সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক-
পরিচিতি মুবারক:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার নাম মুবারক হযরত রায়হানা বিনতে শামউন বিন যায়িদ আলাইহাস সালাম। তিনি ইয়াহুদী সম্প্রদায়ভূক্ত ছিলেন। তিনি পিতার দিক থেকে বনু নাদ্বীর গোত্রের এবং আহালের দিক থেকে বনু কুরায়জা গোত্রের মহিলা ছিলেন। বনু কুরায়জা গোত্রের আল-হাকাম ছিল উনার আহাল। (ইছাবা, যারক্বানী)
ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনা মতে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার পিতৃকূলের নসব মুবারক হলো: হযরত রায়হানা আলাইহাস সালাম বিনতে যায়দ ইবনে ’আমর ইবনে খুনাফা: ইবনে শামউন ইবনে যায়দ। তবে অধিকাংশ লোক আহালের দিকটাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। সেজন্য উনাকে বনু কুরাইজা গোত্রের মহিলা বলেছেন। (তাবাকাত) সুবহানাল্লাহ!
বিলাদতী শান মুবারক:
সম্মানিত নবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের ১৯ বছর পূর্বে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ অর্থাৎ মাহে রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার ২৮ তারিখ, ইয়াওমুছ ছুলাছা শরীফ (মঙ্গলবার) সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! (দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)
দ্বীন ইসলাম গ্রহণ ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবতে আযীমাহ শরীফ:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয় “৬ষ্ঠ হিজরী শরীফ উনার ২৩শে রবীউছ ছানী শরীফ, লাইলাতুল ইছনাইনিল ‘আযীম।”
বনু কুরায়জা গোত্র বিশ্বাসঘাতকতা করলে, অন্যান্যদের ন্যায় সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার আহাল, আল-হাকামও অভিযুক্ত হয়ে নিহত হয় এবং সাইয়্যিদাতুনা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আত-তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম যুদ্ধ বন্দিনী হয়ে পড়েন। পরে তিনি স্বেচ্ছায় দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ! ইহা হচ্ছে জমহুর সীরত গ্রন্থকারদের বর্ণনা।
বনু কুরায়জা ইহুদি গোত্রের বিশ^াসঘাতকতার কারণে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার আহাল ও অন্যান্য যারা নিহত হয়েছিল তার প্রেক্ষাপট এই যে, পবিত্র মদীনা শরীফে তিনটি ইহুদি গোত্র বাস করত। তন্মধ্যে তাদের বৃহত্তম গোত্র ছিল বনু কুরাইজা। এই গোত্র ছিল চরম বদ ও দুর্মুখো। আর এ কারণে খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে শায়েস্তাও করেন কঠোরভাবে। ঐ সময় ইহুদিরা মুসলমানদেরকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করে। প্রাথমিক পর্যায়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইহুদীদের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। তাতে তাদের জান-মাল ও ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ক্রমে তারা বিদ্রোহী হয়ে উঠে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সাথে নতুন চুক্তি সম্পাদনে আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু বনু নাদ্বীর তাতে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পক্ষান্তরে বনু কুরাইজা নতুন করে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় তাদেরকে দেশে থাকার নিরাপত্তা দেয়া হয়, মুসলিম শরীফে তাদের ঘটনা সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণিত আছে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলতেন, বনু নাদ্বীর ও বনু কুরাইজার ইহুদীগণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যুদ্ধ করে। তিনি বনু নাদ্বীরকে দেশ থেকে বের করে দেন। আর বনু কুরাইজাকে দেশে থাকার অনুমতি বহাল রাখেন। এক্ষেত্রে বনু কুরাইজার চুক্তি নবায়নে একটি কূট উদ্দেশ্যও ছিল। তা হলো- পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে সুযোগ বুঝে মুসলমানদেরকে আক্রমণ করা। খন্দকের জিহাদে তারা এই সুযোগ প্রয়োগ করেছিল।
মোট কথা বনু নাদ্বীর দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর তাদের প্রধান নেতা হুয়াই বিন আখত্বাব, আবু রাফে’, সালাম ইবনে আবিল হুকায়ক প্রমূখ খায়বারে গিয়ে বসতি স্থাপন করে এবং তথাকার নেতৃত্ব লাভ করে। খন্দকের জিহাদ ছিল তাদের চেষ্টার ফল। তারা কুরায়শ, বনু সুলায়ম, গাতফান, বনু আসাদ, আশজা’, ফাযারা, বনু মুররা প্রভৃতি আরবের সকল গোত্রগুলিতে যাতায়াত করে তাদেরকে ক্ষিপ্ত করে তোলে এবং একযোগে পবিত্র মদীনা শরীফ আক্রমণে উদ্ধুদ্ধ করে। ফলে বিভিন্ন গোত্রের ১০ হাজার আরব গোত্র মুসলমানদের উপর একযোগে আক্রমণ পরিচালনা করে।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে নিয়ে খন্দক/পরীখা খনন করে পরীখার ঘেরাওয়ের মধ্যে সকলে অবস্থান গ্রহণ করেন। কাফির বাহিনী এসে খন্দক/পরীখা ঘেরাও করে।
