কাদিয়ানী রদ! (১)
(পঞ্চম ভাগ)
(মুবাহিছে আযম,
বাহরুল উলূম, ফখরুল ফুক্বাহা, রইছুল
মুহাদ্দিসীন, তাজুল মুফাসসিরীন,
হাফিজে হাদীস, মুফতীয়ে আজম, পীরে কামিল, মুর্শিদে
মোকাম্মিল হযরত মাওলানা আল্লামা শাহ্ সূফী মুহম্মদ রুহুল আমিন রহমতুল্লাহি আলাইহি
কর্তৃক প্রণীত “কাদিয়ানী রদ”
কিতাবখানা (৬ষ্ঠ খন্ডে সমাপ্ত) আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত
পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছি। যাতে কাদিয়ানীদের সম্পর্কে সঠিক ধারণাসহ সমস্ত
বাতিল ফিরকা থেকে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীদের ঈমান আক্বীদার হিফাযত
হয়। আল্লাহ্ পাক আমাদের প্রচেষ্টার কামিয়াবী দান করুন (আমিন)। এক্ষেত্রে তাঁর
কিতাব থেকে হুবহু উদ্ধৃত করা হলো, তবে তখনকার ভাষার সাথে বর্তমানে প্রচলিত ভাষার কিছুটা
পার্থক্য লক্ষ্যণীয়)।
(ধারাবাহিক)
তৎপরে মির্জ্জা ছাহেব নবি হওয়ার ধারণায় জিল্লি, বরুজি, মাজহার ও
মাছিল হইতে নবি হওয়ার কত আশ্চর্য্যজনক কৌশল আবিষ্কার করিলেন, অবশেষে
ইংরাজি ১৯০৮ সালের ৫ ই মার্চ্চের ‘বদর’ পত্রিকায়
স্পষ্টভাবে লিখিয়াছেন,
ইহা ‘হকিকাতোন্নবুয়তের’ ২৭২ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে।
উর্দু কম্পোজ করতে হবে
‘‘আমাদের মজহাব ইে যে,
যে দীনে নবুয়ত প্রচলিত না থাকে, উহা মৃত।
য়িহুদী, খ্রীষ্টান ও হিন্দুদিগের ধর্ম্মকে আমরা এই জন্য মৃত বলিয়া থাকি যে, তাহাদের
মধ্যে কোন নবী হয় না। যদি ইছলামের উপরোক্ত প্রকার অবস্থা হইত, তাহা
হইলে আমিও কাহিনী-প্রচারক হইতাম, কি জন্য আমরা উহাকে অন্যান্য ধর্ম্ম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতম
বলিয়া থাকি? কয়েক বৎসর হইতে আমার উপর অহি নাজিল হইতেছে এবং আল্লাহ্তায়ালার কতিপয় নিদর্শন
ইহার সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে, এইহেতু আমি নবী। সত্য কথা প্রচার
করিতে কোন প্রকার গোপন রাখা উচিত নহে।’’
মির্জ্জা ছাহেবের এতদুভয়ের মধ্যে কোন কথা সত্য?
(৪) হজরত ইছা আলাইহিস্ সালাম-এর
গোর সম্বন্ধে মতভেদ। ‘এজালায় আওহাম’,
২৭৩ পৃষ্ঠাঃ-
উর্দু কম্পোজ করতে হবে
‘‘ইহা সত্য কথা যে,
মছিহ নিজের মাতৃভূমি ‘গলিলে’ উপস্থিত
হইযা ফওত হইয়া গেলেন,
কিন্তু ইহা সত্য নহে যে, যে শরীর দফন করা হইয়াছিল, তাহা
পুনরায় জীবিত হইয়া গিয়াছিল।’ (অসমাপ্ত)
ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক
পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক
কাদিয়ানীদের “কাফির” ঘোষণা!
(২)
অনুবাদক- আলহাজ্ব মুহম্মদ
হাবিবুল হক
(ধারাবাহিক)
আযানের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে মত পার্থক্য আছে, তবে হযরত আবু ওমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বলেন,
“আযান দারুল ইসলাম এবং দারুল হারব-এর বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য
বুঝানোর চিহ্ন।”
(আই বি আই ডি)
এটা বৈশিষ্ট্য,
চিহ্ন বা পার্থক্যকারী একটি নিদর্শন। সুতরাং এটাকে শেয়ার বা
মুসলমানদের পার্থক্যকারী একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে মনে করা হয়।” (বাহরুর
রায়েক, ইবনে নুযাইম,
ভলিউম/১, পৃষ্ঠা ২৪০)
এটা প্রতিষ্ঠিত যে এই বিষয়ে ইজমা হয়েছে যে, এটা ইসলামের শেয়ার (পার্থক্যকারী
বৈশিষ্ট)।” (ফতওয়ায়ে কাজীখান,
ফতওয়ায়ে আলমগীরী, হুজ্জাতুল্লাহি বালিগাহ- শাহ্
ওয়ালী উল্লাহ্, ভলিউম ১, পৃষ্ঠা ৪৭৪)
নিম্নে উল্লিখিত যুক্তিসমূহ এটা “শেয়ার” হওয়ার
ব্যাপারে যথেষ্ট-
(১) হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সময়ে লোকদেরকে উপাসনা স্থলে আহবানের জন্য সুবিদিত পদ্ধতিসমূহ ছিল-
(ক) ভেপু বাজানো,
(খ) ঘন্টা বাজানো, (গ) আগুন জ্বালানো। কিন্তু হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ সকল পদ্ধতির কোনটিই অনুমোদন করেননি। তিনি
আযান দ্বারা আহবানের পদ্ধতিই অনুমোদন করেন।
(২) ইসলামের বিধান অনুযায়ী যিনি
আযান দিয়ে আহবান করবেন তিনি অবশ্যই একজন মুসলমান ব্যক্তি হবেন, অন্য
কিছু প্রমাণ না হলে।
হযরত ইবনে হিশাম মাদানী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু-এর পিতা থেকে রেওয়ায়েত, “হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম যখন আমাদের কোন অভিযানকারী দলের সাথে পাঠাতেন তখন নির্দেশ দিতেন, যখন
তোমরা কোন মসজিদ দেখবে,
আযান দাতার কক্তস্বর শুনবে তখন কাউকে হত্যা করবে না।” (সুনানে
আবী দাউদ/৩৬১)
এই হাদীস শরীফখানা সহীহ্ বোখারী শরীফেও হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু-এর বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে।
