একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১০৩

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইসমে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

রউফুর রহীম, রহমাতুল উম্মাহ, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে একই বিষয়ে একই সময়ে পিতা-পুত্রের সাক্ষাৎ ও নিয়ামত লাভ

এমন নছীহত শুনে বেদনা-বিমুগ্ধ অন্তরে হযরত আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি অবনত মস্তকে হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার ক্বদম মুবারকে লুটিয়ে পড়লেন এবং বাইয়াত হওয়ার জন্য বিনীত আরজু পেশ করলেন। ক্ষণিক পূর্বের কারামত প্রত্যাশী হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার এমন ভাবান্তরে সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বাইয়াত করালেন এবং ফয়েজ-সমৃদ্ধ করে দিলেন। উনার মাধ্যমে হযরত আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি ক্রমান্বয়ে এতোই উঁচু মাক্বামে অধিষ্ঠিত হলেন যে, তিনি আল্লাহ পাক-উনার লক্ষ্যস্থলে পরিণত হলেন। আল্লাহ পাক-উনার মাহবুব ওলী অভিধায় জগৎ জুড়ে তাঁর সুনাম বিস্তৃত ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলো। (সুবহানাল্লাহ)

আজমীর শরীফে চিশ্তিয়া তরীক্বার ইমাম, কতুবুল আক্তাব, সুল্তানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ, হযরত খাজা সাইয়্যিদ মুঈনুদ্দীন হাসান চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপন অনুপম কারামত-উনার বহিঃপ্রকাশ

ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফদ্বালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখ্রুল আওলিয়া, লিসানুল হক্ব, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম-উনার কামিয়াবীর সোপান ও কারামত উপলদ্ধির জন্য উপরের আলোচনা একান্ত সহায়ক। একই সঙ্গে তাছাউফ-উনার সংশ্লেষ বিহীন প্রগাঢ় ইল্মও যে অসার ও মূল্যহীন এবং আল্লাহ পাক ও তাঁর প্রিয়তম হাবীব, মাশুকে মাওলা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মারিফাত ও মুহব্বত হাছিলের অন্তরায় তা জানা গেছে। আরো জানা গেছে, সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মুবারক ছোহ্বতের অভাবে ইল্মে ফিক্বাহ ও হাদীছ শাস্ত্রে জগৎ বরেণ্য সূক্ষ্মদর্শী আলিম, হযরত আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি অজ্ঞানতা ও বিফলতার তিমিরে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। আল্লাহ পাক-উনার লক্ষ্যস্থল মাহবুব ওলীগণের মুবারক ছোহ্বত হাছিলের মাধ্যমে উনাদের নির্দেশিত পন্থায় সুন্নত অনুসরণের অভ্যস্ততায় যে অতুলনীয় কামিয়াবী অর্জিত হয়, প্রকৃত অর্থে তারই নাম কারামত

এমন কারামত-সমৃদ্ধ আল্লাহ পাক-উনার খাছ লক্ষ্যস্থল বিশিষ্ট ওলীগণের পরস্পরের সঙ্গে অবিরাম নিবিড় নিস্বত (সম্পর্ক) বিদ্যমান থাকে। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে এ সম্পর্কের সার্বক্ষণিক বিদ্যমানতা আদিকাল (রোজ আযল) থেকে। উনাদের পারস্পরিক সম্বন্ধের অটুট বন্ধন যেমন জীবদ্দশায়, তেমন কবরেও। তাই এ যোগাযোগ, ভাব বিনিময়, লেনদেন ও আলাপন স্থুল বিবেচনায় পরোক্ষ মনে হলেও মূলত: তাপ্রত্যক্ষ। প্রয়োজনে জীবিতগণ কখনো ছুটে যান কবরবাসীগণের কাছে, আবার কবরবাসীগণ কখনো যান জীবিতগণের সান্নিধ্যে। ইল্মে তাছাউফে অদীক্ষিতদের কাছে বিষয়টি অগম্য। তাই অবিশ্বাস্য। হাদীছ শরীফে উনার রহস্য এভাবে বিধৃত হয়েছেঃ

الا رواح جنود مجندة فما تعارف منها ائتلف وما تناكر منها اختلف.

