সুওয়াল : ঈদের নামায পড়া ফরজ না ওয়াজিব? ঈদের
নামায কখন পড়া সুন্নত?
আজকাল অনেক জায়গায় দেখা যায় কেউ কেউ সকাল সকাল ঈদের নামায পড়েন
আবার কেউ কেউ দেরী করে ঈদের নামায পড়েন। যেমন সকাল ১১টায়, ১২টায়
পড়েন, কোন সময় নামায আদায় করলে সুন্নত হবে জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব : আমাদের হানাফী মাযহাব মোতাবেক ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব। সকালে সূর্য পূর্ণভাবে
উদিত হবার পর থেকে (অর্থাৎ মাকরূহ্ ওয়াক্ত শেষ হবার পর থেকে অথবা সূর্য উদয়ের শুরু
থেকে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী ২৩ মিঃ পর) ঈদের
নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যাহওয়াতুল কোবরা বা যাওয়াল অথবা শরয়ী অর্ধদিন
বা দ্বিপ্রহর অর্থাৎ সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হবার পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের
ওয়াক্ত থাকে। ফজরের ওয়াক্ত শেষ হবার
পর, ২৩ মিনিট পর্যন্ত মাকরূহ্ ওয়াক্ত এবং এরপর ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর
যোহরের ওয়াক্ত শুরু হবার ১ ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। অর্থাৎ মাকরূহ্ ওয়াক্ত
শুরু হবার আগ পর্যন্ত। সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত যা
ঘড়ির হিসাব অনুযায়ী ২৩ মিনিট অতিক্রম হবার পূর্বে ঈদের নামায আদায় করলে নামায হবে
না এবং যোহরের নামাযের ওয়াক্ত হবার
পূর্বের ১ ঘন্টা যা মাকরূহ্ ওয়াক্ত নামে পরিচিত অর্থাৎ যাহওয়াতুল কোবরা বা সূর্যের
এস্তাওয়া আরম্ভ হবার পর ঈদের নামায আদায়
করলে তা আদায় হবে না। অর্ধদিন বা নিসকুন্নাহার দু’ভাবে বর্ণিত। একটি হলো শরয়ী
অর্ধদিন আরেকটি ওরফী (প্রচলিত) অর্ধদিন। সূর্য উদয় হতে সূর্য অস্ত পর্যন্ত সময়কে
দু’ভাগে ভাগ করলে প্রথম ভাগকে শরয়ী অর্ধদিন বলা হয়। প্রথম ভাগের শেষ অংশকে বলা হয়
শরয়ী দ্বিপ্রহর বা যাহওয়াতুল কোবরা। যাহওয়াতুল কোবরা হতে সূর্য ঢলা পর্যন্ত সময়কে
এস্তাওয়ায়ে শাম্স বলা হয়। ওটার মধ্যবর্তী সময়
নামায পড়া মাকরূহ্। আর প্রচলিত অর্ধদিন বলতে বেলা ১২টা বুঝানো হয়।
ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শরয়ী অর্ধদিনের পূর্ব
পর্যন্ত থাকে।
মেসালস্বরূপ
সকাল ৬টায় যদি সূর্য উদিত হয়, তাহলে ৬টা ২৩মিঃ হতে ঈদের
নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং ১২টায় যদি যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়, তাহলে
তার পূর্বে ১ঘন্টা বাদ দিয়ে অর্থাৎ ১১টা পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে।
আর
নিম্নবর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে আমরা ঈদের নামায কোন সময় আদায় করলে তা
সুন্নত হবে, তা জানতে পারবো। হযরত আবুল হোয়ারেস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আমর ইবনে
হাযম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে
তিনি নাজরানের গভর্ণর থাকা অবস্থায় চিঠি দিয়ে আদেশ করেছেন, ঈদুল
আযহার নামায খুব সকাল সকাল পড়বে এবং ঈদুল ফিতরের নামায ঈদুল আযহার চেয়ে অল্প একটু
দেরীতে পড়বে এবং নামাযের পরে মানুষকে
নসীহত করবে। ঈদের দিন নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামায পড়ে হুজরা শরীফ
উনার মধ্যে যেয়ে সকাল সকাল গোসল করতেন এবং ঈদুল ফিতর হলে বেজোড় সংখ্যক (৩,৫,৭) খোরমা, খেজুর
খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। আর ঈদুল আযহার সময় কিছু না খেয়ে সরাসরি ইদগাহে যেতেন এবং ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হবার সাথে সাথে ঈদের নামায আদায়
করতেন এবং তারপর খুতবা দিতেন ও নসীহত করতেন। সে জন্য ঈদের নামায সকাল সকাল পড়া সুন্নত। ঈদের নামাযের সন্মানার্থে এবং ঈদের নামায যাতে আদায়ে দেরী না হয়, সেজন্য
ঈদের দিন ইশরাকসহ অন্যান্য নফল নামায পড়া
নিষিদ্ধ ।
0 Comments:
Post a Comment