(৩) হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু থেকে আর একটি হাদীস শরীফ বর্ণিত আছে, “হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ফযরের ওয়াক্তে শত্রুদের আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকতেন যদি ঐ এলাকা থেকে
আযানের আহবান শুনতে পেতেন।”
(সুনানে আবী দাউদ, ভলিউম ১, পৃষ্ঠা
৩৫৪, মিশকাত শরীফ,
ভলিউম ১, পৃষ্ঠা ১৬০ উর্দূ অনুবাদ)।
প্রথম হাদীস শরীফে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ এবং
তাঁর নিজ আচরণে, আযানের আহবানে আক্রমণ থেকে বিরত থাকার কারণ হলো, আযানের আহবানে অনুমান করা
এলাকাবাসী মুসলমান এবং তারা আক্রমণ থেকে নিরাপদ।
আইনবিদরা এই কারণে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, যিনি আযান দিবেন তিনি মুসলমান।
যদি জনগণ কোন জিম্মি সম্বন্ধ (সংরক্ষিত বিধর্মী) সাক্ষী দেন, তিনি
আযান দিয়েছেন, তবে সে মুসলমান হিসেবে গ্রহণীয়। (বাহরুর রায়েক ভলিউম-১, ইবনে
নূয়াইম, পৃষ্ঠা ২৭৯, রদ্দুল মুহতার-ইবনে আবেদীন ভলিউল-১, পৃষ্ঠা ৩৫৩)
এই মতামতের প্রেক্ষিতে মিঃ মুজিবুর রহমান যুক্তি দেখান যে যিনি আযান দিবে তাকে
মুসলমান হিসাবে গণ্য করতে হবে। কিন্তু এই যুক্তি গ্রহণ যোগ্য নয়। যেহেতু উপরোক্ত
প্রচলন অনুযায়ী যিনি আযান দেন তাকে মুসলমান ধারণা করা যাবে, কিন্তু
যিনি আযান দিবেন তিনি যে মুসলমান এটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। যদি শেষ পর্যন্ত দেখা
যায় যে আযানদাতা আসলে একজন অমুসলিম বা তার বিশ্বাস প্রমাণ করে যে সে একজন মুসলমান
নয়, তাকে আযান দেয়ার সুযোগ দেয়া যাবে না এবং এর জন্য তাকে মুসলমান দাবী করার
অধিকার ও দেয়া যাবে না।
“রদ্দুল মুহতার”
ভলিউম-১, পৃষ্ঠা ২৯৭ যে পরিস্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, মুয়াজ্জিন
দ্বারা কোন মসজিদে আযান দেয়া হলে এটাই ধারণা হয় যে তিনি একজন মুসলমান, যেহেতু
তাকেই আযান দেয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে অর্থাৎ যদি তিনি অমুসলিম হতেন তবে, ঐ মসজিদে
যারা নামায আদায় করেন তাঁরা তাকে আযান দিতে মনোনীত করতেন না। এটাও পরিস্কারভাবে
বর্ণনা করা হয়েছে কাফিরের আযান জায়েয নাই। এটা থেকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া যায় যে, একজন
কাফির শুধু আযান দিলেই মুসলমান হয়ে যাবে না। ইসলামের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
এই যে, যদি সে ইহা অভ্যাস বশতঃ করে এবং বিশ্বাসও করে যে, আল্লাহ্
পাক এক এবং পবিত্র রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসাবে মান্য করে।
এখন আমরা মিঃ মুজিবুর রহমানের যুক্তি পর্যালোচনা করতে পারি। তিনি হুজুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপরোক্ত হাদীস শরীফ এবং ৪নং সূরার ৯৫ নং আয়াত
শরীফের বরাত দিয়েছেন। (অসমাপ্ত)
*****************************************************
কাদিয়ানী রদ! (১)
(পঞ্চম ভাগ)
(মুবাহিছে আযম,
বাহরুল উলূম, ফখরুল ফুক্বাহা, রইছুল
মুহাদ্দিসীন, তাজুল মুফাসসিরীন,
হাফিজে হাদীস, মুফতীয়ে আজম, পীরে
কামিল, মুর্শিদে মোকাম্মিল হযরতুল আল্লামা মাওলানা শাহ্ সূফী মুহম্মদ রুহুল আমিন
রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রণীত “কাদিয়ানী রদ” কিতাবখানা
(৬ষ্ঠ খন্ডে সমাপ্ত) আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ
করছি। যাতে কাদিয়ানীদের সম্পর্কে সঠিক ধারণাসহ সমস্ত বাতিল ফিরকা থেকে আহ্লে
সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীদের ঈমান আক্বীদার হিফাযত হয়। আল্লাহ্ পাক আমাদের
প্রচেষ্টার কামিয়াবী দান করুন (আমিন)। এক্ষেত্রে তাঁর কিতাব থেকে হুবহু উদ্ধৃত করা
হলো, তবে তখনকার ভাষার সাথে বর্তমানে প্রচলিত ভাষার কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্যণীয়)।
(ধারাবাহিক)
সৎবচনের হাশিয়া’
১৬৪ পৃষ্ঠাঃ-
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
‘‘হাঁ, শাত দেশে
হজরত ইছা (আঃ) -এর কবরের পূজা হইতেছে এবং নির্দিষ্ট তারিখ সমূহে সন সন সহস্র সহস্র
খৃষ্টান সেই কবরের নিকট সমবেত হইয়া থাকেন।’’
‘রাজে হকিকত’ ৯ পৃষ্ঠা
ঃ-
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
‘‘হজরত মছিহ আলাইহিস্ সালাম ক্রুশের
ঘটনা হইতে উদ্ধার পাইয়া নিশ্চয় হিন্দুস্তানে যাত্রা করিয়াছিলেন, নেপাল
হইয়া শেষে তিব্বত পর্য্যন্ত পৌঁছিয়াছিলেন, তৎপরে কাশ্মীরে কিছুদিন অবস্থিতি
করিয়াছিলেন, অবশেষে ১২০ বৎসর বয়সে শ্রীনগরে এন্তেকাল করিয়াছিলেন এবং ‘খানইয়ার’ নামক
পল্লীতে মদফূন হইয়াছিলেন।’’
‘এতমামোল-হুজ্জাৎ’ ২০
পৃষ্ঠা ঃ-
وقبره فى بلدة القدس والى الان موجود وهنالك كنيسة وهى اكبر الكنائس من كنائس النصارى وداخلها قبر عيسى عليه السلام.