অর্থঃ রূহসমূহ লশ্করের মতো একত্রিত রয়েছে। তাদের মধ্যে যারা আদিকালে (রোজ আযল) পরস্পরে মিলিত হয়ে যায়, দুনিয়াতেও তারা একে অপরের  সঙ্গে মুহব্বতের বন্ধনে আবদ্ধ হয়।  আর যে সব রূহ অপরিচিত থেকে যায়, তারা পরস্পর পৃথক থাকে।” (বুখারী ও মুসলিম)

বলার অপেক্ষা রাখে না, ওলীআল্লাহগণের রূহ আল্লাহ পাক-উনার সদয় ইচ্ছায় আদিকালে পরস্পর মিলিত থেকে আরশের চারদিক প্রদক্ষিণ করেন। উনাদের জানাজানি ও পরিচয়ের ঘনিষ্ঠতা আদিকালের। অন্য এক হাদীছ শরীফে উল্লেখ রয়েছেঃ দুজন মুমিনের আত্মা একমাসের দূরত্ব থেকে এসে মিলিত হয়, অথচ তারা (দুনিয়ায়) একে অপরকে দেখেনি।

হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গায্যালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বাস্তব এক ঘটনায় পারস্পরিক মুহব্বতের সারবত্তা বর্ণনা করেছেন। তাহলোঃ পবিত্র মক্কা শরীফে এক ভাঁড় (ব্যাঙ্গ-পরিহাসে পটীয়সী) মহিলা ছিল। তার ভাঁড়ামীতে অনেকেই হাসতো। সে একবার মদীনা শরীফে গেলো এবং সেখানে তারই মতো এক ভাঁড় মহিলার আতিথ্য গ্রহণ করলো। ঘটনাচক্রে একদিন সে উম্মুল মুমিনীন, হযরত আয়িশা ছিদ্দিকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহা-উনার কাছে গেলো। সেখানে সে এমন সব কথা বলতে থাকলো, তাতে হযরত আয়িশা ছিদ্দিকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হেসে ফেল্লেন। জানতে চাইলেনঃ তোমার নিবাস কোথায়?” ভাঁড় মহিলার জবাবে জানা গেলো, অদূরেই এমন এক মহিলার গৃহে তার বসবাস, যে মহিলা তারই মতো পারঙ্গম ভাঁড়। উম্মুল মুমিনিন, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাকে বললেনঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামূল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য বলেছেন, আদিকালে (রোজ আযল) আত্মাসমূহ লশ্করের ন্যায় একত্রিত (পরিচিতির পরিণতিতে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে) হয়েছে।অর্থাৎ যার সাথে যার, তার সাথে তার (বন্ধুত্ব)। (চলবে)

আবা-১৬৩

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১০২

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ দা'ওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ ওয়া কারামত, ফখরুল আওলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইসমে আ'যম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

রউফুর রহীম, রহমাতুল উম্মাহ, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সংঙ্গে একই বিষয়ে একই সময়ে পিতা-পুত্রের সাক্ষাৎ ও নিয়ামত লাভ

 

হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহ শাস্ত্রের তৎকালীন বিশারদ হযরত আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি একাদিক্রমে দশদিন সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার দরবার শরীফে অবস্থান করলেন। লব্ধ অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞার সমন্বয়ে গভীর অনুসব্ধিৎসায় তিনি একান্ত কাছে থেকে সবকিছু প্রত্যক্ষ করলেন। সন্ধান পেতে চাইলেন এমন একজন হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার, উনার হাত মুবারকের নীচে আপন হাত রেখে বিনা দ্বিধায় বাইয়াত হওয়া যায় এবঙ আপন নফসের প্রতি বিরাগ হয়ে এতোদিনের অর্জিত অনুষ্ঠান সর্বস্ব ইলমে ফিক্বাহ-উনার প্রজ্ঞাকে আল্লাহ পাক এবঙ নূরে মুজাসসাম, ছাহিবুল ইহসান, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি অর্জনের পথে ব্যয় করা সম্ভব হয়।

হযরত আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি এতোদিন ধরে জানতেন, "কারামত"ই হলো একজন ওলীআল্লাহ-উনার মর্যাদা ও মর্তবা নিরূপণের মানদণ্ড। এতোদিন উনার প্রত্যয় ছিলো, বাহ্যিকভাবে প্রতিভাত "কারামত"ই ওলীত্বের নির্যাস। তাঁ তখনো জানা হয়নি, যে ব্যক্তি তার প্রজ্ঞাকে নিজের লাগাম বানিয়ে না নেয়, সে প্রকৃত সম্মানী হয় না। যে ব্যক্তি তা' করে, মানুষ তাকে ইমাম বানিয়ে নেয় এবঙ তাকে ইযযত করে। তখন পর্যন্ত এটাও তৎার জানা হয়নি যে, আল্লাহ পাক-উনার সন্তুষ্টি হাছিলের অত্যাবশ্যকতায় দুনিয়া  বিরাগী অন্তরে ইবাদত-বন্দেগীতেমনোযোগী হতে যে ইলম উৎসাহ যোগায়না, প্রকৃত প্রস্তাবে তা ইলম নয়্ আল্লাহ পাক-উনার আদেশ এবঙ আকরামূল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, রউফুর রহীম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নির্দেশিত পথে ইস্তিক্বামাত (অবিচল) থাকাই যে প্রকৃত "কারামত" এবঙ এই কারামতই যে আল্লাহ পাক-উনার মাহবুব ওলীগণের ভূষণ, তাও ভালো করে এতোকাল উনার জানা হয়নি।

