৭২০ নং- সুওয়াল : কোন ব্যক্তি যদি রোজা রেখে স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় ভুলে কিছু পান করে অথবা খেয়ে ফেলে, তবে রোজা ভঙ্গ হবে কি?

 

সুওয়াল : কোন ব্যক্তি যদি রোজা রেখে স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় ভুলে কিছু পান করে অথবা খেয়ে ফেলে, তবে রোজা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব : না, রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নে কিছু পান করলে বা খেলে রোজা ভঙ্গ হবে না। আর জাগ্রত অবস্থায় ভুলে পেট ভরে পানাহার করলেও রোজা ভঙ্গ হবেনা। তবে অবশ্যই রোজার কথা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। রোজার কথা স্মরণ হওয়ার পরও যদি সামান্য খাদ্য বা পানীয় গিলে ফেলে, তবে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এতে শুধু উক্ত রোজার কাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবেনা। (দুররুল মোখতার, শামী)

আবা-৪১

৭১৯ নং- সুওয়াল : সাহারী খাওয়া কি? সাহারী না খেয়ে রোযা রাখলে রোজা হবে কিনা?

 

সুওয়াল : সাহারী খাওয়া কি? সাহারী না খেয়ে রোযা রাখলে রোজা হবে কিনা?

জাওয়াব : সাহারী খাওয়া সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। হ্যাঁ, সাহারী না খেয়ে রোজা রাখলে রোজা হয়ে যাবে। যদি কেউ সাহারী খাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠতে না পারে, তবে সে সাহারী না খেয়েই রোজা রাখবে। এতে তার রোজার কোন ক্ষতি হবে না। আর সজাগ থেকে ইচ্ছা করে সাহারী না খাওয়া সুন্নতের খেলাফ। তবে রোজার কোন ক্ষতি হবেনা। (আলমগীরী)

আবা-৪১

৭১৮ নং- সুওয়াল : রোজার নিয়ত করা কি? এটা কখন করতে হয়?

সুওয়াল : রোজার নিয়ত করা কি? এটা কখন করতে হয়?

 

জাওয়াব : রোজার নিয়ত করা ফর রোযা সাধারণতঃ ছয় প্রকার- ১। ফর, ২। কাযা, ৩। কাফফারা, ৪। নফল, ৫। নির্দিষ্ট মান্নত, ৬। অনির্দিষ্ট মান্নত।

ফর রোযা, নফল রোজা ও নির্দিষ্ট মান্নতের রোজার নিয়ত দ্বি-প্রহরের পূর্ব পর্যন্ত করা জায়েয আছে। তবে রাত্রিতে নিয়ত করাটাই আফযল। আর কাযা রোজা, কাফ্ফারা রোজা এবং অনির্দিষ্ট মান্নতের রোজার নিয়ত সূবহে সাদিকের পূর্বেই করতে হবে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)

আবা-৪১

৭১৭ নং- সুওয়াল : অনেকেই নামায পড়েনা কিন্তু রমজান মাসে রোযা রাখে, এই রোজার কি কোন ফযীলত পাওয়া যাবে? জানাবেন।

 

সুওয়াল : অনেকেই নামা পড়েনা কিন্তু রমজান মাসে রোযা রাখে, এই রোজার কি কোন ফযীলত পাওয়া যাবে? জানাবেন।

জাওয়াব : মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন,

فمن يعمل مثقال ذرة خيرايره ومن يعمل مثقال ذرة شرايره.

অর্থ : যদি কেউ একবিন্দু নেকী করে, তার প্রতিদান সে পাবে। আর একবিন্দু বদী করলেও তার বদলা তাকে গ্রহণ করতে হবে।

আরো অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

انى لا اضيع عمل عامل منكم من ذكر او انثى.

