সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আওলাদ আলাইহিমুস সালাম ( সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম)


 
সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আওলাদ আলাইহিমুস সালাম ( সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম)

উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মোট তিন জন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনারা ছিলেন। উনারা হচ্ছেন, সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম (সাইয়্যিদাতুনা হযরত উমামাহ বিনতে আবুল আছ ইবনে রবী’ আলাইহাস সালাম) তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে যুন নূর আল আউওয়াল আলাইহিস সালাম (সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে আবুল আছ ইবনে রবী’ আলাইহিস সালাম) তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে যুন নূর আছ ছানী আলাইহিস সালাম তিনি অর্র্থাৎ উনারা। সুবহানাল্লাহ!

সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম:

সিব্ত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যিন নূর আলাইহাস সালাম তিনি অনুষ্ঠানিকভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ সংঘটিত হওয়ার পরের দিন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ২৮শে রজবুল হারাম শরীফ ইয়াওমুছ ছুলাছা’ শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তখন দুনিয়াবী দৃষ্টিতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ৫০তম বছর মুবারক পার হয়ে ৫১তম বছর মুবারক চলমান। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিবতুন-সিবত্বতুন (নাতী-নাতনী) আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম তিনিই সর্বপ্রথম দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশে কতো বেমেছাল খুশি মুবারক প্রকাশ করেছেন, তা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! মূলত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রিয়পাত্র উনাদের মধ্যে সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম তিনি অন্যতম। সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُـصَـلِّـىْ وَهُوَ حَامِلٌحَضْرَتْ اُمَامَةَ بِنْتَ زَيْنَبَ بِنْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا سَجَدَ وَضَعَهَا وَاِذَا قَامَ حَـمَلَهَا

 অর্থ: “হযরত আবূ ক্বাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিতা বানাত আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বানাত (মেয়ে) সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত কাঁধ মুবারক-এ নিয়ে (প্রায় সময়) সম্মানিত নামায মুবারক আদায় করতেন। যখন তিনি সম্মানিত সিজদা মুবারক করতেন, তখন উনাকে পাশে রেখে দিতেন। আবার যখন ক্বিয়াম করতেন (দাঁড়াতেন), তখন পুনরায় উনাকে  মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল আযহার মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কোল মুবারক-এ) তুলে নিতেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মুয়াত্তা শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ ইত্যাদি) 

অপর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ بَيْنَا نَـحْنُ فِى الْمَسْجِدِ جُلُوْسٌ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـحْمِلُ حَضْرَتْ اُمَامَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ بِنْتَ اَبِـى الْعَاصِ بْنِ الرَّبِيْعِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَاُمُّهَا حَضْرَتْ زَيْنَبُ بِنْتُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِىَ صَبِيَّةٌ يَّـحْمِلُهَا عَلـٰى عَاتِقِهٖ فَصَلّٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِىَ عَلـٰى عَاتِقِهٖ يَضَعُهَا اِذَا رَكَعَ وَيُعِيْدُهَا اِذَا قَامَ حَتّٰى قَضٰى صَلَاتَهٗ يَفْعَلُ ذٰلِكَ بـِهَا.

অর্থ: “হযরত আবূ ক্বাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদে নববী শরীফ-এ উপস্থিত থাকাকালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত উমামাহ বিনতে যুন নূর (আবিল আছ) ইবনে রবী’ আলাইহাস সালাম উনাকে নিয়ে আমাদের নিকট মহাসম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন, উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান ছিলেন উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! এ সময় (সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম) তিনি ছোট ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে সম্মানিত কাঁধ মুবারক-এ নিয়ে আসেন এবং উনাকে সম্মানিত কাঁধ মুবারক-এ নিয়েই সম্মানিত নামায মুবারক আদায় করেন। তিনি যখন সম্মানিত রুকু মুবারক করতেন, তখন উনাকে পাশে রাখতেন। আর যখন সম্মানিত ক্বিয়াম মুবারক করতেন (দাঁড়াতেন), তখন উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল আযহার মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কোল মুবারক-এ) তুলে নিতেন। এভাবেই তিনি উনার সম্মানিত নামায মুবারক শেষ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, ইবনে হিব্বান, শু‘য়াবুল ঈমান ইত্যাদি)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

عَنْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اُهْدِيَتْ لَهٗ هَدِيَّةٌ فِيْهَا قِلَادَةٌ مِّنْ جَزْعٍ فَقَالَ لَاَدْفَعَنَّهَا اِلـٰى اَحَبِّ اَهْلِـىْ اِلَـىَّ فَقَالَتِ النِّـسَاءُ ذَهَبَتْ بـِهَا ابْنَةُ اَبِـىْ قُحَافَةَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَدَعَا النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَضْرَتْ اُمَامَةَ بِنْتَ زَيْنَبَ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ فَعَلَّقَهَا فِـىْ عُنُقِهَا.

অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ আকীক জাতীয় বিশেষমণি দ্বারা তৈরি একখানা সম্মানিত দামি হার মুবারক হাদিয়াস¦রূপ আসলো। তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, অবশ্য অবশ্যই আমি এই সম্মানিত হার মুবারক আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ উনাদের মধ্যে যিনি আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় উনাকে হাদিয়া মুবারক করবো। সুবহানাল্লাহ! তখন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা বলাবলি করছিলেন, সম্ভবত এই সম্মানিত হার মুবারক উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহসাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনাকে হাদিয়া করা হবে। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুন নিসা ‘আলাল আলামীন, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা মেয়ে সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম উনাকে ডেকে উনার সম্মানিত গলা মুবারক-এ এই সম্মানিত হার মুবারকখানা পরিয়ে দিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ ৬/১০১, আল ওয়াফী ৩/২৯৬, গয়াতুল মাক্বছাদ ৪/৭, যখায়েরুল ‘উক্ববাহ ১/১৬১, ইছাবাহ ৮/২৫, মুসনাদে আবী ইয়া’লা ৭/৪৪৫ ইত্যাদি ) 

অন্য বর্ণনায় এসেছে, 

عَنْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ اُهْدِىَ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قِلَادَةٌ مِّنْ جَزْعٍ مُّلَمَّعَةٌ بِالذَّهَبِ وَنِسَاؤُهٗ مُـجْتَمِعَاتٌ فِـىْ بَيْتٍ كُلُّهُنَّ وَحَضْرَتْ اُمَامَةُ بِنْتُ اَبِـى الْعَاصِ بْنِ الرَّبِيْعِ عَلَيْهَا السَّلَامُ جَارِيَةٌ تَلْعَبُ فِـىْ جَانِبِ الْبَيْتِ بِالتُّرَابِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَيْفَ تَرَيْنَ هٰذِهٖ. فَنَظَرْنَا اِلَيْهَا فَقُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا رَاَيْنَا اَحْسَنَ مِنْ هٰذِهٖ قَطُّ وَلَا اَعْجَبَ. فَقَالَ ارْدُدْنَهَا اِلَـىَّ. فَلَمَّا اَخَذَهَا قَالَ وَاللهِ لَاَضَعَنَّهَا فِـىْ رَقَبَةِ اَحَبِّ اَهْلِ الْبَيْتِ اِلَـىَّ. قَالَتْ حَضْرَتْ عَائِشَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَاَظْلَمَتْ عَلَـىَّ الْاَرْضُ بَيْنِـىْ وَبَيْنَهٗ خَشْيَةَ اَنْ يَّضَعَهَا فِـىْ رَقَبَةِ غَيْرِىْ مِنْهُنَّ وَلَا اَرَاهُنَّ اِلَّا اَصَابَهُنَّ مِثْلَ الَّذِىْ اَصَابَنِـىْ وَوَجَـمْنَا جَـمِيْعًا سُكُوْتًا فَاَقْبَلَ بِـهَا حَتّٰى وَضَعَهَا فِـىْ رَقَبَةِ اُمَامَةَ بِنْتِ اَبِـى الْعَاصِ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَسُرِّىَ عَنَّا. 

অর্থ:“উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ আকীকজাতীয় বিশেষ মণি দ্বারা তৈরি, যা স¦র্ণ মিশ্রিত বা স¦র্ণ দ্বারা আবৃত এরূপ একখানা দামি সম্মানিত হার মুবারক হাদিয়া মুবারক এসেছিলো। তখন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সকলেই সম্মানিত হুজরা শরীফ-এ অবস্থান মুবারক করছিলেন। তখন সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত উমামাহ বিনতে যুন নূর ইবনে রবী’ আলাইহাস সালাম উনার অল্প বয়স মুবারক ছিলো। ফলে তিনি সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার পার্শ্বে মাটি নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনারা এই সম্মানিত হার মুবারক উনাকে কিরূপ দেখছেন? তারপর আমরা সকলেই সম্মানিত হার মুবারক উনার দিকে তাকালাম এবং বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমরা এই সম্মানিত হার মুবারক উনার মতো এরূপ অবাক করা অধিক সুন্দর হারকখনো দেখিনি। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনারা সম্মানিত হার মুবারকখানা আমার নিকট নিয়ে আসুন। তারপর তিনি সম্মানিত হার মুবারকখানা নিয়ে বললেন, নিশ্চয়ই যিনি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয়, উনার সম্মানিত গলা মুবারক-এ আমি এই সম্মানিত হার মুবারকখানা পরিয়ে দিবো। সুবহানাল্লাহ! উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, অতঃপর আমার উপর যমীন অন্ধকারাচ্ছন্ন হলো, আমার এবং উনার মাঝে, এই চিন্তায় যে, তিনি আমি ব্যতিত অন্য কোনো উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত গলা মুবারক-এ এই সম্মানিত হার মুবারকখানা পরিয়ে দেন কিনা। আমি দেখলাম যে, আমার উপর যা আপতিত হয়েছে, অন্য সকল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের উপরও তা আপতিত হয়েছে। আমরা প্রত্যেকেই পরিপূর্ণরূপে নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত হার মুবারকখানা এনে সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত গলা মুবারক-এ পরিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর আমরা প্রত্যেকেই আনন্দিত হলাম, খুশি মুবারক প্রকাশ করলাম।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারনী ২২/৪৪২, মাজমাউয যাওয়াইদ ৯/২৫৪, সিমতুন নুজূম ১/২১৪, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৩২)

সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ:

সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যুবাইর ইবনে ‘আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো। সাইয়্যিদুনা হযরত যুবাইর ইবনে ‘আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার মামাতো ভাই। ফলে তিনিমহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পূর্বে সাইয়্যিদুনা হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত উমামাহ আলাইহাস সালাম উনার অভিভাবক মনোনীত করে যান। সুবহানাল্লাহ!

কিতাব-এ বর্ণিত রয়েছে,

وَلَـمَّا كَبُرَتْ حَضْرَتْ اُمَامَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ تَزَوَّجَهَا عَلِىُّ بْنُ اَبِـىْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ بَعْدَ مَوْتِ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَكَانَتْ حَضْرَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَصَّتْ حَضْرَتْ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنْ يَّـتَزَوَّجَهَا فَلَمَّا تُـوُفِّـيَتْ حَضْرَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ تَزَوَّجَهَا. 

অর্থ: “আর যখন সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম তিনি বড় হন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ করেন। কেননা উম্মু আবীহা আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত ওছীয়ত মুবারক করেছিলেন যে, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ পাওয়ার পর তিনি যেন সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ করেন। সুবহানাল্লাহ! তাই উম্মু আবীহা আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (উসদুল গবাহ ৬/২২)

আর এই সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার বিষয়টি ফায়ছালা করেন সাইয়্যিদুনা হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি। সুবহানাল্লাহ!

অপর দিকে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর সাইয়্যিদুনা হযরত মুগীরা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উমামাহ আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ করেন। এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, 

فَلَمَّا تُوُفِّـىَ حَضْرَتْ عَلِـىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَقَضَتِ الْعِدَّةَ تَزَوَّجَهَا الْـمُغِيْرَةُ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ فَوَلَدَتْ لَهٗ حَضْرَتْ يَـحْيٰـى عَلَيْهِ السَّلَامُ وَبِهٖ كَانَ يُكَنّٰى فَهَلَكَتْ عِنْدَ الْـمُغِيْرَةِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ. 

 অর্থ: “অতঃপর যখন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত ইদ্দত মুবারক পূর্ণ করেন, তখন হযরত মুগীরা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ করেন। (কেউ কেউ বলেছেন) হযরত মুগীরা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনারসম্মানিত হুজরা শরীফ মুবারক-এ সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম উনার হযরত ইয়াহইয়াহ আলাইহিস সালাম নামে একজন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আওলাদ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার সম্মানিত নাম মুবারক অনুযায়ী হযরত মুগীরা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সম্মানিত কুনিয়াত মুবারক গ্রহণ করেছিলেন। (তিনি অল্প বয়স মুবারক-এ মহাসম্মানিতও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।) অতঃপর সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত মুগীরা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ থাকা অবস্থায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (উসদুল গবাহ ৬/২২)

 আবার কেউ কেউ বলেছেন, সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম উনার কোনো সম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম সম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেননি।

সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে যুন নূর আল আউওয়াল আলাইহিস সালাম:

সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম উনার ছোট ভাই। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত মুবারক করার ১৩ মাস ১৬ দিন পূর্বে তথা ১ বছর ১ মাস ১৬ দিন পূর্বে ২৬শে মুহররমুল হারাম শরীফ ইয়াওমুল খমীস শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম উনার ন্যায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল মুহব্বত, আদর, স্নেহ মুবারক লাভ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি উনার মহাসম্মানিত নানাজান সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত তত্ত্বাবধান মুবারক-এ বড় হন। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি যখন বণী গদ্বিরাহ গোত্রে দুধ মুবারক পানরত ছিলেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকে দেখার জন্য সেখানে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেন এবং উনাকে সম্মানিত কোল মুবারক-এ নিয়ে সম্মানিত বুক মুবারক-এ জড়িয়ে নেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, 

مَنْ شَارَكَنِـىْ فِـىْ شَىْءٍ فَاَنَا اَحَقُّ بِهٖ.

অর্থ: “অন্য সবার থেকে সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার উপর আমার অধিকতর হক্ব রয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! 

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছেন,

وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَرْدَفَهٗ عَلـٰى رَاحِلَتِهٖ وَفِىْ رِوَايَةٍ اُخْرٰى نَاقَتِهٖ يَوْمَ الْفَتْحِ

অর্থ: “সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকে উনার সম্মানিত বাহন মুবারক উনার পিছনে, অপর বর্ণনায় রয়েছে উনার উট মুবারক উনার পিছনে আরোহণ মুবারক করিয়েছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (ত্ববারনী, মা’রেফাতুছ ছাহাবাহ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ, উসদুল গবাহ ইত্যাদি)

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিতও পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের সময় যেই উট মুবারক-এ সম্মানিত আরোহণ মুবারক করে সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ-এ প্রবেশ করেছেন, সেই একই উট মুবারক-এ সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনিও সম্মানিত অবস্থান মুবারক করছিলেন। সুবহানাল্লাহ! তাহলে এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকে কতো বেমেছাল মুহব্বত মুবারক করতেন। সুবহানাল্লাহ! তাহলে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল সেটা জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! 

তিনি ১৫ হিজরী সনের ১০ই রজবুল হারাম শরীফ ইয়াওমুল আহাদ শরীফ ইয়ারমূকের জিহাদে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! 

কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

وعلى بن أبي العاص قتل يوم اليرموك

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি ইয়ারমূকের সম্মানিত জিহাদ মুবারক-এ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” সুবহানাল্লাহ!  

ইয়ারমূক প্রান্তরেই উনার সম্মানিত জানাযা উনার নামায মুবারক পড়া হয় এবং সেখানেই উনার সম্মানিত ও পবিত্র রওযা শরীফ অবস্থিত। সুবহানাল্লাহ! তিনি দুনিয়ার যমীনে ১৫ বছর ৫ মাস ১৪ দিন সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!

সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে যুন নূর আছ ছানী আলাইহিস সালাম:

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে যুন নূর আছ ছানী আলাইহিস সালাম তিনি ২য় হিজরী শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১৮ই শাওওয়াল শরীফ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (ইয়াওমুল ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!


এক নজরে সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি আলাল আলামীন, উম্মু আবীহা আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত পরিচিতি মুবারক-

 আফযালু নিসা ওয়ান নাস বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বানাত (মেয়ে) আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে তিনি হচ্ছেন ‘আল ঊলা তথা প্রথমা।’ সুবহানাল্লাহ! তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারিণী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মুহব্বত মুবারকই হচ্ছেন সম্মানিত ঈমান। 

নিম্নে এক নজরে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পরিচিতি মুবারক তুলে ধরা হলো-

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক: সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! 

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুনিয়াত মুবারক: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু উমামাহ আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লক্বব মুবারক: আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বিদ্ব‘আতুম মির রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, আন নূরুল ঊলা, উম্মু আবীহা এছাড়াও আরো অসংখ্য অগণিত। সুবহানাল্লাহ! 

যেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লক্বব মুবারক দ্বারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পরিচিতি মুবারক গ্রহণ করেছেন: আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফযালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আব্বাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আম্মাজান আলাইহাস সালাম: উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুবুওওয়াত-রিসালাত মুবারক প্রকাশের প্রায় ১১ বছর পূর্বে ২১শে জুমাদাল উখরা শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ বা’দ ফজর। সুবহানাল্লাহ! 

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র স্থান মুবারক: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র অবস্থান মুবারক: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ভাই-বোন আলাইহিমুস সালাম এবং আলাইহিন্নাস সালাম: মহাসম্মানিত ও মহাপবত্রি ৪ ভাই আলাইহিমুস সালাম এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ৪ বোন আলাইহিন্নাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! 

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বোন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র অবস্থান মুবারক: আল ঊলা তথা প্রথমা। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ভাই-বোন আলাইহিমুস সালাম এবং আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র অবস্থান মুবারক: ছানিয়াহ তথা দ্বিতীয়া। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঈমান মুবারক প্রকাশ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুবুওওয়াতী এবং রিসালতী শান মুবারক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তখন উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বয়স মুবারক ছিলেন প্রায় ১১ বছর। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ: আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুবুওওয়াত-রিসালাত মুবারক প্রকাশ উনার ৯ মাস ২০ দিন পূর্র্বে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ২২শে জুমাদাল ঊলা শরীফ লাইলাতু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (লাইলাতুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার)। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বয়স মুবারক: ৯ বছর ১১ মাস ১ দিন অর্থাৎ প্রায় ১০ বছর। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র যাওজুম মুকাররম আলাইহিস সালাম: সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম (সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল আছ আলাইহিস সালাম)। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আওলাদ আলাইহিমুস সালাম এবং আলাইহিন্নাস সালাম: মোট ৩ জন। উনারা হচ্ছেন-

(১) সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত বিনতে যুন নূর আলাইহাস সালাম (সাইয়্যিদাতুনা হযরত উমামাহ্ আলাইহাস সালাম),

(২) সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে যুন নূর আলাইহিস সালাম (সাইয়্যিদুনা হযরত আলী ইবনে যুন নূর আলাইহিস সালাম) এবং 

(৩) সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনে যুন নূর আলাইহিস সালাম (সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুন নূর আলাইহিস সালাম)। তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবত্রি আওলাদ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন।

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ৮ম হিজরী শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ৮ই মুহাররমুল হারাম শরীফ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার) ইশরাকের ওয়াক্তে। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র স্থান মুবারক: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র অবস্থান মুবারক: ৩০ বছর ৬ মাস ১৭ দিন। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে তিনিই সর্বাধিক সময় দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জান্নাতুল বাক্বী’ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!


কায়িনাতের বুকে এক অভূতপূর্ব এবং বেমেছাল সম্মানিত তাজদীদ মুবারক:সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল আছ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন ‘সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম।’ সুবহানাল্লাহ!

 নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, 

وَاِنِّـىْ زَوَّجْتُهُ ابْنَتَـىْ فَذٰلِكَ سَمَّاهُ اللهُ عِنْدَ الْـمَلَائِكَةِ ذَا النُّوْرِ وَسَـمَّاهُ فِى الْـجِنَانِ ذَا النُّوْرَيْنِ فَمَنْ شَتَمَ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَدْ شَتَمَنِـىْ. 