তাই দশদিন সন্নিধানে থেকেও বোধগম্য কোন কারামত দেখতে না পেয়ে (সূক্ষ্ম কারামত উপলব্ধির অক্ষমতায়) হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে উনার মনঃপুত হলো না। এমতক্ষেত্রে খানকা শরীফ থেকে বিদায় নেয়ার পূর্ব মুহুর্তে তিনি বললেনঃ "আমি আমার গন্তব্যে ফিরে যেতে চাই। আপনার অনুমতি চাইছি হুযূর।" আলোচনায় জানা গেলো, উনার নাম হযরত আবু বকর শিবল রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বিশ্বখ্যাত আলিম। স্বনামধন্য চারশত উস্তাদের কাছে তিনি চল্লিশ হাজার হাদীছ শরীফ আত্মস্থ করেছেন এবঙ ইলমে কালাম ও ইলমে ফিক্বাহ শাস্ত্রে বুৎপত্তি অর্জন করেছেন। দশদিনের নিরবিচ্ছিন্ন অনুসন্ধানে হযরত জুনাইদ বাদদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার কোন কারামত তিনিদেখতে পাননি। প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায়, অর্থাৎ বাইয়াত হওয়ার জন্য তাকেঁ অনুপযুক্ত মনে করে হযরত আবু বকর শিবলি রহমতুল্লাহি আলাইহি আপন নবাসে ফিরে যেতে মনঃস্থির করেছেন।

এসব জেনে ও শুনে সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি জানতে চাইলেনঃ "হে আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনিতো বিশ্ববিখ্যাত আলিম। চল্লিশ হাজার হাদীছ শরীফ আত্মস্থকারী একজন বিদগ্ধ মানুষ আপনি। দশদিন আমার খানকা শরীফে থেকে আপনি আমাকে প্রত্যক্ষ করেছেন। এই দশদিনে ইবাদত-বন্দেগী, খাওয়া-দাওয়া, কথা-বার্তা, উঠা-বসা, আচার-আচরণ, অর্থাৎ সার্বিক বিষয়ে আমার কোন কোন আমল কী আপনি দেখেছেন, যা' সুন্নতের খিলাফ?" হযরত আবু বকর  শিবলী সবনয়ে জবাব দিলেনঃ "হে আল্লাহ পাক-উনার লক্ষ্যস্থল হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি! দশদিনে সুন্নতের পরিপন্থী কোন আমলই আমি দেখিনি। আমি প্রত্যক্ষ করেছি যে, আপনার মুবারক জীবনাচরণের সকল আমলই সুন্নতের সংঙ্গে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম এবঙ পূঙ্খানুপূঙ্খরূপে সংগতিপূর্ণ।

অতঃপর হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেনঃ "হে আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি! মহান আল্লাহ পাক উনার অপার রহমত এবঙ রহমতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয় ইহসানে ইলম, আমল, আখলাক্ব, আক্বীদাসহ আমার সব কাজে অনুক্ষণ আমি সুন্নত অনুসরণ করে থাকি। এমন কোন কাজ ও আমলই আমি করিনা, যা' সুন্নতের খিলাফ। সুন্নত পালনের মুহব্বত পূর্ণ এই অভ্যস্ততাই আমার কারামত। জীবনের সকল কাজে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল উম্মাহ, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ ও অনুকরণের যোগ্যতায় একজন ওলী আল্লাহ-উনার মাধ্যমে অবিরাম যে সূক্ষ্ম কারামত প্রকাশ পায়, তা সূক্ষ্মদর্শী মানুষ ছাড়া অন্যদের কাছে দুর্বোধ্যই থেকে যায়। এ দুর্বোধ্যতা এমন স্তরের, তাছাউফ বিহীন প্রগাঢ় ইলম চর্চায়ও যা' কখনো উপলব্ধিতে আসে না, এমনকি আপনারও না। যে কারণে আপনি আবার হিদায়েত শূন্য তিমিরে ফিরে যেতে উদ্যত হয়েছেন।" (চলবে)

আবা-১৬২

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১০১

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ দা'ওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ ওয়া কারামত, ফখরুল আওলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইসমে আ'যম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

রউফুর রহীম, রহমাতুল উম্মাহ, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে একই বিষয়ে একই সময়ে পিতা-পুত্রের সাক্ষাৎ ও নিয়ামত লাভ

 

