাকে আমাদের মাঝে প্রেরণ করেছেন। সাথে করে নিয়ে এসেছেন পবিত্র কুরআন শরীফ। আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী যুবক। আপনার উচিত- সেই নবী উনার প্রতি ঈমান এনে উনার অনুসরণ করা। প্রচলিত প্রতিমা পূজার মোহমুক্ত হয়ে সত্য ও সঠিক পথের আশ্রয় নেয়া।
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি নিজেই বলেন, আমি আমার খালাআম্মা উনার কথাগুলোর কোনো তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারলাম না। তাই উনাকে বললাম, দয়া করে আপনার কথাগুলোর মর্ম খুলে বলুন। তখন তিনি পুনরায় বললেন- শুনুন, বনী হাশিম গোত্রের হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রেরিত রসূল। তিনি মানুষের মুক্তির জন্য ধরায় এসেছেন। সাথে করে নিয়ে এসেছেন পবিত্র গ্রন্থ কুরআন শরীফ। যার মাধ্যমে তিনি মানব সমাজকে সত্য পথের দিকে আহ্বান জানাচ্ছেন। আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার খালাআম্মা উনার কথাগুলো ভালোভাবে চিন্তা করতে লাগলেন।
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার পরম বিশ্বস্ত বন্ধু ছিলেন আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম। তিনি উনার বাড়িতে প্রায়শঃ যাতায়াত করতেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উনার সাথে আলোচনা করতেন এবং কোনো ব্যাপারে জটিল সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধানের জন্য উনার কাছ থেকে পরামর্শ নিতেন।
এবারও তিনি উনার খালাআম্মা উনার কথাগুলো শোনার পর তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য উনার কাছে গিয়ে উপস্থিত হলেন। উনার চেহারা মুবারকে ছিলো অত্যধিক উদ্বিগ্নতার ছাপ। আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন তৎকালীন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার এক বিশেষ মনস্তত্ত্ব বিশারদ ব্যক্তিত্ব। সুতরাং আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার কাছে কিছু বলার পূর্বেই তিনি উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম! আপনাকে তো আমি একজন বিশেষ সুবিবেচক এবং জ্ঞানসম্পন্ন যুবক বলেই মনে করি। অথচ আশ্চর্য হচ্ছি এ অবস্থা দেখে যে, আপনি এখনো হক্ব ও নাহক্বের পার্থক্যটা বিচার করতে পারলেন না। দেখুন, আমাদের সমাজ নিজেদের হাতে পাথরের মূর্তি তৈরি করে তারই পূজা করে চলছে। আপনিই বলুন না, এগুলোর কি কোনো শক্তি-সামর্থ্য, অনুভূতি, শ্রুতিশক্তি বা দৃষ্টিশক্তি আছে? এগুলোর কি কারো উপকার কিংবা অপকার করার সামর্থ্য আছে?
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সহজ-সরল কথাগুলো আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার অন্তরে গিয়ে পৌঁছছিলো। যেন উনার অন্তর থেকে ধ্বনিত হলো- সত্যিই তো এগুলো প্রস্তর মূর্তি। এগুলোকে পূজা করা নিতান্ত নির্বোধ এবং মূর্খদেরই কাজ। অতএব, উনার জবান থেকে বের হলো- ভাই, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম! আপনার কথা সম্পূর্ণই সঠিক। আমরা যা করে চলেছি তা নিছক ভ্রান্তিরই নামান্তর। উনার কথা শুনে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, যদি তাই মনে করেন, তাহলে এক্ষুনি চলুন, আমরা আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গমন করি। অতঃপর উনারা দু’জন আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ গিয়ে উপস্থিত হলেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে, যখন উনারা দু’জন বিষয়টি আলোচনা করছিলেন সেই মুহূর্তে স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসে উনাদের সামনে হাজির হলেন। তিনি আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে অনন্ত জীবনের ভালাই এবং সুখ সমৃদ্ধির পথে দাওয়াত জানাচ্ছেন আপনি সে দাওয়াত কবুল করুন, আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করুন- আমি মহান প্রতিপালক আল্লাহ পাক উনার প্রেরিত রসূল। আপনাদের প্রতি ও জগতের মানব সমাজের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে এই দাওয়াত নিয়ে এসেছি।
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি নিজেই বলেন, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই কথা মুবারক আমার অন্তরে এমন দাগ কেটেছিলো যে, মুহূর্তেই আমার মনের সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও কালিমা দূর হয়ে গেলো এবং সত্যের নির্মল আলো যেন আমার আঁধার হৃদয় এক পলকেই এক অপূর্ব আলোক রশ্মি দ্বারা উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। সাথে সাথে আমি উচ্চ শব্দে ঘোষণা করলাম, “আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রসূলুহূ।” অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো মা’বুদ নেই। তিনি এক, একক এবং অংশবিহীন। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রেরিত রসূল।
মোটকথা, তিনি পবিত্র ঈমান উনার কালিমা শরীফ পড়ে মুসলমান হয়ে গেলেন এবং সম্মানিত ছাহাবী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করলেন। সুবহানাল্লাহ!
যুল হিজরতাইন, খলীফায়ে ছালিছ, জামিউল কুরআন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমিরুল মু’মিনীন, ক্বাতিবে ওহী হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সুমহান ফাযায়িল-ফযীলত-
উনার মূল নাম মুবারক- ‘উছমান’ আলাইহিস সালাম। কুনিয়াত (ডাক নাম বা উপনাম) মুবারক’ আবু আমর, আবু আবদিল্লাহ, আবু লায়লা’ আলাইহিস সালাম এবং সর্বাধিক পরিচিত লকব মুবারক ‘যুন নূরাইন’ ও ‘গনি’ আলাইহিস সালাম। পিতা- আফফান, মাতা- আরওরা বিনতু কুরাইয। কুরাইশ বংশের উমাইয়্যা গোত্রের সন্তান। উনার পূর্বপুরুষ ‘আবদে মান্নাফে’ গিয়ে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নসব মুবারক উনার সাথে মিলিত হয়েছে।
তিনি হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের তৃতীয় খলীফা তথা খলীফায়ে ছালিছ। তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন হস্তী বছরের ৬ বছর পরে ৫৭৬ ঈসায়ী সনে। এ হিসাবে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তিনি ছয় বছর পরে দুনিয়াতে তাশরীফ মুবরক গ্রহণ করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন মধ্যমাকৃতির সুঠাম দেহের অধিকারী। উনার ছিল ঘন দাড়ি মুবারক; গাত্র বর্ণ ছিল উজ্জ্বল ফর্সা; বুক ও কোমর মুবারক ছিল চওড়া; ছিল ঘন এবং কান পর্যন্ত ঝোলানো বাবরী চুল মুবারক; পায়ের নালা মুবারক ছিল মোটা; ছিল পশম ভরা লম্বা বাহু মুবারক এবং মুক্তাখচিত দাঁত মুবারক।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান বর্ণিত রয়েছে। তন্মধ্যে এখানে সামান্য কিছু উল্লেখ করা হলো: তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খুব প্রিয় ছিলেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটতম ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম একজন। তিনি বারবার জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রত্যেক হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনার জান্নাতে একজন সঙ্গী আছেন, আর আমার সঙ্গী হচ্ছেন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম।” তিনি কাতিবে ওহী ছিলেন। তিনি পূর্ববর্তী দুইজন সম্মানিত খলীফা আলাইহিমাস সালাম উনাদের সম্মানিত উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি প্রতি বছর পবিত্র হজ্জ করতেন। তবে পবিত্র শাহাদত মুবারক গ্রহণ করার বছর তিনি পবিত্র হজ্জ করতে পারেননি। প্রায় সারা বছর রোযা রাখতেন এবং সারারাত ইবাদত-বন্দেগী করতেন। এক রাকায়াত নামাযে পবিত্র কুরআন শরীফ একবার খতম করতেন। তিনি কবরের পাশ দিয়ে গেলে প্রচুর কাঁদতেন এবং দাড়ি মুবারক ভিজে যেত। তিনি রাতের বেলা গোলামদের খিদমত নিতেন না।
তিনি ছিলেন অত্যন্ত লাজুক। আত্মীয়-সঙ্গীদের প্রতি ছিলেন পরম দয়ার্দ্র। তিনি সর্বপ্রথম তারাবীহ নামাযে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করার সন্নত বা পদ্ধতি চালু করেন। মিম্বর শরীফ উনার ২য় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ১ম খুতবা এবং ১ম সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ২য় খুতবা প্রদানের সুন্নত মুবারক জারি করেন এবং ৩০ পারা পবিত্র কুরআন শরীফ নতুনভাবে সঙ্কলন করেন এবং বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নর উনাদের কাছে প্রেরণ করেন। যার জন্য উনাকে ’জামিউল কুরআন’ বলা হয়।