মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার বেমেছাল ফযীলত মুবারক-পর্ব-২
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ হচ্ছেন সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আমল মুবারক। সুবহানাল্লাহ! স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সৃষ্টির শুরু থেকে অদ্যবধি দায়িমীভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে যাচ্ছেন এবং অনন্তকাল যাবৎ পালন করতেই থাকবেন। সুবহানাল্লাহ! তাই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার চেয়ে বড় ও ফযীলতপূর্ণ আর কোনো আমল নেই। সুবহানাল্লাহ! বান্দার তরফ থেকে সর্বশেষ মাক্বাম হচ্ছে আবদিয়াতের মাক্বাম আর মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে সর্বোচ্চ, সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ মাক্বাম মুবারক হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মাক্বাম মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তাহলে এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করলে বান্দা-বান্দী, উম্মত, জিন-ইনসান কত বড় নেয়ামত লাভ করবে এবং তা পালন করার কত বেমেছাল ফযীলত মুবারক, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার বেমেছাল ফযীলত মুবারক সম্পর্কে বাস্তবে অসংখ্য ঘটনা মুবারক বর্ণিত রয়েছেন। নিম্নে দুখানা ঘটনা মুবারক উল্লেখ করা হলো-
১. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার কারণে যালিম হওয়া সত্ত্বেও একজন শাসককে সরাসরি মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতীভাবে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করলেন এবং তার শত্রুকে গায়িবী তীর দ্বারা নিশ্চিহ্ন করে দিলেন এবং ঘোষণা মুবারক দিলেন, ‘তুমি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে সম্মান করেছো, তাই আমি তোমাকে রক্ষা করেছি। যদি তুমি আরো বেশি সম্মান করো, তাহলে আমি তোমার সম্মান আরো বাড়িয়ে দিবো।’ সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন-
وَحُكِىَ عَنْ بَعْضِ الْـخُلَفَاءِ اَنَّهٗ كَانَ يَـجُوْرُ فِـىْ حُكْمِهٖ وَكَانَ ظَالِمًا لٰكِنْ لَّه عَادَةٌ يُـحِبُّ قِرَاءَةَ مَوْلِدِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَعْمَلُ الْوَلِيْمَةَ لِقِرَاءَتِهٖ وَكَانَ لَه اِبْنُ عَمٍّ يَرُوْمُ الْـخِلَافَةَ وَيَـتَوَقَّعُ لَهُ الدَّوَاهِىْ حَتّٰـى اَرَادَ اَنْ يَّقْتُلَه وَيَنْزَعَ الْـمُلْكَ مِنْهُ فَلَمَّا كَانَ فِـىْ بَعْضِ الْاَيَّامِ وَهُوَ فِـىْ خَلْوَةٍ مُنْفَرِدٌ عَنِ النَّاسِ مِنْ غَـيْـرِ سِلَاحٍ وَلَا خَادِمٍ عِنْدَه اِذْ دَخَلَ عَلَيْهِ اِبْنُ عَمِّهٖ وَهَجَمَ عَلَيْهِ وَالْـخَنْجَرُ بِيَدِهٖ وَقَالَ لَه مَنْ يُّـخَلِّصُكَ مِنِّـىْ يَا خَبِيْثُ بَيْنَ النَّاسِ فَجَرٰى عَلٰى لِسَانِ الْـخَلِيْفَةِ يُـخَلِّصُنِـىْ مِنْكَ مَوْلِدُ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَا اِسْتَتَمَّ كَلَامَه حَتّٰى خَرَجَ مِنَ الْـحَائِطِ نَبْلَةٌ اَصَابَتْ فُؤَادَه فَخَرَّ مَيِّـتًا وَسَـمِعَ هَاتِفًا يَّـقُوْلُ عَظَّمْتَ مَوْلِدَ حَبِـيْبِـىْ سَيِّدِنَا مَوْلـٰنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَجَّيْنَاكَ فِـاِنْ زِدْتَّ زِدْنَاكَ فَتَابَ الْـخَلِيْفَةُ عَنِ الْـجَوْرِ وَالظُّـلْمِ وَصَارَ يُنْفِقُ ثُلُثَ مَالِهٖ فِـىْ كُلِّ سَنَةٍ عَلٰى مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “একজন খলীফার ব্যাপারে বর্ণিত রয়েছে যে, সে তার শাসনামলে যুলুম-অত্যাচার করতো এবং সে ছিলো একজন যালিম। তবে তার একটি আদত বা অভ্যাস ছিলো- সে মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে মুহব্বত করতো এবং মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে ওলীমা বা মেহমানদারীর আয়োজন করতো। সুবহানাল্লাহ! তার একজন চাচাতো ভাই ছিলো, সে খিলাফত কামনা করতো এবং খলীফার জন্য বিভিন্ন দুর্ঘটনা প্রত্যাশা করতো। এমনকি খলীফাকে হত্যা করে তার থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে চাইতো। অতঃপর একদিন যখন খলীফা নিরস্ত্র অবস্থায় এবং কোনো খাদিম-খুদ্দাম ব্যতীত লোকজন থেকে পৃথক হয়ে একাকী জনমানবহীন স্থানে যায়, তখন হঠাৎ খলীফার চাচাতো ভাই তার নিকট আসে এবং সে খঞ্জর হাতে খলীফার উপর আক্রমণ করে বলে, ‘হে মানুষরূপী খবীছ! তোমাকে আমার থেকে কে রক্ষা করবে?’ তখন খলীফার জবান দিয়ে (নিজের অজান্তেই) বের হয়ে গেলো, ‘মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফই আমাকে তোমার থেকে রক্ষা করবেন।’ সুবহানাল্লাহ! খলীফার কথা পূর্ণ না হতেই অদৃশ্য থেকে একটি তীর এসে তার হৃদপি-ে আঘাত করে, ফলে সাথে সাথেই সে মরে (যমীনে) পড়ে যায়। তখন খলীফা (মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে) গায়িবী নেদা মুবারক শুনতে পায়, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলছেন- ‘তুমি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদত শরীফ উনাকে অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে সম্মান করেছো, তাই আমি তোমাকে রক্ষা করেছি। যদি তুমি আরো বেশি সম্মান করো, তাহলে আমি তোমার সম্মান আরো বাড়িয়ে দিবো।’ সুবহানাল্লাহ! অতঃপর খলীফা অন্যায়-অত্যাচার, যুলুম-নির্যাতন থেকে তওবা করেন এবং প্রতি বছর মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে উনার ধন-সম্পদের এক তৃতীয়াংশ খরচ করতে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ! (কিতাবু ফাদ্বায়িলি মাওলিদিন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৫ নং পৃষ্ঠা, রিসালাতু মাওলিদিন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪ নং পৃষ্ঠা)
এখন বলার বিষয় হচ্ছে যে, একজন যালিম শাসক যদি বৎসরে একবার মাত্র মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার কারণে এই বিশেষ নেয়ামত মুবারক লাভ করে, তাহলে কেউ যদি অনন্তকালব্যাপী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেন, তাহলে তিনি কত বেমেছাল নেয়ামত মুবারক লাভ করবেন? মূলত এটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!
আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ হচ্ছেন সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আমল মুবারক। কাজেই, কেউ যদি এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেন, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ঐ ব্যক্তি উনাকে দায়িমীভাবে গাইবী মদদ মুবারক করবেন। সৃষ্টির জানা-অজানা সমস্ত প্রকার বিপদ-আপদ, বালা-মুছীবত থেকে কুদরতীভাবে হিফাযত করবেন এবং উনাকে বিশেষ নিসবত মুবারক দানে ধন্য করবেন। সুবহানাল্লাহ! পৃথিবীর কোনো অপশক্তি কাস্মিনকালেও উনার কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা। সুবহানাল্লাহ!
(২) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনকারী উনাদেরকে সম্মানিত রহমত, বরকত, সাকীনাহ্ এবং বিশেষ দীদার মুবারক দান:
কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ الْوَاحِدِ بْنِ اِسْـمَاعِيْلَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ كَانَ رَجَلٌ بِـمِصْرَ يَصْنَعُ مَوْلِدَ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ اِلـٰى جَانِبِهٖ رَجُلٌ يَهُوْدِىٌّ فَقَالَتْ زَوْجَةُ الْيَهُوْدِىِّ مَا بَالُ جَارِنَا الْـمُسْلِمِ يُنْفِقُ مَالًا كَثِـيْـرًا فِـىْ مِثْلِ هٰذَا الشَّهْرِ فَقَالَ اِبْنُ عَمِّهَا اِنَّ نَبِيَّهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وُلِدَ فِيْهِ فَهُوَ يَفْعَلُ ذٰلِكَ فَرْحَةً بِهٖ وَكَرَامَةً لَّه وَلِـمَوْلِدِهٖ قَالَتْ مَا اَحْسَنَ الطَّرِيْقَ فِـى الْـمُؤْمِنِـيْـنَ قَالَ فَسَكَـتَتْ وَنَامَتْ لَيْلَتَهَا فَرَاَتْ فِـى الْـمَنَامِ رَجُلًا جَـمِيْلًا عَلَيْهِ مَهَابَةٌ قَدْ دَخَلَ فِـىْ بَـيْتِ جَارِهِمُ الْـمُسْلِمِ وَحَوْلَه جَـمَاعَةٌ مِّنْ اَصْحَابِهٖ وَهُمْ يُـبَجِّلُوْنَهٗ وَيُعَظِّمُوْنَهٗ وَقَالَتْ لِرَجُلٍ مِّنْهُمْ مَنْ هٰذَا الرَّجُلُ الْوَجِيْهُ فَقَالَ لَـهَا هٰذَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ هٰذَا الْـمَنْـزِلَ لِـيُسَلِّمَ عَلٰى اَهْلِهٖ وَيَزُوْرَهُمْ لِفَرْحِهِمْ بِهٖ فَقَالَتْ هَلْ يُكَلِّمُنِـىْ اِذَا كَلَّمْتُه قَالَ لَـهَا نَعَمْ فَاَتَتْ اِلَيْهِ وَقَالَتْ لَهٗ يَا سَيِّدَنَا مَوْلـٰـنَا مُحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَـهَا لَبَّيْكِ فَقَالَتْ اَتُـجِيْبُ لِـمِثْلِـىْ بالتَّلْبِيَةِ وَاَنَا عَلٰى غَيْرِ دِيْنِكَ وَمِنْ اَعْدَائِكَ فَقَالَ لَـهَا وَالَّذِىْ بَعَـثَـنِـىْ بِالْـحَقِّ نَـبِـيًّا مَا اَجَبْتُ نِدَاءَكِ حَتّٰـى اُعْلِمْتُ اَنَّ اللهَ قَدْ هَدَاكِ قَالَتْ لَهٗ اِنَّكَ لَنَبِـىٌّ كَرِيْـمٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاِنَّكَ لَعَلـٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ تَعِسَ مَنْ خَالَفَ اَمْرَكَ وَخَابَ مَنْ جَهِلَ قَدْرَكَ اُمْدُدْ يَدَيْكَ فَاَنَا اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَتْ فِـىْ سِرِّهَا اِذَا اَصْبَحَتْ تَتَصَدَّقُ بِكُلِّ مَا تَـمْلِكُه وَتَصْنَعُ مَوْلِدَ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرْحَةً بِاِسْلَامِهَا وَشُكْرًا لِّلرُّؤْيَا الَّتِـىْ رَاَتْـهَا فِـىْ مَنَامِهَا فَلَمَّا اَصْبَحَتْ رَاَتْ زَوْجَهَا قَدْ هَيَّاَ وَلِـيْمَةً وَهُوَ فِـىْ هِـمَّةٍ عَظِيْمَةٍ فَـتَعَجَّبَتْ وَقَالَتْ لَهٗ اَرَاكَ فِـىْ هِـمَّةٍ صَالِـحَةٍ فَقَالَ لَـهَا مِنْ اَجْلِ الَّذِىْ اَسْلَمْتِ عَلٰى يَدَيْهِ الْبَارِحَةَ فَقَالَتْ مَنْ كَشَفَ لَكَ هٰذَا السِّرَّ الْـمَصُوْنَ وَمَنْ اَطْـلَعَكَ عَلَيْهِ فَقَالَ لَـهَا وَاَنَا الَّذِىْ اَسْلَمْتُ بَعْدَكِ عَلـٰى يَدَيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “ফখরুল ইসলাম কাযী হযরত ইমাম আবুল মাহাসিন আব্দুল ওয়াহিদ ইবনে ইসমাঈল রূইয়ানী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ ৪১৫ হিজরী শরীফ : বিছাল শরীফ ৫০২ হিজরী শরীফ) তিনি বর্ণনা করেন, মিশরে একজন বুযূর্গ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক করতেন। সুবহানাল্লাহ! উনার একজন ইহুদী প্রতিবেশী ছিলো। একদিন এই ইহুদী ব্যক্তির আহলিয়া তাকে বললো- আমাদের মুসলিম প্রতিবেশী উনার কি হলো যে, তিনি এই (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ) মাসে অনেক মাল-সম্পদ বিলিয়ে দেন, খরচ করেন? তখন (ঐ মহিলার পাশে থাকা) তার চাচাতো ভাই বললো, ‘নিশ্চয়ই উনার যিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নবী-রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ) মাসে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। তাই তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করেন, উনার সম্মানার্থে এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে এই সম্মানিত মাহফিল মুবারক করেন।’ সুবহানাল্লাহ! তখন ঐ মহিলা বললো, ‘সম্মানিত মু’মিন উনাদের কতই না উত্তম তর্য-ত্বরীক্বা!’ বর্ণনাকারী বলেন, তারপর সেই মহিলা চুপ হয়ে গেলো এবং ঐ রাতে ঘুমিয়ে গেলো। তখন সে স্বপ্নে দেখতে পেলো যে, একজন বেমেছাল সৌন্দর্য ও মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব মুবারক তিনি তাদের মুসলিম প্রতিবেশী উনার ঘরে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন। আর উনার চারপাশে উনার একদল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা রয়েছেন এবং উনাকে উনারা সম্মান ও তা’যীম-তাকরীম মুবারক করছেন। সুবহানাল্লাহ! তখন ঐ মহিলা একজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলো, এই মর্যাদাবান মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ব্যক্তিত্ব মুবারক তিনি কে? তখন তিনি বললেন,
هٰذَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ هٰذَا الْـمَنْـزِلَ لِــيُسَلِّمَ عَلـٰى اَهْلِهٖ وَيَــزُوْرَهُمْ لِـفَرْحِهِمْ بِهٖ
‘উনি হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি এই বাড়িতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন এই বাড়ির অধিবাসী উনাদেরকে রহমত, বরকত, সাকীনাহ্ দান করার জন্য এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দীদার মুবারক দান করার জন্য। সুবহানাল্লাহ! কারণ এই বাড়ির অধিবাসীগণ উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করেন, উনার সম্মানার্থে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেন।’ সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর ঐ মহিলা বললো- যদি আমি উনার সাথে কথা বলি, তাহলে তিনি কি আমার সাথে কথা মুবারক বলবেন? ঐ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি তাকে বললেন, হ্যাঁ; অবশ্যই। এরপর ঐ মহিলা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে উনাকে সম্বোধন মুবারক করলে তিনি দয়া করে তার ডাকে সাড়া দিয়ে বললেন- ‘লাব্বাইক!’ তখন ঐ মহিলা বললো, আপনি কি আমার ন্যায় একজনকে ‘লাব্বাইক’ বলে সাড়া দিচ্ছেন; অথচ আমি বিধর্মী এবং আপনার শত্রু? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে বললেন, ‘ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যিনি আমাকে সত্যসহ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন, আমি জানি যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাকে সম্মানিত হিদায়াত দান করবেন, তাই আমি ‘লাব্বাইক’ বলে তোমার ডাকে সাড়া দিয়েছি।’ তখন ঐ মহিলা বললেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নবী-রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং নিশ্চয়ই আপনি সুমহান চরিত্র মুবারক উনার অধিকারী। যে ব্যক্তি আপনার কোনো বিষয় মুবারক উনার বিরোধিতা করে, সে ধ্বংস হোক! যে ব্যক্তি আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মর্যাদা মুবারক সম্পর্কে অজ্ঞ, সে বিফল হোক! (ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে) আপনি আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাত মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাত মুবারক) প্রসারিত করে দিন-
فَاَنَا اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’
আর ঐ মহিলা তিনি মনে মনে বললেন, সকাল হলেই তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার খুশিতে এবং স্বপ্নে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দীদার মুবারক লাভ করার কারণে শুকরিয়া স্বরূপ উনার মালিকানায় থাকা সমস্ত মাল-সম্পদ বিলিয়ে দিয়ে মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর যখন সকাল হলো, তখন ঐ মহিলা দেখলেন- উনার আহাল তিনি সুমহান নেক আগ্রহ নিয়ে একটি ওলীমা মুবারক অর্থাৎ বিশেষ মেহমানদারীর আয়োজন করছেন। সুবহানাল্লাহ! তখন ঐ মহিলা তিনি অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হয়ে উনার আহাল উনাকে বললেন, আমি কি আপনাকে নেক আগ্রহ-উদ্দিপনায় মশগূল দেখতে পাচ্ছি? (এটা কিসের জন্য?) তিনি উনার আহলিয়াকে বললেন, ‘গত রাতে আপনি যেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাত মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাত মুবারক-এ) সম্মানিত ইসলাম গ্রহণ করেছেন, উনার সম্মানার্থে। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে আমি এই বিশেষ মেহমানদারীর আয়োজন করেছি।’ সুবহানাল্লাহ! তখন ঐ মহিলা তিনি উনার আহালকে বললেন- ‘এই সংরক্ষিত গোপন বিষয়টি আপনার নিকট কে প্রকাশ করলেন? এই ব্যাপারে আপনাকে কে জানিয়েছেন?’ ঐ ব্যক্তি তিনি উনার আহলিয়াকে বললেন, ‘আমিই সেই ব্যক্তি যিনি আপনার পরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাত মুবারক-এ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছি’।” সুবহানাল্লাহ! (তাযকিরাতুল ওয়ায়িযীন ১২৪-১২৫ পৃ.)
কাজেই, কেউ যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দায়িমী বিশেষ দীদার ও ছোহবত মুবারক, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক এবং উনার তরফ থেকে দায়িমীভাবে সম্মানিত রহমত, বরকত, সাকীনাহ্ লাভ করতে চায়, তার জন্য আবশ্যক হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মনার্থে খুশি মুবারক প্রকাশ করে অনন্তকালব্যাপী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা। সুবহানাল্লাহ!
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাহিবু সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে অনন্তকালব্যাপী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
0 Comments:
Post a Comment