সুওয়াল :
আমরা গত তিন সংখ্যা মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকায় সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগে দেখতে
পেলাম যে, তিনটি হ্যান্ডবিল ছাপানো হয়েছে।
প্রথমতঃ ‘ইসলামের
নামে গণতন্ত্র করা হারাম’। দ্বিতীয়তঃ ‘মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদের যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী (পাঁচ ওয়াক্ত, জুমুয়া ও
ঈদের নামায)’। তৃতীয়তঃ ‘তারাবীহ নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত (পারিশ্রমিক) গ্রহণ
করা জায়িয’।
এ তিনটা
হ্যান্ডবিল ছাপানোর ফলে আমাদের জানা মতে অনেক মেয়ে-পুরুষ, মাকরূহে
তাহরীমী ও হারাম কাজ থেকে বিরত রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বিশেষ অনুরোধ ‘গবেষণা
কেন্দ্র- মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ উনার পক্ষ থেকে ছাপানো ‘তাহাজ্জুদ
নামায জামাতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ’ হ্যান্ডবিলটা
পুনরায় মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় ছাপিয়ে নেক ছূরতে পাপ কাজ করা থেকে
মুছল্লীদেরকে বিরত রাখুন। কারণ, আমরা প্রতি বছরই রমযান মাস আসলে দেখতে পাই, কিছু
তথাকথিত মাওলানা জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এবং দেশের কিছু কিছু
মসজিদে ঘোষণা দিয়ে ‘ক্বিয়ামুল লাইল’
নামে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়ে থাকে, যা তাদের
অজ্ঞতারই পরিচয় বহন করে।
অতএব, হ্যান্ডবিলটি
ছাপানো হলে আমরাও প্রয়োজনবশত সেখান থেকে ফটোকপি করে প্রচার করে এ নেক কাজে শরিক
হতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
জাওয়াব :
বর্তমান যামানায় কিল্লতে ইলম, কিল্লতে ফাহম অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে কিছু লোক
শয়তানের ওয়াসওয়াসায় পড়ে নেকীর ছূরতে পাপ কাজ করে থাকে। তাদেরকে পাপ থেকে বিরত
রাখার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্যই উল্লেখিত ফতওয়াগুলো
এবং হ্যান্ডবিলগুলো ছাপিয়ে ছিলাম। পুনরায় আপনাদের অনুরোধেও একই কারণে এ সংখ্যায়ও
আপনাদের প্রস্তাবিত হ্যান্ডবিলটা ছাপিয়ে দিলাম-
৭৮৬
নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার
তারাবীহ
নামাজে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম
করে উজরত (পারিশ্রমিক) গ্রহণ করা জায়িয
মহান
আল্লাহ পাক উনার রহমতে “গবেষণা কেন্দ্র,
মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ”-এর কার্যক্রম রীতিমত সম্পাদনের
ফলশ্রুতিতে এই লিফলেট-হ্যান্ডবিল প্রকাশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে
অশেষ শুকরিয়া। কেননা,
গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ
প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিল, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও
রাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে যে সকল ইখতিলাফ বিদ্যমান, শরীয়তী ফায়সালার মাধ্যমে তার
অবসানসহ সকলের সহীহ বুঝ ও সমঝের মাধ্যমে সমস্ত বিদয়াত, বেশরা, হারাম ও
নাজায়েয কাজের মূলোৎপাটন করা। যেন প্রত্যেকে মহান আল্লাহ পাক উনার মতে ও নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে চলে দুনিয়াবী