অর্থ : নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মধ্যে কোন আমলকারী পুরুষ ও মহিলার আমলকে নষ্ট করিনা।

কাজেই যে নেক কাজ করবে, সে নেকীর বদলা পাবে। আর যে বদ কাজ বা গুণাহের কাজ করবে, সে তারও বদলা পাবে।

রমজান শরীফে রোযা রাখা ফর এবং নামা পড়াও ফর। যে উভয়টি করবে, সে পূর্ণ ফায়দা হাসিল করবে। আর যদি কেউ শুধু রমজান শরীফে রোযা রাখে, নামা না পড়ে, তবে তার রোযা রাখার ফর আদায় হবে কিন্তু নামা না পড়ার গুণা তার উপর বর্তাবে। কারণ মহান আল্লাহ পাক অন্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেন,

من عمل صا لحا فلنفسه ومن اساء فعليها وما ربك بظلام للعبيد.

অর্থ : যে নেক কাজ করে, সে তার নিজের জন্য করে। অর্থাৎ সে তার সওয়াব পাবে, আর যে পাপ কাজ করে, সেটা তার উপর বর্তাবে। অর্থাৎ গুণাহ শাস্তি তাকে ভোগ করতে হবে। আর আপনার রব বা প্রতিপালক বান্দার প্রতি জুলুম করেন না। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক কোন বান্দার প্রতি জুলুম করেন না।

সুতরাং যে ব্যক্তি নামা আদায় করা ব্যতীত শুধু রমজান শরীফে রোযা রাখবে, সে রোজা রাখার সওয়াব পাবে এবং অবশ্যই সে নামাজ তরক করার গুণাহে গুণাহগার হবে। (সমূহ তাফসীরের কিতাব)

আবা-৪১

৭১৬ নং- সুওয়াল : আমরা জানি যে, তারাবীহর নামায ২০ রাকায়াত এবং  তা আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। অথচ কেউ কেউ বলে, ৮ রাকায়াত পড়াই সুন্নত। আবার কেউ কেউ বলে, ১২ রাকায়াত পড়াই সুন্নত।

 

সুওয়াল : আমরা জানি যে, তারাবীহ নামা ২০ রাকায়াত এবং  তা আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। অথচ কেউ কেউ বলে, ৮ রাকায়াত পড়াই সুন্নত। আবার কেউ কেউ বলে, ১২ রাকায়াত পড়াই সুন্নত।

এখন আমরা কোন মতের উপর আমল করবো এবং কোন মতটি সহীহ্।

জাওয়াব : আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মোতাবেক তারাবীহ নামা ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অতএব কেউ যদি ২০ রাকায়াত থেকে এক রাকায়াতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুণাহ হবে। অর্থাৎ তারাবীহ নামা ২০ রাকায়াতই পড়তে হবে এবং এর উপরই ইজমা হয়েছে।

যারা তারাবীহর নামা ৮ রাকায়াত বলে থাকে, তারা বুখারী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত- হযরত আয়শা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা দলীল স্বরূপ পেশ করে থাকে। যাতে বর্ণিত আছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসে এবং রমজান ব্যতীত অন্যান্য মাসে (বিত সহ) ১১ রাকায়াত নামা আদায় করতেন। মূলত এটি হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজের বর্ণনা, তারাবীহ নামাজের বর্ণনা নয়। কারণ তারাবীহ নামা শুধু রমজান মাসের জন্যই নির্দিষ্ট। রমজান ব্যতীত অন্যান্য মাসে তারাবীহ নামা নেই। আর তাহাজ্জুদ নামা সারা বৎসরেই পড়তে হয়। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, সুনানুল কোবরা লিল বায়হাক্বী, আল কবীর লিত তিবরানী, আল জাওহারুন্নাকী, নাইনুল আওতার, রশাদুস সারী, মিরকাত শরীফ, আওজাজুল মাসালিক, মাআরেফে মাদানীয়া, ফতহুল বারী, উমদাদুল ক্বারী, বজলুল মাজহুদ, ফিক্হুস সুনান ওয়াল আছার, নছবুর রাইয়াহ, আইনী শরহে বোখারী, আত তালীকুল হাছানাহ, মোজাহেরে হক্ব, আশয়াতুল লুময়াত, এলাউস সুনান, ফতওয়ায়ে আলমগিরী, খোলাসাতুল ফতওয়া, মজমুয়াতুল ফতওয়া, বাহরুর রায়েক, মারাকিউল ফালাহ, ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন, গুনইয়াতুৎ ত্বলেবীন)