‘‘তাঁহার (হজরত ইছার) কবর
বয়তোল-মোকাদ্দছে হইয়াছিল,
এখনও তথায় উহা বর্ত্তমান আছে, তথায় একটী গির্জ্জা ঘর আছে, উহা
খ্রীষ্টানদিগের শ্রেষ্ঠতম গির্জ্জা ঘর, উহার মধ্যে ইছা আলাইহিস্ সালাম-এর
কবর আছে।’’
মির্জ্জা ছাহেবের চারিটী ভিন্ন ভিন্ন মতের মধ্যে কোনটী সত্য? হজরত ইছা
আলাইহিস্ সালাম-এর কবর কি চারিস্থানে হইয়াছে? এইরূপ ভিন্ন ভিন্ন মত কি এলহামি
কথা হইতে পারে? ইহা মস্তিষ্কের বিকার নহে কি?
(৫) শিখ সম্প্রদায়ের গুরু নানক
ছাহেবের লম্বা পিরহান সম্বন্ধে মতান্তর ঃ-
শিখ সম্প্রদায়ের প্রথম গুরু নানক ছিলেন, শিখদিগের তাঁহার স্মৃতিচিহ্ন
স্বরূপ একটী লম্বা পিরহান আছে, উহাতে কলেমায়-তাইয়েবা, কলেমায়-শাহাদত, বিছমিল্লাহে, ছুরা
ফাতেহা, ছুরা এখলাছ, আয়তল-কুরছি ইত্যাদি কোর-আনের কতকগুলি আয়ত অঙ্কিত আছে। (অসমাপ্ত)
ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক
পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক
কাদিয়ানীদের “কাফির” ঘোষণা!
(২)
অনুবাদক- আলহাজ্ব মুহম্মদ
হাবিবুল হক
(ধারাবাহিক)
৪নং সূরার ৯৪ নং আয়াত
يايها الذين امنوا اذا ضربتم فى سبيل الله فتبينوا.
অর্থঃ- “হে
ঈমানদারগণ, তোমরা যখন আল্লাহ্ পাক-এর পথে সফর কর, তখন যাচাই করে নিও এবং যে
তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বলো না যে তুমি মুসলমান নও। তোমরা পার্থিব জীবনের
অন্বেষণ কর, বস্তুতঃ আল্লাহ্ পাক-এর কাছে অনেক সম্পদ রয়েছে। তোমরাও তো এমনি ছিলে পূর্বে’ অতঃপর
আল্লাহ্ পাক তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। অতএব, এখন অনুসন্ধান করে নিও। নিশ্চয়ই
আল্লাহ্ পাক তোমাদের কাজ-কর্মের খবর রাখেন।”
মিঃ মুজিবুর রহমানের সুওয়ালের জাওয়াব এই আয়াত শরীফেই আছে, فتبينوا (সত্যাসত্য
যাচাই বা অনুসন্ধান) শব্দটি মুসলমানের মত প্রকাশ বা বলা যে এক আল্লাহ্ পাক ব্যতীত
আর আল্লাহ্ নাই বা আযান দেয়া বা মসজিদের মত স্থানে ইবাদত করাকে মুসলমানই অনুমান
করা কিন্তু এটা খন্ডনীয়,
তার অর্থ যদি খন্ডনীয় প্রমাণ থাকে তবে তাকে মু’মিন বা
মুসলমান বলা যাবে না।
প্রফেসর তাহির আল কাদরী আস্থার সাথে উল্লেখ করেন, আল্লাহ্
পাক-এর কিতাবে নিরপেক্ষতা ও পক্ষপাত এর উপর পার্থক্য বর্ণনা করেছেন, তিনি
সূরা ২৫, ৪১, ৫, ৩৫, ৫৯, ৩৪, ৫৭, ৩২ এর ১, ৩৪, ১০০, ২২, ২০, ৪, ১০ এবং ১৮ নং আয়াত শরীফের উল্লেখ করেন। মুসলিম এবং মু’মিনদের
সংজ্ঞা তাঁদের গুণসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে।
যেমন এটা অবাস্তব যে দুবৃত্তকে ন্যায়পরায়ণ বলা বা খারাপকে ভাল বলা, তেমনি
কাফিরকে মুসলমান এবং মু’মিন বলা যাবে না। একটি সুবিদিত হাদীস হল, “যদি কোন মুসলমানকে কাফির বলা হয়, এবং তিনি
যদি কাফির না হন,
তবে কাফির ফতওয়া মিথ্যারোপকারীর উপরই বর্তাবে।” একজন
অবিশ্বাসীকে কেন বিশ্বাসী বা মুসলমান বলা হবে? কোন কারণ নাই। যুক্তিটি সমালোচনার
উর্ধ্বে।
মিঃ মুজিবুর রহমান স্বীকার করে যে, আযান মুসলমানদের শেয়ার (চিহ্ন), কিন্তু
যুক্তি দেখায় যে এটা কাদিয়ানীদেরও শেয়ার (চিহ্ন)। যেহেতু একই শেয়ার (চিহ্ন) উভয়ের
মাঝে বিদ্যমান, বিষয়টি সূরা-৫ এবং ৩ যথাক্রমে ২নং এবং ৬৩ নং আয়াত শরীফ দ্বারা মীমাংসা যোগ্য।
তা নিম্নরূপ-
সূরা ৫, আয়াত
শরীফ ২,
يايها الذين امنوا لاتحلوا شعائر الله ولا الشهر الحرام ولا الهدى .................
অর্থঃ- “হে মু’মিনগণ!
