৬৭৪ নং-সুওয়াল : সফর অবস্থায় ট্টেন, বাসে বা লঞ্চে বসে ফরয নামায আদায় করা যাবে কিনা? গেলে তার নিয়ম কি?


সুওয়াল : মাসিক রাহমানী পয়গাম, জুলাই/৯৬ইং সংখ্যায় নিম্ন বর্ণিত জিজ্ঞাসা ও জবাব ছাপা হয়-
জিজ্ঞাসা : সফর অবস্থায় ট্টেন, বাসে বা লঞ্চে বসে ফরয নামায আদায় করা যাবে কিনা? গেলে তার নিয়ম কি?
জবাব : এখানে তিনটি বিষয় জেনে রাখার দরকার।
১মঃ দাড়িয়ে নামায পড়া।
২য়ঃ কিবলার দিকে মুখ রাখা।
৩য়ঃ নিয়ম মুতাবেক রুকু-সিজদাসহ নামায পড়া।
অর্থাৎ ইশারায় রুকু সিজদা না করা। যদি ট্টেনে বা লঞ্চে বা বাসে উল্লিখিত তিনটির কোন একটি করা সম্ভব না হয়, তাহলে সে নামায ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে নিবে, কিন্তু পরে দোহরানো জরুরী।
গাড়ীতে বা লঞ্চে বা বাসে নামায পড়ার নিয়ম এই যে, প্রথমে দাড়িয়ে তাহরীমা বাঁধার পর পড়ে যাওয়ার ভয় থাকলে টেক লাগিয়ে বা কোন কিছু ধরে দাঁড়াবে। মনে রাখতে হবে, হাত বাঁধা সুন্নত, কিন্তু দাঁড়ানো ফরয। কাজেই প্রয়োজনের সময় সুন্নত তরক করে ফরজ আদায় করতে হবে। গাড়ী, লঞ্চ, বাস কিবলা থেকে ঘুরতে থাকলে, মুসল্লীও ঘুরবে এবং সর্বদা ক্বিবলা মুখী থাকবে। সিজদার সময় পিছনের সিটে পা ঝুলিয়ে বসে সামনের সিটে কম করে ১ তাসবীহ পরিমাণ সময় সিজদা করবে। আর খালি জায়গা পেলে লঞ্চে, বাস বা ট্টেনের ফ্লোরে সিজদাহ করবে। আর যদি সিজদা করার মত কোন খালি জায়গাই না পাওয়া যায়, তাহলে ইশারায় রুকু সিজদা করে নামায পড়ে নিবে। তবে এক্ষেত্রে গন্তব্য স্থলে পৌঁছে নামায দুহরিয়ে পড়তে হবে। এমনিভাবে যানবাহনে যদি কেউ বসে নামায পড়ে বা ক্বিবলা থেকে চেহারা ফিরে যায়, তাহলেও নামায দুহরিয়ে নিতে হবে। [প্রমাণ- আহসানুল ফাতাওয়া ৪:৮৮]
এখন আমার প্রশ্ন হলো- সফরে যানবাহনে থাকা অবস্থায় নামায আদায়ের নিয়ম কি? রাহ্মানী পয়গামের প্রদত্ত উত্তর কতটুকু প্রযোজ্য ও শুদ্ধ হয়েছে। অনুগ্রহ করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব : মাসিক রাহমানী পয়গামের উক্ত উত্তর অশুদ্ধ, ভুল, মনগড়া ও নির্ভরযোগ্য ফতওয়ার খেলাফ হয়েছে। উক্ত প্রশ্নের সঠিক উত্তর হলো-
প্রথমতঃ সর্বাবস্থায় দাঁড়িয়ে নামায পড়া ফরয। অর্থাৎ নামাযী ব্যক্তি প্রথমে লক্ষ্য করবে যে, ট্টেনে, বাসে বা লঞ্চে যে কোন ভাবেই হোক দাঁড়িয়ে নামায পড়া সম্ভব কিনা? যদি দাঁড়িয়ে নামায পড়া সম্ভব হয়, তবে তার জন্য দাঁড়িয়ে নামায পড়াই ফরয।
কিন্তু দাঁড়িয়ে নামায পড়তে গেলে যদি মাথায় ছাদ লেগে যায় অথবা পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে, কিম্বা অধিক অসুস্থতার কারণে দাঁড়ানো অসম্ভব হয় অথবা দাঁড়িয়ে যথাযথ নিয়মে নামায পড়ার জায়গা না থাকে, তবে এসকল অবস্থায় দাঁড়ানোর ফরয সাকেত বা রহিত হয়ে যাবে এবং বসে নামায আদায় করতে হবে, এতে নামায পূর্ণরূপেই আদায় হয়ে যাবে।      আর নামাযী ব্যক্তির জন্য দাঁড়িয়ে হোক, বসে হোক, ইশারায় হোক, সর্বাবস্থায় ক্বিবলামুখী হয়ে নামায পড়া ফরজ। কোন অবস্থাতেই ইচ্ছাকৃতভাবে ক্বিবলা পরিবর্তন করা জায়েয নেই। সফর অবস্থায় যানবাহনে ক্বিবলা ঘুরার সাথে সাথে নামাযী ব্যক্তিও ঘুরে ক্বিবলামুখী হয়ে যাবে।
