মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার বেমেছাল ফযীলত মুবারক-পর্ব-১
কুল কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বোত্তম ইবাদত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْـمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْـرٌ مِّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ
অর্থ: “আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সবাইকে জানিয়ে দিন, তারা যে সম্মানিত ফযল মুবারক এবং সম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে আপনাকে লাভ করতে পেরেছে, সেজন্য তারা যেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ অর্থাৎ খুশি মুবারক প্রকাশ করে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে। সুবহানাল্লাহ! এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ অর্থাৎ খুশি মুবারক প্রকাশ করা, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা সকলের জিন্দেগীর সমস্ত ইবাদত-বন্দেগী থেকেও সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বোত্তম ইবাদত।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ইঊনুস শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)
স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সৃষ্টির শুরু থেকে অদ্যবধি দায়িমীভাবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে যাচ্ছেন এবং অনন্তকাল যাবৎ পালন করতেই থাকবেন
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ اللهَ وَمَلٰٓئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِـىِّ
অর্থ: “নিশ্চয়ই যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার সকল সম্মানিত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দায়িমীভাবে সম্মানিত ছলাত মুবারক পাঠ করে যাচ্ছেন অর্থাৎ উনার সম্মানার্থে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে যাচ্ছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
মহান আল্লাহ পাক তিনি তো কোনো আমল করেন না; কিন্তু এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ থেকে প্রমাণিত যে, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সৃষ্টির শুরু থেকে অদ্যবধি দায়িমীভাবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে যাচ্ছেন এবং অনন্তকাল যাবৎ পালন করতেই থাকবেন। সুবহানাল্লাহ! তাই সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার চেয়ে বড় ও ফযীলতপূর্ণ আর কোনো আমল নেই। বান্দার তরফ থেকে সর্বশেষ মাক্বাম হচ্ছে আবদিয়াতের মাক্বাম আর মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে সর্বোচ্চ, সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ মাক্বাম মুবারক হচ্ছেন সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মাক্বাম মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তাহলে এই সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করলে বান্দা-বান্দী, উম্মত, জিন-ইনসান কত বড় নিয়ামত লাভ করবে এবং তা পালন করার কত বেমেছাল ফযীলত মুবারক, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! নি¤েœ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার বেমেছাল ফযীলত মুবারক সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করা হলো-
১) স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আখাছ্ছুল খাছ নিসবত মুবারক লাভ
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَـمًا فِـىْ مَوْلِدِىْ كَانَ رَفِيْقِىْ فِـى الْـجَنَّةِ
অর্থ: “যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে এক দিরহাম (প্রায় ৪০০ টাকা) খরচ করবেন, তিনি সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মধ্যে আমার বন্ধু হবেন অর্থাৎ আমার আখাছ্ছুল খাছ বিশেষ নিসবত মুবারক-এ থাকবেন।” সুবহানাল্লাহ!
২) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ অবস্থান মুবারক
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِىْ كَانَ مَعِىَ فِـى الْـجَنَّةِ
অর্থ: “যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে সম্মান করবেন, তিনি সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মধ্যে আমার সাথে অবস্থান মুবারক করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে সম্মান করার একটি বিশেষ মাধ্যম হচ্ছেন- খরচ করা। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং কেউ যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে তা’যীম-তাকরীম মুবারক করেন, সম্মান করেন, উনার সম্মানার্থে খরচ করেন, তিনি সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে অবস্থান মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ!
৩) সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে মেহমানদারী করার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দায়িমীভাবে সম্মানিত শাফা‘য়াত মুবারক লাভ
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِىْ وَهُوَ لَيْلَةُ اثْنَـىْ عَشَرَ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ بِاتِّـخَاذِهٖ فِيْهَا طَعَامًا كُنْتُ لَهٗ شَفِيْعًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِ
অর্থ: “যে ব্যক্তি খাদ্য খাওয়ানোর মাধ্যমে, মেহমানদারী করার মাধ্যমে আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তারীখ মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই রবী‘উল আউওয়াল শরীফ) রাত্র মুবারক (ও দিবস মুবারক) উনাকে সম্মান করবেন, আমি ক্বিয়ামতের দিন অর্থাৎ দায়িমীভাবে সবসময় উনার জন্য সুপারিশ করবো।” সুবহানাল্লাহ! (নাফহাতুল আম্বরিয়া ৮ নং পৃষ্ঠা, মাদারিজুস সউদ ১৫ নং পৃষ্ঠা, তালহীনুছ ছাননাজ ৫ নং পৃষ্ঠা ইত্যাদি)
৪) মাত্র এক দিরহাম খরচ করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় এক পাহাড় পরিমাণ লাল স্বর্ণ দান করার সমপরিমাণ ফযীলত মুবারক লাভ
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِىْ وَهُوَ لَيْلَةُ اثْنَـىْ عَشَرَ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ بِاتِّـخَاذِهٖ فِيْهَا طَعَامًا كُنْتُ لَهٗ شَفِيْعًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ اَنْفَقَ دِرْهَـمًا فِـىْ مَوْلِدِىْ اِكْرَامًا فَكَاَنَّـمَا اَنْفَقَ جَبَلًا مِّنْ ذَهَبٍ اَحْـمَرَ فِـى الْيَتَامٰى فِـىْ سَبِيْلِ اللهِ
অর্থ: “যে ব্যক্তি খাদ্য খাওয়ানোর মাধ্যমে, মেহমানদারী করার মাধ্যমে আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তারীখ মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই রবী‘উল আউওয়াল শরীফ) রাত্র মুবারক (ও দিবস মুবারক) উনাকে সম্মান করবেন, আমি ক্বিয়ামতের দিন অর্থাৎ দায়িমীভাবে সবসময় উনার জন্য সুপারিশ করবো। সুবহানাল্লাহ! আর যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার সম্মানার্থে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে অত্যান্ত মুহব্বতে আদবের সাথে এক দিরহাম (চার আনা রূপা অথবা সমপরিমাণ অর্থ-সম্পদ অর্থাৎ প্রায় ৪০০ টাকা) খরচ করবেন, ঐ ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় ইয়াতীমদেরকে এক পাহাড় পরিমাণ লাল স্বর্ণ দান করার ফযীলত মুবারক লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (নেয়ামতে কুবরা উর্দূ ১১ পৃষ্ঠা)
তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে খরচ করলে কতো বেমেছাল ফযীলত মুবারক লাভ করা যায়, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!
৫) মাত্র এক দিরহাম খরচ করার মাধ্যমে ৭০টি সম্মানিত মক্ববূল হজ্জ মুবারক আদায় করার সমপরিমাণ ফযীলত মুবারক লাভ
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন-
عَنْ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ اَلصِّدِّيْقِ الْاَكْبَـرِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَـمًا فِـى الْـمَوْلِدِ فَكَاَنَّـمَا حَجَّ سَبْعِيْـنَ حَجَّةً
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে এক দিরহাম (প্রায় ৪০০ টাকা) খরচ করবেন, তিনি সত্তরটি হজ্জ মুবারক আদায় করার সমপরিমাণ ফযীলত মুবারক লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
৬) মা’ছূম হওয়া, রহমতের সমস্ত দরজা খুলে যাওয়া, শাফায়াত মুবারক লাভ এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের অনুরূপ নাজাত লাভ করা
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّهٗ مَرَّ مَعَ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلـٰى بَيْتِ حَضْرَتْ عَامِرِ ۣ الْاَنْصَارِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَكَانَ يُعَلِّمُ وَقَائِعَ وِلَادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاَبْنَائِهٖ وَعَشِيْرَتِهٖ وَيَقُوْلُ هٰذَا الْيَوْمَ هٰذَا الْيَوْمَ فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلامُ اِنَّ اللهَ فَتَحَ لَكَ اَبْوَابَ الرَّحْـمَةِ وَالْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ لَكَ مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَـجٰى نَـجٰتَكَ
অর্থ: “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছেন যে, একবার তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমের আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী উনাদেরকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মহাসম্মানিত ঘটনা মুবারকসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটনা ঘটেছেন। এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মজলিস মুবারক দেখে এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছানা-ছিফত মুবারক শুনে অর্থাৎ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন দেখে) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত রহমত মুবারক উনার সমস্ত দরজা মুবারকসমূহ আপনার জন্য উম্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবেন, তিনিও আপনার মত নাজাত (ফযীলত মুবারক) লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, ইশবাউল কালাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُمَا اَنَّهٗ كَانَ يُـحَدِّثُ ذَاتَ يَوْمٍ فِـىْ بَيْتِهٖ وَقَائِعَ وِلَادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِقَوْمٍ فَيَسْتَبْشِرُوْنَ وَيُـحَمِّدُوْنَ اللهَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا جَاءَ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَلَّتْ لَكُمْ شَفَاعَتِـىْ
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একবার তিনি উনার বাড়িতে সমবেত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মহাসম্মানিত ঘটনা মুবারকসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারী উনারা আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা অর্থাৎ তাসবীহ-তাহলীল মুবারক পাঠ করছিলেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ছলাত মুবারক পাঠ করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেন এবং (উনাদের এই সম্মানিত আমল মুবারক দেখে অর্থাৎ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন দেখে তিনি) ইরশাদ মুবারক করেন, আপনাদের জন্য আমার সম্মানিত শাফা‘আত মুবারক ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)
মূলত, কোনো ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আলোচনা মুবারক করার নিয়ত করলেই, আলোচনা মুবারক শুরু করার আগেই তার সমস্ত গুনাহ্-খতাগুলো মাফ করা হয়, তারপর তার দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আলোচনা মুবারক করানো হয়। সে মা’ছূম অবস্থায় উনার আলোচনা মুবারক করে। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, যাঁরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেন, উনারা মা’ছূম হয়ে যান। উনাদের জন্য সম্মানিত রহমত মুবারক উনার সমস্ত দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শাফায়াত মুবারক লাভ করবেন অর্থাৎ উনাদের জন্য শাফায়অত মুবারক ওয়াজিব করে দেয়া হয়। এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের অনুরূপ নাজাত লাভ করবেন, ফযীলত মুবারক লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা যেমন বিনা হিসেবে সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ প্রবেশ করবেন, ঠিক তেমনিভাবে যাঁরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করবেন, উনারাও বিনা হিসেবে সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ প্রবেশ করবেন। সুবহানাল্লাহ!
৭) ঈমানের সাথে ইন্তেকাল এবং বিনা হিসেবে সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ প্রবেশ
এ সম্পর্কে ইমামুল আউয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ سَبَبًا لِّقِرَائَتِهٖ لَايَـخْرُجُ مِنَ الدُّنْيَا اِلَّا بِالْاِيْـمَانِ وَيَدْخُلُ الْـجَنَّةَ بِغَيْـرِ حِسَابٍ
অর্থ: “যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে সম্মান করবেন, মর্যাদা দিবেন এবং এই উদ্দেশ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মীলাদ শরীফ অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার ইন্তিজাম মুবারক করবেন, তিনি অবশ্যই সম্মানিত ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবেন এবং বিনা হিসাবে সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ প্রবেশ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৬ নং পৃষ্ঠা, নাফহাতুল আম্বরিয়া ৮ নং পৃষ্ঠা, মাদারিজুস সউদ, তালহীনুছ ছাননাজ ইত্যাদি)
উল্লেখ্য যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার বেমেছাল ফযীলত মুবারক সম্পর্কে বাস্তবেও অসংখ্য ঘটনা মুবারক বর্ণিত রয়েছেন। নিম্নে কয়েকখানা ঘটনা মুবারক উল্লেখ করা হলো-
১) নফসের অনুসারী এবং মন্দ আমলের কারণে সকলের নিকট নিন্দনীয় হওয়া সত্ত্বেও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনকারী উনাকে ইন্তেকালের পর মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ ওলী হিসেবে ঘোষণা এবং সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ বিশেষ সম্মান লাভ
কিতাবে উল্লেখ রয়েছেন-
اِنَّهٗ كَانَ فِـىْ زَمَانِ اَمِيْـرِ الْـمُؤْمِنِيْـنَ هَارُوْنَ الرَّشِيْدِ شَابٌّ فِـى الْبَصْرَةِ مُسْرِفٌ عَلٰى نَفْسِهٖ وَكَانَ اَهْلُ الْبَلَدِ يَنْظُرُوْنَ اِلَيْهِ بِعَيْنِ التَّحْقِيْرِ لِاَجْلِ اَفْعَالِهِ الْـخَبِيْثَةِ غَيْرَ اَنَّهٗ كَانَ اِذَا قَدِمَ شَهْرُ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ غَسَّلَ ثِيَابَه وَتَعَطَّرَ وَتَـجَمَّلَ وَعَمِلَ وَلِيْمَةً وَاسْتَقْرَاَ فِيْهَا مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَدَامَ عَلٰى هٰذَا الْـحَالِ زَمَانًا طَوِيْلًا ثُـمَّ لَـمَّا مَاتَ سَـمِعَ اَهْلُ الْبَلَدِ هَاتِفًا يَّقُوْلُ اُحْضُرُوْا يَا اَهْلَ الْبَصْرَةِ وَاشْهَدُوْا جَنَازَةَ وَلِىٍّ مِّنْ اَوْلِيَاءِ اللهِ فَاِنَّهٗ عَزِيْزٌ عِنْدِىْ فَحَضَرَ اَهْلُ الْبَلَدِ جَنَازَتَهٗ وَدَفَنُوْهُ فَرَاَوْهُ فِى الْـمَنَامِ وَهُوَ يَرْفُلُ فِىْ حُلَلٍ سُنْدُسٍ وَّاِسْتَبْرَقٍ فَقِيْلَ لَهٗ بِـمَ نِلْتَ هٰذِهِ الْفَضِيْلَةَ قَالَ بِتَعْظِيْمِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “কথিত খলীফা হারুনুর রশীদের যামানায় বছরা শহরে নফসের অনুসারী এক যুবক ছিলো। শহরের লোকেরা তার মন্দ কাজের জন্য তাকে ঘৃণার চোখে, অবজ্ঞার চোখে দেখতো। তবে যখনই সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ) মাস আগমন করতেন, তখনই এই যুবক উত্তমরূপে উনার কাপড় ধৌত করে সুগন্ধি ব্যবহার করে সুসজ্জিত হয়ে ওলীমা বা খাবারের মজলিস অর্থাৎ মেহমানদারীর ব্যবস্থা করতেন এবং সেখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মু’জিযাহ্ শরীফসমূহ, ঘটনা মুবারকসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করতেন, বিশ্লেষণ করতেন। আর তিনি এই সম্মানিত আমল মুবারক উনার মধ্যে দীর্ঘসময় লেগে থাকেন অর্থাৎ প্রতি বছর সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ) মাস আগমন করলেই তিনি এরূপ করতেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর যখন তিনি ইন্তিকাল করেন, তখন শহরবাসীগণ গায়েবী আওয়াজ শুনতে পান যে, একজন ঘোষণাকারী বলছেন- ‘হে বছরার অধিবাসীগণ! আপনারা একত্রিত হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণ উনাদের মধ্য থেকে একজন বিশেষ ওলীআল্লাহ উনার জানাযায় উপস্থিত হোন। কেননা তিনি আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তিত্ব মুবারক।’ তখন শহরবাসীগণ উনার জানাযায় উপস্থিত হন এবং উনার দাফন সম্পন্ন করেন। তারপর শহরবাসীগণ স্বপ্নে দেখেন যে, সেই যুবক তিনি পাতলা এবং পুরু কারুকার্যপূর্ণ জান্নাতী রেশমী পোশাক পরে অত্যন্ত শান-শওকতের সাথে সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ বিচরণ করছেন। সুবহানাল্লাহ! তখন উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো- ‘এই শ্রেষ্ঠত্ব-মর্যাদা আপনি কিভাবে লাভ করলেন?’ তিনি বললেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে তা’যীম-তাকরীম, সম্মান প্রদর্শন করার মাধ্যমে।” সুবহানাল্লাহ! (ই‘য়ানাতুত ত্বালিবীন ৩/৪১৫, আশ্ শারফুল আমজাদ ২৫৬ নং পৃষ্ঠা)
২) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার নিয়ত করার কারণে মৃত্যুদ- থেকে মুক্তিলাভ
কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন-
اِنَّهٗ كَانَ فِىْ زَمَانِ الْـخَلِيْفَةِ عَبْدِ الْـمَلِكِ بْنِ مَرْوَانَ شَابٌّ حُسْنُ الصُّوْرَةِ فِىْ الشَّامِ وَكَانَ يَلْهُوْ بِرُكُوْبِ الْـخَيْلِ فَبَيْنَمَا هُوَ ذَاتَ يَوْمٍ عَلٰى ظَهْرِ حِصَانِهٖ اِذْ اَجْفَلَ الْـحِصَانُ وَحَـمَلَهٗ فِىْ سِكَكِ الشَّامِ وَلَـمْ يَكُنْ لَّهٗ قُدْرَةٌ عَلٰى مَنْعِهٖ فَوَقَعَ طَرِيْقُهٗ عَلٰى بَابِ الْـخَلِيْفَةِ فَصَادَفَ وَلَدُهٗ وَلَـمْ يَقْدِرِ الْوَلَدُ عَلٰى رَدِّ الْـحِصَانِ فَصَدَمَهٗ بِالْفَرَسِ وَقَتَلَهٗ فَوَصَلَ الْـخَبَرُ اِلَى الْـخَلِيْفَةِ فَاَمَرَ بِاِحْضَارِهٖ فَلَمَّا اَنْ اَشْرَفَ اِلَيْهِ خَطَرَ عَلٰى بَالِهٖ اَنْ قَالَ اِنْ خَلَّصَنِىَ اللهُ تَعَالٰى مِنْ هٰذِهِ الْوَاقِعَةِ اَعْمَلُ وَلِيْمَةً عَظِيْمَةً وَاَسْتَقْرِئُ فِيْهَا مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا حَضَرَ قُدَّامَهٗ وَنَظَرَ اِلَيْهِ ضَحِكَ بَعْدَ مَا كَانَ يَـخْنُقُهُ الْغَضَبُ فَقَالَ يَا هٰذَا اَتُحْسِنُ السِّحْرَ قَالَ لَا وَاللهِ يَا اَمِيْرَ الْـمُؤْمِنِيْنَ فَقَالَ عَفَوْتُ عَنْكَ وَلٰكِنْ قُلْ لِّىْ مَاذَا قُلْتَ قَالَ قُلْتُ اِنْ خَلَّصَنِىَ اللهُ تَعَالٰى مِنْ هٰذِهِ الْوَاقِعَةِ الْـجَسِيْمَةِ اَعْمَلُ لَهٗ وَلِيْمَةً لِاَجْلِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ الْـخَلِيْفَةُ قَدْ عَفَوْتُ عَنْكَ وَهٰذِهٖ اَلْفُ دِيْنَارٍ لِاَجْلِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاَنْتَ فِىْ حِلٍّ مِّنْ دَمِ وَلَدِىْ فَخَرَجَ الشَّابُّ وَعُفِىَ عَنِ الْقِصَاصِ وَاَخَذَ اَلْفَ دِيْنَارٍ بِبَرَكَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “কথিত উমাইয়্যা খলীফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান (ইবনে হাকাম ইবনে আবুল আছ আমর ইবনে উমাইয়্যাহ্) এর শাসনামলে শামদেশে একজন সুদর্শন যুবক ছিলেন। তিনি অশ্বারোহন খুব পছন্দ করতেন। একদিনের কথা- যখন তিনি উনার একটি উন্নত জাতের ঘোড়ার পিঠে আরোহন করেন, তখন হঠাৎ ঘোড়াটি ভয় পেয়ে উনাকে নিয়ে শামদেশের রাস্তাসমূহে চলতে থাকে। কিন্তু ঘোড়াটিকে নিয়ন্ত্রণ করার উনার কোনো ক্ষমতা ছিলো না। ফলে ঘোড়াটি কথিত খলীফা আব্দুল মালিকের (রাজপ্রাসাদের) দরজায় গিয়ে উপনীত হয়। তখন কথিত খলীফা আব্দুল মালিকের এক ছেলে আকস্মিকভাবে ঘোড়ার সামনে এসে পড়ে, আর সেও ঘোড়াটিকে তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হলো না। তখন ঘোড়াটি কথিত খলীফার ছেলেকে আঘাত করে হত্যা করে ফেলে। এই সংবাদ কথিত খলীফার নিকট পৌঁছলে সে যুবক ছেলেকে তার সামনে উপস্থিত করার জন্য আদেশ করে। অতঃপর যখন কথিত খলীফা (রাজপ্রাসাদের) উপর থেকে উনার দিকে দৃষ্টি দেয়, তখন উনার অন্তরে এই কথার উদয় হয় যে, ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি আমাকে এই কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার করেন, তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে আমি একটি বড় ওলীমা বা খাবারের মজলিসের ব্যবস্থা করে সেখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মু’জিযাহ্ শরীফসমূহ, ঘটনা মুবারকসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করবো, বিশ্লেষণ করবো। অতঃপর যখন সেই যুবক কথিত খলীফার সামনে উপস্থিত হন, তখন কথিত খলীফার সেই যুবক উনাকে গলা টিপে হত্যা করার মত গোস্বা থাকা সত্ত্বেও উনাকে দেখে হেসে দিয়ে বললো- ‘হে যুবক! আপনি কি নিখুঁত জাদু করেন?’ জবাবে যুবক বললেন- ‘হে আমীরুল মু’মিনীন! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি জাদু করিনা।’ অতঃপর কথিত খলীফা বললো, ‘আমি আপনার অপরাধ ক্ষমা করে দিলাম; কিন্তু আপনি কি বলেছেন, তা আমাকে বলুন।’ যুবক ছেলেটি বললেন, আমি বলেছিলাম- ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি আমাকে এই কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার করেন, তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে আমি একটি বড় ওলীমা বা খাবারের মজলিসের ব্যবস্থা করবো।’ তখন কথিত খলীফা বললো, ‘আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আর এই নিন ১ হাজার দীনার (স্বর্ণমুদ্রা), মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে আপনাকে আমি এটা হাদিয়া করলাম এবং আপনি আমার ছেলের হত্যার অপরাধ থেকেও মুক্ত।’ অতঃপর যুবক ছেলেটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে মৃত্যুদ-ের শাস্তি থেকে ক্ষমা পেয়ে এবং এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা গ্রহণ করে বের হয়ে গেলেন।” সুবহানাল্লাহ! (ইয়ানাতুত ত্বালিবীন ৩/৪১৫)
অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা এবং উনার সম্মানার্থে খরচ করার নিয়ত করলেই মৃত্যুদ-সহ ইহকালীন-পরকালীন সমস্ত প্রকার বিপদ-আপদ, বালা-মুসীবত থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত ঘটনা মুবারক বর্ণনা করার পর ‘ইয়ানাতুত ত্বালিবীন’ কিতাবের লেখক আল্লামা সাইয়্যিদ আবূ বকর মক্কী দিমইয়াতী শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وَاِنَّـمَا اَطَلْتُ الْكَلَامَ فِىْ ذٰلِكَ لِاَجْلِ اَنْ يَّعْتَنِىَ وَيَرْغَبَ جَـمِيْعُ الْاِخْوَانِ فِىْ قِرَاءَةِ مَوْلِدِ سَيِّدِ وُلْدِ عَدْنَانَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاَنَّ مَنْ لِاَجْلِهٖ خُلِقَتِ الْاَرْوَاحُ وَالْاَجْسَامُ بِحَقٍّ اَنْ يُّهَدِّىَ لَهُ الرُّوْحَ وَالْمَالَ وَالطَّعَامَ وَفَّقَنَا اللهُ وَاِيَّاكُمْ لِقِرَاءَةِ مَوْلِدِ نَبِيِّهِ الْكَرِيْمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الدَّوَامِ وَاِنْفَاقِ الْمَالِ لِاَجْلِهٖ فِىْ سَائِرِ الْاَوْقَاتِ وَالْاَيَّامِ. اٰمِيْنَ
অর্থ: “প্রকৃতপক্ষে আমি এই বিষয়ে কথা দীর্ঘায়িত করেছি এই কারণে যে, যাতে সমস্ত মুসলমান উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনে মনযোগী এবং আগ্রহী হন। কেননা তিনিই সেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওজূদ পাক মুবারক যে, উনার সম্মানার্থেই সমস্ত রূহ এবং জিসিম সৃষ্টি করা হয়েছে অর্থাৎ সমস্ত কায়িনাত সৃষ্টি করা হয়েছে। উনার সম্মানার্থেই জান, মাল, খাদ্য-দ্রব্য সমস্ত কিছু হাদিয়া পেশ করা সকলের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য অর্থাৎ ফরয। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে এবং আপনাদেরকে দায়িমীভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার এবং উনার সম্মানার্থে, উনার জন্যই সর্বকালে এবং সবসময় সমস্ত ধন-সম্পদ ব্যয় করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!” (ই‘য়ানাতুত ত্বালিবীন ৩/৪১৫)
৩) সবচেয়ে বড় নাফরমান সর্বোচ্চ জান্নাতী
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছেন-
اِنَّ رَجُلًا عَصَى اللهَ مِائَتَـىْ سَنَةٍ يَّتَمَرَّدُ وَيَجْتَرِئُ عَلَيْهِ فِيْهَا كُلَّهَا فَلَمَّا مَاتَ اَخَذَ بَنُوْ اِسْرَائِيْلَ بِرِجْلِهٖ وَاَلْقَوْهُ عَلـٰى مَزْبَلَةٍ فَاَوْحَى اللهُ اِلـٰى حَضْرَتْ مُوْسٰى عَلَيْهِ الصَّلـٰوةُ وَالسَّلَامُ اَنْ غَسَّلَهٗ وَكَفَّنَهٗ وَصَلّٰى عَلَيْهِ فِـىْ جَمْعِ بَنِـىْ اِسْرَائِيْلَ فَفَعَلَ مَا اَمَرَهُ اللهُ تَعَالـٰى بِهٖ فَتَعَجَّبَ بَنُوْ اِسْرَائِيْلَ مِنْ ذٰلِكَ فَاَخْبَرُوْهُ اَنَّهٗ لَـمْ يَكُنْ فِـىْ بَنِـىْ اِسْرَائِيْلَ اَعْتٰى مِنْهُ وَلَا اَكْثَرَ مَعَاصِىْ مِنْهُ فَقَالَ قَدْ عَلِمْتُ وَلٰكِنَّ اللهَ اَمَرَنِـىْ بِذٰلِكَ فَقَالُوْا سَلْ رَبَّكَ فَسَاَلَ حَضْرَتْ مُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ رَبَّهٗ عَزَّ وَجَلَّ فَقَالَ يَا رَبِّ قَدْ عَلِمْتَ مَا قَالُوْا فَاَوْحَى اللهُ اِلَيْهِ اَنْ صَدَقُوْا مَا قَالُوْا اِنَّهٗ عَصَانِـىْ مِائَتَـىْ سَنَةٍ اِلَّا اَنَّ يَوْمًا مِّنَ الْاَيَّامِ فَتَحَ التَّوْرَاةَ فَنَظَرَ اِلَـى اسْمِ سَيِّدِنَا مَوْلـٰـنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكْتُوْبًا فَقَبَّلَهٗ وَوَضَعَهٗ بَيْنَ عَيْنَيْهِ وَفِىْ رِوَايَةٍ اُخْرٰى وَصَلّٰى عَلَيْهِ فَشَكَرْتُ لَهٗ ذٰلِكَ فَغَفَرْتُ لَهٗ ذُنُوْبَ مِائَتَىْ سَنَةٍ وَّزَوَّجْتُهٗ سَبْعِيْنَ حَوْرَاءَ
অর্থ: “নিশ্চয়ই (বনী ইসরাঈলে) এক ব্যক্তি (যে দুই শত বছর হায়াত পেয়েছিলো এবং) দুই শত বছর মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী করেছিলো। সে তার সম্পূর্ণ হায়াতে মহান আল্লাহ পাক উনার চরম অবাধ্য ও নাফরমানীতে মশগূল ছিলো, বেপরওয়া ছিলো। (যার কারণে কেউ তাকে পছন্দ করতো না এবং সকলে চরম ঘৃণা করতো।) ফলে সে যখন ইন্তেকাল করল, তখন বনী ইসরাঈলরা তার পায়ে ধরে তাকে টেনে হেঁচড়ে গোবর পূর্ণ স্থানে, গোবরের স্তূপে নিক্ষেপ করল। তারপর যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি জলীলুল ক্বদর নবী এবং রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত ওহী মুবারক করেন যে, তিনি যেন বণী ইসরাঈলের সমস্ত লোকজন নিয়ে ঐ ব্যক্তির গোসল, কাফন ও দাফনের ব্যবস্থা করেন এবং তার জানাযার নামায পড়েন। মহান আল্লাহ পাক তিনি যা নির্দেশ মুবারক করলেন, হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তাই করলেন। এই কারণে বনী ইসরাঈলরা আশ্চর্য হলো। তারা বললো, সে এমন এক ব্যক্তি- যার মতো অত্যধিক সীমালঙ্গনকারী, চরম অবাধ্য, অত্যন্ত কঠিন হৃদয়ের অধিকারী, চরম বেপরওয়া, কর্কশভাষী, বড় যালিম, চরম বেআদব, সেরকাশী (অবাধ্য) এবং অত্যধিক পাপীষ্ঠ, গুণাহগার আর কেউ ছিলো না। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, নি:সন্দেহে আমি তা জানি। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে এরূপ করার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তখন তারা সবাই বললো, আপনি (দয়া করে) আপনার রব তা‘য়ালা মহান আল্লাহ পাক উনাকে (এ বিষয়ে) জিজ্ঞাসা করুন (যে, এর হাক্বীক্বত কী?)। তারপর হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার রব তা‘য়ালা মহান আল্লাহ পাক উনাকে সুওয়াল করলেন। তিনি বললেন, আয় বারে এলাহী! বনী ইসরাঈলরা যা বলেছে আপনি অবশ্যই তা জানেন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত ওহী মুবারক করলেন যে, বনী ইসরাঈলরা যা বলেছে তা সত্যই বলেছে। নিশ্চয়ই সে দুই শত বছর আমার নাফরমাণী করেছে। তবে সে একদিন সম্মানিত ও পবিত্র তাওরাত শরীফ খুলে দেখতে পেলো যে, সেখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক লিখিত রয়েছেন। তখন সে খুশি মুবারক প্রকাশ করে অত্যন্ত মুহব্বতে আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইসিম মুবারক ‘সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উনার মধ্যে (একবার মাত্র) বুছা দিয়েছিলো এবং খুশি মুবারক প্রকাশ করে অত্যন্ত মুহব্বতে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইসিম মুবারক তার দুই চোখে লাগিয়েছিলো। সুবহানাল্লাহ! অপর বর্ণনায় রয়েছেন, এবং সে উনার প্রতি সম্মানিত ছলাত মুবারক পাঠ করেছিলো অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেছিলো। সুবহানাল্লাহ! এই কারণে আমি তাকে উত্তম প্রতিদান দান করেছি। সুবহানাল্লাহ! তার দুই শত বছরের (জীবনের) সমস্ত গুণাহ-খতাগুলো ক্ষমা করে দিয়েছি এবং তার সাথে সত্তর জন হুরের বিবাহ দিয়েছি। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ তার উপর জাহান্নাম হারাম করে সম্মানিত জান্নাত মুবারক ওয়াজিব করে দিয়েছি এবং আপনার মতো একজন জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল উনার জন্য তার গোসল, কাফন ও দাফনের ব্যবস্থা করা এবং তার জানাযার নামায পড়া ফরয করে দিয়েছি।” সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছুল কুবরা ১/২৯, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/৪১২, সীরাতে হালবিয়্যাহ ১/১৩৬, তাফসীরে দুররে মানছূর ৩/৫৭৯, শরহুল বুখারী ২/১১৯ ইত্যাদি)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক মাত্র একবার বুছা দিলে, চোখে স্পর্শ মুবারক করলে অথবা উনার প্রতি একবার সম্মানিত ছলাত মুবারক পাঠ করলে অর্থাৎ উনার সম্মানার্থে সামান্য সময় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করলে যদি দুইশত বছরের সমস্ত গুনাহ্-খতা মাফ করে দেয়া হয়, ঐ ব্যক্তি উনার উপর জহান্নাম হারাম করে দিয়ে সম্মানিত জান্নাত মুবারক ওয়াজিব করে দেয়া হয়, ৭০ জন হুরের সাথে বিবাহ দেওয়া হয় এবং ঐ ব্যক্তি উনার গোসল, কাফন ও দাফনের ব্যবস্থা করা এবং তার জানাযার নামায পড়া জলীলুল ক্বদর নবী এবং রসূল হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উপর ফরয করে দেয়া হয়, তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার ফযীলত মুবারক কতো বেমেছাল এটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! আর এই উম্মত যদি খালিছ নিয়তে দায়িমীভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে, তাহলে কতো বেমেছাল নিয়ামত মুবারক লাভ করবে, সেটা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত মুসলমান উনাদেরকে এই সীমাহীন নিয়ামত ও ফযীলত মুবারক থেকে মাহরূম করার জন্য বাতিল ৭২ ফিরক্বার লোকেরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে, নানা চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করে থাকে। না‘ঊযুবিল্লাহ! সারা দুনিয়ার সমস্ত সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য ফরয হচ্ছেন বাতিল ৭২ ফিরক্বার লোকদের সর্বপ্রকার বিভ্রান্তি ও চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বালের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া এবং যথাযথ তা’যীম-তাকরীম এবং সীমাহীন আদব-শরাফত ও মুহব্বতের সাথে, সাখাওয়াতির সাথে, অত্যন্ত জাকযমকের সাথে দায়িমীভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা। সুবহানাল্লাহ!
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে, উনারই জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করে ইতিহাসে নযীরবিহীন অনন্তকালব্যাপী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক জারী করেছেন। সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! এরপরেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাস মুবারক এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তারীখ মুবারক সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ) মাস উনার সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ) উনার সম্মানার্থে ১৪৪৪ হিজরী শরীফ উপলক্ষে বিশেষভাবে ৯০ দিনব্যাপী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক উনার ইন্তেজাম মুবারক করেছেন। সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! তাই সকলের জন্য ফরয হচ্ছেন- জান-মাল সমস্ত কিছু দিয়ে হাক্বীক্বীভাবে উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক উনার গোলামী মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া। সুবহানাল্লাহ!
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে ক্ববূল করুন। আমীন!
0 Comments:
Post a Comment