হালাল মনে করোনা আল্লাহ্ পাক-এর নিদর্শন সমূহ এবং সম্মানিত মাস সমূহকে এবং হেরেমে
কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট জন্তুকে এবং ঐসব জন্তুকে, যাদের গলায় কক্তাভরণ রয়েছে এবং
ঐসব লোককে যারা সম্মানিত গৃহাভিমূখে যাচ্ছে, যারা স্বীয় পালনকর্তার অনুগ্রহ ও
সন্তুষ্টি কামনা করে। যখন তোমরা এহরাম থেকে বের হয়ে আস, তখন
শিকার কর। যারা পবিত্র মসজিদ থেকে তোমাদেরকে বাধা প্রদান করে ছিল, সেই
সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে সীমালঙ্ঘনে প্ররোচিত না করে। সৎকাজ ও খোদা
ভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। গুণাহ্ ও সীমা লঙ্খনের কাজে একে অন্যের সহযোগীতা
করো না। আল্লাহ্ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক কঠোর শাস্তিদাতা।”
সূরা-৩, আয়াত
শরীফ-৬৪,
قل ياهل الكتاب تعالوا الى كلمة سواء ........
অর্থঃ- “বলুন, হে আহ্লে
কিতাবগণ! একটি বিষয়ের দিকে আস, যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান যে আমরা আল্লাহ্ পাক
ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবো না, তাঁর সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করবো না এবং একমাত্র আল্লাহ্
পাককে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা বানাবোনা। তারপর যদি তারা স্বীকার না করে; তাহলে
বলে দিন যে, সাক্ষী থাক আমরা তো অনুগত।” ইহা বলা
যেতে পারে যে,
تعالوا الى كلمة سواء بيننا وبينكم.
শব্দগুলির অনুবাদে পিকথল
বলেছেন, “আপনি আমাদের সাথে একটি সমঝোতায় আসুন।” (সূরা/ ৩, আয়াত-
৬৪)
কিন্তু এই অনুবাদটি ঠিক নয়, যেহেতু এই আয়াত শরীফে কোন সমঝোতার কথা বলা হয়নি। উল্লেখ করা
হয়েছে এরূপ কিছু যা আয়াত শরীফে আছে। মৌলানা ফতেহ মুহম্মদের উর্দু অনুবাদ যদিও
সমালোচনার অতীত ইহা উপরোক্ত অনুবাদে প্রতিফলিত হয়েছে। (অসমাপ্ত)
**********************************************************
কাদিয়ানী রদ! (১)
(পঞ্চম ভাগ)
(মুবাহিছে আযম,
বাহরুল উলূম, ফখরুল ফুক্বাহা, রইছুল
মুহাদ্দিসীন, তাজুল মুফাসসিরীন,
হাফিজে হাদীস, মুফতীয়ে আজম, পীরে
কামিল, মুর্শিদে মোকাম্মিল হযরতুল আল্লামা মাওলানা শাহ্ সূফী মুহম্মদ রুহুল আমিন
রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রণীত “কাদিয়ানী রদ” কিতাবখানা
(৬ষ্ঠ খন্ডে সমাপ্ত) আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ
করছি। যাতে কাদিয়ানীদের সম্পর্কে সঠিক ধারণাসহ সমস্ত বাতিল ফিরকা থেকে আহ্লে
সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীদের ঈমান আক্বীদার হিফাযত হয়। আল্লাহ্ পাক আমাদের
প্রচেষ্টার কামিয়াবী দান করুন (আমিন)। এক্ষেত্রে তাঁর কিতাব থেকে হুবহু উদ্ধৃত করা
হলো, তবে তখনকার ভাষার সাথে বর্তমানে প্রচলিত ভাষার কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্যণীয়)।
(ধারাবাহিক)
‘সৎবচন’, ৬৭ পৃষ্ঠা ঃ-
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
‘‘আমরা বাবা (নানক) ছাহেবের কারামত
এই স্থলে মান্য করিও কবুল করি যে, তিনি উক্ত লম্বা পিরাহান গায়েরব হইতে প্রাপ্ত হইয়াছিলেস এবং
আল্লাহ্ তায়ালার কুদরতে উহাতে কোন-আন শরিফ অঙ্কিত হইয়াছিল।’’
ইহার বিপরীতে তিনি নজুলোল-মছিহ কেতাবের ২০৫ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন ঃ-
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
‘‘সেই জামানায় ইছলামে লম্বা পিরাহান
রাখা ফকিরদিগের এক প্রকার নিয়ম ছিল, এক্ষেত্রে ইহা অতি সত্য কথা যে, বাবা
নানকের মুছলমান মুর্শিদ তাঁহাকে এই লম্বা পিরাহান দিয়াছিলেন।’’
আরও উক্ত পৃষ্ঠা ঃ-
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
‘‘হাঁ, ইহা হইতে পারে,
‘জম্মাসাক্ষিও’তে লিখিত আছে যে, যেহেতু
বাবা (নানক) ছাহেব নেক মানুষ ছিলেন, এইহেতু তিনি খোদার পক্ষ হইতে
এলহাম প্রাপ্ত হইয়া এই লম্বা পিরাহান প্রস্তুত করিয়াছিলেন।’’
মির্জ্জা ছাহেবের উক্ত পিরাহান সম্বন্ধে তিন প্রকার মত সমস্তই সত্য কিনা? (অসমাপ্ত)
ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক
পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক
কাদিয়ানীদের “কাফির” ঘোষণা!
(২)
অনুবাদক- আলহাজ্ব মুহম্মদ
হাবিবুল হক
(ধারাবাহিক)
মিঃ মুজিবুর রহমান যুক্তি দেন যে কাদিয়ানী এবং মুসলমানদের মধ্যে যা ভাল এবং
উভয়ে বিদ্যমান তাতে কোন প্রতিবন্ধকতা করা উচিত নয়, যেহেতু ইহা উভয়ের মধ্যে কালিমাতিন
স-য়াইন (كلمت)। কালিমাতিন-স-য়াইন এর ব্যাখ্যার জন্য তিনি মাদারিক-উত-তানযীল এর ভলিউম- ১
পৃষ্ঠা ২২ -এর উল্লেখ করেছেন। বলা হয়েছে যে কালিমতিন স-য়াইন (كلمت سواء) এর অর্থ এরূপ কিছু যা আপনার ও আমাদের মধ্যে বিদ্যমান এবং যাহার
কোন বিরোধ তাওরাত,
বাইবেল ও কুরআন নাই। কালিমা অর্থ আল্লাহ্ ছাড়া আমাদের আর
কারো উপাসনা করা উচিত নয়। ইবনে কাসীর (রঃ)
বলেছেন যে কালিমাতিন স-য়াইন অর্থ আল্লাহ্ পাক-এর ইবাদত করা এবং ইহাই ছিল সকল নবী
(আঃ)দের আহবান। (তাফসীর ইবনে কাসীর (রঃ) উর্দু ভলিউম-১ পৃষ্ঠা- ৭৬)
সূয়ুতী (রঃ)-এর আদ্ দুরুল মানসুর (ভলিউম- ২, পৃষ্ঠা-৪০) কিতাবে কালিমাতিন
স-য়াইন অর্থ বলেছেন,
“আল্লাহ্ পাক ছাড়া কোন প্রভু নাই।” মুফতী মুহম্মদ
শফি বলেছেন কালিমাতিন স-য়াইনে সকলের যোগ দান করা উচিত। ইহা হইতেই মিঃ মুজিবুর
রহমান সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে ইহা কোন শাস্তি মূলক অপরাধ হতে পারেনা। ৪১ নং সূরার
৩৩ নং আয়াত শরীফে বলা হয়েছে।
“যে আল্লাহ্ পাক-এর দিকে দাওয়াত দেয়। সৎকাজ করে এবং বলে আমি একজন আজ্ঞাবহ, তার কথা
অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?”
এই আয়াত শরীফ নাযিলের কারণ সম্বন্ধে আল ক্বলবী (রঃ) বলেছেন যখন মুয়াজ্জিন
নামাজের জন্য আহবানে আযানের বাক্যগুলি বলতেন এবং মুসলমানগণ তাঁদের নামায কায়েমে
দাঁড়াতেন এবং ইহুদীরা মুয়াজ্জিনকে ব্যঙ্গ করতে থাকতো এবং মুয়াজ্জিন সম্বন্ধে
অপমানজনক ভাষা উচ্চারণ করত। সুতরাং এই আয়াত শরীফে আযানকে (احسن قول) সর্বোৎকৃষ্ট উচ্চারণ বা সবচেয়ে মধুর উচ্চারণ বলা হয়েছে (কুরতুবি, ভলিউম-৬, পৃষ্ঠা-
২২৪ এবং ২২৫)
ইতিমধ্যে এটা দেখা গেছে যে, অমুসলিমদের আযান (উপসনার আহ্বান) ঐ আযানের মত নং এবং
ফলস্বরূপ এতে সবচেয়ে মধুর উচ্চারণের অভিব্যক্তি প্রয়োগ করা যায়না।
উপরোক্ত আয়াত শরীফে মু’মিন বা মুসলমান-এর যথাযথ সংজ্ঞা বর্ণনা করা হয়েছে। যাতে সন্দেহের কোন অবকাশ
নেই যে, আযান হলো (احسن قول) সবচেয়ে মধুর উচ্চারণ
তখনই যখন কোন মুসলমান উহা উচ্চারণ করেন। যেহেতু এর গুণ নির্ভর করে আহ্বানকারীর
উপযুক্ত প্রক্রিয়া এবং মুসলমান হিসেবে তাঁর আস্থার উপর।
সূরা ৫ এর ২য় আয়াত শরীফ নাযীল হওয়ার কারণ সম্বন্ধে কোর্টে একটি মত বিরোধ ছিল।
প্রশ্নটি ছিল উহাতে আল্লাহ্ পাক-এর চিহ্নের যে উল্লেখ করা হয়েছে উহা কি বহু
ঈশ্বারবাদীদের বর্ণনানুযায়ী না ইহা মুসলমানদের মতানুযায়ী। মিঃ মুজিবুর রহমান, আল্লাহ্
পাক-এর চিহ্ন হিসেবে যে বহু ঈশ্বরবাদীদের বর্ণনানুযায়ী তার সমর্থনে তাফসীরকারকদের
ভাষ্য থেকে কিছু নজির উল্লেখ করেন কিন্তু ডঃ রিয়াজুল হাসান জ্বিলানী (সরকার পক্ষের
ব্যরিষ্টার) এ ব্যাপারে অন্যান্য তাফসীরকারকদের মতটি আস্থাসহকারে গ্রহণ করেন।
বর্তমান সুপ্রীম কোর্টের শরীয়ত বেঞ্চের বিচারক পীর মুহম্মদ কারাম শাহ্ তার বহুল
প্রচারিত তাফসীর “জিয়াউল কুরআনে”
মিঃ মুজিবুর রহমানের এ মতের সমর্থন ব্যক্ত করেন।
কিছূ মতামত আছে যে,
এ আয়াত শরীফে রদ করা হয়েছে। মিঃ মুজিবুর রহমান যুক্তি দেখান
যে, আয়াত শরীফের অংশ لاتحلوا شعائر الله কখনোই রদ করা হয়নি।
এ মত বিরোধে যাওয়ারও কোন প্রয়োজন নেই।
যদি আয়াত শরীফটি হজ্বের সময় মীনাতে কুরবানীর জন্য পশু নিয়ে যাওয়া অমুসলিমদের
বৈশিষ্ট্য বা চিহ্নের সাথে সামঞ্জশ্যপূর্ণ হয় তার জন্য একটি ভিন্ন আদেশ জারী করা
হয়েছে যা নিম্নরূপ-
সূরা ৯, আয়াত শরীফ-২৮,
يايها الذين امنوا انما المشركون نجس فلايقربوا المسجد الحرام بعد عامهم هذا وان خفتم عيلة فسوف يغنيكم الله من فضله ان شاء ان الله عليه حكيم.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল হারামের নিকট না আসে। আর যদি তোমরা দরিদ্রের আশংকা করা তবে আল্লাহ্ পাক ইচ্ছা করলে নিজ করুনায় ভবিষ্যতে তোমাদের অভাব মুক্ত করে দিবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (অসমাপ্ত)
******************************************************
কাদিয়ানী রদ! (১)
(পঞ্চম ভাগ)
(মুবাহিছে আযম,
বাহরুল উলূম, ফখরুল ফুক্বাহা, রইছুল
মুহাদ্দিসীন, তাজুল মুফাসসিরীন,
হাফিজে হাদীস, মুফতীয়ে আজম, পীরে
কামিল, মুর্শিদে মোকাম্মিল হযরতুল আল্লামা মাওলানা শাহ্ সূফী মুহম্মদ রুহুল আমিন
রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রণীত “কাদিয়ানী রদ” কিতাবখানা
(৬ষ্ঠ খন্ডে সমাপ্ত) আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ
করছি। যাতে কাদিয়ানীদের সম্পর্কে সঠিক ধারণাসহ সমস্ত বাতিল ফিরকা থেকে আহ্লে
সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীদের ঈমান আক্বীদার হিফাযত হয়। আল্লাহ্ পাক আমাদের
প্রচেষ্টার কামিয়াবী দান করুন (আমিন)। এক্ষেত্রে তাঁর কিতাব থেকে হুবহু উদ্ধৃত করা
হলো, তবে তখনকার ভাষার সাথে বর্তমানে প্রচলিত ভাষার কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্যণীয়)।
(ধারাবাহিক)
(৬) হজরত ইছা আলাইহিস্ সালাম-এর