 আমরা পূর্বেই বলেছি, কারামত হলো মাহবুব ওলীগণের মাধ্যমে অবস্থাভেদে প্রকাশ পাওয়া আল্লাহ পাক-উনার কুদরত। এমন সব ওলীআল্লাহকে এ কুদরত’-উনার পরিমিত হিস্যা দান করা হয়, যাঁরা সুন্নতের ইত্তিবায় অনুক্ষণ অধিষ্ঠিত এবং ইস্তিক্বামাত থেকে আল্লাহ পাক এবং রফিকু ছাহিবিল কুদরত, রহমাতুল উম্মাহ, মাশুকে মাওলা, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য নৈকট্য সংযোগে কামিয়াবী হাছিল করেছেন। আল্লাহ পাক-উনার মাহবুব ওলীগণের মাধ্যমে অনেক অলৌকিক  বিষয়াদি প্রদর্শিত হলেও সুক্ষ্ম কামালত-সমৃদ্ধ কামিয়াবীর তুলনায় এসব কারামতের মর্যাদা ও মূল্য নগণ্য  (তেমন তাৎপর্যপূর্ণ নয়)। আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে নিগূঢ় নৈকট্য সংযোগে যে তাৎপর্যপূর্ণ প্রাপ্তিযোগ (কামালত) সাধিত হয়, মূলতঃ তারই নাম কারামত। এ কথাতো সর্বজন  বিদিত যে, উপযুক্ত নিয়ামত সংকুলানের জন্য উপযুক্ত পাত্র প্রয়োজন। কুতুবুয্ যামান, মাদারজাদ ওলী, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম এমন কারামত লাভে ধন্য হয়েছেন।  উপরে আলোচিত মুবারক স্বপ্ন দর্শন উনার সে কারামতেরই বিশিষ্টতাপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ। সূক্ষ্মদর্শী ওলীআল্লাহগণের যাপিত জীবন মুবারকে এমন সব কারামতের দৃষ্টান্ত অন্তহীন।

পরিপূর্ণরূপে সুন্নত মুবারক অনুশীলনের মাধ্যমে আল্লাহ পাক এবং মাশুকে মাওলা, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার তরফ থেকে প্রাপ্ত নিগূঢ় কামিয়াবীরই  প্রকৃত নাম কারামত

 

 আমাদের আলোচ্য সুক্ষ্ম কারামতউপলব্ধির জন্য সুন্নতের তাৎপর্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা চাই। একই সঙ্গে ইল্মে তাছাউফ-উনার অপরিহার্যতা উপলব্ধির জন্য উম্মুখ অন্তর, প্রেমময় অনুভব এবং গভীর অনুসন্ধিৎসা থাকা আবশ্যক। ইলমে ফিক্বাহ-উনার ভূমিকা এ ক্ষেত্রে সহায়ক হলেও উনার অবলম্বন অবধারিত নয়। তাছাউফ-উনার সংশ্লেষ বিহীন ইল্ম, অর্জনের শুরু থেকেই অপাংক্তেয় এবং পরিণতিতে মারাত্মক ক্ষতিকর। অনাবিল অন্তরের মনোযোগ, ধ্যান, জ্ঞান এবং সামান্য তাওফিকও অপ্রয়োজনীয় অনেক ইল্ম থেকে উত্তম। ইল্ম কিছু তথ্য সংগ্রহের নাম নয়। তাছাউফ-উনার সঙ্গে ইলমে ফিক্বাহ-উনার অনিবার্য সংশ্লেষ না ঘটলে তাএমন মন্দ ইল্ম হয়ে দাঁড়ায়, যাআল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, মাশুকে মাওলা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তুষ্টি অর্জনে আদৌ সহায়ক হয় না। তাছাউফ চর্চার অভাবে জগদ্বিখ্যাত ফিক্বাহবিদও ওলী আল্লাহগণের সুক্ষ্ম কারামত-সমৃদ্ধ অধিষ্ঠান অনুধাবনে অপারগ হয়ে থাকেন।

আমরা অনেকেই হযরত আবু বকর শিবলী আলাইহিস সালাম-উনার কথা জানি। উনার জীবনেও আমরা এমন ঘটনার অবতারণা লক্ষ্য করি। ঐ সময়ে দুনিয়ায় এমন পারদর্শী আলিম খুব কমই ছিলেন, যিনি ফিক্বাহ ও হাদীছ শাস্ত্রে উনার সমকক্ষতা দাবী করতে পারেন। চারশত বিশেষজ্ঞ আলিমের কাছে তিনি ইল্ম অধ্যায়ন করেছিলেন এবং চল্লিশ হাজার হাদীছ শরীফ আত্মস্থ করেছিলেন। জীবনের এক পর্যায়ে উনার মনে হলো, ইলমে তাছাউফে দীক্ষা লাভের জন্য একজন ওলীআল্লাহ-উনার ছোহ্বতে যাওয়া আবশ্যক। তিনি মনে মনে ভাবলেন, কেবল ফিক্বাহ শাস্ত্রের অগাধ ইল্ম প্রজ্ঞার আবরণে এমন এক ধরনের মূর্খতা, যাআপাত ক্ষতিকর না হলেও পরিণতিতে উপাদেয় নয়। অন্তরের ব্যাকুল ইচ্ছা পূরণে তিনি একজন শায়খ-উনার সন্ধানে ব্যাপৃত হলেন। অবশেষে তিনি ঐ যামানায় আল্লাহ পাক-উনার লক্ষ্যস্থল, মাহবুব ওলীআল্লাহ সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা, হযরত জুনাইদ বাগদাদী আলাইহিস সালাম-উনার সংবাদ পেয়ে আশ্বস্ত হলেন। একদিন সত্যি  তিনি হযরত জুনাইদ বাগদাদী আলাইহিস সালাম-উনার মুবারক খানকা শরীফে গিয়ে উপস্থিত হলেন।  (চলবে)