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন কুরাইশ বংশের অন্যতম কুস্তিবিদ্যা বিশারদ। কুরাইশদের প্রাচীন ইতিহাসেও ছিল উনার গভীর ইলম মুবারক। উনার প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, সৌজন্যতা, সদয়তা ইত্যাদি মহান গুণাবলীর জন্য সবসময় উনার পাশে মানুষের ভীড় জমে থাকতো এবং তিনি হাত খুলে তাদের উপকার করতেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে জাহিলী যুগের কোনো অপকর্ম স্পর্শ করতে পারেনি। লজ্জা ও প্রখর আত্মমর্যাদাবোধ ছিলো উনার সুমহান চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। যুবক বয়স মুবারকে তিনি অন্যান্য অভিজাত কুরাইশদের মতো ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। সীমাহীন সততা ও বিশ্বস্ততার গুণে ব্যবসায় অসাধারণ সাফল্য লাভ করেন। পবিত্র মক্কা শরীফ শহরের একজন বিশিষ্ট ধনী ব্যবসায়ী হিসেবে ‘গনী’ লক্বব মুবারক-এ প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ‘আস-সাবেকুনাল আউওয়ালুন’ (প্রথম পর্বের ইসলাম গ্রহণকারী) এবং ‘আশারায়ে মুবাশশারা’ উনাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে গভীর সম্পর্ক ছিল এবং উনার দাওয়াতেই তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। ফলে উনার খালা উনাকে অভিনন্দন জানিয়ে ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করেন। এরপর আজীবন জান-মাল দ্বারা আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে নিয়োজিত ছিলেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার বোন হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাসহ বৈপিত্রীয় ভাই-বোন হযরত ওয়ালিদ, হযরত খালিদ, হযরত আম্মারা, হযরত উম্মু কুলসুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই মুসলমান হয়েছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার অন্য ভাই-বোন উনারা পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের সময় পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন।
পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর কুরাইশদের একজন সম্মানিত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও উনাকে কাফিরদর দ্বারা সীমাহীন কষ্ট পেতে হয়। উনার চাচা হাকাম ইবন আবিল আস সে উনাকে রশি দিয়ে বেঁধে বেদম প্রহার করে। সে বলতো, একটা নতুন ধর্ম গ্রহণ করে আপনি আমাদের বাপ-দাদার মুখে কালি দিয়েছেন। এ ধর্ম ত্যাগ না করা পর্যন্ত আপনাকে ছাড়া হবে না। এতে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ঈমানী দৃঢ়তা আরো শক্তভাবে প্রকাশ হয়। তিনি বলতেন: তোমাদের যা ইচ্ছে করো, তবুও এ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম আমি কখনো ছাড়তে পারবো না।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ বানাত সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার সাথে শাদী মুবারক দেন। হিজরী দ্বিতীয় সনে পবিত্র মদীনা শরীফ শহরে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতু রসূলিল্লাহ আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত প্রকাশের পঞ্চম বছরে মুশরিকদের নির্মম অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে মুসলমগণ উনাদের প্রথম যে দলটি হাবশায় (ইথিওপিয়া) হিজরত মুবারক করেছিলেন উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ও উনার সম্মানিতা আহলিয়া সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতু রসূলিল্লাহ আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনিও ছিলেন। অর্থাৎ হযরত লূত আলাইহিস সালাম উনার পর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় পরিবারসহ প্রথম হিজরতকারী। সুবহানাল্লাহ!