অর্থ: “আর নিশ্চয়ই আমি আমার মহাসম্মানিতা দুইজন বানাত আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম উনার সাথে নিসবতে আযীম শরীফ দিয়েছি। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিকট হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বানাম মুবারক রেখেছেন ‘যুন নূর’ এবং সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক রেখেছেন ‘যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম’। সুবহানাল্লাহ! তাই যে ব্যক্তি উনাকে তিরস্কার করলো, সে মূলত আমাকেই তিরস্কার করলো।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (কানযুল উম্মাল ১৩/৫৩)

এ সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত সীরত বিশারদ হাফিয আবুল ফিদা আল্লামা ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,

ثُـمَّ زَوَّجَهٗ بِاُخْتِهَا الْاُخْرٰى اُمَّ كُلْثُوْمٍ عَلَيْهَا السَّلَامُ بِنْتُ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلِـهٰذَا كَانَ يُقَالُ لِعُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ ذُو النُّوْرَيْنِ

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ পাওয়ার পর উনার অপর বোন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান ইবনে আফ্ফান আলাইহিস সালাম উনার সাথে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দেন। এ জন্য উনাকে ‘যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম’ বলা হয়।” সুবহানাল্লাহ!(আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৩/৪১৯)

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা বানাতউম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে এবং উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে অর্থাৎ উনাদের দুইজনকে সম্মানিতনিসবতে আযীম শরীফ করার কারণে তিনি হচ্ছেন ‘যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তথা দুই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক উনাদের মালিক।’ সুবহানাল্লাহ! অনুরূপভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল আছ ইবনে রবী’ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন ‘যুন নূর আলাইহিস সালাম তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র এক নূর মুবারক উনার মালিক’। সুবহানাল্লাহ! কেননা তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন মহাসম্মানিতা বানাত,উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ করেছেন এবং উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়েছেন। কাজেই উনাকে ‘সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম’ বলতে হবে। সুবহানাল্লাহ! একইভাবে উম্মু আবীহা আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ করার কারণে এবং উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার কারণে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনিও হচ্ছেন ‘যুন নূর আলাইহিস সালাম’। সুবহানাল্লাহ! তবে তিনি যেহেতু কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম হিসেবে মাশহূর হয়ে গেছেন। তাই উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম বলা হবে।” সুবহানাল্লাহ!

কাজেই আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ফায়সালা মুবারক অনুসারে সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল আছ ইবনে রবী’ আলাইহিস সালাম উনাকে ‘সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম’ বলা হবে। সুবহানাল্লাহ!

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম, দামাদে আউওয়াল লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সাথে কারো তুলনা করা যাবে না-

 মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

اَللهُ الصَّمَدُ

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি ছমাদ তথা  বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা ইখলাছ শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ২)

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত মাখলূকাত থেকে, সমস্ত কিছু থেকে ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত সমস্ত মাখলূকাত থেকে, সমস্ত কিছু থেকে ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ! আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত কায়িনাত থেকে, সমস্ত কিছু থেকে ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)।” সুবহানাল্লাহ!

এই সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিমহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,

اَنَّ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُوْلُ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ طَهَّرَهُمُ اللهُ مِنْ شَجَرَةِ النُّبُوَّةِ وَمَوْضِعِ الرِّسَالَـةِ وَمُـخْتَلِفِ الْمَلَائِكَةِ وَبَيْتِ الرَّحْمَةِ وَمَعْدِنِ الْعِلْمِ.

অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবসময় ইরশাদ মুবারক করতেন, আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে (আমাদেরকে) সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার বৃক্ষ, সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার স্থান, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের, উনাদের দ্বারা সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক (ইত্যাদি সমস্ত কিছু) থেকে পবিত্র রেখেছেন, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী) করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে দুররে মানছূর ৬/৬০৬, ইবনে আবী হাতিম ৯/৩১৩৩)

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আলোচ্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে- اَهْلُ بَيْتٍ نَـحْنُ (আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম) বলেÑ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে উনার নিজের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! আর طَهَّرَهُمُ الله - মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পবিত্র করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থ হলো- মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী) করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মুহতাজ ও উনাদের সম্মানার্থে উনারা সম্মানিত এবং উনাদের প্রতিই উনারা দায়েমীভাবে রুজু। সুবহানাল্লাহ! ফলে উনারা সমস্ত কিছু থেকেই বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ! 

কাজেই সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক, সম্মানিত রিসালাত মুবারক, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের, উনাদের দ্বারা সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক ইত্যাদি বরকতময় নিয়ামত মুবারক উনাদের প্রতি রুজু হওয়ার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কোন সুযোগ নেই। অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা সমস্ত কিছু থেকে পবিত্র, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কারণেই সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক, সম্মানিত রিসালাত মুবারক, সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা, সম্মানিত রহমত মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারকসহ সমস্ত কিছুই ফযীলতপ্রাপ্ত হয়েছেন, সম্মানিত হয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!

তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কত বেমেছাল, তা এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

 সেটাই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ لَّا يُقَاسُ بِنَا اَحَدٌ.

অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো ক্বিয়াস বা তুলনা করা যাবে না।” সুবহানাল্লাহ!সুবহানাল্লাহ!সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী ৪/২৮৩, জামি‘উল আহাদীছ ২২/২১৯, কানজুল উম্মাল ১২/১০৪, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/২৪৯৫০, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ১/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৭ ইত্যাদি)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

عَنْ حَضْرَتْ عَـلِـىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ شَجَرَةُ النُّبُوَّةِ وَمَعْدِنُ الرِّسَالَـةِ لَيْسَ اَحَدٌ مِّـنَ الْـخَلَائِقِ يَفْضُلُ اَهْلَ بَيْـتِـىْ غَيْرِىْ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমরা সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার সম্মানিত বৃক্ষ মুবারক এবং সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার সম্মানিত খনি মুবারক। সুবহানাল্লাহ! সমগ্র সৃষ্টি জগতে একমাত্র আমি ব্যতীত দ্বিতীয় আর কেউই নেই, যে আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে। অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টি জগতে আমার পরেই আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক, ফযীলত মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম, দামাদে আউওয়াল লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্ব মুবারক। সুবহানাল্লাহ! কাজেই তিনিও সম্মানিত নুবুওয়াত মুবারক, সম্মানিত রিসালাত মুবারক, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের, উনাদের দ্বারা সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম উনার খনি মুবারক ইত্যাদি সমস্ত কিছু থেকে পবিত্র, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! উনার কারণেও সম্মানিত নুবুওয়াত মুবারক, সম্মানিত রিসালাত মুবারক, সমস্ত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা, সম্মানিত রহমত মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারকসহ সমস্ত কিছুই ফযীলতপ্রাপ্ত হয়েছেন, সম্মানিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তাই উনার সাথেও সৃষ্টি জগতের কারো তুলনা করা যাবে না। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদাতু নিসায়িল ‘আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত যাওজুম মুকাররাম সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক-

 সাইয়্যিদাতু নিসায়িল ‘আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত যাওজুম মুকাররাম সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক সম্পর্কে মানুষ বড়ই বেখবর। কিন্তু আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাতের মাঝে অত্যন্ত বেমেছালভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক প্রকাশ করেছেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “সাইয়্যিদাতু নিসায়িল ‘আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহললিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত যাওজুম মুকাররাম সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনিও হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! কাজইে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের যতো খুছূছিয়াত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক রয়েছে সমস্ত কিছুর অধিকারী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনার সাথে সৃষ্টি জগতের কারো তুলনা করা যাবে না। তিনি শুধু যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক রয়েছে সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান উনাদের অধিকারী হচ্ছেন তিনি।” সুবহানাল্লাহ!

নিম্নোক্ত ওয়াকিয়া মুবারক থেকেও সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! যখন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার নিকট আবূ জেহেলের কন্যাকে নিসবতে আযীম শরীফদিতে চেয়েছিলো, তখন তা উম্মু আবীহা আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট জানতে পেরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুতবা মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেছিলেন,

اَمَّا بَعْدُ اَنْكَحْتُ حَضْرَتْ اَبَا الْعَاصِ بْنَ الرَّبِيْعِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَحَدَّثَنِـىْ وَصَدَقَنِـىْ وَاِنَّ حَضْرَتْ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ بِضْعَةٌ مِّنِّـىْ وَاِنِّـىْ اَكْرَهُ اَنْ يَّسُوْءَهَا وَاللهِ لَا تَـجْتَمِعُ بِنْتُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبِنْتُ عَدُوِّ اللهِ عِنْدَ رَجُلٍ وَّاحِدٍ فَتَرَكَ حَضْرَتْ عَلِىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ الْـخِطْبَةَ.

অর্থ: “আমি আমার মহাসম্মানিত বানাত উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত যুন নূর ইবনে রবী আলাইহিস সালাম উনার নিকট সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দিয়েছি। তিনি আমার সাথে প্রশংসনীয় আচরণ মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি পরম সত্যবাদী এবং এমন একজন মহাসম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক, যিনি উনার কথা মুবারক রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! নিশ্চয়ই আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জিসিম মুবারক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র গোশত মুবারক উনার একখানা টুকরো মুবারক। আমি উনার কষ্ট বরদাশত করতে পারি না। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা বানাত আলাইহাস সালাম তিনি এবং মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রুর কন্যা একই ব্যক্তির নিকট থাকতে পারে না। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি তাদের প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করেন।” সুবহানাল্লাহ!(বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ ইত্যাদি)

সুতরাং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার প্রতি কতো বেমেছাল সন্তুষ্ট ছিলেন যার কারণে তিনি নিজেই উনার সম্মানিত প্রশংসা মুবারক করেছেন এবং সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তাহলে উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান কতো বেমেছাল, তা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদাতুন নিসা ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হিজরত মুবারক -

সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার প্রেক্ষাপট:

দ্বিতীয় হিজরী শরীফ উনার সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ-এ সম্মানিত বদর জিহাদ মুবারক সংঘটিত হয়। সেই সম্মানিত জিহাদ মুবারক-এ এক হাজার কুরাইশ অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনিও ছিলেন। মূলত তিনি উনার অনিচ্ছা সত্ত্বেও কুরাইশদের পিড়াপিড়ির কারণে জিহাদে উপস্থিত হয়েছেন। তিনি কস্মিনকালেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে বা সম্মানিত মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্য সেখানে উপস্থিত হননি। কারণ তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার ন্যায় ভিতরে ভিতরে সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে তখনও তা প্রকাশ করেননি। যা হোক, যুদ্ধে কুরাইশরা পরাজিত হয়। তাদের ৭০ জন নিহত এবং ৭০ জন বা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক লোক বন্দি হয়। এ সকল বন্দিদের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনিও ছিলেন। বন্দিদেরকে যখন সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ-এ নিয়ে যাওয়া হলো, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিলেন, 

اِسْتَوْصُوْا بِالْاُسَارٰى خَيْرًا.

অর্থ: “আপনারা বন্দিদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।” সুবহানাল্লাহ!

উনারা তা করেছিলেন। উনারা নিজেরা খেজুর খেতেন, কিন্তু বন্দিদেরকে রুটি প্রদান করতেন। সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ-এ অগণিত খেজুর গাছ ছিল। সুতরাং খেজুর ছিল সস্তা। কিন্তু গম ও যবের মতো খাদ্য শস্য অধিক মূল্যে খরিদ করতে হতো। তা সত্ত্বেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারসম্মানিত নির্দেশ মুবারক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা যথাযথভাবে পালন করেন ও অপরের জন্য ত্যাগের উদাহরণ প্রদর্শন করেন। সুবহানাল্লাহ!

যুদ্ধবন্দিদের হত্যা করা সে সময়ের রীতি ছিলো। এই জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত বদর জিহাদ মুবারক উনার যুদ্ধবন্দিদের হত্যা করার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত ওহী মুবারক অনুযায়ী বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে তাদের নিকট থেকে মুক্তিপণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত মুবারক গ্রহণ করেন। এক হাজার থেকে তিন বা চার হাজার দিরহাম প্রত্যেক বন্দি থেকে মুক্তিপণ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিলো।

যখন মক্কাবাসীরা অবগত হলো বন্দিদের মুক্তিপণের মাধ্যমে মুক্ত করার সুযোগ রয়েছে, তারা অতিসত্বর সে সুযোগ গ্রহণ করলো। লোকেরা তাদের পরিবারের সদস্যদের মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ দ্রুত সংগ্রহ করলো। যদিও সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি সম্পদশালী ছিলেন, কিন্তু সে সময় উনার নিকট মুক্তিপণের অর্থ ছিলো না। তাই তিনি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট মুক্তিপণের ব্যবস্থা করার জন্য বার্তা মুবারক পাঠালেন। তখন উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার সময় উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার থেকে হাদিয়া মুবারক স¦রূপ যে সমস্ত অলংকার মুবারকসমূহ পেয়েছিলেন সেখান থেকে একখানা সম্মানিত হার মুবারকমুক্তিপণ হিসেবে দেয়ার সিদ্ধান্ত মুবারক গ্রহণ করলেন। সম্মানিত ও পবিত্র মক্কাবাসীরা মুক্তিপণের অর্থ প্রদানের জন্য সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ গমন করলো। তাদের মাঝে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দূত আমর ইবনে রবী’, যিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আপন ভাই তিনিও ছিলেন। এ সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

عَنْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ لَمَّا بَعَثَ اَهْلُ مَكَّةَ فِـىْ فِدَاءِ اَسْرَاهُمْ بَعَثَتْ حَضْرَتْ زَيْنَبُ عَلَيْهَا السَّلَامُ فِـىْ فِدَاءِ اَبِـى الْعَاصِ عَلَيْهِ السَّلَامُ بِـمَالٍ وَّبَعَثَتْ فِيْهِ بِقِلَادَةٍ لَّـهَا كَانَتْ عِنْدَ خَدِيْـجَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَدْخَلَـتْهَا بِـهَا عَلـٰى حَضْرَتْ اَبِـى الْعَاصِ عَلَيْهِ السَّلَامُ. قَالَتْ فَلَمَّا رَاٰهَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَقَّ لَـهَا رِقَّةً شَدِيْدَةً وَّقَالَ اِنْ رَاَيْتُمْ اَنْ تُطْلِقُوْا لَـهَا اَسِيْرَهَا وَتَرُدُّوْا عَلَيْهَا الَّذِىْ لَـهَا. فَقَالُوْا نَعَمْ. وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَخَذَ عَلَيْهِ اَنْ يُّـخَلِّىَ سَبِيْلَ حَضْرَتْ زَيْنَبَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اِلَيْهِ وَبَعَثَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَيْدَ بْنَ حَارِثَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَرَجُلًا مِّنَ الْاَنْصَارِ فَقَالَ كُوْنَا بِبَطْنِ يَأْجِجَ حَتّٰى تَـمُرَّ بِكُمَا حَضْرَتْ زَيْنَبُ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَتَصْحَبَاهَا حَتّٰى تَاْتِيَا بِـهَا.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন মক্কাবাসীরা মুক্তিপণের অর্থ প্রদানের জন্য সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ গমন করলো। তখন উম্মু আবীহা, আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলাআলাইহাস সালাম তিনিও সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার মুক্তিপণ দিয়ে উনার দূত (আমর ইবনে রবী’ উনাকে) প্রেরণ করলেন। মুক্তিপণ হিসেবে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার দূতকে কিছু মালসহ সেই সম্মানিত হার মুবারকখানাও দিয়ে প্রেরণ করেছিলেন, যেই সম্মানিত হার মুবারকখানা ছিলো উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সাথে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ হওয়ার সময় উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি উক্ত সম্মানিত হার মুবারকখানা উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করেছিলেন। যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সেই সম্মানিত স্মৃতিবাহী হার মুবারকখানা দেখলেন, তখন তিনি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হলেন। তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে বললেন,

اِنْ رَاَيْتُمْ اَنْ تُطْلِقُوْا لَـهَا اَسِيْرَهَا وَتَرُدُّوْا عَلَيْهَا الَّذِىْ لَـهَا

 ‘যদি আপনারা যথাযথ মনে করেন, তাহলে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বন্দি তথা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকে মুক্ত করে দিন এবং উনার সম্মানিত হার মুবারকখানাও ফেরত দিন।’

তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আহুম উনারা বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যা ইরশাদ মুবারক করেছেন, তাই হবে। অর্থাৎ উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকেও মুক্ত করে দিলেন এবং সেই সম্মানিত হার মুবারকখানাও ফেরত দিলেন। সুবহানাল্লাহ! 

অবশ্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত শর্ত মুবারক দিলেন যে, তিনি সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ প্রত্যাবর্তন করার পর উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যায়িদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে এবং একজন হযরত আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে পাঠালেন এবং উনাদেরকে বলে দিলেন, আপনারা দু’জন সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অনতিদূরে ‘বাত্বনে ইয়া’জিজে’ অবস্থান করবেন। যখন উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে উপস্থিত হবেন, তখন সেখান থেকে আপনারা উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়ে উনাকে সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ নিয়ে আসবেন।” (আবূ দাঊদ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, আস সুনানুল কুবরা লিননাসাঈ, আল মু’জামুুল কাবীর, হাকিম, বাইহাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি)

সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার প্রস্তুতি মুবারক:

সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে সম্মানিত ও পবিত্র  মক্কা শরীফ-এ এসে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হিজরত মুবারক সম্পর্কে যা বলেছিলেন সেই সংবাদ মুবারক পৌঁছে দেন। তখন উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত মুবারক করার জন্য প্রস্তুতি মুবারক নিতে থাকেন। হযরত হিন্দ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা যিনি হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার আহলিয়াহ তিনি উনাকে সম্মানিত হিজরত মুবারক করার বিষয়ে সহযোগীতা করেছিলেন, সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়েছিলেন। সম্মানিত বদর জিহাদ উনার পর মাত্র একমাস অতিবাহিত হয়েছে। সম্মানিত ও পবিত্র মক্কাবাসীরা যুদ্ধে তাদের অতিরিক্ত ক্ষয়ক্ষতির কারণে তখনও দুঃখ-ভারাক্রান্ত। তাদের ক্ববিলাগুলো  (গোত্রসমূহ) মৃতদের জন্য শোক প্রকাশ করছিল এবং গোত্রের প্রতি অনুগত মৃতদের প্রতিশোধ নেয়ার ডাক দিয়ে যাচ্ছিলো। এ অবস্থায় সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার কোনো মুসলমান উনাদের পক্ষে সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ প্রবেশ করা যেমন অসম্ভব ছিলো তেমনিভাবে একজন মুসলমান উনার জন্য অক্ষত অবস্থায় সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ ত্যাগ করাও কঠিন ছিলো। এ কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যায়িদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে এবং একজন হযরত আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাদেরকে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য ‘বাত্বনে ইয়া’জিজে’ অপেক্ষা করার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছিলেন। স্থানটি ছিলো সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে। 

সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা:

উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার প্রস্তুতি মুবারক সম্পন্ন করলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত ভাই হযরত কিনানাহ ইবনে রবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে উনার সাথে ‘বাত্বনে ইয়া’জিজে’ যেখানে হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উনার জন্য অপেক্ষা করছেন, সে স্থান পর্যন্ত যেতে বললেন। সে সময় সম্ভ্রান্ত মহিলারা সফরকালে উটের পিঠে একটি হাওদার ভিতরে অবস্থান করতেন, যা উনাদের সম্মান মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ ছিলো। উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উটের উপর একটি হাওদার ভিতর অবস্থান মুবারক করলেন। অতঃপর তিনি সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা মুবারক হলেন। হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য একটু দূরত্ব বজায় রেখে উনাদের পিছু পিছু যাচ্ছিলেন। অন্যদিকে কুরাইশদের কিছু সংখ্যক লোক উনাদের পিছু নিলো। তারা উনাদেরকে সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বাইরে ‘জী-তুয়া’ নামক স্থানে পেলো। সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এগিয়ে যান, তিনি হচ্ছেন হযরত হাব্বার ইবনে আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি (তখনও ঈমান আনেননি) এবং ফিহরী (নাফি’ ইবনে ‘আবদে ক্বইস অথবা খালিদ ইবনে ‘আবদে ক্বইস)। হযরত হাব্বার ইবনে আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত উট মুবারকটির উপর তীর নিক্ষেপ করেন। তীরের আঘাতে উটটি লাফিয়ে উঠে এবং উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পাথরের উপর তাশরীফ মুবারক নেন, যার কারণে প্রচ- আঘাত মুবারক গ্রহণ করেন। সে সময় তিনি হামিলা শান মুবারক-এ ছিলেন। এই প্রচ- আঘাতের কারণে উনার একজন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আওলাদ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্রবরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ অবস্থায় দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। তখন উনার অনেক নূরুন নাজাত মুবারক (রক্ত মুবারক) প্রবাহিত হন। (এর ফলে তিনি দীর্ঘ দিন সম্মানিত মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং এই সম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় ৮ম হিজরী সনের ৮ই মুহাররমুল হারাম শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!)। তখন হযরত কিনানাহ ইবনে রবী’ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি ধনুকে তীর সংযোগ করলেন এবং তিনি আক্রমণকারীদের সতর্ক করলেন যে, ‘যদি তোমাদের কেউ উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্ষতি করার চেষ্টা করো, তবে তার সীনা হবে আমার তীরের লক্ষ্যস্থল।’ তিনি ছিলেন দক্ষ তীরন্দাজ। উনার নিক্ষিপ্ত কোনো তীর কখনো লক্ষ্যভ্রষ্ট হতো না। ফলে আক্রমণকারীরা থেমে গেল। যেহেতু হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য, তিনি যেন নিরাপদে সম্মানিত হিজরত মুবারক করতে পারেন সেজন্য সম্মানিত ও পবিত্র শরীফ থেকেই কিছুটা দূরুত্ব বজায় রেখে উনাদের অনুসরণ করে উনাদের পিছনে পিছনে আসতেছিলেন। ফলে তিনি এ সময় উনাদের সম্মুখেআসলেন।তিনি হযরত কিনানাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে শান্ত করলেন এবং তীর নিক্ষেপ না করার জন্য অনুরোধ করলেন। তিনি হযরত কিনানাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, কিছুদিন পর যখন লোকেরা স¦াভাবিক হবে, তখন উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ ত্যাগ করে সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ-এ তাশরীফ মুবারক রাখতে পারবেন। তিনি বলেলন, আপনি প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে মানুষের সম্মুখ দিয়ে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে বের হয়েছেন। গোটা আরববাসী জানে সম্মানিত বদর জিহাদে কুরাইশদের কী করুণ অবস্থা হয়েছিলো এবং উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত পিতা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরাইশদেরকে কী কঠিনভাবে পরাজিত করেছিলেন। আমি আগেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত ছিলাম যে, আপনি যদি এভাবে প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে উনার মহাসম্মানিত বানাত আলাইহাস সালাম উনাকে কুরাইশদের নাকের ডগার উপর দিয়ে নিয়ে যান, তাহলে এ রকম দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি আজ উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। উনার সম্মানিত চিকিৎসা মুবারক উনার ব্যবস্থা করুন। কিছু দিন তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ-এ অবস্থান মুবারক করুন। অতঃপর যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তখন আমি নিজেই উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার মহাসম্মানিত পিতা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছে দেয়ার সমস্ত ব্যবস্থা করে দিবো। হযরত কিনানাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি ছিলেন খুবই বিচক্ষণ ব্যক্তি। তিনি ফিরে যেতে সম্মত হলেন। উতবা ইবনে রবিয়ার কন্যা এবং হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার আহলিয়াহ হযরত হিন্দ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কুরাইশদের দুর্ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হলেন। 