আবা-১৬১

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১০০

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ দা'ওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ ওয়া কারামত, ফখরুল আওলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইসমে আ'যম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

রউফুর রহীম, রহমাতুল উম্মাহ, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে একই বিষয়ে একই সময়ে

পিতা-পুত্রের সাক্ষাৎ ও নিয়ামত লাভ

ওলীয়ে মাদারজাদ, কুতুবুল আলম, হযরতুল আল্লামা আবু নজম মুহম্মদ নাজমুস্ সায়াদাত ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি হুযূর ক্বিবলানাম মুবারকে সমধিক মশহুর ছিলেন। ১২ রবিউল আউয়াল, ১৪০২ হিজরী, ২২ পৌষ, ১৩৮৮ বঙ্গাব্দ, ০৭ জানুয়ারী, ১৯৮২ ঈসায়ী তারিখে তিনি ইন্তিকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ইন্তিকাল অবধি প্রধান খলীফা হযরতুল আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক ছোহ্বতে নিয়োজিত থেকে জাহির ও বাতিনের সামগ্রিক ইল্ম হাছিলে কামিয়াবীর শীর্ষ ধাপে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।

অবশ্য হযরতুল আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি আমীরুশ্ শরীয়ত, মাহ্তাবে তরীক্বত, হাজীউল হারামাইন, হাদীউস্ সাক্বালাইন, মাহিউল বিদ্য়াত, মুহ্ইস্ সুন্নাতিন্ নুবুবিয়াহ, নাশিরুল মিল্লাতিল মুস্তাফিয়া, ছদরে জমিয়তে উলামায়ে হানাফিয়া, শাইখুল ইসলাম, ইমামুল হুদা, ক্বাইয়ূমুয্ যামান, কুতুবুল আলম, নায়িবে মুজাদ্দিদ, খলীফাতুল্লাহ, সাজ্জাদানশীল পীর, পীরে দস্তগীর, পীরে কামিলে মুকাম্মিল, বড় হুযূর ক্বিবলা, আলহাজ্ব, হযরত মাওলানা আব্দুল হাই ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার নিকট থেকেও খিলাফত এবং অপরিমেয় নিয়ামত লাভ করেছিলেন। ২৪ জুমাদাল উলা, ১৩৯৭ হিজরী, ৩০ বৈশাখ, ১৩৮৪ বঙ্গাব্দ, ১৩ মে, ১৯৭৭ ঈসায়ী সালের শুক্রবার ৭৩ বছর বয়স মুবারকে তিনি ইন্তিকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)

হিদায়েতপূর্ণ সমাজ নির্মাণের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রমে কুতুবুল আলম, ফখরুল ফুক্বাহা, ইমামুল আওলিয়া, জামিউল্ উলূম ওয়াল হিকাম, আশিকে রসূল, হুজ্জাতুল ইসলাম, মাখ্যানুল মারিফাত, মুঈনুল মিল্লাত, সুলত্বানুল আরিফীন, হযরতুল আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার শরীর মুবারক ক্রমেই ভেঙ্গে পড়ছিলো। অবশেষে ১২ যিলক্বদ ১৪১৫ হিজরী, ৩০ চৈত্র ১৪০১ বাংলা, ১৩ এপ্রিল ১৯৯৫ ঈসায়ী বৃহস্পতিবার সকাল ১০:৪৫ মিনিটে তিনি আল্লাহ পাক-উনার দীদারে চলে যান। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।)

কারামত অধ্যায়ে উপরের নতিদীর্ঘ আলোচনায় অনেকের মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, এতো কেবল স্বপ্ন বৃত্তান্ত। উনার সঙ্গে ওলীয়ে মাদারজাদ, ফখরুল আওলিয়া, লিসানুল হক্ব, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান  আলাইহিস সালাম-উনার কারামতের সম্পৃক্ততা কোথায়? বর্ণনার শুরুতেই আমরা জেনেছি, “কারামত”-উনার অর্থ কামালত-সমৃদ্ধ বুযূর্গী (সম্মান)। উনার আরো অনেক অর্থ আছে। যেমনঃ মান, শান, ইজ্জত, ঐতিহ্য, প্রভাব, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা ইত্যাদি। ওলীআল্লাহগণের কামিয়াবীর অধিষ্ঠান (মাক্বাম)-উনার সঙ্গে তাঁদের কারামত অবধারিতভাবে সংশ্লিষ্ট।

আল্লাহপাক এবং তারঁ প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে যে ওলীআল্লাহ-উনার সংশ্লেষ ও নৈকট্য  যতো নিগূঢ় উনার কারামত ততো বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, অতল গভীর ও সূক্ষ্মতর। সাধারণতঃ অলৌকিক কোন বিষয় প্রদর্শন করতে পারার নাম যেমন কারামত, তেমনি মর্যাদা ও সম্মানরূপ অতিসূক্ষ্ম অলৌকিক নিয়ামতের নামও কারামত। উভয় কারামতই মর্যাদা ও নিয়ামত অভিধায় অভিষিক্ত হলেও দুয়ের মাঝে দুস্তর ব্যবধান। যে মর্যাদা ও নিয়ামত পেলে আল্লাহ পাক এবং মাশুকে মাওলা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কখনো বিচ্ছেদ ও ব্যবধান সূচিত হয়না এবং ক্রমান্বয়ে ইস্তিকামতের বুনিয়াদ দৃঢ় হয়, মূলতঃ তারই নাম কারামত। এ কারামত এতো সুক্ষ্ম যে, সমষ্টির কাছে তাপ্রায় দুর্বোধ্যই থেকে যায়।

মহান আল্লাহ পাক এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল  মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার অপরিমেয়  সদয় ইহ্সানে  আফযালুল ইবাদ, ফখরুল আওলিয়া, ছাহিবে কাশফ ওয়া কারামত, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান  আলাইহিস সালাম বর্ণিত সুক্ষ্ম কারামত-সমৃদ্ধ (অতুলনীয় বুযূর্গী-সমৃদ্ধ) হয়ে কামিয়াবীর শীর্ষ ধাপে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। যুগপৎ বুযূর্গ পিতা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং মুজাদ্দিদে আযম পুত্র মুদ্দা জিল্লুহুল আলীকে রউফুর রহীম, আকরামুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, খাজিনাতুর রহমত, ছাহিবুল ইহ্সান, হাবীবুল্লাহ, হুযূর, পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মুবারক সাক্ষাৎদান এবং তাকুতুবুল আলম, সুলত্বানুল আরিফীন, হযরতুল আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মাধ্যমে সত্যায়ন নিঃসন্দেহে ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান  আলাইহিস সালাম-উনার অতুলনীয় মর্দাদাসম্পন্ন কারামতের পরিচয় জ্ঞাপক। (চলবে)

আবা-১৬০

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৯৯

 

ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 

রউফুর রহীম, রহমাতুল উম্মাহ, হাবীবুল্লাহ,

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-

উনার সঙ্গে একই বিষয়ে একই সময়ে

পিতা-পুত্রের সাক্ষাৎ ও নিয়ামত লাভ-

মহান আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার লক্ষ্যস্থল ওলীয়ে মাদারজাদ, মুজাদ্দিদে আযম, আওলাদে রসূল, মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-উনার মুবারক ওসীলায় উনার ওলীয়ে মাদারজাদ পিতা এবং উনার সুল্ত্বানুল আরিফীন মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার অন্তর মুবারক আজ অভিন্ন নিয়ামতে ভরপুর। যে পরম নিয়ামত হাছিলের লক্ষ্যে অনুক্ষণের আগ্রহ ও অপেক্ষা, সে নিয়ামত আজ রফিকু ছাহিবিল কুদরত, নবীয়ে আক্বদাস, ছাহিবু লাওলাক, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ইহ্সানে ওলীয়ে মাদারজাদ, মুজাদ্দিদে আযম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-উনার মাধ্যমে বন্টিত হলো।

তাইতো উনার প্রাণের আঁকা মুর্শিদ ক্বিবলা হযরতুল আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক জীবদ্দশায় অনেকবার উচ্চারণ করেছেনঃ আমার কলিজার টুকরা, নয়নের মণি, আল্লাহ পাক এবং হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার লক্ষ্যস্থল, রাজারবাগ শরীফের শাহ্ ছাহিব আমাকে ছাড়িয়ে অনেক উপরের মাক্বামে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। আমার ইন্তিকালের পর মহান আল্লাহ পাক যদি জানতে চান, আপনাকে তো নিয়ামত সমৃদ্ধ করেছিলাম অপরিমেয় বুযূর্গী, কামিয়াবী এবং আমার সন্তুষ্টি দান করেছিলাম, বিনিময়ে আমার জন্য কী নিয়ে এসেছেন? জবাবে আমি যা জানাবো  তা হলোঃ আয় আল্লাহ পাক! আপনার এবং আপনার প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার লক্ষ্যস্থল, আমার প্রধান খলীফা, মুজাদ্দিদে আযম, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম সাইয়্যিদ মুহম্মদ দিল্লুর রহমান মুদ্দা জিল্লুহুল আলীকে নিয়ে এসেছি। আল্লাহ পাক আপনি খুশী হননি? (সুবহানাল্লাহ)

