ক্বায়িম-মাক্বামে উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, সাইয়্যিদাতুন্ নিসা, হাবীবাতুল্লাহ উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বর্তমান বিশ্বে আদর্শ নারী শিক্ষার সর্বোত্তম আলোক দিশারী
যুগ থেকে যুগান্তরে, কাল থেকে কালান্তরে বিক্ষিপ্ত হৃদয়, অন্তরের অন্তর্দাহ জ্বালা-যন্ত্রণা বুকে চেপে পথভ্রান্ত পথিকের মতো পথ খুঁজে ফিরেছি মনে মনে, একান্ত নির্লিপ্তে শুধুমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে। অবশেষে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে কবুল করে নিলেন; ভুল পথ থেকে সঠিক পথের সন্ধান পেলাম এবং মহান আল্লাহ পাক উনার পরম নিয়ামত মুবারক- যামানার লক্ষ্যস্থল, মুজাদ্দিদে আ’যম আমাদের প্রাণের আক্বা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে বাইয়াত হলাম এবং সাথে সাথেই নারীদের হিদায়েতের আলোকবর্তিকা মাখযানুল মা’রিফা, হাদীউন্ নিসা, উম্মুল উমাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ারের সৌভাগ্য অর্জন করলাম এবং নিজেকে ধন্য মনে করলাম। কারণ তিনিই একমাত্র মা হওয়ার জন্য যত গুণ ও বৈশিষ্ট্যের দরকার তা আমলে, ইখলাছে, আক্বীদায়, ছিরতে-ছুরতে সার্বিক দিক থেকেই উনার রয়েছে এবং হাতে কলমে শিক্ষা-দীক্ষায় পরিপাটি করে উপযুক্ত করে গড়ে তুলছেন বর্তমান নারীদেরকে। বর্তমান বিশ্বে কোনো কিছুরই অভাব নেই, অভাব শুধু একজন আদর্শ, খোদাভীরু, নেককার, পরহেযগার মায়ের। যিনি একজন আদর্শ ও নেককার মা, তিনিই হচ্ছেন গোটা উম্মাহ্ তথা জাতির ইহকাল ও পরকালের সার্বিক উন্নতির চাবিকাঠি। বর্তমানে সীমাহীন অরাজকতার মূল কারণ হচ্ছে একজন আদর্শ মায়ের অভাব। আর আদর্শ মা গঠনে বর্তমান বিশ্বে একমাত্র প্রজ্ঞাসম্পন্না, অদ্বিতীয়া হিসাবে অক্লান্ত ত্যাগ-তিতীক্ষা, শ্রম-সাধনা দিয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখছেন, রাহবারে সাইয়্যিদাহ, উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি। উনার বরকতময় ছোহবত মুবারক উনার পরশে বর্তমান বিশ্বের মা-বোনেরা ফিরে পাচ্ছেন পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত হুবহু খাছ পর্দা-পুশিদা এবং বিশুদ্ধ ইলম, আমল-ইখলাছ। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
اُطْلُبُوْا اْلعِلْمَ مِنَ الْمَهْدِ اِلَى اللَّحْدِ
অর্থ: “দোলনা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ইলম অর্জন করো।”
অথচ যে ইলম উনার কথা মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শিক্ষা দিয়েছেন সে ইলম মুবারক (ইলমে ফিক্বাহ, ইলমে তাছাউফ) সম্পর্কে আমরা একেবারেই বে-খবর। আফসুস হয় আমার জন্য এবং আমার মতো আরো সকল নারীদের জন্য। আমরা দুনিয়াবী অনেক বই-পুস্তক পড়েছি, অনেক দুনিয়াবী শিক্ষক-শিক্ষিকার ছোহবতে গিয়েছি এবং বিভিন্ন দুনিয়াবী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছি; কিন্তু সে ছোহবত ও লেখাপড়া আমাদের আদর্শ নারীতে পরিণত করতে পারেনি। যে দুনিয়াবী শিক্ষার পেছনে আমরা ছুটে বেড়িয়েছি তাকে বলা হয় - ‘হুনর’। যে শিক্ষা দ্বারা দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে বা জীবিকা নির্বাহ করতে কিছু দুনিয়াবী ফায়দা পাওয়া যায়। কিন্তু পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নিয়মনীতি, তর্য-তরীক্বা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ বা মূর্খই থেকে যায়। সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক স্বামী-স্ত্রীর হক্ব, নারীর অধিকার, নারীর শিক্ষা, পরিবার এবং সমাজে কতটুকু রয়েছে, তা দুনিয়াবী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা দেয়া হয় না; দেয়ার কথাও নয়। উলামায়ে ‘সূ’রা পর্যন্ত তাদের ইল্্ম অর্জন করা সত্ত্বেও তার স্ত্রী-কন্যাদেরকে ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক ফরয পরিমাণ ইলম টুকুও শিক্ষা দেয়নি বা দিচ্ছে না, বরং ঘরে কোণঠাসা করে রাখে। মেয়েদের এত পড়ালেখা লাগে না, মেয়েরা শুধু রান্নাবান্নাই করবে ইত্যাদি বলে নারী সমাজটাকে আজ দ্বীনী শিক্ষা উনার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ্!