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আমাদের প্রকাশিত মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ২৫-৩০তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৩০৪ খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে ছাবেত করা হয়েছে যে, তারাবীহ নামা ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও সহীহ মত।

আবা-৪১

বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-

১. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/10/blog-post_15.html
২. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/10/blog-post_92.html
৩. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/10/blog-post_67.html
৪. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/10/blog-post_50.html
৫. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/10/blog-post_29.html
৭১৫ নং- সুওয়াল : আমরা উলামায়ে দেওবন্দের অনেক কিতাবেই দেখতে পাই যে, তারা ফতওয়া দিয়েছে- তারাবীহর নামাজে বা অন্যান্য সময়ে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হারাম।

 

সুওয়াল : আমরা লামায়ে দেওবন্দের অনেক কিতাবেই দেখতে পাই যে, তারা ফতওয়া দিয়েছে- তারাবীহ নামাজে বা অন্যান্য সময়ে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হারাম।

এখন আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে যে, লামায়ে দেওবন্দের উপরোক্ত ফতওয়া কতটুকু গ্রহণযোগ্য, দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

জাওয়াব : পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা সম্পর্কিত লামায়ে দেওবন্দের উক্ত ফতওয়া অসম্পূর্ণ ও অশুদ্ধ। কারণ উজরত গ্রহণ করা শর্ত সাপেক্ষে জায়েয, আবার শর্ত সাপেক্ষে নাজায়েয। অর্থাৎ সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হলে, পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়েয। আর সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করা না হলে, উজরত গ্রহণ করা জায়িয নেই। এর উপরই লামায়ে  মুতাআখখেরীনগণ উনাদের ফতওয়া এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত। (বাহরুর রায়েক, ফতওয়ায়ে আলমগিরী, ফতওয়ায়ে তাতার খানিয়া, ফতওয়ায়ে আযিযী, দুররুল মোখতার, আশবাহু ওয়ান নাজায়ের, ফতওয়ায়ে আলী আফেন্দী, জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, কাশফুল গুম্মাহ, ফতওয়ায়ে ফয়জী, তাফসীরে আজিজী, তাফসীরে ইক্লীল)

তারাবীহ নামাজে বা অন্যান্য সময় কোরআন শরীফ খতম বা পাঠ করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয হওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ২৩ ও ২৪তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৫১টি নির্ভর যোগ্য কিতাবের দলীল পেশ করা হয়েছে।

আবা-৪১

তারাবীহ্ নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/10/blog-post_89.html

. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/10/blog-post_23.html

৭১৪ নং- সুওয়াল : আমরা মাসিক মদীনা পত্রিকার পূর্ববর্তী বেশ কয়েক সংখ্যায় দেখতে পেলাম যে, তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়ার জন্য উৎ সাহিত করা হয়েছে।

 

সুওয়াল : আমরা মাসিক মদীনা পত্রিকার পূর্ববর্তী বেশ কয়েক সংখ্যায় দেখতে পেলাম যে, তাহাজ্জুদ নামা জামায়াতে পড়ার জন্য উৎ সাহিত করা হয়েছে।

এখন আমার জানার বিষয় হলো- সত্যিই কি তাহাজ্জুদ নামা জামায়াতে পড়া ফায়দাজনক?

জাওয়াব : আমাদের হানাফী মাযহাবে তাহাজ্জুদ নামাজ জামায়াতে পড়া মাকরূহে তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। (ফতওয়ায়ে আলমগিরী, খোলাছাতুল ফতওয়া, বাহরুর রায়েক, ফতওয়ায়ে তাতার খানিয়া, মাবসুত, মারাকিউল ফালাহ, ফতহুল ক্বাদীর, বাদায়েউস সানায়ে, রদ্দুল মোহতার, দূররুল মোখতার, শরহে বেকায়াহ, ফতওয়ায়ে সিরাজিয়া, গিয়াসিয়া, নেহায়া, শাফিয়া, মকতুবাত শরীফ, এলাউস সুনান, বাজ্জাজিয়া)

