প্রশ্ন :
বিভিন্ন ইসলামী সম্মেলন ও মিছিলে দেখা যায়, “ভিডিও ক্যামেরা” করা হয়ে
থাকে ইহা ইসলামের দৃষ্টিতে কতটুকু জায়েয? জানালে খুশী হবো।
উ : মহান
আল্লাহ পাক উনার কলিমা শরীফকে বুলন্দ করার জন্য শরয়ী বিধান মোতাবেক যেকোন
অনুষ্ঠানকে ভিডিও করা শরীয়তসম্মত।
আর “মাসিক পৃথিবী” জুলাই/৯৬ইং
সংখ্যায় নিম্নলিখিত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-
প্রশ্ন :
টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখা জায়েয আছে কিনা। যদি থাকে কোন ধরণের অনুষ্ঠান দেখা জায়েয
এবং কোন ধরণের অনুষ্ঠান দেখা নাজায়েয। অনুগ্রহ করে বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
উত্তর :
টেলিভিশন একটি যন্ত্র এবং সর্বাধুনিক ও সর্বোৎকৃষ্ট প্রচার মাধ্যম। নিছক যন্ত্র
হিসেবে এর কোন দোষ নেই। এতে যেসব অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে তার
দোষগুণের উপরই নির্ভর করবে কোনটি দেখা জায়েয এবং কোনটি জায়িয নয়। নীতিগতভাবে একথা
বলা যায় যে, টেলিভিশনে যেসব অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়, তার মধ্যে যেসব অনুষ্ঠান বাস্তবে
দেখা, শোনা ও উপভোগ করা নাজায়েয তা টেলিভিশনের পর্দায়ও নাজায়েয। যেসব অনুষ্ঠান
নির্মল, নিষ্কলুষ ও শিক্ষণীয় এবং যাতে নারী সৌন্দর্য প্রদর্শিত হয়না - সর্বোপরি
ইসলামী আকীদা বিশ্বাস ও তাহযীব তামাদ্দুনের খেলাফ নয় তা দেখা বাস্তবে যেমন জায়েয
তেমনি টেলিভিশনেও জায়েয। পক্ষান্তরে যেসব অনুষ্ঠান অশ্লীল চরিত্র বিধ্বংসী এবং
ইসলামী আকীদা বিশ্বাস ও তাহযীব তামাদ্দুনের বিপরীত তা দেখা যেমন বাস্তবে না জায়েয
তেমনি টেলিভিশনের পর্দায়ও না জায়েয।
কাজেই
টেলিভিশনের সকল অনুষ্ঠান দেখা ঢালাওভাবে জায়েয কিংবা না জায়েয বলা যাবে না। বরং
টেলিভিশন এমন একটি প্রচার মাধ্যম, এর গোড়ায় যারা রয়েছেন তাদের হাতে যদি সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকে
এবং তারা যদি এ ব্যাপারে যত্নবান হন তাহলে এর মাধ্যমে জাতিকে আদর্শ নৈতিকতা ও
জাগতিক বিষয়াবলীর শিক্ষাদান এবং নিরক্ষরতা দূরীকরণসহ সার্বিক পুনর্গঠন করা এবং
সমগ্র জাতির মাঝে চিন্তার ঐক্য আনয়ন করা ও সামাজিক শান্তিশৃংখলার পরিবেশ নিশ্চিত
করা সম্ভব।
এখন আমার
সুওয়াল হলো- ভি.ডি.ও ক্যামেরা এবং টেলিভিশনে অনুষ্ঠান দেখা সংক্রান্ত মাসিক
দ্বীন-দুনিয়া এবং মাসিক পৃথিবীর উপরোক্ত উত্তরসমূহ কি পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র হাদীছ
শরীফ সম্মত হয়েছে?
জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব :
মাসিক দ্বীন দুনিয়া ও মাসিক পৃথিবীর ভিডিও ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান সংক্রান্ত
প্রদত্ত উত্তর সম্পূর্ণ মনগড়া, দলীলবিহীন ও পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ তথা
শরীয়তের খেলাফ।
কেননা
ভিডিও ও টেলিভিশনের মূল বিষয়ই হচ্ছে ছবি। যা তোলা, আঁকা, দেখা ও
দেখানো ইত্যাদি সবই হারাম ও নাজায়েয।
মহান আল্লাহ
পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
ان اشدالناس عذابا عندا الله المصورون.
অর্থ : “নিশ্চয়ই
মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে
ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বোখারী শরীফ)
তিনি আরো
বলেন,
كل مصور فى النار.
অর্থ : “প্রত্যেক
প্রাণীর ছবি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে।” (ফতহুল বারী)
পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ফিক্বাহর কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
تصویر بنانا یا بنو انا بھر حال حرام ھے خواہ دستی ھو یا عکسئی، دنون کا ایک حکم ھے-
অর্থ : “প্রাণীর
ছবি তৈরী করা বা তৈরী করানো সর্বাবস্থায়ই হারাম। চাই হাতে হোক অথবা ক্যামেরায়, উভয়ের
একই হুকুম।” (বাহারে শরীয়ত)
অর্থাৎ
ক্যামেরা, ভিডিও বা হাতে যেকোন পদ্ধতিতেই হোক না কেন, প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা এবং
রাখা, দেখা ইত্যাদি যেমন হারাম ও নাজায়েয, তেমনি তা কঠিন শাস্তি পাওয়ারও
কারণ।
অথচ এ
স্পষ্ট হারাম ও নাজায়েযকে দ্বীনের খেদমতের নাম দিয়ে উক্ত দ্বীন দুনিয়া পত্রিকায়
মানুষ তথা প্রাণীর ছবিযুক্ত যেকোন অনুষ্ঠানকে ভিডিও-ক্যামেরা করা শরীয়তসম্মত বলে
উল্লেখ করা হয়েছে। যা মূলত কুফরী হয়েছে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত
হয়েছে,
الحلال بين والحرام بين.