ও উখরবী কামিয়াবী অর্জন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি ও মহব্বত হাছিল করতে পারে। এই
উদ্দেশ্যে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকার প্রতি সংখ্যায় সব সময়ই “গবেষণা
কেন্দ্রের” তরফ থেকে ফতওয়া ও মাসয়ালা-মাসায়েল প্রকাশ করা হয়। ইতিপূর্বে আমরা “মহিলাদের
জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী” ও “তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া
মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ” শিরোনামে দু’টি
সংক্ষিপ্ত লিফলেট-হ্যান্ডবিল প্রকাশ করেছিলাম এবং এ বিষয়ে পরবর্তীতে মাসিক আল
বাইয়্যিনাত উনার ১১তম ও ১৩তম সংখ্যায় যথাক্রমে ৬৫টি ও ৭৬টি অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য
কিতাবের দলীলের দ্বারা বিস্তারিত ফতওয়া
প্রকাশ করেছি।
বিশ্বের
প্রায় সর্বত্র রমযান মাসে তারাবীহ নামাযের জামায়াতে কুরআন শরীফ খতম করা হয়, এই খতমের
বিণিময়ে বা অন্য যেকোন সময় কুরআন শরীফ খতম করে বা তিলাওয়াতের বিনিময়ে উজরত
(পারিশ্রমিক) গ্রহণ করা সম্বন্ধে অনেকের মধ্যে ইখতিলাফ বিদ্যমান। অর্থাৎ অনেকে
পারিশ্রমিক গ্রহণ জায়িয ও হালাল মনে করেন এবং অনেকে হারাম ও নাযায়িয মনে করেন।
যারা হারাম বলেন,
তারা উলামায়ে মুতাকাদ্দেমীন (পূর্ববর্তী) উনাদের মতকে
প্রাধান্য দেন। যদি উলামায়ে মুতাকাদ্দেমীন উনাদের মতকেই ফতওয়া হিসাবে গ্রহণ করা হয়, তবে তো
সমস্ত দ্বীনি কাজের বিণিময়ে পারিশ্রমিক নেয়া নাযায়িয ও হারাম হবে। যেমন- ইমামতি
করে, মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে, ওয়াজ-নসীহত করে, কিতাব লিখে, দ্বীনি
তালিম-শিক্ষা দিয়ে ইত্যাদি। অবশ্য কেউ যদি পারিশ্রমিক না নেন, সেটা
উনার তাক্বওয়া এবং সুন্নতে নববী। অথচ যারা কুরআন শরীফ খতম/তিলাওয়াত করে পারিশ্রমিক
গ্রহণ হারাম বলেন,
উনারাই অন্যান্য দ্বীনি কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ
করেন, এর দ্বারা উনাদের স্ববিরোধীতা প্রকাশ পায়। অথচ পরবর্তীকালে সরকারী তরফ থেকে
আলেমদের ভাতা প্রদান ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বন্ধ হওয়ায় (যেহেতু খিলাফত ব্যবস্থায়
সরকারী তরফ থেকে আলেমদের জন্য ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা থাকে) এবং মানুষের
দ্বীনদারী/পরহেযগারী ও দ্বীনের খিদমতে আগ্রহ কম থাকায় পরবর্তীতে উলামায়ে
মুতাআখখেরীন (পরবর্তী) উনারা ইজতিহাদ করে ফতওয়া দেন যে, সমস্ত
দ্বীনি কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ জায়িয ও হালাল এবং আরও ফতওয়া দেন যে, শর্ত
সাপেক্ষে অর্থাৎ স্থান ও সময় নির্ধারণ করে দিলে কুরআন শরীফ খতম/তিলাওয়াত এবং
তারাবীর নামাযে কুরআন শরীফ খতম করে উজরত (পারিশ্রমিক) গ্রহণ করা বা দেওয়া জায়েয। এ
মতের উপরই ফতওয়া এবং এটাই নির্ভরযোগ্য দলীলের দ্বারা গ্রহণযোগ্য মত।
যারা
কুরআন শরীফ খতম করে উজরত গ্রহণ করা নাযায়িয বলে থাকেন, তারা
দলীল হিসাবে নিম্নোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফখানা পেশ করে থাকেন- মহান আল্লাহ পাক তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন,
ولا تشتروا با يا تى ثمنا قليلا.