মাসিক মদীনার সম্পাদক ও তার সমপর্যায়ভূক্ত কিছু লোক রয়েছে, যাদের আক্বল ও ইল্মের ত্রূটির কারণে তারা সাধারণ মুসলমানদেরকে মাকরূহ ও হারাম কাজের দিকে উৎসাহিত করে থাকে। যা থেকে বিরত থাকা তাদের সকলের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত।

তাহাজ্জুদ নামাজ জামায়াতে পড়া মাকরূহে তাহরীমী ও বিদয়াত সাইয়্যিয়াহ। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে- আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ১৩তম সংখ্যা পড়ুন। যাতে ৭৬টি নির্ভর যোগ্য কিতাবের দলীল পেশ করা হয়েছে।

আবা-৪১

তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-  

. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_416.html

৭১৩ নং- সুওয়াল : আজকাল অনেক পেপার-পত্রিকা ও কিতাবাদিতে রোযা রেখে ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হবে না বলে ফতওয়া দেয়া হয়ে থাকে এবং সে সমস্ত পেপার-পত্রিকা ও কিতাবাদিতে দলীলস্বরূপ মাওলানা আশরাফ আলী থানভী সাহেবের লিখিত “ইমদাদুল ফতওয়া” নামক কিতাবের বরাত দিয়ে থাকে। উক্ত ইমদাদুল ফতওয়ায় রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ না হওয়ার কারণস্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইনজেকশন মগজ অথবা পাকস্থলীতে পৌঁছেনা।  অথচ আমরা ডাক্তাররা জানি যে, ইনজেকশন অবশ্যই মগজে পৌঁছে থাকে। তাহলে তাদের উক্ত ফতওয়া কি করে শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে? সঠিক ফায়সালা দানে উপকৃত করবেন।

 

সুওয়াল : আজকাল অনেক পেপার-পত্রিকা ও কিতাবাদিতে রোযা রেখে ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হবে না বলে ফতওয়া দেয়া হয়ে থাকে এবং সে সমস্ত পেপার-পত্রিকা ও কিতাবাদিতে দলীলস্বরূপ মাওলানা আশরাফ আলী থানভী সাহেবের লিখিত ইমদাদুল ফতওয়ানামক কিতাবের বরাত দিয়ে থাকে। উক্ত ইমদাদুল ফতওয়ায় রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ না হওয়ার কারণস্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে যে, নজেকশন মগজ অথবা পাকস্থলীতে পৌঁছেনা।

অথচ আমরা ডাক্তাররা জানি যে, নজেকশন অবশ্যই মগজে পৌঁছে থাকে। তাহলে তাদের উক্ত ফতওয়া কি করে শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে? সঠিক ফায়সালা দানে উপকৃত করবেন।

জাওয়াব : মাওলানা আশরাফ আলী থানভী সাহেবের লিখিত ইমদাদুল ফতওয়ার রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়া সম্পর্কিত উল্লিখিত ফতওয়াটি  সম্পূর্ণ ভুল হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। মূল ও সঠিক ফতওয়া হচ্ছে- রোজা অবস্থায় যেকোন ইনজেকশন যেকোন স্থানে নেয়া হোক না কেন, রোজা অবশ্যই ভঙ্গ হবে। কারণ ইনজেকশন নিশ্চিতরূপে মগজে পৌঁছে থাকে। (মাবসুত, বাদায়েউস সানায়ে, খোলাছাতুল ফতওয়া, ফতহুল ক্বাদীর, আলমগিরী, হেদায়া, আইনুল হেদায়া, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া)

রোজা অবস্থায় যে কোন ইনজেকশন যেকোন স্থানে নেয়া হোক না কেন, তাতে রোজা অবশ্যই ভঙ্গ হবে। এ বিষয় আমরা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ও ইজমা-ক্বিয়াস তথা চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ইমদাদুল ফতওয়ায় প্রদত্ত্ব ফতওয়াকে খণ্ডন করে মাসিক আল বাইয়্যনাত ২১ ও ২২তম সংখ্যায় বিস্তারিত ফতওয়া দিয়েছি।       কাজেই ইনজেকশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর উক্ত সংখ্যা ২টি  ভালভাবে পাঠ করুন।

আবা-৪১

 

ইনজেকশন নেয়া রোজা ভঙ্গের কারণ তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-

১. http://khawajarazi.blogspot.com/2018/10/blog-post_8.html

২. http://khawajarazi.blogspot.com/2020/07/blog-post_64.html

৭১২ নং- সুওয়াল :  কোন কোন জায়গায় জানাযার নামায শেষ করার পর মৃত ব্যক্তির জন্য হাত তুলে দোয়া করা হয়। এটা শরীয়ত অনুযায়ী জায়েয কি না?