কিন্তু আজ যদি মুসলমানগণ নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতো, নিজেদের পবিত্র দ্বীন- সম্মানিত ইসলাম উনার সম্পর্কে জানতো; তবেই তারা নিজেদের হিফাযত করতে পারতো। নিজেদের দ্বীন বাদ দিয়ে অন্য ধর্মে গা ভাসিয়ে দিতো না; উলামায়ে‘ছু’দের দ্বারা বিভ্রান্ত এবং বেপর্দা হতে হতো না। ইহুদী-খ্রিস্টানরা এবং ফাসিক-ফুজ্জাররা পারত না নারীদেরকে খেল-তামাশার বস্তুতে পরিণত করতে। কিন্তু আর কতকাল এমনভাবে চলবে নারীদের প্রতি যুলুম-অত্যাচার? আমাদের সকল মুসলমান নর-নারীদের কর্তব্য হবে এই সমস্ত দুনিয়াদারদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করা এবং শরঈ প্রতিরোধ গড়ে তোলা। পিতা-পুত্র, স্বামীকে বুঝাতে হবে সঠিক ইলম অর্জন করার কথা যা তাকে ‘নারীর অধিকার’, ‘নারী শিক্ষা’ সম্পর্কে সচেতন করে তুলবে, নিজেদের মান-ইজ্জত হিফাজত করতে পারবে এবং নিজেদের সম্মান নিজেরাই বহাল রাখতে পারবে। তাই আমাদের নারী জাতির কাছে একান্ত আহ্বান- যে শিক্ষা আমাদেরকে ভ্রান্তপথ থেকে হক্ব পথে ফিরিয়ে এনেছে, একজন আদর্শ নারীতে পরিণত করছে, যে ইলম আমাদেরকে হাক্বীক্বী মুসলমানে পরিণত করছে, সেই ইলম অর্জনের সন্ধানে আপনারাও বেরিয়ে পড়–ন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ‘ইলম অর্জন’ সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে যে,
طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلٰى كُلِّ مُسْلِمٍ وَّ مُسْلِمَةٍ
অর্থ: “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উনাদের জন্য ইলম অর্জন করা ফরয।”
অর্থাৎ একজন পুরুষের যেমন ইলম অর্জন করতে হবে, ঠিক তেমন একজন মহিলারও ইলম অর্জন করতে হবে। তাছাড়া হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “মানুষ সম্পদ হিফাযত করে, আর ইলম মানুষকে হিফাযতের বড় মাধ্যম।” সুবহানাল্লাহ্!
অর্থাৎ ‘ইলম’ নারী-পুরুষ উভয়কে বিভিন্ন ফিতনা-ফাসাদ, শয়তানী ওয়াস্ওয়াসা, উলামায়ে ‘সূ’দের উৎপীড়ন, ইহুদী-নাছারাদের শত্রুতা থেকে হিফাযত করবে। আমাদের ইহকাল এবং পরকালেও নাজাতের পথ বাতলে দিবে। অতএব, এখনো আমাদের সময় আছে, আমরা নারীরা যদি সচেতন হই, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা শিক্ষা দিয়ে হক্ব পথে পরিচালিত করতে পারবো। তাই আমাদের একান্ত কর্তব্য- বর্তমানে সারাবিশ্বে নারীদের শ্রেষ্ঠা নারী ও যুগের মুজাদ্দিদুয্ যামান মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার তরফ থেকে পূর্ণ নিয়ামত প্রাপ্তা, শ্রেষ্ঠা মুয়াল্লিমা, ক্বায়িম-মাক্বামে উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, নূরে জাহান, হাবীবাতুল্লাহ, সাইয়্যিদাতুন্ নিসা, উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার কাছ থেকেই উক্ত ‘ইলম অর্জন’ করা। তিনি প্রতি ইয়াওমুল জুমুয়াহ বা জুমুয়াবার শরীফ এবং ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম বা সোমবার মহিলাদের তা’লীম-তালক্বীন মুবারক (দ্বীনী বিষয় শিক্ষা) দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে প্রতি জুমুয়াবার উম্মুল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র ‘কুরআন শরীফ’ উনার থেকে অনুবাদ-তাফসীর এবং সার্বিক বিষয়ে নছীহত মুবারক করে থাকেন। যা আমাদের জীবনের নাজাতের একমাত্র সোপান। শুধু তাই নয়; সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে সম্পূর্ণ রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস এবং রমাদ্বান শরীফ মাসব্যাপী মহিলাদেরকে তা’লিম-তালক্বীন মুবারক দিয়ে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
এছাড়াও সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে প্রতিদিন ‘ফাল ইয়াফরাহু’ শরীফ মাহফিল করে যাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ্!
0 Comments:
Post a Comment