বনু কুরাইজা তখন পর্যন্ত মুসলমানদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল। ঠিক সে সময় সংবাদ পাওয়া গেল যে, বনু কুরাইজা প্রকাশ্যে চুক্তি ভঙ্গ করেছে। হুয়াই বিন আখত্বাবের প্ররোচনায় তারা বিদ্রোহ করেছে। সে তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছে যে, যদি কুরাইশরা পিছু হটে যায়, তাহলে আমি তোমাদের সাথে বসতি স্থাপন করব। এ সংবাদে মুসলমানগণ পবিত্র মদিনা শরীফ হিফাজতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তা করেন।
এরইমধ্যে দীর্ঘ এক মাস পর্যন্ত কাফিররা মুসলমানদের অবরোধ করে রাখে। অবশেষে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে গায়েবী মদদ এসে যায়। এক শীতের রাত্রে প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া এসে কাফিরদের সব লন্ডভন্ড করে দেয়। অতঃপর হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখন পর্যন্ত তিনি মুসলমান হননি) উনার নির্দেশে কাফিরগণ তৎক্ষণাৎ খন্দকের জিহাদের স্থান পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সকাল বেলা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকল মুসলমানদেরকে নিয়ে খন্দক প্রান্তর ত্যাগ করেন এবং পবিত্র মদীনা শরীফে এসে পৌঁছেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খন্দকের জিহাদ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে গিয়ে তখনও যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র খোলেননি, এমতাবস্থায় হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি চুক্তি ভঙ্গকারী বনু কুরাইজাকে চুক্তি ভঙ্গে শাস্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুসলিম বাহিনীকে নিয়ে যখন বনু কুরাইজার দুর্গের নিকটে উপস্থিত হন। অতঃপর তাদেরকে অবরোধ করা হয়।
দীর্ঘ ২৫ দিন অবরোধের পর তারা জানায় যে, হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যে ফায়ছালা করবেন, তাই তারা মেনে নিবে। হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উনার বংশ বনু কুরাইজার মিত্র ছিলেন। তাদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত ছিল। আরবদের মধ্যে এই সম্পর্ক বংশসূত্রের সম্পর্ক থেকেও বড় বিবেচিত হতো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের আবেদন মঞ্জুর করলেন। হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এ ব্যাপারে রায় দেন যে, বনু কুরাইজার যুদ্ধক্ষম ব্যক্তিদেরকে হত্যা করা হোক। মহিলা ও শিশুদেরকে বন্দী করে রাখা হোক এবং তাদের মাল-সামানা গণিমত হিসাবে নিয়ে নেয়া হোক। এ রায় ছিল তাওরাত শরীফ উনার নির্দেশ অনুযায়ী। সুবহানাল্লাহ!
বহু হাদীছ শরীফে উল্লেখ হয়েছে, হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন এ রায় দেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনি তো আসমানী ফায়সালাই করেছেন। ইহুদীদেরকে এ রায় শুনানোর পর তাদের মুখ থেকে যেসব কথা বেরিয়েছিল, তা থেকে স্পষ্টত বোঝা যায় যে, তারা এ রায়কে মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমের অনুরূপই মনে করেছিল। সুবহানাল্লাহ!
ইহুদী বনু কুরাইজা গোত্রের প্রতি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনেক ইহসান করেন। তাদেরকে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেন। তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। তাদের জান-মালের নিরাপত্তার অঙ্গীকার প্রদান করেন। বনু কুরাইজা সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে বনু নাদ্বীর অপেক্ষা নীচে ছিল। যেমন, বনু নাদ্বীর গোত্রের কোন লোক যদি বনু কুরাইজার কোন লোককে হত্যা করত, তবে তাকে অর্ধেক রক্তপণ দিতে হতো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের উপর এ ইহসান করেন যে, রক্তপণ আদায়ের ক্ষেত্রে বনু কুরাইজাকে সমমর্যাদা প্রদান করা হয়। ফলে বনু নাদ্বীরকে পরিপূর্ণ রক্তপণ আদায়ে বাধ্য করেন। এ সবের পরেও বনু কুরাইজা চুক্তি ভঙ্গ করে খন্দকের জিহাদে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। খন্দকের জিহাদের সময় হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম ও অন্যান্য মুসলিম মহিলাকে যে দুর্গে রাখা হয়েছিল, দুর্বৃত্ত বনু কুরাইজা সে দুর্গ আক্রমনে উদ্যত হয়েছিল। নাউযুবিল্লাহ!
হুয়াই বিন আখত্বাবকে বিদ্রোহ করার দরুণ দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সে সব আরব গোত্রকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল এবং তারই প্রত্যক্ষ কারসাজিতে খন্দকের জিহাদ সংগঠিত হয়েছিল। বনু কুরাইজা তাকে সাথে নিয়ে এসেছিল। সুতরাং এসব অবস্থার প্রেক্ষিতে বনু কুরাইজার সাথে কঠোর ফায়সালা ছাড়া আর অন্য কিছুই সম্ভব ছিল না।
অনেক মুনাফিকরা অপপ্রচার করে যে, হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জিহাদে আহত হয়েছিলেন, সেজন্য তিনি বনু কুরাইজার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে এরূপ কঠোর ফায়সালা দিয়েছিলেন। ইহা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ তিনি খন্দকের জিহাদে আহত হয়েছিলেন, বনু কুরাইজার কেউ উনাকে আহত করেনি। বনু কুরাইজা ছিল উনার মিত্র গোত্র। কাজেই তিনি পবিত্র তাওরাত শরীফ অনুযায়ী চুক্তিভঙ্গের শাস্তির রায় ন্যায়-সঙ্গতভাবেই দিয়েছিলেন, কোনরূপ শত্রুতার বশবর্তী হয়ে রায় দেননি।
নিহতদের সংখ্যা ঐতিহাসিকগণ ৬ শত বলে উল্লেখ করেছেন। তবে বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের বর্ণনায় জানা যায় যে, এরা ছিল ৪ শত জন। এদের মধ্যে একজন ছিল মহিলা। তাকে কেছাছের জন্য হত্যা করা হয়েছিল। সে দুর্গের উপর থেকে পাথর নিক্ষেপে একজন মুসলমানকে হত্যা করেছিল। এই ছিল বনু কুরাইজা গোত্রের যুদ্ধক্ষম ব্যক্তিদের নিহত হওয়া, তাদের নারী ও শিশুদের বন্দী হওয়া এবং তাদের পরিত্যক্ত সম্পদ গণিমত হিসাবে মুসলমানদের অধিকারে আসার প্রেক্ষাপট। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন নবী, শিবলী নুমানী)
এক বর্ণনায় উল্লেখ আছে যে, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় পেছন থেকে আওয়াজ শুনতে পেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ছালাবা ইবনে শুবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আত তাসিয়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার দ্বীন ইসলাম গ্রহণের সুসংবাদ নিয়ে আসছেন। একটু পরে ঠিকই উক্ত ছাহাবী পবিত্র দরবার শরীফে এসে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আত তাসিয়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার দ্বীন ইসলাম গ্রহণের সুসংবাদ দিলেন। সুবহানাল্লাহ! (উসুদুল গাবা, ইছাবা)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত খুশী হন এবং উনাকে আযাদ করে উনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার প্রস্তাব দেন। অতঃপর উনার সাথে উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হয় ৬ষ্ঠ হিজরী সনের পবিত্র মাহে রবীউছ ছানী শরীফ উনার ২৩ তারিখ, পবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ। সুবহানাল্লাহ! (দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)
সীরাত গ্রন্থসমূহে এ বিষয়ে অনেক এলোমেলো বর্ণনাও রয়েছে। বলা হয়েছে যে, উনাকে আযাদ হওয়ার স্বাধীনতা প্রদান করলে তিনি উক্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বন্দীদশাকেই স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেন, যা সম্পূর্ণ অসম্ভব এবং উনার শানের সম্পূর্ণ খেলাফ। সীরত গ্রন্থসমূহের মধ্যে তাবাকাতে ইবনে সা’দ, মুসা ইবনে উকবার মাগাযী প্রথম দিকের মৌলিক সীরতের কিতাব। পরবর্তী সীরত লেখকগণ এসব কিতাব অনেক ক্ষেত্রে অনুসরণ করেছেন। মুসলমানদের বাগদাদ ও স্পেনের গ্রন্থাগারগুলি কাফিরগণ ধ্বংস করে দেয়ার পর এই কিতাবসমূহ দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায়। তাবাকাতে ইবনে সা’দ ইউরোপে পাওয়া যায়। এসব কিতাবের তথ্যবলী ইউরোপীয় কাফিরগণ যে সংযোজন বা বিয়োজন করেনি তা কে বলবে? সেজন্য কোন সীরত গ্রন্থের বর্ণনা যদি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের খেলাফ কিছু বর্ণিত পাওয়া যায় তবে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। (আছাহহুস সিয়ার)
একটি বর্ণনায় এরূপ উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন যে, বন্দীদের বিচার শেষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার নিকট তাশরীফ এনে বললেন: আপনি যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের গ্রহণ করেন, তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের জন্য আপনাকে গ্রহণ করবেন। আমি বললাম: আমি মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের গ্রহণ করলাম। আমি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে আযাদ করে দেন এবং অন্যান্য হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ন্যায় ১২ উকিয়া স্বর্ণ মোহর ধার্য করে আমার সাথে উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার ব্যবস্থা করেন এবং আমার উপর পর্দা পালনের আহকাম জারি করেন। সুবহানাল্লাহ! (তাবাকাত, ইছাবা)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠানের সময় উনার বয়স মুবারক ছিলেন ৩৭ বছর ২৫ দিন। সুবহানাল্লাহ! (দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, বনু কুরাইজার জিহাদের পর ইহুদিদের মনোনিত বিচারক হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার রায় অনুযায়ী প্রায় ৪০০ বা ৬০০ যুদ্ধক্ষম ইহুদী নিহত হয়। এতে বহু সংখ্যক ইহুদী নারী বিধবা হয়ে পড়ে। উনারা মুসলমানদের মধ্যে সামাজিকভাবে আত্মসম্মান নিয়ে মর্যাদা সহকারে যাতে বসবাস করতে পারেন, এর প্রয়োজন দেখা দেয়। সাধারণত বিধবা বিবাহে লোক আগ্রহী হয়না, তাছাড়া উনারা ছিলেন একটি ভিন্ন কওমের নারী। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীমাহ শরীফে আনয়ন করে উম্মুল মু’মিনীন হিসাবে মর্যাদা দান করেন। সাথে সাথে পবিত্র সুন্নতের অনুসরণে অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও আশ্রয়হীনা বিধবা নারীগণকে বিনা দ্বিধায় শাদী মুবারক করে আশ্রয় দান করেন। সুবহানাল্লাহ!
বিছালী শান মুবারক:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্জ হতে প্রত্যাবর্তন করার পর হিজরী ১১ সনে পবিত্র মাহে মুহররমুল হারাম শরীফ উনার ৫ তারিখ, পবিত্র ইয়াওমুল খমীস (বৃহস্পতিবার) তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! জান্নাতুল বাকীতে উনার দাফন মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। তখন উনার বয়স মুবারক হয়েছিলেন ৪১ বছর ৯ মাস ৭ দিন। সুবহানাল্লাহ! (দৈনিক আল-ইহসান শরীফ, ইছাবা)
ফযীলত ও মর্যাদা:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আত-তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারকে উনার উপস্থিতিতে তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তিনি নিজে উনার জানাযা মুবারক পড়েন এবং দাফন মুবারক সম্পন্ন করেন। সুবহানাল্লাহ! (সূত্র: সীরত গ্রন্থাবলী)
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আজওয়াজুম মুত্বহহারাত পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অর্ন্তভুক্ত। আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা মর্তবা সম্পর্কে খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন-
إنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أهْلَ الْبَيْتِ وَ يُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا
(হে নবী পরিবার! খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক অবশ্যই চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করতে) অর্থাৎ আপনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করেই তিনি সৃষ্টি করেছেন। উনারা নিজেরা শুধু পবিত্রই নন, বরং উনারা পবিত্রতা দানকারী। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা মর্তবার দিক থেকে সর্বপ্রথম হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত আব্বা আলাইহিস সালাম এবং মহাসম্মানিতা আম্মা আলাইহাস সালাম, উনারা হচ্ছেন সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ উনাদের মূল। অতঃপর হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা, অতঃপর হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ এবং বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মর্যাদা এবং অতঃপর অন্যান্য আওলাদে রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্তবা মর্যাদা। সুবহানাল্লাহ!
উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অপরিসীম মর্যাদা মর্তবার বিষয়ে খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালাম পাকে ইরশাদ মুবারকে করেছেন-
لستن كاحد من النساء
অর্থ: উনারা অন্য কোন নারীর মত নন। অর্থ্যাৎ উনাদের কোন মেছাল নেই, উনারা বেমেছাল। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلنَّبِـىُّ اَوْلـٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَاَزْوَاجُه اُمَّهٰتُهُمْ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মু’মিনদের নিকট নিজেদের জানের চেয়েও অধিক প্রিয় এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত মাতা আলাইহিন্নাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! (সূরা আহযাব শরীফ, আয়াত শরীফ ৬)
তাহলে উম্মাহাতুল মু’মিনীন উনার অর্থ হচ্ছেন সমস্ত মু’মিন উনাদের মহাসম্মানিতা মাতাগণ। সুবহানাল্লাহ! এই সম্মানিত লক্বব মুবারক উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনিই দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সৃষ্টির শুরু থেকে এ পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়াতে এসেছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়ার যমিনে আসবেন, (শুধু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত) উনাদের প্রত্যেকেরই মহাসম্মানিতা মাতা হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ!