 

সুওয়াল : মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৬ইং সংখ্যায় নিন্মলিখিত প্রশ্নোত্তর ছাপানো হয়-

প্রশ্ন : কোন কোন জায়গায় জানাযার নামা শেষ করার পর মৃত ব্যক্তির জন্য হাত তুলে দোয়া করা হয়। এটা শরীয়ত অনুযায়ী জায়েয কি না?

উত্তর : জানাযার সবটুকুই মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া। দোয়ার এই পদ্ধতিই নবী করীম ল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং সেই পদ্ধতি অনুযায়ী দোয়া করার পর সঙ্গে সঙ্গেই পুনরায় হাত তুলে দোয়া করণে মনে হয় যেন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়া সাল্লাম দেয়া দোয়ার পদ্ধতিটুকু পরিপূর্ণ ছিল না। তার সাথে কিছু সংযুক্ত করা প্রয়োজনীয়তা রয়ে গিয়েছিল। আর যেহেতু হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবীগণের দ্বারা জানাযার পর হাত তুলে দোয়া করার কোন প্রমাণ নাই, সে কারণে ফেকাহ্বিদগণ এই দোয়াকে মকরুহ এমনকি বেদাত এবং নাজায়েয পর্যন্ত বলেছেন। হিজরী ৩য় শতাব্দীর বিখ্যাত ফেকাহ্বিদ ইমাম আবু বকর ইবনে হামেদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে জানাযার পরপরই হাত তুলে দোয়া করা মকরুহ্। (ফাওয়ায়েদে-বাহীয়্যাহ ১ম খন্ড) শামসুল আয়েম্মাহ্ হালওয়ানীর (রাহঃ মৃঃ ৪৫৪হিঃ) অভিমত হচ্ছে, জানাযার পর দোয়ার জন্য হাত তোলা অনুচিত। (ক্বানিয়্যাহ)- জানাযার পর হাত তুলে দোয়া করা যাবে না।-(ফাতাওয়ায়ে ছেরাজিয়্যাহ)।

মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন- জানাযার পর পুনরায় মৃতের জন্য হাত তুলে দোয়া করা যাবে না। -(মেরক্কাতঃ শরহে মেশকাত)

এখন আমার সুওয়াল হচ্ছে- মাসিক মদীনার উপরোক্ত উত্তর শুদ্ধ হয়েছে কি? নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লার মাধ্যমে জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব : না, মাসিক মদীনার প্রদত্ত উত্তর সম্পূর্ণ শুদ্ধ হয়নি। কারণ জানাযার নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করা জায়েয, তথা মোস্তাহাব। স্বয়ং আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযার নামাজের পর মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও মুনাজাত করেছেন। আবার জানাযা নামাযের পর মুনাজাত করা মাকরূহ ও বিদয়াত। অর্থাৎ শর্ত সাপেক্ষে জায়েয ও মোস্তাহাব আর শর্ত সাপেক্ষে মাকরূহ ও বিদয়াত।

মূলত মাসিক মদীনার সম্পাদক উক্ত কিতাবগুলোর ইবারতের সঠিক ব্যাখ্যা বুঝতে সক্ষম হয়নি। বরং যা বুঝেছে, তা সম্পূর্ণ ভুল বুঝেছে। কেননা উক্ত কিতাব সমূহের বক্তব্য সমূহ ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। যেমন হানাফী মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য ফতওয়ার কিতাব মূহীত্বে সারাখছীতে উল্লেখ আছে যে,

ان الدعاء بعد الصلوة الجنازة مكروه.

অর্থ : নিশ্চয় জানাযার নামাযের পর মুনাজাত করা মাকরূহ।

ফিক্বাহের বিশ্ববিখ্যাত কিতাব খোলাছাতুল ফতওয়া সিরীজিয়া, বাজ্জাজিয়াহ এবং বাহরুর রায়েকে উল্লেখ আছে যে,

لايدعوا بعد التسليم كما فى الخلاصة وعن الفصلى لا بأس به.

অর্থ : “(জানাযার নামাজের) সালামের পর মুনাজাত করবেনা।

অনুরূপ খোলাসা কিতাবে বর্ণিত আছে, আর ফাজলীহ্তে বর্ণিত আছে যে, (জানাযার নামাজের পর) মুনাজাত করাতে কোন ক্ষতি নেই।

আর বিখ্যাত মুহাদ্দিস মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্ববিখ্যাত কিতাব মিশকাত শরীফের শরাহ মিরকাত শরীফে উল্লেখ করেন যে,          

ولا يدعوا للميت بعد صلوة الجنازة لانه يشبه الزيادة فى صلوة الجنازة.

অর্থ : জানাযার নামাজের পর মৃত ব্যক্তির জন্যে মুনাজাত করবে না, কেননা এরূপ মুনাজাত করা জানাযার নামাজে বৃদ্ধি করার নামান্তর।

উল্লেখিত ইবারত বা বক্তব্যসমূহ অবশ্যই সঠিক ও যুক্তিযুক্ত, তবে তা অবশ্যই ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। মূলত উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে, জানাযার নামাজের পর পর অর্থাৎ সালাম ফিরানোর সাথে সাথে অন্যন্য নামাজের ন্যায় কাতারে থেকেই মুনাজাত করা মাকরূহ, কেননা তাতে মুনাজাতও জানাযার নামাজের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়।

অতএব, জানাযার নামাজের পর কাতার ভঙ্গ করে এবং মৃত ব্যক্তির নিকট হতে সরে গিয়ে সকলে একত্রিত হয়ে মুনাজাত করবে, এরূপভাবে মুনাজাত করা মাকরূহ্ নয়। যদি সাধারণভাবে  (مطلقا)জানাযার নামাজের পর মুনাজাত করা মাকরূহ্ বা নাজায়েয হতো, তবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযার নামাজের পর মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করতেন না। অথচ হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাবে স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযার নামাজের পর মৃত ব্যক্তির জন্যে মুনাজাত বা দোয়া করেছেন। তবে কি তিনি নাজায়েয ও মাকরূহ কাজ করেছেন? (নাউজুবিল্লাহ)

মূলত জানাযার নামাজের পর মৃত ব্যক্তির জন্যে মুনাজাত করা সুন্নত। তবে শর্ত হলো-

(১) উক্ত মুনাজাতকে ফর-ওয়াজিবের ন্যায় জরুরী মনে করা যাবেনা অর্থাৎ সুন্নত মনে করেই করতে হবে।

(২) জানাযার নামাজের সালাম ফিরানোর সাথে সাথে মুনাজাত করা যাবেনা।

(৩) সালাম ফিরানোর পর কাতার ভঙ্গ করে মৃত ব্যক্তি থেকে সরে গিয়ে মুনাজাত করবে। এরূপভাবে মুনাজাত করা জায়েয বরং সুন্নত, অর্থাৎ সুন্নাতে যায়েদাহ্।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে- ফতহুল ক্বাদীর, সিফরুস সায়াদাত এবং যাদুল আখিরাত কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযার নামা পড়ে এ দোয়া পাঠ করতেন-

اللهم انت ربها وانت خلقتها وانت رزقتها وانت هديتها الى الاسلام- وانت قبضت روحها وانت اعلم يسرها وعلايتها جئنا شفعاء فا غفر لها وارحمها انك انت الغفور الرحيم.