হাবশায় (আবিসিনিয়ায়) আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার মুবারক হিজরতের ফলাফল সুদূরপ্রসারী। উনাদের হিজরতের দরুন আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশী উনাদের মুবারক ছোহবত লাভে ধন্য হন। উহার সুবাদেই তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। উনাদের মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক প্রচার-প্রসার ঘটে।
হাবশায় অবস্থানকালে উনাদের আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং এ আওলাদ উনার নাম অনুসারে তিনি কুনিয়াত ধারণ করেন ‘আবু আবদুল্লাহ’। হিজরী ৪র্থ সনে সাইয়্যিদুনা হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনাদের দাম্পত্য জীবন সুন্নতী এবং খুব সুখের ছিল। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলাবলি করতেন- কেউ যদি সর্বোত্তম সংসার দেখতে চায়, সে যেন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম ও উনার আহলিয়া সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে দেখে নেয়। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বেশ কিছু দিন হাবশায় অবস্থান করেন। অতঃপর পবিত্র মক্কা শরীফ ফিরে আসেন। পরবর্তীতে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ হতে পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত করার পর আবার তিনিও পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত করেন। এভাবে তিনি ‘যুল হিজরতাইন’ অর্থাৎ দুই হিজরতের অধিকারী হন।
একমাত্র পবিত্র বদর জিহাদ ছাড়া সমস্ত জিহাদে তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে অংশগ্রহণ করেছেন এবং জিহাদের সময় অঢেল ধন-সম্পত্তি দান করে দিতেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র বদর জিহাদে রওয়ানা হন, তখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি অসুস্থতাকে গ্রহণ করেছিলেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নির্দেশে তিনি নিজ আহলিয়া হযরত আহলে বাইত শরীফ উনাদের অন্যতম ব্যক্তিত্ব সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনার মুবারক খিদমতের জন্য পবিত্র মদীনা শরীফ শহরেই অবস্থান করেন। মূলত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের খিদমত সমস্ত কিছু থেকে উত্তম এবং জিহাদও এর সমতুল্য নয়।
পবিত্র বদর জিহাদে বিজয়ের খবর যেদিন পবিত্র মদীনা শরীফ এসে পৌঁছলো সেদিনই সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জন্য পবিত্র বদর জিহাদে অংশগ্রহণকারীদের মতো সওয়াব ও গনীমতের অংশ ঘোষণা করেন। এ হিসাবে পরোক্ষভাবে তিনিও বদরী ছাহাবী।
মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক নির্দেশে তৃতীয় হিজরী সনে সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু কুলসুম আলাইহাস সালাম উনার সাথে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাদী মুবারক দেন। এ কারণে তিনি ‘যুন-নূরাইন’ অর্থাৎ ‘দুই নূর মুবারক উনার অধিকারী’ উপাধি লাভ করেন। কিন্তু নবম হিজরী সনে সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি তাবুক জিহাদে এক তৃতীয়াংশ সৈন্যের যাবতীয় খরচ বহন করেন। তিনি একাই ৯০০টি উট এবং ৫০টি ঘোড়া হাদিয়া করেন। এছাড়া অন্যান্য জিহাদ, বিশেষ দিন (আখিরী চাহার শোম্বাহ, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ ইত্যাদি), দুর্ভিক্ষের সময়সহ অন্য যেকোনো সময় মুক্তহস্তে দান করতেন। ‘বীরে রুমা’ নামক ইহুদীদের কূপটি তিনি ক্রয় করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসীদেরকে হাদিয়া দিয়েছিলেনে। এরকম অসংখ্য জনকল্যাণমূলক কাজ করেছিলেন তিনি। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে মাল বোঝাই এক হাজার উটও দান করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি সবসময় নিখুঁতভাবে হিসাব রাখতেন। ঝুঁকিপূর্ণ হুদাইবিয়ার দূত হিসেবে তিনিই পবিত্র মক্কা শরীফ গমন করেন এবং উনাকে তিন দিন আটকে রাখা হয়। পরবর্তীতে সন্ধি হয়।