অর্থ : “এবং
তোমরা আমার পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের দ্বারা অল্পমূল্যের বস্তু খরীদ করিওনা।”
অথচ
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সাথে খতমে কুরআন এবং উজরত গ্রহণ করার সাথে কোনই
সম্পর্ক নেই। যেমন এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইন শরীফে
উল্লেখ করা হয়,
ولا تستبد لوا با ياتى التى فى كتابكم
من نعت محمد صلى الله عليه وسلم ئمنا قليلا عوضا يسيرا من الدنيا اى لا تكتموها
خوف فوات ما تأخذونه من سفلتهم. (تفسير جلالين صفه ৯)
অর্থ : “তোমরা
তোমাদের কিতাবে (তাওরাতে) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-সিফত সংক্রান্ত যে আয়াত শরীফসমুহ রয়েছে, ঐগুলিকে
দুনিয়ার সামান্য বস্তুর বিনিময়ে পরিবর্তন করোনা। অর্থাৎ তোমরা দরিদ্রদের নিকট হতে
যে উপহার গ্রহণ করে থাক,
ওটা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় আয়াত শরীফগুলি গোপন করোনা।” (তাফসীরে
জালালাইন শরীফ পৃষ্ঠা-৯)
মূলতঃ
মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইহুদীদেরকে তাওরাত শরীফ
উনার আয়াতের অর্থ পরিবর্তন করে সামান্য অর্থ গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। এর দ্বারা
এটাই প্রমাণিত হয় যে,
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সাথে কুরআন শরীফ খতম করে উজরত
গ্রহণ করার কোনই সম্পর্ক নেই। অনুরূপভাবে তাফসীরে কবীর, বায়জাবী, রুহুল
বয়ান, রুহুল মায়ানী,
সিরাজুম মুনীর ইত্যাদি তাফসীর গ্রন্থেও উপরোক্ত বক্তব্য পেশ
করা হয়েছে।
তবে যদি
কেউ সামান্য অর্থের বিণিময়ে হালালকে হারাম অথবা হারামকে হালাল বলে এবং দুনিয়াবী
স্বার্থ বিনষ্ট হওয়ার আশংকায় সত্যকে গোপন করে, তাদের জন্যও উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ
উনার হুকুম প্রযোজ্য। আবার কেউ কেউ বলে থাকেন, উলামায়ে মুতাআখখেরীন উনারা আযান, হজ্ব, ইমামতী
এবং কুরআন শরীফ ও ফিক্বাহ শিক্ষা দিয়ে
উজরত গ্রহণ করা জায়িয বলেছেন, কিন্তু
পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত অর্থাৎ খতম করে উজরত
গ্রহণ করা নাযায়িয বলেছেন। মূলতঃ তাদের উক্ত বক্তব্যে স্ববিরোধীতা প্রকাশ
পায় যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মনগড়া। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে যে, আযান, হজ্ব, ইমামতী
এবং কুরআন শরীফ ও ফিক্বাহ শিক্ষা দিয়ে যেরূপ উজরত গ্রহণ করা জায়িয, তদ্রুপ
কুরআন শরীফ তিলাওয়াত অর্থাৎ খতম করেও উজরত
গ্রহণ করা জায়িয। যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয় –
ان
المفتى به جوز الاخذ على القرائة. (بحرالرأق صفه ২২৮)
অর্থ : “পবিত্র
কুরআন শরীফ পড়ে উজরত গ্রহণ করা জায়িয হওয়া, ফতওয়া মতে গ্রহণযোগ্য।” (বাহরুর
রায়েক ৫ম জিঃ পৃ্রঃ২২৮)
মূলতঃ
উলামায়ে মুতাকাদ্দেমীন উনাদের নিকট উল্লিখিত সকল বিষয় অর্থাৎ আযান, হজ্ব, জ্বিহাদ, ইমামতী, পবিত্র
কুরআন শরীফ ও ফিক্বাহ শিক্ষা দিয়ে এবং কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা নাযায়িয ছিল। কিন্তু উলামায়ে
মুতাআখখেরীন উনারা উল্লেখিত বিষয়ে উজরত গ্রহণ করা জায়িয বলেছেন। এ প্রসঙ্গে কিতাবে
উল্লেখ রয়েছে যে,
لا
تجوز وتبطل الاجارة عند المتقدمين على الطاعات كالاذان والحج والا مامة وتعليم
القران والفقه وقرائنهما ويفتى اليوم بجواو الاجارة على هذه الطاعات لفتور الر
غبات ومنع العظيات.