কে বলে নিজ অবস্থান ও অধিষ্ঠান জানা যায় না? আর কে বলে আপন কামিয়াবীর সোপান এবং তা উত্তরণের অগ্রগামিতা কেবলই অজ্ঞাত থাকে? ছাহিবুল ওহী ওয়াল কুরআন, মুত্তালা আলাল গইব, মাশুকে মাওলা, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন উনার প্রিয়তম কাউকে এসবের সংবাদ দান করেন, তখন আর কোন কিছুই অজানা ও অজ্ঞাত থাকেনা। এমন মুবারক সংবাদই তিনি জানিয়েছেন ওলীয়ে মাদারজাদ, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মুজাদ্দিদে আযম পুত্র আলাইহিস সালাম উনাকে। অনুভবের অতল গভীরে ঠাঁই পাওয়া এই ইত্মিনান (প্রশান্তি) যেমন বুযূর্গ পিতা-পুত্রের জন্য স্থায়ী নিয়ামত হিসেবে ধার্য, তেমনি যাত্রাবাড়ীর মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার জন্যও। অনেক আলাপন এবং অনেক নীরবতা পালন শেষে দুপুরের খাবার সময় হলো। এক সঙ্গে খেয়ে হযরতুল আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি সেদিন যাত্রাবাড়ী ফিরে গেলেন।

হযরতুল আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার মুফাস্সিরে কুরআন ছিলেন। তিনি ছিলেন বাহরুল উলূম, শাইখুল আসাতিযা। কামিয়াবীর শীর্ষ সোপানে এবং নিগূঢ় নৈকট্য ধাপে তিনি ছিলেন আল্লাহ পাক এবং আকরামুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার লক্ষ্যস্থল। আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার উদ্দিষ্ট ব্যবস্থায় দুনিয়ায় ইসলাম ধর্মের আবাদে, সুন্নত পালনে মানুষকে অভ্যস্ত করে তোলায় এবং মানুষের মন ও মননে ইল্মে তাছাউফের আলো প্রজ্বলনে উনার অবদান অসামান্য।

মুবারক জীবনের মূল্যবান সময়গুলো তিনি অবিরাম ব্যয় করেছেন মানুষের হিদায়েতে এবং ইসলাম ধর্মের অনুশাসনে পল্কিলতামুক্ত সমাজ বিনির্মাণে। উনার মুবারক ছোহ্বত ও ফয়েজের অথৈ দরিয়া সাধ্যমতো অবগাহনে অনেক মানুষ ওলীত্বে বরণীয় হয়েছেন। এই কালজয়ী মহান ওলী আল্লাহ ইল্মে জাহির ও ইলমে বাতিনের (ইল্মে তাছাউফ)-উনার উজ্জ্বল নক্ষত্র, ওলীয়ে মাদারজাদ, কুতুবুল আলম, সুলত্বানুল আরিফীন, শাইখুত্ তরীক্বত, গাউছে যামান, হযরতুল আল্লামা, শাহ, ছূফী আবু নজম মুহম্মদ নাজমুস্ সায়াদাত ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার নিকট বাইয়াত এবং উনার প্রধান খলীফা ছিলেন।

(অসমাপ্ত)

আবা-১৫৯

একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৯৮

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

রউফুর রহীম, রহমাতুল উম্মাহ, হাবীবুল্লাহ,

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে একই বিষয়ে একই সময়ে  পিতা-পুত্রের সাক্ষাৎ ও নিয়ামত লাভ

স্বপ্ন সম্পর্কে পিতা-পুত্রের কুশল বিনিময়ের পর সকাল গড়িয়ে বেলা বেড়ে চলেছে। এমন সময় পাওয়া গেলো অন্তর প্রশান্ত করা অভিন্ন ধারার আরো এক মুবারক সংবাদ। ঢাকাস্থ যাত্রাবাড়ীর মসজিদে নূর এবং খানকা-ই-মুহম্মদিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কুতুবুল আলম, আমীরুশ্ শরীয়ত ওয়া রাহনুমায়ে তরীক্বত, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, মাহিউল বিদ্য়াত, মুজাদ্দিদুয্ যামান, হুজ্জাতুল ইসলাম, মাখ্যানুল মারিফাত, খাযীনার্তু রহমাত, মঈনুল মিল্লাত, লিসানুল উম্মাত, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, ফখ্রুল ফুক্বাহা, ক্বারিউল র্কুরায়ি, আল্লামাতুল আইয়াম, নাজমুল আওলিয়া, ছাহিবুল ইল্হাম, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, মুফতিউল আযম, শাইখুল আসাতিযা, জামিউল উলূম ওয়াল হিকাম, সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা, আশিকু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, শাহ্ ছূফী, আলহাজ্জ, হযরতুল আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপুরী আলাইহিস সালাম বেলা প্রায় এগারটা নাগাদ উল্লিখিত মুবারক সংবাদ নিয়ে স্বশরীরে উপস্থিত হয়েছেন ঢাকা রাজারবাগ শরীফস্থ পাঁচ নম্বর আউটার সার্কুলার রোডে অবস্থিত ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম-উনার বাড়ীতে।