নাজিল হওয়া সম্বন্ধে মতভেদঃ-
‘বারাহিনে-আহমদীয়া’
৪৯৮/৪৯৯ পৃষ্ঠা ঃ-
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
‘‘তিনিই নিজের রাছুলকে হেদাএত ও
সত্য দীনের সহিত এই হেতু প্রেরণ করিয়াছেন যে, তিনি উহাকে সতস্ত দীনের উপর
পরাক্রান্ত করেন।’’
এই আয়ত বাহ্যিক ও রাজনৈতিক ভাবে হজরত মছিহ আলাইহিস্ সালাম সম্বন্ধে
ভবিষ্যদ্বাণী স্বরূপ। দীন ইছলামের যে পূর্ণ পরাক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হইয়াছে, উক্ত
পরাক্রম মছিহ আলাইহিস্ সালাম কর্ত্তৃক প্রকাশিত হইবে, আর যখন
হজরত মছিহ আলাইহিস্ সালাম দ্বিতীয় বার এই দুন্ইয়াতে আগমন করিবেন, তখন
তাঁহার সমস্ত অঞ্চলে দীন-ইছলাম বিস্তৃত হইয়া পড়িবে।’’
আরও উক্ত কেতাব,
৫০৫ পৃষ্ঠা ঃ-
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
‘‘হজরত মছিহ আলাইহিস্ সালাম অতিশয়
পরাক্রমের সহিত দুন্ইয়াতে নাজিল হইবেন, সমস্ত পথকে কন্টক ও আবর্জ্জনা
হইতে পরিষ্কার করিবেন,
অহিত ও অন্যায় কার্য্যরে চিহ্ন মাত্র থাকিবেনা এবং
আল্লাহ্তায়ালার পরাক্রম কোপের তাজাল্লি দ্বারা ভ্রান্তির বীজকে বিলুপ্ত করিয়া দিবেন।’’ (অসমাপ্ত)
ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক
পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক
কাদিয়ানীদের “কাফির” ঘোষণা!
(২)
অনুবাদক- আলহাজ্ব মুহম্মদ
হাবিবুল হক
(ধারাবাহিক)
বহু ইশ্বরবাদী বা মূর্তি পূজকদের কাবা ঘরের নিকটে যাওয়া থেকে বিরত রাখা হত।
আল্লাহ্ পাক-এরই পবিত্র আদেশ বাস্তবায়নের জন্য একখানা হাদীস শরীফও রয়েছে যে, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে মক্কা
শরীফে পাঠিয়েছিলেন অমুসলিমদের হজ্ব পালনে নিষেধ করার আদেশ নামা জারীর জন্য।”
এ আদেশ নামা মূর্তি পূজকদের কাবা ঘরের পূজা করার নিষেধাজ্ঞা। যা প্রভেদ করার
চিহ্ন এবং পবিত্র রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ নামা ছিল, হজ্বের
সাথে তাদের প্রভেদকারী। (দেখুন, তাফহীমূল কুরআন, ভলিউম ২, পৃষ্ঠা
১৮৬, নোট ২৫)
সুতরাং এটা থেকে সুস্পষ্টভাবে সিদ্ধান্ত করা যায় যে, ইসলামের
কোন প্রভেদকারী চিহ্ন,
কোন অমুসলিমের জন্য ব্যবহার করার অনুমতি নেই। কেননা, শেয়ার
অর্থ একটি সমাজের ব্যবহৃত প্রভেদকারী চিহ্ন যা দ্বারা কোন সমাজকে চেনা যায়। যদি
কোন মুসলিম রাষ্ট্রে ক্ষমতা পেয়েও অমুসলিমদের ইসলামি শেয়ার ব্যবহারে সম্মতি দেয়া
হয়। যা মুসলিম উম্মাহ্র প্রভেদকারী বৈশিষ্ট্য প্রভাবন্বিত করে তবে তা ঐ রাষ্ট্রের
জন্য কর্তব্য কাজ সম্পাদন ব্যর্থতা। কোন ইসলামী রাষ্ট্রে কোন অমুসলিমকে ইসলামী
শেয়ার ব্যবহার করতে দেয়া ইসলামী শেয়ারের সাথে অবৈধ আচরণের শামীল এবং এর
নিষেধাজ্ঞার কারণ আরও জোরালো।
উপরোল্লিখিত আয়াত শরীফ (৯ঃ২৮) এবং পরবর্তীতে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর অনুশীলন প্রমাণ করে, ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের ইসলামী শেয়ার গ্রহণে বিরত রাখার, আইন
প্রণয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতার। কারণ এই যে, ইসলামী রাষ্ট্রে কোন অমুসলিম যদি
মুসলিম শেয়ার ব্যবহারে বিরত না হয় তবে তাকে শাস্তির বিধান আইন প্রণয়নকারী পরিষদের
রয়েছে।
মিঃ মুজিবুর রহমান নিম্নে লিখিত পয়েন্টগুলি উল্লেখ করে।
(১) যদি আযান ইসলামের একটি শেয়ার (পার্থক্যকারী চিহ্ন) হয় এবং যদি একই শেয়ার
অমুসলিমদের মধ্যেও থাকে,
তবে কি এর ব্যবহার অমুসলিমদের জন্য নিষিদ্ধ করা যাবে?
(২) কালিমাতিন সুওয়াইন সম্বন্ধে অধ্যাদেশের আলোকে, এটা কি
জরুরী যে মুসলমান ও অমুসলমান উভয়ে এতে যোগদান করবে?
(৩) যাই হোক না কেন احسن اقول (সব চেয়ে মধুর উচ্চারণ) বলাকে কি শাস্তিযোগ্য অপরাধ গন্য করা যাবে?
