মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার বেমেছাল ফযীলত মুবারক-পর্ব-৬
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ হচ্ছেন সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আমল মুবারক। সুবহানাল্লাহ! স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সৃষ্টির শুরু থেকে অদ্যবধি দায়িমীভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে যাচ্ছেন এবং অনন্তকাল যাবৎ পালন করতেই থাকবেন। সুবহানাল্লাহ! তাই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার চেয়ে বড় ও ফযীলতপূর্ণ আর কোনো আমল নেই। সুবহানাল্লাহ! বান্দার তরফ থেকে সর্বশেষ মাক্বাম হচ্ছে আবদিয়াতের মাক্বাম আর মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে সর্বোচ্চ, সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ মাক্বাম মুবারক হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মাক্বাম মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তাহলে এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করলে বান্দা-বান্দী, উম্মত, জিন-ইনসান কত বড় নেয়ামত লাভ করবে এবং তা পালন করার কত বেমেছাল ফযীলত মুবারক, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার বেমেছাল ফযীলত মুবারক সম্পর্কে বাস্তবে অসংখ্য ঘটনা মুবারক বর্ণিত রয়েছেন। নিম্নে দুইখানা ঘটনা মুবারক উল্লেখ করা হলো-
১. দ্বিতীয় হিজরী শতকের শুরুর দিকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার ফযীলত মুবারক উপলব্ধি করে আজীবন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার নিয়ত করা:
কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,
قَالَ حَضْرَتْ عَـبْدُ اللهِ بْنُ عِـيْسَى الْاَنْصَارِىُّ اَلْكُـوْفِـىُّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ كَانَتْ بِـجَوَارِىِّ اِمْراَةٌ صَالِـحَةٌ وَلَـهَا وَلَدٌ صَالِحٌ فَكَانَتْ فَـقِـيْـرَةً لَا شَىْءَ لَـهَا اِلَّا دِيْنَارًا وَاحِدًا مِنْ ثَـمَنِ غَزْلِـهَا فَمَاتَتْ وَكَانَ ذٰلِكَ الْوَلَدُ يَقُوْلُ هٰذَا مِنْ ثَـمَنِ غَزْلِ اُمِّىْ وَاللهِ لَا اَصْرِفُهٗ اِلَّا فِـىْ اَمْرِ الْاٰخِرَةِ وَخَرَجَ ذَاتَ يَوْمٍ فِـىْ حَاجَةٍ لَّهٗ فَمَرَّ بِقَوْمٍ يَقْرَؤُوْنَ الْقُرْاٰنَ وَعَمِلُوْا مَوْلِدَ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِـىْ رَبِـيْعِ الاَوَّلِ فَجَلَسَ عِنْدَهُمْ وَسَـمِعَ ذٰلِكَ ثُـمَّ نَامَ فِـىْ لَيْلَتِهٖ فَرَاٰى فِـىْ مَنَامِهٖ كَانَ الْقِيَامَةُ قَدْ قَامَتْ وَكَانَ مُنَادٍ يُـنَادِىْ اَيْنَ فُـلَانُ بْنُ فُلَانٍ يَذْكُـرُ جَـمَاعَةً فَسَاقَهُمْ اِلَـى الْـجَنَّةِ وَذٰلِكَ الشَّابُّ مَعَهُمْ وَقَالَ الْـمُنَادِىْ اِنَّ اللهَ جَعَلَ لِكُلٍّ مِّـنْكُمْ قَصْرًا فِـى الْـجَنَّةِ فَدَخَلَ ذٰلِكَ الشَّابُّ قَصْرًا لَـمْ يَرَ اَحْسَنَ مِنْهُ وَالْـحُوْرُ الْعِـيْـنُ فِـيْـهِ كَـثِـيْـرَةٌ وَعَلـٰى اَبْوَابِهٖ خُدَّامٌ وَبَاقِـى الْقُصُوْرِ اَلْطَفُ مِنَ الْقَصْرِ الَّذِىْ دَخَلَ فِـيْهِ فَاَرَادَ الدُّخُوْلَ فِـيْهِ فَلَمَّا هَمَّ بِالدُّخُوْلِ قَالَ لَهُ الْـخُدَّامُ لَـيْسَ هٰذَا لَكَ وَاِنَّـمَا هُوَ لِلَّذِىْ عَمِلَ مَوْلِدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا اَصْبَحَ ذٰلِكَ الشَّابُّ صَرَفَ ذٰلِكَ الدِّيْنَارَ عَلـٰى مَوْلِدِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرْحًا بِرُؤْيَاهُ وَجَـمَعَ الْفُقَرَاءَ يَذْكُـرُوْنَ اللهَ وَيَقْرَؤُوْنَ الْقُراٰنَ وَمَوْلِدَهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَصَّ عَلَى الْـجَمَاعَةِ رُؤْيَاهُ فَفَرِحُوْا بِذٰلِكَ وَنَذَرَ اَنْ لَّا يَقْطَعَ مَوْلِدَ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَادَامَ حَيًّا ثُـمَّ نَامَ فَرَاٰى اُمَّهٗ فِـى الْـمَنَامِ فِـىْ هَيْئَةٍ حَسَنَةٍ وَفِـىْ حُـلَـلٍ مِّنْ حُـلَـلِ الْـجَنَّةِ وَلَـهَا رَائِحَةُ الْـجَنَّةِ وَقَـبَّـلَ يَـدَهَا وَهِىَ قَـبَّـلَتْ رَأْسَهٗ وَقَالَتْ جَزَاكَ اللهُ خَـيْـرًا يَا وَلَدِىْ لَقَدْ اَتَانِــىْ مَلَكٌ وَاَعْطَانِـىْ هٰذِهِ الْـحُـلَـلَ فَقَالَ لَـهَا مِنْ اَيْنَ لَكِ هٰذِهِ الْكَــرَامَةُ فَقَالَتْ لِاَنَّكَ قَدْ صَنَعْتَ بِالدِّيْـنَارِ الَّذِىْ وَرِثْـتَـهٗ مِنِّـىْ مَوْلِدَ سَـيِّـدِ الْاَوَّلِـيْـنَ وَالْاٰخِرِيْنَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهٰذَا جَزَاءُ مَنْ عَظَّمَ نَـبِـيَّـهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَمِلَ مَوْلِدَهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ঈসা আনছারী কূফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ১৩০ হিজরী) তিনি বলেন, আমার প্রতিবেশীদের মধ্যে একজন নেককার-পরহেযগার মহিলা ছিলেন। আর উনার একজন নেককার ছেলে ছিলেন। ঐ মহিলা তিনি ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র। উনার নিকট মাত্র একটি দীনার ছিলো যা তিনি সূতা কাটার বিনিময়ে উপার্জন করেছিলেন। অতঃপর তিনি ইন্তেকাল করেন। আর উনার ঐ ছেলে তিনি (দীনারটি ওয়ারিসস্বত্ত হিসেবে লাভ করেন। তিনি) বলেন, এই দীনারটি আমার সম্মানিতা মাতা উনার সূতা কাটার বিনিময়ে অর্থাৎ অনেক কষ্টের বিনিময়ে উপার্জিত সম্পদ। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি এই দীনারটি পরকালের আমল ব্যতীত অন্য কোনো কাজে খরচ করবো না। একদিন ছেলেটি উনার প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়ে এমন এক সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন, যাঁরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করছিলেন এবং সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ) মাসে মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করছিলেন। সুবহানাল্লাহ! তখন ছেলেটি উনাদের নিকট বসেন এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক শুনেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর তিনি (মাহফিল মুবারক থেকে এসে) রাতে ঘুমিয়ে যান। তখন তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, ক্বিয়ামত সংঘটিত হয়ে গেছে। একজন ঘোষণাকারী একটি দলকে উল্লেখ করে ঘোষণা দিচ্ছেন, অমুকের ছেলে অমুক কোথায়? এরপর উনাদেরকে সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার দিকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে নিয়ে যাওয়া হলো। আর ঐ যুবক তিনি উনাদের সাথেই আছেন। সুবহানাল্লাহ! ঘোষণাকারী তিনি বলেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের প্রত্যেকের জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মধ্যে একটি করে সম্মানিত বালাখানা নির্মাণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তখন ঐ যুবক তিনি এমন একটি সম্মানিত বালাখানা উনার মধ্যে প্রবেশ করলেন, যার থেকে উত্তম প্রাসাদ তিনি কখনো দেখেন নি। আর সেখানে ডাগর চোখ বিশিষ্ট অনেক হূর রয়েছেন এবং প্রত্যেকটি প্রবেশ দ্বারে অনেক খাদিম-খুদ্দাম রয়েছেন। তিনি যেই সম্মানিত বালাখানা উনার মধ্যে প্রবেশ করেছেন উনার চেয়ে অধিক চমৎকার, মনোরম আরো অনেকগুলো সম্মানিত বালাখানা রয়েছেন। তখন তিনি সেই সম্মানিত বালাখানা উনাদের মধ্যে প্রবেশ করার ইচ্ছা করলেন। অতঃপর যখন তিনি সেখানে প্রবেশ করতে চাইলেন, তখন উনাকে খাদিম-খুদ্দাম উনারা বললেন, এটা আপনার জন্য নয়। প্রকৃতপক্ষে এই সম্মানিত বালাখানা যাঁরা মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেছেন শুধুমাত্র উনাদের জন্য। সুবহানাল্লাহ! তারপর যখন সকাল হলো, তখন ঐ যুবক তিনি উনার স্বপ্ন অনুযায়ী মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে খুশি মুবারক প্রকাশ করে ঐ দীনারটি খরচ করলেন, সম্মানিত মাহফিল মুবারক উনার ইন্তিযাম করলেন। সেখানে তিনি সূফী-দরবেশ, ওলীআল্লাহ উনাদেরকে একত্রিত করলেন, যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির-আযকার করেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করেন এবং মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ যুবকটি সূফী-দরবেশ, ওলীআল্লাহ উনাদেরকে একত্রিত করে সকলে মিলে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির-আযকার, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত এবং মাওলিদ শরীফ বা মীলাদ শরীফ পাঠ করার মাধ্যমে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করলেন। সুবহানাল্লাহ! আর তিনি যা স্বপ্নে দেখেছেন সেটা উনাদের নিকট বর্ণনা করলেন। তখন উনারা সেটা শুনে খুশি প্রকাশ করলেন এবং প্রতিজ্ঞা করলেন যে, যত দিন জীবিত থাকবেন, তত দিন মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করবেন, কখনও বন্ধ করবেন না। সুবহানাল্লাহ! তারপর ছেলেটি ঘুমিয়ে গেলেন। তখন তিনি স্বপ্নে উনার সম্মানিতা মাতা উনাকে অত্যন্ত সুন্দর আকৃতীতে সম্মানিত জান্নাতী পোষাক পরিহিত অবস্থায় দেখেন। সুবহানাল্লাহ! উনার থেকে সম্মানিত জান্নাতী সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছেন। ঐ ছেলেটি উনার সম্মানিতা মাতা উনার হাতে বুছা দিলেন আর উনার সম্মানিতা মাতা তিনি উনার কপালে বুছা দিলেন এবং বললেন, ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন! হে আমার প্রিয় সন্তান! আমার নিকট একজন হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি এসে এ সকল সম্মানিত জান্নাতী পোষাক মুবারকসমূহ আমাকে দিয়েছেন।’ সুবহানাল্লাহ! তখন সেই ছেলে তিনি উনার সম্মানিতা মাতা উনাকে বললেন, ‘এই সম্মান-মর্যাদা আপনার জন্য কোথা থেকে আসলো? অর্থাৎ আপনি কি কারণে এই সম্মান-মর্যাদা-মর্তবা মুবারক লাভ করলেন?’ তিনি বললেন, ‘আপনি আমার পক্ষ থেকে ওয়ারিসস্বত্ত হিসেবে যেই দীনারটি পেয়েছিলেন, সেটা দিয়ে আপনি মাওলিদু সাইয়্যিদিল আউওয়ালীন ওয়াল আখিরীন বা মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেছেন। যার ফলে আমি এই সম্মান-মর্যাদা-মর্তবা মুবারক লাভ করেছি। সুবহানাল্লাহ! আর যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মান করেন এবং মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেন, এটাই হচ্ছেন উনার প্রতিদান’।” সুবহানাল্লাহ! (তারগীবুল মুশতাক্বীন ৪র্থ পৃষ্ঠা, মীযানুল ই’তিদাল ফী বায়ানি হাক্কি ওয়াদ্ দ্বলাল, তারগীবুল মু’মিনীন)
ওহাবী, খারিজী, বাতিল ফিরক্বার লোকেরা এবং হক্বপন্থী দাবীদার যারা বলেছে এবং বলে থাকে যে, ‘মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক’ কুরূনে ছালাছায় ছিলো না।’ এই ঘটনা মুবারক দ্বারা তাদের সেই বক্তব্য ভুল হিসেবে প্রমাণিত হলো। তার পাশাপাশি এই বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, বর্তমানে যেভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার সম্মানার্থে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ) মাসে লোকজন একত্রিত হয়ে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক করে থাকেন এবং তাবারুকের ব্যবস্থা করে থাকেন, কুরূনে ছালাছায়ও সেভাবে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ) মাসে লোকজন একত্রিত হয়ে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক করতেন এবং তাবারুকের ব্যবস্থা করতেন। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়; তখনই সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক উনার গুরুত্ব ও ফযীলত মুবারক উপলব্ধি করে লোকজন আজীবন সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক করার নিয়ত করেছেন এবং মাহফিল মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, কোনো যুগই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা থেকে খালি ছিলো না। যারা বলে ‘মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক কুরূনে ছালাছায় ছিলো না।’ তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে ভুল ও অশুদ্ধ। পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত লেখা হবে ইনশাআল্লাহ।
আর এই ঘটনা মুবারক থেকে আরো একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে গেলো যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনকারীদের জন্য আলাদাভাবে বিশেষ জান্নাত মুবারক রয়েছেন। সেখানে শুধু যাঁরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেন উনারাই প্রবেশ করবেন। অন্য কেউ সেই বিশেষ জান্নাত মুবারক-এ প্রবেশ করতে পারবে না। সুবহানাল্লাহ! তাছাড়া মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনকারী ব্যক্তি তো বিশেষ নেয়ামত মুবারক লাভ করবেনই; শুধু তাই নয়, এমনকি সন্তানদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার কারণে তার বাবা-মা এবং পূর্বপুরুষ উনারাও সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ বিশেষ নেয়ামত মুবারক লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ!
২. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার বিশেষ শান সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ পালনকারীগণ দায়িমীভাবে সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত তত্ত্বাবধানে থাকেন, উনার নযর-করম, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক এবং রহমত মুবারক উনার মধ্যে থাকেন:
বিশিষ্ট বুযূর্গ, আরিফ বিল্লাহ, মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবূব ওলী হযরত শায়েখ ঈসা ইবনে হাসান ইবনে বাকরী ইবনে আহমদ বায়ানূনী শাফিয়ী নকশাবন্দী মুহম্মদী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ ১২৯০ হিজরী শরীফ : বিছাল শরীফ ১৩৬২ হিজরী শরীফ) তিনি বলেন,
وَكُـنْتُ اَلَّفْتُ جَـمْعِيَّةً عَامَ ۱۳۱۹ هـ سَـمَّيْتُهَا جَـمْعِـيَّـةَ الْـمَوْلِدِ وَكُـنَّا نَـجْتَمِعُ لِلْمَوْلِدِ فِـىْ كُلِّ لَـيْلَةِ اِثْنَـيْـنِ عِنْدَ وَاحِدٍ مِّـنَّا وَكُـنْتُ كَـتَبْتُ اَسْـمَاءَ الْـجَمَاعَةِ مُرَتَّــبَةً عَلـٰى حُرُوْفِ الْـهِجَاءِ لِاَجْلِ تَرْتِــيْـبِ الدَّوْرِ فِـى الْـمَوْلِدِ فَرَاٰى رَجُلٌ مِّنَ الصَّالِـحِـيْـنَ فِـى النَّوْمِ وَكَانَ يَـحْضُرُ بَعْضَ اللَّيَالِــىْ مَعَـنَا النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهٗ اَهْلُ جَـمْعِـيَّـةِ الْـمَوْلِدِ تَـحْتَ حِـمَايَــتِــىْ فَلَمَّا اَصْبَحَ جَاءَ اِلَـىَّ وَطَـلَبَ مِنِّـىْ اَنْ اَكْـتُبَ اِسْـمَهٗ فِـىْ اَفْرَادِ الْـجَمْعِـيَّـةِ وَدَاوَمَ عَلَى الْـحُضُوْرِ اِلـٰـى اَنْ مَّاتَ رَحِـمَهُ اللهُ تَعَالـٰى وَكَانَ عَدَدُ الْـجَمَاعَةِ مَا بَـيْـنَ الثَّـلَاثِـيْـنَ اِلَـى الْاَرْبَعِـيْـنَ وَاَكْـثَـرُهُمْ رَاَى النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِـى الْـمَنَامِ
অর্থ: “১৩১৯ হিজরী শরীফে আমি একটি মজলিস গঠন করি। যার নামকরণ করি ‘জামইয়্যাতুল মাওলিদ বা মীলাদ শরীফ উনার মজলিস’। আমরা প্রত্যেক লাইলাতু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লাইলাতুল ইছনাইনিল আযীম শরীফে অর্থাৎ সোমবার রাত্রে) পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মজলিস করার জন্য আমাদের একজনের বাড়িতে একত্রিত হতাম। ক্রমান্নয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করার জন্য আমি মজলিসের সবার নাম আরবী বর্ণমালার তরতীব অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করি। একজন নেককার ব্যক্তি যিনি এক রাতে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মজলিসে আমাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন, তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বপ্নে দেখেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঐ ব্যক্তিকে বলেন,
اَهْلُ جَـمْعِـيَّـةِ الْـمَوْلِدِ تَـحْتَ حِـمَايَــتِــىْ
‘জামইয়্যাতুল মাওলিদ’ মজলিসের সদস্যগণ আমার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন, আমার নযর-করম, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক এবং রহমত মুবারক উনার মধ্যে রয়েছেন।’ সুবহানাল্লাহ! অতঃপর যখন সকাল হলো, তখন ঐ ব্যক্তি আমার নিকট এসে আবেদন করেন যে, আমি যেন উনার নাম ঐ মজলিসের সদস্যগণের তালিকাভুক্ত করি। ঐ ব্যক্তি ইন্তিকাল পর্যন্ত (প্রত্যেক সপ্তাহে) পবিত্র মীলাদ শরীফ মজলিসে উপস্থিত হতেন। আর ‘জামইয়্যাতুল মাওলিদ’ মজলিস উনার সদস্য সংখ্যা ছিলেন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন। উনাদের অধিকাংশ ব্যক্তিই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বপ্নে দেখেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (ফাতহুল মুজীব ফী মাদহিল হাবীব ১৪১ নং পৃষ্ঠা)
এখন বলার বিষয় হচ্ছে, যাঁরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার বিশেষ শান মুবারক সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ পালন করেন, উনারা দায়িমীভাবে সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত তত্ত্বাবধানে থাকেন, উনার নযর-করম, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক এবং রহমত মুবারক উনার মধ্যে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়; সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে সবসময় দেখাশোনা মুবারক করেন এবং উনার সম্মানিত দীদার মুবারক দান করেন। সুবহানাল্লাহ! তাহলে কেউ যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার বিশেষ শান মুবারক প্রতিদিন সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আওক্বাত শরীফ পালন করেন, প্রতি সপ্তাহে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ এবং সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিস সা‘আত শরীফ পালন করেন, প্রতি মাসে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ পালন করেন এবং দায়িমীভাবে অনন্তকালব্যাপী জারীকৃত সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেন, তাহলে তিনি দায়িমীভাবে সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতটুকু সম্মানিত তত্ত্বাবধানে থাকবেন, উনার নযর-করম, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক ও রহমত মুবারক উনার মধ্যে থাকবেন এবং সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঐ ব্যক্তি উনাকে সবসময় কত বেমেছালভাবে দেখাশোনা মুবারক করেন এবং উনার কতটুকু বেমেছাল সম্মানিত বিশেষ দীদার মুবারক দান করবেন, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, ছাহিবে নেয়ামত, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে সেই বিশেষ নিসবত ও নিয়ামত মুবারক নছীব করুন। আমীন!
0 Comments:
Post a Comment