প্রশ্নঃ-
আমাদের এলাকার বিভিন্ন মসজিদে বিশেষভাবে রমযান মাসে তাহাজ্জুদের নামায জামায়াতের সহিত খতমে কুরআন পড়া হয়। জনৈক
আলেম সাহেব ওটাকে বেদাত বলেন, পবিত্র কুরআন সুন্নাহ শরীফ উনার দৃষ্টিতে বিস্তারীত জানতে
চাই।
উত্তরঃ- রমযান মাসে জামায়াতের সাথে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করা এবং তাতে কুরআন খতম পড়া মোটেও
বিদয়াত নয়, বরং একটা উত্তম আমল। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মসজিদুল হারাম শরীফ উনার মধ্যে
এবং পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে রমযান শরীফ উনার
শেষ দশ রাতে “সালাতুল লাইল”
নামে জামায়াতের সঙ্গে তাহাজ্জুদ আদায় ও তাতে পবিত্র কুরআন
শরীফ খতম করা হয়। এ নামায সম্পর্কে বিস্তারীত দলীল প্রমাণসহ ইতিপূর্বে আমরা
একাধিকবার প্রশ্নোত্তর কলামে এবং স্বতন্ত্র আকারে আলোচনা করেছি।
মাসিক
মদীনার উক্ত উত্তর শুদ্ধ কী?
জাওয়াব : মাসয়ালা-মাসায়েল বর্ণনা করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত কোন মতামত
প্রকাশ করা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস
শরীফ উনার রীতির পরিপন্থি। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে
ইরশাদ মুবারক করেন
وعسى ان
تكرهوا شيئا وهو خير لكم ج وعسمى ان تحبوا شيئا وهو شرلكم والله سعلم وانتم لا
تعلمون. অর্থঃ- “আর সম্ভবতঃ তোমাদের নিকট যা কিছু অপছন্দনীয় মনে হয়, তাই
তোমাদের জন্য ভাল। পক্ষান্তরে যা তোমাদের নিকট পছন্দনীয়, মূলত
ওটাই তোমাদের জন্য খারাপ। বস্তুতঃ তোমাদের জন্য কোনটা ভাল কোনটা মন্দ তা মহান
আল্লাহ পাক তিনিই ভাল জানেন, তোমরা তা জাননা”। (পবিত্র সুরা বাক্বারা শরীফ,
পবিত্র আয়াত শরীফ-১১৬)
বাহ্যিক
দৃষ্টিতে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতের সাথে পড়া ভালই মনে হয়। নফল নামায পড়া হবে, আর যদি
সেটা জামায়াতে হয়,
তাতে ক্ষতিরই বা কি আছে? এটা
আকলের কথা, শরীয়তের কথা নয়।
ইসলাম যে
আক্বল দিয়ে বিশ্লেষণের বিষয় নয়, তার নজির হলেন- ইমাম আ’যম হযরত আবু হানিফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি। বর্ণিত আছে,
কিছু সংখ্যক লোক হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
নিকট ইমাম আ’যম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করে যে, ইমাম আবু হানিফা নু’মান বিন
সাবিত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মতের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করে
থাকে। ঘটনাক্রমে উভয়ের সাক্ষাৎ হয়, তখন ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি
আলাইহি হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনাকে প্রশ্ন করেন,
হে নু’মান বিন সাবিত! তুমি নাকি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রায়ের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে থাক? উত্তরে
ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হুযূর! নামাযের গুরুত্ব বেশী না রোজার? ইমাম
বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নামাযের। ইমাম আ’যম
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
আমি যদি আকল দিয়ে ক্বিয়াস করে কথা বলতাম, তাহলে
বলতাম মেয়েদের অসুস্থ (মাসিক) অবস্থায়
নামাযের কাজা আদায় করতে হবে রোজার নয়। কেননা রোজার চেয়ে নামাযের গুরুত্ব
বেশী। অতঃপর বললেন,