এই সকল সুওয়ালের জাওয়াব পূর্বেই দেয়া হয়েছে এবং এখন প্রধান প্রধান বিষয়গুলো সংক্ষেপে বলা যেতে পারে। ৯ নম্বর সূরা ২৮ নম্বর
আয়াত শরীফের আলোকে এবং এটা থেকে যে অধ্যাদেশ জারী হয়েছে তা দ্বারা মুসলমানদের সাথে
মিল রয়েছে তেমন শেয়ার আমল করা থেকে
অমুসলিমদের বিরত করা যেতে পারে। কালিমাতিন সুওয়াইন ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন
বিষয়ে, কিন্তু প্রথম সুওয়ালের জাওয়াবের প্রেক্ষিতে
এর কোন প্রয়োজন নেই। যা হোক এখানে জোড়ালোভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে যদিও
পূর্বে অবিশ্বাসীরা তাওয়াফ করত, কিন্তু খানায়ে ক্বাবা মুসলমানদের অধিকারে আসার পর তাদের
(অবিশ্বাসী) তাওয়াফ করার অনুমতি দেয়া হয়নি। এটা স্থিরকৃত যে কোন অমুসলিমের আযান احسن اقول (সবচেয়ে মধুর উচ্চারণ) হবে না এবং প্রথম সুওয়ালের জাওয়াবের
প্রেক্ষিতে সেই ব্যক্তিকে উক্ত শেয়ার আমল করা থেকে নিবৃত্ত করা যাবে এবং অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করার জন্য তার শাস্তির
আদেশ দেয়া যাবে।
কাদিয়ানীরা যখন কাদিয়ানে তখন তাদের আচরণ ছিল অন্য রকম এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতার
কারণে কিছু প্রভাও ছিল। কাদিয়ানীরা মুসলমানদের নিজেদের মসজিদে আযান দেয়া থেকে বিরত
করেছিল। অযৎধৎ (আহরার) কিছু
স্বেচ্ছাকর্মীকে কাদিয়ানের মুসলিম মসজিদে আযান দেয়ার জন্য পাঠিয়ে ছিলেন, কিন্তু
কাদিয়ানীরা লাঠি দিয়ে তাদের আক্রমণ করে এবং প্রত্যেককে বড় রকম জখম করে এবং তাদেরকে
চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে থাকতে হয়। (তাহরিক-ই-খাতাম-ই-নবুয়াত ১৮৯১-১৯৭৪, লেখক
শরিশ কাশ্মিরী, পৃঃ৭৮)
এরূপ করতে পারত একমাত্র বৃটিশ শাসনামলে পশু সুলভ আচরণ সম্পন্ন সৈন্যবাহিনী। এটা একটি নমুনা। আযানকে তারা তাদের শেয়ার মনে করে। মুসলমানদের জন্য আমল অবৈধ স্থির করেছিল। তারা মনে করেছে এটা অনুস্মরণীয় এবং ক্ষমতাসীন সংখ্যাগরিষ্ঠর এরূপ প্রতিহত করা আইনানুগ। (অসমাপ্ত)
********************************************************
কাদিয়ানী রদ! (১)
(পঞ্চম ভাগ)
(মুবাহিছে আযম,
বাহরুল উলূম, ফখরুল ফোক্বাহা, রইছুল
মোহাদ্দিসীন, তাজুল মোফাসসিরীন,
হাফিজে হাদীস, মুফতীয়ে আজম, পীরে
কামিল, মুর্শিদে মোকাম্মিল হযরত মাওলানা আল্লামা শাহ্ সূফী মুহম্মদ রুহুল আমিন (রঃ)
কর্তৃক প্রণীত “কাদিয়ানী রদ” কিতাবখানা
(৬ষ্ঠ খন্ডে সমাপ্ত) আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ
করছি। যাতে কাদিয়ানীদের সম্পর্কে সঠিক ধারণাসহ সমস্ত বাতিল ফিরকা থেকে আহ্লে
সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীদের ঈমান আক্বীদার হিফাযত হয়। আল্লাহ্ পাক আমাদের
প্রচেষ্টার কামিয়াবী দান করুন (আমিন)। এক্ষেত্রে তাঁর কিতাব থেকে হুবহু উদ্ধৃত করা
হলো, তবে তখনকার ভাষার সাথে বর্তমানে প্রচলিত ভাষার কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্যণীয়)।
(ধারাবাহিক)
‘হামামাতোল-বোশরা, ১৮
পৃষ্ঠা ঃ-
بل أخرته الى عشر سنة بل زدت عليها وكنت لحكم واضح وأمر صحيح من المنتظرين-
‘মছিহ (আঃ) এর ফওম,
তাঁহার নাজিল না হওয়ার এবং আমার মছিহ (আঃ) এর স্থলাভিষিক্ত
হওয়ার এলহাম আমি দশ বৎসর বা তদধিক কাল মোলতুবি রাখিয়াছিলাম এবং স্পষ্ট হুকুমের
অপেক্ষায় ছিলাম।’
‘এজালায়-আওহাম,
১৯১ পৃষ্ঠা ঃ-
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
‘‘আমার পক্ষ হইতে এই দাবি নহে যে, আমার উপর মছিহিএত শেষ হইয়াছে এবং
ভবিষ্যতে কোন মছিহ আসিবে না, বরং আমি ইহা মান্য করিয়া থাকি এবং বারম্বার বলিয়া থাকি যে, এক কেন
দশ সহস্রের অধিক মছিহ আসিতে পারে। ইহাও সম্ভব যে, বাহ্য পরাক্রম ও সামর্থের সহিত
আসিতে পারেন এবং ইহাও হইতে পারে যে, তিনি প্রথমে দেমাস্কে নাজিল
হইবেন।’’
উক্ত কেতাব, ১৪৯/১৫০ পৃষ্ঠা ঃ-
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
‘‘আমি কেবল মছিলে-মছিহ হওয়ার দাবি করিয়াছি। আমার ইহাও দাবি নহে যে, মছিলে-মছিহ
হওয়া কেবল আমার উপর শেষ হইয়াছে, বরং আমার নিকট ইহাও সম্ভব যে, ভবিষ্যতে আমার তুল্য দশ সহস্র
মছিলে-মছিহ আগমন করেন। ইহাও সম্পূর্ণ সম্ভব যে, কোন সময় এরূপ কোন মছিহ আগমন করেন-
-- যাহার উপর হাদিছ সমূহের স্পষ্ট শব্দগুলি খাপ খাইতে পারে, কেননা এই
অক্ষম এই দুন্ইয়ার হুকুমত ও বাদশাহির সহিত আগমন করে নাই, ফকিরি ও
দরিদ্রতার পরিচ্ছদে আগমন করিয়াছে। ইহাও সম্ভব যে, কোন সময় আলেমগণের এই উদ্দেশ্য
পূর্ণ হইয়া যায় অর্থাৎ হাদিছগুলির স্পষ্ট শব্দ সমূহের অনুপাতে বাদশাহও শাসনকর্ত্তা
মছিহ আগমন করেন।’ (অসমাপ্ত)
ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক
পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক
কাদিয়ানীদের “কাফির” ঘোষণা!