অর্থ : “হালাল
স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট।”
অর্থাৎ
দ্বীন ইসলামে কোনটি হালাল এবং কোনটি হারাম, তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে।
অতঃপর যদি কেউ কোন হারামকে হালাল এবং কোন হালালকে হারাম করার অপচেষ্টা চালায়, তবে তা
হবে সম্পূর্ণ কুফরী এবং সে কাফির হয়ে যাবে।
পবিত্র
কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
فيحلوا
ما حرم الله زين لهم سوء اعمالهم والله لا يهد القوم الكافرين.
অর্থ : “অতঃপর মহান
আল্লাহ পাক যা হারাম করেছেন, তারা তা হালাল করে। মূলত তাদের জন্য মন্দ বা নিকৃষ্ট আমলই
শোভন করে দেয়া হয়েছে এবং মহান আল্লাহ পাক কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না।”
অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দ্বারাই
মাসিক দ্বীন দুনিয়ার প্রদত্ত বক্তব্য অশুদ্ধ, হারাম, নাজায়েয
ও কুফরী প্রমাণিত হলো।
উল্লেখ্য, মাসিক
দ্বীন দুনিয়া পত্রিকার ন্যায় মাসিক পৃথিবীর বক্তব্যও অশুদ্ধ, নাজায়েয, হারাম ও
কুফরীমূলক হয়েছে।
যেমন
উক্ত পৃথিবী পত্রিকায় বলা হয়েছে যে, “টেলিভিশনে যেসব অনুষ্ঠান প্রচার
করা হয় ....... তেমনি টেলিভিশনেও জায়েয।”
মূলত
পৃথিবীর এ বক্তব্যও চরম জেহালতপূর্ণ, মনগড়া, দলীলবিহীন
ও কোরআন-সুন্নাহ্র পরিপন্থী। কেননা বাস্তবে দেখা ও টেলিভিশনে দেখা এক জিনিস নয়।
বাস্তবে যা দেখা যায় বা দেখা হয়, তা ছবি নয় কিন্তু টেলিভিশনে যা দেখা বা দেখানো হয়, তা হচ্ছে
ছবি। যা শরীয়তে সম্পূর্ণরূপে হারাম।
সুতরাং
বাস্তবে যেমন এক পুরুষ অপর পুরুষকে, এক মহিলা অপর মহিলাকে দেখা জায়েয।
টেলিভিশনে ছবির কারণে তা দেখা কখনোই জায়েয হবেনা, বরং সম্পূর্ণরূপে হারাম হবে। এ
ছাড়া টেলিভিশনে পুরুষ যেমন বেগানা মেয়েলোককে দেখে থাকে, তদ্রুপ
মেয়েরাও বেগানা পুরুষকে দেখে থাকে। তাও শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয।
পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন,
لعن الله الناظر والمنظور اليه.
অর্থ : “যে দেখে
এবং যে দেখায়, উভয়ের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।”
কাজেই
কোন অবস্থাতেই টেলিভিশনে প্রাণীর ছবি সংক্রান্ত অনুষ্ঠান দেখা, শোনা ও
উপভোগ করা জায়েয হবেনা। তা যতই নির্মল, নিষ্কলুষ ও শিক্ষণীয় হোক বা তাতে
যতই উপকারিতা থাকুক না কেন?
যেমন মহান
আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেছেন,
يسئلو
نك عن الخمر والميسر قل فيهما اثم كبير ومنا فع للناس واثم اكبر من نفعهما.
অর্থ : “(হে হাবীব
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
আপনি বলে দিন, মদ ও জুয়ার মধ্যে মানুষের জন্য ফায়দা রয়েছে। তবে ফায়দার চেয়ে গুণাহ্ই বড়।”
সুতরাং
মদ ও জুয়ার মধ্যে উপকারিতা থাকা সত্বেও তা যেমন গ্রহণীয় নয়, বরং
শরীয়তে হারাম। তদ্রুপ প্রাণীর ছবির মাধ্যমে প্রচারিত অনুষ্ঠানে শিক্ষণীয় বিষয় বা
উপকারিতা থাকা সত্বেও তা শরীয়তে হারাম যেহেতু শরীয়তে প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, দেখা সবই
হারাম।
অতএব, স্পষ্ট
হলো যে, মাসিক দ্বীন দুনিয়া ও মাসিক পৃথিবীর উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে অশুদ্ধ ও
শরীয়তের খেলাফ। সাথে সাথে স্পষ্ট নাজায়েয ও হারামকে জায়েয ফতওয়া প্রদানের কারণে
কুফরী হয়েছে। তাই উক্ত কুফরীমূলক মনগড়া বর্ণনা থেকে তাদের খাছ তওবা করা ফরয-ওয়াজিব।
[বিঃদ্রঃ-
বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ২৫তম সংখ্যায় মাসিক পৃথিবীর
ভুলের জাওয়াব পড়ুন। আরো বিস্তারিত জানতে হলে ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম সংখ্যা পাঠ করুন। যাতে
শত শত দলীল-আদিল্লার মাধ্যমে ছবি সংক্রান্ত বিষয়াদি হারাম, নাজায়েয
প্রমাণ করা হয়েছে।]
0 Comments:
Post a Comment