১৩৫ নং-সুওয়াল :আজানের ধ্বনি শুনে বা যে কোন ভাবে মুহম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলার সাথে সাথে অনেকেই হাতে চুম্বন করে চোখে লাগায়, তাতে নাকি চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়। কথাটা কতটুকু সত্য? এ ব্যাপারে সঠিক মত জানতে চাই?


সুওয়াল : মাসিক মদীনা সেপ্টেম্বর/৯৩ সংখ্যায় নিম্নলিখিত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়।
প্রশ্নঃ- আজানের ধ্বনি শুনে বা যে কোন ভাবে মুহম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলার সাথে সাথে অনেকেই হাতে চুম্বন করে চোখে লাগায়, তাতে নাকি চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়। কথাটা কতটুকু সত্য? এ ব্যাপারে সঠিক মত জানতে চাই?
উত্তরঃ- আযানের মধ্যে বা অন্য যে কোন উপলক্ষে প্রিয় নবীজী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রিয় নাম শোনার বা বলার পর দুরূদ শরীফ পড়া ওয়াজিব, একথা নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ শরীফ উনাদের কিতাবে উল্লেখ আছে। হাতে চুম্বন দিয়ে চোখে সে হাত লাগানোর হুকুম কোথাও নেই। একটা পরম ভক্তি, শ্রদ্ধা এবং পবিত্র নামের ফযীলত লাভ করার উদ্দেশ্যে এটা করা হয়। হযরত ইমাম সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ ধরনের ভক্তি প্রদর্শনের উপকারিতা বিশেষঃত চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পাওয়ার কথা লিখেছেন। এটা কোন বিশেষ বুযুর্গের অভিজ্ঞতার ফসল হতে পারে। ফিক্বাহ কোন মাসয়ালা বা নির্দেশের পর্যায়ে পড়ে না। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোন বর্ণনাও এ সম্পর্কে আছে বলে আমি তালাশ করে পাই নাই। উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তরে মাসিক মদীনা পত্রিকায় যা বলা হয়েছে, তা কতটুকু সঠিক।
জাওয়াব : উপরোক্ত মাসয়ালার ক্ষেত্রে মদীনা পত্রিকায় যে উত্তর দেয়া হয়েছে, তা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বহের কিতাব তথা মুসলীম উম্মাহ মুহাক্কিক ও মুদাক্কিক ইমাম ও ওলামাগণের মতের বিপরীত। যেমন উক্ত মদীনা পত্রিকাতে বলা হয়েছে, “আযানের মধ্যে বা অন্য যে কোন উপলক্ষে প্রিয় নবীজী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রিয় নাম মুবারক শোনার বা বলার পর দুরূদ শরীফ পড়া ওয়াজিব। এ উত্তর শরীয়তী মাসয়ালা মাসায়েলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বরং মাসয়ালা হলো- কোন মজলিসে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক যদি একাধিকবার উচ্চারণ করা হয়, তাহলে একবার পবিত্র দুরূদ শরীফ পড়া ওয়াজিব। এরপর উক্ত মজলিসে যতবার শুনা হবে, ততবার পবিত্র দুরূদ শরীফ পড়া মোস্তাহাব। আর কালেমায়ে তাইয়্যেবার মত জীবনে একবার পবিত্র দুরূদ শরীফ পড়া ফরজ।
এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে প্রনিধানযোগ্য, তাহলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মোবারক শুনার পর দুরূদ শরীফ মুখে উচ্চারণ করা যেমন ওয়াজিব, অনুরূপভাবে কলমে লিখতে হলেও পূর্ণ দুরূদ ও সালাম অর্থাৎ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পূর্ণটাই লিখতে হবে। শুধু (সাঃ) বা (দঃ) লিখা মাকরূহের অন্তর্ভূক্ত। আমাদের বুযুর্গ ইমাম, মুহাদ্দিসগণ পবিত্র হাদীছ শরীফ বা অন্যান্য কিতাবের যেখানেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মোবারক লিখেছেন, এমনকি এক লাইনের মধ্যে একাধিকবারও যদি হয়, তথাপি পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম শরীফসহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামলিখেছেন, আর এটাই সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার বিধান। এর জন্য দেখুন- তাফসীরে জালালাইন শরীফ, তাফসীরে কামালাইন শরীফ ২২ পারা, ৪৫ পৃঃ।