অর্থ : “আযান, হজ্ব, ইমামতী, পবিত্র
কুরআন শরীফ ও ফিক্বাহ শিক্ষাদান এবং কুরআন শরীফ ও ফিক্বাহ পাঠ করে উজরত
গ্রহণ করা ওলামায়ে মুতাকাদ্দেমীন (পূর্ববর্তী আলেম) উনাদের নিকট নাযায়িয ও
বাতিল। বর্তমানে দান-খয়রাতে আগ্রহ কম বা বন্ধ হওয়ার কারণে ওলামায়ে মুতাআখখেরীন
(পরবর্তী আলেম)গণ উল্লেখিত বিষয়ে
উজরত গ্রহণ করা জায়েয ফতওয়া
দিয়েছেন।” (মুলতাকুল আবহুর,
২য় জিঃ পৃষ্ঠা-৩৮৪)
উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, আযান, ইমামতী
ইত্যাদির ন্যায় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত গ্রহণ করাও উলামায়ে মুতাকাদ্দিমীন উনাদের
নিকট নাযায়িয। আর উলামায়ে মুতাআখখেরীন উনাদের নিকট জায়িয। এখন আমরা কোন মত গ্রহণ
করবো? মূলতঃ আমরা উলামায়ে মুতাআখখেরীন উনাদের মতই গ্রহণ করবো, কেননা
এটাই গ্রহণযোগ্য মত এবং এটার উপরই ফতওয়া। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়,
اختلفوا
فى الاستيجار على قرأة القرأن قال بعضهم لا يجوز وقال بعصهم يجوز وهوالمختار.
(الجوهرة النيرة)
অর্থ : “কুরআন
শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করার মধ্যে মতভেদ (ইখতিলাফ) রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, নাযায়িয
এবং কেউ কেউ বলেন জায়িয,
তবে দ্বিতীয় মতটিই গ্রহণযোগ্য মত।” (জাওহারাতুন
নাইয়্যারাহ পুরাতন ছাপা)
কেননা
মতভেদযুক্ত মাসয়ালায় যেটাকে
مغتى به- وهوالمغتار- عليه الفتاوى.
ইত্যাদি
দ্বারা প্রাধান্য দেয়া হবে,
সেটার উপরই আমল করতে হবে এবং সেটার উপরই ফতওয়া দিতে হবে, এর
বিপরীত করা হারাম। (উকুদে রসমুল মুফতীহ-তনকীহ)
কাজেই
যেহেতু কুরআন শরীফ খতম করে উজরত গ্রহণ করা
জায়িয। এটাকে وهوالمختار- مفتى به ইত্যাদি শব্দ দ্বারা প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, সেহেতু
এর উপরই আমল করতে হবে এবং ফতওয়া দিতে হবে।
তবে
মুহাক্কিক আলেমগণ কুরআন শরীফ খতম করে উজরত গ্রহণ করা জায়েয হওয়ার ব্যাপারে একটি
শর্ত আরোপ করেছেন- “যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ খতম করবে, তাকে সময় এবং স্থান নির্ধারণ করে
দিতে হবে। যদি সময় এবং স্থান নির্ধারণ করে দেয়, তবে তার জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ খতম
করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয হবে।” এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়,
وعبادات
كه سبب تعيين مدت يا تخصيص مكان مباح ميشوند نيز برانها اجرت كر فتن دائزست- مشل
تعليم قران بطفل كسى درخانة او- ازصبح تاشام. (تفسبر عزيزى)
অর্থ : “সময় ও
স্থান নির্ধারণ করাতে ইবাদত কাজগুলোও মোবাহ হয়ে যায়, এ সকল ইবাদতের উজরত গ্রহণ করাও জায়িয। যেমন- সকাল হতে সন্ধ্যা
পর্যন্ত কারো ঘরে থেকে তার সন্তানকে শিক্ষা দান করা।” (তাফসীরে
আযীযী)
উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, কেউ যদি তারাবীর নামাযে হোক অথবা
ইছালে সাওয়াব উপলক্ষেই হোক না কেন, হাফিয ছাহেবকে দিয়ে কুরআন শরীফ
খতম করায় এবং সময় ও স্থান নির্ধারণ করে দেয়, তবে হাফিয ছাহিবের জন্য কুরআন
শরীফ খতম করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয।
এছাড়া
আলমগীরী, তাহতাবী, সিরাজুল ওহহাজ ইত্যাদি কিতাবেও সময় ও স্থান নির্ধারণ করে কুরআন শরীফ খতম করে
উজরত গ্রহণ করা জায়িয বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, উপরোক্ত শর্ত ছাড়াও যদি হাফিয
ছাহিবকে ইমাম হিসাবে নিযুক্ত করা হয় এবং সে তারাবীহ-এর নামাযে কুরআন শরীফ খতম করে, তবে
ইমামতী করার কারণে তার জন্য উজরত গ্রহণ করা জায়িয। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)
অথচ
আজকাল পৃথিবীর বহু জায়গায় রমযান মাসে তারাবীর নামাযে কুরআন শরীফ খতম করে হাফিয
ছাহেবদের উজরত (পারিশ্রমিক) দেয়া নাযায়িয মনে করে থাকে। মূলতঃ এটা তাদের অজ্ঞতা ও
জিহালত। কাজেই প্রত্যেকের উচিত হাফিয ছাহিবদের উজরত যথাযথ পরিশোধ করে দেয়া। কারণ
কুরআন শরীফ খতম করে উজরত গ্রহণ করা বা দেয়া জায়িয।
এছাড়াও
নিম্নোক্ত কিতাবসমূহে কুরআন শরীফ খতম করে উজরত গ্রহণ করা জায়েয বলা হয়েছে। যেমন-
(১) দুররুল মোখতার,
(২) আশবাহু ওয়ান নাযায়ের, (৩) মাজমাউল ফতওয়া, (৪) শরহে
অহবানিয়া, (৫) ফতওয়ায়ে কাজরুনী,
(৬) ফতওয়ায়ে আলী আফেন্দী, (৭) ফতওয়ায়ে ফয়জী, (৮)
তাফসীরে রুহুল বয়ান,
(৯) মাদারেজুন নবুওওয়ত, (১০) ফতওয়ায়ে আযীযীয়া, (১১)
হাদীফায়ে নদীয়া,
(১২) রোবউল ইফাদা, (১৩) ইয়াতীমাতুদ দোহর, (১৪)
তাতার খানিয়া, (১৫) ফতওয়ায়ে হানূতী,
(১৬) রদ্দুল মোহতার, (১৭) ফতওয়ায়ে আবূ সাঈদ ইমাদী, (১৮)
বাহজাতুল ফতওয়া,
(১৯) ফতওয়ায়ে আব্দুর রহীম আফেন্দি (২০) রাফউলগিশাওয়া, (২১) হাশিয়ায়ে
মিসকীন, (২২) জামিউর রুমূজ (২৩) ফতওয়ায়ে বরকতীয়া ইত্যাদি আরো অনেক কিতাবেই কুরআন শরীফ
খতম করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয বলা হয়েছে। ফতওয়ার কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় সংক্ষিপ্ত
করা হলো এবং সকল কিতাবের ইবারতসমূহ পেশ করা সম্ভব হলো না। ইনশাআল্লাহ পরবর্তীতে
আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত ও আরো অধিক দলীল-আদীল্লার
ভিত্তিতে ফতওয়া প্রকাশ করার আশা রাখি।
সুতরাং
উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য দলীল-আদীল্লার ভিত্তিতে এটাই প্রমাণিত হলো যে, উলামায়ে
মুতাআখখেরীন উনাদের নিকট কুরআন শরীফ খতম করে বা তারাবীর নামাযে কুরআন শরীফ খতম করে
উজরত (পারিশ্রমিক) গ্রহণ করা জায়িয, যদি সময় এবং স্থান নির্ধারণ করে
দেয়া হয় অথবা ইমাম হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। এটাই গ্রহণযোগ্য মত এবং এটার উপরই ফতওয়া
দেয়া হয়েছে, এর বিপরীত কোন মতই গ্রহণযোগ্য নয়।
কাজেই
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে হক্বকুল্লাহ ও হক্বকুলইবাদ যথাযথ পালন করার
তাওফিক দান করেন এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, পবিত্র
ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের উপর পরিপূর্ণ কায়িম থাকার তাওফিক দান করেন (আমীন)।
0 Comments:
Post a Comment