ফক্বীহাতুন নিসা আহলু বাইতে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার শান-মান, বুযূর্গী-সম্মান
মহান রব্বুল আলামীন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قُلْ لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبٰى.
অর্থ: “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি জানিয়ে দিন, আমি তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় চাচ্ছি না। আর চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়; তোমাদের পক্ষে দেয়াও কস্মিনকালে সম্ভব নয়। বরং এ ধরণের চিন্তা করাটাও কুফরী। তবে তোমরা যদি ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে চাও; তাহলে তোমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের গোলামীর আনজাম দেয়া।” (পবিত্র সূরা শূরা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللّٰهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهُ صلَّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَحِبُّوْا اللّٰهَ لِمَا
يَغْذُوْكُمْ مِّنْ نِعْمَةٍ وَاَحِبُّوْنِىْ لِحُبِّ اللّٰهِ وَاَحِبُّوْا اَهْلَ بَيْتِىْ لِحُبِّىْ
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো। কেননা তিনি তোমাদের প্রতি রিযিক দানের মাধ্যমে অনুগ্রহ করে থাকেন। আর আমাকে মুহব্বত করো মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে, যেহেতু আমি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব। আর আমার আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার মুহব্বতে।”
অতএব, উম্মতের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক লাভের উসীলা হিসেবে হযরত আহলে বাইত শরীফ উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা ও উনাদের গোলামী করা।
আর সেজন্যই সাইয়্যিদাতুন নিসা, নূরে জাহান, ক্বায়িম-মাক্বামে উম্মুল মু’মিনীন, আমাদের প্রাণের আক্বা, যাওজাতু মুজাদ্দিদে আ’যম হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনাকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, গোলামী করা, ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব-কর্তব্য। কেননা তিনিও হযরত আহলে বাইতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত ও বিশেষ সম্মানিতা ব্যক্তিত্ব। তিনি যামানার খাছ লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত যাওজাতুম মুকাররমাহ। আর সে কারণেই অজস্র গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যসম্পন্না এবং যোগ্যতাসম্পন্না করেই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে দুনিয়ার বুকে প্রেরণ করেছেনÑ যা কায়িনাতবাসীর জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে খাছ রহমত এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে খাছ ইহ্সান। আর তাই খালিছ লক্ষ্যস্থল ওলী উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি অবশ্যই অন্যতম এবং শ্রেষ্ঠা।
আমাদের প্রাণের আক্বা মাখযানুল মা’রিফা, ছহিবাতুল ইল্ম ওয়াল হিকাম, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম তিনি সর্বক্ষণ সুন্নত উনার ইত্তেবা করে থাকেন এবং আমাদেরও তা শিক্ষা দিয়ে থাকেন। ঘরে-বাইরে, শিক্ষা ক্ষেত্রে, প্রতিষ্ঠানে, যার যার সংসারে প্রতিটা কাজের মধ্যেই সুন্নত উনার আমল কিভাবে করতে হবে তা উনার মুরিদানদের শিখিয়ে দিচ্ছেন এবং জানিয়ে দিচ্ছেন। একজন গৃহিনীর ঘর-সংসারের রান্না-বান্নার কাজ থেকে শুরু করে সন্তান-সন্ততি লালন-পালন পর্যন্ত কিভাবে সুন্নত মুতাবিক করতে হবে তা তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর হক্ব, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর হক্ব, পিতা-মাতার হক্ব, সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্ব-কর্তব্য, পরিবারের অন্যান্যদের প্রতি একজন মহিলা কিভাবে দায়িত্ব পালন করবে ইত্যাদি বিষয়েও তিনি মুবারক নছিহত করেন। মহিলাদের সুন্নতী পোশাক এবং বোরকা তৈরি করা শেখানো উনার মুবারক তাজদীদসমূহ উনাদের অন্যতম অনবদ্য একখানা তাজদীদ মুবারক। হাদীউন নিসা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি মহিলা মুরীদানদের হাতে ধরে ধরে সুন্নতী জামা-সেলোয়ার কাটা এবং সেলাই করা শিখিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে এখন হাজারো হাজারো মহিলারা খাছ সুন্নতী জামা পছন্দ করছেন এবং পরছেন। কোণাফাড়া, বিদয়াতী পোশাক বাদ দিয়ে সুন্নতী জামা-সেলোয়ার পরিধান করছেন। এমনকি বর্তমানে মায়েরা শিশুদের জন্মের পর থেকেই বিদয়াত অর্থাৎ বেদ্বীন-বদ্দ্বীনদের পোশাক না পরিয়ে সুন্নতী সেলোয়ার-ক্বামিছ পরাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে জাহান, বাহরুল আ’লিমা উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি নিজে যেমন শরীয়ত মুতাবিক খাছ পর্দা করেছেন এবং করছেন তেমনি উনার স্বীয় আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রত্যেককেও সেই খাছ পর্দার মধ্যেই রেখেছেন। এবং সকল মুরীদানদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার ফরয হুকুম পালন করার জন্য নছিহত মুবারক করছেন। সুবহানাল্লাহ্!
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পুরুষ তত্ত্বাবধায়ক তার পরিবারের। আর মহিলা তত্ত্বাবধায়ক তার স্বামীর ঘরের ও তার সন্তানের।” (বুখারী শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পুরুষ জাতির কর্মপরিধিকে মহিলা জাতির কর্মপরিধি থেকে পৃথক করে দিয়েছেন। সে মুতাবিক মহিলাগণ বাড়ির ভেতরের জন্য দায়িত্বশীল। তবে শরীয়তের ফায়সালা এমন নয় যে- বিশেষ শরয়ী প্রয়োজন হলে নারীরা ঘর থেকে বের হতে পারবে না। অবশ্যই প্রয়োজনে আপাদমস্তক ঢেকে পর্দাসহ বের হতে পারবে। কাজেই পুরুষ এবং নারী উভয়ই যার যার অবস্থানে অত্যন্ত সম্মানিত ও মর্যাদাবান। সুবহানাল্লাহ্!
অথচ কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা দ্বীন ইসলাম প্রদত্ত নারীদের এত সম্মান-মর্যাদা দেখে হিংসাবশত তথাকথিত সমাজে প্রচলিত ‘নারী স্বাধীনতা’, ‘নারী অধিকার’, ‘সমধিকার’ প্রভৃতি শরীয়ত বিরোধী ধোঁকাপূর্ণ এবং মিথ্যা দাবিতে তথাকথিত নারীবাদীদের উস্কিয়ে দিয়ে তাদের পরিবারে, সমাজে ক্ষতিসাধন করছে। সুতরাং বির্ধমীদের এই পাতানো ফাঁদ থেকে অর্থাৎ তাদের হিংসাবশত ষড়যন্ত্র থেকে নারী সমাজ যাতে মুক্তি লাভ করে সেটারই বলিষ্ঠ আহবান জানাচ্ছেন আমাদের প্রাণ-প্রিয়া সাইয়্যিদাতুন নিসা, উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ্!
সাইয়্যিদাতুন নিসা, ফক্বীহাতুন নিসা, উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি যেহেতু খাছ মুয়াল্লিমা, তাই উনার দ্বীনী শিক্ষার ব্যাপকতা সর্বত্রময়। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “ইল্ম হচ্ছে নূর বা আলো।”
সুতরাং এই ইল্মের আলো তিনি চারিদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ! উনার প্রতিষ্ঠিত আদর্শ বিদ্যাপিঠ ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ বালিকা মাদরাসা’ একটি আদর্শ দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উক্ত মাদরাসায় দ্বীনী ইল্ম অর্থাৎ (পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা-কিয়াস শরীফ সম্বলিত বিধান) অর্থাৎ ইল্মে ফিক্বাহ, ইল্মে তাছাউফসহ সমস্ত শিক্ষাই প্রদান করে থাকেন। আরবী, ইংরেজি, বাংলা, উর্দু, বিজ্ঞান, আক্বাইদ, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ও এই মাদরাসায় পঠিত হয়ে থাকে।
শুধু তাই নয়, আজ এই ভয়াবহ ফিতনার যুগে তথাকথিত মহিলারা বেহায়া-বেলাল্লাপনার নগ্ন জীবন থেকে সাইয়্যিদাতুন নিসা, নূরে জাহান, উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক নছিহত, দলিলসমৃদ্ধ আলোচনা শ্রবণ করে ফিরে আসছে দ্বীন ইসলাম উনার ছায়াতলে। যেসব নারী নিজেদের দ্বীন, নিজেদের অস্তিত্ব ভুলে হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিল- সেই পথহারা নারী সমাজকে সত্যপথের দিকে আহ্বান করে যাচ্ছেন আমাদের প্রাণের আক্বা, নূরে জাহান, উম্মুল খয়ের সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
যেহেতু আমাদের প্রাণের আক্বা নূরে মদীনা, গুলে মুবীনা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনিও মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে খাছভাবে মনোনীত হয়েছেন। সেহেতু উনাকে মুহব্বত করা, তাযীম-তাকরীম করার সাথে সাথে উনাকে হাক্বীক্বীভাবে অনুসরণ করা প্রত্যেক মু’মিনা মহিলাদের জন্য ফরজ-ওয়াজিব।
সুতরাং আমরা সাইয়িদাতুন নিসা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার মুবারক ছোহবত ইখতিয়ারের মাধ্যমে হাক্বীক্বী দ্বীনী শিক্ষা অর্জনের মধ্য দিয়ে নেক্কার পরহেযগার মু’মিনা হওয়ার চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ্! তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের নিয়ামত আরো বৃদ্ধি করে দিবেন। অর্থাৎ আমরা প্রত্যেক মহিলারা সবসময় খাছ নিয়ামত, রহমত, বরকত, সাকীনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারবো। ইনশাআল্লাহ্!
0 Comments:
Post a Comment