যদিও তিনি তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বড় শত্রুদের মধ্যে গণ্য ছিলেন, তা সত্ত্বেও তিনি আক্রমণকারীদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, যারা জিহাদের ময়দানে শত্রুদের মোকাবিলায় অসামর্থ্য; কিন্তু কোনো মহিলা যিনি উনার মহাসম্মানিত পিতা উনার সাথে সাক্ষাৎ মুবারক করতে চান, উনাকে হয়রান করে, তারা কাপুরুষ। একটি কবিতায় তিনি তাদেরকে বললেন,

اَفِـى السِّلْـمِ اَعْيَارًا جَفَاءً وَّغِلْظَةً ... وَّفِـى الْـحَرْبِ اَشْبَاهَ الـنِّـسَاءِ الْعَوَارِكِ

 অর্থ: “তারা ছিল বন্য গাধার ন্যায়, যারা শান্তির সময় খুবই কঠোর এবং কর্কশ। কিন্তু যুদ্ধের সময় স¦াভাবিক মাজুরতায় রত নারীদের মতো।” (ইবনে হিশাম ৩/২০৭, বিদায়া নিহায়া ৩/৪০০, আর রওদ্বতুল উনফ ৩/১০৫)

আক্রমণকারীদেরকে পেলেই কতল করার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক:

উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর আক্রমণের পর পরই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ সংবাদ পেশ করা হয়। সংবাদ পেয়ে তিনি অত্যন্ত কষ্ট পান। আর যারা উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর আক্রমণ করেছিলো তিনি তাদের প্রতি খুবই অসন্তুষ্ট হন। এমনকি সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে সারিয়্যাহ প্রেরণ করেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে সম্মানিত নির্দেশ মুবারক প্রদান করেন যে, 

اِنْ ظَفِرْتُـمْ بـِهَبَّارِ بْنِ الْاَسْوَدِ وَالرَّجُلِ الَّذِىْ سَبَقَ مَعَهٗ اِلـٰى حَضْرَتْ زَيْنَبَ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَحَرِّقُوْهُـمَا بِالنَّارِ 

অর্থ: “যদি আপনারা হাব্বার ইবনে আসওয়াদকে এবং তার সাথে যে লোকটি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে এগিয়ে গিয়েছিলো, তাদের উপর বিজয়ী হন, তাহলে তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলবেন।” সুবহানাল্লাহ!

অপর বর্ণনায় রয়েছে, 

اِنْ وَّجَدْتُّـمُوْهُ فَاجْعَلُوْهُ بَيْنَ حُزْمَتَـىْ حَطَبٍ ثُـمَّ اَشْعِلُوْا فِيْهِ النَّارَ

অর্থ: “আপনারা যদি তাকে হাতের মুঠোয় পান, তাহলে তাকে লাকড়ির দুই আঁটির মাঝে রেখে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ! (সুনানে সা‘ঈদ ইবনে মানছূর ২/২৮৬)

পরের দিন তিনি আবার ইরশাদ মুবারক করেন, 

اِنّـِــىْ كُنْتُ اَمَرْتُكُمْ بِتَحْرِيْقِ هٰذَيْنِ الرَّجُلَيْنِ اِنْ اَخَذْتُـمُوْهُـمَا ثُـمَّ رَأَيْتُ اَنَّهٗ لَا يَنْبَغِىْ لِاَحَدٍ اَنْ يُّـعَـذِّبَ بِالنَّارِ اِلَّا اللهُ فَاِنْ ظَفِرْتُـمْ بِـهِمَا فَاقْتُلُوْهُـمَا

অর্থ:“আমি আপনাদেরকে নির্দেশ মুবারক দিয়েছিলাম যে, যদি আপনারা আক্রমণকারীদেরকে ধরতে পারেন, তাহলে আগুনে পুড়িয়ে মারবেন। কিন্তু পরে আমি সিদ্ধান্ত মুবারক গ্রহণ করলাম যে, কাউকে আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারক। কাজেই, আপনারা যদি তাদেরকে ধরতে পারেন, তাহলে কতল করবেন।’ সুবহানাল্লাহ!(বুখারী শরীফ, মুছান্নাফে আবী শায়বা ১২/৩৮৯, রওদ্বতুল উনফ ৩/১০৫, ইবনে হিশাম ৩/২০৮, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ২/২৮৭ ইত্যাদি)

অপর বর্ণনায় রয়েছে,

اِنْ وَّجَدْتُّـمُوْهُ فَاقْطَعُوْا يَدَهٗ ثُـمَّ اقْطَعُوْا رِجْلَهٗ ثُـمَّ اقْطَعُوْا يَدَهٗ ثُـمَّ اقْطَعُوْا رِجْلَهٗ فَلَمْ تُصِبْهُ السَّرِيَّةُ

অর্থ: “যদি আপনারা তাকে পান, তাহলে প্রথমে তার (ডান) হাত কাটবেন। তারপর (ডান) পা কাটবেন। অতঃপর (বাম) হাত কাটবেন। তারপর (বাম) পা কাটবেন। কিন্তু সারিয়্যাহ তাকে পায়নি।” সুবহানাল্লাহ! (সুনানে সা‘ঈদ ইবনে মানছূর ২/২৮৬)

পরবর্তীতে হযরত হাব্বার ইবনে আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

اِنَّالْاِسْلَامَ مَـحَا ذٰلِكَ .

অর্থ: “নিশ্চয়ই ইসলাম এই সমস্ত কিছু মিটিয়ে দিয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (ওয়াক্বিদী)

উল্লেখ্য যে, স¦াভাবিকভাবে সম্মানিত শরীয়ত মুবারক উনার বিধান হচ্ছে, কতলের পরিবর্তে কতল। কিন্তুউম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যারা কষ্ট দিয়েছিলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বিরুদ্ধে সারিয়্যাহ প্রেরণ করেছেন। শুধু তাই নয়, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন, তাদেরকে পেলেই আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্য। সুবহানাল্লাহ! অবশ্য পরে সম্মানিতনির্দেশ মুবারক দিয়েছেন কতল করার জন্য। সুবহানাল্লাহ! তবে এমনভাবে কতল করার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন যে, “প্রথমে ডান হাত কাটবেন। তারপর ডান পা কাটবেন। অতঃপর বাম হাত কাটবেন। তারপর বাম পা কাটবেন। অর্থাৎ তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিয়ে মৃত্যুদ- দেয়ার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক কত বেমেছাল এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে কতো বেমেছাল মুহব্বত মুবারক করতেন। যেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলেরচিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ:

কিছুদিন পর যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলো, তখন হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি হযরত উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত হিজরত মুবারক করার সমস্ত ব্যবস্থা করে দিলেন।একদিন মধ্য রাতে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত কিনানাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনিসম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে বের হলেন। তিনি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী ‘বাত্বনে ইয়া’জিজে’ নিয়ে হযরত যায়িদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার এবং হযরত আনসার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার অর্থাৎ উনাদের নিকট পৌঁছিয়ে দিলেন। হযরত যায়িদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি এবং হযরত আনসার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি অর্থাৎ উনারা উভয়ে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। উনারা নিরাপদে সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ-এ পৌঁছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার লখতে জিগার, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কাছে পেয়ে বেমেছাল সম্মানিত খুশি মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!সাথে সাথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারাও বেমেছাল খুশি প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

হযরত হাব্বার ইবনে আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ:

এ সম্পর্কে হযরত ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ আল ওয়াক্বিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘মাগাযী’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন, 

فَبَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ بِالْمَدِيْنَةِ فِـىْ اَصْحَابِهٖ اِذْ طَلَعَ حَضْرَتْ هَبَّارُ بْنُ الْاَسْوَدِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَكَانَ لَسِنًا فَقَالَ يَا مُـحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُبَّ مَنْ سَبَّكَ اِنّـِــىْ قَدْ جِئْتُ مُقِرًّا بِالْاِسْلَامِ اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَاَنَّ مُـحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

অর্থ: “একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ-এ বসা ছিলেন। হঠাৎ সেখানে হযরত হাব্বার ইবনে আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি আসলেন। তিনি সুভাষী ছিলেন। তিনি বললেন, يَا مُـحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُبَّ مَنْ سَبَّكَ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে যে আঘাত দিয়েছে, আপনি তাকে হত্যা করুন!’ নিশ্চয়ই আমি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার স¦ীকৃতি নিয়ে এসেছি।

اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَاَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, উনার কোনো শরীক নেই। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ‘আবদ তথা হাবীব এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ! (মাগাযী ১/৮৫৭, ইমতা’ ২/২৩৮)

কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি কবূল করেন এবং ইরশাদ মুবারক করেন, 

يَا حَضْرَتْ هَبَّارُ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَفَوْتُ عَنْكَ وَالْاِسْلَامُ يـَجُبُّ مَا كَانَ قَـبْلَهٗ

অর্থ: “হে হযরত হাব্বার রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু, আমি আপনার অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছি। আর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম তিনি উনার পূর্বের সমস্ত কিছু বাতিল করে দেন, মিটিয়ে দেন।” সুবহানাল্লাহ! (নিহায়াতুল ঈজাঝ ১/৩৬৩) 

সাইয়্যিদাতুন নিসা ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত লক্বব মুবারক-

 মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, 

وَلِلّٰهِ الْاَسْـمَاءُ الْـحُسْنٰـى فَادْعُوْهُ بِـهَا.

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার অনেক সুন্দর সুন্দর সম্মানিত নাম মুবারক তথা সম্মানিত লক্বব মুবারক রয়েছে, তোমরা উনাকে সেই সম্মানিত নাম মুবারক তথা সম্মানিত লক্বব মুবারক দ্বারা আহ্বান মুবারক করো।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আ’রাফ শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ১৮০) 

মহান আল্লাহ পাক তিনি যেমন অসীম ঠিক তেমনিভাবে উনার সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার সংখ্যাও অসীম। সুবহানাল্লাহ! অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার সংখ্যাও অসীম। এক কথায় তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন; এছাড়া সমস্ত লক্বব মুবারক উনার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ! ঠিক একইভাবে আফদ্বলুন নিসা ওয়ান নাস বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মু আবীহা, আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া যত সম্মানিত লক্বব মুবারক রয়েছে সমস্ত সম্মানিত লক্বব মুবারক উনাদের অধিকারিণী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! এখানে উনার কতিপয় সম্মানিত বরকতময় লক্বব মুবারক উল্লেখ করা হলো: 

১. خَيْرُ بَنَاتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা সর্বশ্রেষ্ঠ বানাত (মেয়ে) আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

২. اَهْلُ بَيْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ।

৩. سَيِّدَةُ النِّسَاءِ عَلَى الْعَالَمِيْنَ (সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন)- সারা কায়িনাতে যত মহিলা রয়েছেন উনাদের প্রত্যেকের সাইয়্যিদাহ।

৪. سَيِّدَةُ نِسَاءِ اَهْلِ الْـجَنَّةِ (সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ)- সম্মানিত জান্নাতবাসী সমস্ত মহিলাগণ উনাদের সাইয়্যিদাহ।

৫. بِضْعَةٌ مِّنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (বিদ্ব‘আতুম মির রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জিসিম মুবারক উনার সম্মানিত গোশত মুবারক উনার একখানা সম্মানিত টুকরো মুবারক।

৬. اَلنُّوْرُ الاُوْلـى (আন নূরুল ঊলা): আন নূরুল ঊলা। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে প্রথম, তাই উনাকে “আন নূরুল ঊলা” বলা হয়। সুবহানাল্লাহ!

৭. اَفْضَلُ بَنَاتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা সর্বশ্রেষ্ঠ বানাত (মেয়ে) আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

৮. اَفْضَلُ الـنِّـسَاءِ وَالنَّاسِ بَعْدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (আফদ্বলুন নিসা ওয়ান নাস বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর সমস্ত মহিলা এবং সমস্ত মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম ব্যক্তিত্বা মুবারক।

৯. اُمُّ اَبِيْهَا (উম্মু আবীহা)- উনার মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম।

১০. اَلسَّيِّدَةُ (আস সাইয়্যিদাহ)- সর্বশ্রেষ্ঠা।

১১. اَلْبُشْرٰى (আল বুশরা)- সম্মানিত সুসংবাদ মুবারক।

১২. اَلْـحَافِظَةُ (আল হাফিয¦হ)- সর্বোত্তম হিফাযতকারিণী, সর্বশ্রেষ্ঠ সংরক্ষণকারিণী।

১৩. اَلْـحَامِدَةُ (আল হামিদাহ)- সর্বোত্তম প্রশংসাকারিণী।

১৪. حَبِيْبَةُ اللهِ (হাবীবাতুল্লাহ)- মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীবাহ।

১৫. اَلْـحَلِيْمَةُ (আল হালীমাহ)- পরম ধৈর্যশীলা, মহাসহনশীলা।

১৬. اَلْـحَوْرَاءُ (আল হাওরা’)- বেমেছাল সৌন্দর্য মুবারক উনার অধিকারিণী। মহাসম্মানিতা মানবীয় হুর মুবারক।

১৭. اَلْـخَالِصَةُ (আল খ¦ালিছাহ)- খালিছাহ, পূত-পবিত্রা।

১৮. اَلْـخَبِيْرَةُ (আল খ¦বীরাহ)- মহাবিচক্ষণা।

১৯. اَلْـخَلِيْلَةُ (আল খালীলাহ)- আখাচ্ছুল খাছ মাহবূবাহ।

২০. خَلِيْلَةُ الرَّحْـمٰنِ (খ¦লীলাতুর রহমান)- মহান আল্লাহ পাক উনার আখাচ্ছুল খাছ মাহবূবাহ।

২১. ذَاتُ السَّكِيْنَةِ (যাতুস সাকীনাহ)- সাকীনাহ, শান্তি, প্রশান্তি, ইতমিনান মুবারক উনাদের মালিকাহ।

২২. اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ (উসওয়াতুন হাসানাহ্)- সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক, অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয়।

২৩. ذَاتُ الـصِّـرَاطِ الْمُسْتَقِيْمِ (যাতুছ ছিরাত্বিল মুস্তাক্বীম)- ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার মালিকাহ।

২৪. ذَاتُ الْعِزَّةِ (যাতুল ‘ইযযাহ)- সম্মানিত ইজ্জত মুবারক উনার মালিক।

২৫. ذَاتُ الْفَضْلِ (যাতুল ফাদ্বল)- সম্মানিত ফযল মুবারক উনার মালিক।

২৬. ذَاتُ الْكَرَامَةِ (যাতুল কারামাহ)- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান-মান মুবারক উনার মালিক।

২৭. ذَاتُ الْوَسِيْلَةِ (যাতুল ওয়াসীলাহ)- সম্মানিত ওসীলাহ মুবারক উনার মালিকাহ।

২৮. اَلرَّاضِيَةُ (আর রাদ্বিয়াহ)- আখাচ্ছুল খাছ সন্তুষ্টি মুবারক প্রাপ্তা সুউচ্চ মর্যাদা-মর্তবা মুবারক উনার অধিকারিণী এবং সুউচ্চ মর্যাদা-মর্তবা মুবারক দানকারিণী।

২৯. رَحْـمَةُ الْاُمَّةِ (রহমাতুল উম্মাহ)- সমস্ত উম্মত উনাদের জন্য সম্মানিত রহমত মুবারক।

৩০. لِّـلْـعَـالَـمِيْنَ رَحْـمَةٌ (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন)- সমস্ত আলমের জন্য সম্মানিত রহমত মুবারক।

৩১. اَلرَّشِيْدَةُ (আর রশীদাহ)- সৎপথপ্রাপ্তা, সৎপথ প্রদর্শনকারিণী, ন্যায়পরায়ণা।

৩২. اَلـزَّكِـيَّةُ (আঝ ঝাকিইয়্যাহ)- পূত-পবিত্রা, মহাবিচক্ষণা।

৩৩. اَلسَّابِقَةُ بِالْـخَيْرَاتِ (আস সাবিক্বাতু বিল খইরাত)- খইর, কল্যাণ, ভালাই ইত্যাদি সর্ববিষয়ে অগ্রগামিণী।

৩৪. اَلسَّخِيَّةُ (আস সাখিইয়্যাহ)- মহাদানশীলা।

৩৫. سَـيِّـدَةُ الْكَوْنَيْنِ (সাইয়্যিদাতুল কাওনাঈন)- দুই জগতের সাইয়্যিদাহ।

৩৬. اَلشَّافِعَةُ (আশ শাফি‘য়াহ)- সর্বোত্তম সুপারিশকারিণী, সর্বশ্রেষ্ঠ শাফায়াতকারিণী।

৩৭. اَلشَّاكِرَةُ (আশ শাকিরহ)- যথার্থ পুরস্কারদানকারিণী, যথাযথ শুকরিয়া আদায়কারিণী।

৩৮. اَلطَّاهِرَةُ (আত্ব ত্বাহিরহ)- পূত-পবিত্রা, পূত-পবিত্রতাদানকারিণী।

৩৯. اَلطَّبِيْبَةُ (আত ত্ববীবাহ)- যাহিরী-বাতিনী ও জিসমানী-রূহানী সর্ববিষয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ শিফাদানকারিণী, আরোগ্যদানকারিণী।

৪০. اَلـطَّـيِّـبَةُ (আত্ব ত্বইয়্যিবাহ)- মহাপবিত্রা, সর্বশ্রেষ্ঠা।

৪১. اَلْعَابِدَةُ (আল ‘আবিদাহ)- একনিষ্ঠ ইবাদাতকারিণী, মহান আল্লাহ পাক উনার চরম অনুগতা ও আখাচ্ছুল খাছ মাহবূবা ব্যক্তিত্বা মুবারক।

৪২. اَلْعَادِلَةُ (আল ‘আদিলাহ)- চরম ন্যায়বিচারকারিণী, চরম ন্যায়পরায়ণা।

৪৩. اَلْعِصْمَةُ (আল ‘ইছমাহ)- মহাপবিত্রা, পূত-পবিত্রা।

৪৪. عِصْمَةُ اللهِ تَعَالـٰى (‘ইছমাতুল্লাহি তা‘য়ালা) মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সর্বপ্রকার পাপ থেকে মুক্ত, মহাপবিত্রা, পূত-পবিত্রা।

৪৫. اَلْعَظِيْمَةُ (আল ‘আযীমাহ)- মহাসম্মানিতা, সুমহান মর্যাদা-মর্তবা মুবারক উনার অধিকারিণী।

৪৬. اَلْعَزِيْزَةُ (আল ‘আযীযাহ)- মাহবূবাহ, মহাসম্মানিতা, বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি মুবারক উনার অধিকারিণী, মালিকাহ।

৪৭. اَلْغَنِيَّةُ (আল গ¦নিয়্যাহ)- মহাসম্পদশালিনী, মহাধনী, অমুখাপেক্ষী।

৪৮. اَلْفَاضِلَةُ (আল ফাদ্বিলাহ)- মহাসম্মানিতা, সুউচ্চ মর্যাদা-মর্তবা মুবারক উনার অধিকারিণী, সর্বশ্রেষ্ঠা, সর্বসেরা।

৪৯. اَلْفَائِقَةُ (আল ফায়িক্বাহ)- সর্বশ্রেষ্ঠা, অনন্যা।

৫০. اَلْفَصِيْحَةُ (আল ফাছীহাহ)- সুভাষিণী, বিশুদ্ধভাষিণী।

৫১. اَلْقَاسِـمَةُ (আল ক্বাসিমাহ)- বণ্টনকারিণী।

৫২. اَلْقَاضِـيَةُ (আল ক্বাদ্বিয়াহ)Ñ ফায়সালাকারিণী।

৫৩. اَلْقَائِدَةُ (আল ক্বায়িদাহ)- সাইয়্যিদাহ, মহানপরিচালিকা, হিদায়াত উনার পথে পরিচালনাকারিণী।

৫৪. قَائِدَةُ الْـخَيْرِ (ক্বায়িদাতুল খইর)- কল্যাণের দিকে পরিচালনাকারিণী, যিনি সবাইকে কল্যাণের দিকে নিয়ে যান।

৫৫. اَلْقَرِيْبَةُ (আল ক্বরীবাহ)- চিরনিকটবর্তী, অতি নিকটস্থ, অতি ঘনিষ্ঠ।

৫৬. قُرَّةُ عَيْنِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (র্কুরতু ‘আইনি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত চক্ষু মুবারক উনার সান্তনা, সম্মানিত নয়ন মুবারক উনার প্রশান্তি।

৫৭. اَلْكَرِيْـمَةُ (আল কারীমাহ)- মহাসম্মানিতা, মহামর্যাদাবান, মহাদানশীলা,

৫৮. اَلْكَوْثَرُ (আল কাওছার)- সম্মানিত কাওছার মুবারক, সম্মানিত খইরে কাছীর মুবারক, সমস্ত প্রকার কল্যাণ মুবারক ও খইরে কাছীর মুবারক উনাদের অধিকারিণী, মালিকাহ, বন্টণকারীনী, যে সমস্ত বিষয় উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়েছেন সেই বিষয়গুলোও সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বোত্তম হয়েছেন।

৫৯. اَلْمُؤْتَـمَنَةُ (আল মু’তামানাহ)- চির বিশ্বস্ত, সর্বশ্রেষ্ঠা আমানাতদার, আমানতের যথাযথ হিফাযতকারিণী।

৬০. اَلْمَأْمُوْنَةُ (আল মা’মূনাহ)- নিরাপদ, চির বিশ্বস্ত।

৬১. اَلْمَعْصُوْمَةُ (আল মা’ছূমাহ)- নিষ্পাপ, মা’ছূমাহ।

৬২. اَلْمَاجِدَةُ (আল মাজিদাহ)- গৌরবময়ী, মহামর্যাদাবান, মহান, গৌরবান্বিত।

৬৩. اَلْمُعَظَّمَةُ (আল মু’য়ায্যমাহ)- মহাসম্মানিতা, মহামর্যাদাবান।

৬৪. اَلْمُعِيْنَةُ (আল মু‘ঈনাহ)- সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারিণী।

৬৫. اَلْمُكَرَّمَةُ (আল মুর্কারমাহ)- মহাসম্মানিতা।

৬৬. اَلْمَوْعِظَةُ (আল মাওয়ি’যহ)- সর্বশ্রেষ্ঠ নছীহতকারিণী।

৬৭. اَلْمُهَذَّبَةُ (আল মুহায্যাবাহ)- পূত-পবিত্রা, মহাপবিত্রা।

৬৮. اَلنَّاصِحَةُ (আল নাছিহাহ)- সর্বশ্রেষ্ঠ নছীহতকারিণী, উপদেশদানকারিণী,

৬৯. اَلْمَانِعَةُ (আল মানি‘আহ)- (সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ সমস্ত কাজে) সর্বশ্রেষ্ঠ বাধা দানকারিণী, নিষেধকারিণী।

৭০. اَلْمُبَارِكَةُ (আল মুবারিকাহ)- বরকতদানকারিণী, কল্যাণদানকারিণী।

৭১. اَلْمُبَلِّغَةُ (আল মুবাল্লিগহ)- সম্মানিত দ্বীন উনার প্রতি আহ্বানকারিণী।

৭২. اَلْمُتَبَسِّمَةُ (আল মুতাবাসসিমাহ)- হাস্যোজ্জ্বল, যিনি মুচকি হাসি মুবারক দেন।

৭৩. اَلْمُتَّقِيَةُ (আল মুত্তাক্বিয়াহ)- সর্বশ্রেষ্ঠ মুত্তাক্বী, সর্বশ্রেষ্ঠ পরহেযগার।

৭৪. اَلْمُتَوَكِّلَةُ (আল মুতাওয়াক্কিলাহ)- সর্বশ্রেষ্ঠ তাওয়াক্কুলকারিণী।

৭৫. اَلْمَتِيْنَةُ (আল মাতীনাহ)- মহাশক্তিমান, মহাশক্তিধর। 

৭৬. اَلْمُجَاهِدَةُ (আল মুজাহিদাহ)- মুজাহিদাহ, জেহাদকারিণী।

৭৭. اَلْمُجِيْبَةُ (আল মুজীবাহ)- সাড়া দানকারিণী।

৭৮. اَلْمُجِيْرَةُ (আল মুজীরহ)- আশ্রয়দানকারিণী, সাহায্যকারিণী, রক্ষাকারিণী, উদ্ধারকারিণী।

৭৯. اَلْمَجِيْدَةُ (আল মাজীদাহ)- মহামর্যাদাবান, মহিমান্বিতা, মহীয়ান, গৌরবান্বিত, গৌরবময়ী।

৮০. اَلْمَحْفُوْظَةُ (আল মাহফূযাহ)- সংরক্ষিত।

৮১. اَلْمَحْمُوْدَةُ (আল মাহমূদাহ)- চরম প্রশংসিত।

৮২. اَلْمُخْبِرَةُ (আল মুখবিরহ)- সুসংবাদ দানকারিণী।

৮৩. اَلْمُخْتَارَةُ (আল মুখ¦তারহ)- মনোনীত, সর্বশ্রেষ্ঠা।

৮৪. اَلْمُخْتَصَّةُ (আল মুখতাচ্ছাহ)- বিশেষ ব্যক্তিত্বা মুবারক, আখাচ্ছুল খাছ ব্যক্তিত্বা মুবারক।

৮৫. اَلْـمَخْصُوْصَةُ بِالْعِزَّةِ (আল মাখ¦ছূছাতু বিল ‘ইজ্জাহ)- বিশেষ সম্মান-ইজ্জত মুবারক উনার অধিকারিণী, আখাচ্ছুল খাছ সম্মান-ইজ্জত, মর্যাদা-মর্তবা মুবারক উনাদের মালিকাহ।

৮৬. مَدِيْنَةُ الْعِلْمِ (মাদীনাতুল ‘ইলম)- সম্মানিত ইলম মুবারক উনার শহর, সমস্ত ইলম মুবারক উনার মালিকাহ।

৮৭. اَلْمُذَكِّرَةُ (আল মুযাক্কিরহ)- উপদেশ দানকারিণী, নছীহতকারিণী, তা’লীমদানকারিণী, শিক্ষা দানকারিণী।

৮৮. اَلْمُسْتَعِيْذَةُ (আল মুস্তা‘য়ীযাহ)- আশ্রয় প্রার্থনাকারিণী।

৮৯. اَلْمُسْتَقِيْمَةُ (আল মুস্তাক্বীমাহ)- সরল, সঠিক।

৯০. اَلْمَسْعُوْدَةُ (আল মাস‘ঊদাহ)- সৌভাগ্যশীলা, সর্বশ্রেষ্ঠ ভাগ্যবান। 

৯১. اَلْمَشْهُوْدَةُ (আল মাশহূদাহ)- উপস্থিত, হাযির।

৯২. اَلْمُصَدِّقَةُ (আল মুছদ্দিক্বাহ)- সত্যায়নকারিণী।

৯৩. اَلْمُصْلِحَةُ (আল মুছলিহাহ)- ইছলাহকারিণী, সংশোধনকারিণী।

৯৪. مُطَهَّرٌ  (আল মুত্বহ্হারহ)- পূত-পবিত্রা।

৯৫. مُطَهِّرٌ  (আল মুত্বহ্হিরহ্)- পূত-পবিত্রতাদানকারিণী।

৯৬. اَلْمَعْرُوْفَةُ (আল মা’রূফাহ)- পরিচিত, প্রসিদ্ধ।

৯৭. اَلْمُعَلِّمَةُ (আল মু‘য়াল্লিমাহ)- মু‘য়াল্লিমাহ, তা’লীমদানকারিণী।

৯৮. مُعَلِّمَةُ الْاُمَّةِ (মু‘য়াল্লিমাতু উম্মাহ)- সমস্ত উম্মতদেরকে তা’লীমদানকারিনী।

৯৯. اَلْـمُغِيْثَةُ (আল মুগীছাহ)- সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারিণী, ত্রাণকর্তা, উদ্ধারকারিণী।

১০০. مُقِيْمَةُ السُّنَّةِ (মুক্বীমাতুস সুন্নাহ)- সম্মানিত সুন্নত মুবারক প্রতিষ্ঠাকারিণী, আবাদকারিণী।

১০১. اَلْمُرْشِدَةُ (আল মুরশিদাহ)- পথ প্রদর্শক, হিদায়াতদানকারিণী।

১০২. مَالِكَةُ الْـجَنَّةِ (মালিকাতুল জান্নাহ)- সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মালিকাহ।

১০৩. مَالِكَةُ الْكَائِنَاتِ (মালিকাতুল কায়িনাত)- সমস্ত কায়িনাতের মালিকাহ।

১০৪. اَلْمُنْتَصِرَةُ (আল মুনতাছিরহ)- সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয়িনী, মহাশক্তিধর।

১০৫. اَلنِّعْمَةُ (আল নি’মাহ)- সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত মুবারক।

১০৬. اَلْـمُنِيْرَةُ (আল মুনীরহ)- আলোদানকারিণী, উজ্জ্বল, নূর দানকারিণী, সম্মানিত হিদায়েত মুবারক দানকারিণী, ফয়েয মুবারক দানকারিণী, সম্মানিত রহমত মুবারক দানকারিণী। 

১০৭. نِعْمَةُ اللهِ (নি’মাতুল্লাহ)- মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত মুবারক।

১০৮. نَاصِرَةُ الدِّيْنِ (নাছিরতুদ্দীন)- সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সাহায্যকারিণী,

১০৯. اَلنَّاهِيَةُ (আন নাহিয়াহ)- নিষেধকারিণী, বারণকারিণী।

১১০. اَلنَّاصِرَةُ (আন নাছিরহ)- সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারিণী।

১১১. اَلنُّوْرُ (আন নূর)- নূর মুবারক।

১১২. اَلنُّوْرُ الْمُكَرَّمَةُ (আন নূরুল মুকাররামহ)- সম্মানিত নূর মুবারক।

১১৩. اَلنُّوْرُ الْمُطَهَّرَةُ (আন নূরুল মুত্বহ্হারহ)- মহাপবিত্র নূর মুবারক।

১১৪. نُوْرُ اللهِ (নূরুল্লাহ)- মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নূর মুবারক।

১১৫. نُوْرُ الْاُمَمِ (নূরুল উমাম)- সমস্ত উম্মতের জন্য নূর মুবারক, আলোকবর্তিকা, নূরুল উমাম।

১১৬. نُوْرُ الْكَائِنَاتِ (নূরুল কায়িনাত)- সমস্ত কায়িনাতের জন্য নূর মুবারক, আলোকবর্তিকা।

১১৭. اَلْـهَادِيَةُ (আল হাদিয়াহ)- সর্বশ্রেষ্ঠ হিদায়াতকারিণী।

১১৮. هَدِيَّةُ اللهِ (হাদিয়্যাতুল্লাহ)- মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে মহাসম্মানিত হাদিয়া মুবারক, তোহফা মুবারক।

১১৯. اَلْوَاجِدَةُ (আল ওয়াজিদাহ)- যা চান তাই পান এমন সুমহান ব্যক্তিত্বা মুবারক।

১২০. اَلْوَاسِعَةُ (আল ওয়াসি‘য়াহ)- সীমাহীন ইলম মুবারক উনার অধিকারিণী, মহাদানশীলা।

১২১. اَلْوَاعِظَةُ (আল ওয়া‘য়িযহ)- সর্বশ্রেষ্ঠ ওয়ায়েজ, নছীহতকারিণী, উপদেশদানকারিণী।

১২২. اَلْوَافِـيَةُ (আল ওয়াফিয়াহ)- পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণতাদানকারিণী। 

১২৩. اَلْوَسِيْلَةُ (আল ওয়াসীলাহ)- সর্বশ্রেষ্ঠ ওয়াসীলাহ মুবারক, সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম।

১২৪. اَلْوَهَّابَةُ (আল ওহ্হাবাহ)- সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল, সীমাহীন দাতা।

 ইত্যাদি উনার বিশেষ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদাতুন নিসা ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক-

 সম্মানিত পরিচিতি মুবারক:

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আবনা তথা মহাসম্মানিত ছেলে আওলাদ আলাইহিমুস সালাম এবং মহাসম্মানিতা বানাত তথা মহাসম্মানিতা মেয়ে আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন মোট আট (৮) জন। সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার ধারাবাহিকক্রম মুবারক অনুযায়ী উনাদের সম্মানিত নাম মুবারক হচ্ছেন, 

১. ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুল আউওয়াল আলাইহিস সালাম।

২. উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । 

৩. ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুছ ছানী আলাইহিস সালাম।

৪.  ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম।

৫. বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম।

৬. বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম।

৭. বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম।এবং

 ৮. ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রবি’ আলাইহিস সালাম। 

সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রবি’ আলাইহিস সালাম তিনি শুধু উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। আর অন্যান্য সকল মহাসম্মানিত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা এবং মহাসম্মানিতা বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাউম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! 

সাইয়্যিদাতুন নিসা ‘আলাল আলামীন, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে ‘ঊলা’ বা প্রথমা। সুবহানাল্লাহ! আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের এবং মহাসম্মানিতা হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে ‘ছানিয়াহ’ তথা দ্বিতীয়া। সুবহানাল্লাহ! 

উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ফযীলত মুবারক এক কথায়- তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারিণী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:

উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক ও সম্মানিত রেসালত মুবারক প্রকাশের প্রায় ১১ বছর পূর্বে ২১শে জুমাদাল উখরা শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ বা’দ ফজর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তখন দুনিয়াবী দৃষ্টিতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ২৯ বৎসর পার হয়ে ৩০ বৎসর চলতে ছিলেন। আর উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ৪৪ বছর পার হয়ে ৪৫ বছর চলতে ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

স্মরণীয় যে, দুনিয়ার কোনো কিতাবে উপরোক্ত বর্ণনাটি উল্লেখ নেই; বরং এটা আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একখানা অভূতপূর্ব বেমেছাল সম্মানিত তাজদীদ মুবারক, যা উনার বেমেছাল শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ। সুবহানাল্লাহ! এর মাধ্যমেই প্রতিভাত হয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের সাথে আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কত বেমেছাল আখাচ্ছুল খাছ তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক। সুবহানাল্লাহ! 

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সময় উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত জান্নাত মুবারক থেকে বিশেষ সম্মানিতা মহিলা আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! 

এ সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে,

دَخَلَ عَلَيْهَا اَرْبَعُ نِسْوَةُ عَلَيْهِنَّ مِنَ الْـجَمَالِ وَالنُّوْرِ مَا لَا يُوْصَفُ فَقَالَتْ لَـهَا اِحْدَاهُنَّ اَنَا اُمُّكِ حَضْرَتْ حَوَّاءُ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَقَالَتِ الْاُخْرٰى اَنَا حَضْرَتْ اٰسِيَةُ بِنْتُ مُزَاحِم عَلَيْهَا السَّلَامُ وَقَالَتِ الْاُخْرٰى اَنَا حَضْرَتْ كُلْثُوْمٌ عَلَيْهَا السَّلَامُ اُخْتُ حَضْرَتْ مُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ وَقَالَتِ الْاُخْرٰى اَنَا حَضْرَتْ مَرْيَـمُ عَلَيْهَا السَّلَامُ بِنْتُ عِمْرَانَ اُمُّ عِيْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ جِئْنَا لنلى مِنْ اَمْرِكِ

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য চারজন সম্মানিতা মহিলা আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সম্মানিত ও পবিত্র হুজরা শরীফ-এ প্রবেশ করলেন, উপস্থিত হলেন। উনাদের চেহারা মুবারক অত্যন্ত সুন্দর ও নূরানী। ছূরতান উনাদেরকে পরিচিত মনে হচ্ছিলো না। তখন উনাদের মধ্যে একজন উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি আপনার সম্মানিতা আম্মাজান উম্মুল বাশার সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! অপরজন বললেন, আমি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আসিয়াহ বিনতে মুযাহিম আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! অপরজন বললেন, আমি জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত বোন হযরত কুলছূম আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! চতুর্থজন বললেন, আমি জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান  হযরত মারইয়াম বিনতে ইমরান আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! আমরা এসেছি আপনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য।” সুবহানাল্লাহ! 

অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতীভাবে ‘উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বিষয়টা ফায়ছালা মুবারক করেন। অর্থাৎ তিনি কুদরতীভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত আক্বীক্বাহ মুবারক দেয়া এবং সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক রাখা:

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিতা বানাত, লখতে জিগার, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সপ্তম দিনে উনার পক্ষ থেকে সম্মানিত আক্বীক্বাহ মুবারক দেন এবং উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসমবা নাম মুবারক রাখেন ‘হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম’। সুবহানাল্লাহ! 

সম্মানিত লালন-পালন মুবারক:

আফদ্বলুন নিসা ওয়ান নাস বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিতা মাতা উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার অর্র্থাৎ উনাদের সর্বাধিক সম্মানিত আদর-যতœ মুবারক-এ, সম্মানিত তত্ত্বাবধান মুবারক-এ লালিত-পালিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনিউনার মহাসম্মানিত পিতা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিতা মাতা উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের সমস্ত খুছূছিয়াত মুবারক তথা বৈশিষ্ট্য মুবারক উনাদের অধিকারিণী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত ইলম মুবারক:

মূলত, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব,নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছেন। শুধু সম্মানিত ওহী মুবারক নাযিল হওয়া ব্যতীত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক উনার অধিকারিণী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! তাছাড়া তিনি উনার মহাসম্মানিত পিতা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে এবং উনার মহাসম্মানিতা মাতা উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার কাছ থেকে সরাসরি সম্মানিত ইলম মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত ছূরত মুবারক:

উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ছূরত মুবারক ছিলেন অত্যন্ত সুন্দর, বেমেছাল বা তুলনাহীন। উনার মেছাল বা দৃষ্টান্ত মুবারক তিনি নিজেই। সুবহানাল্লাহ! তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং সাইয়্যিদাতুন নিসা ‘আলাল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের সকল গুণ মুবারক-এ গুণান্বিত। সুবহানাল্লাহ! 

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহাসম্মানিতা হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সম্মানিত মাক্বাম মুবারক-এ অনন্যা।” সুবহানাল্লাহ!

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “সাইয়্যিদাতুন নিসা ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার হুবহু নকশা মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!

তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা প্রত্যেকেই সম্মানিত জামালী ত্ববী‘য়ত মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত জামালী ত্ববী‘য়ত মুবারক উনার অধিকারিণী ছিলেন আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনার প্রায় অনুরূপ সম্মানিত জামালী ত্ববী‘য়ত মুবারক উনার অধিকারিণী ছিলেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ত্ববীয়ত মুবারক উনার মধ্যে সম্মানিত জামালী ও সম্মানিত জালালী উভয় প্রকার শান মুবারক মিশ্রিত ছিলেন, তবে সম্মানিত জালালী শান মুবারক উনার কিছুটা প্রাধান্য ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! আর সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ত্ববীয়ত মুবারক উনার মধ্যে সম্মানিত জামালী ও সম্মানিত জালালী উভয় প্রকার শান মুবারক মিশ্রিত ছিলেন, তবে সম্মানিত জালালী ত্ববীয়ত মুবারক উনার শান মুবারক বেশি প্রকাশ পেতেন।” সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত লিবাস মুবারক:

উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত লিবাস মুবারক সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ رَاَيْتُ عَلـٰى حَضْرَتْ زَيْنَبَ بِنْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَليْهِ وَسَلَّمَ قَمِيْصَ حَرِيْرٍ سِيَرَاءَ.

অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পূর্বে) আমি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অতি সুন্দর ডোরাকাটা, হালকা নকশাওয়ালা রেশমী পোশাক মুবারক পরিধান করা অবস্থায় দেখেছি।” সুবহানাল্লাহ! (নাসায়ী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মুস্তাদরকে হাকিম)

সম্মানিত পবিত্রতা মুবারক:

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

اِنَّـمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُـطَـهِّـرَكُـمْ تَطْهِيْرًا.

অর্থ: “হে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে। অর্থাৎ তিনি আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আহযাব শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৩৩) 

এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক্ব হচ্ছেন উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ:

সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল আছ ইবনে রবী’ ইবনে আব্দিল উয্যা ইবনে আবদে শামস ইবনে আবদে মানাফ ইবনে কুছাই ইবনে কিলাব আলাইহিমুস সালাম সালাম তিনি ছিলেন উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার আপন বোন হযরত হালাহ বিনতে খুওয়াইলিদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার সম্মানিত আওলাদ। অর্থাৎ তিনি হচ্ছেন উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আপন খালাতো ভাই। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নসবনামা মুবারক পিতা ও মাতা উনাদের উভয়ের দিক থেকে উপরে যেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নসবনামা মুবারক উনার সাথে মিলিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি সম্মানিত পিতা উনার দিক থেকে চতুর্থ পুরুষে যেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নসবনামা মুবারক উনার সাথে মিলিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! মূলত তিনি ছিলেন পূর্বমনোনিত। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহস সালাম হিসেবে সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি যাবতীয় উত্তম গুণাবলী মুবারক উনাদের অধিকারী ছিলেন এবং সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ-এ অত্যন্ত সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিত্ব মুবারক হিসেবে সকলের মাঝে সুপরিচিত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! 

মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশেষ মজলিস মুবারক-এ আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মু আবীহা আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জানিয়ে দেন যে, হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি (মহান আল্লাহ পাক) আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশেষ মজলিস মুবারক-এ সুসম্পন্ন করেছি। সুবহানাল্লাহ! আপনিও উনাদের সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দুনিয়ার যমীনে সুসম্পন্ন করুন। সুবহানাল্লাহ! তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনুষ্ঠানিকভাবে দুনিয়ার যমীনে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সম্পন্ন করেন। সুবহানাল্লাহ! তখন উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলেন প্রায় ১০ বছর। সময়টি ছিলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালাত মুবারক প্রকাশ পাওয়ারকিছুদিনপূর্বের কথা। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে সর্বপ্রথম উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ! তাহলে এই আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা কত বেমেছাল সম্মানিত খুশি মুবারক প্রকাশ করেছেন তা কুল কায়িনাত কল্পনাও করতে পারবে না। সুবহানাল্লাহ!

আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ সম্মানিত হাদিয়া মুবারক:

আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ মহাসম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে এবং মহাসম্মানিতা মাতা উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পক্ষ থেকে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে সকল সম্মানিত হাদিয়া মুবারক দেয়া হয়েছিলো, সে সকল সম্মানিত হাদিয়া মুবারক উনাদের মধ্যে ইয়ামেনের প্রসিদ্ধ আকীক পাথরের একখানা হার মুবারকও ছিলো। এই সম্মানিত হার মুবারকখানা হাদিয়া মুবারক করা হয়েছিলো উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পক্ষ থেকে। সুবহানাল্লাহ! এছাড়া উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পক্ষ থেকে উনাকে একখানা সম্মানিত বাড়ী মুবারকও হাদিয়া মুবরক করা হয়েছিলো। যেই সম্মানিত বাড়ী মুবারক-এউম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা সম্মানিত অবস্থান মুবারক করতেন। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ:

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালাত মুবারকপ্রকাশ পাওয়ার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা সর্বপ্রথম উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট প্রকাশ করেন। উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনিই পুরুষ-মহিলা সকলের পূর্বে সর্বপ্রথম সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! উনার সাথে সাথে উনার মহাসম্মানিতা বানাত আলাইহিন্নাস সালাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস তিনি, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি এবং আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারাও সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপরউম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অল্প সময়ের ব্যবধানে সংবাদ মুবারক পাওয়ার সাথে সাথে এসে সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! উনারাই পুরুষ-মহিলা সকলের মাঝে সর্বপ্রথম সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!

এই সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

ا اَوَّلُ مَنْ اَسْلَمَ وَاٰمَنَ فِـىْ خَلْقِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ لَـمْ يَتَقَدَّمْهَا رَجُلٌ وَّلَا امْرَاَةٌ اُمُّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الْاُوْلـٰى سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلْكُبْرٰى (حَضْرَتْ خَدِيـْجَةُ) عَلَيْهَا السَّلَامُ ثُـمَّ اَسْلَمَ وَاٰمَنَ بِنْتٌ مِّنْۢ بَنَاتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلنُّوْرُ الثَّانِيَةُ عَلَيْها السَّلَامُ وَاَسْلَمَ وَاٰمَنَ بِنْتٌ مِّنْۢ بَنَاتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلنُّوْرُ الثَّالِثَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَاَسْلَمَ وَاٰمَنَ بِنْتٌ مِّنْۢ بَنَاتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلنُّوْرُ الرَّابِعَةُ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلزَّهْرَاءُ عَلَيْهَا السَّلَامُ ثُـمَّ اَسْلَمَ وَاٰمَنَ بِنْتٌ مِّنْۢ بَنَاتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلنُّوْرُ الْاُوْلـٰى عَلَيْهَا السَّلَامُ 

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনিই মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টি জগতে সর্বপ্রথম সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন ও সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! উনার পূর্বে কোন পুরুষ মহিলা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেনি এবং সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেনি। অতঃপর বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি, বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি এবং বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর খাইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ থেকে সংকলিত)

তাই আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “উনারাই যেহেতু পুরুষ-মহিলা সকলের মাঝে সর্বপ্রথম সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেছেন। কাজেই, ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ ঈমান আনবেন এবং যত নেক আমল করবেন, সমস্ত ফযীলত উনাদের সম্মানিত আমল নামা মুবারক-এ যেয়ে পৌঁছবে। সুবহানাল্লাহ! যদিও উনারা এ সমস্ত কিছুর মুহতাজ নন; তারপরেও সাধারণভাবে উনাদের সম্মানিত ফযীলত মুবারক বুঝতে সহজ হয়।” সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া:

উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়েছেন। এই সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন, 

عَنْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ لَمَّا بَعَثَ اَهْلُ مَكَّةَ فِـىْ فِدَاءِ اَسْرَاهُمْ بَعَثَتْ حَضْرَتْ زَيْنَبُ عَلَيْهَا السَّلَامُ فِـىْ فِدَاءِ اَبِـى الْعَاصِ عَلَيْهِ السَّلَامُ بِـمَالٍ وَّبَعَثَتْ فِيْهِ بِقِلَادَةٍ لَّـهَا كَانَتْ عِنْدَ خَدِيْـجَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَدْخَلَـتْهَا بِـهَا عَلـٰى حَضْرَتْ اَبِـى الْعَاصِ عَلَيْهِ السَّلَامُ. قَالَتْ فَلَمَّا رَاٰهَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَقَّ لَـهَا رِقَّةً شَدِيْدَةً وَّقَالَ اِنْ رَاَيْتُمْ اَنْ تُطْلِقُوْا لَـهَا اَسِيْرَهَا وَتَرُدُّوْا عَلَيْهَا الَّذِىْ لَـهَا. فَقَالُوْا نَعَمْ. وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَخَذَ عَلَيْهِ اَنْ يُّـخَلِّىَ سَبِيْلَ حَضْرَتْ زَيْنَبَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اِلَيْهِ وَبَعَثَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَيْدَ بْنَ حَارِثَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَرَجُلًا مِّنَ الْاَنْصَارِ فَقَالَ كُوْنَا بِبَطْنِ يَأْجِجَ حَتّٰى تَـمُرَّ بِكُمَا حَضْرَتْ زَيْنَبُ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَتَصْحَبَاهَا حَتّٰى تَاْتِيَا بِـهَا.

অর্থ: “হযরত হারিছ ইবনে হারিছ আল গ¦ামিদী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, একদা তিনি উনার পিতার সাথে সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ-এ গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি একদল লোককে জড়ো হওয়া অবস্থায় দেখতে পেলেন। তখন তিনি উনার সম্মানিত পিতা উনাকে বলেন, হে আমার সম্মানিত পিতা, কি কারণে লোকেরা এখানে জড়ো হয়েছে, এটা কিসের জামায়াত? জবাবে উনার পিতা বলেলন, একজন মহাসম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তিনি উনার সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালাত মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! এই কারণে উনার সম্প্রদায়ের লোকজন উনার নিকট জমায়েত হয়েছে। তিনি বলেন, অতঃপর আমরা একটু উঁচু জায়গায় আরোহণ করে দেখতে পেলাম যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত তাওহীদ মুবারক (لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ)  এবং উনার প্রতি সম্মানিত ঈমান মুবারক ( مُـحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) উনাদের দিকে আহ্বান মুবারক করছেন (তথা সম্মানিত কালিমা শরীফ- لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُـحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ) উনার সম্মানিত দাওয়াত মুবারক দিচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ! লোকজন সেখানে দুপুর পর্যন্ত ছিলো। (তারা উনাকে কষ্ট দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়েছিলো এবং বিভিন্নজন বিভিন্ন এলোমেলো কথাবার্তা বলতেছিলো। না‘ঊযুবিল্লাহ!) এরপর লোকেরা চলে যেতে শুরু করলো। তখন একজন মহাসম্মানিতা মহিলা তিনি সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত করতে করতে (সম্মানিত কান্না মুবারক করতে করতে) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য এক পাত্র পানি মুবারক ও একটি রুমাল মুবারক নিয়ে অতি দ্রুততার সাথে সেই দৃশ্যপটে উপস্থিত হলেন। তিনি সেখানে এতো বেকারার ও ব্যতিব্যস্ত অবস্থায় উপস্থিত হলেন যে, যার কারণেউনার সম্মানিত ওড়না মুবারক কিছুটা সড়ে গিয়েছিলো (তিনি তখন নিজেকে যথাযথভাবে আবৃত করতে পারেননি)। তারপর তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ পানি মুবারক ও রুমাল মুবারক পেশ করেন। অতঃপরনূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত পাত্র মুবারক থেকে পানি মুবারক পান করলেন এবং ওযূ মুবারক করলেন। (আর রুমাল মুবারকখানা দিয়ে সম্মানিত নূরুর রহমত মুবারক বা সম্মানিত মুখম-ল মুবারক ও হাত মুবারক মুছলেন।) অতঃপর তিনি উনার সম্মানিত সির বা মাথা মুবারক উনার দিকে উত্তোলন করে এ কথা মুবারক বললেন, 

يَا بُنَيَّةُ خَـمِّرِىْ عَلَيْكِ نَـحْرَكِ وَلَا تَـخَافِـىْ عَلـٰى اَبِيْكِ غَلَبَةً وَّلَا ذُلًّا

“হে আমার মহাসম্মানিতা প্রিয় বানাত আলাইহাস সালাম! আপনি সম্মানিত ঘোমটা মুবারক দিন এবংআপনি আপনার সম্মানিতওড়না মুবারক দিয়ে নিজেকে আবৃত করুন। আর আপনার মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য এতো অধিক চিন্তা করা থেকে বিরত থাকুন। অবশ্যই অবশ্যই আপনার মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত কামিয়াবী মুবারক প্রকাশ পাবেন এবং কাফির-মুশরিকরা আপনার মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। সুবহানাল্লাহ! অনুরূপভাবে কাফির-মুশরিকরা কস্মিনাকালেও সফল হতে পারবে না এবং অবশ্যই অবশ্যই তারা লাঞ্ছিত হবে।” সুবহানাল্লাহ!

হযরত হারিছ গ¦ামিদী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম। ইনি কে? লোকজন বললো, তিনি হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা বানাত, লখতে জিগার, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ৩/৪৩৩, আল আহাদ ওয়াল মাছানী ৫/১৫৯, মাজমাউয যাওয়াইদ ৫/৪৩৬, জামিউল আহাদীছ ২৩/২১৩)

উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল মুহব্বতপূর্ণ সম্পর্ক মুবারক:

উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের মাঝে ছিলো বেনযীর, বেমেছাল মুহব্বতপূর্ণ সম্পর্ক মুবারক। উনাদের সেই সম্মানিত সম্পর্ক মুবারক উনার গভীরতা প্রকাশ পায়- যখন কুরাইশরা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলো তখন। সুবহানাল্লাহ!

যখন কুরাইশরা অনুভব করলো যে, কোনো পরিকল্পনা করেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার দাওয়াত মুবারক থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না। তখন তারা নতুন পরিকল্পনা করলো। কুরাইশরা বলে উঠলো, তোমাদের সর্বনাশ হোক! তোমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতাবানাত (মেয়ে) আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সাথে নিজেদের ছেলেদের বিবাহ করিয়ে উনার দুশ্চিন্তা নিজেদের ঘাড়ে তুলে নিয়েছো। নাঊযুবিল্লাহ! তোমরা যদি উনার মহাসম্মানিতা বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের থেকে নিজেদের ছেলেদেরকে বিচ্ছন্ন করে নাও, তাহলে তিনি উনাদেরকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন। নাঊযুবিল্লাহ! তাদের মধ্যে অনেকে এ কথা সমর্থন করে বললো, এ তো চমৎকার যুক্তি। নাঊযুবিল্লাহ! তারা দল বেঁধে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার নিকট গিয়ে বললো, “আপনি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং উনাকে উনার মহাসম্মানিত পিতা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছে দিন। উনার পরিবর্তে আপনি আপনার পছন্দমত কুরাইশদের যে কোনো সুন্দরী নারীকে বিবাহ করতে পারবেন।” নাঊযুবিল্লাহ!

উল্লেখ্য, উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার এবং উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের সাথে আবূ লাহাবের দুই পুত্র উতবা এবং উতাইবার আক্বদ মুবারক সম্পন্ন হয়েছিলো। যেহেতু তখন উনাদের সম্মানিত বয়স মুবারক অল্প ছিলো, তাই উনারা তাদের ঘরে তাশরীফ মুবারক নেননি। একই প্রস্তাব আবূ লাহাবের দুই পুত্র উতবা এবং উতাইবার নিকটও দেয়া হয়েছিলো। তারা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া থেকে মাহরূম হয়ে গিয়েছিলো। নাঊযুবিল্লাহ! 

কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি দৃঢ়তার সাথে কুরাইশদের এ ধারণা বাতিল করে দিলেন। তিনি বললেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তা হয় না। আমি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে কস্মিনকালেও বিচ্ছিন্ন হতে পারবো না। উনার পরিবর্তে আমাকে সমস্ত মহিলাদেরকে দিয়ে দিলেও আমার পক্ষে তা কস্মিনকালেও সম্ভব হবে না।” সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, উম্মু আবীহা, আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলাআলাইহাস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার কতোবেমেছাল মুহব্বতপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জবান মুবারক-এ সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরআলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা:

সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি কুরাইশদের নিকট যেই জবাব দিয়েছেন তাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুবই সন্তুষ্ট মুবারক হয়েছিলেন। যা তিনি পরবর্তীতে প্রকাশ করেছেন। যখন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার নিকট আবূ জেহেলের কন্যাকে নিসবতে আযীম শরীফ দিতে চেয়েছিলো, তখন তা আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট জানতে পেরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুতবা মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেছিলেন,

اَمَّا بَعْدُ اَنْكَحْتُ حَضْرَتْ اَبَا الْعَاصِ بْنَ الرَّبِيْعِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَحَدَّثَنِـىْ وَصَدَقَنِـىْ وَاِنَّ حَضْرَتْ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ بِضْعَةٌ مِّنِّـىْ وَاِنِّـىْاَكْرَهُ اَنْ يَّسُوْءَهَا وَاللهِ لَا تَـجْتَمِعُ بِنْتُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبِنْتُ عَدُوِّ اللهِ عِنْدَ رَجُلٍ وَّاحِدٍ فَتَرَكَ حَضْرَتْ عَلِىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ الْـخِطْبَةَ.

অর্থ: “আমি আমার মহাসম্মানিতা বানাত, উম্মু আবীহা আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর ইবনে রবী আলাইহিস সালাম উনার নিকট সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দিয়েছি। তিনি আমার সাথে প্রশংসনীয় আচরণ মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি পরম সত্যবাদী এবং এমন একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক, যিনি উনার কথা মুবারক রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! নিশ্চয়ই আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি আমার সম্মানিত জিসম মুবারক উনার সম্মানিত গোশত মুবারক উনার একখানা টুকরো মুবারক। আমি উনার কষ্ট বরদাশত করতে পারি না। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা বানাত আলাইহাস সালাম তিনি এবং মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রুর কন্যা একই ব্যক্তির নিকট থাকতে পারে না। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি তাদের প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ ইত্যাদি)


সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্মরণ মুবারক-এ সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ক্বাছীদা শরীফ পাঠ:

উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি বেমেছাল মুহব্বত মুবারক করতেন। উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন হিজরত মুবারক করে সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ তাশরীফ মুবারক রাখেন, তখন তিনি উনার জুদায়ীর কারণে অত্যন্ত দুঃখে-কষ্টে কালাতিপাত করতে থাকেন। একদা তিনি যখন সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পাশ দিয়ে সিরিয়া যান, তখন উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্মরণ মুবারক-এ একখানা সম্মানিত ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করেন এভাবে, 

ذَكَرْتُ زَيْنَبَ عَلَيْهَا السَّلَامُ لَمَّا وَرَدْتُّ اَرَمَا....

فَقُلْتُ سَقْيًا لِّشَخْصٍ يَّسْكُنُ الْـحَرَمَا

بِنْتُ الْاَمِيْنِ جَزَاهَا اللهُ صَالِـحَةٌ

.......وَّكُلُّ بَعْلٍ سَيُثْنِىْ بِالَّذِىْ عَلِمَا

অর্থ: “যখন আমি আরামা নামক স্থানে এসে পৌঁছি, তখন উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্মরণ হয়। আমি বললাম, যিনি সম্মানিত হেরেম শরীফ বসবাস করছেন, আপনি উনাকে সজীব রাখুন, উনাকে পানি পান করিয়ে ধন্য করুন। অর্থাৎ উনার কাছ থেকে আমার পানি মুবারক পান করতে ইচ্ছা হলো। আল আমীন তথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লখতে জিগার,উম্মু আবীহা, আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খইরু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলাআলাইহাস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উত্তম বদলা হাদিয়া করুন। তিনি ছিলেন একজন ছালিহা তথা মহাসম্মানিতা নেককার মহিলা। প্রত্যেক আহাল তথা স¦ামী উনার আহলিয়াহ সম্পর্কে যা ভালো জানেন তাই প্রশংসা মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম ৪/৪৪, আর রওদ্বুল উনফ ৩/১০৩, যখায়েরুল উক্ববা ১/১৬০, ‘উয়ূনুল আছার ২/৩৬৪, তারীখে দিমাশক্ব ৩/৪৫৪ ইত্যাদি)

উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ-এ সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি:

ব্যবসা-বাণিজ্যের অভিজ্ঞতা এবং আমানতদারীর জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি বিখ্যাত ছিলেন। হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “অর্থ-বিত্ত, আমানতদারী ও ব্যবসায়ী হিসেবে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ উনার গণ্যমান্য মুষ্টিমেয় ব্যক্তিবর্গ উনাদের অন্যতম ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ!

৬ষ্ঠ হিজরী শরীফ উনার সম্মানিত জুমাদাল ঊলা শরীফ মাসে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি কুরাইশদের ১৭০ উটের একটি বাণিজ্য কাফিলা নিয়ে সিরিয়া যান। বাণিজ্য শেষে সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ প্রত্যাবর্তনকালে পথে কাফিলাটি যখন সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছে, তখন এই সংবাদ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ পেশ করা হয়। তিনি ১৭০ জন সদস্যের একটি বাহিনীসহ হযরত যায়িদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে তাদের পশ্চাদগমনের জন্য প্রেরণ করেন। ঈশ নামক স্থানে উভয় কাফিলা মুখোমুখি হন। মুসলিম বাহিনী কুরাইশ কাফিলার বাণিজ্য সম্ভারসহ সকল লোককে বন্দি করেন। কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার কোনো ক্ষতি করা হয়নি। 

সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি কাফিলার এই পরিণতি দেখে সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ চলে যান এবং সেখানে পৌঁছে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট নিরাপত্তা মুবারক ত্বলব করেন। উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকে নিরাপত্তা মুবারক দিলেন। অন্য কেউ কিছু জানলেন না।

ভোরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মসজিদে নববী শরীফ-এ ফজর নামাযে দাঁড়ালেন। তখন উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বুলন্দ আওয়াজ মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করলেন, 

اَيُّهَا النَّاسُ اِنّـِــىْ قَدْ اَجَرْتُ حَضْرَتْ اَبَا الْعَاصِ بْنَ الرَّبِيْعِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَلَمَّا سَلَّمَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ صَلَاتِهٖ قَالَ اَيُّهَا النَّاسُ هَلْ سَـمِعْتُمْ مَّا سَـمِعْتُ. قَالُوْا نَعَمْ. قَالَ اَمَا وَالَّذِىْ نَفْسُ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهٖ مَا عَلِمْتُ بِشَىْءٍ مِّـمَّا كَانَ حَتّٰى سَـمِعْتُ مِنْهُ مَا سَـمِعْتُمْ اِنَّهٗ يـُجِيْرُ عَلَى الْمُسْلِمِيْنَ اَدْنَاهُمْ. ثُـمَّ دَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلـٰى حَضْرَتْ زَيْنَبَ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَقَالَ اَىْ بُنَيَّةُ اَكْرِمِىْ مَثْوَاهُ. 

অর্থ: “হে লোক সকল! আমি হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকে নিরাপত্তা মুবারক দিয়েছি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সম্মানিত নামায মুবারক শেষ করলেন, তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি যা শুনেছি, আপনারাও কি তা শুনেছেন? উনারা সমস¦রে বললেন, জী হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা তা শুনেছি। তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যাঁর কুদরতী হাত মুবারক-এ আমার সম্মানিত প্রাণ মুবারক উনার কসম, এ বিষয়টি আগে আমাকে জানানো হয়নি। 

আমি আপনাদের মতোই এই মাত্র তা শুনলাম। নিশ্চয়ই একজন সাধারণ মুসলমানেরও অধিকার রয়েছে এরূপ নিরাপত্তা প্রদান করার। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার মধ্যে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখলেন। অতঃপর তিনি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, হে আমার মহাসম্মানিতা বানাত আলাইহাস সালাম! আপনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সাথে সম্মানজনক ব্যবহার মুবারক করুন।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম ৪/৪৫, আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী ৯/৯৫, মু’জামুল কাবীর ১৬/২৮২, সিরাতুল হালবীয়া ৩/১৭৬, ইবনে হিশাম ৩/২০৯, যখায়েরুল উক্ববাহ ১/১৫৯ ইত্যাদি)

উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরজি মুবারক পেশ করলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার আটককৃত বাণিজ্য পণ্য, মাল-সম্পদ ফেরত দেয়ার জন্য। 

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিতে পারতেন এবং কেউ তা অস¦ীকার করতেন না। কিন্তু তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে বললেন,

اِنَّ هٰذَا الرَّجُلَ مِنَّا حَيْثُ قَدْ عَلِمْتُمْ وَقَدْ اَصَبْتُمْ لَهٗ مَالًا فَاِنْ تُـحْسِنُوْا وَتَرُدُّوْا عَلَيْهِ الَّذِىْ لَهٗ فَاِنَّا نُـحِبُّ ذٰلِكَ وَاِنْ اَبَيْتُمْ فَهُوَ فَـىْءُ اللهِ الَّذِىْ اَفَاءَ عَلَيْكُمْ فَأَنْتُمْ اَحَقُّ بِهٖ

অর্থ: “আমার মধ্যে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে যে সম্মানিত সম্পর্ক মুবারক সেটা আপনাদের জানা রয়েছে। আপনারা উনার বাণিজ্য সম্ভার, মাল-সম্পদ আটক করেছেন। আপনারা যদি ভালো মনে করেন, তাহলে উনার যা আটক করেছেন, তা উনাকে ফেরত দিন। এটা আমাদের নিকট খুবই পছন্দনীয় হবে এবং এতে আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট হবো। সুবহানাল্লাহ! আর আপনারা রাজি না হলে তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ হিসেবে সেটা আপনারা ভোগ করতে পারেন। আপনারাই সেই মালের অধিক হক্বদার।” তখন উনারা সমস¦রে বললেন, 

يَا رَسُوْلَ اللهِ بَلْ نَرُدُّهٗ عَلَيْهِ.

“ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!বরং অবশ্যই আমরা উনার সমস্ত মাল-সম্পদ ফেরত দিবো।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম ৩/২৬২, আল মু’জামুল কাবীর ১৬/২৮৮, সীরতে হালবীয়া ৩/১৭৬, ইবনে হিশাম ৩/২০৯, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ৬/৮৩ ইত্যাদি)

অতঃপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সমস্ত মাল-সম্পদ ফেরত দিলেন। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ এবং সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত মুবারক:

এই সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

ثُـمَّ احْتَمَلَ اِلـٰى مَكَّةَ فَاَدّٰى اِلـٰى كُلِّ ذِىْ مَالٍ مِّنْ قُرَيْشٍ مَّالَهٗ مِـمَّنْ كَانَ اَبْضَعَ مِنْهُ ثُـمَّ قَالَ يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ هَلْ بَقِىَ لِاَحَدٍ مِّنْكُمْ عِنْدِىْ مَالٌ لَّـمْ يَأْخُذْهُ قَالُوْا لَا فَجَزَاكَ اللهُ خَيْرًا فَقَدْ وَجَدْنَاكَ وَفِيًّا كَرِيـْمًا قَالَ فَاِنّـِـــىْ اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُـحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَمَا وَاللهِ مَا مَنَعَنِـىْ مِنَ الْاِسْلَامِ عِنْدَهٗ اِلَّا تَـخَوُّفًا اَنْ تَظُنُّوْا اَنِّـىْ اِنَّـمَا اَرَدْتُّ اَخْذَ اَمْوَالِكُمْ فَلَمَّا اَدَّاهَا اللهُ عَزَّ وَجَلَّ اِلَيْكُمْ وَفَرَغْتُ مِنْهَا اَسْلَمْتُ ثُـمَّ خَرَجَ حَتّٰى قَدِمَ عَلـٰى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

অর্থ: “অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম (উনাকে উনার বাণিজ্য সম্ভার, মাল-সম্পদ ফেরত দেয়া হলে,) তিনি উনার সমস্ত ধন-সম্পদ নিয়ে সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ ফিরে গেলেন। তিনি সেখানে যেয়ে কুরাইশদের প্রত্যেকের মাল-সম্পদ বুঝিয়ে দিলেন। এরপর তিনি কুরাইশদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে আমার নিকট সম্পদ পাবে, অথচ সে তা গ্রহণ করেনি? তারা সমস¦রে বললো যে- না, এমন কেউ নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আপনি একজন ওয়াদা পূরণকারী এবং সম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি তখন বললেন, তোমরা শুনে রাখো, আমি এখন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলাম। এই বলে, তিনি উনার সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করে পাঠ করলেন, 

فَاِنّـِـــىْ اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُـحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ 

‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার আবদ তথা হাবীব এবং রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ সুবহানাল্লাহ! 

এরপর তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত হওয়ার পর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ থেকে একটি মাত্র বিষয় আমাকে নিবৃত্ত রেখেছে। আর তা হচ্ছে, তখন আমি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলে তোমরা বলতে যে, তোমাদের মাল-সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য আমি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছি। এখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে এ বিষয় থেকে উত্তমভাবে মুক্ত করেছেন। তোমাদের সমস্ত পাওনা আমি বুঝিয়ে দিয়েছি। তাই এখন আমি প্রকাশ্যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করছি। 

অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি সেখান থেকে বের হয়ে সম্মানিত হিজরত মুবারক করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত হন।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম শরীফ)

সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট বায়াত গ্রহণ করেন এবং প্রকাশ্যে সম্মানিত ঈমান আনেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা তা দেখে তাকবীর মুবারক দেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার অনেক প্রশংসা মুবারক করেন, সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করেন। সুবহানাল্লাহ! তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও অত্যন্ত সন্তুষ্ট মুবারক হন, খুশি মুবারক প্রকাশ করেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার অনেক ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর স¦য়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকে নিয়ে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবরক নেন এবং উনাকে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে অবস্থান মুবারক করার অনুমতি মুবারক প্রদান করেন। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, পূর্বের সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফই বহাল ছিলো। নতুন করে আর সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ পড়ানো হয়নি। এটাই সর্বাধিক বিশুদ্ধ এবং একমাত্র গ্রহণযোগ্য অভিমত। কেননা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি পূর্ব থেকেই ঈমানদার ছিলেন। তবে ঈমান মুবারক প্রকাশ করেছেন পরে। সুবহানাল্লাহ!

উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শ্রেষ্ঠতম মহাসম্মানিতা বানাত আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন, 

عَنْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَضْرَتْ زَيْنَبُ عَلَيْهَا السَّلَامُ خَيْرُ بَنَاتِـىْ اُصِيْبَتْ فِـىَّ.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার শ্রেষ্ঠ বানাত (মেয়ে) আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! আমার সম্মানার্থে তিনি অনেক সম্মানিত তাকলীফী শান মুবারক (কষ্ট মুবারক) গ্রহণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর ১৬/২৯০, আল মু’জামুল আওসাত্ব ৫/৮০, মা’রিফাতুছ ছাহাবা লি আবী নাঈম ২২/২২২, মাজমাউয যাওয়াদি ৯/৩৪১ ইত্যাদি)

অপর বর্ণনায় এসেছে,

هِيَ أَفْضَلُ بَنَاتِي أُصِيبَتْ فِيَّ

অর্থ: “সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার শ্রেষ্ঠ বানাত (মেয়ে) আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! আমার সম্মানার্থে তিনি অনেক সম্মানিত তাকলীফী শান মুবারক (কষ্ট মুবারক) গ্রহণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (শরহুয যারক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিব ৪/৩১৮)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:

সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি প্রকাশ্যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার পর উম্মু আবীহা আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রায় দেড় বছর দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হাজির হওয়ার জন্য রওয়ানা মুবারক হন। পথিমধ্যে উনার উপর আক্রমণ চালালে তিনি উটের পিঠ থেকে যমীনে তাশরীফ মুবারক নেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তিনি পাথরের উপর তাশরীফ মুবারক নেন, যার কারণে প্রচ- আঘাত মুবারক গ্রহণ করেন। তিনি তখন হামেলা শান মুবারক-এ ছিলেন। আঘাতের কারণে উনার একজন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আওলাদ তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ অবস্থায় দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন এবং উনার অনেক নূরুন নাজাত মুবারক (রক্ত মুবারক) প্রবাহিত হন। এর ফলে তিনি দীর্ঘ দিন সম্মানিত মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং এই সম্মানিত মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায়ই ৮ম হিজরী সনের ৮ই মুহাররমুল হারাম শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফইশরাকের ওয়াক্তে সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ-এ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

এই কারণে সীরত বিশারদগণ উনাদের কেউ কেউ উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে বলেছেন যে, তিনি সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সম্মানিত মাক্বাম মুবারক উনাকে সম্মানিত করেছেন। সুবহানাল্লাহ! 

সম্মানিত গোসল মুবারক:

 উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম তিনি, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু আতিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনারা সকলেই উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত গোসল মুবারক-এ শরীক ছিলেন। হযরত উম্মু আতিয়্যাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি বলেন, আমি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত গোসল মুবারক-এ সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়েছিলাম।নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স¦য়ং নিজে সম্মানিত গোসল মুবারক উনার নিয়ম মুবারক বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রথমে তিন বা পাঁচবার প্রত্যেক সম্মানিত অঙ্গ মুবারক ধৌত করবেন । অতঃপর কর্পূর মুবারক লাগাবেন। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত কাফন মুবারক-এ সম্মানিত বরকতময় চাদর মুবারক প্রদান:

 নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মে আতিয়্যাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনাকে বলেন যে, সম্মানিত গোসল মুবারক সম্পন্ন করে আমাকে জানাবেন। গোসল মুবারক শেষে উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ জানানো হলে তিনি উনার একখানা সম্মানিত চাদর মুবারক দেন এবং বলেন, এটা সম্মানিত কাফন মুবারক উনার সাথে পরিধান করাবেন। সুবহানাল্লাহ!

অতঃপর সম্মানিত কাফন মুবারক সম্পন্ন করা হয়।

সম্মানিত জানাযা উনার নামায মুবারক এবং সম্মানিত ও পবিত্র রওযা শরীফ-এ রাখা:

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স¦য়ং নিজে সম্মানিত জানাযা উনার নামায মুবারক পড়ান এবং তিনি নিজে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত রওযা শরীফ-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করে উনার লখতে জিগার উনাকে সম্মানিত ও পবিত্র রওযা শরীফ-এ রাখেন। সুবহানাল্লাহ! তখন উনার সম্মানিত চেহারা মুবারক-এ উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জুদায়ী মুবারক উনার কারণে শোকের চিহ্ন মুবারক ভেসে উঠে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার লখতে জিগার, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জুদায়ী মুবারক উনার কারণে অনেক সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত করেন এবং উনার জন্য সম্মানিত দোয়া মুবারক করেন, “আয় বারে ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুশকিল আসান করুন, কষ্ট দূর করুন, উনার সম্মানিত ও পবিত্র রওযা শরীফ উনার সংকীর্ণতা প্রশস্ত করুন।” সুবাহানাল্লাহ!

তিনি ৩০ বছর ৬ মাস ১৭ দিন দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! মহাস্মানিতা হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে তিনিই সর্বাধিক সময় দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!

আফদ্বালুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত ও বুযূর্গী-সম্মান মুবারক-

 উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক বর্ণনা করতে গিয়ে মুজাদ্দিদে আ’যম,সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আফদ্বলুন নিসা-আফদ্বলুন নাস বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন, এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারিণী হচ্ছেন তিনি।” সুবহানাল্লাহ!

উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন ‘খইরু বানাতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শ্রেষ্ঠ বানাত (মেয়ে) আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! তিনি হচ্ছেন ‘আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ তথা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! তিনি হচ্ছেন, ‘সাইয়্যিদাতুননিসায়ি ‘আলাল‘আলামীন’ তথা সারা কায়িনাতে যত মহিলা রয়েছেন উনাদের প্রতেক্যের সাইয়্যিদাহ। সুবহানাল্লাহ! তিনি হচ্ছেন ‘সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ’ তথা জান্নাতবাসী সমস্ত মহিলাগণ উনাদের সাইয়্যিদাহ। সুবহানাল্লাহ! তিনি হচ্ছেন ‘বিদ্ব‘আতুম মির রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ তথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জিসম মুবারক উনার সম্মানিত গোশত মুবারক উনার একখানা টুকরো মুবারক, লখতে জিগার মুবারক। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারকই হচ্ছেন সম্মানিত ঈমান। সুবহানাল্লাহ! উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক-এ স¦য়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেছেন,

حَضْرَتْ زَيْنَبُ عَلَيْهَا السَّلَامُ خَيْرُ بَنَاتِـىْ اُصِيْبَتْ فِـىَّ.

অর্থঃ “সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার শ্রেষ্ঠতম বানাত (মেয়ে) আলাইহাস সালাম। আমার সম্মানার্থেতিনি অনেক সম্মানিত তাকলীফী শান মুবারক (কষ্ট মুবারক) গ্রহণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর ১৬/২৯০, আল মু’জামুল আওসাত্ব ৫/৮০, মা’রিফাতুছ ছাহাবা লি আবী নাঈম ২২/২২২, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৯/৩৪১ ইত্যাদি) 

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

قُلْ لَّا اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرًا اِلَّا الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبـٰى وَمَنْ يَّقْتَرِفْ حَسَنَةً نَّزِدْ لَهٗ فِيْهَا حُسْنًا اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ شَكُوْرٌ.

অর্থ: “(হে আমার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সমস্ত বান্দা-বান্দীদেরকে, উম্মতদেরকে, তামাম কায়িনাতবাসীকে) বলে দিন যে, তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় বা প্রতিদান চাচ্ছি না। আর চাওয়াটাও স¦াভাবিক নয়; তোমাদের পক্ষে দেয়াও কস্মিনকালে সম্ভব নয়। বরং তোমাদের জন্য এটা চিন্তা করাটাও কাট্টা কুফরী হবে। তবে তোমরা যদি ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে চাও, যিনি খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অথাৎ উনাদের হাক্বীক্বী রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করতে চাও, তাহলে তোমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে আমার নিকটাত্মীয় তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্মানিত মুহব্বত মুবারক করা, সম্মানিত তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া। আর যে ব্যক্তি কোনো নেক কাজ করে আমি তার সেই নেকিকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমাশীল এবং সর্বোত্তম প্রতিদান দানকারী।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা শূরা শরীফ, সম্মানিত আয়াত শরীফ: ২৩)

আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَحِبُّوا اللهَ لِمَا يَغْذُوْكُمْ مِّنْ نِّـعْمَةٍ وَّاَحِبُّوْنِـىْ لـِحُبِّ اللهِ وَاَحِبُّوْا اَهْلَ بَــيْـتِـىْ لِـحُبِّـىْ. 

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো। কেননা তিনি তোমাদেরকে খাদ্যসামগ্রীসহ সার্বিকভাবে অনুগ্রহ মুবারক করে থাকেন। আর তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত-মা’রিফাত মুবারক পেতে হলে, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক পেতে হলে আমাকে মুহব্বত করো। আর তোমরা আমার সম্মানিত মুহব্বত-মা’রিফাত মুবারক পেতে হলে, সম্মানিত রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক পেতে হলে আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, মুস্তাদরাকে হাকিম, ত্ববারনী শরীফ, শু‘য়াবুল ঈমান)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন, 

عَنْ حَضْرَتْ عَـلِـىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَرْبَعَةٌ اَنَا لَـهُمْ شَفِيْعٌ يَّوْمَ الْقِيَامَةِ الْـمُكْرِمُ لـِذُرِّيَـتِـىْ وَالْقَاضِىْ لَـهُمْ حَوَائِجَهُمْ وَالسَّاعِىْ لَـهُمْ فِـىْ اُمُوْرِهِمْ عِنْدَ مَا اضْطَرُّوْا اِلَيْهِ وَالْمُحِبُّ لَـهُمْ بِقَلْبِهٖ وَلِسَانِهٖ 

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি ক্বিয়ামতের দিন চার শ্রেণীর লোকদের সুপারিশ করবোÑ এক.যাঁরা আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্মান মুবারক করবেন। দুই.যাঁরা আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মালী তথা আর্থিকভাবে সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিবেন। তিন. যাঁরা আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে জান দিয়ে তথা শারীরিকভাবে সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিবেন। এবং চার.যাঁরা আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে অন্তরে সম্মানিত মুহব্বত মুবারক করবেন এবং জবানে উনাদের সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (জামিউল আহাদীছ ৪/২২৯, জামউল জাওয়ামি’, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ৭/১১, দায়লামী শরীফ) 

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন, 

عَنْ حَضْرَتْ عَـلِـىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَفَاعَتِـىْ لِاُمَّتِـىْ مَنْ اَحَبَّ اَهْلَ بَـيْتِـىْ وَهُمْ شِيْعَـتِـىْ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার শাফায়াত ওই সকল উম্মতদের জন্য যাঁরা আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদরেকে মুহব্বত মুবারক করে থাকেন। আর তাঁরা হচ্ছেন আমার খাছ উম্মত তথা অনুসারী।” সুবহানাল্লাহ! (জামিউছ ছগীর ২/১৪, আল ফাতহুল কাবীর ২/১৬৯, জামিউল আহাদীছ ১৩/৪১৫, জামউল জাওয়ামি’, তারীখে বাগদাদ ২/১৪৬ ইত্যাদি) 

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন, 

عَنْ حَضْرَتْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَـجَـلِـىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ مَّاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ شَهِيْدًا اَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ مَغْفُوْرًا لَّهٗاَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِسَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ تَائِبًا اَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ مُؤْمِنًا مُّسْتَكْمِلَ الْاِيْـمَانِ اَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَشَّرَهٗ مَلَكُ الْمَوْتِ بِالْـجَنَّةِ ثُـمَّ مُنْكَرٌ وَّنَكِيْرٌ اَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُزَفُّ اِلَـى الْـجَنَّةِ كَمَا تُزَفُّ الْعَرُوْسُ اِلـٰى بَيْتِ زَوْجِهَا اَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَحَ اللهُ لَهٗفِـىْ قَبْرِهٖ بَابَيْنِ اِلَـى الْـجَنَّةِاَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَعَلَ اللهُ قَبْرَهٗ مَزَارَ مَلَائِكَةِ الرَّحْـمَةِاَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ عَلَى السُّنَّةِ وَالْـجَمَاعَةِ أَلا وَمن مَاتَ عَلَى بغض اٰلِسَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم جَاءَ يَوْم الْقِيَامَة مَكْتُوبًا بَين عَيْنَيْهِ آيس من رَحْمَة الله أَلا وَمن مَاتَ عَلَى بغض اٰلِسَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَاتَ كَافِرًا أَلا وَمن مَاتَ عَلَى بغض اٰلِسَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لم يشم رَائِحَة الْجنَّة.

অর্থ: “হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি শহীদী মৃত্যু পাবেন। সুবহানাল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ইন্তেকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি তওবাকারীরূপে ইন্তেকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি পরিপূর্ণ ঈমানদার মু’মিন হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, উনাকে মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম তিনি এবং হযরত মুনকার ও নকীর আলাইহিমাস সালাম উনারা সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার সুসংবাদ মুবারক দিবেন। সুবহানাল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, উনাকে এমনভাবে সুসজ্জিত করে সম্মানিত জান্নাতে নেয়া হবে, যেমনভাবে কনেকে সাজিয়ে তার স্বামীর ঘরে নেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ঐ ব্যক্তির কবরে ঐ ব্যক্তির জন্য সম্মানিত জান্নাত উনার দিকে দুটি দরজা মুবারক খুলে দিবেন। সুবহানাল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত ব্যক্তি উনার কবরকে সম্মানিত রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাযার শরীফ বা যিয়ারতগাহ বানাবেন। সুবহানাল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি সম্মানিত আহলু সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার উপর ইন্তেকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ! সাবধান! আর যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ শরীফ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, ক্বিয়ামতের দিন তার দুই চোখের মাঝখানে লিখা থাকবে যে, সে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র রহমত থেকে বঞ্চিত। নাঊযুবিল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, সে কাফির অবস্থায় মারা যাবে। নাঊযুবিল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, সে সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার ঘ্রাণ পর্যন্ত পাবে না।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী ১৬/২৩, তাফসীরে কবীর ২৭/৫৯৫, তাফসীরে হাক্কী ১৩/৭৯, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৮/২৩৯,  তাখরীজু আহাদীছুল কাশ্শাফ ৩/২৩৮, নুজহাতুল মাজালিস ১/৩৬৫)

যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে সাইয়্যিদাতুন নিসা ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলাইহাস সালাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল সেটা জিন-ইনসান ও তামাম মাখলূকাতের চিন্তা ও কল্পনার ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! 

উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক আলোচনা করার এবং উনার সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করার বেমেছাল ফযীলত-

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

اِنَّ ذِكْرَ الصَّالـحِيْنَ تَنْزِلُ الرَّحْمَةُ.

অর্থ: “নিশ্চয়ই ওলীআল্লাহগণ উনাদের আলোচনা মুবারক করলে সম্মানিত রহমত মুবারক নাযিল হয়।” সুবহানাল্লাহ্!(ইহইয়ায়ে ‘উলূমিদ্দীন, ফাদ্বাইলে আশারাহ লিযামাখশারী, কাশফুল খফা) 

এখন চিন্তা-ফিকিরের বিষয় যে, যদি ওলীআল্লাহ উনাদের আলোচনা মুবারক করলে সম্মানিত রহমত মুবারক নাযিল হয়, তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সম্মানিত সাওয়ানেহ ‘উমরী মুবারক আলোচনা করলে, উনাদের সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করলে কতটুকু সম্মানিত রহমত মুবারক বর্ষিত হবে, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! কেননা, উনাদের সম্মানার্থে, উনাদেরকে মুহব্বত করেই মানুষ ওলীআল্লাহ হয়ে থাকে। সুবহানাল্লাহ! সেই ওলীআল্লাহ উনাদের আলোচনা করলে যদি সম্মানিত রহমত মুবারক নাযিল হয়, তাহলে যাঁরা সম্মানিত রহমত মুবারক উনার মালিক, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামউনাদের সম্মানিত সাওয়ানেহ ‘উমরী মুবারক আলোচনা করলে, উনাদের সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করলে কি পরিমাণসম্মানিত রহমত, বরকত, সাকীনা, দয়া-দান, ইহসান মুবারক, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক বর্ষিত হবে, তা সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! 

প্রকৃত কথা হলো, যাঁরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের এবং মহাসম্মানিতা হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সম্মানিত সাওয়ানেহ ‘উমরী মুবারক আলোচনা করবেন, উনাদের সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করবেন তাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অর্থাৎ উনাদের প্রত্যেকের আখচ্ছুল খাছ মুহব্বত-মা’রিফত, নিসবত-ক্বুরবত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করবেন। সুবহানাল্লাহ!

মাওলানা জালালুদ্দীন রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘মছনবী শরীফ’ উনার ফযীলত বর্ণনা করতে যেয়ে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেছেন, “যারা ‘মছনবী শরীফ’ পাঠ করবে, তারা ওলীউল্লাহ না হলেও ‘মছনবী শরীফ’ পাঠ করা অবস্থায় তাদের নামগুলো ওলীউল্লাহ উনাদের দফতরে লিখা থাকবে। সুবহানাল্লাহ!”

হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘মাকতূবাত শরীফ’ উনার ব্যাপারে তিনি বলেছেন, কেউ যদি উনার ‘মাকতূবাত শরীফ’ পাঠ করে, ‘মাকতূবাত শরীফ’ পাঠ করা অবস্থায় নবী না হওয়া সত্ত্বেও তার নাম ‘সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক’ উনার দফতরে লিখা থাকবে। সুবহানাল্লাহ!

যদি তাই হয়, তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের এবং মহাসম্মানিতা হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক আলোচনা করলে, পাঠকরলে, উনাদের সম্মানিত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক আলোচনা করলে, পাঠ করলে, বান্দা-বান্দী, উম্মত উনাদের নাম কোনো ত্ববকায় লিখা থাকবে, সেটা চিন্তা-ফিকির করতে হবে। সুবহানাল্লাহ! মূলত, তাঁদের নাম তখন সম্মানিত রিসালত মুবারক উনার তবক্বায় লিখা থাকবে। সুবহানাল্লাহ!

আর যদি কেউ সম্মানিত  মুহব্বত মুবারক উনার সাথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের এবং মহাসম্মানিতা হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক আলোচনা করে, পাঠ করে, উনাদের সম্মানিত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক আলোচনা করে, পাঠ করে, অবশ্য অবশ্যই উনার উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে সম্মানিত জান্নাত মুবারক ওয়াজব হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, তিনি সর্বোচ্চ সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ স্বয়ং সাইয্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আবাদুল আবাদের তরে অবস্থান মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ! এতে বিন্দু থেকে বিন্দুতমও সন্দেহের অবকাশ নেই। কেননা, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন, 

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اَحَبَّ سُنَّتِـىْ فَقَدْ اَحَبَّـنِـىْ وَمَنْ اَحَبَّنِـىْ كَانَ مَعِـى فِـى الْـجَنَّةِ.

 অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যিনি আমার কোনো একখানা সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনাকে মুহব্বত করলেন, তিনি মূলত, আমাকেই মুহব্বত করলেন। আর যিনি আমাকে মুহব্বত করলেন, তিনি মূলত, আমার সাথেই সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ অবস্থান মুবারক করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তুহফাতুল আহওয়াযী বিশরহি জামি‘িয়ত তিরমিযী ৭/৩৭১, জামি‘উল উছূল ফী আহাদীছির রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ৯/৫৬৭, ক্বওয়া‘িয়দুত তাহদীছ ১/৫৫, তিরমিযী শরীফ, শরহুল বুখারী ১/৪০৯, মিরক্বাত শরীফ ১/২৬২, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

এখন বলার বিষয় হচ্ছে একখানা সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনাকে মুহব্বত করলে যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ অবস্থান করা যায়, তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত লখতে জিগার মুবারক উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো হচ্ছেন সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনাদের মালিক। সুবহানাল্লাহ! তাহলে উনাকে যাঁরা মুহব্বত মুবরক করবেন, উনাদের ফায়ছালা কী হবে? উনারা কার সাথে, কোন সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ অবস্থান করবেন? মূলত, অবশ্য অবশ্যই ওই সকল ব্যক্তি উনারা স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই সর্বোচ্চ সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবেন। সুবহানাল্লাহ! অবশ্য অবশ্যই উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক ও সম্মানিত জিয়ারত মুবারক-এ আবাদুল আবাদের তরে মশগূল থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে কবূল করুন। আমীন

বিদআতুম মির রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক এবং বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক সম্পর্কে জানা সমস্ত  জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরয়ে আইন-

 মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- 

عَنْ حَضْرَتْ عَـلِـىِّ بْنِ اَبِـىْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَدِّبُوْا اَوْلَادَكُمْ عَلـٰى ثَلَاثِ خِصَالٍ حُبِّ نَـبِـيِّكُـمْ وَحُبِّ اَهْلِ بَيْتِهٖ وَقِرَاءَةِ الْقُرْاٰنِ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা তোমাদের আওলাদ তথা সন্তান-সন্ততি, নাতী-নাতনী, ছেলে-মেয়ে, অধীনস্থদেরকে তিনটি বিষয়ে যথাযথ (আদব) শিক্ষা প্রদান করোÑ ১. তোমাদের যিনি নবী, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক, ২. উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক এবং ৩.সম্মানিত কুরআন শরীফ তিলাওয়াত।” সুবহানাল্লাহ! (আল জামিউছ ছগীর ১/২২, আল ফাতহুল কাবীর ১/৫৭, জামিউল আহাদীছ ২/৮৯, দায়লামী শরীফ, কাশফুল খফা ১/৮৫)

এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেক অভিভাবকের জন্য স্বীয় আওলাদ তথা সন্তান-সন্ততি, নাতী-নাতনী, ছেলে-মেয়ে, অধীনস্থদেরকে তিনটি বিষয় শিক্ষা দেয়া ফরয করে দিয়েছেনÑ ১. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক, ২. উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক এবং ৩. সম্মানিত কুরআন শরীফ তিলাওয়াত। সুবহানাল্লাহ!

 এখানে প্রথমেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক শিক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তারপর উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক শিক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আর সর্বশেষ বলা হয়েছে সম্মানিত কুরআন শরীফ তিলাওয়াত শিক্ষা দেয়ার কথা। সুবহানাল্লাহ!

প্রথমোক্ত দুইটি বিষয় মুবারক সরাসরি সম্মানিত ঈমান উনার সাথে সম্পৃক্ত। আর শেষোক্ত বিষয়টি আমলের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ প্রথমোক্ত দুইটি বিষয় মুবারক শিক্ষার মাধ্যমে সম্মানিত ঈমান লাভ হবে। আর শেষোক্ত বিষয়টি শিক্ষার মাধ্যমে আমল সুন্দর হবে। সুবহানাল্লাহ!

আর বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, সম্মানিত ঈমান পরিশুদ্ধ না থাকলে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাতসহ সমস্ত আমলই বরবাদ হয়ে যায়। আর সম্মানিত ঈমান ঠিক থাকলে, আমলে কিছু ত্রুটি থাকলেও সে এক সময় নাজাত পাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর কারো অন্তরে যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত থাকে, নিঃসন্দেহে সে নাজাত পাবে। যদিও তার আমলে ত্রুটি থাকুক না কেন। সুবহানাল্লাহ! 

এই সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُزَفُّ اِلَـى الْـجَنَّةِ كَمَا تُزَفُّ الْعَرُوْسُ اِلـٰى بَيْتِ زَوْجِهَا.

অর্থ: “সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, উনাকে এমনভাবে সুসজ্জিত করে জান্নাতে নেয়া হবে, যেমনভাবে কনেকে সাজিয়ে তার স্বামীর ঘরে নেয়া হয়।” সুবহানাল্লাহ!  (কুরতুবী ১৬/২৩, তাফসীরে কবীর ২৭/৫৯৫, তাফসীরে হাক্কী ১৩/৭৯, রূহুল বয়ান ৮/২৩৯, তখরীজু আহাদীছুল কাশ্শাফ ৩/২৩৮, নুজহাতুল মাজালিস ১/৩৬৫)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

عَنْ حَضْرَتْ عَـلِـىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَرْبَعَةٌ اَنَا لَـهُمْ شَفِيْعٌ يَّوْمَ الْقِيَامَةِ الْـمُكْرِمُ لـِذُرِّيَـتِـىْ وَالْقَاضِىْ لَـهُمْ حَوَائِجَهُمْ وَالسَّاعِىْ لَـهُمْ فِـىْ اُمُوْرِهِمْ عِنْدَ اضْطِرَارِهِمْ اِلَيْهِ وَالْمُحِبُّ لَـهُمْ بِقَلْبِهٖ وَلِسَانِهٖ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি ক্বিয়ামতের দিন চার শ্রেণীর লোকদের সুপারিশ করবোÑ এক.যাঁরা আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্মান করবেন। দুই.যাঁরা আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মালী তথা আর্থিকভাবে সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিবেন। তিন. যাঁরা আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে জান দিয়ে তথা শারীরিকভাবে সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিবেন। এবং চার.যাঁরা আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে অন্তরে মুহব্বত করবেন এবং জবানে উনাদের ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (জামিউল আহাদীছ ৪/২২৯, জামউল জাওয়ামি’, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ৭/১১, দায়লামী শরীফ)

আর মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন। কারো বাহ্যিক আমল সুন্দর; কিন্তু ঈমানে ত্রুটি রয়েছে, তাহলে সে নিশ্চিত জাহান্নামী। অর্থাৎ কারো সম্মানিত কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বিশুদ্ধ এবং অতি সুন্দর; কিন্তু তার অন্তরে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ রয়েছে, নাঊযুবিল্লাহ! তাহলে তার সম্মানিত কুরআন শরীফ তিলাওয়াতসহ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত সমস্ত আমলই বরবাদ হয়ে সে চিরজাহান্নামী হয়ে যাবে। না‘ঊযুবিল্লাহ! এই সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

اَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلـٰى بُغْضِ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَكْتُوْبًاۢ بَيْنَ عَيْنَيْهِ اٰيِسٌ مِّنْ رَّحْـمَةِ اللهِ اَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلـٰى بُغْضِ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ كَافِرًا اَلَا وَمَنْ مَّاتَ عَلـٰى بُغْضِ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَـمْ يَشُمَّ رَائِحَةَ الْـجَنَّةِ.

অর্থ: “সাবধান! আর যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, ক্বিয়ামতের দিন তার দুই চোখের মাঝখানে লিখা থাকবে যে, সে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রহমত মুবারক থেকে বঞ্চিত। নাঊযুবিল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, সে কাফির অবস্থায় মারা যাবে। নাঊযুবিল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, সে সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার ঘ্রাণ পর্যন্ত পাবে না।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী ১৬/২৩, তাফসীরে কবীর ২৭/৫৯৫, তাফসীরে হাক্কী ১৩/৭৯, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৮/২৩৯,  তাখরীজু আহাদীছুল কাশ্শাফ ৩/২৩৮, নুজহাতুল মাজালিস ১/৩৬৫)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন, 

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ اَنَّ رَجُلًا صَفَّ بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْـمَقَامِ فَصَلّٰى وَصَامَ ثُـمَّ لَقِىَ اللهَ وَهُوَ مُبْغِضٌ لِّاَهْلِ بَيْتِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ النَّارَ.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন ব্যক্তি যদি সম্মানিত রুকনে ইয়ামেন এবং সম্মানিত মাক্বামে ইবরাহীম শরীফ উনাদের মধ্যবর্তী স্থানে সারিবদ্ধ হয়ে থাকে। অতঃপর নামায পড়ে এবং রোযা রাখে। কিন্তু এই অবস্থায় তার মৃত্যু হয় যে, সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, তাহলে সে অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (যাখাইরুল‘উক্ববা লিমুহিব্বে ত্ববারী ১/১৮, খ¦ছায়িছুল কুবরা ২/৪৬৫)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

عَنْ حَضْرَتْ اَلْـحَسَنِ بْنِ عَلِـىٍّ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُبْغِضُنَا وَلَا يَحْسُدُنَا اَحَدٌ اِلَّا ذِيْدَ عَنِ الْـحَوْضِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِسِيَاطٍ مِّنْ نَّارٍ.

অর্থ: “ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান ইবনে হযরত আলী আলাইহিমাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যারা আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ  আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, উনাদের বিরোধীতা করবে, উনাদের সাথে হিংসা করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে আগুনের দোররা দ্বারা প্রহার করে সম্মানিত হাউযে কাওছার হতে তাড়িয়ে দেয়া হবে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (আল মু’জামুল আওসাত্ব ৩/৩৯, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৯/১৭২, তাফসীরে দুররে মানছূর ১৩/৫১, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৮, আছ ছওয়ায়িক্বুল মুহরিক্বাহ ২/৫০৪ )

অন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ মুবারক উনার মধ্যে এসেছে,

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْاَنْصَارِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ خَطَبَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمِعْتُهٗ وَهُوَ يَقُوْلُ يَا اَيُّهَا النَّاسُ مَنْ اَبْغَضَنَا اَهْلَ الْبَيْتِ حَشَّرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَهُوْدِيًّا فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاِنْ صَامَ وَصَلّٰى قَالَ وَاِنْ صَامَ وَصَلّٰى وَزَعِمَ اَنَّهٗ مُسْلِمٌ.

অর্থ: “হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা আমাদের উদ্দেশ্যে সম্মানিত খুতবা মুবারক দিলেন। তখন আমি শুনলাম যে, তিনি উক্ত সম্মানিত খুতবা মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করতেছেন, হে লোক সকল! যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, উনাদের বিরোধিতা করবে, তার হাশর-নশর হবে ইহুদীদের সাথে। আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যদি  সে রোযা রাখে এবং নামায পড়ে? উত্তরে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যাঁ! যদিও সে রোযা রাখে, নামায পড়ে এবং দাবি করে যে, সে মুসলমান। (তা সত্ত্বেও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিরোধিতা করার কারণে, উনাদের শত্রু হওয়ার কারণে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তার সমস্ত ইবাদত বিনষ্ট করে দিয়ে তাকে ক্বিয়ামতের দিন ইহুদীদের দলভুক্ত করে উঠাবেন।)” না‘ঊযুবিল্লাহ! (আল মু’জামুল আওসাত্ব লিতত্ববারণী ৪/২১২, জামিউল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ১০/৪৭৫, জামউল জাওয়ামি‘ লিস সুয়ূত্বী, মাজমাউয যাওয়াইদ লিল হাইছামী ৯/৭১২, তারীখে জুরজান ৩৬৯ পৃষ্ঠা)

আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করতে হলে অবশ্যই উনাদের সম্পর্কে জানতে হবে, উনাদের সম্মানিত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক জানতে হবে, উনাদের বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক জানতে হবে, অন্যথায় উনাদেরকে মুহব্বত করা  আদৌ সম্ভব নয়। আর উছূল হচ্ছে,

مَا لَا  يتم به الفرض فهو الفرض

অর্থ: “যা ব্যতীত ফরয পূর্ণ হয় না, সেটাও ফরয।” সুবহানাল্লাহ!

অতএব, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে, উনাদের সম্মানিত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক সম্পর্কে এবং উনাদের বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক সম্পর্কে জানা সমস্ত  জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন। সুবহানাল্লাহ! আর উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিতা মুবারক। সুবহানাল্লাহ! 

কাজেই উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে, উনার সম্মানিত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক সম্পর্কে এবং উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক সম্পর্কে জানাও সমস্ত  জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন। সুবহানাল্লাহ!

উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল সম্মানিত পবিত্রতা মুবারক-

 যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

اِنَّـمَا يُرِيْدُ الله لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَاَهْلَ الْبَيْتِ وَيُـطَـهِّـرَكُمْ تَطْهِيْرًا.

অর্থ: “হে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে। অর্থাৎ তিনি আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

এ সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

هُمْ اَهْلُ بَيْتٍ طَهَّرَهُمُ الله مِنَ السُّوْءِ وَاخْتَصَّهُمْ بِرَحْمَتِهٖ

অর্থ: “উনারা হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা ও পাপ থেকে পূত-পবিত্র রেখেছেন এবং উনার সম্মানিত রহমত মুবারক দ্বারা খাছ করে নিয়েছেন, উনার সম্মানিত খাছ রহমত মুবারক দ্বারা আবৃত করে নিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! 

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,

فَاَنَا وَاَهْلُ بَيْتِىْ مُطَهَّرُوْنَ مِنَ الذُّنُوْبِ.

অর্থ: “আমি এবং আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম আমরা সকলেই যুনূব তথা সমস্ত প্রকার ছগীরা-কবীরা এবং যাবতীয় অপছন্দনীয় কাজ থেকে পূত-পবিত্র।” সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ লিল বায়হাক্বী, শিফা ১/৩২৫, সীরাতে হালবিয়্যাহ ১/৪২, আল মা’রিফাতু ওয়াত তারীখ ১/৪৯৮, খছাইছুল কুবরা ১/৬৬, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/২৩৫, তাফসীরে দুররে মানছূর লিস সুয়ূত্বী ৬/৬০৬, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম ৯/৩১৩৩ ইত্যাদি) 

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

اَنَّ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُوْلُ نَـحْنُاَهْلُ بَيْتٍ طَهَّرَهُمُ اللهُ مِنْ شَجَرَةِ النُّبُوَّةِ وَمَوْضِعِ الرِّسَالَـةِ وَمُـخْتَلِفِ الْمَلَائِكَةِ وَبَيْتِ الرَّحْمَةِ وَمَعْدِنِ الْعِلْمِ.

অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবসময় ইরশাদ মুবারক করতেন, আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে (আমাদেরকে) সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার বৃক্ষ, সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার স্থান, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের, উনাদের দ্বারা সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক (ইত্যাদি সমস্ত কিছু) থেকে পবিত্র রেখেছেন, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী) করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে দুররে মানছূর ৬/৬০৬, ইবনে আবী হাতিম ৯/৩১৩৩)

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আলোচ্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে- اَهْلُ بَيْتٍنَـحْنُ (আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম) বলেÑ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে উনার নিজের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! আর طَهَّرَهُمُ الله - মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পবিত্র করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থ হলো- মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)  করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মুহতাজ ও উনাদের সম্মানার্থে উনারা সম্মানিত এবং উনাদের প্রতিই উনারা দায়েমীভাবে রুজু। সুবহানাল্লাহ! ফলে উনারা সমস্ত কিছু থেকেই বেনিয়াজ। সুবহানাল্লাহ! কাজেই সম্মানিত নুবুওয়াত মুবারক, সম্মানিত রিসালাত মুবারক, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক ইত্যাদি বরকতময় নিয়ামত মুবারক উনাদের প্রতি রুজু হওয়ার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কোন সুযোগ নেই। অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা সমস্ত কিছু থেকে পবিত্র, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী) । সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কারণেই সম্মানিত নুবুওয়াত মুবারক, সম্মানিত রিসালাত মুবারক, সমস্ত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা, সম্মানিত রহমত মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারকসহ সমস্ত কিছুই ফযীলতপ্রাপ্ত হয়েছেন, সম্মানিত হয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

اَلله الصَّمَدُ

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি ছমাদ তথা  বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ইখলাছ শরীফ, সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যেমন সমস্ত মাখলূকাত থেকে, সমস্ত কিছু থেকে ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ! ঠিক তেমনিভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একমাত্র যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত সমস্ত মাখলূকাত থেকে, সমস্ত কিছু থেকে ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ! আর ঠিক একইভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত কায়িনাত থেকে, সমস্ত কিছু থেকে ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ! উনারা সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক, সম্মানিত রিসালাত মুবারক, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম উনার খনি মুবারক ইত্যাদি সমস্ত কিছু থেকে পবিত্র, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান মুবারক এক কথায় উনারা শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন। এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক রয়েছেন, সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন উনারা। সুবহানাল্লাহ! তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত পবিত্রতা মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কত বেমেছাল, তা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্বা মুবারক উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পবিত্রতা মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার ঊর্ধ্বে। যা কস্মিনকালেও ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সুবহানাল্লাহ! মূলত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যেরূপ পবিত্রতা মুবারক, উনার লখতে জিগার হওয়ার কারণে, উনার সম্মানিত জিসম মুবারক উনার একখানা অংশ মুবারক হওয়ার কারণে, উনার সম্মানিত গোশত মুবারক উনার একখানা টুকরো মুবারক হওয়ার কারণে উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারও ঠিক একই পবিত্রতা মুবারক। সুবহানাল্লাহ! এক কথায় তিনি শুধু যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান রয়েছে, সমস্ত কিছুর অধিকারিণী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ!

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মু আবীহা, আন নূরুল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খইরু ওয়া আফদ্বলু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে হাক্বীক্বী পবিত্রতা, মুহব্বত-মারিফত, নিসবত-ক্বুরবত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক নছীব করুন। আমীন!

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এক অনন্য বেমেছাল অভুতপূর্ব বিস্ময়কর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ফায়সালা মুবারক ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক-এ ‘মুত্বহ্হার’ (পূত-পবিত্র) এবং ‘মুত্বহ্হির’ (পূত-পবিত্রতাদানকারী) বলতে হবে’-

 মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন, 

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَضَّرَ اللهُ امْرَءًا سَـمِعَ مِنَّا حَدِيْثًا فَبَلَّغَهٗ كَمَا سَـمِعَهٗ فَرُبَّ مُبَلَّغٍ اَوْعـٰى مِنْ سَامِعٍ.

  অর্থ: “ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ওই ব্যক্তির সম্মানিত চেহারা মুবারক সম্মুজ্জ্বল করুন, (উনাকে সম্মানিত রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক, মা’রিফাত-মুহব্বত মুবারক দান করুন,) যিনি আমার থেকে যেরূপ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ শুনবেন ঠিক হুবহু সেরূপ বর্ণনা করবেন। কেননা (পরবর্তীতে) যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের কাছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ পৌঁছানো হবে, উনারা যাঁদের থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ শুনবেন, উনাদের থেকে অধিক বেশি বুঝবেন, উপলব্ধি করবেন, অনেক বেশি সম্মানিত ইলম মুবারক উনার অধিকারী হবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, ছহীহ ইবনে হিব্বান, মুসনাদে বাযযার, ত্ববারনী শরীফ)

এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক্ব হচ্ছেন আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি হচ্ছেন সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক উনার মালিক। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল সম্মানিত তা‘য়াল্লুক-নিসবত মুবারক, মুহব্বত-ক্বুরবত মুবারক রয়েছেন, যা কায়িনাতের কারো পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সুবহানাল্লাহ! যার কারণে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক-এ একের পর এক অনন্য বেমেছাল অভুতপূর্ব বিস্ময়কর মহাসম্মানিত তাজদীদ মুবারক প্রকাশ করছেন। সুবহানাল্লাহ! সেই মুবারক ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি তিনি এক অনন্য বেমেছাল অভুতপূর্ব বিস্ময়কর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ফায়সালা মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! নি¤েœ তা উল্লেখ করা হলো,

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি একটি বিষয় ফিকির করতে থাকলাম যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক-এ বলা হয় ‘মা’ছূম’ তথা নিস্পাপ। হযরত ছাহাবা-ই কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক-এ বলা হয় ‘মাহ্ফূয’ তথা সংরক্ষিত। তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক-এ কী বলা হবে? আমি বিষয়টি যখন ফিকির করতে থাকলাম, তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, 

فَاَنَا وَاَهْلُ بَيْتِىْ مُطَهَّرُوْنَ مِنَ الذُّنُوْبِ.

অর্থ: ‘আমি এবং আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম আমরা সকলে যুনূব তথা সমস্ত প্রকার ছগীরা-কবীরা এবং যাবতীয় অপছন্দনীয় কাজ থেকে পূত-পবিত্র।’ সুবহানাল্লাহ!

আমার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক-এ مُطَهَّرٌ (মুত্বহ্হার) তথা পূত-পবিত্র এবং مُطَهِّرٌ(মুত্বহ্হির) তথা পূত-পবিত্রতাদানকারী বলতে হবে। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করলেন, আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক-এ স্বয়ং যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ত্বহারাত তথা পবিত্রতা মুবারক উনার বিষয়টি সম্পৃক্ত করেছেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, 

اِنَّـمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُـطَـهِّـرَكُـمْ تَطْهِيْراً.

অর্থ: ‘হে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে। অর্থাৎ তিনি আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন।’ সুবহানাল্লাহ!

আমি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে আমার নিজের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছি। সুবহানাল্লাহ! তাই আমার এবং আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক-এ مُطَهَّرٌ (মুত্বহ্হার) তথা পূত-পবিত্র এবং مُطَهِّرٌ (মুত্বহ্হির) তথা পূত-পবিত্রতাদানকারী বলতে হবে।” সুবহানাল্লাহ!

এই সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

اَنَّ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُوْلُ نَـحْنُاَهْلُ بَيْتٍ طَهَّرَهُمُ اللهُ مِنْ شَجَرَةِ النُّبُوَّةِ وَمَوْضِعِالرِّسَالَـةِ وَمُـخْتَلِفِ الْمَلَائِكَةِ وَبَيْتِ الرَّحْمَةِ وَمَعْدِنِ الْعِلْمِ.

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবসময় ইরশাদ মুবারক করতেন। আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে (আমাদেরকে) সম্মানিত নুবুওয়াত মুবারক উনার বৃক্ষ, সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার স্থান, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের, উনাদের দ্বারা সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক (ইত্যাদি সমস্ত কিছু) থেকে পবিত্র রেখেছেন, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী) করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে দুররে মানছূর ৬/৬০৬, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম ৯/৩১৩৩)

অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মুহতাজ ও উনাদের সম্মানার্থে উনারা সম্মানিত এবং উনাদের প্রতিই উনারা দায়েমীভাবে রুজু। সুবহানাল্লাহ! ফলে উনারা সমস্ত কিছু থেকেই পবিত্র, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী)। সুবহানাল্লাহ! কাজেই সম্মানিত নুবুওয়াত মুবারক, সম্মানিত রিসালাত মুবারক, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের, উনাদের দ্বারা সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক ইত্যাদি বরকতময় নিয়ামত মুবারক উনাদের প্রতি রুজু হওয়ার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কোন সুযোগ নেই। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কারণেই সম্মানিত নুবুওয়াত মুবারক, সম্মানিত রিসালাত মুবারক, সমস্ত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা, সম্মানিত রহমত মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারকসহ সমস্ত কিছুই ফযীলতপ্রাপ্ত হয়েছেন, সম্মানিত হয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন, 

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَنَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ لَّا يُقَاسُ بِنَا اَحَدٌ.

অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো তুলনা করা যাবে না।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী ৪/২৮৩, জামি‘উল আহাদীছ ২২/২১৯, কানজুল উম্মাল ১২/১০৪, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/২৪৯৫০, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ফী মানাক্বিবে যাওইল কুরবা লিমুহিব্বে ত্ববারী ১/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৭ ইত্যাদি)

কজেই সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন হচ্ছেন আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ফায়সালা মুবারক অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক-এ ‘মুত্বহ্হার’ (পূত-পবিত্র) এবং ‘মুত্বহ্হির’ (পূত-পবিত্রতাদানকারী) বলা। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ফায়সালা মুবারক অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের হাক্বীক্বী শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত,বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উপলব্ধি করে ইহকাল ও পরকালে হাকীক্বী কামিয়াবী হাছিল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, ছহিবাতুল জান্নাহ, ছহিবাতুল হুসনা, ছহিবাতুন নিয়ামাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার বেমেছাল, মর্যাদা-মর্তবা মুবারক-

হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম সালাম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক কায়িনাতবাসীর জন্য আমানতস্বরূপ করেছেন। উনারা একদিকে মাখলুকাতের নিরাপত্তাদানকারী। অপরদিকে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক লাভের মাধ্যম। হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে বানাতু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি অন্যতমা। উনার মুহব্বত পবিত্র ঈমান। আর উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীদের জন্য খোদায়ী জিহাদ। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنِ ابْنِ أَبِي نَجِيحٍ ، أَنَّ هَبَّارَ بْنَ الأَسْوَدِ أَصَابَ زَيْنَبَ بِنْتَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشَيْءٍ وَهِيَ فِي خِدْرِهَا ، فَأُسْقِطَتْ ، فَبَعَثَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَرِيَّةً ، فَقَالَ : إِنْ وَجَدْتُمُوهُ فَاجْعَلُوهُ بَيْنَ حِزْمَتَيْ حَطَبٍ ، ثُمَّ أَشْعِلُوا فِيهِ النَّارَ ثُمَّ قَالَ : إِنِّي لأَسْتَحْيِي مِنَ اللهِ لاَ يَنْبَغِي لأَحَدٍ أَنْ يُعَذِّبَ بِعَذَابِ اللهِ ، وَقَالَ : إِنْ وَجَدْتُمُوهُ فَاقْطَعُوا يَدَهُ ، ثُمَّ اقْطَعُوا رِجْلَهُ ، ثُمَّ اقْطَعُوا يَدَهُ ، ثُمَّ اقْطَعُوا رِجْلَهُ
অর্থ: “হযরত ইবনে আবী নাজীহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি যখন হিজরত মুবারক করার জন্য রওয়ানা দিলেন তখন) হাববার ইবনে আসওয়াদ সে উনাকে আঘাত করে। তার কারণে তিনি উটের পিঠ হতে পড়ে যান। (এই সংবাদ শুনতে পেরে) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করলেন এবং ইরশাদ মুবারক করলেন, যদি আপনারা তাকে গ্রেফতার করতে পারেন, তাহলে লাকড়ী জমা করবেন। তাতে আগুন ধরাবেন। (অর্থাৎ তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করবেন। পরবর্তীতে) তিনি আবার ইরশাদ মুবারক করলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি জাহান্নামে আগুন দ্বারা শাস্তি দিবেন। তাই দুনিয়াতে আগুন দ্বারা শাস্তি দিতে আমি লজ্জাবোধ করি। কাজেই আপনারা তাকে গ্রেফতার করতে পারলে প্রথমে তার ডান হাত কাটবেন। তারপর ডান পা কাটবেন। অতঃপর বাম হাত কাটবেন। অতঃপর বাম পা কাটবেন। (অর্থাৎ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিতে দিতে তাকে হত্যা করবেন)
অতএব, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক শানে হাক্বীক্বী আদব ও হুসনে যন পোষণ করতে হবে। উনার সীরাত মুবারক, সাওয়ানেহে উমরী এবং খুছুছিয়ত মুবারক সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হতে হবে।
বানাতু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আবনাউ রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার মুবারক সময় ও তারতীব মুবারক নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত। তবে সকল ইখতিলাফ আর সন্দেহের মূলোৎপাটন করেছেন মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা মামদূহ যহরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। তিনি এক ক্বওল শরীফে বলেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম যমীনে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন, উনারা মোট আটজন। তন্মধ্যে হযরত আবনা আলাইহিমুস সালাম উনারা চারজন। আর বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও চারজন। উনাদের পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার তারিখ নিয়ে অনেকের অনেক ইখতিলাফ রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা তাহক্বীক্ব করেছি। যমীনে প্রথম তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন কে? সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুল আউওয়াল আলাইহিস সালাম তিনি নাকি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি। এ বিষয়েও অনেকের অনেক ক্বীল-ক্বাল রয়েছে। তবে সাধারণভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুল আউওয়াল আলাইহিস সালাম তিনি যখন তাশরীফ মুবারক এনেছেন দুনিয়াবী দৃষ্টিতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক তখন প্রায় সাড়ে সাতাশ বছর। দ্বিতীয়ত যিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি যখন তাশরীফ মুবারক আনেন, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী বয়স মুবারক প্রায় সোয়া ঊনত্রিশ বছর। এরপর তৃতীয় এবং চতুর্থ সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুছ ছানী আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুল ছালিছ আলাইহিস সালাম উনারা একত্রিশ ও বত্রিশ বছর বয়স মুবারকে তাশরীফ মুবারক আনেন। আর পঞ্চম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম, তিনি তাশরীফ মুবরক আনেন, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক তেত্রিশ বছর। আর সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছালিছা আলাইহাস সালাম তিনি যখন তাশরীফ মুবারক এনেছেন, তখন দুনিয়াবী জিন্দেগীতে বয়স মুবারক পঁয়ত্রিশ। আর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আহলিল জান্নাহ আন নূরুর রবি’য়া সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন যখন উনার দুনিয়াবী জিন্দেগীতে বয়স মুবারক সাঁইত্রিশ বছর। এই সাত জন উনারা তাশরীফ মুবারক এনেছেন যিনি উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে। আর অষ্টম যিনি তাশরীফ মুবারক এনেছেন, তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রবি’ আলাইহিস সালাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী জিন্দেগীতে বয়স মুবারক যখন একষট্টি বছর, তখন তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন।” সুবহানাল্লাহ!
 অর্থাৎ সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে নবুওওয়ত মুবারক প্রকাশের প্রায় পৌনে এগারো বছর পূর্বে। আওলাদু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন দ্বিতীয়। আর বানাতু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে তিনি হচ্ছেন প্রথম।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার হুলিয়া মুবারক সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, আন নূরুর রবি’য়াহ সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি যেরূপ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুবহু নকশা মুবারক ছিলেন, তদ্রƒপ হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহিস সালাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার হুবহু নকশা বা মিছাল মুবারক ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার লিবাস মুবারক উনার জামালিয়ত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ أَنَسٍ قَالَ : رَأَيْتُ عَلَى زَيْنَبَ بِنْتِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ قَمِيصَ حَرِيرٍ سِيَرَاءَ.
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পূর্বে) আমি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে অতি সুন্দর রেশমী পোশাক মুবারকে দেখলাম। সুবহানাল্লাহ (মুসলিম শরীফ)
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ উনার সন নিয়েও অনেক ইখতিলাফ। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ প্রণিধানপ্রাপ্ত, দলীল সমৃদ্ধ মতে, তিনি অষ্টম হিজরী সনের ৮ই মুহররমুল হারাম শরীফ পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সে অনুযায়ী উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক হলো পৌনে বত্রিশ বছর।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার দু’জন আওলাদ আলাইহিমাস সালাম উনারা পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। একজন ছেলে সন্তান আর একজন মেয়ে সন্তান। ঐতিহাসিকগণের মতে, ছেলে সন্তান উনার নাম মুবারক হলো হযরত আলী ইবনে আবিল আছ আলাইহিস সালাম। তিনি উনার সম্মানিত নানাজান ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পৃষ্ঠপোষকতা মুবারকে বেড়ে উঠেন। পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের সময় তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাহন মুবারক উনার পিছনে আরোহণ করেছিলেন। কতেকের মতে, তিনি ইয়ারমুক জিহাদে পবিত্র শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রিয়পাত্র উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উমামা আলাইহাস সালাম তিনি অন্যতম। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الأَنْصَارِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُصَلِّي وَهْوَ حَامِلٌ أُمَامَةَ بِنْتَ زَيْنَبَ بِنْتِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَلأَبِي الْعَاصِ بْنِ رَبِيعَةَ بْنِ عَبْدِ شَمْسٍ فَإِذَا سَجَدَ وَضَعَهَا ، وَإِذَا قَامَ حَمَلَهَا
অর্থ: হযরত আবু ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা এমতাবস্থায় নামায আদায় করলেন যে, উনার কোল মুবারকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উমামা আলাইহাস সালাম তিনি রয়েছেন। যখন তিনি সিজদা মুবারক দিতেন, তখন উনাকে পাশে রেখে দিতেন। আবার যখন ক্বিয়াম করতেন তখন আবার উনাকে কোল মুবারকে তুলে নিতেন। সুবহানাল্লাহ!
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن أبى قتادة قال بينا نحن في المسجد جلوس إذ خرج علينا رسول الله صلى الله عليه وسلم يحمل أمامة بنت أبى العاص بن الربيع وأمها زينب بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم وهى صبية يحملها على عاتقه فصلى رسول الله صلى الله عليه وسلم وهى على عاتقه يضعها إذا ركع ويعيدها إذا قام حتى قضى صلاته يفعل ذلك بها.
অর্থ: হযরত আবু ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা মসজিদে নববী শরীফে উপস্থিত ছিলাম। এমতাবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। উনার কাঁধ মুবারকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উমামা আলাইহাস সালাম তিনি রয়েছেন। অতঃপর উনাকে কাঁধ মুবারকে নিয়েই তিনি নামায আদায় করলেন। যখন রুকু মুবারক করতেন, তখন উনাকে পাশে রাখতেন। আর যখন রুকু-সিজদা মুবারক হতে উঠতেন, তখন আবার কোল মুবারকে তুলে নিতেন। এভাবেই বারবার করে নামায শেষ করলেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, 
وعن حضرت صديقة عليها السلام قالت أهديت لرسول الله صلى الله عليه وسلم هدية فيها قلادة من جزع قال لادفعنها إلى أحب أهلى إلى فقال النساء ذهبت بها ابنة أبى قحافة فدعا رسول الله صلى الله عليه وسلم أمامة بنت أبى العاص من زينب فأعلقها في عنقها.
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হীরা-মুক্তার একখানা দামী হার হাদিয়াস্বরূপ আসলো। তখন তিনি বললেন, আমার সবচেয়ে প্রিয়পাত্র যিনি, উনাকে এটা হাদিয়া করা হবে। অনেকে বললো এটা উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে হাদিয়া করা হবে। কিন্তু তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার মেয়ে হযরত উমামা আলাইহাস সালাম উনাকে ডাকলেন এবং সেই হার উনাকেই মুবারক পরিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! (দারু কুতনী)
মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার হাকীকী নিসবত মুবারক আমাদের সকলকে নসীব করুন। আমীন।


0 Comments: