মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার বেমেছাল ফযীলত মুবারক-পর্ব-১৪
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ হচ্ছেন সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আমল মুবারক। সুবহানাল্লাহ! স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সৃষ্টির শুরু থেকে অদ্যবধি দায়িমীভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে যাচ্ছেন এবং অনন্তকাল যাবৎ পালন করতেই থাকবেন। সুবহানাল্লাহ! তাই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার চেয়ে বড় এবং ফযীলতপূর্ণ আর কোনো আমল নেই। সুবহানাল্লাহ! বান্দার তরফ থেকে সর্বশেষ মাক্বাম হচ্ছে আবদিয়াতের মাক্বাম আর মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে সর্বোচ্চ, সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ মাক্বাম মুবারক হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মাক্বাম মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তাহলে এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করলে বান্দা-বান্দী, উম্মত, জিন-ইনসান কত বড় নিয়ামত লাভ করবে এবং তা পালন করার কত বেমেছাল ফযীলত মুবারক, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! নিম্নে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার বেমেছাল ফযীলত মুবারক সম্পর্কে হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কিছু ক্বওল শরীফ এবং একখানা বিশেষ ঘটনা মুবারক উল্লেখ করা হলো-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে খাদ্যাভাব, মহামারী, অগ্নিকান্ড, ডুবে মরা এবং চুরি-ডাকাতি ইত্যাদি বালা-মুছীবত থেকে মুক্তি লাভ:
সুলত্বানুল আরিফীন হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
مَا مِنْ مُسْلِمٍ قَرَاَ فِىْ بَيْتِهٖ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلَّا رَفَعَ اللهُ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى اَلْقَحْطَ وَالْوَبَاءَ وَالْحَرْقَ وَالْغَرْقَ وَالْاٰفَاتِ وَالْبَلِيَّاتِ وَالْبُغْضَ وَالْـحَسَدَ وَعَيْنَ السُّوْءِ وَاللُّصُوْصَ عَنْ اَهْلِ ذٰلِكَ الْبَيْتِ فَاِذَا مَاتَ هَوَّنَ اللهُ عَلَيْهِ جَوَابَ حَضْرَتْ مُنْكَرٍ وَّنَكِيْرٍ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ وَيَكُوْنُ فِىْ مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيْكٍ مُّقْتَدِرٍ
অর্থ: “যখন কোনো সম্মানিত মুসলমান তিনি নিজ বাড়ীতে সম্মানিত ও পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করেন বা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেন, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি অবশ্যই সেই বাড়ীর অধিবাসীগণ উনাদের থেকে খাদ্যাভাব, মহামারী, অগ্নিকান্ড, ডুবে মরা, বালা-মুছীবত, হিংসা-বিদ্বেষ, কুদৃষ্টি এবং চুরি-ডাকাতি ইত্যাদি উঠিয়ে নেন। যখন ঐ ব্যক্তি তিনি ইন্তিকাল করেন, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার জন্য হযরত মুনকার-নাকীর আলাইহিমাস সালাম উনাদের সুওয়াল-জাওয়াব সহজ করে দেন। আর উনার অবস্থান হয় মহান আল্লাহ পাক উনার নিকটে ছিদক্বের মাক্বামে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম, আল ওয়াসাইল ফী শরহিশ শামাইল, ই‘আনাতুত্ ত্বালিবীন ৩/৪১৫, কিতাবু ফাদ্বায়িলি মাওলিদিন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪ নং পৃষ্ঠা, রিসালাতু মাওলিদিন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১১ নং পৃষ্ঠা ইত্যাদি)
অত্যন্ত মর্যাদা সম্পন্ন আমল মুবারক, যা কখনও বৃথা যাবে না:
হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
اے اﷲ! میرا کوئی عمل ایسا نہیں ہے جسے تیرے دربار میں پیش کرنے کے لائق سمجھوں میرے تمام اعمال میں فسادِ نیت موجود رہی ہے البتہ مجھ حقیر فقیر کا ایک اعمل صرف تیری ذات پاک کی عنایت کی وجہ سے بہت شاندار ہے اور وہ یہ ہے کہ مجلس میلاد کے موقع پر میں کھڑے ہوکر سلام پڑھتا ہوں اور بہت ہی عاجزی و انکساری محبت و خلوص کے ساتھ حبیب پاک صلی اللہ علیہ وسلم پر درود وسلام بھیجتا ہوں۔ اے اﷲ! وہ کون سا مقام ہے جہاں میلاد مبارک سے زیادہ تیری خیروبرکت کا نزول ہوتا ہے۔ اس لئے اے ارحم الراحمین! مجھے پکا یقین ہے کہ میرا یہ عمل کبھی بےکار نہ جائے گا بلکہ یقینا تیری بارگاہ میں قبول ہوگا اور جو کوئی درود سلام پڑھے اور اس کے ذریعہ دعا کرے وہ کبھی مسترد نہیں ہوسکتی
অর্থ: “আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আমার এমন কোনো আমল নেই; যা আপনার মহান দরবার শরীফ-এ পেশ করার যোগ্য মনে করি। আমার সমস্ত আমলই অশুদ্ধ নিয়ত ও ভুল-ত্রুটিতে পরিপূর্ণ। কিন্তু আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র যাত পাক উনার অনুগ্রহে আমি নগন্য ও অধমের একখানা আমল মুবারক অত্যন্ত মর্যাদা সম্পন্ন। আর তা হচ্ছেন এই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র মীলাদ শরীফ মজলিস উনার সময় আমি দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করি এবং অত্যন্ত আজিযী-ইনকেসারী (অনুনয়-বিনয়), মুহব্বত ও খুলূছিয়াতের সাথে আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ও পবিত্র ছলাত শরীফ এবং সালাম শরীফ পেশ করি। সুবহানাল্লাহ! আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! এমন কোন্ স্থান আছে যেখানে সম্মানিত ও পবিত্র মীলাদ শরীফ অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক উনার চেয়ে অধিক খায়ের-বরকত নাযিল হয়? হে আরহামুর রাহিমীন! এ কারণেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমার এই আমল মুবারক কখনও বৃথা যাবে না; বরং অবশ্যই আপনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ ক্ববূল হবেন। আর যে ব্যক্তি সম্মানিত ছলাত মুবারক ও সালাম শরীফ পাঠ করবেন অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করবেন এবং উনাকে উছীলা দিয়ে দু‘আ করবেন, তিনি কখনও মাহরূম হবেন না। অর্থাৎ উনার সমস্ত দু‘আ অবশ্যই ক্ববূলযোগ্য।” সুবহানাল্লাহ! (আখবারুল আখইয়ার ৪১১ নং পৃষ্ঠা)
ছিদ্দীক্ব, শহীদ ও ছালেহ্ উনাদের সাথে হাশর-নশর:
কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,
قَالَ حَضْرَتْ اَلْاِمَامُ الْيَافِعِىُّ الْيَمَنِىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ مَنْ جَمَعَ لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِخْوَانًا وَهَيَّاَ طَعَامًا وَاَخْلٰى مَكَانًا وَعَمِلَ اِحْسَانًا وَصَارَ سَبَبًا لِقِرَاءَةِ مَوْلِدِ الرَّسُوْلِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَحَسُنَ اُولٰئِكَ رَفِيْقًا وَيَكُوْنُ مَعَهُمْ فِىْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ
অর্থ: “হযরত ইমাম ইয়াফিয়ী ইয়ামানী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ ৬৯৬ হিজরী শরীফ) তিনি বলেন, মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে যে ব্যক্তি খুশি মুবারক প্রকাশ করে লোকজন একত্রিত করবেন, খাদ্য প্রস্তুত করবেন, জায়গা নির্দিষ্ট করবেন এবং উত্তম আমল করবেন (অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছলাত মুবারক পাঠ করবেন, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছানা-ছিফত মুবারক করবেন), মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই ব্যক্তি উনাকে হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ ও ছালেহ্ উনাদের সাথে উঠাবেন। উনারাই উত্তম সঙ্গী। আর তিনি সম্মানিত জান্নাতুন না‘ঈম মুবারক উনার মধ্যে উনাদের সাথী হবেন।” সুবহানাল্লাহ! (ইয়ানাতুত্ ত্বালিবীন ৩/৪১৫, কিতাবু ফাদ্বায়িলি মাওলিদিন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৩ নং পৃষ্ঠা, রিসালাতু মাওলিদিন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৫ নং পৃষ্ঠা ইত্যাদি)
মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত-বরকত প্রাধান্য বিস্তার করেন, শান্তি-নিরাপত্তা বিরাজমান থাকে এবং তাৎক্ষণিকভাবে মক্বছূদ হাছিল হয়:
হযরত ইমাম কুস্ত¡লানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারা বলেন,
وَلَا زَالَ اَهْلُ الاِسْلَامِ يَحْتَفِلُوْنَ بِشَهْرِ مَوْلِدِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَعْمَلُوْنَ الْوَلَائِمَ وَيَتَصَدَّقُوْنَ فِىْ لَيَالِيْهِ بِاَنْوَاعِ الصَّدَقَاتِ وَيَظْهَرُوْنَ السُّرُوْرَ وَيَزِيْدُوْنَ فِى الْمَبَرَّاتِ وَيَعْتَنُوْنَ بِقِرَاءَةِ مَوْلِدِهِ الْكَرِيْمِ وَيَظْهَرُ عَلَيْهِمْ مِنْ بَرَكَاتِهٖ كُلِّ فَضْلٍ عَمِيْمٍ وَمِمَّا جُرِّبَ مِنْ خَوَاصِّهٖ اَنَّهٗ اَمَانٌ فِىْ ذٰلِكَ الْعَامِ وَبُشْرٰى عَاجِلَةٌ نَبِيْلَ الْبُغْيَةِ والْمَرَامِ فَرَحِمَ اللهُ اِمْرَاً اِتَّخَذَ لَيَالِىْ شَهْرِ مَوْلِدِهِ الْمُبَارَكِ اَعْيَادًا لِيَكُوْنَ اَشَدَّ عِلَّةٍ عَلٰى مَنْ فِىْ قَلْبِهٖ مَرَضٌ وَعِنَادٌ
অর্থ: “সম্মানিত মুসলমান উনারা সবসময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাস মুবারক-এ মাহফিল মুবারক করে আসছেন। সেই উপলক্ষে উনারা ওলীমা মুবারক অর্থাৎ বিশেষ মেহমানদারী মুবারক উনার আয়োজন করেন এবং ঐ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাস মুবারক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রাত্র মুবারক-এ বিভিন্ন ধরণের দান-ছদক্বাহ্ করেন, হাদিয়া-তোহফা দেন। আর খুশি মুবারক প্রকাশ করে নেক কাজ বৃদ্ধি করেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মাওলিদ শরীফ পাঠের বিষয়ে গুরুত্ব দেন, মনোযোগ দেন। যার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত-বরকত, সমস্ত প্রকার ফযল-করম মুবারক (মাওলিদ শরীফ পাঠকারী অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনকারী) উনাদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করেন। সুবহানাল্লাহ! আর সম্মানিত ও পবিত্র মীলাদ শরীফ বা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক করার অনেক বৈশিষ্ট্য মুবারক উনাদের মধ্য থেকে একটি পরীক্ষিত বৈশিষ্ট্য মুবারক হচ্ছেন এই যে, ঐ বছর শান্তি-নিরাপত্তা বিরাজমান থাকে এবং তা মহৎ উদ্দেশ্য হাছিল করার তাৎক্ষণিক সুসংবাদ। অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার মাধ্যমে সমস্ত নেক মক্বছূদ তাৎক্ষণিকভাবে হাছিল হয়। কাজেই (আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরজী পেশ করছি-) মহান আল্লাহ পাক তিনি ঐ ব্যক্তির উপর সম্মানিত রহমত মুবারক বর্ষণ করুন, যেই ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাস মুবারক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রাত্রসমূহ উনাদেরকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করেছেন বা করবেন। যেন রোগগ্রস্ত ও বিরোধিতাপূর্ণ অন্তরসমূহে কঠিন যন্ত্রণা অনুভূত হয়।” (আল মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ্ ১/৮৯, শরহুয যারক্বানী ১/২৬১-২৬২, তারীখুল খমীস ১/২২৩, মা ছাবাতা বিস্ সুন্নাহ্ ৮৩ নং পৃষ্ঠা ইত্যাদি)
বিশিষ্ট বুযূর্গ আল্লামা হযরত ইমাম ইবনে জামা‘আহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আমল মুবারক এবং প্রত্যাশা:
আল্লামা হযরত ইমাম শামসুদ্দীন সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৯০২ হিজরী শরীফ) তিনি ৭ম হিজরী শতকের বিশিষ্ট বুযূর্গ, ছূফী, মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবূব ওলী আল্লামা হযরত ইমাম বুরহানুদ্দীন ইবরাহীম ইবনে জামা‘আহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ ৫৯৬ হিজরী শরীফ : বিছাল শরীফ ৬৭৫ হিজরী শরীফ) উনার সম্পর্কে বলেন,
كَانَ يَعْمَلُ طَعَامًا فِى الْمَوْلِدِ النَّبَوِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيُطْعِمُ النَّاسَ وَيَقُوْلُ لَوْ تَمَكَّنْتُ عَمِلْتُ بِطُوْلِ الشَّهْرِ كُلِّ يَوْمٍ مَوْلِدًا
অর্থ: “আল্লামা হযরত ইমাম বুরহানুদ্দীন ইবরাহীম ইবনে জামা‘আহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে খাদ্য পাকাতেন এবং মানুষদেরকে মেহমানদারী করাতেন। আর তিনি বলতেন, যদি আমি সক্ষম হতাম অর্থাৎ আমার যদি সামর্থ্য থাকতো, তাহলে আমি সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ) মাস মুবারক উনার প্রতিদিন মাওলিদ শরীফ অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক উনার ইন্তিজাম করতাম।” সুবহানাল্লাহ! (আত তুহ্ফাতুল লাত্বীফাহ্ ফী তারীখিল মাদীনাতিশ শারীফাহ্ ১/৯১, আল আজূবাতুল মারদ্বিয়্যাহ্ ৩/১১১৯)
আল্লামা হযরত মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রত্যাশা:
আল্লামা হযরত মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ১০১৪ হিজরী শরীফ) তিনি বলেন,
كَانَ يَعْمَلُ طَعَامًا فِى الْمَوْلِدِ النَّبَوِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيُطْعِمُ النَّاسَ وَيَقُوْلُ لَوْ تَمَكَّنْتُ عَمِلْتُ بِطُوْلِ الشَّهْرِ كُلِّ يَوْمٍ مَوْلِدًا قُلْتُ وَاَنَا لَمَا عَجَزْتُ عَنِ الضِّيَافَةِ الصُّوْرِيَّةِ كَتَبْتُ هٰذِهِ الْاَوْرَاقَ لِتَصِيْرَ ضِيَافَةً مَعْنَوِيَّةً نُوْرِيَّةً مُسْتَمِرَّةً عَلٰى صَفَحَاتِ الدَّهْرِ غَيْرَ مُخْتَصَّةٍ بِالسَّنَةِ وَالشَّهْرِ وَسَمَّيْتُهٗ بِالْمَوْرِدِ الرَّوِىِّ فِى الْمَوْلِدِ النَّبَوِىِّ
অর্থ: “আল্লামা হযরত ইমাম বুরহানুদ্দীন ইবরাহীম ইবনে জামা‘আহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে খাদ্য পাকাতেন এবং মানুষদেরকে মেহমানদারী করাতেন। আর তিনি বলতেন, ‘যদি আমি সক্ষম হতাম অর্থাৎ আমার যদি সামর্থ্য থাকতো, তাহলে আমি সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ) মাস মুবারক উনার প্রতিদিন মাওলিদ শরীফ অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক উনার ইন্তিজাম করতাম।’ সুবহানাল্লাহ! (হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,) আমি বলি- যেহেতু আমি বাহ্যিক মেহমানদারীর ব্যবস্থা করতে অক্ষম, তাই আমি (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাওলিদ শরীফ অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার ফযীলত মুবারক সম্বলিত) এই পৃষ্ঠাসমূহ লিখলাম। অবশ্যই এই পৃষ্ঠাসমূহ বাতিনী নূরানী মেহমানদারীর ব্যবস্থা করবেন; যা কোনো বছর এবং মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট হওয়া ব্যতীত যুগ-যুগান্তরের পাতায় স্থায়ী থাকবেন। আর আমি (এই সম্মানিত কিতাব মুবারক) উনার নামকরণ করেছি- ‘আল মাওরিদুর রওয়ী ফিল মাওলিদিন নাবাওয়ী’ অর্থাৎ মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়ে তৃষ্ণা-নিবারক ঘাট।” সুবহানাল্লাহ! (আল মাওরিদুর রওয়ী ফিল মাওলিদিন নাবাওয়ী)
সর্বোচ্চ নৈকট্য মুবারক এবং বেমেছাল মহাসম্মানিত নিসবত মুবারক ও মর্যাদা মুবারক উনাদের বহিঃপ্রকাশ:
ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, ছাহিবে নেয়ামত, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ১৪৪৩ হিজরী শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রজবুল হারাম শরীফ চতুর্থ তলা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পবিত্র খানকাহ্ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে ‘ছানী ইছনাঈন বা দুইজনের দ্বিতীয়’ বলা হয়েছে। এটা সম্মানিত ও পবিত্র ছাওর গুহা মুবারক-এ অবস্থান করা অবস্থায়। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ثَانِىَ اثْنَيْنِ اِذْ هُمَا فِى الْغَارِ اِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِهٖ لَا تَحْزَنْ اِنَّ اللهَ مَعَنَا
‘দুইজনের দ্বিতীয়। যখন উনারা সম্মানিত (ছাওর) গুহা মুবারক-এ অবস্থান মুবারক করছিলেন, তখন তিনি উনার ছাহিব অর্থাৎ সঙ্গী, ছাহাবী, খাদিম উনাকে বললেন, আপনি চিন্তিত হবেন না, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সাথে রয়েছেন।’ সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৪০)
মহান আল্লাহ পাক তিনি এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে দু’জনের দ্বিতীয় বলেছেন। সুবহানাল্লাহ! যদিও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বিতীয় কেউ নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি যেমন খ¦ালিক্ব মালিক রব হিসেবে একক; তেমনিভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বায়িম মাক্বাম হিসেবে একক। উনার সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন; এছাড়া সমস্ত মর্যাদা-মর্তবা, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক সমস্ত কিছুর মালিক হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! তারপরেও এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ছাওর গুহা মুবারক-এ অবস্থানরত অবস্থায় সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বিতীয় বলা হয়েছে।
আর যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা আমাকে বলেছেন, কেউ যদি হাক্বীক্বীভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতে পারেন, তাহলে উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম উনার অর্থাৎ উনাদের দুজনের পর উনাকে তৃতীয় করা হবে। অর্থাৎ উনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাকে হাদিয়া করা হবে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু উনার অর্থাৎ উনাদের পরেই উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাক্বাম মুবারক হাদিয়া মুবারক করা হবে।” সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার কতো বেমেছাল ফযীলত মুবারক সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, ছাহিবে নেয়ামত, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে অনন্তকালব্যাপী জারীকৃত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক উনার মধ্যে মাল-জান, সময় সমস্ত কিছু দিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র গোলামী মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
0 Comments:
Post a Comment