সকল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে তা’যীম, তাকরীম করা ও মুহব্বত করা উম্মতের জন্য ফরয-ওয়াজিব। যেমন খালিক, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন,
قُل لا أسْألُكُمْ عَلَيْهِ أجْرًا إلَّا الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبَى
অর্থ: হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মতদেরকে বলুন, আমি তোমাদের নিকট কোন বিনিময় চাই না, আর তোমাদের পক্ষে বিনিময় দেয়া সম্ভবপরও নয়। বরং এইরূপ কল্পনা করাও কুফরী হবে। তবে যেহেতু তোমাদেরকে ফায়দা হাসিল করতে হবে, সেজন্য তোমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, যাঁরা আমার আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম করা। (পবিত্র সূরা শু’রা শরীফ, আয়াত শরীফ ২৩)
পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা মর্তবা সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ألاَ إنَّ مَثَلَ أهْلِ بَيْتِىْ فِيْكُمْ مَثَلُ سَفِيْنَةِ نُوْحٍ عليه السلام مَنْ رَكِبَهَا نَجَا وَ مَنْ تَخَلَّفَ عَنْهَا هَلَكَ
অর্থ: সাবধান! নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হলেন হযরত নুহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতীর ন্যায়। যে তাতে আরোহণ করেছে, সে রক্ষা পেয়েছে। আর যে তা হতে পশ্চাতে থেকেছে, সে ধ্বংস হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
الجَنّةُ تَحْتَ أقْدَامِ الْأُمُّهَاتِ
অর্থাৎ সম্মানিত জান্নাত সম্মানিতা মাতা উনাদের পায়ের নিচে। সুবহানাল্লাহ!
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সকলই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একই সম্মানিত জান্নাত মুবারকে একই সাথে অবস্থান মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ! এ থেকে বুঝা যায়, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়েল ফযীলত, বুযুর্গী সম্মান কত বেমেছাল, যা তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও ফিকিরের উর্ধ্বে।
বর্তমানে কোন কোন নামধারী মুসলমান যেমন কোন কোন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সমালোচনা করে থাকে, তেমন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরও শান মান নিয়েও ক্বীল-ক্বাল করে থাকে। তাদের পরিণতি অত্যন্ত খারাপ, যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عويـمر بن ساعدة رضى الله تعالى عنه انه صلى الله عليه و سلم قال ان الله اختارنى واختار لى اصحابا فجعل لى منهم وزراء وانصارا واصهارا فمن سبهم فعليه لعنة الله والـملئكة والناس اجـمعين ولايقبل الله منهم صرفا وعدلا
অর্থ: হযরত উয়াইমির ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক আমাকে এবং আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খেদমতকারী এবং বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়বর্গ নিযুক্ত করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি উনাদেরকে গালি দিবে বা দোষারোপ করবে, তার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত এবং সমস্ত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও সমস্ত মানুষ সকলেরই লা’নত। আর মহান আল্লাহ পাক তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করবেন না। (তাবারানী শরীফ, হাকিম শরীফ)
এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনায় হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা বিশেষভাবে শামিল রয়েছেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মনোনীত করেছেন এবং সেই সাথে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকেও বিশেষভাবে মনোনীত করেছেন উনার মুবারক খেদমতের আঞ্জাম দেয়ার জন্য।
কাজেই উনাদের শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা উপলব্ধি করা সমস্ত জিন-ইনসানের জন্য ফরয-ওয়াজিব। উনাদের প্রতি মুহব্বত ও সু-ধারণা পোষণ করাই হচ্ছে ঈমান। আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করা, উনাদের সমালোচনা করা সুস্পষ্ট কুফরী, কাফির ও চির-জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
সূত্র: তাবাকাত, উসুদুল গাবা, ইছাবা, যারক্বানী, সীরতে ইবনে হিশাম, সীরতুন নবী (শিবলী নুমানী), দৈনিক আল-ইহসান শরীফ।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় নসবনামাহ মুবারক-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পিতা হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত যায়েদ আলাইহিস সালাম। তিনি ছিলেন জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত হারূন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত বংশধর। সুবহানাল্লাহ! তিনি ছিলেন বনূ নাযীর গোত্রের। সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি উনার মহাসম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম উনার দিক থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট যেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মিলিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! যেমন-
اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتُناَ حَضْرَتْ رَيْـحَانَةُ بِنْتُ زَيْدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ خَنَافَةَ بْنِ شَـمْعُوْنَ بْنِ زَيْدِ )عَدَدُ الْاٰبَاءِ غَيْرُ مَرْوِىٍّ( بْنِ النَّضِيْرِ بْنِ النَّحَّامِ بْنِ نَاخُوْمِ بْنِ الْـخَزْرَجِ بْنِ الصَّرِيْحِ بْنِ التَّوْمَانِ بْنِ السِّبْطِ بْنِ الْيَسَعِ بْنِ سَعْدِ بْنِ لَاوِىِّ بْنِ خَيْرِ بْنِ النَّجَّامِ بْنِ تَنْحُوْمَ بْنِ عَازِرِ بْنِ عَيْزَرِ بْنِ هَارُوْنَ بْنِ عِمْرَانَ بْنِ قَاهَاتِ بْنِ لَاوِىِّ بْنِ يَعْقُوْبَ بْنِ اِسْحَاقَ بْنِ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ
১. اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتُناَ حَضْرَتْ رَيْـحَانَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত রায়হানাহ্ আলাইহাস সালাম।
২. زَيْدٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত যায়েদ আলাইহিস সালাম।
৩. عَمْرٌو عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আমর আলাইহিস সালাম।
৪. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ خَنَافَةُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত খনাফাহ্ আলাইহিস সালাম।
৫. شَـمْعُوْنُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত শাম‘ঊন আলাইহিস সালাম।
৬. زَيْدٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত যায়েদ আলাইহিস সালাম।
৭. عَدَدُ الْاٰبَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ غَيْرُ مَرْوِىٍّ কয়েকজন মহাসম্মানিত পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ইসিম বা নাম মুবারক (কিতাবে) বর্ণিত নেই।
৮. النَّضِيْرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত নাযীর আলাইহিস সালাম।
৯. النَّحَّامُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত নাহ্হাম আলাইহিস সালাম।
১০. نَاخُوْمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত নাখূম আলাইহিস সালাম।
১১. اَلْـخَزْرَجُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত খয্রায আলাইহিস সালাম।
১২. الصَّرِيْحُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ছরীহ্ আলাইহিস সালাম।
১৩. التَّوْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত তাওমান আলাইহিস সালাম।
১৪. عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ السِّبْطُ সাইয়্যিদুনা হযরত সিব্ত্ব আলাইহিস সালাম।
১৫. الْيَسَعُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত আল ইয়াসা’ আলাইহিস সালাম।
১৬. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ سَعْدٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত সা’দ আলাইহিস সালাম।
১৭. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ لَاوِىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত লাওই আলাইহিস সালাম।
১৮. خَيْرٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত খইর আলাইহিস সালাম।
১৯. النَّجَّامُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত নাজ্জাম আলাইহিস সালাম।
২০. تَنْحُوْمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত তানহূম আলাইহিস সালাম।
২১. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَازِرٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আযির আলাইহিস সালাম।
২২. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَيْزَر عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আইযার আলাইহিস সালাম।
২৩. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ هَارُوْنُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত হারূন আলাইহিস সালাম।
২৪. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عِمْرَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘ইমরান আলাইহিস সালাম।
২৫. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ قَاهَاتٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ক্বহাত আলাইহিস সালাম।
২৬. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ لَاوِىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত লাওই আলাইহিস সালাম।
২৭. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ يَعْقُوْبُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম।
২৮. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اِسْحَاقُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ইসহাক্ব আলাইহিস সালাম।
২৯. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।
(ইবনে সা’দ ৮/১২৯, ‘উয়ূনুল আছার ২/৩৮৮, আল মুখতাছারুল কাবীর ১/১০০, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ৫/১৫)
উল্লেখ্য যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ইসিম বা নাম মুবারক কিতাবাদিতে পাওয়া যায় না।
এক নজরে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত পরিচিতি মুবারক-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্বা মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তিনি শুধু যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারিণী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারকই হচ্ছেন সম্মানিত ঈমান। সুবহানাল্লাহ!
নিম্নে এক নজরে উনার মহাসম্মানিত পরিচিতি মুবারক তুলে ধরা হলো-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক: সাইয়্যিদাতুনা হযরত রায়হানাহ্ আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত লক্বব মুবারক: উম্মুল মু’মিনীন, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, আত্ব ত্বহিরাহ, আত্ব ত্বইয়্যিবাহ্, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, মালিকাতুল জান্নাহ, মালিকাতুল কায়িনাত এছাড়াও আরো অসংখ্য-অগণিত। সুবহানাল্লাহ!