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর প্রথম খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে শুনামাত্রই বাইয়াত হন এবং উনার পরবর্তী খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে মনোনীত করে যে অঙ্গীকারনামা মুবারক লেখা হয়, উহার লেখক ছিলেন স্বয়ং তিনি। দ্বিতীয় খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে তিনিই প্রথম বাইয়াত গ্রহণ করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার সময় তিনি বেশ কয়েকজনের নাম মুবারক প্রস্তাব করে গিয়েছিলেন এবং তিনদিন-তিনরাত্রি সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। এরমধ্যে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকেই সর্বাধিক সম্মানিত এবং উপযুক্ত হিসেবে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফে সবার উপস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত এক ভাষণের পর আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খলীফা হিসেবে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এবং সকলেই বাইয়াত গ্রহণ করেন। অতঃপর আমজনতা বাইয়াত গ্রহণ করেন। হিজরী ২৪ সনের পহেলা মুহররম সকালে তিনি খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি খিলাফতের দায়িত্ব খুব নিষ্ঠা এবং দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন। কোথাও কোনো সমস্যা ছিলো না। খিলাফত বিস্তার হয়েছিল কাবুল থেকে মরোক্ক পর্যন্ত। কিন্তু কিছু কুচক্রী ইহুদীদের সৃষ্ট ফিতনার কারণে মুনাফিক দ্বারা আক্রান্ত হয়ে তিনি রোযা রাখা অবস্থায় পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের সময় পবিত্র শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। এ ঘটনা সংঘটিত হয় হিজরী ৩৫ সনের ১৮ই যিলহজ্জ শরীফ। দিনটি ছিল জুমুয়াবার। তিনি কয়েক দিন কম ১২ বছর খিলাফতের মহান দায়িত্ব পালন করেন। পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী শরীফ উনার ‘হাশমে কাউয়াব’ নামক স্থানে উনার পবিত্র রওযা শরীফ করা হয়। মাগরিব নামাযের পর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। হযরত যুবাইর ইবনে মুতইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার জানাযা নামায পড়ান। তবে ইহুদী ও মুনাফিকদের বাধার কারণে লোকসংখ্যার উপস্থিতি কম ঘটে।
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার নৌবাহিনী গঠন এবং বিজিত এলাকার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা-
সময় কি আছে বর্তমান মুসলিম দেশের শাসকদের জন্য, তারা চিন্তা করবে কি তাদের অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্য কেমন ছিল, তারা শিক্ষা নেবে কী কেমন বীরত্বপূর্ণ ছিল মুসলমানদের অতীত শৌর্য, কী ন্যায়নিষ্ঠ ছিলেন মুসলিম জাতির পূর্বপুরুষ উনারা? আমরা যদি একবার চোখ বুলাই তাহলে দেখতে পাবো অপরাজেয় সামরিক শক্তি, ইনসাফপূর্ণ হুকুমতব্যবস্থা, সর্বোচ্চ ইসলামী আদর্শ, ৬টি মৌলিক অধিকারের অপরিমেয় একচ্ছত্র ভিত্তিস্থাপন ইত্যাদি। তেমনি একজন মহান শাসক ছিলেন খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মুমিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মুমিনীন হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ২৪ হিজরী সনের ১লা মুহররম সকালে তিনি সম্মানিত খিলাফত উনার মহান দায়িত্ব গ্রহণ করেন। উনার শাসনামলের একটি অসামান্য অবদান নৌবাহিনী গঠন। নিম্নে সামান্য কিছু নমুনা দেয়া হলো:
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মুমিনীন হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার সমুদ্রপথে বিজয় সূচনার এক বেমেছাল কৃতিত্ব রয়েছে। এই সময় মুসলমানগণ প্রায় ৫০টির মতো জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। গ্রীসের সাইপ্রাস আক্রমণের পূর্বে কাতিবে ওহী সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নৌবাহিনী গঠনের মুবারক নির্দেশ পান। সাইয়্যিদুনা খলীফায়ে ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক নির্দেশ পেয়ে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সারা দেশে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইসলামী আদর্শিক নৌসেনা আহ্বান করেছিলেন। তারপর সমুদ্রযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু করেন। রাজধানীতে দলে দলে সৈনিকের খাতায় নাম লেখানোর জন্য মানুষের তোড়জোড় পড়ে গিয়েছিল। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই বিরাট শক্তিশালী নিয়মিত নৌবাহিনী গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বিভিন্ন ইউনিটে ইউনিটে বিভক্ত করেছিলেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নৌবাহিনীকে। এমনকি উনারা বরফের মধ্যেও যুদ্ধ জাহাজ চালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার ১২ বৎসরের খিলাফতকালে এই নৌবাহিনীর মাধ্যমে বিরাট বিরাট অভিযানসমূহ পরিচালনা ও সাফল্যজনক বিজয় এত দ্রুত সম্ভব হয়েছিল যে, এর মেছাল ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর। এসব বিজয়ের অবদানে ছিলেন তৎকালীন মুসলিম সেনাপতি হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুছান্না বিন হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত ওয়ালিদ ইবনে উকবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সাঈদ ইবনে আ’ছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত অবদুল্লাহ ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত কাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা। ফলে তখন ইসলামী খিলাফতের পরিধি বহুদূর সম্প্রসারিত হয়। মুসলমান নৌবাহিনী তখন বড় বড় জিহাদে অংশ গ্রহণ করা ছাড়াও আরব সাগর, কৃষ্ণ-সাগর ও ভূমধ্যসাগর অভিযানে অত্যন্ত সফলতার পরিচয় দেন এবং ২৮ হিজরী সনে সাইপ্রাস ও রোড’স দ্বীপদ্বয় বিজয় করেন। সুবহানাল্লাহ!
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মুমিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি নৌবাহিনীকে এত উন্নতি করেছিলেন যে ৩১ হিজরী সনে রোমক সম্রাট যখন বিরাট বাহিনীর সহায়তায় সিরিয়ার উপকূল আক্রমণ করে, তখন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা তাকে এমন শোচনীয়ভাবে পরাজয় করেন যে, রোমকরা আর কখনো মাথা উঁচূ করে দাঁড়াবার সাহস পায়নি। এক রকম বলতে গেলে তাদের বাহিনী সম্পূর্ণরূপে পর্যুদস্ত ও বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। এমনকি হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সমুদ্রপথে এতদূর অগ্রসর হয়েছিলেন যে, ৩২ হিজরী সনে তিনি কনস্টান্টিনোপল পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেন। সুবহানাল্লাহ!
খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মুমিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাসনামলে মূলত দু’ধরনের বিজয় অনুষ্ঠিত হয়। এক. যে সমস্ত এলাকা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফতকালে বিজয় হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে রোমক ও ইরানীদের উস্কানীতে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল- খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পুনরায় সেগুলি উদ্ধার করে শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপন করেছিলেন। যেমন- আর্মেনিয়া, আলেকজান্দ্রিয়া, মিশর ইত্যাদি। দুই. যে সমস্ত এলাকায় যালিম শাসকরা নির্যাতন চালাতো, শান্তি ছিল না- সেসব এলাকা খলীফায়ে ছালিছ, আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার খিলাফতকালে বিজয় করেন এবং বেমেছাল শান্তি স্থাপন করেছিলেন; যেমন- লিবিয়া, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, জুরজান, খুরাসান, তাবারিস্তান, সোয়াত, কাবুল, সিজিস্তান, নিশাপুর, পাকিস্তান (তখনকার ভারতবর্ষ) ও ভারতের কিছু সমৃদ্ধ অঞ্চল ইত্যাদি।
এসব বিজয় মাত্র ছয় বৎসরেরও কম সময়ে অর্জিত হয়। আর এখন গণতন্ত্রের রক্তচোষা শাসনব্যবস্থা মুসলমানগণ উনাদেরকে বিজয় শব্দ থেকে গহীন অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। এই সে¦চ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা মুসলমানগণ উনাদেরকে গোলামিত্বের শিকল পরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন নিজেদের নাজাতের জন্যই মুসলমানগণ উনাদেরকে এই রক্তচোষা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে ধিক্কার দিয়ে সম্মানিত খিলাফতী শাসনব্যবস্থা জারি করার জন্য তৈরি হতে হবে। তবে মুসলমানরা শিঘ্রই আবার পৃথিবী শাসন করতে পরবে, যদি মুসলমানরা মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম তলে জমায়েত হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে সে-ই তাওফীক দান করুন।
0 Comments:
Post a Comment