(২)
অনুবাদক- আলহাজ্ব মুহম্মদ
হাবিবুল হক
(ধারাবাহিক)
কাদিয়ানীদের উপাসনালয়কে মসজিদ বলার নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে মিঃ মুজিবুর রহমান
যুক্তি দেখায় যে কুরআন শরীফ অনুযায়ী মসজিদ শব্দটি শুধুমাত্র মুসলমানদের উপাসনালয়কে
বুঝায়না। এখন বরং যারা অমুসলিম তাদের উপাসনালয়কেও বুঝায়। যখন প্রশ্ন করা হল যে, গত ১৪০০
বছর মুসলমান ছাড়া অন্যান্যদের উপাসনালয়কে কি মসজিদ নামে অভিহিত করা হয়েছে?” জাওয়াবে
তিনি ‘না’ বলেছেন।
কিন্তু কিছু দিন পর তিনি বলেছেন যে, “করাচিতে ইহুদীদের একটি উপাসনালয় আছে, তাতে নাম
লিখা আছে মসজিদ-ই-বণী ইসরাইল।”
তিনি আলোকচিত্র প্রদর্শন করেন। আলোক চিত্রতে বুঝা যায় যে, তা একটি
সাইনাগগ (ঝুহধমড়মঁব);
কিন্তু এটাও লক্ষণীয় যে, কেউ অনুবাদ করে মসজিদ-ই-বাণী
ইসরাইল লিখেছে। এরূপ নাম ইহুদীদের মধ্যে প্রচলিত নয়।
প্রশ্ন হতে পারে। হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যারা অনুসারী
নয় তাদের উপাসনালয়কে কুরআন শরীফে কি মসজিদ বলা হয়েছে? প্রশ্নটি
অবান্তর। শুরু থেকেই ইসলামই একমাত্র পবিত্র ধর্ম। হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম থেকে
শুরু করে যদি মসজিদ শব্দটি অন্য কোন নবীর উম্মতের জন্য এবং তৎকালীন ইসলাম ধর্মে
অনুসারীদের উপাসনালয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাতেও সিদ্ধান্ত হয়না যে অমুসলিমদের
উপাসনালয়কে মসজিদ নাম দেয়া হয়েছিল। বাস্তব ও সত্য যে বিগত ১৪০০ বছরে এই নামে শুধু
মাত্র মুসলমানদের মসজিদই বুঝিয়েছে। বাস্তবিক পক্ষে রীতিগতভাবে শুধুমাত্র মুসলমানরা
নিজেদের উপসনালয়কে মসজিদ নামে অভিহিত করে আসছে।
পবিত্র কুরআন শরীফে মসজিদ শব্দটি আভিধানিক অর্থেই ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু
এখন সেই শব্দটি প্রয়োগগতভাবে মুসলমানদের উপাসনালয়কেই বুঝায় (দেখুনঃ
আল-আলাকত-উল-দুওয়ালিয়া ফিল ইসলাম পৃষ্ঠা- ২১২) এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদগাও মসজিদ
নয়।
সূরা ২২ এর ৪০ নং আয়াত
শরীফ উল্লেখ্য যা নিম্নরূপঃ-
الذين اخرجوا من ديارهم بغير حق الا ان يقولوا ربنا الله ولو لادفع الله الناس بعضهم ببعض لهدمت صوامع وبيع وصلوت ومسجد يذكر فيها اسم الله كثيرا ولينصرن الله من ينصره ان الله لقوى عزيز.
অর্থঃ- “যাদেরকে তাদের ঘরবাড়ী থেকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে শুধু এই অপরাধে যে, তারা বলে
আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ্ পাক। আল্লাহ্ পাক যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা
প্রতিহত না করতেন। তবে,
নির্জন গির্জা, ইবাদতখানা, (ইহুদীদের)
উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত। যে গুলোতে আল্লাহ্ পাক-এর নাম অধিক
স্মরণ করা হয়। আল্লাহ্ পাক নিশ্চয়ই তাঁদেকের সাহায্য করবেন। যারা আল্লাহ্ পাক-এর
সাহায্য করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক পরাক্রমশালী, শক্তিধর।”
সকল উপাসনা স্থান সমূহের জন্য যে পবিত্রতা সংযোজিত, সেই
দৃষ্টিভঙ্গিতে যুক্তি পেশ করেন, যে কোন ব্যক্তিকে তার উপাসনালয়কে মসজিদ বলা থেকে বিরত করা
যায়না। এটা অবশ্য কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ব্যাখ্যা করেছেন, উপাসনালয়
সমূহের যে নামকরণ করা হয়েছে তন্মধ্যে আশ্রম, মঠ, গির্জা ও বক্তৃতাস্থান উপাসনা
স্থানের সাথে সম্পর্কিত এবং সন্নাসীদের আশ্রম বা মঠ অমুসলিমদের উপাসনালয় এবং মসজিদ
শব্দটি শুধু মুসলমানদের ইবাদত স্থানের ইঙ্গিত বহন করে। (আহকামুল কুরআন ভলিউম-১২, পৃষ্ঠা-৭২)
যদি ধরে নেই যে মসজিদ শব্দটি হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আবির্ভাবের পর যারা অমুসলিম ছিল তাদের উপাসনালয়কে নাম করণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। তবে এটাও স্বীকার করতে হবে যে মসজিদ শব্দটি কেবল ঐ সময়ের মুসলমানদের ইবাদত স্থান সমূহের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। (অসমাপ্ত)
আবা-৯১,৯২,৯৩,৯৪,৯৫
0 Comments:
Post a Comment