উনারা দুজন অত্যন্ত নিকটতম বন্ধু। একই মুবারক সিল্সিলার ফয়েজের অবিরল ধারায় অভিষিক্ত এবং কামিয়াবীর শীর্ষে অধিষ্ঠান হেতু উভয়ে পরম আত্মীয়। মাদারজাদ ওলী, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম-উনার মুজাদ্দিদে আযম পুত্র যাত্রাবাড়ীর মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার হাত মুবারকে বাইয়াত এবং মুর্শিদ ক্বিবলা-উনার কাছ থেকে যাবতীয় নিয়ামত লাভে ধন্য খাছ খলীফা। আমীরুশ্ শরীয়ত ওয়া রাহনুমায়ে তরীক্বত, নাজমুল আওলিয়া, হযরতুল আল্লামা, আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপুরী আলাইহিস সালাম উনার খাছ খলীফা, মুজাদ্দিদে আযম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-উনার উপস্থিতিতে ফখ্রুল আওলিয়া, আফ্যালুল ইবাদ, লিসানুল হক্ব, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালামকে সম্বোধন করে বলতে লাগলেনঃ আপনার মুজাদ্দিদে আযম পুত্রের জন্য এখন থেকে বাড়ীতে পরিমিত জায়গা করে দিন। আপনার মুবারক পুত্র, যিনি আমার খাছ খলীফা এবং যিনি আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার লক্ষ্যস্থল, উনার কাছে বাইয়াত হবার জন্য এখন অগণিত মানুষ আসবে। একথা জানাবার জন্যেই আমি আপনার কাছে এসেছি। বিষয়টি ওলীয়ে মাদারজাদ, মুস্তাজাবুদ্ দাওয়াত, আওলাদে রসূল, আলহাজ্জ, হযরতুল আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম-উনার অজানা নয়। খান্কা শরীফের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা দিতে তিনি আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে রয়েছেন। উনার এই প্রস্তুতির সাথে যাত্রাবাড়ীর মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার প্রস্তাবের অভিন্ন যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে মাত্র। তবে গত রাতের মুবারক স্বপ্ন মাহাত্ম্য এবং প্রেক্ষিত কারণে অন্তরে ঠাঁই পাওয়া অনাবিল ভাবনা এবং বদ্ধমূল বিশ্বাসের ভিত্ মিলিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে তিনি মৃদু স্বরে কেবল বললেনঃ এমন হবে, তা আমারও জানা। একথা জানাতে কষ্ট করে আপনি নিজেই এলেন! অন্যকে দিয়েও তো সংবাদ পাঠানো যেতো।একথার জবাবে মুফতিউল আযম, শাইখুল আসাতিযা, জামিউল উলূম ওয়াল হিকাম, আল্লামাতুল আইয়াম, আশিকে রসূল, হযরতুল আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপুরী আলাইহিস সালাম অন্তর মুবারকের সবটুকু মমতা ও মুহব্বত ঢেলে স্মিতহাস্যে সবনিয়ে জানালেনঃ দেখুন! আপনার মুজাদ্দিদে আযম পুত্র, যিনি আওলাদে রসূল এবং মাদারজাদ ওলী, আমি তার মুর্শিদ ক্বিবলা। বিষয়টি জানাতে আমি আপন ইচ্ছায় আপনার কাছে আসিনি। আদিষ্ট হয়ে এসেছি। আদেশদাতা কে তা আগে থেকেই জানা সত্ত্বেও আরেকবার জানার ব্যাকুল আগ্রহে সবিনয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ আদেশদাতা কে, দয়া করে তা বলুন।

জবাবে তিনি বললেনঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, রউফুর রহীম, মাশুকে মাওলা, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে এবং আপনার মুজাদ্দিদে আযম পুত্র মুদ্দা জিল্লুহুল আলীকে এ মুবারক সংবাদ জানাতে গত রাতে আমাকে সদয় নির্দেশ করেছেন যেঃ হে আমার আশিক! আপনার খাছ খলীফা ও আপনার আশিক এবং আমার আশিক, আওলাদ ও লক্ষ্যস্থল, তিনি উনার সময়কালের ইমাম ও মুজাদ্দিদে আযম। আপনি জানিয়ে দিন, উনাকে আমি কবুল করে নিয়েছি। আপনার এবং আপনার মুবারক পুত্রের জনম ও জীবন স্বার্থক। একই সঙ্গে আমার জীবনও স্বার্থক। আদিষ্ট হয়ে এমন মুবারক সংবাদ জানাতে নিজে না এসে আমি কী অন্যকে পাঠাতে পারি? (অসমাপ্ত)

আবা-১৫৮