যেই মহাসম্মানিত লক্বব মুবারক-এ মহাসম্মানিত পরিচিতি মুবারক গ্রহণ করেছেন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম: সাইয়্যিদুনা হযরত যায়েদ আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত পূর্বপুরুষ সাইয়্যিদুনা হযরত শাম‘ঊন আলাইহিস সালাম উনার দিকে নিসবত করে উনাকে ‘সাইয়্যিদাতুনা হযরত রায়হানাহ্ বিনতে শাম‘ঊন আলাইহাস সালাম’ বলা হয়। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালত মুবারক প্রকাশের ১৯ বছর পূর্বে ২৮শে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবী‘উল আউয়াল শরীফ) ইয়াওমুছ ছুলাছা’ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বংশ মুবারক: বনূ নাযীর। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার সম্মানিত স্থান মুবারক: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার বনূ নাযীর গোত্রে। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত অবস্থান মুবারক: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ: ৬ষ্ঠ হিজরী শরীফ উনার মুহররমুল হারাম শরীফ মাসে। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ: ৬ষ্ঠ হিজরী শরীফ উনার ২৩শে রবীউছ ছানী শরীফ লাইলাতু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (লাইলাতু ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ)। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় দুনিয়াবী দৃষ্টিতে উনার সম্মানিত বয়স মুবারক: ৩৭ বছর ২৫ দিন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক প্রদান: ৪ বছর ৮ মাস ১২ দিন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ১১ হিজরী শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ৫ই মুহররমুল হারাম শরীফ ইয়াওমুল খমীস শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার সম্মানিত স্থান মুবারক: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ছলাতুল জানাযা মুবারক পড়ান: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক: ৪১ বছর ৯ মাস ৭ দিন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ : মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জান্নাতুল বাক্বী’ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতু নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন, মালিকুদ দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ্, মুত্বহ্হার, মুত্বহহির, আছ ছমাদ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সংক্ষিপ্ত জীবনী মুবারক-
মহাসম্মানিত পরিচিতি মুবারক-
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلنَّبِـىُّ اَوْلـٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَاَزْوَاجُهۤٗ اُمَّهٰتُهُمْ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মু’মিন উনাদের নিকট উনাদের জানের চেয়ে অধিক প্রিয় এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত মাতা আলাইহিন্নাস সালাম।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন মোট ১৩ জন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেয়ার মুবারক ধারাবাহিকক্রম অনুযায়ী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন ‘আত তাসি‘য়াহ্ তথা ৯ম’। এ জন্য উনাকে ‘ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম’ বলা হয়। সুবহানাল্লাহ! তবে উনার মূল মহাম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক হচ্ছেন ‘সাইয়্যিদাতুনা হযরত রায়হানাহ্ আলাইহাস সালাম’। সুবহানাল্লাহ! তিনি শুধু যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারিনী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারকই হচ্ছেন সম্মানিত ঈমান। সুবহানাল্লাহ! উনাকে সম্মানিত মুহব্বত মুবারক করা, উনার সম্মানিত তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক করা এবং উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের জন্য ফরযে আইন। সুবহানাল্লাহ! তাই উনার মহাসম্মানিত জীবনী মুবারক জানাও সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের জন্য ফরযে আইন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম:
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত যায়েদ ইবনে ‘আমর আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! অপর বর্ণনা মতে শাম‘ঊন বিনতে যায়েদ আলাইহিস সালাম। তিনি বনূ নাযীর গোত্রর বিশেষ ব্যক্তিত্ব মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তবে উনার সবচেয়ে বড় পরিচয় মুবারক হচ্ছেন, তিনি হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আব্বা আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় নাম মুবারক কিতাবাদিতে পাওয়া যায় না।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
পৃথিবীর কোনো কিতাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মহাসম্মানিত তারীখ মুবারক উল্লেখ নেই। এটা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত আফসোসের বিষয় যে, মুসলমানরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মহাসম্মানিত তারীখ মুবারক সংরক্ষণ করতে পারেনি। না‘ঊযুবিল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন একমাত্র যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মহাসম্মানিত নি‘য়ামত মুবারক। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে আখাছ্ছুল খাছভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সাথে উনার রয়েছেন বেমেছাল হাক্বীক্বী দায়িমী তা‘য়াল্লুক্ব-নিসবত মুবারক এবং যিয়ারত মুবারক। সুবহানাল্লাহ! যার কারণে একমাত্র উনার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের, আখাছ্ছুল খাছভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মহাম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তারীখ মুবারকসমূহ এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তারীখ মুবারকসমূহ প্রকাশ করা। সুবহানাল্লাহ!
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুবুওওয়াত ও রিসালত মুবারক প্রকাশের ১৯ বছর পূর্বে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ২৮শে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবী‘উল আউয়াল শরীফ) ইয়াওমুছ ছুলাছা’ শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত শৈশবকাল মুবারক-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি উনার মহাসম্মানিত শৈশবকাল মুবারক-এ উনার মহাসম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম এবং পরিবার-পরিজন উনাদের সাথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যেই অতিবাহিত করেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত প্রথম শাদী মুবারক
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার প্রথম শাদী মুবারক হয় বনী কুরাইযাহ্ গোত্রের হাকামের সাথে। এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,
كَانَتْ اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلتَّاسِعَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ رَيْحَانَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ) مُتَزَوِّجَةً رَجُلًا مِنْ بَنِىْ قُرَيْظَةَ يُقَالُ لَهُ: الْحَكَمُ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক নেয়ার পূর্বে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি বনী কুরাইযাহ্ গোত্রের হাকাম নামে এক ব্যক্তির যাওজিয়াতে ছিলেন।”
এ কারণে কেউ কেউ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনাকে বনী কুরাইযাহ্ গোত্রের বলেছেন।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ:
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, “৬ষ্ঠ হিজরী শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ২৩শে রবীউছ ছানী শরীফ লাইলাতু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (লাইলাতু ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হন। সুবহানাল্লাহ! তখন দুনিয়াবী দুনিয়াবী দৃষ্টিতে উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলেন ৩৭ বছর ২৫ দিন। সুবহানাল্লাহ! তিনি ৪ বছর ৮ মাস ১২ দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেন । সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,
وَكَانَتْ اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلتَّاسِعَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ رَيْحَانَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ) تَقُوْلُ تَزَوَّجَنِىْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَهَرَنِىْ مِثْلَ نِسَائِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ يَقْسِمُ لِـىْ وَضَرَبَ عَلَىَّ الْحِجَابَ.
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ করেন এবং আমাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্মানিত মোহরানা মুবারক উনার অনুরুপ সম্মানিত মোহরানা মুবারক হাদিয়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! আর তিনি আমার জন্য (সম্মানিত দিন-রাত্র মুবারক) বন্টন করেন এবং আমার উপর পর্দার বিধান মুবারক আরোপ করেন অর্থাৎ আমাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম হিসেবে গ্রহণ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (আন্সাবুল আশরাফ ১/২০০)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছেন,
وَاصْطَفَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِنَفْسِهِ مِنْهُمْ اُمَّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتَنَا حَضْرَتْ اَلتَّاسِعَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِّدَتَنَا حَضْرَتْ رَيْحَانَةَ بِنْتَ شَمْعُوْنَ عَلَيْهَا السَّلَامُ) وكانت جميلة واسلمت فاعتقها رسول الله وتزوجها ولم تزل عنده حتى ماتت مرجعه
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে মনোনীত করেন, পছন্দ মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৌন্দর্য মুবারক উনার অধিকারিণী। সুবহানাল্লাহ! তিনি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে (সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন,) সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলম গ্রহণ করেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে মুক্ত করে দিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ করেন। সুবহনাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অধীনে থাকা অবস্থায় তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তিনি কখনো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে পৃথক হন নি।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে হাক্কী ১১/৩২, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৭/১২৫)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন,
فدعاني فأجلسني بين يديه فقال إن اخترت الله ورسوله اختارك رسول الله صلى الله عليه وسلم لنفسه فقلت فإني أختار الله ورسوله فلما أسلمت اعتقني وتزوجني وأصدقني اثني عشرة أوقية ونشا كما كان يصدق نساءه وأعرس بي في بيت أم المنذر وكان يقسم لي كما كان يقسم لنسائه وضرب علي الحجاب.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে ডেকে এনে উনার সামনে বসিয়ে আমাকে (উদ্দেশ্য করে) ইরশাদ মুবারক করেন, আপনি যদি মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে প্রাধান্য দেন, পছন্দ করেন, তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনাকে উনার নিজের জন্য (পছন্দ করবেন,) গ্রহণ করবেন। সুবহানাল্লাহ! তখন আমি বললাম, আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে প্রাধান্য দিলাম, পছন্দ করলাম। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর যখন আমি সম্মানিত ও পবিত্র ইসলাম গ্রহণের বিষয়টা প্রকাশ করলাম, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে মুক্ত করে দিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ সুসম্পন্ন মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! আর আমাকে সাড়ে বার আউক্বিয়া স্বর্ণ (৫০০ দিরহাম) মোহরানা মুবারক হাদিয়া মুবারক দেন, যেমন অন্যান্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে হাদিয়া মুবারক দিয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ! আর মহাম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মু মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার সম্মানিত বাড়ি মুবারক-এ আমার সাথে প্রথম রাত্রি মুবারক অতিবাহিত করেন। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের জন্য যেমন (দিন-রাত্র মুবারক) বন্টণ করে দিয়েছিলেন, ঠিক তদ্রুপ আমার জন্যও (দিন-রাত্র মুবারক) বন্টণ করে দেন এবং আমার উপর পর্দার হুকুম মুবারক আরোপ করেন অর্থাৎ আমাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম হিসেবে গ্রহণ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল মুন্তাখাব)
0 Comments:
Post a Comment