অর্থ : হে মহান আল্লাহ পাক! আপনিই তার রব, আর আপনিই তাকে সৃষ্টি করেছেন ও রিযিক দান করেছেন। আর তাকে ইসলামের দ্বারা হিদায়েত দান করেছেন। আপনি তার রূহ্ কবয করেছেন ও আপনিই তার জাহের-বাতেন সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। আমি সুপারিশ করছি- তাকে ক্ষমা করে দিন, তার প্রতি দয়া করুন। নিশ্চয়ই আপনি অতি ক্ষমাশীল ও অতিশয় দয়ালু।

তবে উক্ত মুনাজাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাত তুলেছেন কি না, সে সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে দাফনের পর হাত তুলে মুনাজাত করেছেন, তার স্পষ্ট দলীল রয়েছে। আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযার নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করতে যেহেতু নিষেধ করেননি, সেহেতু কোন উম্মতের পক্ষে সেটা নিষেধ করা জায়েয হবেনা। কারণ অনুসরণীয় ইমাম ও মুজতাহিদগণের রায় হাত তুলে মুনাজাত করার পক্ষে। যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,

رفع اليدين عند الدعاء على ما عليه عمل الامة انماهو من الاداب والاسحباب والاتباع الاثر لا على سنة الهدى.

অর্থ : উম্মতের মধ্যে মুনাজাতে হাত উঠানোর যে আমল বিদ্যমান রয়েছে, নিশ্চয়ই তা আদব, মুস্তাহাব ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের অনুসরণের অন্তর্ভূক্ত। তবে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ নয়।” (ফতহুল ক্বাদীর)

অতএব, জানাযার নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করাও মোস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত।

কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে,

وضع عمر على سريره فتكفنه الناس يدعون وسشنون وسصلون عليه قبل ان يرفع.

অর্থ : হযরত মর ফারূক আলাইহিস সালাম উনার খাটের উপর রাখা হয়েছিল। অতঃপর লোকেরা উনাকে কাফন পরাচ্ছিল এবং উনাকে উঠিয়ে নেয়ার পূর্বে উনার জন্য লোকেরা দোয়া-দরূদ পড়ছিলেন।” (মিরকাত শরীফ)

روى ان رجلا فقل هكذا بعدا الصلوة فراه رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال ادع يستجب لك.

অর্থ : বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি জানাযার নামাজের পর অনুরূপ দোয়া-দরূদ পড়ছিলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখে বললেন, “দোয়া কর, তোমার দোয়া অবশ্যই কবুল হবে।” (কেফায়া, এনায়া)

وفى نافع المسلمين رجل رفع يديه بدعاء الفاتحة للميت قبل الدفن جاز.

অর্থ : নাফেউল মুসলিমীন কিতাবে উল্লেখ আছে- মৃতের জন্য দাফনের পূর্বে (জানাযার নামাজের পর) উভয় হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা জায়েয।” (জাওয়াহিরুল নাফীস, শরহে দুররুল ক্বাইস-১৩২)

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, জানাযার নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করা জায়েয, তথা সুন্নত। এছাড়া নিম্নলিখিত কিতাবসমূহে জানাযার নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করাকে জায়েয বলা হয়েছে- জামিউর রুমুয, তাতারখানিয়া, হাদীয়াতুল মুসাল্লিন, শরহে বরযখ, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, ফতওয়ায়ে মাহমুদীয়া, ফতহুল বারী শরহে বোখারী ইত্যাদি।

[বিঃদ্রঃ- বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ২০তম ও ৩৬তম সংখ্যা পড়ুন।]

আবা-৪১

জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া -

. https://khawajarazi.blogspot.com/2019/02/blog-post_13.html

. https://khawajarazi.blogspot.com/2019/02/blog-post_30.html

. https://khawajarazi.blogspot.com/2019/02/blog-post_59.html

. https://khawajarazi.blogspot.com/2019/02/blog-post_14.html

৫ক. https://khawajarazi.blogspot.com/2019/02/blog-post_99.html

৫খ. https://khawajarazi.blogspot.com/2019/02/blog-post_22.html

. https://khawajarazi.blogspot.com/2019/02/blog-post_42.html

. https://khawajarazi.blogspot.com/2019/02/blog-post_93.html

. https://khawajarazi.blogspot.com/2019/02/blog-post_0.html

. https://khawajarazi.blogspot.com/2019/02/blog-post_86.html

১০. https://khawajarazi.blogspot.com/2019/02/blog-post_35.html