পুরুষ দুর্বল না মহিলা? ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন, মহিলারা। ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি যদি আকল দিয়ে কথা বলতাম তাহলে বলতাম মহিলারা পুরুষের
দ্বিগুণ পাবে। কারণ মহিলা পুরুষের চেয়ে দুর্বল, আর যে দুর্বল, তার
হক্বই বেশী, কিন্তু তা বলিনা। এর থেকে বুঝা
যাচ্ছে যে, কোন কিছুকে ভাল-মন্দ বলতে হলে, কিতাবের হাওলা দিয়ে বলতে হবে।
তাহাজ্জুদ নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া বা কোন রীতি চালু করে দিয়ে পড়া বা বিনা
ঘোষণায় ইমাম ব্যতীত তিনের অধিক মুক্তাদী নিয়ে জামায়াত করা মাকরূহ্ তাহরীমী। তারাবীহ্, কুসূফ ও
ইস্তেস্কার নামায ব্যতীত অন্য কোন নামায জামায়াতে পড়া ও পড়ানো মাকরূহ তাহরীমী।
ইমামে রাব্বানী আফযালুল আউলিয়া, কাইউমুয্ যামান শায়খ আহম্মদ সিরহিন্দ ফারুকী মুজাদ্দিদে
আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন, “আফসুস! শত আফসুস এজন্য যে, যে সকল
বিদয়াতের চিহ্ন পর্যন্ত অন্যান্য সিলসিলায় দেখা যায় না, তা এ নকশবন্দীয়া
তরীকার কারো কারো মধ্যে দেখা যাচ্ছে যে, এলাকার আনাচে কানাচে হতে লোক
একত্রিত হয়ে বড় জামায়াতের সাথে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করে থাকে, যা
মাকরূহ্ তাহরীমীর অন্তর্ভূক্ত। (মকতুবাতে ইমাম রাব্বানী, ১ম খন্ড,
১৪৪ পৃঃ, ফতওয়ায়ে সিরাজিয়া, ফতওয়ায়ে গিয়াসিয়া, শাফিয়াহ্, নেহায়া,
কিতাবুজজিয়া, শরহে শামায়েল)
এছাড়াও
মবছুত লি সুরুখছি,
তাহতাবী, তাতারখানীয়া, ইলাউস সুনান, ফতওয়ায়ে
দেওবন্দ কিতাবে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী বলা হয়েছে। আরো
বিস্তারিত জানতে হলে আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ১৩তম সংখ্যার “তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ্” বিষয়ক ফতওয়া পড়ুন। যাতে ৭৬টি নির্ভরযোগ্য কিতাবের দলীল দেয়া হয়েছে। আরো একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, উক্ত
মাসিক পত্রিকার সম্পাদক সাহেব তার মতের স্বপক্ষে দলীল পেশ করতে গিয়ে পবিত্র মক্কা
শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনাদের সালাতুল লাইলের কথা বলেছেন। এটা স্মরণ রাখতে হবে
যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
কোথাও কোন ব্যক্তি বা স্থান বিশেষকে অনুসরণ করতে বলেননি। বরং তিনি বলেছেন,
تركت
فيكم امرين لن قضلواما تمسكتم بهما كتاب الله رسنة رسوله.
অর্থঃ- “তোমাদের
মাঝে আমি দু’টি হুকুম রেখে গেলাম,
মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব ও মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সুন্নাহ্। এ দু’টিকে তোমরা আঁকড়িয়ে রাখলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না”।
পাঠকগণ, উক্ত
মাসিক মদীনা পত্রিকার সম্পাদক সাহেব কোথাও এটা দেখাতে সক্ষম হবেন না যে, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত
ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়েছেন। বরং তিনি যে পবিত্র
মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র রমযান শরীফ উনার শেষ দশ ভাগে সালাতুল
লাইলের কথা উল্লেখ করেছেন,
তা সুন্নাহ্ বিপরীত। এরীতি অনুসরণ করা অবশ্যই জায়েয নেই।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে সহীহ্ বুঝ দান করুন। (আমীন)
আবা-১৪
0 Comments:
Post a Comment