আর সফর অবস্থায় হোক অথবা মুক্বীম অবস্থায় হোক, যদি যথাযথ নিয়মে রুকু-সিজদা করে নামায আদায় করা যায়, তাহলে রুকু-সিজদা করেই নামায আদায় করবে। তবে যদি যানবাহনে অধিক ভিড়ের জন্য সিজদা করার মত কোন জায়গা না থাকে অথবা অসুস্থতার কারণে রুকু-সিজদা করতে না পারে, তবে ক্বিবলামুখী হয়ে (বসে হোক অথবা দাঁড়িয়ে হোক) ইশারায় রুকু, সিজদা করে নামায আদায় করবে। অর্থাৎ রুকুর ক্ষেত্রে মাথা একটু কম ঝুঁকাতে এবং সিজদার ক্ষেত্রে মাথা একটু বেশী ঝুঁকাতে হবে। এতেও নামায পূর্ণরূপেই আদায় হবে। উক্ত নামাযকে পূণরায় গন্তব্যস্থানে পৌঁছে দোহ্রায়ে পড়তে হবেনা।
উল্লেখ্য যে, রাহমানী পয়গামে আহ্সানুল ফতওয়ার এবারতের অনুবাদ করে গাড়ীতে, লঞ্চে বা বাসে নামায পড়ার যে নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে, অর্থাৎ কোন কিছুতে টেক লাগিয়ে অথবা কোন কিছু ধরে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে, তা কোন মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এ ব্যাপারে সর্বজন স্বীকৃত ফক্বীহ্গণের অভিমত হলো- দাঁড়ানোর অসুবিধার দরুন দাঁড়ানোর ফরজ সাকেত বা রহিত হয়ে যায়। কাজেই যদি কোন মতেই দাঁড়িয়ে নামায পড়া সম্ভব না হয়, তবে বসেই নামায আদায় করবে। কিন্তু কোন কিছুতে টেক লাগিয়ে অথবা হাত বাঁধার সুন্নত তরক করে হাত দ্বারা কোন কিছু ধরে দাঁড়ানোর কোন নিয়ম, নির্ভযোগ্য কোন ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ করা হয়নি। বরং এটি শুধুমাত্র আহ্সানুল ফতওয়ার লেখকের নিজস্ব অভিমত।
আর যদি যানবাহনে অত্যাধিক ভিড়ের কারণে রুকু-সিজদা করার জায়গা না থাকে অথবা অধিক অসুস্থতার কারণে নামাযী ব্যক্তি রুকু-সিজদা করতে অক্ষম হয়, তবে তাকে ক্বিবলামুখী হয়ে ইশারায় রুকু-সিজদা করে নামায আদায় করতে হবে অর্থাৎ রুকুর ক্ষেত্রে মাথা একটু কম ঝুঁকাতে এবং সিজদার ক্ষেত্রে মাথা একটু বেশী ঝুঁকাতে হবে। আর তাতে নামায পূর্ণরূপেই আদায় হয়ে যাবে। গন্তব্য স্থানে পৌঁছে উক্ত নামায দোহরায়ে পড়ার আবশ্যকতা নেই। তবে যানবাহন ঘুরার কারণে নামাযীর ক্বিবলা পরিবর্তন হলে, নামাযী ব্যক্তিও ক্বিবলার দিকে ঘুরে যাবে। ইচ্ছাকৃত ক্বিবলা ব্যতীত অন্য দিকে মুখ করে নামায আদায় করলে নামায বাতিল হয়ে যাবে।
(দোররুল মোখতার, বাহরুর রায়েক, গায়াতুল আওতার, ফতওয়ায়ে আলমগিরী, হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী, শামী, মারাকিউল ফালাহ্, খোলাছা, নূরুল ইজা, বেহেস্তী জিওর ইত্যাদি)
আবা-৩৮

0 Comments: