সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক ও সংশিষ্ট ঘটনা মুবারক ও শান মান ফজিলত মুবারক-
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সংক্ষিপ্ত পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক-
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার আখাছছুল খাছ মনোনীত ব্যক্তিত্ব উনাদের মধ্যে ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতম। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত এবং পূত-পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্ব। উনার ফাযায়িল-ফযীলত এবং খুছুছিয়াত মুবারক সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। উনার মুবারক শানে হুসনে যন পোষণের ব্যাপারে রয়েছে অত্যধিক তাকীদ। পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস হলো উনার পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ উনার মাস। সঙ্গতকারণেই এ মাসে উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক আলোচনা-পর্যালোচনা করা অতীব প্রয়োজন। আর এ কারণেই সংক্ষিপ্তাকারে উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক আলোচনা করা হলো।
পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চতুর্থ হিজরী সনের পবিত্র শা’বান শরীফ মাস উনার ৫ তারিখ ইয়াওমুল জুমুয়াহ বা জুমুয়াবার বা’দ আছর সম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ শহরে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার কান মুবারক-এ পবিত্র আযান মুবারক ও পবিত্র ইকামত মুবারক দিয়ে উনার জন্য দোয়া মুবারক করেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাঝে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت ابى رافع رضى الله تعالى عنه قال رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم اذن فى اذن الحسين عليه السلام حين ولدته فاطمة عليها السلام.
অর্থ: হযরত আবু রফে’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র কান মুবারকে আযান মুবারক দিতে দেখেছি। সুবহানাল্লাহ! (আল মুসতাদরাক)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপন হাত মুবারকে উনার তাহনীক্ব মুবারক করেন। উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি সেদিন যথারীতি পবিত্র আছর নামায আদায় করেন। বা’দ আছর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। অতঃপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র মাগরীব নামায আদায় করেন। উনার কোনো ওয়াক্ত নামাযই ক্বাযা হয়নি। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হুলিয়া মুবারক:
ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
عن حضرت على عليه السلام قال من سره ان ينظر الى اشبه الناس برسول الله صلى الله عليه وسلم ما بين عنقه الى وجهه فلينظر الى الحسن عليه السلام ومن سره ان ينظر الى اشبه الناس برسول الله صلى الله عليه وسلم ما بين عنقه الى كعبه خلقا ولونا فلينظر الى الحسين عليه السلام.
অর্থ- কোনো ব্যক্তি যদি পবিত্র মাথা মুবারক থেকে পবিত্র ছিনা মুবারক পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে পুরোপুরি সদৃশ কাউকে দেখে আনন্দিত হতে চায়, সে যেন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখে নেয়। আর কোনো ব্যক্তি যদি পবিত্র সিনা মুবারক থেকে পবিত্র ক্বদম মুবারক পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পুরোপুরি সদৃশ কাউকে দেখে আনন্দিত হতে চায়, সে যেন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখে নেয়। সুবহানাল্লাহ! (মু’জামুল কবীর)
অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পুরোপুরি নকশা মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র আকীক্বা মুবারক ও পবিত্র নাম মুবারক:
পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের ৭ দিন পর অর্থাৎ পবিত্র ১১ই শা’বান শরীফ স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আকীক্বা মুবারক সম্পাদন করেন। আর তিনি উনার নাম মুবারক রাখেন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ‘হুসাইন’ আলাইহিস সালাম। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عمران بن سليمان رضى الله تعالى عنه قال الحسن والحسين من اسماء اهل الجنة لم يكونا فى الجاهلية
অর্থ- হযরত ইমরান ইবনে সুলাইমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনারা জান্নাতী নাম মুবারকসমূহ হতে দুখানা নাম মুবারক। উনাদের পূর্বে আরবের জাহিলিয়াত যুগে এ দু’নাম মুবারক প্রচলিত ছিলো না। (উসদুল গবাহ)
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কুনিয়াত মুবারক হলো হযরত আবু আব্দিল্লাহ আলাইহিস সালাম।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم عقه الحسن والحسين عليهما السلام بكبشين.
অর্থ- হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আকীক্বা মুবারক করার জন্য দুটি করে দুম্বা জবাই করেন। সুবহানাল্লাহ! (মু’জামুল আওসাত)
পবিত্র শৈশব কাল মুবারক:
সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ছিলেন। তিনি উনাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দায়েমী ছোহবত মুবারক এবং পৃষ্ঠপোষকতা মুবারকে হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বেড়ে উঠেন। যা বিভিন্ন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাঝে ইরশাদ মুবারক হয়েছে। যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال خرج علينا رسول الله صلى الله عليه وسلم حسن عليه السلام وحسين عليه السلام هذا على عاتقه وهذا على عاتقه وهو يلثم هذا مرة ويلثم هذا مرة حتى انتها الينا.
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা এমন অবস্থায় বাহিরে তাশরীফ আনলেন যে, উনার এক কাঁধ মুবারক উনার উপর ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং অন্য কাঁধ মুবারক উনার উপর ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বসিয়ে ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (মসনদে আহমদ)
হাবীবী কুরবানী মুবারক উনার ফলাফল:
আল্লামা হযরত জামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ডান পার্শ¦ মুবারকে ও স্বীয় লখতে জিগার আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে বাম পার্শ¦ মুবারকে বসিয়েছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনাদের মধ্য থেকে একজনকে উনার সাক্ষাৎ মুবারক-এ নিতে চান। অতএব, আপনি উনাদের দু’জনের মধ্যে যাঁকে ইচ্ছা সাথে রাখুন আর যাঁকে ইচ্ছা উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাৎ মুবারক-এ যেতে অনুমতি দিন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাতে যান, তাহলে উনার বিরহে সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার খুবই কষ্ট হবে। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনারাও খুবই কষ্ট হবে। আর উনাদের কষ্টের কারণে আমারও অনেক কষ্ট হবে। আর সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি যদি মহান আল্লাহ পাক উনার মহান সাক্ষাতে চলে যান, তাহলে একমাত্র আমিই দুঃখ পাবো। আমি চাই- আমি একাই কষ্ট করি। সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাদের যেন কোনো কষ্ট না হয়। এজন্য নিজে দুঃখ পাওয়াটাই আমি পছন্দ করি। সুবহানাল্লাহ!
এ ঘটনার তিনদিন পর সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। এরপর থেকে যখনই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমীপে আসতেন, তখন তিনি উনাকে মুবারকবাদ দিতেন এবং উনার কপাল মুবারক-এ বুছা দিতেন এবং উপস্থিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সম্বোধন করে বলতেন, “আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য আপন আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে কুরবানী দিয়েছি।” সুবহানাল্লাহ! (শাওয়াহিদুন নুবুওওয়াত)
পবিত্র ইলম মুবারক চর্চার আনুষ্ঠানিকতা:
সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদু শাবাবী আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক পূর্ব মনোনীত। যাবতীয় নাজ নিয়ামত উনার সংস্পর্শ মুবারকে ধন্য হয়েছেন। সঙ্গতকারণে তিনি যাবতীয় ইলমসহই তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন। তথাপি বিষয়টি উম্মাহকে শিক্ষা দিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ইলম চর্চা করেছেন। যার বহু প্রমাণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে। যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে, একদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা দুখানা কাগজে কিছু বিষয় লিপিবদ্ধ করলেন। অতঃপর উনারা আম্মাজান সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট অধিক সুন্দর লিখা নির্ধারণের আরজি জানালেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন যে, আপনাদের প্রশ্নের জবাব দিবেন আপনাদের পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। আপনারা উনার নিকট গমন করুন। তখন উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার নিকট গমন করলেন এবং সেই একই বিষয়ে আরজি জানালেন। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন যে, আপনাদের কার লেখা বেশি সুন্দর তা নির্ধারণ করবেন আপনাদের নানাজান তিনি। উনারা তখন নানাজান নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গিয়ে উনাদের আরজি মুবারক পুনরাবৃত্তি করলেন।
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একখানা আপেল মুবারক নিয়ে বললেন, এই আপেলখানা উপর থেকে নিক্ষেপ করা হবে। ইহা যাঁর লিখা মুবারক উনার উপর পতিত হবে উনার লিখা মুবারক অতি সুন্দর বলে নির্ধারিত হবে। অতঃপর হাতের লিখা মুবারক উনার কাগজ মুবারক দুটির উপরে আপেলটি নিক্ষপ করা হলো। সাথে সাথে কুদরত মুবারক জাহির হলো। আপেল ফলটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে মুবারক কাগজ দুটির উপর পড়ে গেল। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উভয়ের লেখা মুবারক অতিসুন্দর বলে প্রমাণিত হলো। সুবহানাল্লাহ!
মূলত, বর্ণিত ওয়াকিয়া মুবারক দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার নিকট ইলম মুবারক চর্চার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ উনার মেহমান:
পবিত্র বিদায় হজ্জ হতে ফিরে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক গ্রহণ করেন। আর এই শান মুবারক দীর্ঘদিন পর্যন্ত জাহির করে পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার শেষ ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মারীদ্বী শান মান মুবারক গ্রহণ করেন। সকাল বেলা গোসল মুবারক করেন। হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিকট সংবাদ পাঠান এবং দীদার মুবারক হাদিয়া করেন। এ দিনটি পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ নামে মুসলিম জাহানে মশহুর। সুবহানাল্লাহ!
এই মুবারক দিনে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আপন নানাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আখাছ্ছুল খাছ দাওয়াত ও দীদার মুবারক লাভ করেন। এমনকি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে নিজ হাত মুবারকে খাইয়ে দেন। পরম স্নেহ-মমতায় অজস্রবার কোলে তুলে নেন। বারবার বুছা মুবারক প্রদান করেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে হাবীবী নিয়ামত মুবারক লাভ:
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মালিকে আনআম হিসেবেই পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তথাপি উনার বেমেছাল শান মুবারক জানান দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি বিশেষ বিশেষ ওয়াকিয়া মুবারক সংঘটিত করেছেন। যা দ্বারা কেবল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। তেমনিভাবে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে হাবীবী নিয়ামত মুবারক লাভ করেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت فاطمة عليها السلام انها اتت بالحسن عليه السلام والحسين عليه السلام ابها رسول الله صلى الله عليه وسلم فى شكواة التى مات فيها فقالت تورثهما يا رسول الله صلى الله عليه وسلم شيئا فقال اما الحسن عليه السلام فله هيبتى و سوددى واما الحسين عليه السلام فله جراتى وجودى.
অর্থ- সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার থেকে ইরশাদ মুবারক হয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিদায়ী শান মুবারক প্রকাশের পূর্বে উনার নিকট সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে আসলেন এবং বললেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনাদেরকে বিশেষ হাদিয়া মুবারক প্রদান করুন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য আমার প্রভাব প্রতিপত্তি ও ইমামত মুবারক। আর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য আমার বীরত্ব ও দানশীলতা মুবারক। (তাবরানী শরীফ)
অপর বর্ণনায় এসেছে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য আমার দৃঢ়তা ও ইমামত মুবারক। আর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য আমার শক্তি ও দানশীলতা মুবারক। সুবহানাল্লাহ! (তাবরানী শরীফ)
সম্মানিত নানাজান তিনি সুমহান পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পরবর্তী সময়:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি ছয় (৬) মাস দুনিয়ার যমীনে অবস্থান মুবারক করেন। এ সময়ে হাবীবী বিরহে তিনি বিভোর হয়ে সময় অতিবাহিত করেন। সর্বদা পবিত্র রওযা শরীফ উনার নিকট অবস্থান করতেন। আর সেই সময়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি পিতা ও বড় ভাই উনাদের সাথে একত্রিত হয়ে উনার আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দেন। যদিও তিনি দুনিয়াবী দৃষ্টিতে তখন মাত্র সাড়ে ছয় বৎসরের বালক।
অপরদিকে সেই সময়ে সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে দেখে দেখে চক্ষু মুবারক শীতল করতেন। হাবীবী বিরহের যন্ত্রণা লাঘবের প্রচেষ্টা চালাতেন। কারণ উনারা ছিলেন পুরোপুরিভাবে নকশায়ে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ!
প্রথম খলীফা উনার খিলাফতকালে:
আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালের প্রথম ছয় মাস সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দেয়ার কারণে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। যার কারণে খলীফা উনার প্রতি মনোনিবেশ করার ফুরসত উনারা পাননি। অতঃপর সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিসহ সম্মানিত খলীফা উনার বাইয়াত মুবারক গ্রহণ করেন এবং খিলাফত উনার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
দ্বিতীয় খলীফা উনার খিলাফত মুবারককালে:
আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারককালে হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ, তাফসীর, ফিক্বাহ উনাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। যদিও উনার দুনিয়াবী বয়স মুবারক অল্প ছিলো। উনার পৃষ্ঠপোষকতা মুবারকে রঈসুল মুফাসসির হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ অনেক মশহুর ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠেন। আর এই সময়ে স্বয়ং খলীফা উনাকে গোলামীয়ত প্রদানের ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়।
তৃতীয় খলীফা উনার খিলাফত মুবারককালে:
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারককালে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি খিলাফত উনার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দায়িত্ব পরিচালনার পাশাপাশি দরস-তাদরীসের ব্যাপক আঞ্জাম দেন। এমনকি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার প্রতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। বর্ণিত আছে, সেই সময়ে তিনি স্বয়ং নিজে খলীফা উনার পবিত্র হুজরা শরীফ উনার নিরাপত্তা প্রদানের নিমিত্তে টানা কয়েক দিন অবস্থান মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র শাদী মুবারক:
ঐতিহাসিকগণের বর্ণনা অনুযায়ী, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দু’জন বা তিনজন আহলিয়া আলাইহিমাস সালাম ছিলেন।
আনুষ্ঠানিক খিলাফত মুবারক ও ইমামত মুবারক লাভ:
লাখতে জিগারে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইমামে মাদারযাদ। তথাপি বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে উনার বেমেছাল ফযীলত মুবারক উনার উন্মেষ ঘটানো হয়েছে। আনুষ্ঠানিক খিলাফত মুবারক ও ইমামত মুবরক লাভের বিষয়টি কেবল তারই ধারাবাহিকতা।
৪৯ হিজরী সনের পবিত্র ২৮শে সফর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনাকে মুনাফিকরা হিরক চূর্ণের ন্যায় জঘন্য বিষ পান করায়। পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশের পূর্ব মুহূর্তে তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সিনা ব-সিনা যাহিরী-বাতিনী নিয়ামতরাজি মুবারক হাদিয়া করেন। আর এভাবেই উনার ইমামত মুবারক উনার আনুষ্ঠানিক অভিষেক সম্পন্ন হয়।
পবিত্র হিজরত মুবারক:
মুসলিম মিল্লাতকে যাহিরী-বাতিনী ইলম, বিলায়েত, কামালত হাদিয়া করতঃ খালিছ আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী বানাতে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেকে সর্বদা ব্যাপৃত রাখতেন। মসজিদে নববী শরীফে উনার তালীম-তালকীন ও দরস-তাদরীস আর ফয়েজ মুবারক বিতরণ নিত্য চালু ছিলো। পরশমণির মুবারক ছোহবত লাভের জন্য সর্বদা ভিড় লেগেই থাকতো। কিন্তু রহমতী মজলিস হতে উম্মাহকে বদবখত যালিম ইয়াযীদের জন্য মাহরুম হতে হয়েছে।
৬০ হিজরী সনে ইয়াযীদ সিংহাসনে আরোহণ করে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাইয়াত দাবি করে। কিন্তু কাফির ইয়াযীদের প্রতি বাইয়াত হতে তিনি অস্বীকার করেন। তাই উনার বাইয়াত আদায় করতে ইয়াযীদ বাহিনীর লোকেরা উনার প্রতি চাপ সৃষ্টি করে। যার কারণে তিনি ৬০ হিজরী সনের ৪ঠা পবিত্র শা’বান শরীফ সম্মানিত মদীনা শরীফ হতে পবিত্র মক্কা শরীফে হিজরত মুবারক করেন। অতঃপর শত শত চিঠির মাধ্যমে কুফাবাসী কর্তৃক আকুল আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩রা যিলহজ্জ শরীফ তিনি উনার আহাল-ইয়াল আলাইহিমুস সালামসহ ৭২ মতান্তরে ৮২ জন উনাদের এক কাফেলা পবিত্র মক্কা শরীফ হতে কুফার উদ্দেশ্য নিয়ে রওয়ানা দেন।
কারবালার প্রান্তরে:
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারবালার প্রান্তরে তাশরীফ, জিহাদ, শাহাদাত মুবারক প্রতিটি বিষয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন। তথাপি প্রতিটি বিষয়ই বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। কিন্তু কলাম বর্ধিত হওয়ার আশঙ্কায় আলোচনা করা সম্ভব নয়। তবে সারমর্ম হলো, পবিত্র মুহররমুল হারাম মাস উনার প্রথম দিকেই ইয়াযীদ বাহিনীর সৈন্যরা কাফিলাসহ উনাদের প্রতি যুলুম শুরু করে। যুলুমের চূড়ান্ত পর্যায়ে দুগ্ধপোষ্য সাইয়্যিদুনা হযরত আলী আছগর আলাইহিস সালাম তিনিসহ উনারা অনেকেই পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। নাঊযুবিল্লাহ!
[মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ গবেষণা কেন্দ্র হতে প্রকাশিত ‘কারবালার হৃদয় বিদারক ইতিহাস’ নামক কিতাব মুবারকে এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।]
আনুষ্ঠানিক খিলাফত মুবারক প্রদান:
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ উনার পূর্ব মুহূর্তেও উম্মতের জন্য দুয়া, দয়া করেছেন। অনুরূপভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও কারবালার প্রান্তরের কঠিন মুহূর্তেও মুসলিম উম্মাহর তাযকীয়াহ ও নাজাতের বিষয়টি চিন্তা করেছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশের ঠিক পূর্বে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনার নিকট উম্মাহর দায়িত্ব অর্পণ করেন। জাহিরী-বাতিনী নিয়ামতরাজি সিনা ব-সিনা সোপর্দ করেন। আর এভাবেই তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে খিলাফত ও ইমামত প্রদান করেন। যার কারণে ইলমে তাছাওউফসহ ইলম উনার প্রতিটি শাখায় উনার সিলসিলা মুবারক অদ্যাবধি জারি রয়েছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ:
৬১ হিজরী সনের ১০ই মুহররমুল হারাম পবিত্র আশূরা শরীফে পবিত্র জুমুয়াবার জুমুয়াহ নামাযের ওয়াক্তে সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করেন। উনার জিসম মুবারকে ২১টি তীর, ৩৪টি বর্শা এবং ৪০টি তলোয়ারের আঘাত বিদ্ধ হয়। উনার পবিত্র শাহাদাত মুবারকের কারণে বেহুঁশ মানুষ ও জিন ব্যতীত সারা মাখলুকাতে শোকের ছায়া নেমে আসে। রক্তবৃষ্টি, গায়েবী কান্না ধ্বনি, পানি রক্তে পরিণত হওয়া, মাটি ও পাথর হতে রক্ত বের হওয়া, সূর্য গ্রহণ হওয়া ইত্যাদি তারই বাস্তব প্রমাণ। [এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ গবেষণা কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত “কারবালার হৃদয় বিদারক ইতিহাস” কিতাব মুবারক পাঠ করা অত্যন্ত জরুরী।]
পরিশিষ্ট:
মূলত সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক জানা, উনার প্রতি হুসনে যন রাখা এবং উনার সীরাত মুবারক হতে ইবরত-নছীহত মুবারক গ্রহণ করা সকলের জন্য ফরয। কেননা উনার মুহব্বত পবিত্র ঈমান উনার মূল। উনার ইতায়াত আমলের মূল। আর উনারই রেযামন্দি মুবারক নাজাতের মূল। মহান বারী তায়ালা তিনি মুসলিম মিল্লামতকে উনার প্রতি মুহব্বতের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর তাওফীক দান করুন।
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে মনোনীত এবং পবিত্র ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দলীল অনুযায়ী হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের স্বপ্ন মুবারকও যেখানে পবিত্র ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত সেখানে উনাদের জাগ্রত অবস্থার বিষয়গুলো কি পবিত্র ওহী মুবারক উনার বাইরে ছিল? কখনই নয়। যদি তাই হয় তাহলে পবিত্র ওহী মুবারক উনার ফায়সালাকৃত বিষয়ের জন্য উনাদেরকে দোষারোপ করা কি করে শুদ্ধ হতে পারে?
কাজেই, উনাদের সাথে যদি ভুল বা গুনাহর বিষয়টি সম্পৃক্ত করা হয় তাহলে একইসাথে এটাও সম্পৃক্ত হয়ে যায় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনিই পবিত্র ওহী মুবারক নাযিলে ভুল করেছেন এবং তিনিই উনাদেরকে গুনাহ করিয়েছেন। নাঊযুবিল্লাহ! যা চিন্তা-কল্পনা করাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
মানুষ সঠিক ইতিহাস না জানার কারণে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকে বেয়াদবিমূলক কুফরী কথা-বার্তা বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে কতটুকু আদব রক্ষা করতে হবে, সে প্রসঙ্গে কিতাবে ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত ইমাম সাররি সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ঘটনা উল্লেখ করা হয়, যিনি উনার যামানায় মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ ছিলেন। যিনি ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত ছিলেন। তিনি একবার স্বপ্নে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নবী হযরত ইয়া’কুব আলাইহিস সালাম উনাকে দেখেন। দেখে তিনি পরিপূর্ণ আদবের সাথে প্রশ্ন করেছিলেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নবী হযরত ইয়া’কুব আলাইহিস সালাম! আপনার অন্তরে মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত সত্যিকারভাবেই প্রবল রয়েছে তা সত্বে আপনি কি করে আপনার ছেলে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার জুদায়ীর (বিচ্ছেদের) কারণে উনার মুহব্বতে চল্লিশ বছর যাবৎ কেঁঁদে কেঁদে আপনার চক্ষু মুবারক নষ্ট করেছিলেন? একথা বলার সাথে সাথে গইব থেকে নেদা (আওয়াজ) হলো, “হে সাররি সাকতী! সতর্কতার সাথে হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকে কথা বলুন।” এরপর হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার সামনে পেশ করা হলে তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়ে যান এবং এভাবে একাধারা তের দিন তের রাত বেহুঁশ থাকার পর হুঁশ ফিরে পান। তখন গইব থেকে পুনরায় নেদা হয়, “মহান আল্লাহ পাক উনার নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকে এ ভাবে কথা বললে এরূপই অবস্থা হয়ে থাকে।” সুবহানাল্লাহ! (তাযকিরাতুল আউলিয়া)
উপরোক্ত ওয়াকিয়ার দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে কি পরিমাণ আদবের সাথে কথা বলতে হবে এবং উনাদের সাথে বেয়াদবির কি পরিণতি? সত্যিই তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়। বেয়াদব সম্পর্কে হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
بے ادب محروم گشت از لطف رب.
অর্থ: “বেয়াদব মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে বঞ্চিত।” (মসনবী শরীফ)
উল্লেখ্য যে, হযরত ইমাম সাররি সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত ও মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ওলী হওয়া সত্বেও উনার প্রতি সতর্কবাণী ও সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছে। উনার ওয়াকিয়া বা ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি কি পরিমাণ আদব রক্ষা করা উচিত।
মূলত, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ভুল করা তো দূরের কথা, কোন প্রকার অপছন্দনীয় কাজও উনারা করতেন না। বরং সর্বপ্রকার অপছন্দনীয় কাজ থেকেও উনারা বেঁচে থাকতেন বা পবিত্র থাকতেন, সে প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সীরত মুবারক থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়- “একবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুজরা শরীফে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাত মুবারক করার অনুমতি চাইলেন। এ সংবাদ উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছালেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সে ব্যক্তিকে অপেক্ষা করতে বলুন। একথা বলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পাগড়ী মুবারক, জামা বা কোর্তা মুবারক ইত্যাদি গুছগাছ করে নিলেন। এমনকি হুজরা শরীফ থেকে বের হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে পানির গামলাতে নিজের চেহারা মুবারক দেখে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। তা দেখে সে সময় উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিও কি এরূপ করেন? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “কিরূপ করি?” উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, “এরূপ পরিপাটি।” এর জাওয়াবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নবী। আমাদের কোন কাজ কারো অপছন্দ হলে, সে ঈমান হারা হয়ে যাবে।” (আল্ মুরশিদুল আমীন)
অতএব, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যে কতটুকু অপছন্দনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকতেন, এ হাদীছ শরীফ উনার বর্ণিত ঘটনা তারই প্রমাণ। তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে বা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ভুল-ত্রুটি করেছিলেন? বস্তুতঃ এরূপ আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী।
কাজেই, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকের খিলাফ কোন অর্থ গ্রহণ করা যাবেনা বরং এমন অর্থ ব্যবহার বা গ্রহণ করতে হবে, যাতে উনাদের শান মুবারক সমুন্নত থাকে।
যেমন পবিত্র সূরা আনআম ৭৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তরজমা বর্ণনায় অনেকে মূর্তিপূজক আযর নামক ব্যক্তিটিকে হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিতা বলে উল্লেখ করে থাকে। যা সম্পূর্ণরূপে ভুল ও কুফরী। কেননা তা মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এবং সর্বোপরি সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পবিত্রতম শান বা মর্যাদা মুবারক উনার প্রকাশ্য বিরোধী।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وتقلبك فى الساجدين
অর্থ : মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে) সিজদাকারীগণ উনাদের মধ্যে স্থানান্তরিত করেছেন। (পবিত্র সূরা শুআরা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৯)
এ পবিত্র আয়াতে কারীমা দ্বারা প্রতীয়মান হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ব পুরুষ আলাইহিমুস সালাম এবং পূর্ব মহিলা আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সকলেই পরিপূর্ণ ঈমানদার ও দ্বীনদার ছিলেন। উনাদের কেউই কাফির মুশরিক ছিলেন না।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لـم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات
অর্থ : আমি সর্বদা পূতঃপবিত্র পুরুষ ও মহিলা উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছি। (তাফসীরে কবীর)
এছাড়া আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হচ্ছে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কারো পিতা ও মাতা উনারা কেউই কাফির-মুশরিক ছিলেন না। তাহলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ব পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা তিনি কি করে মূর্তিপূজক তথা মুশরিক হতে পারেন!
অতএব বলার অপেক্ষা রাখেনা, উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আযর নামক ব্যক্তিটি আসলে উনার পিতা ছিলো না; বরং উনার চাচা ছিল। সুতরাং উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ابيه অর্থ উনার পিতা নয় বরং উনার চাচা। আর উনার পিতা হচ্ছেন হযরত তারাহ আলাইহিস সালাম।
অনুরূপভাবে সূরা ত্ব-হা শরীফ উনার ১২১নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শেষাংশে
وعصى ادم ربه فغوى
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তরজমা বর্ণনায় অনেকে বলে থাকে যে, হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম তিনি উনার পালনকর্তার আদেশ লঙ্ঘন করলেন, ফলে তিনি পথভ্রান্ত হয়ে গেলেন। নাউযুবিল্লাহ!
এ তরজমা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ হওয়ার কারণে প্রকাশ্য কুফরী। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হচ্ছে সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা পবিত্র ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। উনারা পবিত্র ওহী মুবারক ছাড়া কোন কথা বলেননি এবং কোন কাজ করেননি। তাই উনারা সমস্ত গুনাহখতা, ভুল-ভ্রান্তির উর্ধ্বে। উনারা মা’ছূম বা নিষ্পাপ। তাছাড়া হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নবী-রসূল হিসেবেই সৃষ্টি করা হয়েছে। কাজেই, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী বা অবাধ্যতাজনিত কাজ সংঘঠিত হয় কি করে এবং তিনি পথভ্রান্ত বা পথহারা হন কি করে?
প্রকৃতপক্ষে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ছহীহ অর্থ হচ্ছে, হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম তিনি উনার রব তায়ালা উনার আদেশ মুবারক পালন করলেন অতঃপর যমীনে তাশরীফ আনলেন। অর্থাৎ ফরমাবরদারী করে জমিনে তাশরীফ মুবারক আনলেন।
একইভাবে সূরা দ্বুহা শরীফ উনার ৭নং পবিত্র আয়াত শরীফ-
ووجدك ضالا فهدى
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তরজমা বর্ণনায় অনেকেই বলে ও লিখে থাকে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পথহারা পেয়েছেন অতঃপর পথ প্রদর্শন করেছেন। নাউযুবিল্লাহ!
এ তরজমা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে জঘণ্য কুফরীর শামিল। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো সৃষ্টিই হয়েছেন মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হিসেবে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে; যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে।
সুতরাং যিনি সৃষ্টিই নবীউল্লাহ, রসূলুল্লাহ, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে তিনি পথহারা, বিভ্রান্ত হন কি করে! এ তরজমা কোন মুসলমান করতে পারেনা। কেউ করলে তাকে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। অন্যথায় জাহান্নাম ব্যতীত তার জন্য কোন জায়ঠিকানা থাকবে না।
প্রকৃতপক্ষে উক্ত আয়াত শরীফ উনার সঠিক অর্থ হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে কিতাববিহীন পেয়েছেন অতঃপর কিতাব প্রদান করেছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী উনাদেরকে রাবী বলা হয়। এই রাবীগণ উনাদের মধ্যে যাঁরা প্রথম শ্রেণীর রাবী, উনাদেরকে বলা হয় ছেক্বাহ রাবী।
পবিত্র হাদীছ শরীফ বিশারদগণ উনারা ছেক্বাহ্ রাবী হওয়ার জন্য যে মানদ- নির্ধারণ করেছেন, তার মধ্যে মূল বিষয় হচ্ছে- (১) আদালত ও (২) জব্ত। জব্ত হচ্ছে- প্রখর স্মরণশক্তি। তা এমন যে, একবার শুনলে আর ভুলেনা। আর আদালত-এর মধ্যে যে শর্তসমূহ রয়েছে, তার মধ্যে প্রধান হলো দু’টি। যথা- (ক) তাক্বওয়া, (খ) মুরুওওয়াত। (ক) তাক্বওয়া হচ্ছে- কুফর-শিরক, বিদ্য়াত ও ফাসিকী কাজ থেকে বেঁচে থাকার সাথে সাথে কবীরাহ গুণাহ থেকে, এমনকি ছগীরাহ গুণাহও বার বার করা থেকে বেঁচে থাকা। পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্পর্কে মিথ্যা না বলা। সাধারণ কাজে মিথ্যা না বলা। অজ্ঞাতনামা না হওয়া, অপরিচিত না হওয়া। গাফলতী না থাকা। বদ আক্বীদা সম্পন্ন না হওয়া। বে-আমল না হওয়া। (খ) আর মুরুওওয়াত হচ্ছে- অশ্লীল-অশালীন, অশোভনীয়, অপছন্দনীয় আচার-আচরণ, উঠা-বসা, চাল-চলন, যেখানে-সেখানে ইস্তিঞ্জা করতে বসা, হাট-বাজারে গিয়ে চিৎকার করা, রাস্তা-ঘাটে লোকজনের সাথে অনর্থক ঝগড়া-ঝাটি করা ও তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া এমনকি দৃষ্টিকটু কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন- রাস্তায় হেঁটে হেঁটে খাদ্য খাওয়া, রাস্তায় অট্টহাস্য করা, চিৎকার করা ইত্যাদি। (তাদরীবুর রাবী, মুকাদ্দামাতুশ শায়েখ, মীযানুল আখবার, নূরুল আনোয়ার, মুকাদ্দামাতুল মিশকাত)
এখন ফিকিরের বিষয় এই যে, পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী ছেক্বাহ্ রাবী যদি এত গুণ ও যোগ্যতাসম্পন্ন এবং তাক্বওয়াধারী হন অর্থাৎ পবিত্র হাদীছ শরীফ বিশারদ এই উম্মতের নিকট যদি ছেক্বাহ রাবী হিসেবে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী হওয়ার জন্য ছগীরাহ্ গুণাহ্ বার বার না করা ও দৃষ্টিকটু সাধারণ অপছন্দনীয় কাজও না করা শর্ত হয়, তাহলে যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হবেন এবং মহান আল্লাহ্ পাক উনার কালাম বর্ণনা করবেন, উনাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি কি মানদ- নির্ধারণ করেছেন বা উনাদের ক্ষেত্রে কি পরিমান মা’ছূম ও মাহ্ফূজ হওয়া নির্দিষ্ট করেছেন তা অনুধাবনীয়।
অতএব, যে কোন লোকের জন্যই হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের শান মুবারক উনার বিন্দুমাত্র খিলাফ কথাবার্তা বলা সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। এ ধরণের কুফরী আক্বীদা থেকে বেঁচে থাকা সমস্ত মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয।
সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার ফাযায়িল-ফযীলত-
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
وَلِلَّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَلَكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَعْلَمُونَ
অর্থ: “সমস্ত ইজ্জত সম্মান মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মু’মিনগণ উনাদের। কিন্তু মুনাফিকরা এ ব্যাপারে কিছুই জানে না।” (পবিত্র সূরা মুনাফিকুন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)
সেক্ষেত্রে যে সকল মু’মিন-মু’মিনাহ উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের যতবেশি তায়াল্লুক-নিসবত, নৈকট্য প্রাপ্ত, উনারা ততবেশি সম্মান-মর্যাদা ও ইজ্জতের অধিকারী।
সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ ব্যাপারে অগ্রগামী। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সর্বাধিক তায়াল্লুক, নিসবত ও নৈকট্যপ্রাপ্ত। শুধু তাই নয়, তিনি এমনই তায়াল্লুক নিসবত, নৈকট্য পেয়েছেন যে, উনার মুহব্বত সম্মানিত ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। উনাকে তা’যীম-তাকরীম করা, উনার খিদমত করা ফরযের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই উনার শান, মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুজুর্গী, ইজ্জত, সম্মান সম্পর্কে ইলম অর্জন করা ফরয। কেননা তিনি হচ্ছেন হযরত আহলি বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের তৃতীয় ইমাম। বিশিষ্ট ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভুক্ত।
কাজেই উনার শান-মানের খিলাফ কথা বলা, বিদ্বেষ পোষণ করা, বিরূপ মন্তব্য করা ইত্যাদি প্রতিটি কাট্টা কুফরী। চির জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى
অর্থ: “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি জানিয়ে দিন, আমি তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় চাচ্ছি না। আর চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়; তোমাদের পক্ষে দেয়াও কস্মিনকালে সম্ভব নয়। তবে তোমরা যদি ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে চাও; তাহলে তোমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে, আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়া।” (পবিত্র সূরা শুরা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ-২৩)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন। সাইয়্যিদুল মুরালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
احبوا الله لما يغندوكم من نعمة واحبونى لحب الله واحبوا اهل بيتى لحبى.
অর্থ: “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো। কেননা তিনি তোমাদেরকে উনার নিয়ামতরাজি থেকে বিশেষভাবে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে থাকেন। আমাকে মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত পাওয়ার জন্য আমাকে মুহব্বত করো। আর আমার মুহব্বত পাওয়ার জন্য আমার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
হযরত ইয়ামা ইবনে মুররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
حسين منى وانا من حسين احب الله من احب حسينا حسين سبط من الاسباط.
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি আমার থেকে আর আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার থেকে। যে ব্যক্তি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনাকে মুহব্বত করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে মুহব্বত করবেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি বংশধারাসমূহের মধ্যে একটি বিশেষ বংশধারা মুবারক।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
আমিরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন-
الحسن اشبه رسول الله صلى الله عليه وسلم مابين الصدر الى الرأس والحسين اشبه النبى صلى الله عليه وسلم ماكان اسفل من ذالك.
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (ছুরত বা আকৃতি মুবারক দিক থেকে) মাথা মুবারক থেকে বক্ষ মুবারক পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সদৃশ্যপূর্ণ। আর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বক্ষ মুবারক উনার নিচের অংশের সাথে সদৃশ্যপূর্ণ।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
হযরত বুরায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা মুবারক দিচ্ছিলেন। এমন সময় সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সেখানে উপস্থিত হলেন। উনাদের উভয়ের জিসিম মুবারকে গন্ধম রঙের দুটি জামা মুবারক ছিল।
উনারা এমনভাবে চলতেছিলেন যেন পড়ে যাচ্ছিলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মিম্বর মুবারক থেকে নেমে গেলেন এবং উনাদেরকে নিয়ে এসে নিজের সামনে বসালেন। আর বললেন- মহান আল্লাহ পাক তিনি সত্যই বলেছেন- “তোমাদের সম্পদসমূহ ও সন্তানসমূহ ফিতনা বা পরীক্ষা।”
আমি উনাদের দু’জনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে, উনারা হাঁটতেছেন এবং পড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছেন। এটা দেখে আমি স্থির থাকতে পারলাম না। অবশেষে আলোচনা মুবারক বন্ধ করে দিলাম এবং উনাদেরকে উঠিয়ে আনলাম। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু তিনি বলেন- একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো- আপনি আপনার আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে কাকে সর্বাধিক বেশি মুহব্বত করেন? তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে। পরে তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার উদ্দেশ্যে বললেন- আমার পুত্রদ্বয়কে ডেকে দিন। উনাদেরকে ডেকে দেয়া হলো। উনারা চলে আসলে তিনি উনাদেরকে শুকতেন (বুছা মুবারক দিতেন) এবং উভয়কে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরতেন। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ان الحسن والحسين هما ريحانى من الدنيا.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা দুইজন দুনিয়াতে আমার দুইটি সুগন্ধময় ফুলস্বরূপ।” (তিরমিযী শরীফ)
বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
الحسن والحسين سيدا شباب اهل الجنة.
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা দুইজনই জান্নাতী যুবকগণের সাইয়্যিদ।” (তিরমিযী শরীফ)
হযরত উসামা ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই বলে দোয়া মুবারক করলেন যে,
اللهم انى احبهما فاحبهما واحب من يحبهما.
অর্থ: “হে মহান আল্লাহ পাক! আমি উনাদের দুইজনকে মুহব্বত করি। আপনিও উনাদেরকে মুহব্বত করুন। আর যারা উনাদের দুইজনকে মুহব্বত করবে, আপনি তাদেরকেও মুহব্বত করুন।” (তিরমিযী শরীফ)
একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলি ল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আপন ডান জানু মুবারকে এবং ক্বায়িম-মাক্বামে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনাকে বাম জানু মুবারকে বসিয়ে রেখেছিলেন।
এমতাবস্থায় হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হাজির হয়ে বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের দু’জনকে আপনার নিকট একত্রে রাখতে চান না। উনাদের একজনকে ফিরিয়ে নিতে চান। এখন আপনি উনাদের যে মহান ব্যক্তিত্বকে ইচ্ছা করেন নিজের কাছে রাখতে পারেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বিদায় নিলে উনার বিরহ ব্যাথ্যায় সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি ও আসাদুল্লাহি গালিব সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনারা ব্যাথিত হবেন। সাথে সাথে আমিও ব্যাথিত হবো।
আর ক্বায়িম-মাক্বামে রসূলিল্লাহ ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রবি’ আলাইহিস সালাম তিনি বিদায় নিলে শুধুমাত্র আমার একটি প্রাণ মুবারক দগ্ধ হবে। তাই আমি নিজের দুঃখই চেয়েছিলাম।
এই ঘটনার তিনদিন পর ক্বায়িম-মাক্বামে রসূলিল্লাহ, ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রবি’ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তীতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখনই সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার কাছে আসতেন, তখনই তিনি উনার কপাল মুবারকে বুছা দিতেন এবং “খোশ আমদেদ” জানাতেন। আরো বলতেন- আমি আপনার জন্য আপন আওলাদ আলাইহিস সালাম উনাকে বিসর্জন (কুরবানী) দিয়েছি।
হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাদের সবাইকে উনাদের হাক্বীক্বী মুহব্বত দান করুন। আমীন!
ইয়াযীদকে খলীফা মনোনয়ন এবং কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে নববী কাননের সুরভিত গোলাপ, জলীলুল ক্বদর ছাহাবী, কাতিবে ওহী, ছাহিবে সির হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার যারা সমালোচনা করে, উনাকে নাক্বিছ বলে, উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে তারা সকলেই কাট্টা কাফির এবং জাহান্নামের স্থায়ী বাসিন্দা-
সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, ইমামুছ ছালিছ, মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার মর্মান্তিক শাহাদাতকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ নববী কাননের সুরভিত গোলাপ, কাতিবে ওহী, ছাহিবে সির, জলীলুল ক্বদর ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সমালোচনা করে থাকে এবং উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সীমাহীন শান, মান, মাক্বাম ও মুবারক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অজ্ঞানতা, খাছ করে কাতিবে ওহী, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অতুলনীয় ফাযায়িল, ফযীলত, বুযুর্গী, মান, শান সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং বিধর্মী, বাতিল গোষ্ঠী, উলামায়ে সূ’দের কুমন্ত্রণা ও নেপথ্য কারসাজিই এর মূল কারণ। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নুবুওওয়াত ও রিসালত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার ৫ বছর পূর্বে আরবের অভিজাততম কুরাইশ বংশের বনু উমাইয়া শাখায় হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ। সুবহানাল্লাহ! তিনি সুদীর্ঘ ১৯ বছর খিলাফত উনার দায়িত্ব পালন করেন। উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ ৭৮ বছর বয়স মুবারকে ষাট হিজরী সনে।
খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার গুপ্তভেদ জানার মতো ছাহাবী।” সুবহানাল্লাহ! তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন- “হে আল্লাহ পাক! হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পথপ্রদর্শক ও পথপ্রাপ্ত করে দিন এবং উনার মাধ্যমে মানুষকে হিদায়েত দান করুন।” সুবহানাল্লাহ!
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন: “আমার উম্মতের প্রথম যে সৈন্যদলটি নৌ-অভিযানে অংশ নিবে, তারা নিজেদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে নিবে।” সুবহানাল্লাহ!
হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ২৭ হিজরী সনে নৌবাহিনীযোগে সর্বপ্রথম সাইপ্রাস অভিযান শুরু করেন। খলীফায়ে ছালিছ, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নির্দেশে তিনিই প্রথম ইসলামী ফৌজের জন্য নৌবহর তৈরি করে মুসলমান উনাদের মধ্যে নৌযুদ্ধের গোড়াপত্তন করেন। মিথ্যা নবী মুসায়লামা হত্যার গৌরবময় অবদানে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সহযোগী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ইসলাম উনার ইতিহাসে ৪১ হিজরী বর্ষ ‘ঐক্যবর্ষ’ হিসেবে আখ্যালাভ করেছে। এ ব্যাপারে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মুবারক অবদান ও ভূমিকার গুরুত্ব সীমাহীন। সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, ইমামুছ ছানী, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গে সন্ধি স্থাপনের মুবারক সিদ্ধান্তে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সন্ধিনামায় স্বাক্ষর মুবারক করে সীলমোহরসহ ওই কাগজ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিদমতে এই বলে পাঠিয়ে দেন- “হে আওলাদুর রসূল হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম! এই সাদা কাগজের নিচে আমার দস্তখত ও সীলমোহর রয়েছে। আপনি দয়া করে নিজের ইচ্ছেমতো যে কোনো শর্ত এতে লিখে দিন। আমি আগাম মঞ্জুর করে নিলাম।” সুবহানাল্লাহ! সন্ধি স্থাপনের এমন সুমহান নজির দুনিয়ায় পূর্বে, বর্তমানে ও আগামীতে কখনোই খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেসব নাদান, কমবখত, বদনসীব ও বাতিল গোষ্ঠী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সমালোচনা করে, উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে তাদের জিহ্বার গোড়া কেটে দেয়া দরকার। ৪১ হিজরী সনে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এক লক্ষ দিরহাম ভাতা নির্ধারণ করেন।
ইয়াযীদের অপরাধের জন্য হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি দোষারোপ করা নাজায়িয ও কুফরী। মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তিনি কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন- “একজনের পাপের বোঝা অন্যজন বহন করবেনা।” (পবিত্র সূরা আনয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ-১৬৪)
ইয়াযীদকে যখন শাসন ক্ষমতা দেয়া হয়, তখন সে উপযুক্তই ছিলো। এক খুতবায় হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দুআ’ করেন- “হে আল্লাহ পাক! খিলাফতের যোগ্য বিবেচনা করেই যদি ইয়াযীদকে মনোনয়ন দিয়ে থাকি, তাহলে তার অনুকূলে আমার এ সিদ্ধান্তকে আপনি দয়া করে পূর্ণতা দান করুন। পক্ষান্তরে পুত্রের প্রতি মোহ ও দুর্বলতাই যদি হয় এর কারণ, তাহলে আপনি তা ব্যর্থ করে দিন।” এ বিষয়ে অন্য এক খুতবায় কিছুটা ভিন্ন ভাষায় তিনি দোয়া করেন: “হে আল্লাহ পাক! ইয়াযীদকে যদি তার যোগ্যতার কারণেই মনোনীত করে থাকি, তাহলে সে মর্যাদায় তাকে আপনি উন্নীত করুন এবং তাকে মদদদান করুন। আর যদি পুত্রের প্রতি পিতার সহজাত মমতাই এ কাজে আমাকে প্ররোচিত করে থাকে, তাহলে আগেভাগেই তাকে আপনি তুলে নিন।”
আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো- হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিয়তের বিশুদ্ধতার প্রতি লক্ষ্য করা। শরীয়ত যেখানে জীবিতকালেও কারো নিয়তের উপর হামলা করার অনুমতি দেয়নি, সেখানে সুদীর্ঘ ১৪শ বছর পর মজলুম ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিয়তের উপর হামলা করার সুযোগ কোথায়? উনার সমালোচক এবং উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীদের জন্য হযরত ইমাম শিহাবুদ্দীন খাফ্্ফাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যা বলেছেন, তা পুরোপুরিভাবেই প্রযোজ্য। তিনি বলেছেন- “যে ব্যক্তি আমীরুল মু’মিনীন, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, সে হাবিয়া দোযখের কুকুরসমূহের মধ্যে একটি কুকুর।” নাঊযুবিল্লাহ!
সব অসুখ ভালো হলেও ধোলাইকৃত মগজ আর কোনোদিনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না। তাই অল্পদামে কেনা ইহুদী, নাছারা, মুশরিকদের গোলাম, তাদের কেনা পোষ্য, ক্রনিক ব্যারামে আক্রান্ত ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে সূ’রা এবং ইসলামবিদ্বেষী আঁতেলরা নববী কাননের সুরভিত গোলাপ হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিরোধিতায় সর্বক্ষণ তৎপর। নাঊযুবিল্লাহ! জলীলুল ক্বদর ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মুবারক জীবনের শ্রেষ্ঠতম বছরগুলো কেটেছে রোম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে জিহাদের ময়দানে এবং সম্মানিত ইসলামী খিলাফত উনার সীমান্ত পাহারায় খোলা তরবারি হাত মুবারকে আরবী ঘোড়ার পিঠে। তিনি সম্মানিত ইসলামী খিলাফত উনার সবুজ মানচিত্রে ক্রমান্বয়ে যোগ করে নেন সুদান, সাইপ্রাস ও রোডেশিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। অন্যদিকে নিজের অতুলনীয় ব্যক্তিত্বগুণে দ্বিধাবিভক্ত উম্মাহকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করেন হিলালী ঝা-ার ছায়াতলে। সুবহানাল্লাহ!
হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন কাতিবে ওহী। পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের পুণ্য লগ্ন থেকে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ নাযিলের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি পবিত্র ওহী মুবারক লিপিবদ্ধ করার সুমহান দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। জিহাদের ফরয তিনি বিপুল সমারোহে ফের জিন্দা করেছিলেন। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার মুবারক উপস্থিতিতে একবার হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে বিরূপ সমালোচনা শুরু হলে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে তিনি ক্রোধভরে বলতে থাকেন- “যে কুরাইশী যুবক তিনি চরম ক্রোধের মুহূর্তেও প্রাণ খুলে হাসতে পারেন। স্বেচ্ছায় না দিলে যাঁর হাত থেকে কিছু ছিনিয়ে নেয়া যায় না। যাঁর শিরস্ত্রাণ পেতে হলে উনার পায়ে লুটিয়ে পড়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। সহনশীলতা, সাহসিকতা ও আত্মসম্মানবোধে যিনি অতুলনীয়, তোমরা উনারই সমালোচনা করছো?”
সুপ্রসিদ্ধ তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম বিন মায়সারা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- “উমাইয়া খলীফা হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে আমি কখনো কাউকেই দোররা মারতে দেখিনি। তিনি উনার মুবারক জীবনে শুধু এক ব্যক্তিকেই দোররা মেরেছিলেন। হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সমালোচনা ছিলো তার অপরাধ।” স্বভাব-সংযমী তাবেয়ী হযরত আহনাফ বিন কায়স রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ধৈর্য ও সহনশীলতার খ্যাতি ছিলো গোটা আরব জুড়ে। উনাকে একবার জিজ্ঞেস করা হলো- “ধৈর্য ও সহনশীলতায় শ্রেষ্ঠ কে? আপনি, না-কি হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি?” তিনি জাওয়াব দেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তোমার মতো গ-মূর্খ দ্বিতীয়টি আমার নজরে পড়েনি। হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ধৈর্য ও সহনশীলতা ছিলো খিলাফতের মসনদে বসে। আর আমারটা হলো মাটির বিছানায় বসে। বলতো দেখি! এ দুটি বিষয় বরাবর হয় কীভাবে?” হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন- “ক্রোধ হজম করায় আমি যে স্বাদ পাই, অন্য কিছুতেই তা পাই না।”
মানুষের মুক্তি, মানবতার কল্যাণ এবং তায়াল্লুক মায়াল্লাহ, তায়াল্লুক মায়ার রসূল পর্যন্ত পৌঁছার ক্ষেত্রে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ হতে তিনি ছিলেন উৎসর্গিত। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “শাসন ক্ষমতার জন্য হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চেয়ে উপযুক্ত কেউ আমার নজরে পড়েনি।”
হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মোট ১৬৩খানা পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। মুবারক জীবনের শেষে খুতবায় তিনি বলেন, “হে জনম-লী! কোনো কোনো ক্ষেতের ফসল কাটার সময় সমাগত প্রায়। আমি আপনাদের খলীফা ছিলাম। আমার পর আমার চেয়ে উত্তম কোনো খলীফা আপনারা আর পাবেন না। যেমন আমার পূর্বের খলীফাগণ আমার চেয়ে উত্তম ছিলেন।”
প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে একবার প্রশ্ন করা হয়, “দয়া করে বলুন তো উত্তম কে? হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি, না-কি হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি?” প্রশ্ন শুনে তিনি জালালী হয়ে উঠলেন। পূর্বে উনাকে এতো গোস্বা হতে কেউ দেখেনি। তিনি জাওয়াব দিলেন, “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিহাদে যাওয়ার সময় উনার ঘোড়ার নাকে যে ধুলাবালিগুলো প্রবেশ করেছে, তার মূল্যও হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চেয়ে উত্তম।” সুবহানাল্লাহ! হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইজ্জত-আবরু রক্ষাকারী আবরণ। এ মুবারক আবরণ কেউ ছিন্ন করলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সকলের ক্ষেত্রেই দুঃসাহসী হয়ে উঠার কুফরী ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়ে যায়। নাঊযুবিল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে গালমন্দ করা, উনাদেরকে দোষারোপ করা কুফরী। নাঊযুবিল্লাহ! ইয়াযীদকে খলীফা মনোনয়ন এবং কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে নববী কাননের সুরভিত গোলাপ, জলীলুল ক্বদর ছাহাবী, কাতিবে ওহী, ছাহিবে সির হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার যারা সমালোচনা করে, উনাকে নাক্বিছ বলে এবং উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে তারা কাট্টা কাফির। তাদের স্থায়ী আবাস জাহান্নামে। এ বিষয়ে সকলেরই ঈমান ও আক্বীদা বিশুদ্ধ করা ফরয। সতর্ক হওয়া ফরয। কারণ হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিসহ সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাই হলেন হক্ব নিরূপণ এবং হক্ব অনুসরণের হাক্বীক্বী মানদ-। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র ১০ই মুহররমুল হারাম শরীফ বা পবিত্র আশূরা শরীফ দিনের বিশেষ বিশেষ ওয়াকিয়াসমূহ-
এই বরকতময় পবিত্র ১০ই মুহররমুল হারাম শরীফ উনার দিনেই সৃষ্টির সূচনা হয় এবং এই দিনেই সৃষ্টির সমাপ্তি ঘটবে। বিশেষ বিশেষ সৃষ্টি এ বরকতময় দিনেই করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনা এ বরকতময় দিনেই সংঘটিত হয়।
যেমন :-এ দিনেই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মর্যাদা, সম্মান ও খুছূছিয়ত ও হাবীবুল্লাহ হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে এ দিনকে সম্মানিত করেন।
এদিনে হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম উনার দোয়া মুবারক কবুলের আনুষ্ঠানিকতা করা হয়।
এদিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইদরীস আলাইহিস সালাম উনাকে আসমানে তুলে নেন।
এ দিন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার বরকতময় কিস্তিকে জুদি পাহাড়ে ভিড়িয়েছিলেন।
এদিন হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ হয় এবং এদিন উনাকে ‘খলীল’ উপাধিতে ভূষিত করা হয় এবং উনাকে নমরূদের আগুন থেকে বের করে আনা হয়।
এদিন হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালাম তিনি অসুস্থতা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আরোগ্য লাভ করেন।
এদিন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে মহান আল্লাহ পাক তিনি সরাসরি কথা মুবারক বলেছিলেন।
এদিনেই হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ও উনার সম্প্রদায় লোহিত সাগর পার হয়েছিলেন।
এদিনই হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।
এদিনেই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি রহমতসহ সর্বপ্রথম যমীনে নাযিল হন। আর এদিনেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম রহমত বর্ষণ করেন।
এদিনেই মহান আল্লাহ পাক তিনি দুনিয়া সৃষ্টি করেন এবং এদিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এদিনেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম যমীনে বৃষ্টি নাযিল করেন।
শুধু তাই নয়,
এদিনেই হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনিও পবিত্র শাহদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
মূলকথা হলো, পবিত্র মুহররমুল হারাম বা বরকতপূর্ণ আশূরা শরীফ উনার দিনটি সকলের জন্যই রহমত, বরকত, সাকীনা ও মাগফিরাত মুবারক হাছিল করার দিন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাহাদাত মুবারক উনার পরে দুনিয়ায় যে সমস্ত আযাব-গযব নিপতিত হয়েছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সেটাও ছিল নজিরবিহীন-
হযরত উলামায়ে কিরামগণ লিখেছেন যে, “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার সময় পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হয়েছিল, আসমান ঘোর অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল, ফলে দিনের বেলা তারকারাজি দৃষ্টিগোচর হয়েছিল। কিছুক্ষণ পর আসমান কালো থেকে লাল বর্ণে পরিণত হয়েছিল এবং আকাশ থেকে রক্ত বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল। সাতদিন পর্যন্ত এ রক্ত বৃষ্টি বর্ষণ অব্যাহত ছিল। সমস্ত ঘর-বাড়ির দেয়াল রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল এবং যেসব কাপড়ের উপর রক্ত পতিত হয়েছিল, সেসব কাপড় ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হওয়ার পরও সেই রক্তের লালিমা যায়নি। যমীনও কান্নাকাটি করেছিল। পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এ যে পাথরটাই উঠানো হতো, সেই পাথরের নিচ থেকে তাজা রক্ত বের হতো। কলস ভর্তি পানি রাখলে তা রক্তে লাল হয়ে যেত। ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি বাহিনীরা যখন উট যবেহ করেছিল তখন সে উটের ভিতর থেকে রক্তের পরিবর্তে আগুনের লেলিহান শিখা বের হয়েছিল। জিনদের মধ্যেও শোক-বেদনা ছড়িয়ে পড়েছিল। সারা জাহানজুড়ে এক অদ্ভুত ও বিস্ময়কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।”
কাজেই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার পরে দুনিয়ায় যে সমস্ত আযাব-গযব নিপতিত হয়েছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সেটাও ছিল নজিরবিহীন।
ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইত রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুপম মুহব্বত উনার দৃষ্টান্ত-
একদিন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এমন অবস্থায় বাইরে তাশরীফ আনলেন যে, উনার এক কাঁধ মুবারক উনার উপর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং অন্য কাঁধ মুবারকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে বসিয়েছিলেন এবং ইরশাদ মুবারক করেন, “যাঁরা এই দুইজনকে মুহব্বত করলো সে আমাকে মুহব্বত করলো। আর যে উনাদের সাথে দুশমনি করলো সে আমার সাথে দুশমনি করলো।
কাজেই সকল মুসলমানগণ উনাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হলো উনাদের প্রতি আমাদের অগাধ মুহব্বত স্থাপন করা, উনাদের সাওয়ানেহ উমরী মুবারক সম্পর্কে জানা এবং উনাদের জীবনী মুবারক থেকে ইবরত নছীহত শিক্ষা হাছিল করা এবং এই শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম ও পবিত্র আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার করা। এতেই মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি, সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা সম্ভব।
অতএব, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরসহ কায়িনাতের সকল জিন-ইনসানকে সেই তাওফীক দান করেন। (আমীন)
দুনিয়ার ধন-সম্পদের মুহব্বতই যে সমস্ত গুনাহের মূল তা পবিত্র কারবালা উনার হৃদয় বিদারক ঘটনা থেকে ভালোভাবে বুঝা যায়-
৬১ হিজরী সনের পবিত্র ১০ই মুহররম শরীফ-এ যেসব তথাকথিত মুসলমান হাক্বীক্বতে কাফির সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তারা কি জানতো না উনি কে? তারা কি জানতো না উনি জান্নাতে যুবকদের সাইয়্যিদ, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র কলিজা মুবারক উনার টুকরা, উনাকে কষ্ট দিলে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব উনাকে এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে কষ্ট দিলো আর যে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব উনাকে এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে কষ্ট দিলো সে জাহান্নামী হবে।
তারা কী জানতো না উনারাই নাজাতের মূল। উনারাই সব কিছু। উনাদের গোলাম হতে পারলে ইহকাল এবং পরকাল ধন্য। উনাদের কষ্ট দিলে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাফায়াত হতে বঞ্চিত হতে হবে। মূলত তারা এই সব কিছু জানলেও সেই দিন তাদের অন্তর মোহগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিলো। তাদের ইল্ম ছলব হয়ে গিয়েছিলো। তার অন্যতম কারণ দুনিয়ার ধন-দৌলতের প্রতি আকর্ষণ বা মুহব্বত। যে মুহব্বত সম্পর্কে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “দুনিয়ার মুহব্বত বা ধন-সম্পদের মুহব্বতই সমস্ত গুনাহের মূল।”
যার কারণে তাদের পক্ষে এমন মর্মান্তিক ঘটনার অবতারণা করা সম্ভব হয়েছিলো। মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে প্রার্থনা- মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং যামানার ইমাম উনার উসীলায় আমাদের অন্তরে পবিত্র আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত পরিপূর্ণ করে দেন। (আমীন)
হযরত আহলে বাইত শরীফ ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বিরোধিতাকারীরা জাহান্নামী-
বিখ্যাত ছাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لوان رجلا صعد بين الركن والمقام فصلى وصام ثم مات وهو مبغض لاهل بيت النبى صلى الله عليه وسلم دخل النار.
অর্থ: “যদি কোনো ব্যক্তি বাইতুল্লাহ শরীফ উনার হাজরে আসওয়াদ ও মাক্বামে ইবরাহীম উনার মধ্যে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে এবং রোযাও রাখে, কিন্তু সে হযরত আহলে বাইত শরীফ ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষভাব রেখে মৃত্যুবরণ করে, নিশ্চয়ই সে জাহান্নামে যাবে।” নাউযুবিল্লাহ! (খছায়েছুল কুবরা)
অপর এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
من مات على بغض ال محمد صلى الله عليه وسلم لم يشم رائة الجنة
অর্থ: “যারা হযরত আহলে বাইত শরীফ ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষভাব রেখে মৃত্যুবরণ করবে, তারা পবিত্র জান্নাত উনার সুগন্ধ পর্যন্ত পাবে না।” নাউযুবিল্লাহ! (তাফসীরে রুহুল বয়ান)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
من ابغض اهل البيت فهو منافق.
অর্থ: “হযরত আহলে বাইত ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি যে ব্যক্তি বিদ্বেষভাব রাখবে, সে মুনাফিক।” নাউযুবিল্লাহ!
উল্লেখ্য, বর্তমানে ওহাবী, নজদী, সালাফী, খারিজী, মওদুদী, জামাতী, তাবলীগী, দেওবন্দী এরা সবাই হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণকারী দল।
হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বতকারীদের জন্য সম্মানিত জান্নাত উনার সুসংবাদ-
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
من مات على حب ال محمد صلى الله عليه وسلم بشره ملك الموت بالجنة ثم منكرنكير
অর্থ: যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরানী পরিবার ও আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত নিয়ে ইনতিকাল করবে, তাকে মালাকুল মউত হযরত আযরাইল আলাইহিস সালাম এবং হযরত মুনকার ও নাকীর ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনারা সম্মানিত জান্নাত উনার সুসংবাদ দিবেন।
আরেক বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
من مات على حب ال محمد صلى الله عليه وسلم يزف الى الجنة كما تزف العروس الى بيت زوجها
অর্থ: যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত, আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বতের উপর ইনতিকাল করবে। ঐ ব্যক্তিকে নববধূকে যেমনভাবে বাসর রাতে তার স্বামীর ঘরে প্রবেশ করানো হয় তেমনিভাবে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। সুবহানাল্লাহ!
উপরে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে এবং উনাদের যারা বংশধর, ক্বিয়ামত পর্যন্ত যমীনে অবস্থান করবেন উনাদেরকে যারা মুহব্বত করবে, তাদের সকলের জন্য পবিত্র জান্নাত ওয়াজিব।
একজন নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করলে, কাফফারা বাবদ সত্তর হাজার লোককে ধ্বংস করে দেয়া হয়। আর ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে যারা জড়িত, তাদের কমপক্ষে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে, ধ্বংস করে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ!
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইমামুল মুহাদ্দিছীন মিনাল আউওয়ালিন ইলাল আখিরীন, ছহিবু ইলমিল আউওওয়ালি ওয়াল ইলমিল আখিরি, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, একজন নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করলে, এর কাফফারা বাবদ সত্তর হাজার লোককে ধ্বংস করে দেয়া হয়। আর একজন খলীফা উনাকে শহীদ করা হলে, এর কাফফারা বাবদ পঁয়ত্রিশ হাজার লোককে ধ্বংস করে দেয়া হয়। আর ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে যারা জড়িত, তাদের কমপক্ষে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে, ধ্বংস করে দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلَامٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ مَا قُتِلَ نَبِـىٌّ قَطُّ اِلَّا قُتِلَ بِهٖ سَبْعُوْنَ اَلْفًا مِّنْ اُمَّتِهٖ وَلَا قُتِلَ خَلِيْفَةٌ قَطُّ اِلَّا قُتِلَ بِهٖ خَـمْسَةٌ وَّثَلَاثُوْنَ اَلْفًا.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এমন কোনো নবী আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করা হয়নি যে, উনার কাফফারা বাবদ উনার উম্মতের সত্তর হাজার লোককে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়নি। সুবহানাল্লাহ! আর এমন কোনো খলীফা উনাকে শহীদ করা হয়নি যে, উনার কাফফারা বাবদ পঁয়ত্রিশ হাজার লোককে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়নি।” সুবহানাল্লাহ! (মুছান্নাফে আবী শায়বাহ ১৫/২২৩, মুছান্নাফে আব্দির রাজ্জাক্ব ১১/৪৪৫, আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ ১৮/৫২, আছ ছওয়াইকুল মুহ্রিক্বহ ১/৩২৯, ত্ববাক্বতে ইবনে সা’দ ৩/৮৩, ইযালাতুল খফা’ ৬/৩১৯, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৮/১৪৬, খাযিন ৩/৩০৩, বাগভী ৬/৫৯, আত তামহীদ ওয়াল বায়ান ১/১৮১, তারীখুল খুলাফা ১/১২৮, আর রিয়াদুন নাদ্বরাহ ফী মানাক্বিবে আশারাহ ১/২২৮, আখবারুল মদীনা ২/২২৫, আল মুহাদ্বারাত ওয়াল মুহাওয়ারাত ১/৭১, ইত্যাদি)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُمَا قَالَ اَوْحَى اللهُ تَعَالـٰى اِلـٰى سَيِّدِنَا حَبِيْبِنَا شَفِيْعِنَا مَوْلَانَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنِّـىْ قَتَلْتُ بِيَحْيَـى بْنِ زَكَرِيَّا عَلَيْهِمَا السَّلَامُ سَبْعِيْنَ اَلْفًا وَّاِنِّـىْ قَاتِلٌ ۢبِابْنِ ابْنَتِكَ سَبْعِيْنَ اَلْفًا وَّسَبْعِيْنَ اَلْفًا.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সম্মানিত ওহী মুবারক করেন যে, নিশ্চয়ই আমি হযরত ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া আলাইহিমাস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট সত্তর হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি, ধ্বংস করে দিয়েছি। সুবহানাল্লাহ! আর নিশ্চয়ই আমি আপনার লখতে জিগার, মহাসম্মানিতা আওলাদ, আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার যিনি মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট যারা থাকবে, তাদের সত্তর হাজার এবং সত্তর হাজার তথা এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিবো, ধ্বংস করে দিবো।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম শরীফ ৩/১৯৫, খছায়িছুল কুবরা শরীফ ২/২১৪, ইমতা‘উল আসমা’ ১২/২৩৭, শরহুয যারক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিব ১০/১৫২ ইত্যাদি)
এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা আরো বিভিন্ন কিতাবে বিভিন্নভাবে বর্ণিত রয়েছে। তবে মূল অর্থ মুবারক এক। নিম্নে আরো কয়েকখানা বর্ণনা মুবারক উল্লেখ করা হলো-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِـىْ حَضْرَتْ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ اِنِّـىْ قَتَلْتُ بِدَمِ حَضْرَتْ يَـحْيَـى بْنِ زَكَرِيَّا عَلَيْهِمَا السَّلَامُ سَبْعِيْنَ اَلْفًا وَّاِنِّـىْ قَاتِلٌ ۢ بِدَمِ ابْنِكَ حَضْرَتْ اَلْـحُسَيْنِ بْنِ عَلِـىٍّ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ سَبْعِيْنَ اَلْفًا وَّسَبْعِيْنَ اَلْفًا.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে বলেছেন, যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, নিশ্চয়ই আমি (মহান আল্লাহ পাক) হযরত ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া আলাইহিমাস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট সত্তর হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি, ধ্বংস করে দিয়েছি। সুবহানাল্লাহ! আর নিশ্চয়ই আমি আপনার লখতে জিগার, মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট যারা থাকবে, তাদের সত্তর হাজার এবং সত্তর হাজার তথা এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিবো, ধ্বংস করে দিবো।” সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী শরীফ ৩/১৮৭)
অপর বর্ণনায় এসেছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُمَا عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قَالَ لِـىْ حَضْرَتْ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِنَّ اللهَ قَتَلَ بِدَمِ حَضْرَتْ يَـحْيَـى بْنِ زَكَرِيَّا عَلَيْهِمَا السَّلَامُ سَبْعِيْنَ اَلْفًا وَّهُوَ قَاتِلٌ بِدَمِ ابْنِ ابْنَتِكَ حَضْرَتْ اَلْـحُسَيْنِ بْنِ عَلِـىٍّ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ سَبْعِيْنَ اَلْفًا وَّسَبْعِيْنَ اَلْفًا.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে বলেছেন, নিশ্চয়ই যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া আলাইহিমাস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট সত্তর হাজার লোককে কাফ্ফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন, ধ্বংস করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! আর নিশ্চয়ই তিনি আপনার লখতে জিগার, মহাসম্মানিতা আওলাদ, আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার যিনি মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট যারা থাকবে, তাদের সত্তর হাজার এবং সত্তর হাজার তথা এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিবেন, ধ্বংস করে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ! (শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ)
অন্য বর্ণনায় এসেছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ حَضْرَتْ جِبْرِيْلَ عَلَيْهِ الصَّلـٰوةُ وَالسَّلَامُ اَخْبَرَنِـىْ اَنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَتَلَ بِدَمِ حَضْرَتْ يَـحْيَـى بْنِ زَكَرِيَّا عَلَيْهِمَا السَّلَامُ سَبْعِيْنَ اَلْفًا وَّهُوَ قَاتِلٌ ۢ بِدَمِ حَضْرَتْ اَلْـحُسَيْنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَبْعِيْنَ اَلْفًا وَّسَبْعِيْنَ اَلْفًا.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, নিশ্চয়ই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে সংবাদ মুবারক দিয়েছেন, নিশ্চয়ই যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া আলাইহিমাস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট সত্তর হাজার লোককে কাফ্ফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন, ধ্বংস করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! আর নিশ্চয়ই তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট যারা থাকবে, তাদের সত্তর হাজার এবং সত্তর হাজার তথা এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিবেন, ধ্বংস করে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ফী সীরাতি খইরিল ইবাদ ১১/৮১)
এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনার বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত ওহী মুবারক করে জানিয়ে দিয়েছেন যে-
اِنِّـىْ قَتَلْتُ بِيَحْيَـى بْنِ زَكَرِيَّا عَلَيْهِمَا السَّلَامُ سَبْعِيْنَ اَلْفًا وَّاِنِّـىْ قَاتِلٌ ۢبِابْنِ ابْنَتِكَ سَبْعِيْنَ اَلْفًا وَّسَبْعِيْنَ اَلْفًا.
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি হযরত ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট সত্তর হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি, ধ্বংস করে দিয়েছি। সুবহানাল্লাহ! আর নিশ্চয়ই আমি আপনার লখতে জিগার, মহাসম্মানিতা আওলাদ, আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার যিনি মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট যারা থাকবে, তাদের সত্তর হাজার এবং সত্তর হাজার তথা এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফ্ফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিবো, ধ্বংস করে দিবো।” সুবহানাল্লাহ!
আর এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইমামুল মুহাদ্দিছীন মিনাল আউওয়ালীন ইলাল আখিরীন, মুজাদ্দিদে আ’যম, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মূলত, এক লক্ষ চল্লিশ হাজার কাফির-মুনাফিকদেরকে তো নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছেই। শুধু তাই নয়, এই জন্য ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোটি কোটি কাফির, মুনাফিক্ব ও উলামায়ে সূ’দেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে, ধ্বংস করে দেয়া হবে, তাদের অস্থিত্ব বিলীন করে দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ!
এখন বলার বিষয় হচ্ছে একজন সম্মানিত খলীফা উনাকে শহীদ করার কারণে, কাফফারা বাবদ পঁয়ত্রিশ হাজার লোককে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। হযরত ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া আলাইহিমাস সালাম তিনি হচ্ছেন একজন বিশেষ নবী-রসূল। উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে জড়িত যারা ছিলো, কাফফারা বাবদ তাদের সত্তর হাজার লোককে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে; কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে যারা জড়িত, তাদের কমপক্ষে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোটি কোটি কাফির, মুনাফিক্ব ও উলামায়ে সূ’দেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে, ধ্বংস করে দেয়া হবে, তাদের অস্থিত্ব বিলীন করে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ!
তাহলে এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল। সুবহানাল্লাহ! এক কথায় তিনি শুধু যিনি খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! তিনি একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মুহতাজ। এছাড়া কায়িনাতের অন্য কারো মুহতাজ নন; বরং কায়িনাতের সকলেই উনার মুহতাজ। উনার কারণেই কায়িনাতের সকলে সম্মানিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! এই বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে, নিম্নোক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اَنَّ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُوْلُ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ طَهَّرَهُمُ اللهُ مِنْ شَجَرَةِ النُّــبُوَّةِ وَمَوْضِعِ الرِّسَالَـةِ وَمُـخْتَلِفِ الْمَلَائِكَةِ وَبَيْتِ الرَّحْمَةِ وَمَعْدِنِ الْعِلْمِ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবসময় ইরশাদ মুবারক করতেন, আমরা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে (আমাদেরকে) সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার বৃক্ষ, সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার স্থান, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের, উনাদের দ্বারা সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক (ইত্যাদি সমস্ত কিছু) থেকে পবিত্র রেখেছেন, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী) করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে দুররে মানছূর লিস সুয়ূত্বী ৬/৬০৬, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম ৯/৩১৩৩)
সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জিন-ইনসানকে জাহান্নামে যত শাস্তি দেয়া হবে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি শহীদ করেছে, তাকে এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি দেয়া হবে-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىِّ بْنِ اَبِـىْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُـحْشَرُ ابْنَتِـىْ حَضْرَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَمَعَهَا ثِـيَابٌ مَّصْبُوغَةٌ ۢبِدَمٍ فَتَتَعَلَّقُ بِقَائِمَةٍ مِّنْ قَوَائِمِ الْعَرْشِ فَتَقُوْلُ يَا عَدْلُ احْكُمْ بَـيْـنِـىْ وَبَيْنَ قَاتِلِ وَلَدِىْ فَيُحْكَمُ لِابْـنَـتِـىْ وَرَبِّ الْكَعْبَةِ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার সম্মানিত লখতে জিগার, আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি হাশরের ময়দানে নূরুন নাজাত মুবারক রঞ্জিত (রক্ত রঞ্জিত) সম্মানিত পোশাক মুবারক নিয়ে উপস্থিত হবেন। অতঃপর তিনি সম্মানিত আরশ উনার স্তম্ভসমূহের একখানা সম্মানিত স্তম্ভ মুবারক উনার নিকটবর্তী হবেন। তারপর তিনি বলবেন, হে ন্যায়বিচারক (মহান আল্লাহ পাক)! আপনি আমার এবং আমার মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শহীদকারীর মাঝে ফায়ছালা মুবারক (মীমাংসা) করুন। সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার রব মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ! অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার লখতে জিগার, মহাসম্মানিতা আওলাদ, আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানার্থে এই বিষয়ে সর্বোত্তম ফায়ছালা মুবারক করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী শরীফ ৫/৪৭৬, শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ ৫/৩১৪)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَلِىِّ بْنِ اَبِـىْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَاتِلُ الْـحُسَيْنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِـىْ تَابُوْتٍ مِّنْ نَّارٍ عَلَيْهِ نِصْفُ عَذَابِ اَهْلِ الدُّنْيَا.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি শহীদ করবে, তাকে জাহান্নামে আগুনের বক্সে রাখা হবে। সমস্ত দুনিয়াবাসী তথা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জিন-ইনসানকে যত শাস্তি দেয়া হবে। ঐসর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিকে এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী শরীফ ৩/২১০, আল মাক্বাছিদুল হাসানাহ ১/৪৮৩, কাশফুল খফা’ ২/৯১, শরহুয যারক্বানী আলালা মাওয়াহিব ১০/১৫২, শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ ৫/৩১৪, তাফসীরে হাক্কী ৫/৪৩৭, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৪/৮৮ ইত্যাদি)
অপর বর্ণনায় এসেছে-
وَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ قَاتِلَ الْـحُسَيْنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِـىْ تَابُوْتٍ مِّنْ نَّارٍ عَلَيْهِ نِصْفُ عَذَابِ اَهْلِ الدُّنْيَا وَقَدْ شُدَّتْ يَدَاهُ وَرِجْلَاهُ بِسَلَاسِلَ مِنْ نَّارٍ مَّنْكِبٌ حَتّٰى يَقَعُ فِىْ قَعْرِ جَهَنَّمَ وَلَهٗ رِيْحٌ يَّتَعَوَّذُ اَهْلُ النَّارِ مِنْ شِدَّةِ نَتْنِ رِيْـحِهٖ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি শহীদ করেছে, তাকে জাহান্নামে আগুনের বক্সে রাখা হবে। সমস্ত দুনিয়াবাসী তথা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জিন-ইনসানকে যত শাস্তি দেয়া হবে, ওই সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিকে এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ! তার হাত এবং পাগুলো আগুনের শিকল দ্বারা শক্তভাবে বাঁধা হবে। তারপর তাকে উপুড় করে জাহান্নামের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করা হবে। তার কঠিন দুর্গন্ধ থাকবে। সমস্ত জাহান্নামবাসী তথা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত লোক জাহান্নামে যাবে, তারা সকলেই সেই কঠিন পঁচা দূর্গন্ধ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে।” (শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ ৫/৩১৪)
পঞ্চম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘মুকাশাফাতুল কুলূব’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন, “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি জাহান্নামকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, তার সাতটি দরজা রয়েছে। সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার ভাষায়-
لَـهَا سَبْعَةُ اَبْوَابٍ.
অর্থ: “জাহান্নামের সাতটি দরজা রয়েছে।”
সম্মানিত সূরা হিজর শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৪৪)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا وَلٰكِنَّهَا طِبَاقٌ بَعْضُهَا اَسْفَلُ مِنْ بَعْضٍ مِّنَ الْبَابِ اِلَى الْبَابِ مَسِيْرُ سَبْعِيْنَ سَنَةً كُلُّ بَابٍ مِّنْهَا اَشَدُّ حَرًّا مِّنَ الَّذِىْ يَلِيْهِ بِسَبْعِيْنَ ضِعْفًا وَّسَاَلَهٗ اَيْضًا عَنْ مَّكَانِ هٰذِهِ الْاَبْوَابِ فَقَالَ اَمَّا الْاَسْفَلُ فَفِيْهِ الْـمُنَافِقُوْنَ وَاسْـمُهُ الْـهَاوِيَةُ كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالـٰى اِنَّ الْمُنٰفِقِيْنَ فِى الدَّرْكِ الْاَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَالْبَابُ الثَّانِـىْ فِيْهِ الْـمُشْرِكُوْنَ وَاسْـمُهُ الْـجَحِيْمُ وَالْبَابُ الثَّالِثُ فِيْهِ الصَّابِئُوْنَ وَاسْـمُهٗ سَقَرُ وَالْبَابُ الرَّابِعُ فِيْهِ اِبْلِيْسُ عَلَيْهِ اللَّعْنَةُ وَمَنْ تَبَعَهٗ مِنَ الْـمَجُوْسِ وَاسْـمُهٗ لَظـٰى وَالْبَابُ الْـخَامِسُ فِيْهِ الْيَهُوْدُ وَاسْـمُهُ الْـحُطَمَةُ وَالْبَابُ السَّادِسُ فِيْهِ النَّصَارٰى وَاسْـمُهُ السَّعِيْرُ ثُـمَّ اَمْسَكَ حَضْرَتْ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ لَهٗ صَلَّـى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِـمَ لَـمْ تُـخْبِرْنِـىْ عَنْ سُكَّانِ الْبَابِ السَّابِعِ فَقَالَ حَضْرَتْ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا سَيِّدَنَا مُحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَسْاَلْنِىْ عَنْهُ فَقَالَ فَفِيْهِ اَهْلُ الْكَبَائِرِ مِنْ اُمَّتِكَ الَّذِيْنَ مَاتُوْا وَلَـمْ يَتُوْبُوْا.
অর্থ: “হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জাহান্নামের দরজা এই পৃথিবীর ঘর-বাড়ির দরজার মতো নয়; বরং উপরে-নিচে স্তরে স্তরে বিন্যস্ত এবং এক দরজা হতে অপর দরজা পর্যন্ত সত্তর বছরের পথ পরিমাণ দূরত্ব। উপরের দিক থেকে প্রথম দরজার তুলনায় দ্বিতীয়টির এবং এভাবে পরবর্তী দরজাগুলোর একটির তুলনায় অপরটির উত্তাপ ও দাহন ক্ষমতা সত্তরগুণ অধিক হবে।’ অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে এসব স্তরে অবস্থানকারীদের সমন্ধে বলতে বললেন, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন যে, ‘দোযখের সর্বনি¤œ স্তরে নিক্ষেপ করা হবে মুনাফিক্বদেরকে। এই স্তরের নাম হবে ‘হাবিয়াহ’। এস্তরে মুনাফিক্বদের অবস্থান প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন,
اِنَّ الْمُنٰفِقِيْنَ فِى الدَّرْكِ الْاَسْفَلِ مِنَ النَّارِ.
অর্থ: “নিঃসন্দেহে মুনাফিক্বদের স্থান হচ্ছে, জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে।” (সম্মানিত সূরা নিসা শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ১৪৫)
নিম্ন দিক হতে দ্বিতীয় স্তরের অধিবাসী হবে মুশরিকরা। এস্তরের নাম ‘জাহীম’। তৃতীয় পর্যায়ে ছাবিঈন তথা যাবূর শরীফ অনুসারী ও নক্ষত্রপূজারীদের স্তর। এর নাম ‘সাক্বার’। চতুর্থ পর্যায়ে অভিশপ্ত ইবলীস ও তার অগ্নিপূজক অনুচরদের স্তর। এর নাম ‘লাযা’। পঞ্চম স্তরের অধিবাসী হবে ইহুদীরা; এর নাম ‘হুতামাহ’। ষষ্ঠ স্তরের অধিবাসী হবে খ্রিস্টানরা; এর নাম হবে ‘সাঈর’। অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি থেমে গেলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনি সপ্তম স্তরের অধিবাসীদের সম্পর্কে কিছু বলছেন না কেন? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে আমাকে এই স্তর সম্পর্কে সুওয়াল না করলে ভালো হয়। অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জাহান্নামের এই সপ্তম স্তরে আপনার উম্মতের মধ্যে ওই সব লোক নিক্ষিপ্ত হবে; যারা দুনিয়াতে কবীরাহ গুনাহে লিপ্ত হয়েছে এবং তাওবা না করে মারা গেছে।” (মুকাশাফাতুল কুলূব ২৫-২৬)
মুনাফিক্ব ও উলামায়ে সূ’রা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তর ‘হাবিয়া’-এর মধ্যে প্রবেশ করবে এবং সেখানে কঠিন-ভয়াবহ ‘আযাব-গযব উপভোগ করবে; যেখানে ইহূদী, খ্রিস্টান, কাফির, মুশরিক, মূর্তি-পূজক, অগ্নিপূজক; এমনকি স্বয়ং মালঊন ইবলীসও প্রবেশ করবে না এবং এতো কঠিন-ভয়াবহ ‘আযাব-গযবও উপভোগ করবে না; বরং ইবলীস প্রবেশ করবে জাহান্নামের চতুর্থ স্তর ‘লাযা’-এর মধ্যে, যেখানে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তর ‘হাবিয়া’-এর তুলনায় কমপক্ষে ৩৪৩০০০ গুণ কম শাস্তি হবে, আর ‘হাবিয়া’-এর মধ্যে জাহান্নামের চতুর্থ স্তর ‘লাযা’-এর তুলনায় কমপক্ষে ৩৪৩০০০গুণ বেশি শাস্তি হবে। অর্থাৎ তাহলে বুঝা গেল যে, মুনাফিক্বদের শাস্তি হবে স্বয়ং ইবলীসের তুলনায় কমপক্ষে ৩৪৩০০০গুণ বেশি, আর স্বয়ং ইবলীসের শাস্তি হবে মুনাফিক্ব ও উলামায়ে সূ’দের তুলনায় ৩৪৩০০০গুণ কম। না‘ঊযুবিল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَعَوَّذُوْا بِاللهِ مِنْ جُبِّ الْـحُزْنِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا جُبُّ الْـحُزْنِ قَالَ وَادٍ فِـىْ جَهَنَّمَ يَتَعَوَّذُ مِنْهُ جَهَنَّمُ كُلَّ يَوْمٍ اَرْبَعَمِائَةِ مَرَّةٍ قِيْلَ وَمَنْ يَّدْخُلُهَا قَالَ الْقُرَّاءُ الْمُرَاءُوْنَ بِاَعْمَالِـهِمْ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট জুব্বুল হুযন থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করো। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জুব্বুল হুযন কী? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, জাহান্নামের একটি উপত্যকা। যেখান থেকে স্বয়ং জাহান্নাম নিজে প্রতিদিন চারশতবার আশ্রয় প্রার্থনা করে। জিজ্ঞাসা করা হলো, এতে কে প্রবেশ করবে? জবাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ওই সমস্ত ব্যক্তি- যারা লোকদেখানোর জন্য সম্মানিত কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করে অর্থাৎ মুনাফিক্ব রিয়াকার উলামায়ে সূ’রা।” (ইবনে মাজাহ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত কাফির, মুশরকি, ইবলীসসহ, মুনাফিক্ব-উলামায়ে সূ’দের যত শাস্তি হবে, যেই কুখ্যাত কাফির ও মুনাফিক্ব, সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিটি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করেছে, তার এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি হবে। সুবহানাল্লাহ! আর ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি ও ইবনে যিয়াদেরও ঠিক একই হুকুম। সুবহানাল্লাহ! অনুরূপভাবে তাদের সাথে যারা সংশ্লিষ্ট ছিলো তাদের প্রত্যেকেরও ঠিক একই হুকুম। সুবহানাল্লাহ! এখানে একটি বিষয় ফিকিরের যে, বণী ইসরাঈলের ৭০ হাজার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে শহীদ করা হয়েছে। উনাদের কারো শান মুবারক-এ; কিন্তু এরূপ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করা হয়নি যে, সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত কাফির, মুশরকি, ইবলীসসহ, মুনাফিক্ব-উলামায়ে সূ’দের যত শাস্তি হবে, যেই সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি একজন হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করেছে, তার এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি হবে। বরং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে এই বিষয়টিই অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, বণী ইসরাঈলের ৭০ হাজার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যারা শহীদ করেছে, তারাসহ সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত কাফির, মুশরকি, ইবলীসসহ, মুনাফিক্ব-উলামায়ে সূ’দের যত শাস্তি হবে, যেই কুখ্যাত কাফির ও মুনাফিক্ব, সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিটি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করেছে, তার এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি হবে। সুবহানাল্লাহ! কেননা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে-
قَاتِلُ الْـحُسَيْنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِـىْ تَابُوْتٍ مِّنْ نَّارٍ عَلَيْهِ نِصْفُ عَذَابِ اَهْلِ الدُّنْيَا.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি শহীদ করবে, তাকে জাহান্নামে আগুনের বক্সে রাখা হবে। সমস্ত দুনিয়াবাসী তথা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জিন-ইনসানকে যত শাস্তি দেয়া হবে। ঐসর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিকে এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ!
আলোচ্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে اَهْلِ الدُّنْيَا ‘দুনিয়ার সমস্ত অধিবাসী’ দ্বারা সৃষ্টি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারাই জাহান্নামে প্রবেশ করবে, জাহান্নামের সকল অধিবাসী উদ্দেশ্য। আর এর মধ্যে বণী ইসরাঈলের ৭০ হাজার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যারা শহীদ করেছে, তারাও অন্তর্ভুক্ত।
তাহলে এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল। সুবহানাল্লাহ! এক কথায় তিনি শুধু যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ!
আর এই কারণেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنْ حَضْرَتْ عَـلِـىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ شَجَرَةُ النُّبُوَّةِ وَمَعْدِنُ الرِّسَالَـةِ لَيْسَ اَحَدٌ مِّـنَ الْـخَلَائِقِ يَفْضُلُ اَهْلَ بَيْـتِـىْ غَيْرِىْ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমরা সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার সম্মানিত বৃক্ষ মুবারক এবং সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার সম্মানিত খনি মুবারক। সুবহানাল্লাহ! সমগ্র সৃষ্টি জগতে একমাত্র আমি ব্যতীত দ্বিতীয় আর কেউ নেই, যে আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে। অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টি জগতে আমার পরেই আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক, ফযীলত মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ لَّا يُقَاسُ بِنَا اَحَدٌ.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো তুলনা করা যাবে না।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী ৪/২৮৩, জামি‘উল আহাদীছ ২২/২১৯, কানজুল ‘উম্মাল ১২/১০৪, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/২৪৯৫০, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ফী মানাক্বিবে যাওইল কুরবা লিমুহিব্বে ত্ববারী ১/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৭ ইত্যাদি)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক জানার, বুঝার, উপলব্ধি করার মাধ্যমে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের হাক্বীক্বী তা‘য়াল্লুক্ব-নিসবত, মুহব্বত-মা’রিফত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ كُنَّا نُصَلِّي مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِشَاءَ فَإِذَا سَجَدَ وَثَبَ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ عَلَى ظَهْرِهِ فَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ أَخَذَهُمَا بِيَدِهِ مِنْ خَلْفِهِ أَخْذًا رَفِيقًا فَيَضَعُهُمَا عَلَى الأَرْض فَإِذَا عَادَ عَادَا حَتَّى قَضَى صَلاَتَهُ أَقْعَدَهُمَا عَلَى فَخِذَيْهِ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্মানিত ইশা উনার নামায পড়ছিলাম। অতঃপর তিনি যখন সিজদা মুবারক-এ গেলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিঠ মুবারক উনার উপর উঠে বসলেন। সুবহানাল্লাহ! যখন তিনি সম্মানিত সিজদা মুবারক থেকে মাথা উঠালেন, তখন উভয়কে পেছন থেকে সম্মানিত মুহব্বত মুবারক উনার সাথে ধরে যমীনে বসিয়ে দিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবার সিজদা মুবারক-এ গেলে উনারা দু’জন পুনরায় উনার পিঠ মুবারক-এ উঠে বসলেন। নামায মুবারক শেষ করা পর্যন্ত উনারা দু’জন এরূপ করে যাচ্ছিলেন। অতঃপর যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত নামায মুবারক শেষ করলেন, তখন উনাদের দু’জনকে উনার সম্মানিত উরু মুবারক উনার উপর বসালেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ ২/৫১৩, কানযুল উম্মাল ১৩/৬৬৯, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৯/১১১, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ১/১৩১, আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৬/২২৫ ইত্যাদি)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَسْجُدُ فَيَجِيءُ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ عليهما السلام فَيَرْكَبُ عَلَى ظَهْرِهِ فَيُطِيلُ السُّجُودَ فَيُقَالُ يَا نَبِيَّ الله أَطَلْتَ السُّجُودَ فَيَقُولُ ارْتَحَلَنِي ابْنِي فَكَرِهْتُ أَنْ أُعْجِلَهُ.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সম্মানিত সিজদা মুবারক-এ যেতেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিঠ মুবারক উনার উপর উঠে যেতেন। এ কারণে তিনি সম্মানিত সিজদা মুবারক লম্বা করতেন। ফলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলা হতো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনি কি সম্মানিত সিজদা মুবারক লম্বা করলেন? তখন তিনি জবাবে ইরশাদ মুবারক করতেন, আমার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমাস সালাম উনারা আমার সম্মানিত পিঠ মুবারক-এ আরোহন করেছেন, তাই আমি (সম্মানিত সিজদা মুবারক থেকে) তাড়াতাড়ি উঠে যাওয়াটা পছন্দ করিনি।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আবী ইয়া’লা ৩/৩৮০, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৯/১৮১, আল মাত্বালিবুল আলীয়াহ ১৬/২১০)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَمْشِي عَلَى أَرْبَعَةٍ وَعَلَى ظَهْرِهِ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ عليهما السلام وَهُوَ يَقُولُ نِعْمَ الْجَمَلُ جَمَلُكُمَا وَنِعْمَ الْعِدْلانِ أَنْتُمَا.
অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হলাম, দেখলাম, তিনি দুই হাঁটু ও দুই হাত মুবারক উনাদের উপর ভর করে চলছেন এবং উনার সম্মানিত পিঠ মুবারক উনার উপর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা আরোহিত ছিলেন। তিনি বলতেছিলেন, আপনাদের উট মুবারক কতই না উত্তম! আর আপনারা কতই না উত্তম আরোহী।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ৩/৫২, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৯/১১১, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ)
শুধু তাই নয়, স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে খুশি করার জন্য উনাদেরকে উনার সম্মানিত পিঠ মুবারক-এ নিয়ে দুই হাত মুবারক ও দুই পা মুবারক-এ চলতেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা বলতেন, নানাজান, প্রত্যেকের ঘোড়ার তো লাগাম রয়েছে, আমাদের ঘোড়ার লাগাম কোথায়? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে উনার সম্মানিত নূরুল ফাত্হ মুবারক (চুল মুবারক) দিতেন, উনারা সম্মানিত নূরুল ফাত্হ মুবারক (চুল মুবারক) ধরতেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা আরো বলতেন, নানাজান, প্রত্যেকের ঘোড়া তো আওয়াজ করে থাকে, আমাদের ঘোড় তো আওয়াজ করে না। তখন তিনি উনাদেরকে খুশি করার জন্য আওয়াজ মুবারক করতেন এবং উনাদেরকে সম্মানিত পিঠ মুবারক-এ নিয়ে সম্মানিত মসজিদে নববী শরীফ উনার একপ্রান্ত মুবারক থেকে অপর প্রান্ত মুবারক-এ যেতেন। সুবহানাল্লাহ!
এখন ফিকিরের বিষয়- যেখনে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ক্বদম মুবারক উনার ধূলি মুবারক নেয়ার জন্য বেকারার পেরেশান, সেখানে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে খুশি করার জন্য এরূপ করতেন, তাহলে উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা- কল্পনার ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! এক কথায় উনারা শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানার্থে ছহীহ সমঝ দান করুন। আমীন!
সম্মানিত কারবালা শরীফ উনার নির্জন প্রান্তরে সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার জন্য নিঃসন্দেহে ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সে-ই দায়ী -
৬১ হিজরী সনের ১০ মুহররমুল হারাম শরীফ তারিখে সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত পরিবার মুবারকসহ সম্মানিত কারবালা শরীফ উনার নির্জন প্রান্তরে সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! মূলত, উনাদের এই শাহাদাত মুবারক উনার পিছনে নিঃসন্দেহে কাফির ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সে-ই দায়ী। সে নিজেই এই ঘটনার হোতা। তাই তার ব্যাপারে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
১নং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ:
اَخْرَجَ اَحْمَدُ وَالْبَزَّارُ بِسَنَدٍ صَحِيْحٍ عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَعَوَّذُوْا بِاللهِ مِنْ رَّأْسِ السِّـتِّـيْنَ وَمِنْ اِمَارَةِ الصِّبْـيَـانِ.
অর্থ: “হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত ইমাম বাযযার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারা ছহীহ সনদ মুবারক-এ হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ৬০ হিজরী সনের পরের অবস্থা (৬১ হিজরীর) থেকে এবং তরুণদের শাসনকাল থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করুন।” (মুসনাদে আহমদ, মুসনাদে বাযযার, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ, খছাইছুল কুবরা ২/২৩৬ ইত্যাদি)
অন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
২নং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ:
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ عُبَيْدَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَزَالُ اَمْرُ اُمَّتِـىْ قَائِمًاۢ بِالْقِسْطِ حَتّٰى يَكُوْنَ اَوَّلُ مَنْ يَّثْلَمُه رَجُلٌ مِّنْۢ بَـنِـىْ اُمَيَّةَ يُقَالُ لَه يَزِيْدُ لَعْنَةُ اللهِ عَلَيْهِ.
অর্থ: “হযরত আবূ উবাইদা ইবনে জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার সম্মানিত উম্মত উনাদের শাসনব্যবস্থা তথা সম্মানিত খিলাফত মুবারক সত্য, ন্যায় ও ইনসাফ মুবারক উনার উপর অবিচল থাকবে। আর সর্বপ্রথম বনূ উমাইয়ার এক সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি সেই সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক বিনষ্ট করে দিবে (তথা রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে)। তার নাম হচ্ছে, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি।” (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১০/৮৯, খছাইছুল কুবরা ২/২৩৬, তারীখুল খুলাফা ১৬৬, আছ ছওয়াইকুল মুহরিক্বাহ ২/১২৩, জামিউল আহাদীছ ৯/২৪, দায়লামী শরীফ ৫/৯২, আবূ ইয়ালা, আবূ নাঈম, বাইহাক্বী, ইবনে আসাকির ইত্যাদি)
৩ নং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ:
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزِيْدُ لَعْنَةُ اللهِ عَلَيْهِ لَا بَارِكَ اللهُ فِـىْ يَزِيْدَ لَعْنَةُ اللهِ عَلَيْهِ الطَّعَّانِ اللَّعَّانِ اَمَا اِنَّه نُعِـىَ اِلَـىَّ حَبِـيْــبِـىْ وَحِبِّـىْ حَضْرَتْ اَلْاِمَامُ حُسَيْنٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ اُتِيْتُ بِتُرْبَتِهٖ وَرَاَيْتُ قَاتِلَه اَمَا اِنَّه لَا يُقْتَلُ بَيْنَ ظَهْرَانَـىْ قَوْمٍ وَّلَا يَنْصُرُوْنَه اِلَّا عَمَّهُمُ اللهُ بِعِقَابٍ.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আয় বারে ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি এর উপর থেকে বরকত তুলে নিন, তার উপর আপনি লা’নত বর্ষণ করুন! তার উপর আপনি লা’নত বর্ষণ করুন! সে হচ্ছে আমার পূত-পবিত্র মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সর্বনিকৃষ্ট আক্রমণকারী, আঘাতকারী এবং উনাদের ক্ষতি সাধন করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়ী। নাঊযুবিল্লাহ! সাবধান! নিশ্চয়ই ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সেই সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি যে, আমার পূত-পবিত্র মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে শহীদ করবে। নাঊযুবিল্লাহ! আমার নিকট আমার অতি প্রিয় হাবীব এবং মাহবূব হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সংবাদ মুবারক নিয়ে আসা হয়েছে এবং তিনি যেই জায়গায় সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করবেন, সেই জায়গার মাটি মুবরক আমার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ পেশ করা হয়েছে। আর উনাকে যে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি শহীদ করবে, আমি সেই সর্বনিকৃষ্ট মাল’ঊন, মারদূদ ব্যক্তিটিকে দেখিছি। সাবধান! তিনি নির্জন এলাকায় সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করবেন এবং ওই সময় উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ কেউ এগিয়ে আসবে না। তবে উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে যারা জড়িত থাকবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে ব্যাপকভাবে শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ! (জামি’উল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ২৪/১২৬, জাম’উল জাওয়ামি’ লিস সুয়ূত্বী ১ম খ-, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১০/৮৯, ইবনে আসাকির ইত্যাদি)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ উনাদের ব্যাখ্যা:
১০ম হিজরী শতকের মহান মুজাদ্দিদ, হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ব্যখ্যায় বলেন-
فَكَتَبَ يَزِيْدُ لَعْنَةُ اللهِ عَلَيْهِ اِلـٰى وَالِـيْهِ بِالْعِرَاقِ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ زِيَادٍ بِقِتَالِهٖ.
অর্থ: “অতঃপর ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি তার ইরাকের গভর্ণর উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদের নিকট সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শুহাদায়ে কারবালা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার জন্য লিখিত ফরমান পাঠায়।” নাঊযুবিল্লাহ! (তারীখুল খুলাফা ১৬৫পৃ.)
তিনি ব্যাখ্যায় আরো বলেন-
وَ لَـمَّا قُتِلَ حَضْرَتْ اَلْاِمَامُ الْـحُسَيْنُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَبَنُوْ اَبِيْهِ بَعَثَ ابْنُ زِيَادٍ لَّعْنَةُ اللهِ عَلَيْهِ بِرُؤُوْسِهِمْ اِلـٰى يَزِيْدَ لَعْنَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَسُرَّ بِقَتْلِهِمْ.
অর্থ: “যখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে শহীদ করার পর ইবনে যিয়াদ উনাদের সকলের সম্মানিত শির মুবারক ইয়াযীদের নিকট প্রেরণ করে, তখন ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি উনাদেরকে শহীদ করার কারণে খুশি প্রকাশ করে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! (তারীখুল খুলাফা ১৬৬ পৃ.)
ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি:
সে সম্পর্কে তিনি আরো বলেন-
لَعَنَ اللهُ قَاتِلَهٗ وَابْنَ زِيَادٍ مَّعَهٗ وَيَزِيْدَ اَيْضًا.
অর্থ: “যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে শহীদ করেছে তার উপর এবং ইবনে যিয়াদ ও ইয়াযীদের উপর লা’নাত বর্ষণ করুন! আমীন! (তারীখুল খুলাফা ১৬৫পৃ.)
তিনি আরো বলেন-
وَقَالَ نَوْفَلُ بْنُ اَبِـى الْفُرَاتِ كُنْتُ عِنْدَ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيْزِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَذَكَرَ رَجُلٌ يَّزِيْدَ لَعْنَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَقَالَ قَالَ اَمِيْرُ الْـمُؤْمِنِيْنَ يَزِيْدُ بْنُ مُعَاوِيَةَ فَقَالَ تَقُوْلُ اَمِيْرُ الْـمُؤْمِنِيْنَ وَاَمَرَ بِهٖ فَضُرِبَ عِشْرِيْنَ سَوْطًا.
অর্থ: “নওফেল ইবনে আবুল ফারাত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একদা আমি খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বসেছিলাম। তখন এক ব্যক্তি ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির আলোচনা করতে যেয়ে, তাকে ‘আমীরুল মু’মিনীন’ খেতাবে সম্বোধন করলে খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত ব্যক্তিকে বললেন, এই সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিকে ‘আমীরুল মু’মিনীন’ বলছো? এই কথা মুবারক বলে তিনি এই অপরাধের জন্য তাকে বেত্রাঘাত করার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তাকে বিশটি বেত্রাঘাত করা হলো।” (তারীখুল খুলাফা ১৬৬)
মহান আল্লাহ পাক তিনি মালঊনদের সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلَـمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ بَدَّلُوْا نِعْمَتَ اللهِ كُفْرًا وَّاَحَلُّوْا قَوْمَهُمْ دَارَ الْبَوَارِ.
অর্থ: “আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যে, যারা কুফরীবশত মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নিয়ামত মুবারক উনাকে বদল করেছে এবং তাদের সম্প্রদায়কে ধ্বংসের ঘরে নামিয়ে এনেছে?” (সম্মানিত সূরা ইবরাহীম শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ২৮)
এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আল্লামা কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনার মধ্যে মালঊনদের সম্পর্কে বলেন-
كَفَرَ يَزِيْدُ لَعْنَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَمَنْ مَّعَهٗ بِـمَا اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ وَانْتَصَبُوا الْعَدَاوَةَ اٰلَ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَتَلُوْا حَضْرَتْ اَلْاِمَامَ حُسَيْنًا عَلَيْهِ السَّلَامُ ظُلْمًا وَّكَفَرَ يَزِيْدُ لَعْنَةُ اللهِ عَلَيْهِ بِدِيْنِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتّٰى اَنْشَدَ اَبْيَاتًا حِيْنَ قَتَلَ حَضْرَتْ اَلْاِمَامَ حُسَيْنًا عَلَيْهِ السَّلَامُ مَضْمُوْنَـهَا
اَيْنَ اَشْيَاخِىْ يَنْظُرُوْنَ اِنْتِقَامِىْ...
بِاٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبَنِىْ هَاشِمٍ
وَاٰخِر الْاَبْيَاتِ
وَلَسْتُ مِنْ جُنْدُبٍ اِنْ لَـمْ اَنْتَقِمْ.....
مِنْ بَنِىْ اَحْمَدَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا كَانَ فَعَلَ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি ও তার সাথীদের উপর যে নেয়ামত দিয়েছিলেন, তারা তা প্রত্যাখান করেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! তারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বৈরিতার পতাকা উড়ায়। না‘ঊযুবিল্লাহ! তারা অন্যায়ভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করে। না‘ঊযুবিল্লাহ! আর ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দ্বীন তথা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে অস্বীকার করে। না‘ঊযুবিল্লাহ! এমনকি সে যখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করে, তখন সে অনেকগুলো চরণ আবৃত্তি করে। যার বিষয়বস্তু হলো-
اَيْنَ اَشْيَاخِىْ يَنْظُرُوْنَ اِنْتِقَامِىْ......
بِاٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبَنِىْ هَاشِمٍ
‘আমার পূর্বপুরুষরা আজ কোথায়, তারা বেঁচে থাকলে আজ দেখতো কীভাবে আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর ও বনী হাশিম উনাদের উপর প্রতিশোধ নিয়েছি।’ না‘ঊযুবিল্লাহ!
তার চরণসমূহের শেষাংশ হলো-
وَلَسْتُ مِنْ جُنْدُبٍ اِنْ لَـمْ اَنْتَقِمْ ...
مِنْ بَنِىْ اَحْمَدَ صلى الله عليه وسلم مَا كَانَ فَعَلَ
অর্থ: “বদরের যুদ্ধে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার পূর্বপুরুষদের সাথে যা কিছু করেছেন, তার বদলা যদি আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বংশধর আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে না নেই, তাহলে আমি জুনদুব বংশদ্ভূত হয়েছি কেনো! না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী শরীফ ৫/২৭১)
সে মদকে হালাল করে নিয়েছিলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! সে মদের প্রশংসায় বলেছিলো-
فَاِنْ حُرِّمَتْ يَوْمًا عَلٰى دِيْنِ اَحْمَدَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ...
فَخُذْهَا عَلـٰى دِيْنِ الْـمَسِيْحِ بْنِ مَرْيَمَ
অর্থ: “যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দ্বীন তথা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম-এ মদ হারাম হয়, তাহলে হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম উনার ধর্মের উপর ভিত্তি করে তুমি তা গ্রহণ করো।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী শরীফ ৫/২৭১)
মূলত সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার কারণেই ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি এবং তার যারা সাঙ্গপাঙ্গ ছিলো, তারা প্রত্যেকেই কঠিন লা’নতের মধ্যে পরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের অস্থিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। তাদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক তিনি অনেক পূর্বেই উনার যিনি হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সম্মানিত ওহী মুবারক করে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! যেমন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنِ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُمَا قَالَ اَوْحَى اللهُ تَعَالـٰى اِلـٰى سَيِّدِنَا حَبِيْبِنَا شَفِيْعِنَا مَوْلَانَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنِّـىْ قَتَلْتُ بِيَحْيَـى بْنِ زَكَرِيَّا عَلَيْهِمَا السَّلَامُ سَبْعِيْنَ اَلْفًا وَّاِنِّـىْ قَاتِلٌ ۢبِابْنِ ابْنَتِكَ سَبْعِيْنَ اَلْفًا وَّسَبْعِيْنَ اَلْفًا.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সম্মানিত ওহী মুবারক করেছেন যে, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, নিশ্চয়ই যারা ইয়াহ্ইয়া ইবনে যাকারিয়্যা আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে জড়িত ছিলো, এর কাফফারা বাবদ আমি তাদের সত্তর হাজার লোককে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি। আর আপনার যিনি লখতে জিগার, আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার যিনি মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে যারা জড়িত থাকবে, এর কাফফারা বাবদ তাদের ৭০ হাজার এবং ৭০ হাজার মোট কমপক্ষে ১ লক্ষ ৪০ হাজার লোককে নিশ্চিহ্ন করে দিবো, ধ্বংস করে দিবো, তাদের অস্তিত্ব বিলীন করে দিবো।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম ২/৩১০, ৬৪৮, ৩/১৯৫, খছাইছুল কুবরা ২/১৯২)
মহান আল্লাহ পাক তিনি মুজাদ্দিদে আ’যম মামদুহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম হযরত আস সাফাফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার মুবারক উসীলায় আমাদের সবাইকে ছহীহ সমঝ, বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন দান করুন। আমীন।
কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনার সাথে সম্পৃক্তরা কঠিন খোদায়ী গযবে পতিত-
সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম উনাকে কারবালায় শহীদ করার ব্যপারে হযরত উলামায়ে কিরামগণ উনারা ইজমা করেছেন যে, বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক, নির্মম, বেদনাদায়ক এবং হৃদয়বিদারক বিষয় হলো কারবালার ঘটনা। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নকশা মুবারক। তিনি হচ্ছেন ঈমানের মূল। এবং নাজাতের মূল। অথচ মুসলমান নামধারীরাই উনাকে শহীদ করলো। উনার শাহাদাত মুবারক উনার সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত সকলের জন্য মহান আল্লাহ পাক, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের এবং সমস্ত মাখলুকাতের লা’নত। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن ام المؤمنين حضرت ام سلمة عليها السلام دخل حضرت حسين عليه السلام على رسول الله صلى الله عليه وسلم ففزع فقالت حصزت ام سلمة عليها السلام ما لك يارسول الله صلى الله عليه و سلم قال ان جبريل عليه السلام اخبرنى ان ابنى هذا يقتل وانه اشتد عضب الله على من يقتله
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু সালামা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি তাশরীফ মুবারক নিলে উনাকে বেশ অস্বাভাবিক দেখা যায়। তখন উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু সালামা আলাইহাস সালাম তিনি আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন বিষয় আপনাকে ভিন্ন শান মুবারকে নিয়েছে। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এই মাত্র হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমার খিদমত মুবারকে আরয করলেন যে, আমার এই আওলাদ আলাইহিস সালাম তিনি শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করবেন। আর উনার শাহাদাতী শান মুবারক উনার সাথে সম্পৃক্তদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার অত্যধিক কঠিন গোস্বা ও আযাব নাযিল হবে। (কানযুল উম্মাল)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, একজন খলীফা উনার শাহাদাত মুবারকের কারণে ৩৫ হাজার লোককে, একজন নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারকের জন্য ৭০ হাজার এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারকের জন্য ১ লক্ষ ৪০ হাজার লোককে আখিরাতে তো অবশ্যই এমনকি দুনিয়াতে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। সত্যিই কারবালার ঘটনার সাথে জড়িতরা কঠিন আযাব-গযবে পতিত হয়ে লাঞ্ছনা-গঞ্জনার সাথে মৃত্যুবরণ করেছে।
কারবালার ঘটনা ইবনে যিয়াদের সেনাপতিত্বে সংঘটিত হয়। পরবর্তীতে আশিকে রসূল হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইবনে যিয়াদকে কঠিন যন্ত্রণার দ্বারা হত্যা করেন। তার শরীর কুকুরকে খাওয়ানো হয়। আর তার মাথা সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে
عن حضرت عمارة بن عمير قال : لما جيء برأس عبيد الله بن زياد وأصحابه نضدت في المسجد في الرحبة فانتهيت إليهم وهو يقولون قد جاءت قد جاءت فإذا حية قد جاءت تخلل الرؤس حتى دخلت في منخري عبيد الله بن زياد فمكثت هنيهة ثم خرجت فذهبت حتى تغيبت ثم قالوا قد جاءت قد جاءت ففعلت ذلك مرتين أو ثلاثا
অর্থ: হযরত আম্মার ইবনে উমাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন। ইবনে যিয়াদ ও তার সাথীদের কর্তিত মাথাগুলো যখন (হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি) উনার নিকট নেয়া হলো, তখন আমি মসজিদে ছিলাম। সংবাদ পেয়ে আমি সেখানে গেলাম। লোকজন বলতে লাগলো আসতেছে! আসতেছে! আমি দেখলাম একটা অদ্ভুত আকারের সাপ এলো। সাপটি মাথাগুলোর চারদিকে ঘুরতে লাগলো। অতঃপর ইবনে যিয়াদের নাক দিয়ে প্রবেশ করলো। সাপটি তার নাকের ভিতর কিছু সময় অতিবাহিত করলো। তারপর বেরিয়ে আসলো। তারপর আবার প্রবেশ করলো এবং কিছু সময় থেকে আবার বের হলো। এভাবে মোট দু’বার মতান্তরে তিনবার সেই অদ্ভুদ সাপটি ইবনে যিয়াদের মাথায় প্রবেশ করেছে। নাউযুবিল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابي رَجَاءٍ الْعُطَارِدِيَّ ، يَقُولُ : " لا تَسُبُّوا عَلِيًّا وَلا أَهْلَ هَذَا الْبَيْتِ ، فَإِنَّ جَارًا لَنَا مِنْ بَلْهُجَيْمِ ، قَالَ : أَلَمْ تَرَوْا إِلَى هَذَا الْفَاسِقِ الْحُسَيْنِ بن عَلِيٍّ قَتَلَهُ اللَّهُ ، فَرَمَاهُ اللَّهُ بِكَوْكَبَيْنِ فِي عَيْنَيْهِ ، فَطَمَسَ اللَّهُ بَصَرَهُ " .
অর্থ: হযরত আবু রজা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে গাল-মন্দ করো না। বনু জুহাইম গোত্রের আমাদের এক প্রতিবেশী কুফা হতে ফিরে এসে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনাকে ফাসিকের ছেলে ফাসিক বলে গালি দিলো। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! তাকে হত্যা করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! বর্ণনাকারী বলেন, তখন মহান আল্লাহ পাক সেই নরাধমের চোখে দুটি উল্কা নিক্ষেপ করলেন, (আসমান থেকে দুটি উল্কা এসে তার চোখে আঘাত করলো) তৎক্ষণাত সে অন্ধ হয়ে গেল। (আহমদ শরীফ, তাবারনী)
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, কারবালার ঘটনার সাথে জড়িত এক ব্যক্তি হঠাৎ অন্ধ হয়ে যায়। তাকে তার অন্ধত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে, এক রাত্রে সে স্বপ্নে দেখে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারকে একখানা লাঠি। উনার সামনে কারবালার ঘটনার সাথে জড়িত দশজনের কর্তিত মাথা পড়ে রয়েছে। তিনি স্বপ্ন দ্রষ্টাকে লক্ষ্য করে বললেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার কাজে সম্পৃক্ত থাকায় তুই অন্ধ হয়ে যাবি। এ বলে তিনি উনার লাঠি মুবারক দ্বারা তার চোখে দুটি আঘাত করেন। ফলশ্রুতিতে তৎক্ষণাত সে অন্ধ হয়ে যায়। (জাওযী)
কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়, উজ্জল ত্বক বিশিষ্ট এক লোক। যে তার ঘোড়ার পিছনে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার মাথা মুবারক বেঁধে ছিলো। সে ক্রমন্বয়ে কয়লার ন্যায় কালো হয়ে যায়। সে বলে যে, সে যখনই ঘুমায় তখনই দেখে যে, দুই ব্যক্তি তাকে ধরে জ্বলন্ত আগুনে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। সেই আগুনের কারণে সে সারা শরীরে জ্বালা অনুভব করে এবং তাপের কারণে তার শরীর কালো হয়ে যায়। (জাওযী)
অন্য কিতাবে উল্লেখ করা হয়, এক ব্যক্তি এক মজলিসে বলে যে, কারবালার ঘটনার সাথে জড়িতদের নাকি দুনিয়াতেই কঠিন শাস্তি হবে? আমি তো কারবালার ঘটনার সাথে জড়িত। আমার তো কিছুই হলো না। একথা বলার কিছুক্ষণ পরে সে বাতি ধরাতে যায়। তখন তার দাড়িতে আগুন লাগে। মুহূর্তের মধ্যে সে পুড়ে সম্পূর্ণ কয়লায় পরিণত হয়ে যায়।
মহান আল্লাহ পাক তিনি উম্মাহকে কারবালার ঘটনা হতে ইবরত-নছীহত হাছিল করার তাওফীক্ব দান করুন।
সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শহীদে কারবালা, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম বাণী মুবারক থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, যারা উনার পবিত্রতম শাহাদাত মুবারক উনার সাথে জড়িত ছিল তারা সকলেই ছিল কাফির-
হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “ ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আসল ও নকলের পরিচয় পরিষ্কার দেখিয়ে গেলেন।” ইয়াযীদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো কারবালায় যাননি। যদি সত্যিকারভাবে যুদ্ধ করার জন্যই তিনি কারবালয় গমন করতেন, তাহলে পবিত্রতম শিশু আওলাদ আলাইহিমুস সালামসহ ও পবিত্রতম আহলে পাক উনাদেরকে নিয়ে অবশ্যই কারবালায় যেতেন না। মূলত, কাফিরেরা তাদের হাক্বীক্বত উন্মোচোনের জন্য, মুনাফিকী ও কুফরী ফাঁস করার জন্য পবিত্রতম দাওয়াতের ছলে আহবান করেছিল। আর তিনি আসল-নকল মুসলমান উনাদের সঠিক পরিচিতি তুলে ধরার জন্য কারবালার প্রান্তরে তাশরীফ গ্রহণ করেন। যা সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শেষ ‘বাক্য মুবারক’ যে কত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল; তা থেকে পরিষ্কারভাবে পরিস্ফুট হয়েছে। ইয়াযীদের সেনাবাহিনীতে সবাই ছিল নামধারী মুসলমান। অথচ হযরত ইমাম আলাইহিস সালাম তিনি জিহাদের শুরুতেই তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই বলছিলেন, তোমাদের মধ্যে কি একজনও মুসলমান নেই? তোমাদের মধ্যে কি একজনও সত্যিকার মুসলমান নেই? অর্থাৎ তোমরা সবাই মুখোশধারী, মুনাফিক, তোমাদের অন্তরে এক বিন্দু পরিমাণ ঈমানও নেই? যদি তোমাদের অন্তরে এক বিন্দু পরিমাণ ঈমানও থাকতো তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিধন করতে তোমরা আসতে না! ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এ বাক্যটিই সমগ্র মানব জাতিকে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, সমস্ত অন্যায় ও মিথ্যার বিরুদ্ধে জিহাদ করা প্রত্যেক ঈমানদার মুসলমান উনাদেরই একান্ত কর্তব্য।
‘রওজাতুশ শুহাদা’ গ্রন্থে বর্ণিত আছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নুরুর রবি’য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহারা আলাইহাস সালাম উনার নিকট ইলহাম করেছেন ক্বিয়ামত পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের সকল পুরুষ-মহিলা এমনকি সমস্ত কায়িনাতবাসী সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার মুহব্বতের জন্যই ক্রন্দন করতে থাকবে। সুবহানাল্লাহ! হযরত আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছে দেহলভী রহমতুল্লাহি তিনি লিখেছেন, ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার পূতঃপবিত্রতম আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কারবালার হৃদয়বিদারক, মর্মান্তিক, করুণ শাহাদাত মুবারক উনার দুঃখে দুঃখিত হয়ে শোকে-শোকাতুর হয়ে বেদনায় ব্যাথিত হয়ে করুণ দৃশ্যের বর্ণনায় ক্বিয়ামত পর্যন্ত রোনাজারি, কান্নাকাটি করতে থাকবে। সুবহানাল্লাহ! (ছিররুশ শাহাদাতাইন)
তিনি হচ্ছেন উম্মতের হিদায়েতের বাতি তথা একমাত্র মহান নূর এবং নাজাতের তরী। কেননা উনার পবিত্র আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে সকল উম্মাহ হিদায়েতের নূর পাবে। আর ক্বিয়ামতের দিন উনার পবিত্রতম শাহাদাত মুবারক উনার বদলায় অসংখ্য উম্মাহ নাজাত পাবে। সুবহানাল্লাহ! যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
إنّ حضرة الحسين عليه السلام مصباح الهدى و سفينة النجاة
অর্থ: অবশ্যই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন পবিত্রতম হিদায়েত উনার আলোকবর্তিকা এবং পরিপূর্ণ নাজাতের তরী। (মুসীরুল আহযান, পৃষ্ঠা নং ৪)
অপর এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার শাহাদাতী শান মুবারক উনার বিনিময়ে উনাকে অমূল্য তিনটি বিষয় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের নাজাতের জন্য হাদিয়া করেন। সুবহানাল্লাহ!
১. উনার মাধ্যমেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম বংশধারা, ইমামত ও বিলায়াত মুবারক ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!
২. উনার পবিত্রতম মাজার শরীফ উনার গম্বুজ মুবারক-এর নিচে যারা যে দোয়াই করবেন তার সকল দোয়াই নির্ঘাত কবুল হবে। সুবহানাল্লাহ!
৩. উনার মাজার শরীফ উনার পবিত্রতম ‘মাটি মুবারক’ দ্বারা মানুষ সমস্ত প্রকার অসুস্থতা থেকে সুস্থতা মুবারক লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ!
ফোরাত নদীসহ সমস্ত কায়িনাতের যিনি মালিক, যিনি সৃষ্টির মূল অথচ উনার সেই মহাসম্মানিত আওলাদ উনাদেরকে কুখ্যাত ইয়াযীদ কাফির গোষ্ঠিরা ফোরাত নদীর এক ফোঁটা পানিও পান করতে দেয়নি। নাউযুবিল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرة علي عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أهل بيتي أمان لأمتي
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার পবিত্র আহলি বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারাই হচ্ছেন- আমার উম্মতের একমাত্র নিরাপত্তাদানকারী তথা একমাত্র নাজাতদানকারী। সুবহানাল্লাহ! (কানযুল উম্মাল)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে সুস্পষ্ট যে পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন কুল-কায়িনাতবাসীর নিরাপত্তাদানকারী, রহমতদানকারী, নাজাতদানকারী তথা সমস্ত কিছুর মালিক উনারাই। সুবহানাল্লাহ! অথচ আহলে বাইত উনাদের মধ্যমণি, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কলিজা মুবারক উনার টুকরা মুবারক সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার পূত-পবিত্র নবী পরিবার উনাদের সাথে কিরূপ নিষ্ঠুর-নির্মম আচরণ করা হয়েছিল; তা নি¤েœ বর্ণনা করা হলো-
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি যখন ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহির বাহিনীকে সরাসরি জানিয়ে দিলেন যে, “তোমাদের পক্ষ থেকে যে ব্যবস্থাই তোমরা নাও না কেন, আমি কিছুতেই ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহির হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবো না এবং করতে পারি না” কেননা সে আমার নানাজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক থেকে দূরে সরে গিয়েছে; এমনকি মদ্যপানসহ সমস্ত হারাম কাজে সে লিপ্ত হয়েছে, তখন ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি বাহিনীর মনোভাব এত জঘন্য রূপ ধারণ করলো যে, তারা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তথা নবী পরিবার আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য ফোরাত নদীর পানি বন্ধ করে দিলো। নাঊযুবিল্লাহ! সেদিন ছিল ৭ই মুহররমুল হারাম ৬১ হিজরী। ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি বাহিনী প্রায় চার হাজার সৈন্য ফোরাত নদীর তীরে নিয়োজিত করলো। এদের মধ্যে দুই হাজার ছিল ‘পদাতিক বাহিনী’ আর দুই হাজার ছিল ‘অশ্বারোহী’। তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, উনাদেরকে যেন এক ফোঁটা পানিও নিতে দেয়া না হয়। সে নির্দেশ অনুযায়ী উনাদের জন্য তারা পানি বন্ধ করে দিলো। নাঊযুবিল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরাশিজন সঙ্গী-সাথী উনাদের মধ্যে দুগ্ধপোষ্য শিশু আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনারাও ছিলেন এবং পর্দানশীন সম্মানিত মহিলা উনারাও ছিলেন। তিনি শুনে আরো আশ্চর্য হয়ে গেলেন যে, উনাদের মোকাবিলা করার জন্য বাইশ হাজার সৈন্য এসেছে। কী আশ্চর্য! বিরাশিজনের মোকাবিলায় বাইশ হাজার সৈন্য! আবার এই বিরাশিজনের মধ্যে শিশু ও মহিলা উনারা রয়েছেন। অথচ উনাদের মোকাবিলায় যে বাইশ হাজার সৈন্য তারা সবাই যুবক এবং তারা সর্ব প্রকারের অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে এসেছে। এরপরও তারা পানি বন্ধ করে দিলো। কারণ তাদের ধারণা হলো যে, উনারা যদি পানি পান করে জিহাদ করেন, তাহলে তারা ২২ হাজার হয়েও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাই পানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটা সীমাহীন যুলুমের উপর পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন যুলুম ছিল।
আফসুস! ওই সব যালিম ও কুখ্যাত কাফির ইয়াযীদ বাহিনীর জন্য, যারা এমন এক সুমহান ব্যক্তি এবং উনার সম্মানিত নবী পরিবার আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্যে পানি বন্ধ করে দিলো, যিনি হচ্ছেন সাকিয়ে কাওছার, শাফিয়ে মাহশার, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অত্যন্ত আদরের নাতী সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
ওই কুখ্যাত ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি বাহিনীর প্রধান কুখ্যাত ইবনে যিয়াদ এই কাট্টা কাফিরটা তার কুখ্যাত বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিল যে, “মানুষ, জীব-জন্তু, গরু-ছাগল, পশু-পাখি, বিধর্মী সবাই এই ফোরাত নদীর পানি পান করবে, তোমরা বাধা দিও না। কিন্তু সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার এই মুবারক আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পানি পান করতে দিয়ো না।” নাঊযুবিল্লাহ! যেই ফোরাত নদীর পানি পান করতে জীব-জন্তু, পশু-পাখি কারো জন্য বাধা ছিল না। কিন্তু সাকিয়ে কাওছার, শাফিয়ে মাহশার, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অতিপ্রিয় নাতি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সেই ‘ফোরাত নদীর’ পানি পান করতে বাধা দিলো। এমনকি নবী পরিবার উনার নূরানী দুগ্ধপোষ্য শিশু আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত আলী আছগর আলাইহিস সালাম উনার মুবারক প্রাণবায়ু মুবারক পানির জন্য ছটফট করতেছিলেন, সে সময় সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র উনার দুগ্ধপোষ্য আওলাদ আলাইহিস সালাম উনার জন্য পানির আবেদন করলে কাফিররা পানির পরিবর্তে শিশু আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত আছগর আলাইহিস সালাম উনাকে নির্দয়, নির্মমভাবে শহীদ করে। নাঊযুবিল্লাহ! যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নিষ্ঠুর, নির্মম ও পশুর চেয়েও জঘন্যতম, নজীরবিহীন, সর্বনিকৃষ্ট বর্বর ঘটনা। এজন্য ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত কায়িনাতবাসীর পক্ষ থেকে কাফির ইয়াযীদ ও তার কুখ্যাত গোষ্ঠীর উপর চির লা’নত ও ধিক্কার। আমীন!
0 Comments:
Post a Comment