দ্বিতীয়তঃ বলা হয়েছে, “হাতে চুম্বন দিয়ে চোখে সে হাত লাগানোর হুকুম কোথাও নেই। এ ধরণের কথা মোটেও শুদ্ধ নয়। আযানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন দিয়ে তা চোখে লাগানো সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। হযরতুল আল্লামা সাখাবী  রহমতুল্লাহি আলাইহি  তিনি ‌দায়লামী শরীফ উনার বরাত দিয়ে লিখেছেন, “হযরত আবু বকর সিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনি যখন মুয়াজ্জিনকে
اسهدان محمد الرسول الله
 বলতে শুনলেন, তখন তিনিও তা বললেন এবং শাহাদাত আঙ্গুল দুটোর ভিতরের দিক চুম্বন করে চোখে লাগালেন, এতে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “যে আমার এ প্রিয় বন্ধুর কাজের অনুরূপ কাজ করবে, তার জন্য আমার শাফায়াত নিশ্চিত।” (মাকাসিদুল হাসানাহ্ ৩৮৪ পৃঃ)   সালাতে নখছীকিতাবে উল্লেখ আছে, “যে ব্যক্তি আযানের মধ্যে আমার নাম মুবারক শুনলো এবং তার উভয় অঙ্গুলী দুচোখের উপর রাখলো, আমি তাকে ক্বিয়ামতের দিন ছফের মধ্যে তালাশ করবো এবং বেহেশ্তে প্রবেশ করাবো
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে কেউ কেউ জঈফ ও মওকুফ বললেও আবার অনেকে মওকুফ হিসেবে সহীহ্ও বলেছেন। (ফতওয়ায়ে বরকতিয়া) এছাড়া দায়লামী শরীফ ও মারাকিউল ফালাহ্তে মরফু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরো উল্লেখ্য যে, আল্লামা ছাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাকাসিদুল হাসানাহ্ কিতাবে, হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উরার মওজুয়াতে কবীর কিতাবে, হযরত তাহের ফাত্তানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজমাউল বিহার কিতাবে এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে মরফু হিসেবে সহীহ্ বলেছেন। এছাড়াও আযানে
اسهدان محمد الرسول الله
শুনে অঙ্গুলী চুম্বন দেওয়া ও চোখে লাগানো মোস্তাহাব প্রসঙ্গে তাফসীরে রুহুল বয়ান, তাফসীরে জালালাইন, মুফতি আমিমুল এহ্সান  রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতওয়ায়ে বরকতিয়া, মাজমাউল বিহার, শরহে নেকায়াহ্, ফতওয়ায়ে খাযানাতুর রেওয়ায়েত, ফতওয়ায়ে সিরাজুম মুনীর, ফতওয়ায়ে মিফতাহুল যিনান, শামী, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ইত্যাদি কিতাবে হাতে বা অঙ্গুলীতে চুম্বন দিয়ে তা চোখে লাগানো মুস্তাহাব বলা হয়েছে। বিস্তারীত জানার জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ১ম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা অঙ্গুলী চুম্বনের ফতওয়া পড়ুন।        
তৃতীয়তঃ উক্ত সম্পাদক সাহেব বলেছেন, “ফিক্বাহের কোন মাসয়ালা বা নির্দেশের পর্যায়ে পড়েনা। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোন বর্ণনাও এ সম্পর্কে আছে বলে আমি তালাশ করে পাইনি।” এটা ঠিক, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বহ শরীফ উনার কিতাব না পড়লে পাওয়ার কথা নয়। তার প্রমাণ হলো আমরা আমাদের উত্তরে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাব দায়লামী শরীফ ও সালাতে নখছী হতে দুটি পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছি। তাছাড়া ফিক্বহের মাসয়ালার পর্যায়ে পড়ে না। এটা যে তার কল্পনাপ্রসূত, অনুমাননির্ভর কথা, তা পাঠকগণ সহজেই বুঝতেই পারছেন। কেননা আমরা আমাদের উত্তরের স্বপক্ষে যে সমস্ত কিতাবের দলীল দিয়েছি, তা সর্বজনবিদিত। তাহ্ক্বীক করে কথা না বলে আন্দাজে বা অনুমানে বলার চেষ্টা করলে তার দ্বারা অবশ্য মূর্খতা ও অজ্ঞতাই প্রকাশ পাবে।
আবা-১৪

0 Comments: